Professional Documents
Culture Documents
সুমি চৌধুরী
চরণতল
সময় ফু রিয়ে এসেছে বলে জনতার পথ ঠেলে যেতে পারিনি তোমায় দেখতে মাগো,
ইচ্ছে করে এক মিনিটে শেষ করে দিই, যারা মিথ্যে বলে অপরাধী বানায় ।
---x---
সুখ পাখি..
ধরণীর বুকে খুঁজি ফিরি নিদ্রিত সুখ পাখিরে
########################
বিন্দু
পৃথিবীর এক প্রান্তে যদি থাকি আমি
সুরঞ্জনা
বড় হয়েছে একসাথে।
অচিন বিহঙ্গ
নির্মম
নির্মম এ বিশ্বে কোটি কোটি মানুষের ভিড় কিলবিল করে ছারপোকার মতন,
মনের মাঝে নিচু তা, ভীরুতাকে স্থান করে দিয়ে করেছিস পরিহাস।
পাতাল ফুঁ ড়ে যদি কোন বিধাতা আসতো আলোক প্রদীপ হাতে নিয়ে,
########################
মানুষের সকল সুখ দুঃখের অনুভু তিকে কথায় লিখে প্রকাশ করা যায় না, তা উপলব্ধি করে
জানতে হয়। সকল দুঃখের অনুভূ তি যদি তু লোর মতো মেঘ হয়ে ঘুরে না বেড়িয়ে বৃষ্টি হয়ে ঝরে
পড়ত তবে মানুষের মনে হতাশা ভাবটা জন্মাত না। সেই বিষণ্ণতা থেকে সৃষ্টি হতো না কোন বিরল
রোগের এবং জীবনটা হয়ে উঠত না হাহাকারে পরিপূর্ণ। তেমন একটি ছোট গল্পের নায়ক সাইমন
এবং তাকে ঘিরেই রচিত হল অনুভূ তি নামের গল্পটি।
ফর্সা ,সুন্দর চোখ দুটি যেন হরিনের মতো মায়া বসানো টানা টানা অনেকটা মেয়েদের মতো দেখতে।
সাইমন ছেলেবেলাতে খুব আনন্দে দিন কাটাত তার খেলার জগত নিয়ে। বাবা ব্যাংকে চাকরি
করতেন। মা গৃহিণী ,তিন ভাইবোনের মধ্যে সাইমন সবার বড়। পঞ্চম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি
পেয়েছিল, তাই বাবার ইচ্ছে ছিল ছেলে বড় হয়ে ডাক্তার হবে। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস !
সাইমনের বাবা একদিন অফিস থেকে আসার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান !
সাইমন তখন তার ছোট ছোট হাতে বাবার লাশ ধরেছিল কিন্তু তখনও সাইমন ভালো করে বুঝতে
পারত না।
দিন যায়, ক্ষণ যায় কিন্তু সাইমনের মনে যেন দুঃখগুলো বাসা বাঁধতে শুরু করে। সবার সঙ্গে যখন
তাদের বাবারা যেত, তখন সাইমন বাবার শার্টে র মতো শার্ট পরা কাউকে দেখলেই পিছন থেকে
গিয়ে ঝাপটে ধরত ! মায়ের টিউশনির ফি দিয়ে কোনোমতে সাইমন, তার ছোট বোন ও ভাইয়ের
পড়ালেখার খরচ চলত। উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে পড়াকালীন সময়ে সাইমনকে টিউশনি করে এইচ
এস সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়েছিল। প্রথম বিভাগে পাস করে কোচিং এ ভর্তি হয়েছিলো
ডাক্তার হবার আশায় বুক বেঁধে । কিন্তু সে গুড়ে বালি পড়ল , সামান্য কয়েক পয়েন্ট এর জন্য
হারাতে হল তার বুকে সযত্ন লালিত আশাকে ! এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে ভর্তি
হল সাইমন। প্রতিদিন সে সকালে ৭ টার শাটল ট্রেনে করে যেত। শাটল ট্রেনে সবাই নিজেদের
মতো সময় কাটাত, কেউ বা গল্প করে, কেউ বা গানে মত্ত থাকতো। বগিতে কেউ তবলা বা বাঁশি
বাজিয়ে ভ্রমণটাকে উপভোগ করতো। কিন্তু সাইমনের এসব কিছুতে মন বসতো না, সে তার
নিজের মতো জানালার বাইরে তাকিয়ে প্রাকৃ তিক পরিবেশকে উপভোগ করতো আর ক্লাস শেষে
টিউশনি করে ক্লান্ত দেহে বাসায় ফিরে আসতো। রাত ১১ টায় ফিরে নিজের পড়া পড়তো এবং
পাশাপাশি ডায়েরি লিখত । এভাবে দিন যায় , অনার্স পরীক্ষা শেষ করে এবং অনার্সে সাইমন
প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে। সাইমনের বন্ধু ছিল কিশোর আর রূপা। সাইমন রূপাকে
পছন্দ করতো যেটি পরে সাইমনের ডায়েরি পরে জানা যায়। কিন্তু সাইমন রূপাকে কখনও মুখ ফু টে
বলতে পারেনি। যদি বন্ধু ত্বকে হারিয়ে ফেলে এই ভয়ে , কিন্তু রূপা সাইমনকে বন্ধু বলেই ভাবতো।
কোয়ান্টা নিয়ে পড়তে পড়তে এমন পরিস্থিতিতে সে নিজেকে কোয়ান্টার সাথে তু লনা করতে
লাগলো। তার মনে হতে লাগলো কোয়ান্টার মতো সেও ক্ষু দ্রাকৃ তির এবং সেও সকলের কাছে
ক্ষু দ্র ও তু চ্ছ প্রকৃ তির। অথচ সাইমন জানত না কোয়ান্টা ছাড়া সম্পূর্ণ জগতটা অচল। এই
অবস্থায় দেখা গেলো সাইমন মাঝে মাঝেই কোন কাজ করে ভু লে যেতে লাগলো। যেমন টং
দোকানে খেয়ে টাকা দিতে ভু লে যেত, কোন কোন সময় পথ ভু ল করে অন্য পথে চলে যেত !
হিতাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শে ডাক্তার দেখাল সে, বিভিন্ন পরীক্ষার পরে দেখা গেল সাইমন ভু গছে
‘ডিমেনসিয়া’ তে, সহজ ভাষাতে বলতে গেলে Short Term Memory Loss ! এই দুরারোগ্য
অসুখে আক্রান্ত হয়ে তার জীবনটাই ওলট পালট হয়ে গেলো। মাস্টার্সে কোনরকমে দ্বিতীয় শ্রেণীতে
পাস করল আর নামলো চাকরির খোঁজে। কিন্তু চাকু রির ইন্টারভিউতে গেলে সে কোন রকম উত্তর
দিতে পারত না ! হঠাৎ করেই ভু লে যেত তার উত্তরটা ! এভাবেই নিমজ্জমান হতাশায় সাইমনের
দিন কাটে । যেখানে সাইমনের মতো ছেলের বড় কোন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হওয়ার কথা ছিল,
সেখানে একটা সাধারণ চাকরি জুটাতে হিমশিম খেয়ে যেতে হচ্ছে । ছোট ভাইয়ের চাকরির টাকায়
কোনরকমে সংসার চলতো । এদিকে রূপা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর হিসাবে যোগ দেয় এবং বড়
একজন বিজ্ঞানীর সাথে তার বিয়ে হয়ে যায়।
Memory Loss হতে হতে সাইমন এখন একজন মানসিক রোগীতে পরিণত হল। জীবন কারো
জন্য থেমে থাকে না। তার নিয়মে সে চলতে থাকে। সাইমন ইংরেজিতে খুব ভালো ছিল। সে
এখনও মাঝে মাঝে একা একা বিড়বিড় করে ইংরেজি বলতে থাকে। অথচ জীবন নিয়ে তার কোন
হুঁশ জ্ঞান নেই। সাইমন সুন্দর পরিপাটি সুট টাই পড়ে কোন ট্রেন আসলে দৌড়ে যায় রূপাকে দেখার
জন্য। কত শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছাত্রী আসে যায়, কিন্তু সাইমনের কোন পরিবর্ত ন হল না। সে কাউকে
দেখলে এখনও বলে Please give me one taka !
জীবন একটাই । এক জীবনে এত হতাশা থাকলে মানুষ এমনিতেই মানসিক রোগীতে পরিণত
হবে। এই হতাশা থেকে সৃষ্টি হতে পারে মাদকাসক্ত যুব সমাজের। যুব সমাজের আবেগ অনুভূ তি
এতো ঠু নকো হওয়া উচিত নয় যে সারাটা জীবন কালো মেঘে ঢাকা থাকবে। মেঘ সরে গেলে
সূর্যকে অবশ্যই দেখা যাবে। সূর্যের মধ্যে প্রভাময় অণু বিদ্যমান । সেই প্রভাময় অণু দ্বারা জীবনকে
আলোকিত করে আবেগ প্রবণ না হয়ে পুরানো অনুভূ তিকে নিংড়ে ফেলে নতু ন সোনার বসতি
গড়ে তোলা উচিত। তাহলে এদেশে আর হতাশাচ্ছন্ন , মেঘাচ্ছন্ন পরিবেশ থাকবে না । থাকবে শুধু
নতু ন সোনালি দিনের অনুভূ তি গুলো যা রংধনুর রঙ হয়ে আকাশে ভাসবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান
নিভিয়ে দিলে সে আলোক প্রদীপ
সেই আলোক প্রদীপ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বঙ্গ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান।
৭ই মার্চে র ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্যে রেখে গেছেন বঙ্গবন্ধু তাঁর অমরত্বের কীর্তি
তাই যুগ যুগ ধরে পালিত হবে ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ।
স্বপ্নে বিচরণ
দেখতে যেন মনে হয় এটি কোন ক্ষু দ্র কনার প্রতিপ্রভা আলো।
########################
সংসার
সংসার শব্দের অর্থ সম্যক স্মৃতিযুক্ত অর্থাৎ সম্পূর্ণরূপে জন্ম মৃত্যুর আবর্তে যুক্ত।
অরিন্দম ছোটবেলা থেকে যেমন দুষ্ট তেমনি দেদীপ্যমান ছাত্র অর্থাৎ ব্রিলিয়ান্ট ছিলেন। বিজ্ঞানমনস্ক
মন নিয়ে সবসময় পড়াশুনা করতো । পড়তে বসলে সারাক্ষণ মাকে বিভিন্ন প্রশ্ন নিয়ে হয়রানি
করত।আবার খাওয়ার সময় মাকে প্রচণ্ড জ্বালাতন করতো আর মাকে বলতো , মা বিজ্ঞানীরা
অনেক যন্ত্র আবিষ্কার করেন। যদি এমন হতো গটফ্রাইড উইলহেম লিবনিজ ক্যালকু লেটরের মতো
আরেকটি যন্ত্র আবিষ্কার করতেন যে বোতাম টিপলে ভাতগুলো আমার মুখে গিয়ে পড়ত আর
আমাকে কষ্ট করে হাত দিয়ে ভাত খেতে হতো না এবং তোমাকেও কষ্ট করতে হতো না। মা উত্তরে
বললেন প্রযুক্তি একদিকে যেমন উন্নত করেছে অন্যদিকে এর অপব্যবহারে সন্তানরা সৃজনশীলতার
ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। এখনকার অবাধ্য সন্তানেরা সারাক্ষণ বিভিন্ন মোবাইল গেমস এ ব্যস্ত
থাকে।মা কিছুটা বিরক্ত বোধ করলেও পরে ঠিকই ছেলের বিভিন্ন আবদারে আবার প্রশ্রয় দিতো।
বাবা কিন্তু প্রচণ্ড রাগী ছিল। একবার সাইকেলের জন্য আবদার করেছিল বাবার কাছে। বাবা বলল
সাইকেল থেকে পড়ে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তখন ছেলে বাবাকে বলল আমার ভরকেন্দ্র
আমি যদি ঠিক রাখতে পারি তবে মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে আমি সাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে যাব না
। বাবা রেগে বললেন তা ও দরকার নেই। বাবা তার বিজ্ঞানমনস্ক মনকে আরও উৎসুক করে
তোলার জন্য বিভিন্ন বিজ্ঞান বাক্স কিনে দিতেন জন্মদিনের উপহার হিসাবে আর ভবেশ রায়ের
লেখা বিভিন্ন বিজ্ঞানীর গল্প বই উপহার দিতেন । পঞ্চম আর অষ্টম শ্রেণীতে সে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি
পেয়েছিল। এস এস সি পরীক্ষাতে স্টার মার্ক স পেয়ে সে উচ্চ মাধ্যমিক নটরডেম কলেজে ভর্তি
হল। ক্লাসে বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে স্যারদেরকে ও সবসময় ব্যস্ত রাখতো।
অরিন্দমের বিজ্ঞান মনস্ক চিন্তাধারা মাঝে মাঝে তাকে যেমন বিপদে ফেলত সেই সাথে তার
সহপাঠীদেরকেও অনেক সময় তার জন্য বিপদে পড়তে হতো।একবার ল্যাবরেটরীতে প্র্যাকটিকাল
পরীক্ষার সময় স্যার সবাইকে লবণ বিশ্লেষণের জন্য পরীক্ষণীয় দ্রবণ দিলেন এবং অম্লীয় ও ক্ষারীয়
মূলক পরীক্ষা করার জন্য। এরপর সবল এসিড ও সবল ক্ষারের প্রশমন বিন্দু নির্ণয় করতে
বললেন। পরীক্ষার সময় শুরু হল । সবাই বুরেট ঠিক করে স্ট্যান্ডের সাথে লাগালো কিন্তু অরিন্দম
অন্য চিন্তা করতে করতে বুরেট শিথিল করে লাগিয়েছিল হয়তো। যেই মাত্র পরীক্ষণ শুরু করলো
সেইমাত্র বুরেট ভেঙ্গে পড়ে গেল এবং অরিন্দমকে দেখে তার প্রিয় তিন সহপাঠীর ও একই দশা
হল। সবচেয়ে মজার ব্যাপার ওদের নামের প্রথম অক্ষর ও অ বর্ণ দিয়ে শুরু অর্ক , অর্ণব,
অদিতি ! স্যার প্রথমে খুব বকা দিলেন এবং বললেন এটি কিভাবে ঘটলো, অরিন্দম বলল স্যার
এটি সমান্তরাল বর্ত নীর মতো ব্যপার, একটা বর্ত নী ফিউজ হলে যেমন সব বর্ত নীই ফিউজ হয়ে
যায়, ঠিক সেরকম । অবশ্য স্যার ছাত্ররা ভয় না পাওয়ার জন্য বললেন একটি দুটি বুরেট না
ভাঙ্গলে বিজ্ঞানী হওয়া যায় না। যাই হোক ওদের প্রত্যেককে দুই হাজার টাকা করে জরিমানা দিতে
হল বোকামির দণ্ডস্বরূপ । ওই পরীক্ষাতে সবাই A গ্রেড পেয়ে পাশ করলো।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাতে ভালো পাশ করার পর সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হল ফলিত রসায়ন
বিভাগে। তার উৎসুক মন যেন আরও আপ্লুত হয়ে উঠলো রসায়নের বিভিন্ন রঙের বাহার দেখে।
স্যার সোডিয়াম নিয়ে কাজ করার সময় সবাইকে সাবধান করেছিলেন সোডিয়াম যাতে কেউ
পানিতে না ফেলে। স্যার এর সেই নিষেধাজ্ঞাতে যেন তার মনে আরও জেদ চেপে বসলো। সে এক
টু করো সোডিয়াম সিঙ্কের পানির মধ্যে ফেলে দিলো। যার ফলে সেখানে দাউ দাউ করে আগুন ধরে
উঠলো। অন্য ছাত্ররা ল্যাবরেটরি থেকে ভয়ে বের হয়ে গেল। ভাগ্যিস আগুন পাশের গ্যাস বার্নারে
লাগেনি ! অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র দিয়ে স্যার সাথে সাথে আগুন নিভিয়ে দিলেন । এই ঘটনার জন্য
অরিন্দমকে শাস্তি পেতে হল, ঐদিন ল্যাবরেটরি থেকে তাকে বের করে দেয়া হল।
অরিন্দম কয়েকদিন তার দুষ্টু মিকে চেপে রাখল ভয়ে। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার শুরু
হল তার দুষ্টামি।
অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে স্যার ফটোকেমিস্ট্রি নিয়ে ক্লাসে অনেক আলোচনা করলেন এবং ফোটনের
শোষণ এবং বিক্রিয়ার হার নিয়ে কথা বললেন। হঠাৎ করে স্যার অরিন্দমকে দাড়া করালেন এবং
Quantum Yield সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে বললেন। তখন অরিন্দম সঠিক সংজ্ঞা না বলে
ব্যাপারটাকে এভাবে বলল
স্যার আপনি লাইনের প্রথমে দাঁড়িয়ে আছেন, আপনার পিছনে আমার তিন ম্যাডাম দাঁড়ানো।
আপনিই প্রথম photon absorber। হঠাৎ এক ধাক্কায় আপনার সাথে সাথে আমার তিন ম্যাডাম
ও মাটিতে পড়ে গেলেন। ফলাফলস্বরূপ তার quantum yield এর মান less বা zero হবে। স্যার
অবশ্যই ততটা অসন্তুষ্ট হলেন না।
এভাবে দিন যায়, ক্ষণ যায়, অরিন্দমের উৎসাহের কোন অন্ত নেই। এবার ফাইনাল ভাইভা পরীক্ষার
সময় আয়োডোমিতি টাইট্রেশন সম্পর্কে জানতে চাইলে সে অবশ্যই সঠিক উত্তর দিলো যে মুক্ত
আয়োডিনকে Na2S2O3 দ্বারা টাইট্রেশন করতে হবে।
হঠাৎ তার মনে আরেকটি প্রশ্ন জাগল, সে স্যারকে বলল সমুদ্রের পানি বাষ্পীভূ ত হয়ে মেঘ হয়
এবং পরে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে আর সেই বৃষ্টির রঙ বর্ণহীন হয়।
অরিন্দম স্যার কে বলল স্যার আয়োডিন একটি উদ্বায়ী যৌগ। কিন্তু এখানে আয়োডিনকে যদি
কোনমতে বৃষ্টির পানির মতো তরলাকারে গ্রাহকপাত্রে জমা করা যেত তাহলে জলাধারটির রঙ
কমলা বাদামী রঙের না হয়ে যদি এমন রঙ্গিন নীল বর্ণ যুক্ত হতো যেমনটি স্টার্চে র দ্রবণে ধারণ করে ।
তাহলে সেই জলধারাটা কত সুন্দরই না লাগতো !
মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও অরিন্দমের জ্ঞানের ক্ষু ধা আর বিজ্ঞানের প্রতি অসম্ভব
আগ্রহ আর ভালোবাসা থাকার কারণে সে জীবনে অনেকদূর যেতে পেরেছিল। এরই ফলস্বরূপ
বিজ্ঞানমনস্ক মন নিয়ে চলতে চলতে সেই দুষ্ট অরিন্দম অবশেষে একটি বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে
গবেষণার কাজে সুযোগ পেয়ে গেল ।
ধূলিকণা
কলমেঃ সুমি চৌধুরী
তাং-২২-০৯-২০২১ ইং
বায়ুমণ্ডলে কত ধূলিকণা উড়ে বেড়ায়,
সেই ধূলিকণা অন্য ভাসমান কণার সাথে মিশে বারিপাতের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
কংক্রিটের এই শহরজুড়ে ধূলিকণা নিয়ে কত কথা, কত লেখা, কত রচিত গান
বিজ্ঞানীদের মনও যেন আনমনা।
সমস্ত ধূলিকণা যেন ছোট ভগ্নাংশ খনিজ দ্বারা গঠিত
যেটি মহাজগতে স্টার ডাস্ট নামেও পরিচিত।
আন্তঃ চালিত ধূলিকণাকে যেন মনে হয় রাশিয়ার অম্বুদের মতন,
তেমনি অর্মিয়ীয় ধূলিকণাও দেখতে গ্রহের আংটির মতন।
সৌর সিস্টেমের মধ্যে আচ্ছাদিত ধুলো সৃষ্টি করে জোডিয়াল আলো,
মরুভূ মিতে অবস্থিত ধূলিকণাকে লাগে মুক্তোর মালার অনুপ্রভার আলো।
ধূলিকণা সবদিকে যেমন জীব বৈচিত্র্যকে অক্ষু ন্ন রাখার জন্য প্রয়োজন
আবার এটি শ্বাসকষ্ট , এলার্জি রোগীদের জন্য হয়ে দাঁড়ায় মৃত্যুর কারণ।
কিন্তু মানুষের মনে যখন এই ধূলিকণা বাসা বাঁধে মরীচিকার মতন
তখন তাকে নিংড়াতে হয় সঠিক বিচার বুদ্ধি দিয়ে ।
শিশুর স্বপ্ন
কলমেঃ সুমি চৌধুরী
তাং-২৬-০৯-২০২১
নন্দিতা
কলমেঃ সুমি চৌধুরী
তাং-২৩-১০-২০২১ ইং
ওহে নন্দিতা
এত কি তোমার মনের ব্যথা ?
রেখেছো হৃদয়ে মনের কষ্ট অতি সঙ্গোপনে,
তোমার অশ্রুধারা নীরবে ফেলেছো কার পানে চেয়ে ,
নদীর ধারে একাকী বসে শুনিয়েছ তোমার ক্রন্দন ধ্বনি ।
জনমহাসমুদ্রের অশান্ত ঢেউ যেন,
কেড়ে নিয়েছে তোমার স্বপ্নের নীড়খানি ।
স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে পাওনি এখনো পূর্ণ স্বাধীনতা
হারিয়েছো ধর্মের তরে নিজের শান্তির বারতা ।
তোমার কান্নার রোলে ভাঙ্গেনি কারো কু ম্ভকর্ণের ঘুম,
তোমার জন্য ফোটেনি তো কোন ফু ল তাদের ব্যাথার মালঞ্চে।
হিংসা – বিদ্বেষ নয় , ধর্মযুদ্ধ নয় ফিরে আসুক স্বর্গীয় আনন্দময় চৈতন্য,
তবে তু মিও পাবে তোমার হৃদয় সমুদ্রে সুখের মোহনা ।
জগজ্জননী
কলমেঃ সুমি চৌধুরী
তাং-১২-১১-২০২১ ইং
শেখ রাসেল
কলমেঃ সুমি চৌধুরী
তাং-০১-১২-২০২১ ইং
অজানা সুর
কলমেঃ সুমি চৌধুরী
তাং-০৪-১২-২০২১ ইং
কোন এক অজানা সুরের স্রোতের টানে ,
হারিয়েছি আমার বিপন্ন তরীটাকে।
সেই তরীর কাণ্ডারি ছিলাম আমি নিজেই,
কিন্তু জনমহাসমুদ্রের অশান্ত ঢেউয়ে
বেসামাল অবস্থায় পড়ে হয়ে গেলাম দিশেহারা,
নাভিশ্বাস হয়ে উঠছে যেন যান্ত্রিক জীবনের সুরের তান।
বৈতরণী পাওয়ার আশায়, গিয়েছিলাম সুরের পিছনে,
সেই সুরের মাঝে আছে যেন এক হৃদয় মথিত তটিনীর কাহিনী ,
সেই তটিনীর স্রোত ছিল, জোয়ার ভাটা সব ছিল,
তবু মিলল না তো কোন মোহনার মুখ ।
তারপরও নিরুদ্দেশে যাওয়ার আগে বলতে পারি,
সুরের মাঝে হারিয়েছি যেন এক অজানা সুখ ।
শিক্ষক বান্ধব, অসাম্প্রদায়িক, সুযোগ্য প্রশাসক, ত্যাগী, মিষ্টভাষী , সহনশীল ও দায়িত্বশীল
পরিচালক মহোদয় প্রফেসর হোসাইন আহমেদ আরিফ ইলাহী স্যার , মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা ,
চট্টগ্রাম অঞ্চল। তিনি একজন আদর্শ প্রশাসক ও নানা গুণে গুণান্বিত। স্যার অফিসে আগত
সম্মানিত শিক্ষকদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেন এবং দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন ।
মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে স্যারের কর্মময় জীবনে উত্তরোত্তর সাফল্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি ।
রহস্যময়ী
কলমেঃ সুমি চৌধুরী
তাং-২৪-১২-২০২১ ইং
ঘোর অমানিশার রাতে, সম্প্রীতি একাকী নির্জ নে তার স্বপ্নের বাড়িতে বসে আছে। মাস্টার্স পরীক্ষা
শেষ, স্বামী বড় প্রশাসনিক কর্মকর্তা, স্বামীর বদলির কারণে আর নিজের চাকরির খোঁজে ঢাকা
শহরে এসেছে ওরা। এক শিশু সন্তান ঘর আলো করে এসেছিলো, সেও প্রায় একবছর হয়ে গেলো।
ওরা যে ফ্ল্যাটে থাকে, সেটার নানারকম দুর্নাম শুনতে পেয়েছে এসে অবধি, এখানে নাকি নানান
ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছিলো, কিন্তু আধুনিক মনস্ক সম্প্রীতি তাতে কান দেয়নি। ওর মতে, এসব
নিছক কাকতালীয় ঘটনা, কিন্তু সবাই বলতো বাসার কাছেই অবস্থিত রায়ের বাজারের বধ্যভূ মির
কাহিনী। সম্প্রীতি যুদ্ধ দেখেনি, দেশ স্বাধীন হবার এক যুগ পর ওর জন্ম হয়েছিলো। বাবা আর
মায়ের মুখে যুদ্ধের কাহিনী শুনেছিলো। শুনেছে বাবার দুঃসাহসীকতার কাহিনী, সাইকেলে করে
মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার পৌঁছে দিতেন বলে পাকিস্তানী আর্মি ধরে নিয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু ভাগ্যক্রমে
বেঁচে গেলেও নরপশুদের অবর্ণনীয় লাঠিপেটা আর অত্যাচার তাঁর শরীরে ছাপ রেখে গিয়েছিলো,
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ব্যাথায় কাতরাতে দেখেছে তাঁকে সম্প্রীতি। সম্প্রীতির দশ বছর বয়সে তার বাবা
মারা যান, তাই সে আর কোন কিছুতে ভয় পায় না । অনেক সংগ্রামের মধ্যে বড় হয়েছে সে,
দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসাবে কোন বাধাই মানতো না সে আর প্রতিবাদী ধরণের নারী ছিলো সে।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি অকৃ ত্রিম শ্রদ্ধা রয়েছে তার আর রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমান এর প্রতি অকৃ ত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। ওনার ঐক্যতানের সুরে একত্রিত হয়ে
এবং নয় মাস যুদ্ধ করে বাংলার যেসব দামাল ছেলেরা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে
রক্তে রঞ্জিত সবুজ পতাকা ছিনিয়ে এনেছিলো তাঁদের পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতো সে। গুজবে
কান দেয়ার অভ্যাসও তার ছিল না তাই।
একদিনের ঘটনা, বাচ্চার জন্য খিচু ড়ি গরম করে টেবিলে রেখেছিলো সে, পিচ্চিটাকে স্নান করিয়ে
বিছানায় অয়েলক্লথের ওপর বসিয়ে নিজে চট করে একটু ওয়াশ রুম থেকে ঘুরে এলো সম্প্রীতি।
এসেই ভীষণ চমকে গিয়ে দেখলো, খিচু ড়িতে হাত ডু বিয়ে মহানন্দে খাচ্ছে তার বাচ্চা, হাত আর
মুখ মাখামাখি হয়ে আছে খিচু ড়িতে। কিন্তু ওর স্পষ্ট মনে আছে খাবারটা সে টেবিলে রেখেছিল,
তার বাচ্চার সামনে নয় !
কিছুদিন পরের ঘটনা, কোন একটা জরুরী কাজে তাড়াহুড়া করে বাইরে বেরোবার ছিলো, হাত
থেকে অসাবধানে সিঁদুরের কৌটা ফেলে দিলো সম্প্রীতি, কিন্তু এতই তাড়া দিচ্ছিলো ওর স্বামী যে
সেটা যে তু লে জায়গাটা মুছে রাখবে, সে সময়টা পেলো না। কিন্তু বাইরে থেকে এসে দেখলো ,
মেঝেটা পরিষ্কার করে মুছে রাখা, আর সিঁদুরের কৌটা যেখানে থাকার কথা ছিলো সেখানেই আছে!
কিন্তু ওর স্পষ্ট মনে আছে সেটাকে মাটিতে পড়া অবস্থায়ই দেখেছিলো।
আরেকদিন, রান্নাঘরে রান্না করতে করতে পাশের সানসেট দিয়ে দেখতে পেলো এক ভীষণ লম্বা
আর কালো মহিলা, কু চি দেয়া থাক থাক জামা পরে চু লগুলো খোলা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে, আর হা হা
করে একটা ঝড়ো বাতাস যেন পাকিয়ে উঠছে সেই সাথে ! সানসেটটা যথেষ্ট সরু, সেখান দিয়ে
কারো হাঁটতে পারার কথা না, আর ওদের ফ্ল্যাটটা চার তলা উঁচু ! এবার কিন্তু বেশ ভয় পেয়ে
গেছিলো সে, দৌড়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে ড্রইং রুমে এসে ল্যান্ড ফোনে স্বামীকে ফোন দিলো, আর
স্বামীকে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে আসতে বললো। যদিও সে ভয় পেয়েছিলো, কিন্তু ওর উৎসুক
মন ঘটনার পেছনের কাহিনী জানতে চাচ্ছিলো। সে জানতে চাচ্ছিলো , কে সেই রহস্যময়ী, যে
অদ্ভু ত পোশাক পরে চারতলা সমান উঁচু জানালার কাছ দিয়ে হেঁটে গেলো। সম্প্রীতির কাছে সেই
অদ্ভু ত মহিলা ছায়াময়ী আর রহস্যময়ী হিসাবেই রয়ে গেলো ।
পরে একদিন জানতে পেরেছিলো, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অনেক লোকজনকে এই ফ্ল্যাট যে
জমিতে, সেখানেই মেরে গর্ত করে ফেলে রেখেছিলো পাকিস্তানীরা অনেকদিন, তাঁদের মধ্যে অনেক
শিশুও ছিলো ! এখানে ঘনবসতি হবার আগে আর এখনো অনেক মা’কেই তাঁদের সন্তানদের
মৃতদেহের খোঁজে সেই জায়গার আশেপাশে ঘোরাফেরা করতে দেখা যেতো। বেশি রাতের দিকে ,
সম্প্রীতি যেরকম দেখেছিলো, সেরকম সাদা পোশাক পরা অনেক লম্বা এক মহিলাকেও প্রায়ই
দেখা যেতো!
আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও, হয়তো সেই অতৃ প্ত মায়ের আত্মা এখনো খুঁজে চলেছে তাঁর
নাড়ি ছেঁ ড়া ধনের ছোট্ট মৃতদেহ , শেষবারের মতো বুকের ধনকে একবার দেখবে বলে ............
দেশ গড়ার কারিগর
কলমেঃ সুমি চৌধুরী
তাং-১০-০১-২০২২ ইং
ভাগ্যক্রমে নই তো আমরা শিক্ষক ,
অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে হতে হয়েছে প্রভাষক।
শিক্ষার গুণে পদোন্নতি দেয়া হয় বিভিন্ন মানদণ্ডে্
কলেজের সমগোত্রক হয়েও সৃষ্টি হয়েছে বৈষম্য।
বৈষম্যের বন্ধু র পথ পরিক্রমা করে শিক্ষকদের মন ভারাক্রান্ত।
সব শিক্ষকরা হয় না তো একই গুণের,
তাই শিক্ষক সমাজ গড়ে উঠে বিভিন্ন রুপের।
জালিয়াতি করে না তো কোন সৎ শিক্ষক
কিন্তু একজনের দোষে অবহেলিত হয় সকল শিক্ষক ।
যখন আমরা ছাত্র ছিলাম শিক্ষকদের সম্মান দিতাম সালাম করে
ভয় পেয়ে গুটিয়ে থাকতাম পড়ালেখায় মনটা দিয়ে।
এখন গুটিকয়েক ছাত্ররা সম্মান দেয়া দূরের কথা
রাস্তায় দেখলে ভান করে ব্যস্ত যেন আড্ডায় , স্মার্ট ফোন চালাতে গিয়ে।
সারাদিনের ব্যস্ততায়, কখনও খাতা দেখায় চলে শিক্ষকের জীবন
মন চাইলেও পারেনা সব কাজে অংশ নিতে সারাক্ষণ।
দেশ গড়ার কারিগর যাদের হাতে গড়ে উঠে সভ্যতা
তারাই আজ যেন অভাবের তাড়নায় হয়েছে সব্জি বিক্রেতা।
দেশে যেন আর ব্যপ্তি না ছড়ায় ভাইরাস ওমিক্রন
শিক্ষকদের শুনতে হবে না নিচ্ছে বেতন মাস জুড়ে সারাক্ষণ
অবশেষে দেশ জুড়ে সকল সভ্য সমাজের সুস্থতাই
কাম্য হোক যেন সকল শিক্ষক সমাজের।
অস্তিত্ব
কলমেঃ সুমি চৌধুরী
তাং-১৯-০১-২০২২ ইং
যদি কখনও নতু ন জনম হয় আমার
আমি যেন ফিরে আসি তোমার বাড়ির আঙ্গিনাতে।
হয়তো দূর্বাদলের ঘনশ্যাম হয়ে নয়তো নীল অপরাজিতা ফু লের গুল্ম লতা জড়ায়ে,
সেইদিন তু মি চিনে নিবে আমায় অনেক গুল্মলতার ভিড়ে,
দেখবে তু মি চোখ জুড়ায়ে।
থাকবো না আমি কাকতাড়ু য়ার মতো দাঁড়িয়ে ,
রইবো আমি সবুজ ঘাসের ঘ্রাণ নিতে ঘাসফড়িং হয়ে ।
সেইদিন থাকবে না কোন রেষারেষি মিথ্যে কাঁটাজালের বুনিয়াদ
থাকবে শুধু প্রকৃ তির অপরূপ আলতো ছোঁয়া ।
একটু হাওয়ায় যখন দুলবে গুল্ম লতার শিষ
বুঝবে তোমায় ডাকছি আমি তৃ ষ্ণা মেটানোর আশায়।
তু মি পাহাড়ী স্রোতধারা হয়ে নেমে এসে
দেবে একটু খানি জল সেই নুয়ে পড়া লতায়।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলবো আমি
তোমার সাথে মিশে আছি প্রতিটি ধূলিকণার অস্তিত্বে ।
শিরোনামঃ মা
কলমেঃ সুমি চৌধুরী
তাং-২৫-০৪-২০২২ ইং
ভালো লাগে, ভালোবাসি মাগো তোমার ঐ মুগ্ধ করা অপরূপ হাসি,
ভু বন ভরে দেখি মাগো।
তোমার উদার অতল রূপ
ছোটয় বড়য় মিলিয়ে তু মি
অসীম অপরূপ।
তোমার এই প্রকৃ তির তু মিই তু লনা
ঘরে বাইরে সবাই যখন আপনমনে আশার সৌধ গড়ে,
আমার মনটি পড়ে থাকে তোমার কৃ পার তরে।
নূপুর পায়ে ছন্দময়ে যখন হাঁট তু মি ,
নিবিড় অন্ধকারে ও মা চমকে উঠে তোমার আলোকদ্যুতি।
তোমার এই প্রকৃ তির তু মিই তু লনা ।
তোমার রুপের জাদু দেখে ভু লেছি বলে,
ফিরতে চাই মা তোমার কোলে।
হৃদয় শুকায়, গ্রীষ্ম বায় মা
তোমার এই প্রকৃ তির তু মিই তু লনা।
সুখে দুঃখে প্রতিদিন খেলছি যেন খেলাঘরে,
হোক নির্বিষ , দাও মা আশিষ দু’হাতে ভরে।
তোমার এই প্রকৃ তির তু মিই তু লনা।
সর্ব অঙ্গ জুড়ে মাগো তোমার রুপের আভরণ,
রক্তে নাচে মোক্ষ মুক্তি কণা সারাক্ষণ।
তোমার এই প্রকৃ তির তু মিই তু লনা।
প্রবন্ধ
শিরোনামঃ রবীন্দ্র-কথা
কলমেঃ সুমি চৌধুরী
তাং-০৮-০৫-২০২২ ইং
কাব্য জগতে যুগ যুগ ধরে যেসব সাহিত্য পূজারী অর্ঘ্য সাজিয়ে এসেছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকু র তাঁদের
মধ্যে শ্রেষ্ঠ পূজারী। কিন্তু ঊষার রক্তিম আকাশে উচ্চ কণ্ঠে তাঁর আগমনী বার্তা ধ্বনিত হয়নি, তিনি
এসে দাঁড়ালেন নিপুণ শিল্পীর অমর তু লিকা হাতে তাঁর স্বর্গীয় প্রতিভার পূর্ণ বিকাশ নিয়ে। যেদিন
তিনি সেই অর্ঘ্যের ডালি শস্য শ্যামলা বাংলা মায়ের আঁচলে ছড়িয়ে দিলেন, সেদিন সারা দেশে
পড়ে গেলো এক অভূ তপূর্ব আনন্দের সাড়া। চারিদিকে যেন বেজে উঠলো মাঙ্গলিক শঙ্খ।
কবির ভাষায় –
হে রবি ! তোমারে গগন ধরিয়া আছে
ধরিবে গগন অস্ত অচল পার –
---সজনীকান্ত দাস
১৩৩৩ বঙ্গাব্দের ২৫ শে বৈশাখ জোড়াসাঁকোর ঠাকু র বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকু র জন্মগ্রহণ করেন।
সেটি ছিলো কলকাতার এক ধনাঢ্য ও সংস্কৃ তিবান ব্রাহ্ম পিরালী ব্রাম্মণ পরিবার। বাল্যকালে
প্রথাগত বিদ্যালয় শিক্ষা তিনি গ্রহণ করেন নি। গৃহশিক্ষক রেখে বাড়িতেই তাঁর শিক্ষার ব্যাবস্থা করা
হয়েছিলো । আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী’
পত্রিকায় তাঁর ‘অভিলাষ’ কবিতাটি প্রকাশিত হয়। ১৮৭৮ সালে মাত্র সতেরো বছর বয়সে
রবীন্দ্রনাথ প্রথমবার ইংল্যান্ডে যান। ১৮৮৩ সালে মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। ১৮৯০
সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ পূর্ববঙ্গের শিলাইদহের জমিদারী এস্টেটে বসবাস শুরু করেন। ১৯০১ সালে
তিনি পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস
শুরু করেন। ১৯০২ সালে তাঁর পত্নী বিয়োগ হয়।
১৯০৫ সালে, তিনি বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। এরপর, ১৯১৩ সালে আসে
তাঁর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান । ‘গীতাঞ্জলী’ কাব্যের জন্য নোবেল পুরষ্কারে ভূ ষিত হন তিনি।
১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে নাইট উপাধি দেন। কিন্তু ১৯১৯ সালে জালিওয়ানওয়ালাবাগের
হত্য্যকান্ডের প্রতিবাদে তিনি সেই উপাধি ত্যাগ করেন।
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর কবি সমগ্র বাংলাদেশকে স্বাধীনতা আন্দোলনের ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ করে
সমগ্র জাতির মনে এক মহৎ প্রেরণার সঞ্চার করেন। বর্ত মানে নেতৃ বৃন্দ পল্লী সংগঠনে আত্মনিয়োগ
করছেন, কিন্তু এর মুলে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সাম্প্রতিক কালে বাংলা ভাষার মাধ্যমে যে শিক্ষাদানের
ব্যবস্থা করা হয়েছে, তাঁর মুলেও কবিগুরুর অবদান অপরিসীম। তিনি ছিলেন মানবতা ও বিশ্ব
প্রেমের মূর্ত প্রতীক। এর প্রমাণ পাওয়া যায়, যখন তিনি ১৯০০ সালে জগদীশচন্দ্রের কৃ তিত্ব ও
সঙ্কটের কথা জানতে পেরে ত্রিপুরায় গিয়ে মহারাজের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করেছিলেন।
স্বদেশী ও আন্তর্জাতিক যে কোন অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে তিনি কখনও কু ণ্ঠিত হন
নি। কবির দেশপ্রীতি ভারত অতিক্রম করে দেশ হতে দেশান্তরে পরিব্যাপ্ত হয়েছে , মৈত্রীর বাণী সারা
বিশ্বে হয়েছে ধ্বনিত। তিনি অতি সুক্ষ্ম আত্মিক শক্তির প্রভাবে প্রভাবান্বিত হয়ে মানুষের মনে
পশুভাব ও হিংসা বিদ্বেষ দূরীকরণে প্রবৃত্ত হয়েছিলেন। তিনি লক্ষ্য করেছিলেন, পাশ্চাত্ত্যের প্রাণহীন
শিক্ষাপদ্ধতি মানুষকে অধিকতর নিষ্ঠু র ও হিংস্র করে তোলে, বিলাসী মনোভাব জাগিয়ে তোলে।
তাই এই প্রাণহীন শিক্ষা পদ্ধতির আমূল পরিবর্ত ন কামনায় তিনি শান্তিনিকেতনে ‘বিশ্বভারতী’
স্থাপন করেন। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কবিগুরুর বিরাট কীর্তি ।
১৩৪৮ সালের ২২শে শ্রাবণ বাংলার আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে উঠলো। বাংলা তথা বিশ্বের কবি
রবীন্দ্রনাথ পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিলেন। দিনটি ছিল রাখী পূর্ণিমা। স্বদেশী আন্দোলনের যুগে
দেশবাসীর মধ্যে সাম্য মৈত্রী , ভ্রাতৃ ত্ববোধ জাগ্রত করার জন্য কবিগুরু রাখী-বন্ধনের উৎসব প্রথাটি
ঐ তিথিতে প্রবর্ত ন করেন। বক্সা দুর্গস্থ রাজবন্দীরা কবির উদ্দেশে জানিয়েছিলেন অভিনন্দন।
প্রত্যাভিনন্দনে কবি জানিয়েছিলেন –
নিশীথের লজ্জ্বা দিল অন্ধকারে রবির বন্দন
পিঞ্জরে বিহঙ্গ বাঁধা সঙ্গীত না মানিল বন্ধন
ফোয়ারার রন্ধ্র হাতে
উন্মুখর ঊর্ধ্বস্রোতে
বন্দী বারি উচ্চারিল আলোকের কি অভিনন্দন ।
রবীন্দ্রনাথ চলে গেলেন , কিন্তু মৃত্যুর সময় রেখে গিয়েছিলেন কিছু অসমাপ্ত কার্যাবলী। রবীন্দ্র
অন্তর্ধানের পর শান্তি নিকেতনের প্রতিটি স্থান ও পথ যেন আজও এক নীরব বেদনা বহন করে
চলেছে । সেই শাল পলাশ বীথিকার দুপাশে সারি সারি বৃক্ষরাজি যেন কবির উদ্দেশ্যে কাঁদে
চরণরেখা তব যে পথে দিলো লেখি
চিন্হ আজি তারি আপনি ঘুচালে কি ,
অশোক রেণুগুলি রাঙালে যার ধূলি
তারে যে তৃ ণতলে আজিকে লীন দেখি।
শিরোনামঃ মনোভাব
কলমেঃ সুমি চৌধুরী
তাং-১০-০৬-২০২২ ইং
শিরোনামঃ আক্ষেপ
কলমেঃ সুমি চৌধুরী
তাং-১৪-০৭-২০২২ ইং