You are on page 1of 3

কোরো না আগ্রাসন

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

[ মূল প্রাবন্ধিক টিমোথি আলেকজান্ডার গুজমান একজন মার্কি ন সামাজিক রাজনৈতিক গবেষক এবং
সাংবাদিক। তার লেখা তথ্যের সাথে অন্যান্য বিভিন্ন তথ্য মিশিয়ে এই প্রতিবেদন। তার লেখা COVID 19
and the CIA’s biological warfare on Cuba হল সুত্র। ]

৩১ শে ডিসেম্বর ২০১৯ চীন সরকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ( WHO- World Health Organisation) এই অদ্ভু ত
নিউমোনিয়া রোগের বিষয়ে অবহিত করে জানায় ভাইরাসের আকৃ তি প্রকৃ তি জানা যায় নি। হুবেই প্রদেশের
কেন্দ্রে অবস্থিত হুয়ান শহরে যেখানে ১কোটি ১০ লক্ষ মানুষের বাস। ১লা জানুয়ারি থেকে হুয়ান শহরের সামুদ্রিক
খাদ্য বাজার বন্ধ করে দেয়া হয়। সংক্রমণ তখন ৪০ জনের কাছে। ২০০২-২০০৩ সালে SARS ভাইরাসে
৭৭০জন মারা গেছিল। ৭ জানুয়ারি চীনা বৈজ্ঞানিকরা আবিষ্কার করেন এই সংক্রমণের কারণ এক নতু ন
ভাইরাস , WHO এর সম্মতি নিয়ে নাম দেন 2019-nCoV যা করোনা ভাইরাস পরিবারের অন্তর্গত সাধারন সর্দি
কাশি হাঁচি জ্বর এবং প্রবল শ্বাস কষ্ট (SARS) এর সাথী হলেও প্রকোপে দ্রুত মৃত্যু ডেকে আনতে পারে।
১১ জানুয়ারি হুয়ান শহরের সামুদ্রিক খাদ্য বাজারএ একজন ৬১ বছরের মানুষ প্রথম করোনার বলি হয়। ১৩
জানুয়ারি থাইল্যান্ডে ১৬ জানুয়ারি জাপানে ১৭ জানুয়ারিতে হুয়ানে দ্বিতীয় জনের মৃত্যু হয়। থাই ও জাপানি
নাগরিকগণ উহান ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরেছিলেন। এরপর ১৭ জানুয়ারি সর্ব প্রথম আমেরিকা তাদের বিমান
বন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা চালু করে।
এক এক করে আমেরিকা নেপাল ফ্রান্স অস্ট্রেলিয়া মালয়েশিয়া সিঙ্গাপুর দক্ষিণ কোরিয়া ভিয়েতনাম তাইওয়ান
মৃত্যুর ঘণ্টা বাজাতে থাকে। চীনের হুবেই প্রদেশে আরও দুই শহরে মৃত্যুর ঢল নামে। তবুও ২৩ শে জানুয়রিতে
WHO করোনা ভাইরাস জনিত অসুখকে মহামারী স্বীকার করতে অস্বীকার করে। ২৪শে জানুয়ারি হুবেই
প্রদেশে মৃত্যুর সংখ্যা ২৬ আক্রান্ত ৮৩০ হুবেই প্রদেশের ১৩ শহর ৪ কোটি ১০ লক্ষ মানুষ কোয়ারান্টাইন ঘোষণা
করা হয়। ২৬ শে জানুয়ারি ২০০০ জন সংক্রমিত ৫৬জনের মৃত্যু ৫কোটি ৬০ লক্ষ মানুষ ঘরবন্দী।
৫ ফেব্রুয়ারি WHO স্বীকার করে নেয় যে এই করোনা ভাইরাস জনিত রোগের কোন চিকিৎসা নেই। তখন চীনে
মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৯০ এবং ২৪৩২৪ জন সংক্রমিত। চীন এবং হংকং সরকার ঘোষণা করলেন যারা করোনা
সংক্রান্ত নির্দে শিকা মানবে না তাদের জেলে যেতে হবে। জবরদস্তি কোয়ারান্তাইন করা শুরু হোল।
ফেব্রুয়ারি ১১ WHO ঘোষণা করলো নতু ন অসুখের নাম হবে "COVID-19" এবং এই অসুখ বিশ্ব জুড়ে
মহামারী ( Pandemic)আকার নিয়েছে। তখন চীনে মৃতের সংখ্যা ১০১৬ এবং সংক্রমিতের সংখ্যা
৪২৬৩৮জন।
২৭ মার্চ ২০২০ WHO 69th. Situation Report অনুযায়ী সারা বিশ্বে মোট করনা আক্রান্ত্র ৬৩৪৮৩৫, মোট
মৃত্যু ২৯৯৫৭, (ইতালিতে আক্রান্ত ৯২৪৭২ মৃত্যু ১০০২৩, স্পেনে আক্রান্ত ৭২২৪৮ মৃত্যু ৫৬৯০, চীনে আক্রান্ত
৮২৩৫৬ মৃত্যু ৩৩০৬) এবং ভারতে আক্রান্ত ৯৭৯ মৃত্যু ২৫। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ভারতীয় তথ্য অনুসারে ভারতে
৩০ শে মার্চ পর্যন্ত আক্রান্ত ৯৪২ মৃত্যু ২৯।
এ তো হাল ফিলের ফাইলচিত্র। সারা বিশ্বকে কোয়ারান্টাইন করা হয়েছে। বিশ্ববাসী গৃহবন্দী। সারা বিশ্বে একসাথে
ভাইরাস সংক্রমণ এই প্রথম হলেও এটা ভাবার কোন কারণ নেই আএ খন্ডিত ভাবে এ পরিস্থিতির মোকাবিলা
করেনি এমন কোন দেশ নেই। তাহলে একটু পেছনে ফিরে দেখতে হয়। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিলে এই বিশ্ব
মহামারী হয়তো ঘটতো না।
ফোর্ট ডেট্রিক সম্বন্ধী্য এক আর্টি কেল ২০১৯ আগস্টের ৬ তারিখে ইংলন্ডের দ্য ইন্ডেপেন্ডেন্ট পত্রিকায়
প্রকাশিত হয়েছিল তার শীর্ষক ছিল - ‘Research into deadly viruses and biological weapons at US
army lab shut down over fears they could escape’ ( ভাইরাস ও বায়োলজিকাল অস্ত্র বাইরে বেরিয়ে
যেতে পারে এই আশংকায় ইউ এস সেনা গবেষণাগার বন্ধ করে দিলো)। অদ্ভু ত ঘটনা ইউ এস সেক্রেটারি অফ
স্টেট নিওকন মাইক পম্পেও এই ভাইরাসের নাম দিয়েছিলেন ‘হুয়ান ভাইরাস’। পাছে আমেরিকাতে এই
ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে এই আশঙ্কাতে ফোর্ট ডেট্রিক বন্ধ করা হলেও লাইসেন্স চালু ছিল। সম্প্রতি CDC
(Centers for Disease Control and Prevention) মার্কি ন সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তরের এক আদেশনামায়
জানিয়েছেনযে ইবোলা (পশু ভাইরাস বাহিত জ্বর ) স্মল পক্স ও আন্থ্রাক্স এর মতন নির্বাচিত বাহক (“select
agents”) নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে লাইসেন্স বাতিল করা হলো।
জীবানুভিত্তিক যুদ্ধ ( ভাইরাস /জার্ম ওয়ার) আন্তর্জাতিক ভাবে ছড়ায় জীবন্ত প্যাথোজেনের ( জৈব রাসায়নিক)
মাধ্যমে। কখনো মৃত জীব জন্তুর মাংসের মাধ্যমে কখনো বিশেষ ভাবে মনুষ্য দ্বারা বিবর্তি ত জীবানুর মাধ্যমে।
এই জীবানু বা প্যাথোজেন ভাইরাস অথবা ব্যাকটেরিয়া হতে পারে। এর উদ্দেশ্য মানুষ মেরে কোন একটি উন্নত
শহর ধ্বংস করা বা কোন নিষিদ্ধ নগরী ধ্বংস করা।
ফোর্ট ডেট্রিক কি?

১৯৪০ সালের শেষ দিকে মেরিল্যান্ডের ফোর্ট ডেট্রিক এ মার্কি ন সরকারের আর্মি বায়োলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার
ল্যাবরেটরিতে জীবানু যুদ্ধের গবেষণা হোত। এখানকার গবেষণা বন্ধ হয় ১৯৬৯ সালে। এখানেই আবিষ্কার করা
হয়েছে স্মল পক্স ( বসন্ত) হ্যান্টা ভাইরাস ( ইঁদুর বাহিত রোগ) , লাসা ফিভার ( ইঁদুর বাহিত রোগ), ইয়েলো
ফিভার ( পীত জ্বর), টাইফাস( ঊকু্ নের মলের ব্যাক্টেরিয়া রিকেটসিয়া প্রাউয়াজেকি বাহিত সাঙ্ঘাতিক জ্বর) ,
ডেঙ্গু (মশা বাহিত জ্বর) এবং বার্ড ফ্লু ( করোনা ভাইরাস বাহিত আভিয়ান ইনফ্লু য়েঞ্জা)। অ্যান্থ্রাক্স ( গৃহপালিত
পশুদের ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ) বটু লিজম ( খাদ্যাদি বিষ ক্রিয়া) এর আবিষ্কার ও এখানেই হয়েছিল।

এই সব কটি অসুখের ব্যবহারিক প্রয়োগ সি আই এ তৃ তীয় বিশ্বে করেছে এমনকি ভারতেও করেছে। বার্ড ফ্লু
(চিকেন ফ্লু , ব্যাট ফ্লু ) এবং সোয়াইন ফ্লু সব করোনা ভাইরাস বাহিত অসুখ ছিল। ডেঙ্গু মহামারী তো গত বছরেই
হয়েছিল।

১৯৩০ থেকে ১৯৪০ চীনে জাপানি আক্রমণে জাপান সংক্রমিত পঙ্গপাল ও অন্যান্য পতঙ্গ বিমান থেকে
ছড়িয়েছিল তাতে ৫ লাখ ৮০ হাজার চীনা জনসাধারণের মৃত্যু হয়েছিল।

এই আগ্রাসনের পূর্বে জাপানি লেখক নোগুচি কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের সমর্থন চেয়েছিলেন এই যুক্তিতে যে চীনে
কমিউনিস্টদের বাড়বাড়ন্ত ঘটছে তার থেকে চীনাদের উদ্ধার করতেএই ধর্ম যুদ্ধ করতে হচ্ছে, রবীন্দ্রনাথ সপাটে
‘না’ ফেরত দিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকু র বলেছিলেন এই যুদ্ধ কত লক্ষ সাধারণ চীনাদের জীবনের বিনিময়ে
হবে? ধনীরা যদি শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরী দেয় জমিদার যদি কৃ ষকের শ্রমের ন্যায্য মূল্য দেয় তবে কমিউনিস্টদের
ভয় পাওয়া কেন? জার্মানি ও জাপান যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে জীবানু ব্যবহার করার পর আমেরিকা, ইংলন্ড ও কানাডা
একই গবেষণায় প্রবৃত্ত হয়। যার পরিণতি হলো টু লারেমিয়া ( খরগোশ-জ্বর), , আন্ত্রাক্স, বটু লিজম টক্সিনের
আবিষ্কার। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে ইংলন্ড দ্বারা জনজীবনে প্রয়োগের পরীক্ষার ফল হোল স্কটল্যান্ডের গ্রুনারড দ্বীপে
৫০ বছর ধরে অ্যান্থ্রাক্সের কু ফল ভু গতে হয়েছে।

বায়োলজিকাল উইপন্স কনভেনশন (BWC) ১৯৭২ এ যোগ দেয় ১৩৭ টি দেশ। এই কনভেনশন অনুযায়ী
আত্মরক্ষার কারণে তৈরি জীবানু গবেষণা ও সৃষ্টি নিষিদ্ধ নয়। কিছু ভাইরাস অন্য ভাইরাসকে খতম করে। মূল
সামরিক সমস্যা হোল ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে দেরিতে এবং নীরোগ হয় দেরিতে যা নিউক্লিয়ার সামরিক
অস্ত্রের ক্ষেত্রে তাৎক্ষনিক।

১৯৮১ সাল। সি আই এ মার্কি ন সেনাদের প্রত্যকশ মদতে কিউবাতে ছড়িয়ে দিয়েছিল ডেঙ্গু জ্বর। কিউবাতে
শুরু হেমোরাজিক ফিভার। ২লাখ ৭৩ হাজার কিউবাবাসী আক্রান্ত হলো, ওদের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত
থাকায় কিউবা প্রতিরোধ করলো এই ডেঙ্গু প্লেগ। মাত্র ১৫৮ জন মারা গেল তার মধ্যে ১০১ জন শিশু। দ্য নিউ
ইয়র্ক টাইমস ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৮১ ফিদেল কাস্ত্রোর ব্যানে এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল।
”we urge the United States Government to define its policy in this field, to say whether the
C.I.A. will or will not be authorized again- or has already been authorized – to organize
attacks against leaders of the revolution and to use plagues against our plants, our animals
and our people.”
But the State Department under-then President Ronald Reagan stated that “Mr. Castro’s
charges of possible United States involvement in the epidemic were ”totally without
foundation.” The Cuban Government has always tried to blame the United States for its
failures and its internal problems,” the department said. ”The Cuban revolution is a failure,
and it is obviously easier to blame external forces like the United States than to admit those
failures”.

ইতিহাসে এই প্রথা বহির্ভূ ত যুদ্ধের উল্লেখ আছে।

২০৪ খৃষ্ট পূর্ব সময়ে হানিবল দ্বিতীয় পিউনিক যুদ্ধে পারগামন সেনা জাহাজে বিষাক্ত সাপ পাঠিয়েছিলেন।চতু র্থ
শতাব্দীতে স্কাইথিয়ান ধনুর্বিদরা তীরের ফলায় পশু বিষ্ঠা লাগাতো যাতে তীরবিদ্ধ শ্ত্রুর ক্ষত ধনুষ্টংকারের শিকার
হয়। ষষ্ঠ শতাব্দীতে আসিরিয়রা জলে ছত্রাক মিশিয়ে শত্রু নিধন করেছে। সপ্তদশ – অস্টাদশ শতাব্দীতে
ইউরোপীয়রা উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় উপনিবেশ গড়তে স্থানীয় উপজাতিদের বিরুদ্ধে পানীয় জল দূষণ
করে নিধন করেছিল। আমেরিকার সিভিল ওয়ারে পানীয় জলের জলাশয়ে পশু মেরে ফেলে রাখা হতো।

জাপানে আনবিক বোমা নিক্ষেপ নিয়ে হিরোশিমা দিবস পালন করা হয়। আমরা মনে রাখি না জাপান আগে
পার্ল হারবার আক্রম্ন করে এবং হাজার হাজার স্থানীয় মানুষ মারা যায়। আমরা পার্ল বাকের গুড আর্থ মনে রাখি
না যেখানে পঙ্গপাল নামিয়ে শস্য ধ্বংস করেছে জাপান এবং লাখে লাখে চীনা কৃ ষকদের মৃত্যু মিছিলের কথা।
আমরা জার্মানিকে মনে রাখি হিটলারের ফ্যাসিবাদ দিয়ে হিটলারের জীবানু যুদ্ধ দিয়ে নয়। আমরা কেউ জীবানু
যুদ্ধে জাপানীদের অগ্রণী ভূ মিকার নিন্দা করিনি কখনো , আমেরিকা ইংলন্ড তো পড়ে নেমেছেন এই দুষ্কর্মে। চীনে
আফিঙের চোরাচালান করেছিল ভারতের ব্রিটিশ সরকার চীনা চা এর বানিজ্যে দখলদারি করতে আমরা পড়েছি
চীনের আফিং যুদ্ধের কথা কিন্তু ব্রিটিশ সরকারকে নিন্দা করিনি। যারা নিপীড়িত তাদের বিপক্ষে ইতিহাস লেখে
সাম্রাজ্যবাদ আমরা প্রকৃ ত সত্যকে এড়িয়ে চলি। কিন্তু সময় একদিন সত্যকে প্রকাশিত করে তখন আমরা কেউ
হাত কামড়াই না। আমরা মিথ্যাকেও সত্য মানি আবার সত্যকেও সত্য মানি।

করোনার সত্য একদিন সামনে আসবেই। কিন্তু আজ মানব সমাজ বাঁচানোর সময় আজ কোন ভেদাভেদ নেই।
তাই মার্কি ন সরকারের বন্ধু দের দেশে সমাজতান্ত্রিক দেশ চীন ও কিউবা মানবতার সেবা করতে ছুটে গেছে
একটাই আবেদন নিয়ে করোনা নিয়ে কোন অপপ্রচার করবেন না আগে মানব সমাজকে রকাশা করুন। সঙ্গে
আছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুশাসন যারা ট্রাম্পকেও সতর্ক করে দিয়েছর অহেতু ক রাজনীতি করা থেকে বিরত
থাকতে।

আজ সমগ্র বিশ্ব এক সূত্রে বাঁধা হয়েছে। জীবানুর আক্রমণ থেকে জীবনকে বাঁচাও।

You might also like