You are on page 1of 45

স্বরচিত গল্প ও কবিতা সংগ্রহ

সুমি চৌধুরী

চরণতল
সময় ফু রিয়ে এসেছে বলে জনতার পথ ঠেলে যেতে পারিনি তোমায় দেখতে মাগো,

তাই বলে কি পাবো নাকো তোমার চরণধূলি ?


নয়ত আমি অপরাধী , মিথ্যার ভারে জর্জ রিত তবু।

শত্রুদলের হানাতে হয়েছে হয়েছে মোর হৃদয় হানি ,

তাই বলে কি পাবো নাকো তোমার হৃদয় খানি ?

মাগো তু মি হৃদয় মাঝে আছো নিরন্তর ,

তোমার অভয় হাতটা রাখো মাগো মাথার উপর।

তোমার হাতের খড়গখানি দেবে আমায় ?

ইচ্ছে করে এক মিনিটে শেষ করে দিই, যারা মিথ্যে বলে অপরাধী বানায় ।

স্বপ্নাদেশে করি আমি তোমার আচার পালন

তাতেও মানুষ খুজে ফিরে মিথ্যার প্রলোভন।

কেমন করে বসে আছো চু পটি করে মাগো,

অন্তরের জ্বালা আছে তোর তো সব জানা গো ।

তু মিই অন্তর্যামী , দিব্যময়ী , মৃন্ময়ী ;

তোমার ইচ্ছেতেই চলে মাগো সম্পূর্ণ ধরণী।

সবার মুখে অন্ন তু লে দেব বলে, শপথ করি মাগো ,

তাতেও শান্তি নাই, উল্টো আমায় কপটচারী বলে ডাকে মাগো।

হইনি আমি তোর মতো রুদ্রময়ী নারী ,

তাই তো আমায় পেয়ে বসে আলস্যময়ী নারী ।

সাদা সিধে জীবনটা আমি পছন্দ করি বেশি,

দোষের মাঝে খুঁজে বেড়ায় ছিদ্রান্বেষীরা আনন্দটা বেশি।


চাইনি মাগো রানী হতে, চেয়েছিলাম ভালোবাসার কাঙ্গাল হতে,

জুটল না তো তাই কলঙ্ক মোর তবুও গেছে রটে।

আরও অনেক দাবী ছিল তোর কাছে তো বলার,

সময় হলে বলব তোকে মা বলেছি যখন ডেকে।

কি ধরণী সৃষ্টি করলি, বিবেক তু ই পারিসনি দিতে !

স্বপ্ন শুধু আমায় দেখাস পারিসনি তু ই তাদের শোধরাতে ?

মাগো ভক্ত বলে রাগের ছলে বলছি তোকে বাড়িয়ে কিছু ,

দোষ না ধরে ক্ষমা করিস মা ঠাঁইটু কু দিস তোর চরণ তলে ।

---x---

সুখ পাখি..
ধরণীর বুকে খুঁজি ফিরি নিদ্রিত সুখ পাখিরে

হেথায় মিলল না তো তবে কোথায় তার বসত ভিটারে ?

সুখ পাখি নয়তো এমন বসে আছে গাছের ডালে


হাত বাড়ালে ধরতে পারবে অগোচরে।

সুখের নিমিত্তে হিংসা বিদ্বেষ, ভু ল বুঝাবুঝি, মানুষে মানুষে হানাহানি ;

নিজের অজান্তে অনলে পুড়ছে নিজের দেহখানি।

পাপের বোঝায় লাশের গন্ধে ভারী হয়ে উঠেছে বায়ু

করোনাকে হারিয়ে কি করে মানুষ ফিরে পাবে তার সুখের আয়ু ?

সবার মাঝে যদি ফিরে আসে চৈতন্য

তবেই মিলবে সুখের অরণ্য।

জেগে ওঠো রুদ্র হয়ে তরুণ সমাজ

পুষ্পের মতো বিকশিত করো সুপ্ত প্রতিভার।

তবেই যুব দল খুঁজে পাবে

স্বপ্নের নীড়ে বসত ভিটা সুখ পাখিদের ।

########################

বিন্দু
পৃথিবীর এক প্রান্তে যদি থাকি আমি

স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছো তু মি

যখনি আমি বিপদে পড়ি

রক্ষা করো তু মি।


কোন আড়ালে থাকো তু মি

দেখতে পারিনি আমি

স্বপ্নের সেই ছোট্ট মহাপুরুষ

গভীর যন্ত্রণায় দেখতে চাই আমি

তবে কি এখনো সময় ফু রায়নি

তোমাকে দেখার নাইক বেদনার

মাঝে এক চিলতে হাসি

হয়ে আসবে তু মি আমার সামনে

প্রতীক্ষার শেষ সময়ে যখন আমার

শরীরে থাকবে নাকো কোন প্রাণ

সেই দিন বিন্দু হয়ে আসবে আমায় নিয়ে যেতে…..

সুরঞ্জনা

এক্কা দোক্কা খেলতে খেলতে

বড় হয়েছে একসাথে।

প্রেমের ডালে বসবে বলে

স্থির করেছে মনটাকে।

সহজ সরল মনটা যে তার


হাসিমুখে মেনে নেওয়ার ক্ষমতা অপার !

যবনিকা টেনে স্কু ল জীবনে

পাড়ি দিয়েছে কলেজ জীবনে।

অজান্তেই কু ঞ্জবনের কাঁটালতায়

মনটা গেলো জড়িয়ে তায়।

হারিয়েছে অনেক প্রত্যাশা মনের বাধা পড়ালেখায়

বিরহতে দুজনের পথ হল আলাদা রঙের তু লিতে আঁকায়।

নাইতো কোন দেখাদেখি, মনের মিল ছিল নাতো

পড়ালেখায় জমেছে ফলাফল ভালো হয়েছে তায়।

অনেক বছর পরে দেখা হল তারই সাথে

সখা প্রেম জেগে উঠল দুজনাতে।

টাকা পয়সার অহংকার বাধা হল জীবনে,

মন দিলো না সায় দিতে কূ ল বংশের ছেলেরে।

কিন্তু প্রেম মানে না জাত কি বিজাত,

প্রেমের মাঝে নাই কোন ফাঁদ।

কৃ ষ্ণ প্রেমের লীলা যেন সত্যি হল জীবনে

সখা প্রেমের মিলন হল সব পথের বাঁধা ঠেলে।

দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণায় জীবন গেলো কেটে

অবশেষে সন্তানের মুখ দেখে সুরঞ্জনার জীবনে সুখ এলো তো বটে।


########################

অচিন বিহঙ্গ

রোদ্দুর পথে হাঁটতে হাঁটতে,

দেখা হলো এক অচিন বিহঙ্গের সাথে।

জানতে চাইলাম , ওহে বিহঙ্গ কোথা হতে তোমার আগমন ,

উত্তরে বিহঙ্গ বলল, দূরদেশে থেকে আমার আসা নব জাগরণে।

মোর দেশের অন্ন, বস্ত্র পাবে কিনা জানিনা,

তবে সুনিবিড় ছায়া শীতল করে দেবে তোমার ডানাখানা।


মনের মতো উড়তে পারবে তোমার ডানা মেলে,

চারিদিকে তো চোখ দিয়ে দেখতে পাবে সব কিছু আড়ালে।

মোর দেশের অতিথি হয়ে এসেছ তু মি হেথায়,

এদেশেরই মানুষ আমরা পাইনি কাউকে অবহেলায়।

তবুও মানুষ কেন যায় গো দূর দেশেতে,

সুখের বালাই নেই তো তাদের , পড়ালেখার আশায়।

আসে না তো কেউ বা ফিরে আবার স্বদেশে,

মাঝে মাঝে কত মায়ের কোল গো খালি করে।

এ দেশের তরে যদি মোরা করি কাজ একসাথে,


তবে স্বাধীন দেশ পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হবে না তো কখনো।
স্বাধীন দেশের তরে যুদ্ধ করে প্রমাণ দিয়েছে দামাল ছেলেরা,
শত্রুদলের হানাতে কখনো পরাজয়ের কাছে মাথা নত করেনি তারা।
এ দেশেতে থেকে বিহঙ্গ শ্রমশক্তি বাড়াও,
ধ্বংসস্তূ পকে ঝেড়ে নতু ন সোনার বসতি গড়াও।

নির্মম

নির্মম এ বিশ্বে কোটি কোটি মানুষের ভিড় কিলবিল করে ছারপোকার মতন,

কিন্তু বিপদের সময় মনে হয় যেন জনশূন্য এ ভু বন রতন।

দুর্দি নের এ মহাপ্রলয়ে পড়ে আছে রাস্তার পাশে মানুষের লাশ,

মনের মাঝে নিচু তা, ভীরুতাকে স্থান করে দিয়ে করেছিস পরিহাস।

কবরে মাটি দেয়ার নেই কোন আপনজন,

পরের তনয়ের হাতে হচ্ছে দাফন,কাফন।

দাহ করার নেই কোন মানব লোকালয়ে,


মনে হচ্ছে যেন বিবেক শূন্য হয়েছে মানব এ অখিলে।

কোন সর্বনাশা পাশা খেলায় মেতে উঠেছে বিশ্ব,

মহামারীর মতো ব্রহ্মাস্ত্র দিয়ে যেন পুরো ধরণী হবে ধ্বংস।

পাতাল ফুঁ ড়ে যদি কোন বিধাতা আসতো আলোক প্রদীপ হাতে নিয়ে,

আর বলতো, এক্ষু নি হবে দুর্যোগের ঘনঘটার ক্রান্তি সময়।

সেই সাথে ধ্বংস হতো কিছু নির্মম মানুষের সহিংসতা ।

########################

অনুভূ তি (ছোট গল্প)

মানুষের সকল সুখ দুঃখের অনুভু তিকে কথায় লিখে প্রকাশ করা যায় না, তা উপলব্ধি করে
জানতে হয়। সকল দুঃখের অনুভূ তি যদি তু লোর মতো মেঘ হয়ে ঘুরে না বেড়িয়ে বৃষ্টি হয়ে ঝরে
পড়ত তবে মানুষের মনে হতাশা ভাবটা জন্মাত না। সেই বিষণ্ণতা থেকে সৃষ্টি হতো না কোন বিরল
রোগের এবং জীবনটা হয়ে উঠত না হাহাকারে পরিপূর্ণ। তেমন একটি ছোট গল্পের নায়ক সাইমন
এবং তাকে ঘিরেই রচিত হল অনুভূ তি নামের গল্পটি।

ফর্সা ,সুন্দর চোখ দুটি যেন হরিনের মতো মায়া বসানো টানা টানা অনেকটা মেয়েদের মতো দেখতে।
সাইমন ছেলেবেলাতে খুব আনন্দে দিন কাটাত তার খেলার জগত নিয়ে। বাবা ব্যাংকে চাকরি
করতেন। মা গৃহিণী ,তিন ভাইবোনের মধ্যে সাইমন সবার বড়। পঞ্চম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি
পেয়েছিল, তাই বাবার ইচ্ছে ছিল ছেলে বড় হয়ে ডাক্তার হবে। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস !
সাইমনের বাবা একদিন অফিস থেকে আসার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান !
সাইমন তখন তার ছোট ছোট হাতে বাবার লাশ ধরেছিল কিন্তু তখনও সাইমন ভালো করে বুঝতে
পারত না।

দিন যায়, ক্ষণ যায় কিন্তু সাইমনের মনে যেন দুঃখগুলো বাসা বাঁধতে শুরু করে। সবার সঙ্গে যখন
তাদের বাবারা যেত, তখন সাইমন বাবার শার্টে র মতো শার্ট পরা কাউকে দেখলেই পিছন থেকে
গিয়ে ঝাপটে ধরত ! মায়ের টিউশনির ফি দিয়ে কোনোমতে সাইমন, তার ছোট বোন ও ভাইয়ের
পড়ালেখার খরচ চলত। উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে পড়াকালীন সময়ে সাইমনকে টিউশনি করে এইচ
এস সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়েছিল। প্রথম বিভাগে পাস করে কোচিং এ ভর্তি হয়েছিলো
ডাক্তার হবার আশায় বুক বেঁধে । কিন্তু সে গুড়ে বালি পড়ল , সামান্য কয়েক পয়েন্ট এর জন্য
হারাতে হল তার বুকে সযত্ন লালিত আশাকে ! এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে ভর্তি
হল সাইমন। প্রতিদিন সে সকালে ৭ টার শাটল ট্রেনে করে যেত। শাটল ট্রেনে সবাই নিজেদের
মতো সময় কাটাত, কেউ বা গল্প করে, কেউ বা গানে মত্ত থাকতো। বগিতে কেউ তবলা বা বাঁশি
বাজিয়ে ভ্রমণটাকে উপভোগ করতো। কিন্তু সাইমনের এসব কিছুতে মন বসতো না, সে তার
নিজের মতো জানালার বাইরে তাকিয়ে প্রাকৃ তিক পরিবেশকে উপভোগ করতো আর ক্লাস শেষে
টিউশনি করে ক্লান্ত দেহে বাসায় ফিরে আসতো। রাত ১১ টায় ফিরে নিজের পড়া পড়তো এবং
পাশাপাশি ডায়েরি লিখত । এভাবে দিন যায় , অনার্স পরীক্ষা শেষ করে এবং অনার্সে সাইমন
প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে। সাইমনের বন্ধু ছিল কিশোর আর রূপা। সাইমন রূপাকে
পছন্দ করতো যেটি পরে সাইমনের ডায়েরি পরে জানা যায়। কিন্তু সাইমন রূপাকে কখনও মুখ ফু টে
বলতে পারেনি। যদি বন্ধু ত্বকে হারিয়ে ফেলে এই ভয়ে , কিন্তু রূপা সাইমনকে বন্ধু বলেই ভাবতো।

কোয়ান্টা নিয়ে পড়তে পড়তে এমন পরিস্থিতিতে সে নিজেকে কোয়ান্টার সাথে তু লনা করতে
লাগলো। তার মনে হতে লাগলো কোয়ান্টার মতো সেও ক্ষু দ্রাকৃ তির এবং সেও সকলের কাছে
ক্ষু দ্র ও তু চ্ছ প্রকৃ তির। অথচ সাইমন জানত না কোয়ান্টা ছাড়া সম্পূর্ণ জগতটা অচল। এই
অবস্থায় দেখা গেলো সাইমন মাঝে মাঝেই কোন কাজ করে ভু লে যেতে লাগলো। যেমন টং
দোকানে খেয়ে টাকা দিতে ভু লে যেত, কোন কোন সময় পথ ভু ল করে অন্য পথে চলে যেত !
হিতাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শে ডাক্তার দেখাল সে, বিভিন্ন পরীক্ষার পরে দেখা গেল সাইমন ভু গছে
‘ডিমেনসিয়া’ তে, সহজ ভাষাতে বলতে গেলে Short Term Memory Loss ! এই দুরারোগ্য
অসুখে আক্রান্ত হয়ে তার জীবনটাই ওলট পালট হয়ে গেলো। মাস্টার্সে কোনরকমে দ্বিতীয় শ্রেণীতে
পাস করল আর নামলো চাকরির খোঁজে। কিন্তু চাকু রির ইন্টারভিউতে গেলে সে কোন রকম উত্তর
দিতে পারত না ! হঠাৎ করেই ভু লে যেত তার উত্তরটা ! এভাবেই নিমজ্জমান হতাশায় সাইমনের
দিন কাটে । যেখানে সাইমনের মতো ছেলের বড় কোন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হওয়ার কথা ছিল,
সেখানে একটা সাধারণ চাকরি জুটাতে হিমশিম খেয়ে যেতে হচ্ছে । ছোট ভাইয়ের চাকরির টাকায়
কোনরকমে সংসার চলতো । এদিকে রূপা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর হিসাবে যোগ দেয় এবং বড়
একজন বিজ্ঞানীর সাথে তার বিয়ে হয়ে যায়।

Memory Loss হতে হতে সাইমন এখন একজন মানসিক রোগীতে পরিণত হল। জীবন কারো
জন্য থেমে থাকে না। তার নিয়মে সে চলতে থাকে। সাইমন ইংরেজিতে খুব ভালো ছিল। সে
এখনও মাঝে মাঝে একা একা বিড়বিড় করে ইংরেজি বলতে থাকে। অথচ জীবন নিয়ে তার কোন
হুঁশ জ্ঞান নেই। সাইমন সুন্দর পরিপাটি সুট টাই পড়ে কোন ট্রেন আসলে দৌড়ে যায় রূপাকে দেখার
জন্য। কত শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছাত্রী আসে যায়, কিন্তু সাইমনের কোন পরিবর্ত ন হল না। সে কাউকে
দেখলে এখনও বলে Please give me one taka !

জীবন একটাই । এক জীবনে এত হতাশা থাকলে মানুষ এমনিতেই মানসিক রোগীতে পরিণত
হবে। এই হতাশা থেকে সৃষ্টি হতে পারে মাদকাসক্ত যুব সমাজের। যুব সমাজের আবেগ অনুভূ তি
এতো ঠু নকো হওয়া উচিত নয় যে সারাটা জীবন কালো মেঘে ঢাকা থাকবে। মেঘ সরে গেলে
সূর্যকে অবশ্যই দেখা যাবে। সূর্যের মধ্যে প্রভাময় অণু বিদ্যমান । সেই প্রভাময় অণু দ্বারা জীবনকে
আলোকিত করে আবেগ প্রবণ না হয়ে পুরানো অনুভূ তিকে নিংড়ে ফেলে নতু ন সোনার বসতি
গড়ে তোলা উচিত। তাহলে এদেশে আর হতাশাচ্ছন্ন , মেঘাচ্ছন্ন পরিবেশ থাকবে না । থাকবে শুধু
নতু ন সোনালি দিনের অনুভূ তি গুলো যা রংধনুর রঙ হয়ে আকাশে ভাসবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান
নিভিয়ে দিলে সে আলোক প্রদীপ

যে আলোর বিচ্ছুরণে জেগে উঠেছিল বাংলার দামাল ছেলেরা।

শত্রুদলের হানাতে পরাজিত হয়নি তারা

সংগ্রাম করে ছিনিয়ে এনেছিল রক্তে রঞ্জিত সবুজ পতাকা।

সেই আলোক প্রদীপ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বঙ্গ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান।

ওরে নরপিশাচের দল, বেঈমান তোরা !


যে তোদের মুক্তির পথ দেখাল

তোরা তাঁর বুকেতে মারলি গুলি ধানমণ্ডির ৩২ নং বাসভবনে।

নিথর দেহকে নির্মম ভাবে লুটিয়ে পড়তে দিলি এ বাংলার মাটিতে

যে দেশের জন্য সারাজীবনটা বলিদান দিতে হল তাঁর পরিবারবর্গকে।

তোরা ক্ষমা করিস নি সেই ছোট্ট শিশুসন্তান শেখ রাসেলকে,

যে নিষ্পাপ শিশু মুখ লুকিয়ে থাকতো মায়ের কোলেতে।

তোরা তার প্রাণও নিলি কেড়ে

ধিক্কার তোদের রক্তপিপাসু জোঁকের দল।

যাই ঘটু ক না কেন, এ পরাজয়ের গ্লানি টানতে হবে

স্বাধীনতা বিরোধী চক্রকে।

দেশের জন্য প্রাণ বলিদান দিয়ে, মরেও তিনি হলেন অমর

৭ই মার্চে র ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্যে রেখে গেছেন বঙ্গবন্ধু তাঁর অমরত্বের কীর্তি

তাই যুগ যুগ ধরে পালিত হবে ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ।

স্বপ্নে বিচরণ

স্বপ্নলোকে থাকি আমি

স্বপ্নেই বাসা বাঁধি।

স্বপ্নের মাঝে খুঁজে ফিরি

কিছু অচেনার পদতল।

স্বপ্নে আমি হই ডাক্তার


স্বপ্নেই আমি লেখক ।

স্বপ্নেই ভাবি বিজ্ঞানী

অজানার তরে সন্ধানী।

স্বপ্নেই দেখি অন্ধকারের মাঝে সরু আলোর পথ

দিয়ে উড়ে বেড়ানো ধূলিকণা,

বিজ্ঞানীদের মতে এটি যেন টিন্ডাল ঘটনা।

স্বপ্নেই দেখি জোনাকি পোকার মিটিমিটি আলো জ্বলা,

দেখতে যেন মনে হয় এটি কোন ক্ষু দ্র কনার প্রতিপ্রভা আলো।

স্বপ্নের মাঝে মৌল খুঁজি

স্বপ্নের মাঝে করি পরীক্ষন।

########################

স্বপ্ন শেষে ভোর হলে

দেখি আমি রসায়নী ঠাকু রণ।

স্বপ্নেই আমি হাসি, স্বপ্নেই আমি কাঁদি

স্বপ্নেই যেন আমি আলোকিত জীবন কাটাই।

দিন শেষে রাত হলে

ঘুরে ফিরি স্বপ্নের মাঝে

স্বপ্নেই যেন আমার বিচরণ


সংসার
সংসার শব্দের অর্থ সম্যক স্মৃতিযুক্ত অর্থাৎ সম্পূর্ণরূপে জন্ম মৃত্যুর আবর্তে যুক্ত।

সংসারেতে মানুষের বসবাস মন গড়া প্রকৃ তির।

সংসারেতে সব মানুষ হয় না তো এক রুপের,

তাই তো সংসার গড়ে উঠে বিভিন্ন রঙের।

কেউ বা সংসারেতে সুখী জীবন ধারণ করে,

আর কেউ বা সংসারেতে সারাজীবন খাটু নি করে মরে।

সুখ দুঃখ পর্যায়ক্রমে ঘুরে ফিরে সংসারে


খাপ খাইয়ে টানতে হয় এ জীবন রথেরে।

সংসারেতে মন হল জীবন রথের সারথি,

সেই মনকে স্থির রেখে চালাতে হয় এ গাড়ি ।

সংসার হল স্বামী স্ত্রীর মাঝে থাকবে না কোনো সংঘাতের দ্বন্দ্ব,

সেথায় থাকবে শুধু ভালোবাসার স্কন্ধ।

সংসার হল একে অপরকে ভালোবেসে সকল কথাকে মানিয়ে চলা

সকল সুখ দুঃখকে ভাগাভাগি করে নেয়ার।

সংসারে থাকবে না কোনো ছলনার ফাঁদ,

তাহলে সেই ফাঁদে পড়ে জীবনটা হবে হাহাকার।

সংসারে সব নিয়ম মেনে যদি হওয়া যায় খুশি,

তবে সে সংসারে মা লক্ষ্মীর বিরাজমান সর্বদাই বেশি।

বিজ্ঞানমনস্ক অরিন্দমের কাহিনী (ছোট গল্প)

অরিন্দম ছোটবেলা থেকে যেমন দুষ্ট তেমনি দেদীপ্যমান ছাত্র অর্থাৎ ব্রিলিয়ান্ট ছিলেন। বিজ্ঞানমনস্ক
মন নিয়ে সবসময় পড়াশুনা করতো । পড়তে বসলে সারাক্ষণ মাকে বিভিন্ন প্রশ্ন নিয়ে হয়রানি
করত।আবার খাওয়ার সময় মাকে প্রচণ্ড জ্বালাতন করতো আর মাকে বলতো , মা বিজ্ঞানীরা
অনেক যন্ত্র আবিষ্কার করেন। যদি এমন হতো গটফ্রাইড উইলহেম লিবনিজ ক্যালকু লেটরের মতো
আরেকটি যন্ত্র আবিষ্কার করতেন যে বোতাম টিপলে ভাতগুলো আমার মুখে গিয়ে পড়ত আর
আমাকে কষ্ট করে হাত দিয়ে ভাত খেতে হতো না এবং তোমাকেও কষ্ট করতে হতো না। মা উত্তরে
বললেন প্রযুক্তি একদিকে যেমন উন্নত করেছে অন্যদিকে এর অপব্যবহারে সন্তানরা সৃজনশীলতার
ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। এখনকার অবাধ্য সন্তানেরা সারাক্ষণ বিভিন্ন মোবাইল গেমস এ ব্যস্ত
থাকে।মা কিছুটা বিরক্ত বোধ করলেও পরে ঠিকই ছেলের বিভিন্ন আবদারে আবার প্রশ্রয় দিতো।
বাবা কিন্তু প্রচণ্ড রাগী ছিল। একবার সাইকেলের জন্য আবদার করেছিল বাবার কাছে। বাবা বলল
সাইকেল থেকে পড়ে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তখন ছেলে বাবাকে বলল আমার ভরকেন্দ্র
আমি যদি ঠিক রাখতে পারি তবে মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে আমি সাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে যাব না
। বাবা রেগে বললেন তা ও দরকার নেই। বাবা তার বিজ্ঞানমনস্ক মনকে আরও উৎসুক করে
তোলার জন্য বিভিন্ন বিজ্ঞান বাক্স কিনে দিতেন জন্মদিনের উপহার হিসাবে আর ভবেশ রায়ের
লেখা বিভিন্ন বিজ্ঞানীর গল্প বই উপহার দিতেন । পঞ্চম আর অষ্টম শ্রেণীতে সে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি
পেয়েছিল। এস এস সি পরীক্ষাতে স্টার মার্ক স পেয়ে সে উচ্চ মাধ্যমিক নটরডেম কলেজে ভর্তি
হল। ক্লাসে বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে স্যারদেরকে ও সবসময় ব্যস্ত রাখতো।

অরিন্দমের বিজ্ঞান মনস্ক চিন্তাধারা মাঝে মাঝে তাকে যেমন বিপদে ফেলত সেই সাথে তার
সহপাঠীদেরকেও অনেক সময় তার জন্য বিপদে পড়তে হতো।একবার ল্যাবরেটরীতে প্র্যাকটিকাল
পরীক্ষার সময় স্যার সবাইকে লবণ বিশ্লেষণের জন্য পরীক্ষণীয় দ্রবণ দিলেন এবং অম্লীয় ও ক্ষারীয়
মূলক পরীক্ষা করার জন্য। এরপর সবল এসিড ও সবল ক্ষারের প্রশমন বিন্দু নির্ণয় করতে
বললেন। পরীক্ষার সময় শুরু হল । সবাই বুরেট ঠিক করে স্ট্যান্ডের সাথে লাগালো কিন্তু অরিন্দম
অন্য চিন্তা করতে করতে বুরেট শিথিল করে লাগিয়েছিল হয়তো। যেই মাত্র পরীক্ষণ শুরু করলো
সেইমাত্র বুরেট ভেঙ্গে পড়ে গেল এবং অরিন্দমকে দেখে তার প্রিয় তিন সহপাঠীর ও একই দশা
হল। সবচেয়ে মজার ব্যাপার ওদের নামের প্রথম অক্ষর ও অ বর্ণ দিয়ে শুরু অর্ক , অর্ণব,
অদিতি ! স্যার প্রথমে খুব বকা দিলেন এবং বললেন এটি কিভাবে ঘটলো, অরিন্দম বলল স্যার
এটি সমান্তরাল বর্ত নীর মতো ব্যপার, একটা বর্ত নী ফিউজ হলে যেমন সব বর্ত নীই ফিউজ হয়ে
যায়, ঠিক সেরকম । অবশ্য স্যার ছাত্ররা ভয় না পাওয়ার জন্য বললেন একটি দুটি বুরেট না
ভাঙ্গলে বিজ্ঞানী হওয়া যায় না। যাই হোক ওদের প্রত্যেককে দুই হাজার টাকা করে জরিমানা দিতে
হল বোকামির দণ্ডস্বরূপ । ওই পরীক্ষাতে সবাই A গ্রেড পেয়ে পাশ করলো।

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাতে ভালো পাশ করার পর সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হল ফলিত রসায়ন
বিভাগে। তার উৎসুক মন যেন আরও আপ্লুত হয়ে উঠলো রসায়নের বিভিন্ন রঙের বাহার দেখে।
স্যার সোডিয়াম নিয়ে কাজ করার সময় সবাইকে সাবধান করেছিলেন সোডিয়াম যাতে কেউ
পানিতে না ফেলে। স্যার এর সেই নিষেধাজ্ঞাতে যেন তার মনে আরও জেদ চেপে বসলো। সে এক
টু করো সোডিয়াম সিঙ্কের পানির মধ্যে ফেলে দিলো। যার ফলে সেখানে দাউ দাউ করে আগুন ধরে
উঠলো। অন্য ছাত্ররা ল্যাবরেটরি থেকে ভয়ে বের হয়ে গেল। ভাগ্যিস আগুন পাশের গ্যাস বার্নারে
লাগেনি ! অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র দিয়ে স্যার সাথে সাথে আগুন নিভিয়ে দিলেন । এই ঘটনার জন্য
অরিন্দমকে শাস্তি পেতে হল, ঐদিন ল্যাবরেটরি থেকে তাকে বের করে দেয়া হল।

অরিন্দম কয়েকদিন তার দুষ্টু মিকে চেপে রাখল ভয়ে। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার শুরু
হল তার দুষ্টামি।

অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে স্যার ফটোকেমিস্ট্রি নিয়ে ক্লাসে অনেক আলোচনা করলেন এবং ফোটনের
শোষণ এবং বিক্রিয়ার হার নিয়ে কথা বললেন। হঠাৎ করে স্যার অরিন্দমকে দাড়া করালেন এবং
Quantum Yield সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে বললেন। তখন অরিন্দম সঠিক সংজ্ঞা না বলে
ব্যাপারটাকে এভাবে বলল

স্যার আপনি লাইনের প্রথমে দাঁড়িয়ে আছেন, আপনার পিছনে আমার তিন ম্যাডাম দাঁড়ানো।
আপনিই প্রথম photon absorber। হঠাৎ এক ধাক্কায় আপনার সাথে সাথে আমার তিন ম্যাডাম
ও মাটিতে পড়ে গেলেন। ফলাফলস্বরূপ তার quantum yield এর মান less বা zero হবে। স্যার
অবশ্যই ততটা অসন্তুষ্ট হলেন না।

এভাবে দিন যায়, ক্ষণ যায়, অরিন্দমের উৎসাহের কোন অন্ত নেই। এবার ফাইনাল ভাইভা পরীক্ষার
সময় আয়োডোমিতি টাইট্রেশন সম্পর্কে জানতে চাইলে সে অবশ্যই সঠিক উত্তর দিলো যে মুক্ত
আয়োডিনকে Na2S2O3 দ্বারা টাইট্রেশন করতে হবে।

হঠাৎ তার মনে আরেকটি প্রশ্ন জাগল, সে স্যারকে বলল সমুদ্রের পানি বাষ্পীভূ ত হয়ে মেঘ হয়
এবং পরে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে আর সেই বৃষ্টির রঙ বর্ণহীন হয়।

অরিন্দম স্যার কে বলল স্যার আয়োডিন একটি উদ্বায়ী যৌগ। কিন্তু এখানে আয়োডিনকে যদি
কোনমতে বৃষ্টির পানির মতো তরলাকারে গ্রাহকপাত্রে জমা করা যেত তাহলে জলাধারটির রঙ
কমলা বাদামী রঙের না হয়ে যদি এমন রঙ্গিন নীল বর্ণ যুক্ত হতো যেমনটি স্টার্চে র দ্রবণে ধারণ করে ।
তাহলে সেই জলধারাটা কত সুন্দরই না লাগতো !

মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও অরিন্দমের জ্ঞানের ক্ষু ধা আর বিজ্ঞানের প্রতি অসম্ভব
আগ্রহ আর ভালোবাসা থাকার কারণে সে জীবনে অনেকদূর যেতে পেরেছিল। এরই ফলস্বরূপ
বিজ্ঞানমনস্ক মন নিয়ে চলতে চলতে সেই দুষ্ট অরিন্দম অবশেষে একটি বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে
গবেষণার কাজে সুযোগ পেয়ে গেল ।

আসলে বিজ্ঞানী হবার জন্য প্রয়োজন একটি বিজ্ঞানমনস্ক সুন্দর মনের ।

আমার আছে শুধু মহাকাল

গভীর তমিস্রাতে জন্মেছি আমি


তাই ভয় নেই কোন তিমিরের।
আমি চিনিনা কোন অতীত, জানিনা বর্ত মান
ভবিষ্যৎ ও আমার কাছে অনিশ্চিত।
আমার আছে শুধু মহাকাল,
যে কালের অতল গভীরে হারিয়ে যাবে অতীতের হৃদয় বিদারক স্মৃতি।
রিক্ত হস্তে আমি জন্মেছি এই অখিলে
কোন কিছু পাওয়ার নেশায় মত্ত নই আমি।
তাই ভয় নেই কোন পিছুটানের।
আমার আছে শুধু মহাকাল,
যে কালের অন্তরালে হারিয়ে যাবে সকল অদম্য শক্তি।
শুধু হৃদয়ে কিছু ভালবাসার অভিপ্রায় থাকবে কাব্যের মাঝে।

ধূলিকণা
কলমেঃ সুমি চৌধুরী
তাং-২২-০৯-২০২১ ইং
বায়ুমণ্ডলে কত ধূলিকণা উড়ে বেড়ায়,
সেই ধূলিকণা অন্য ভাসমান কণার সাথে মিশে বারিপাতের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
কংক্রিটের এই শহরজুড়ে ধূলিকণা নিয়ে কত কথা, কত লেখা, কত রচিত গান
বিজ্ঞানীদের মনও যেন আনমনা।
সমস্ত ধূলিকণা যেন ছোট ভগ্নাংশ খনিজ দ্বারা গঠিত
যেটি মহাজগতে স্টার ডাস্ট নামেও পরিচিত।
আন্তঃ চালিত ধূলিকণাকে যেন মনে হয় রাশিয়ার অম্বুদের মতন,
তেমনি অর্মিয়ীয় ধূলিকণাও দেখতে গ্রহের আংটির মতন।
সৌর সিস্টেমের মধ্যে আচ্ছাদিত ধুলো সৃষ্টি করে জোডিয়াল আলো,
মরুভূ মিতে অবস্থিত ধূলিকণাকে লাগে মুক্তোর মালার অনুপ্রভার আলো।
ধূলিকণা সবদিকে যেমন জীব বৈচিত্র্যকে অক্ষু ন্ন রাখার জন্য প্রয়োজন
আবার এটি শ্বাসকষ্ট , এলার্জি রোগীদের জন্য হয়ে দাঁড়ায় মৃত্যুর কারণ।
কিন্তু মানুষের মনে যখন এই ধূলিকণা বাসা বাঁধে মরীচিকার মতন
তখন তাকে নিংড়াতে হয় সঠিক বিচার বুদ্ধি দিয়ে ।

শিশুর স্বপ্ন
কলমেঃ সুমি চৌধুরী
তাং-২৬-০৯-২০২১

শিশুরা হল সরলতা ও পবিত্রতার প্রতিমূর্তি


তাদের মাঝে গড়ে উঠে সমাজের প্রতিচ্ছবি।
সব শিশুদের মনে সাধ জাগে পঙ্খিরাজে চড়ে আকাশে ঘুরে বেড়ানোর
মন মানেনা সারাক্ষণ ঘরে বসে থাকার।
বড়রা যেমন আনন্দেতে মনটা খুলে হাসে
শিশুর মনেও স্বপ্ন জাগে আনন্দেতে মনটা ভরে তোলার।
সকাল হলে, ঘুম ভেঙ্গে যখন দেখে শিশু মা বাবা সবাই ব্যাস্ত অফিস যাবার স্থলে
শিশুর মনটা থাকে বিচলিত অভিমানের ছলে।
কখনও আপন মনে, নিজের পড়া নিজে শিখে কিছুক্ষণ,
খেলাধুলাকে সঙ্গী করে নিজের সময় নিজে কাটায় সারাক্ষণ।
মাঝে মাঝে পুতু ল খেলে, আরও কত খেলায় দুষ্টু মিতে ভরা,
বর-কনে সাজিয়ে পুতু লের দেয় বিয়ে,
বর আসবে বলে সাজিয়ে রাখে ডালা,
মনের দুঃখ ঘুচাতে , নিজেও বউ সেজে শুরু করে খেলা।
সারাদিনের ক্লান্তি শেষে, যখন দেখে সবাইকে একসাথে,
তখন শিশুর মনে হয়, এবার চাঁদ পেয়েছে হাতে।
বড় ছোট সবার স্বপ্ন যেদিন একাকার হয়ে যাবে মিশে
এই সমাজটা ছুটবে দ্রুতগতিতে , থাকবে বীরের বেশে।
আগমনী বার্তা
কলমেঃ সুমি চৌধুরী
তাং-০৩-১০-২০২১ ইং

শরতের আকাশে শুভ্র মেঘের ভেলা,


হিমেল হাওয়ায় কাশফু লের দোলা।
মেঠো দাওয়ায় অঙ্কিত পদ্ম ফু লের আলপনা যেন,
আভাস দেয় জগজ্জননীর আগমনী বার্তা এ ধরায়।
এ বার্তায় প্রকৃ তি যেমন হাসে, তেমনি পাখিদের কলকাকলিতে মন যায় ভরে,
নৃত্যের তালে ছন্দময় হয়ে উঠে শিশুদের কোমল চিত্ত ।
চারিদিকে উচ্চারিত বোধনমন্ত্রে,
উদিত হয় নতু ন কলুষ মুক্ত প্রভাত ।
শরতের শুক্লা ষষ্ঠী তিথিতে মা কখনও আসেন নৌকায়, কখনও ঐরাবতে কখনও বা পালকিতে,
কাঁসর , ঘণ্টা, শাঁখ , ভেঁ পু বাজিয়ে সবাই মত্ত থাকে মায়ের আরতিতে ।
মা কখনও শান্তিদায়িনী, কখনও আবার ভব-ভয়হারিনী,
কখনও কাম-মোক্ষ সর্বদায়িনী, আবার কখনও দুর্গতিনাশিনী ।
ত্রিজগতে প্রকাশিত মা সর্বস্বরুপিনী,
মায়ের স্পর্শে হেমপ্রভ হয়ে উঠে যেন সম্পূর্ণ ধরণী ।
মাগো তব আগমন, আনে যেন কল্যাণ,
করে যেন দূর সকল অকল্যাণ।
আশীর্বাদের ছোঁয়ায় জাগে যেন সকলের প্রাণ।
আলোক জননী
কলমেঃ সুমি চৌধুরী
তাং-১৪-১০-২০২১ ইং
উথাল পাথাল মন যমুনায়,
মনটি যখন ভয়ে কাটে মৃত্যুর আশঙ্কারই ঢেউয়ে।
নিশীথে যখন খুঁজে বেড়াই সঠিক পথের সন্ধানে,
সাহায্যের হাত বাড়ায় না তো কেউ।
এমন সময় ঘন সুপ্তি তমসার এ দুর্যোগ ভেদি,
জেগে উঠলো ঊষার আলোয় আলোক জননীর মুখ।
মাগো তোমার মোহন স্পর্শে যেন দূর হয়ে যায় তাপদগ্ধ জীবনের মোহ কালিমা,
জীবনের প্রতিটি ধাপে যেন জ্বলে উঠে বিজলির আলোর মতো ঝলকানি।
হতবিহবল এ ধরাধামে মাগো, এসেছ তু মি আলোক বার্তা নিয়ে,
যেয়ো নাকো সন্তানদের একা রেখে এ দুর্দি নে ।
মহাউৎসবের এ মিলনমেলায় ,
সকল দুঃখ ভু লে ধরনী যেন মেতে উঠেছে আবারো নব প্রেমে।

নন্দিতা
কলমেঃ সুমি চৌধুরী
তাং-২৩-১০-২০২১ ইং
ওহে নন্দিতা
এত কি তোমার মনের ব্যথা ?
রেখেছো হৃদয়ে মনের কষ্ট অতি সঙ্গোপনে,
তোমার অশ্রুধারা নীরবে ফেলেছো কার পানে চেয়ে ,
নদীর ধারে একাকী বসে শুনিয়েছ তোমার ক্রন্দন ধ্বনি ।
জনমহাসমুদ্রের অশান্ত ঢেউ যেন,
কেড়ে নিয়েছে তোমার স্বপ্নের নীড়খানি ।
স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে পাওনি এখনো পূর্ণ স্বাধীনতা
হারিয়েছো ধর্মের তরে নিজের শান্তির বারতা ।
তোমার কান্নার রোলে ভাঙ্গেনি কারো কু ম্ভকর্ণের ঘুম,
তোমার জন্য ফোটেনি তো কোন ফু ল তাদের ব্যাথার মালঞ্চে।
হিংসা – বিদ্বেষ নয় , ধর্মযুদ্ধ নয় ফিরে আসুক স্বর্গীয় আনন্দময় চৈতন্য,
তবে তু মিও পাবে তোমার হৃদয় সমুদ্রে সুখের মোহনা ।

জগজ্জননী
কলমেঃ সুমি চৌধুরী
তাং-১২-১১-২০২১ ইং

প্রেমের দুয়ারে এসেছি মাগো ভিখ নিতে ,


যাবো না আমি ফিরে মা খালি হাতে।
মাগো তু মি কৃ পাময়ী, সনাতনী জগজ্জননী ,
হৃদকমলে যেন থাকে মা তোমার চরণ দু’খানি।
তু মি নিরাকার হয়ে ত্রিজগতে আসো সাকার রূপে,
কৃ পা কর মা এ ধরায় ক্ষমা স্বরুপিনী রূপে ।
একই বৃন্তে গড়ে উঠা আমরা একই পুষ্পের দলে,
দেশ জাতি ভেদ না করে সবাইকে তু মি ঠাঁই দাও তোমার চরণতলে।
অথচ তোমার এ ত্রিভু বনে মাগো গড়ে উঠেছে বিভেদতল ,
কি করে মাগো ঘুচে যাবে বিভেদ প্রাচীরের মনের খেদ ?
মুক্তির লাগি খুঁজি সারাপথ – কোথায় একটু আলো ,
যেদিকে তাকাই ঘোর অমানিশা যেন কু টিল কৃ ষ্ণ কালো ।
কু সন্তান বা সুসন্তান হই তু মি হবে মা পথের দিশারী,
তোমার শরণাগত হয়ে সবাই যেন ভাসায় জীবনতরী।
দূর হয়ে যাক সকল মনের খেদ, সকল হতাশা নাশি ,
ধূসর জীবনে ফু টু ক আবার ঊষার অরুণ হাসি।

শেখ রাসেল
কলমেঃ সুমি চৌধুরী
তাং-০১-১২-২০২১ ইং

জন্মেছিল সর্বকনিষ্ঠ সন্তান শেখ রাসেল


জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতা
বেগম ফজিলাতু ন্নেসার ঘর আলোকিত করে,
ধানমণ্ডির ৩২ নং বাসভবনে ১৮ই অক্টোবর ১৯৬৪ সালে ।
চারদিক যেন ঝলমলিয়ে উঠলো আনন্দের সমারোহে ,
চতু র্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন শেখ রাসেল ,
পড়াশুনার দিন কাটিয়েছিলেন ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কু ল এন্ড কলেজে।
সেই ছোট্ট নিষ্পাপ শিশুর স্বপ্ন ছিল শস্য শ্যামলে ভরা সোনার বাংলাকে ঘিরে,
বেঁচে থাকলে সৃষ্টি হতো এক দীপ্তময় , আলোকোজ্জ্বল , তারকাখচিত নক্ষত্রের ।
কিন্তু প্রদীপের সলতে আলো জ্বালানোর আগে ,
নিভিয়ে দেয়া হলো সেই আলোক প্রদীপ ।
মায়ের কাছে যাওয়ার করুণ আকু তি যেন পৌঁছায়নি ঐ নরপিশাচদের কানে,
মিথ্যে মায়ের কাছে যাওয়ার সান্ত্বনা দিয়ে প্রবঞ্চনা করে মেরেছিল ব্রাশ ফায়ার করে।
নিভু নিভু তে নিঃশেষ হলো সেইদিন,
ছোট্ট নিষ্পাপ শিশুটির প্রাণের স্পন্দন ।
কলঙ্কজনক ইতিহাসের সূচনা হয়েছিল সেই ১৫ই আগস্ট ১৯৭৫ সালে।
চলে গেছে শেখ রাসেল কোন এক অচিনপুরে ,
তবুও যেন মনে হয়
রক্তে রঞ্জিত সবুজ পতাকার সাথে রঙিন স্বপ্ন হয়ে,
বেঁচে আছে আজও সবার হৃদকমলে ।

অজানা সুর
কলমেঃ সুমি চৌধুরী
তাং-০৪-১২-২০২১ ইং
কোন এক অজানা সুরের স্রোতের টানে ,
হারিয়েছি আমার বিপন্ন তরীটাকে।
সেই তরীর কাণ্ডারি ছিলাম আমি নিজেই,
কিন্তু জনমহাসমুদ্রের অশান্ত ঢেউয়ে
বেসামাল অবস্থায় পড়ে হয়ে গেলাম দিশেহারা,
নাভিশ্বাস হয়ে উঠছে যেন যান্ত্রিক জীবনের সুরের তান।
বৈতরণী পাওয়ার আশায়, গিয়েছিলাম সুরের পিছনে,
সেই সুরের মাঝে আছে যেন এক হৃদয় মথিত তটিনীর কাহিনী ,
সেই তটিনীর স্রোত ছিল, জোয়ার ভাটা সব ছিল,
তবু মিলল না তো কোন মোহনার মুখ ।
তারপরও নিরুদ্দেশে যাওয়ার আগে বলতে পারি,
সুরের মাঝে হারিয়েছি যেন এক অজানা সুখ ।
শিক্ষক বান্ধব, অসাম্প্রদায়িক, সুযোগ্য প্রশাসক, ত্যাগী, মিষ্টভাষী , সহনশীল ও দায়িত্বশীল
পরিচালক মহোদয় প্রফেসর হোসাইন আহমেদ আরিফ ইলাহী স্যার , মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা ,
চট্টগ্রাম অঞ্চল। তিনি একজন আদর্শ প্রশাসক ও নানা গুণে গুণান্বিত। স্যার অফিসে আগত
সম্মানিত শিক্ষকদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেন এবং দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন ।
মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে স্যারের কর্মময় জীবনে উত্তরোত্তর সাফল্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি ।
রহস্যময়ী
কলমেঃ সুমি চৌধুরী
তাং-২৪-১২-২০২১ ইং

ঘোর অমানিশার রাতে, সম্প্রীতি একাকী নির্জ নে তার স্বপ্নের বাড়িতে বসে আছে। মাস্টার্স পরীক্ষা
শেষ, স্বামী বড় প্রশাসনিক কর্মকর্তা, স্বামীর বদলির কারণে আর নিজের চাকরির খোঁজে ঢাকা
শহরে এসেছে ওরা। এক শিশু সন্তান ঘর আলো করে এসেছিলো, সেও প্রায় একবছর হয়ে গেলো।

ওরা যে ফ্ল্যাটে থাকে, সেটার নানারকম দুর্নাম শুনতে পেয়েছে এসে অবধি, এখানে নাকি নানান
ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছিলো, কিন্তু আধুনিক মনস্ক সম্প্রীতি তাতে কান দেয়নি। ওর মতে, এসব
নিছক কাকতালীয় ঘটনা, কিন্তু সবাই বলতো বাসার কাছেই অবস্থিত রায়ের বাজারের বধ্যভূ মির
কাহিনী। সম্প্রীতি যুদ্ধ দেখেনি, দেশ স্বাধীন হবার এক যুগ পর ওর জন্ম হয়েছিলো। বাবা আর
মায়ের মুখে যুদ্ধের কাহিনী শুনেছিলো। শুনেছে বাবার দুঃসাহসীকতার কাহিনী, সাইকেলে করে
মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার পৌঁছে দিতেন বলে পাকিস্তানী আর্মি ধরে নিয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু ভাগ্যক্রমে
বেঁচে গেলেও নরপশুদের অবর্ণনীয় লাঠিপেটা আর অত্যাচার তাঁর শরীরে ছাপ রেখে গিয়েছিলো,
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ব্যাথায় কাতরাতে দেখেছে তাঁকে সম্প্রীতি। সম্প্রীতির দশ বছর বয়সে তার বাবা
মারা যান, তাই সে আর কোন কিছুতে ভয় পায় না । অনেক সংগ্রামের মধ্যে বড় হয়েছে সে,
দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসাবে কোন বাধাই মানতো না সে আর প্রতিবাদী ধরণের নারী ছিলো সে।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি অকৃ ত্রিম শ্রদ্ধা রয়েছে তার আর রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমান এর প্রতি অকৃ ত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। ওনার ঐক্যতানের সুরে একত্রিত হয়ে
এবং নয় মাস যুদ্ধ করে বাংলার যেসব দামাল ছেলেরা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে
রক্তে রঞ্জিত সবুজ পতাকা ছিনিয়ে এনেছিলো তাঁদের পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতো সে। গুজবে
কান দেয়ার অভ্যাসও তার ছিল না তাই।

একদিনের ঘটনা, বাচ্চার জন্য খিচু ড়ি গরম করে টেবিলে রেখেছিলো সে, পিচ্চিটাকে স্নান করিয়ে
বিছানায় অয়েলক্লথের ওপর বসিয়ে নিজে চট করে একটু ওয়াশ রুম থেকে ঘুরে এলো সম্প্রীতি।
এসেই ভীষণ চমকে গিয়ে দেখলো, খিচু ড়িতে হাত ডু বিয়ে মহানন্দে খাচ্ছে তার বাচ্চা, হাত আর
মুখ মাখামাখি হয়ে আছে খিচু ড়িতে। কিন্তু ওর স্পষ্ট মনে আছে খাবারটা সে টেবিলে রেখেছিল,
তার বাচ্চার সামনে নয় !
কিছুদিন পরের ঘটনা, কোন একটা জরুরী কাজে তাড়াহুড়া করে বাইরে বেরোবার ছিলো, হাত
থেকে অসাবধানে সিঁদুরের কৌটা ফেলে দিলো সম্প্রীতি, কিন্তু এতই তাড়া দিচ্ছিলো ওর স্বামী যে
সেটা যে তু লে জায়গাটা মুছে রাখবে, সে সময়টা পেলো না। কিন্তু বাইরে থেকে এসে দেখলো ,
মেঝেটা পরিষ্কার করে মুছে রাখা, আর সিঁদুরের কৌটা যেখানে থাকার কথা ছিলো সেখানেই আছে!
কিন্তু ওর স্পষ্ট মনে আছে সেটাকে মাটিতে পড়া অবস্থায়ই দেখেছিলো।

আরেকদিন, রান্নাঘরে রান্না করতে করতে পাশের সানসেট দিয়ে দেখতে পেলো এক ভীষণ লম্বা
আর কালো মহিলা, কু চি দেয়া থাক থাক জামা পরে চু লগুলো খোলা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে, আর হা হা
করে একটা ঝড়ো বাতাস যেন পাকিয়ে উঠছে সেই সাথে ! সানসেটটা যথেষ্ট সরু, সেখান দিয়ে
কারো হাঁটতে পারার কথা না, আর ওদের ফ্ল্যাটটা চার তলা উঁচু ! এবার কিন্তু বেশ ভয় পেয়ে
গেছিলো সে, দৌড়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে ড্রইং রুমে এসে ল্যান্ড ফোনে স্বামীকে ফোন দিলো, আর
স্বামীকে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে আসতে বললো। যদিও সে ভয় পেয়েছিলো, কিন্তু ওর উৎসুক
মন ঘটনার পেছনের কাহিনী জানতে চাচ্ছিলো। সে জানতে চাচ্ছিলো , কে সেই রহস্যময়ী, যে
অদ্ভু ত পোশাক পরে চারতলা সমান উঁচু জানালার কাছ দিয়ে হেঁটে গেলো। সম্প্রীতির কাছে সেই
অদ্ভু ত মহিলা ছায়াময়ী আর রহস্যময়ী হিসাবেই রয়ে গেলো ।

পরে একদিন জানতে পেরেছিলো, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অনেক লোকজনকে এই ফ্ল্যাট যে
জমিতে, সেখানেই মেরে গর্ত করে ফেলে রেখেছিলো পাকিস্তানীরা অনেকদিন, তাঁদের মধ্যে অনেক
শিশুও ছিলো ! এখানে ঘনবসতি হবার আগে আর এখনো অনেক মা’কেই তাঁদের সন্তানদের
মৃতদেহের খোঁজে সেই জায়গার আশেপাশে ঘোরাফেরা করতে দেখা যেতো। বেশি রাতের দিকে ,
সম্প্রীতি যেরকম দেখেছিলো, সেরকম সাদা পোশাক পরা অনেক লম্বা এক মহিলাকেও প্রায়ই
দেখা যেতো!
আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও, হয়তো সেই অতৃ প্ত মায়ের আত্মা এখনো খুঁজে চলেছে তাঁর
নাড়ি ছেঁ ড়া ধনের ছোট্ট মৃতদেহ , শেষবারের মতো বুকের ধনকে একবার দেখবে বলে ............
দেশ গড়ার কারিগর
কলমেঃ সুমি চৌধুরী
তাং-১০-০১-২০২২ ইং
ভাগ্যক্রমে নই তো আমরা শিক্ষক ,
অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে হতে হয়েছে প্রভাষক।
শিক্ষার গুণে পদোন্নতি দেয়া হয় বিভিন্ন মানদণ্ডে্‌
কলেজের সমগোত্রক হয়েও সৃষ্টি হয়েছে বৈষম্য।
বৈষম্যের বন্ধু র পথ পরিক্রমা করে শিক্ষকদের মন ভারাক্রান্ত।
সব শিক্ষকরা হয় না তো একই গুণের,
তাই শিক্ষক সমাজ গড়ে উঠে বিভিন্ন রুপের।
জালিয়াতি করে না তো কোন সৎ শিক্ষক
কিন্তু একজনের দোষে অবহেলিত হয় সকল শিক্ষক ।
যখন আমরা ছাত্র ছিলাম শিক্ষকদের সম্মান দিতাম সালাম করে
ভয় পেয়ে গুটিয়ে থাকতাম পড়ালেখায় মনটা দিয়ে।
এখন গুটিকয়েক ছাত্ররা সম্মান দেয়া দূরের কথা
রাস্তায় দেখলে ভান করে ব্যস্ত যেন আড্ডায় , স্মার্ট ফোন চালাতে গিয়ে।
সারাদিনের ব্যস্ততায়, কখনও খাতা দেখায় চলে শিক্ষকের জীবন
মন চাইলেও পারেনা সব কাজে অংশ নিতে সারাক্ষণ।
দেশ গড়ার কারিগর যাদের হাতে গড়ে উঠে সভ্যতা
তারাই আজ যেন অভাবের তাড়নায় হয়েছে সব্জি বিক্রেতা।
দেশে যেন আর ব্যপ্তি না ছড়ায় ভাইরাস ওমিক্রন
শিক্ষকদের শুনতে হবে না নিচ্ছে বেতন মাস জুড়ে সারাক্ষণ
অবশেষে দেশ জুড়ে সকল সভ্য সমাজের সুস্থতাই
কাম্য হোক যেন সকল শিক্ষক সমাজের।

অস্তিত্ব
কলমেঃ সুমি চৌধুরী
তাং-১৯-০১-২০২২ ইং
যদি কখনও নতু ন জনম হয় আমার
আমি যেন ফিরে আসি তোমার বাড়ির আঙ্গিনাতে।
হয়তো দূর্বাদলের ঘনশ্যাম হয়ে নয়তো নীল অপরাজিতা ফু লের গুল্ম লতা জড়ায়ে,
সেইদিন তু মি চিনে নিবে আমায় অনেক গুল্মলতার ভিড়ে,
দেখবে তু মি চোখ জুড়ায়ে।
থাকবো না আমি কাকতাড়ু য়ার মতো দাঁড়িয়ে ,
রইবো আমি সবুজ ঘাসের ঘ্রাণ নিতে ঘাসফড়িং হয়ে ।
সেইদিন থাকবে না কোন রেষারেষি মিথ্যে কাঁটাজালের বুনিয়াদ
থাকবে শুধু প্রকৃ তির অপরূপ আলতো ছোঁয়া ।
একটু হাওয়ায় যখন দুলবে গুল্ম লতার শিষ
বুঝবে তোমায় ডাকছি আমি তৃ ষ্ণা মেটানোর আশায়।
তু মি পাহাড়ী স্রোতধারা হয়ে নেমে এসে
দেবে একটু খানি জল সেই নুয়ে পড়া লতায়।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলবো আমি
তোমার সাথে মিশে আছি প্রতিটি ধূলিকণার অস্তিত্বে ।

শিরোনামঃ পুষ্পময়ী বসন্ত


কলমেঃ সুমি চৌধুরী
তাং-০৬-০৩-২০২২ ইং
শীতের সমাপনে সকালের সোনালি রোদ্দুর
আভাস দেয় বসন্তের প্রারম্ভের মঙ্গল ইঙ্গিত ।
সুরেলা পাখির কু হুতানে মুখরিত হয়ে উঠে চারিদিক।
পুস্পময়ী বসন্তের অজস্র সম্ভার
একে একে আসে আর চলে যায় বৎসরে বৎসরে ।
তবুও প্রকৃ তির নবযৌবনা রূপ এতোটু কু কমেনি কখনও।
বসন্তের আগমনে, ফাগুনের রঙ ছড়ায় সকলের মনে প্রাণে
বিস্ময়, বিমুগ্ধ চিত্তে সবাই যেন চেয়ে থাকে তারি পানে ।
নবপল্লবের সমারোহ তরু শাখে, আম্র কাননে মুকু ল ,
হোলি ও এই বসন্তে সবাই কৃ ষ্ণ গোকু ল।
লাল পলাশের রঙটি দেখে
শিমূল গাঁদার রঙটি মেখে ,
বসন্ত উৎসবে মাতোয়ারা সবাই ।
ফাগুন যেন সাজালো সকলের হৃদয় নতু ন আঙ্গিকে।

শিরোনামঃ চিরন্তন শেখ মুজিব


কলমেঃ সুমি চৌধুরী
তাং-১৭-০৩-২০২২ ইং
শত সহস্র কোটি প্রনাম জানাই
সেই মৃত্যুঞ্জয়ী নেতার শুভ জন্মদিনে।
যিনি দুর্যোগঘন তিমির আঁধারে
দেশকে নিয়েছিলেন আলোর পথে।
যার আলোর বিচ্ছুরণে জেগে উঠেছিলো
বাংলার দামাল ছেলেরা ।
যার দৃপ্তকণ্ঠে ঐক্য মন্ত্রে
উড়েছিলো স্বাধীন দেশের রক্তে রঞ্জিত সবুজ পতাকা।
যিনি জন্মেছিলেন গোপালগঞ্জের টু ঙ্গিপাড়ায় ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ
আদর করে ডাকা হতো ‘খোকা ’ সম্বোধনে ।
তিনিই হলেন বাংলার স্থপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
শত চেষ্টা করেও হায়েনার দল পারেনি লাগাতে , এক ফোঁটা কলঙ্কের দাগ
বরঞ্চ ঐতিহাসিক ভাষণের মতো আরও অনেক কর্মের মাঝে রেখেছেন তাঁর অমরত্বের কীর্তি ।
এই বঙ্গসন্তানের নির্দে শে বাংলার তরুণ সমাজ হলো যেন সজীব।
তাই বাংলার বুকে তাঁর নাম হলো চিরন্তন দীপ্ত শেখ মুজিব ।

শিরোনামঃ আপন ভাবনা


কলমেঃ সুমি চৌধুরী
তাং-০১-০৪-২০২২ ইং

মনের মধ্যে এক অদ্ভু ত অনুভূ তির জন্ম লয়,


আপন ভাবনা গুলো জীবনের ঘূর্ণিপাকে ঘুরে হৃদয়ের মাঝে করে নেয় স্থান।
চারদিকে সব কিছু যেন অনিত্য, অস্থির
এ ধরাতে বেঁচে থাকার প্রয়োজন বা কিসের ?
সবচেয়ে আপনজন যারা স্নেহ প্রীতিভরে
গড়ে তু লেছিল জীবন টাকে আনন্দময় করে।
আজ কোথায় যেন চকিতে মিলালো তারা
একটু উত্তাল ঢেউ যেন এসে
মুছে দিয়ে গেলো তাদের সেই পদচিন্হ ।
দুদিনের তরে এসেছি এ ভবে,
মন তো পারে না সবকিছু সয়ে নিতে নীরবে।
স্বার্থ ,লোভ, গোপন হিংসার ধুম্রলতায় ,
মনের আকাশের নীলিমা যেন যাচ্ছে হারিয়ে।
কেন বা আগমন এই নিখিলে
ভু লে যাই এই সারকথা মোরা অতি সহজে ।
মূল সেই কথা যদি থাকে সবার মনে
সুখ দুঃখ কিছু রবে না আর জীবনে।
রবে শুধু ব্যস্ততা শুদ্ধ কর্মের মাঝে।

শিরোনামঃ মা
কলমেঃ সুমি চৌধুরী
তাং-২৫-০৪-২০২২ ইং
ভালো লাগে, ভালোবাসি মাগো তোমার ঐ মুগ্ধ করা অপরূপ হাসি,
ভু বন ভরে দেখি মাগো।
তোমার উদার অতল রূপ
ছোটয় বড়য় মিলিয়ে তু মি
অসীম অপরূপ।
তোমার এই প্রকৃ তির তু মিই তু লনা
ঘরে বাইরে সবাই যখন আপনমনে আশার সৌধ গড়ে,
আমার মনটি পড়ে থাকে তোমার কৃ পার তরে।
নূপুর পায়ে ছন্দময়ে যখন হাঁট তু মি ,
নিবিড় অন্ধকারে ও মা চমকে উঠে তোমার আলোকদ্যুতি।
তোমার এই প্রকৃ তির তু মিই তু লনা ।
তোমার রুপের জাদু দেখে ভু লেছি বলে,
ফিরতে চাই মা তোমার কোলে।
হৃদয় শুকায়, গ্রীষ্ম বায় মা
তোমার এই প্রকৃ তির তু মিই তু লনা।
সুখে দুঃখে প্রতিদিন খেলছি যেন খেলাঘরে,
হোক নির্বিষ , দাও মা আশিষ দু’হাতে ভরে।
তোমার এই প্রকৃ তির তু মিই তু লনা।
সর্ব অঙ্গ জুড়ে মাগো তোমার রুপের আভরণ,
রক্তে নাচে মোক্ষ মুক্তি কণা সারাক্ষণ।
তোমার এই প্রকৃ তির তু মিই তু লনা।

প্রবন্ধ
শিরোনামঃ রবীন্দ্র-কথা
কলমেঃ সুমি চৌধুরী
তাং-০৮-০৫-২০২২ ইং

কাব্য জগতে যুগ যুগ ধরে যেসব সাহিত্য পূজারী অর্ঘ্য সাজিয়ে এসেছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকু র তাঁদের
মধ্যে শ্রেষ্ঠ পূজারী। কিন্তু ঊষার রক্তিম আকাশে উচ্চ কণ্ঠে তাঁর আগমনী বার্তা ধ্বনিত হয়নি, তিনি
এসে দাঁড়ালেন নিপুণ শিল্পীর অমর তু লিকা হাতে তাঁর স্বর্গীয় প্রতিভার পূর্ণ বিকাশ নিয়ে। যেদিন
তিনি সেই অর্ঘ্যের ডালি শস্য শ্যামলা বাংলা মায়ের আঁচলে ছড়িয়ে দিলেন, সেদিন সারা দেশে
পড়ে গেলো এক অভূ তপূর্ব আনন্দের সাড়া। চারিদিকে যেন বেজে উঠলো মাঙ্গলিক শঙ্খ।
কবির ভাষায় –
হে রবি ! তোমারে গগন ধরিয়া আছে
ধরিবে গগন অস্ত অচল পার –
---সজনীকান্ত দাস
১৩৩৩ বঙ্গাব্দের ২৫ শে বৈশাখ জোড়াসাঁকোর ঠাকু র বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকু র জন্মগ্রহণ করেন।
সেটি ছিলো কলকাতার এক ধনাঢ্য ও সংস্কৃ তিবান ব্রাহ্ম পিরালী ব্রাম্মণ পরিবার। বাল্যকালে
প্রথাগত বিদ্যালয় শিক্ষা তিনি গ্রহণ করেন নি। গৃহশিক্ষক রেখে বাড়িতেই তাঁর শিক্ষার ব্যাবস্থা করা
হয়েছিলো । আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী’
পত্রিকায় তাঁর ‘অভিলাষ’ কবিতাটি প্রকাশিত হয়। ১৮৭৮ সালে মাত্র সতেরো বছর বয়সে
রবীন্দ্রনাথ প্রথমবার ইংল্যান্ডে যান। ১৮৮৩ সালে মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। ১৮৯০
সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ পূর্ববঙ্গের শিলাইদহের জমিদারী এস্টেটে বসবাস শুরু করেন। ১৯০১ সালে
তিনি পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস
শুরু করেন। ১৯০২ সালে তাঁর পত্নী বিয়োগ হয়।
১৯০৫ সালে, তিনি বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। এরপর, ১৯১৩ সালে আসে
তাঁর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান । ‘গীতাঞ্জলী’ কাব্যের জন্য নোবেল পুরষ্কারে ভূ ষিত হন তিনি।
১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে নাইট উপাধি দেন। কিন্তু ১৯১৯ সালে জালিওয়ানওয়ালাবাগের
হত্য্যকান্ডের প্রতিবাদে তিনি সেই উপাধি ত্যাগ করেন।

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর কবি সমগ্র বাংলাদেশকে স্বাধীনতা আন্দোলনের ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ করে
সমগ্র জাতির মনে এক মহৎ প্রেরণার সঞ্চার করেন। বর্ত মানে নেতৃ বৃন্দ পল্লী সংগঠনে আত্মনিয়োগ
করছেন, কিন্তু এর মুলে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সাম্প্রতিক কালে বাংলা ভাষার মাধ্যমে যে শিক্ষাদানের
ব্যবস্থা করা হয়েছে, তাঁর মুলেও কবিগুরুর অবদান অপরিসীম। তিনি ছিলেন মানবতা ও বিশ্ব
প্রেমের মূর্ত প্রতীক। এর প্রমাণ পাওয়া যায়, যখন তিনি ১৯০০ সালে জগদীশচন্দ্রের কৃ তিত্ব ও
সঙ্কটের কথা জানতে পেরে ত্রিপুরায় গিয়ে মহারাজের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করেছিলেন।
স্বদেশী ও আন্তর্জাতিক যে কোন অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে তিনি কখনও কু ণ্ঠিত হন
নি। কবির দেশপ্রীতি ভারত অতিক্রম করে দেশ হতে দেশান্তরে পরিব্যাপ্ত হয়েছে , মৈত্রীর বাণী সারা
বিশ্বে হয়েছে ধ্বনিত। তিনি অতি সুক্ষ্ম আত্মিক শক্তির প্রভাবে প্রভাবান্বিত হয়ে মানুষের মনে
পশুভাব ও হিংসা বিদ্বেষ দূরীকরণে প্রবৃত্ত হয়েছিলেন। তিনি লক্ষ্য করেছিলেন, পাশ্চাত্ত্যের প্রাণহীন
শিক্ষাপদ্ধতি মানুষকে অধিকতর নিষ্ঠু র ও হিংস্র করে তোলে, বিলাসী মনোভাব জাগিয়ে তোলে।
তাই এই প্রাণহীন শিক্ষা পদ্ধতির আমূল পরিবর্ত ন কামনায় তিনি শান্তিনিকেতনে ‘বিশ্বভারতী’
স্থাপন করেন। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কবিগুরুর বিরাট কীর্তি ।

১৩৪৮ সালের ২২শে শ্রাবণ বাংলার আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে উঠলো। বাংলা তথা বিশ্বের কবি
রবীন্দ্রনাথ পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিলেন। দিনটি ছিল রাখী পূর্ণিমা। স্বদেশী আন্দোলনের যুগে
দেশবাসীর মধ্যে সাম্য মৈত্রী , ভ্রাতৃ ত্ববোধ জাগ্রত করার জন্য কবিগুরু রাখী-বন্ধনের উৎসব প্রথাটি
ঐ তিথিতে প্রবর্ত ন করেন। বক্সা দুর্গস্থ রাজবন্দীরা কবির উদ্দেশে জানিয়েছিলেন অভিনন্দন।
প্রত্যাভিনন্দনে কবি জানিয়েছিলেন –
নিশীথের লজ্জ্বা দিল অন্ধকারে রবির বন্দন
পিঞ্জরে বিহঙ্গ বাঁধা সঙ্গীত না মানিল বন্ধন
ফোয়ারার রন্ধ্র হাতে
উন্মুখর ঊর্ধ্বস্রোতে
বন্দী বারি উচ্চারিল আলোকের কি অভিনন্দন ।
রবীন্দ্রনাথ চলে গেলেন , কিন্তু মৃত্যুর সময় রেখে গিয়েছিলেন কিছু অসমাপ্ত কার্যাবলী। রবীন্দ্র
অন্তর্ধানের পর শান্তি নিকেতনের প্রতিটি স্থান ও পথ যেন আজও এক নীরব বেদনা বহন করে
চলেছে । সেই শাল পলাশ বীথিকার দুপাশে সারি সারি বৃক্ষরাজি যেন কবির উদ্দেশ্যে কাঁদে
চরণরেখা তব যে পথে দিলো লেখি
চিন্হ আজি তারি আপনি ঘুচালে কি ,
অশোক রেণুগুলি রাঙালে যার ধূলি
তারে যে তৃ ণতলে আজিকে লীন দেখি।

শিরোনামঃ বিদ্রোহী কবি


কলমেঃ সুমি চৌধুরী
তাং-২৮-০৫-২০২২ ইং
জন্ম তোমার বর্ধমান জেলার চু রুলিয়ায়
নাম দিয়েছিলো সবাই দুখু মিয়া।
অল্প বয়সে হলে তু মি পিতৃ হারা
জীবন সংগ্রামে তু মি হলে দিশেহারা।
কিন্তু অমর তু লিকা হাতে
এনেছ তু মি স্বর্গীয় প্রতিভা।
১৯২৫ সালে প্রকাশিত হয় তোমার ‘সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থ
সেথায় তু মি লিখেছিলে জগন্নাথের সাম্যের কথা।
ঈশ্বরের গড়া সংসারে যারা অসাম্যের বীজ বুনে চলেছে
তু মি তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলে সাম্যের প্রতীক হয়ে।
তোমার ‘মানুষ’ নামের কবিতাটি
পড়ে ভেদাভেদ ভু লে যাই আমরা সকলে।
কোথা চেঙ্গিস, গজনি-মামুদ কোথায় কালোপাহাড়
ভেঙ্গে ফেলো ঐ ভজনালয়ের যত তালা দেওয়া দ্বার ।
তোমার ‘অগ্নিবীণা’ কাব্যগ্রন্থে উঠেছিলো
যেন সুরের ঝংকার,
সেই সুরের মূর্ছ নায় মূর্ছি ত হলো যেন নবসবুজের দল।
তু মিই বাংলার দামাল ছেলেদের গড়ে তু লেছিলে শ্রেষ্ঠ বীর হিসাবে
বাংলার দুর্গে তু মিই উড়িয়েছিলে বিজয়ের ধূমকেতু
তু মিই ‘চির উন্নত মম শির’।
তু মিই বাংলার বিদ্রোহী , জাতীয়, সাম্যের , প্রেমের ও মানবতার কবি
তু মিই সৃষ্টির সেরা কবি কাজী নজরুল ইসলাম
শত সহস্র কোটি প্রণাম জানাই তোমার পদকমলে।

শিরোনামঃ মনোভাব
কলমেঃ সুমি চৌধুরী
তাং-১০-০৬-২০২২ ইং

নইতো আমি স্বনামধন্য কবি


কিন্তু চোখ বুজে ঘুরে আসতে পারি সম্পূর্ণ পৃথিবী।
নয় বা হলো আমার কাব্যটি সুষমামণ্ডিত, চিত্তাকর্ষক, ছন্দোময়,
মনের তু লিকা হাতে নিয়ে আনন্দ উপভোগ করতে পারি সবসময়।
যখন কোন কাব্য লিখি
পাঠক শুধায় মোরে , এটি কি মোর জীবনকাহিনী ।
শুনতে লাগে বেশ যখন অন্যের প্রতিচ্ছবি
ফু টিয়ে তু লতে পারি নিজ কাব্যের মাঝে।
কাব্য পড়ে কাব্য শিখি
কাব্যের মাঝে গুনী কবির সান্নিধ্যে আসি ।
সৃজনের আকাঙ্ক্ষা বাড়তে থাকে অনুশীলন করে,
কবিত্ব মনোভাব জেগে উঠে হৃদয়ের মাঝে।

শিরোনামঃ সময় হলে চলে যাবো


কলমেঃ সুমি চৌধুরী
তাং-২৪-০৬-২০২২ ইং

সময় হলে চলে যাবো


দূর আকাশের নীলিমায়।
মৃত্যুর হাতছানিকে ঠেকাবার
কার এতো সাধ্য রয় ?
সময় হলে চলে যাবো
পাহাড় ভেঙ্গে হাওয়ার মাঝে
শরীরটা কু রে কু রে খাবে
কল্পলোকের স্বপ্নগুলো ।
ঘুরছি হাওয়ায় ঘুড়ির মতন
মুখ ঢেকেছি পাহাড় ভেঙ্গে
সময় হলে চলে যাবো
হৃদয় নিয়ে নদীর মতন ।
বায়ু নেড়ে ব্যূহ ভেঙ্গে
ভাঙছি বনানী গড়ছি দুয়ার,
উথাল-পাথাল মন যমুনায়
সময় হলে চলে যাবো –
ভূ ষণ ফেড়ে
দুয়ার খুলে ......

শিরোনামঃ আক্ষেপ
কলমেঃ সুমি চৌধুরী
তাং-১৪-০৭-২০২২ ইং

যা কিছু সত্য, যা কিছু সুন্দর


সব তোমার জন্য ।
যা কিছু অসত্য , যা কিছু অসুন্দর
সব আমার জন্য।
স্বার্থপর হতে পারিনি বলে
জীবনটা হয়ে উঠেছে বিবর্ণ ।

You might also like