You are on page 1of 225

1

ক্লাউন ফ্লেশ

টিম কারেন
অনুবাদঃ অরূপ ঘোষ
2

অধ্যায় ১

এক ভয়াবহ তু ষারঝড় এগিয়ে আসছে , যেন প্রচণ্ড ক্রোধে গর্জাচ্ছে কোন দানব। সাথে নিয়ে
আসছে শিস দেয়া বাতাস, বরফ ঝড়টার পেট ভর্তি হয়ে আছে তু ষার আর শীতল বৃষ্টিতে। ক্রো
ফলস – একটি ছোট্ট , সাধারণ শহর , যেটা ডাকোটা রাজ্যের দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত , আর এটাই
পড়েছে সেই ভয়ানক ঝড়ের যাত্রাপথে। আর এসব কিছুই সব খারাপের শেষ নয়, ঐ ঝড়ের
আড়ালে আরও কিছু যেন লুকিয়ে আছে, আরও ভয়ংকর কিছু, যেটা ওই ঝড়কে আড়াল হিসাবে
ব্যবহার করবে, শান্তি মতো শিকার করার জন্য, সেই শিকারের নাম হলো মানুষ !

কিন্তু সে কথায় পরে আসছি ।

এখন, মিলফোর্ড জাইস ওর নড়বড়ে জেলে কু টিরের পাশে বসে আছে। ক্রো লেকের বরফের
ওপর , যেটা কাছের শহর থেকে মাইলখানেক দূরে। ওর থামার বিন্দুমাত্র ইচ্ছাও নেই, কারণ এই
মুহূর্তে মাছেরা ওর বড় বড়শিতে পাগলের মতো কামড়াকামড়ি শুরু করেছে ! ওর মোমকৃ মি
মাখানো বড়শি পানিতে ফেলা মাত্রই টোপ গিলে নিচ্ছে মাছগুলো। মাছের বালতিটা ক্রমাগত
ভর্তি হয়েই যাচ্ছে, আর জাইস দিব্য চোখে দেখতে পাচ্ছে ওর মাছগুলি শহরের বড় বড় হোটেলে
ভাজা হচ্ছে। ওর ভাগ্য অনেকদিন এরকম ভালো যায়নি !

কিন্তু এই বালের তু ষারঝড় !

ওহ ঈশ্বর , এটা আসলেই অনেক কঠিন হতে যাচ্ছে , ভাবতে ভাবতেই মিল তার বড়শিটা আবার
পানিতে ফেলল । বিশ সেকেন্ডেরও কম সময়ের ভেতর আরেকটা মোটা পারচ মাছ ওর
বালতিতে আশ্রয় নিলো !

এর মাঝে মিলের নড়বড়ে জেলে কু টির আরও একবার জোরে নড়ে ওঠায় , এমনকি ওর মতো
মানুষও বিচলিত না হয়ে পারলো না। এই ক্রো লেকে ১৯৫৪ সালে আট বছর বয়স থেকে মিল
মাছ ধরছে। মিল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, প্রকৃ তি মাতার ওপর যারপরনাই হতাশ। যিনি কিনা ওকে
3

মুখ ভ্যাংচাচ্ছেন এমন একটা দিনে , যে দিনে ওর ভাগ্য শুধু সুপ্রসন্নই নয়, বরং ‘ছপ্পর ফাঁড়কে’
ঈশ্বর ওকে দিচ্ছেন !

অনিচ্ছার সাথে মিল ওর জিনিসপত্র গোছগাছ করল, কাঠ পোড়ানোর স্টোভটা বন্ধ করলো
“কাল আরও একটা অন্য দিন !” দাঁতে দাঁত চেপে বিড়বিড় করলো সে, কিন্তু এটা তার মেজাজ
মোটেই ভালো করতে পারলো না । সে জানতো এখানকার মাছেরা কতোটা অনিশ্চিত, আর
আজকে রাতের মতো আরেকটা রাত হয়তো আগামী কয়েক হপ্তা, মাস এমনকি কয়েক বছরের
মধ্যেও না আসতে পারে। ঠিক মনে হচ্ছিলো কেউ যেন ওর অণ্ডকোষ বরাবর একটা শক্ত লাথি
ঝেড়েছে !

মনমরাভাবে , মিল ওর পর্ণকু টিরের দরজার বোল্ট খুলল, আর বাতাস ওর হাত থেকে যেন ঝটকা
দিয়ে দরজাটা কেড়ে নিলো। ওহ ! কি বাতাস ! ওর হাতের ল্যাম্পটা যেন তু ষারাচ্ছন্ন অন্ধকারকে
ঝেটিয়ে কিছুটা দূরে সরিয়ে দিলো। ও নিজেকে নিজেই জড়িয়ে ধরল ঠাণ্ডার প্রচণ্ডতায়, নিজের
স্নো-মোবিলটার দিকে তাকাল সে, ওটা একটা পোলারিস কোল্ট, ১৯৭৬ মডেলের। মিল যন্ত্রটা স্টার্ট
দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো ইঞ্জিন খানিকটা গরম হবার জন্য। অনেক কষ্টে ভেতরের দরজা
খুলে মেইন রুমে আসলো সে, ঠোঁটে একটা উইনস্টন সিগারেট গুঁজে জিপ্পো দিয়ে ধরাল “একটা
নরকের রাত !” শোনাল নিজেকেই। খুব রুক্ষ আবহাওয়া, কিন্তু ও এর থেকেও খারাপ দেখেছে,
নিজেকে বোঝাল সে। আরও বোঝাল, দৃষ্টিসীমার স্বল্পতা সত্ত্বেও, ও লেকের তীর ঠিকই খুঁজে
পাবে। ও কেবল মাইল খানেকের দূরত্বে আছে শহর থেকে, ওকে কেবল ওর স্নো-মোবিলটার
পুরানো সৃষ্ট পথগুলি অনুসরণ করতে হবে। ইস ! যদি সত্যিকারের ঘোড়ার মতো স্নো-মোবিলটাও
নিজে নিজে পথ খুঁজে নিতে পারতো – ভাবল মিল।

মিল বুঝতে পারলো সে একাই পড়ে রয়েছে এই বরফের রাজ্যে ওই বরফের ঝড়কে কাছ থেকে
দেখার জন্য। সে আসলেই শক্তপাল্লার লোক, একটা সত্যিকারের ডেয়ারডেভিল ! ওর বাবা প্রায়ই
বলতেন , উষ্ণতা খোঁজা লোকেরা সূর্যাস্তের সময় বাড়িতে ফিরে যায়, আর তখনই – শুরু হয় মরদ
মানুষদের মাছ শিকার ! একটা মুচকি হাসি ফু টে উঠলো মিলের ঠোঁটে, তবুও, ও জানে, বরফে
4

জমে যাওয়া লেকের ওপরের একটা তু ষার ঝড়কে মোটেই হালকা ভাবে নেয়া উচিত না ! মিল দূর
দক্ষিণে অনেক শীত দেখে এসেছে, তাই সামনে এসে পড়া এই ভয়ংকর শীতকে ও যথাযথ
সম্মানই দেবে ! ও সিগারেটের অবশিষ্টাংশ টিপে নেভাল, হাতে পড়ল উলের হাতমোজা। মাছের
বিরাট বালতিটা স্নো-মোবিলটার পেছনে বেঁধে নিলো, কুঁ ড়েটা বন্ধ করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার
জন্য প্রস্তুত হল। কিন্তু......... হঠাৎ ই , সে থেমে গেলো।

ওটা কি ? ! !!!

বাতাসের একটানা গোঙানিরও বাইরে, ও একটা শব্দ শুনতে পেলো, যেটা শুনে মনে হলো যেন
কোন ঘণ্টি বাজছে। এটা হতে পারেনা ! কিন্তু ...... ওই যে ! আবার ! এবার আরও কাছে ! কিন্তু
এখানে ? নিশ্চয়ই কোন গাধা তার কুঁ ড়েতে কোন গ্রে হাউন্ড বেঁধে রেখে গেছে, আর ওটাই কুঁ ড়েময়
দৌড়াদৌড়ি করে যাচ্ছে ! মিলের মনে পড়লো , জনি পালানপা তার কুঁ ড়ের মাথাতে একটা পতাকা
স্ট্যান্ড বসিয়েছিল, যেটা রৌদ্রোজ্জ্বল দিনগুলোতে পতপত করে উড়ে ওর দেশপ্রেমের পরিচয়
দিতো। কিন্তু এরকমই এক ঝড়ে ওই পতাকাসহ কুঁ ড়ের ছাদের অর্ধেকটাও যখন উড়ে গেলো, জনি
শাপশাপান্ত করছিলো ‘বালের দেশ , বালের ঝড়’ কে ! মুচকি হাসল আপন মনেই আবার ।

কিন্তু ওই ঘণ্টির শব্দ আরও কাছিয়ে আসতে ওর হাসি মিলিয়ে গেলো। ওই আওয়াজটাতে কিছু
একটা সমস্যা আছে ! ওই শব্দ এখানে একদম বেমানান, এই ঝড়, এই অন্ধকার , এখানে তো না-ই
! এমন নয় যে সে ভয় পেয়েছে, কিন্তু তবুও। স্নো-মোবিলটাতে চড়ে বসতে বসতে সে শুনতে
পেলো, ঘণ্টির শব্দ আরও কাছিয়ে আসছে............ আরও কাছে .........

অধ্যায় ২
5

মিল স্নো-মোবিলটা নিয়ে গজরাতে গজরাতে এগোল, ঠিক যেন একটা যান্ত্রিক ঘোড়া ! সে খুব
সহজেই ওর আগের সৃষ্ট পথের চিন্হ খুঁজে পেল আর সেগুলি অনুসরণ করতে লাগলো। অল্প
সময়েই জমিনে উঠে পড়বে , ও আরও একটু জোরে চালাতে পারতো কিন্তু স্বল্প দৃষ্টিসীমার কারণে
ও পথ হারিয়ে ফেলতে পারে, এই ভয়ে সেটা করলো না। এই বাজে ঝড়টা আর বাতাস ওকে ওর
আসন থেকে বারবার ফেলে দিতে চাইছে, আর ও পাঁচ মিটার দূরের জিনিসও দেখতে পাচ্ছে না ।
এখানে অনেক মাইলের মধ্যে কোন বাঁধা নেই। বাতাসের গতি ক্রমেই জোরাল হচ্ছে।

হঠাৎ, সে ঘণ্টির আওয়াজ আবারো শুনতে পেলো, আর এবার ঠিক মনে হলো ওর পাশেই
আওয়াজটা আসছে। কিন্তু তবুও, মিল মোটেই ভয় পাচ্ছে না, ওর স্নো-স্যুটের নিচে ও ঘেমে
যাচ্ছে, ওর হৃৎপিণ্ড গলার কাছে উঠে আসতে চাইছে, ও দাঁতে দাঁত চেপে আছে যাতে ওরা
পরস্পর বাড়ি না খায়, কিন্তু তবুও , ও মোটেই ভয় পাচ্ছে না ! কারণ, ও জানে ভয় মানুষকে কি
করতে পারে ! ওর মনে পড়ে গেলো ’৬৫ সালে ভিয়েতনামের যুদ্ধের কথা, বোমা খেয়ে
সঙ্গীসাথীদের উড়ে যাবার কথা। ভয় তোমাকে অদ্ভু ত কিছু ভাবায় আর করায়, ফলে তু মি ভু ল
করতেই থাকবে।

মিল দেখতে পেল জমিনের রেখা দেখা যাচ্ছে, আর একটু ...... ভাবল সে।

হঠাৎ ওর হৃৎপিণ্ড যেন কেউ লোহার হাত দিয়ে চেপে ধরল, ও দেখতে পেল ও একটা খাদের
একদম কিনারে চলে এসেছে, আর উল্টোদিকে একটা কিম্ভু ত চেহারার লোক ওর দিকে চেয়ে হাত
নাড়ছে আর যেন ভেংচি কেটে হাসছে !

এখন মিল আরও জোরে যেতে চায়, ও ফু ল স্পিড দিলো, ওর মনে ভেসে উঠলো ভিয়েতনাম
যুদ্ধের মৃত সঙ্গীদের মুখ। অনেক বছর আগে , ও নিজেকে বোঝাত, সকাল পর্যন্ত কাটিয়ে দিতে
পারলেই হবে, সব ঠিক হয়ে যাবে, ঠিক যেমন এখন জমিনে উঠতে পারলেই ...............

ওহ ঈশ্বর !
6

ওই কিম্ভু ত লোকটা ঠিক ওর সামনে চলে এসেছে , মিল জানে ও ওটাকে পাশ কাটিয়ে কিছুতেই
এগোতে পারবে না, বরফের ওপর, এই অন্ধকারে, ঝড়ের ভেতর ......... নাহ ! ওটা যাই হোক,
মানুষ না ! ও পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিল নিচ, কু টিল হাসি ভরা মুখ -- দাঁত গুলি বড় বড় আর
তীক্ষ্ণ আর লম্বা ! হিতাহিতভাবে স্নো-মোবিলটাকে এগিয়ে নিতে চাইলো মিল, ওহ ! ওই
চোখগুলি! ওটা আরও কাছে, আরও কাছে এগিয়ে আসতে লাগলো । শেষ মুহূর্তে কিম্ভু তটা
একপাশে সরে গেলো আর মিল ওর গলাতে একটা স্টিলের তার অনুভব করলো ! ও প্রচণ্ড
গতিতে মাটিতে আছড়ে পড়লো স্নো-মোবিলটার ওপর থেকে। কাঁধে প্রচণ্ড একটা ব্যাথা ছড়িয়ে
পড়ছে টের পেল সে , ওর স্নো-মোবিলটা একটা বরফের টিলার কাছে গিয়ে ওটা খানিকটা খুঁড়ে
ওখানেই স্থির হয়ে গেল। কাঁধের প্রচণ্ড ব্যাথা উপেক্ষা করে মিল উঠে দাঁড়ালো, বেল্ট থেকে টান
দিয়ে বের করলো একটা সুইচ-ব্লেড ছুরি, ঝড় ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে চাইছে, চোখে মুখে বাড়ি
দিচ্ছে এলোমেলো উড়তে থাকা তু ষারকণা , কিন্তু প্রাক্তন সৈনিকের রক্ত ওকে দাঁড় করিয়ে রাখল
শেষমেশ।

নিজেকে দেখা, ব্যাটা কাপুরুষ দানব কোথাকার ! কাটাকু টি হতে চাইলে এদিকে আয় একবার !

তখনই, ওই কিম্ভু তটা ওর একদম সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো। দাঁতগুলি চোখা বরফের ডগার মতো,
নখগুলি ঠিক একটা ভালুকের মতোই ওর নাগাল পেতে চাইছে। একটা বিকট চিৎকার দিয়ে মিল
দানবটার গায়ে ছয় ইঞ্চি ব্লেড পুরোটাই ঢু কিয়ে দিলো, ওটা বুনো আর্ত নাদ করে উঠলো সেটা গলার
ভেতর থেকে। কিন্তু দানবটার একটা লম্বা নখ ওর নাগাল পেয়ে মুহূর্তে র মধ্যে ওর গলা চিরে দু
ফাঁক করে দিলো, এমনকি সরে আসার কথা চিন্তা করারও আগে ।

বাতাসের জন্য খাবি খেতে খেতে সরে এলো মিল, নাক মুখ দিয়ে আর চেরা গলা দিয়ে সমানে
ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে, শক্তিহীন ভাবে বরফের ওপর পড়ে গেলো সে, জীবন তাকে ছেড়ে
গেলো ঠিক গরম উদ্বায়ী বাষ্পের মতোই । কিম্ভু ত দানবটা তাড়িয়ে তাড়িয়ে ওর মৃত্যু দেখল,
তারপর সাদা তু ষার ঝড়ের ভেতর অদৃশ্য হয়ে গেলো যেমন এসেছিল তেমনি !
7

অধ্যায় ৩

যদিও ক্লে কাউন্টির শেরিফ হিসাবে দশ বছর হয়ে গেছে, টিগ জানে এলাকার বুড়োরা এখনও ওকে
নবীশই মনে করে। ঠিক ওর আগেরজনের মতোই , উইল সবসময় লেকটার পিসের ছায়াতলেই
রয়ে যাবে, যে কিনা একজন সেরা পুলিশ অফিসার ছিল, অথবা স্মরণকালের সেরা বজ্জাত লোক
যে শেরিফের ব্যাজ পড়েছিল – নির্ভ র করে আপনি কাকে জিজ্ঞেস করছেন তার ওপর !

লেসটার ১৯৯৩ সালে চল্লিশ বছর সার্ভি স শেষে অবসরে যায়, বেনি লেক্স ওর জায়গা নেয় টিগ
ওকে ২০০৫ সালে অব্যাহতি দেবার আগ পর্যন্ত। কিন্তু এমনকি বিশ বছর পরেও, লেসটারের দ্যুতি
এখনও মিলিয়ে যায়নি, আর ওর ছায়া ক্রমশ লম্বা থেকে আরও লম্বা হয়েছে। ক্রো ফলসের
অবসরে যাওয়া বুড়োদের কাছে , লেসটার পিস এখনও বিশ্বের সবচেয়ে বলিষ্ঠ পুলিশ অফিসার,
যার মধ্যে একইসাথে খারাপ আর ভালো – দুইটারই সমান মিশ্রণ ছিল। একজন কর্ত ব্যপরায়ণ ,
কঠোর পরিশ্রমী শয়তান যে কিনা সবসময়ই জানতো শহরে ঠিক কি চলছে ! যখনই কোন বাজে
ঘটনা ঘটত, সে তার বেলচা নিয়ে ঠিক সময়ে হাজির হতো আর নোংরাটা বাইরে ছুঁ ড়ে ফেলত !
এখন কথা হল, ঘটনা কি সবই সত্যি নাকি লেসটার প্রায়ই অভিনয় করতো, হুম, এখন অতীত
ঘেঁটে এসব বের করা যথেষ্ট কঠিনই বটে।

এখন, তু ষারঝড় যতই খারাপ রূপ নিচ্ছে, টিগ শহরের পেছনদিককার রাস্তাগুলিতে গাড়ি চালাতে
চালাতে চিন্তা করছিলো......... চিন্তা করছিলো সেসব বিষয় নিয়ে যা ও নিজে আর লেসটার ছাড়া
আর কেউ জানেনা ---- তহবিলের অপব্যবহার, অর্থহীন পরিসংখ্যান, ভু য়া প্রমাণ – এবং আরও
আধ ডজন অপ্রীতিকর বিষয়। এসব সে জানতে পেরেছিল লেসটারের ডেপুটি থাকার সময়।
বেনি কখনও জানতে পারেনি, পারলে লেসটারের খবর ছিল। অন্যদিকে , টিগ, পক্ষান্তরে , সবই
জানতো, কিন্তু ও বুড়ো লেসটারকে ওসব নিয়ে যেতে দিলো। কারণ দিন শেষে লেসটারের সাজানো
তদন্তগুলিতে , কেউই তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হতো না ! তাছাড়া, লেসটার এখন মৃত, আর মারা যাবার
আগে সে ভালোভাবেই বুঝে গিয়েছিলো যে টিগ সব জানত। তাই ওরা দুজন একা থাকলে
8

লেসটার কখনোই টিগের চোখে চোখে তাকিয়ে কথা বলতে পারতো না। ওর ছায়া তখন বেশ
অকিঞ্চিৎকর মনে হতো।

পথে মানুষজন খুবই কম, এটা তাকে বেশ স্বস্তি দিলো, কিন্তু প্রধান সড়কের ওপর বেশ অনেকগুলি
গাড়ি পার্কিং করা আছে, যেটা খুব খারাপ। কারণ একটু পরেই এখান দিয়ে স্নো-প্লাউগুলি (বরফ
পরিষ্কার করার একরকম যান্ত্রিক গাড়ি) যাবে। এর মানে হল এখন টিগকে সব পাবে দোকানে ঢুঁ
মেরে মেরে মাতালদের বলতে হবে তারা যেন দয়া করে নিজের নিজের গাড়িতে উঠে বাড়ি চলে যায়
! ওরা স্বাভাবিকভাবেই এটা ভালোভাবে নেবে না, তার মানে হল ঝামেলা ! তিক্তভাবে ভাবল
টিগ।

কিন্তু কিছু করার নেই, এটা ওর কাজেরই অংশ। বেলচাটা এখন ওর কাছে, আর ময়লা ওকেই
ফেলতে হবে।

‘ব্রোকেন বটল’ নামে একটা বারের সামনে ও গাড়ি থামাল। এক মুহূর্ত গাড়ির ভেতর বসে
মাতালের মতো দুলতে থাকা সাইনবোর্ড টার দিকে তাকিয়ে রইল টিগ। খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি
হবার আগে নিজেকে প্রস্তুত করে নিচ্ছে।

হায় ! সে যদি জানতো আরও কত বেশি খারাপের মুখোমুখি তাকে হতে হবে ! তাহলে হয়তো
ওখান থেকেই ফিরতি বাড়ির পথ ধরতো সে !

অধ্যায় ৪
9

এটা পুরোই ট্যাবের দোষ, জিনা ভাবছিল , আর এবার জেল থেকে ওকে জিনার ঘরেই আর ঢু কতে
দেবে না ! ও কেয়ার করেনা যে ট্যাব ওর ভাই হয়, একটা চল্লিশ বছরের বুড়ো ধাড়ী যে কিনা
এখনও টিনএজারদের মতো আচরণ করেই যাচ্ছে ! এটা গত বছর থেকে দ্বিতীয়বারের মতো ,
যখন কিনা সে মাতাল হয়ে গাড়ি চালানোর জন্য জেলে গেলো। এবার বাছাধনকে কমসেকম তিন
মাসের ঘানি টানতেই হবে, এই নিষ্ঠু র তু ষার ঝড়ের ভেতর নিজের টয়োটাকে রাস্তাতে রাখার আপ্রাণ
চেষ্টা করতে করতে ভাবছিল জিনা।

কি একটা ঝড় !

ভারমিলিয়নের পথ অনেক কঠিন ছিল, কিন্তু এখন রাস্তাটা চলাচলের প্রায় অনুপযোগী হয়ে
পড়েছে। একটু আগে একটা স্নো প্লাউ দেখেছিলো সে, কিন্তু এখন রাস্তাতে আবার প্রায় দশ ইঞ্চি
পুরু বরফ জমে গেছে। ক্রো ফলসে পৌঁছতে আরও আধঘণ্টাটাক লাগবে, যদি সে আদৌ পৌঁছতে
পারে আরকি !

ধন্যবাদ , ট্যাব, তোমাকেও ধন্যবাদ !

সে কল্পনার চোখে দেখতে পাচ্ছিল ওই গর্দ ভটা একটা আরামদায়ক জেলঘরে অন্যান্য
অপরাধীদের সাথে বসে আরামে সিগারেট টানছে, আর এদিকে সে জীবন বাঁচানোর জন্য লড়াই
করে যাচ্ছে। আসলে ওর এখন ভারমিলিয়নে না গেলেও চলতো, ট্যাব আর ওর হতচ্ছাড়া নেশা
সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই পারতো, কিন্তু জিনার বোকা সাহায্যকারী স্বত্বা শেষমেশ জিতে
গিয়েছিলো। ও, ওর মায়ের মতোই একজন ধর্মপ্রাণ ক্যাথলিক ছিল, আর ভাইকেও না আনার
চিন্তাও সে করতে পারেনা, এটা ওর পরিবারের প্রতি বেঈমানি করার সামিল।

হঠাৎ -- বাতাস একটা সুনামির মতোই আঘাত করলো ওর গাড়ির আয়নার ওপর, জিনা সজোরে
স্টিয়ারিং আঁকড়ে ধরলো যাতে ওটা হাত থেকে ছুটে না যায় ! টয়োটাটা পিছলে ডানে সরে গেলো,
পেছনের দিকটা বিপজ্জনকভাবে পিছলে গিয়ে প্রায় রাস্তার বাইরে চলে গিয়ে নিচের খানাখন্দের
10

দিকে টানছিল গাড়িটা। শেষমেশ অবশ্য সেটা হলনা, গাড়িটা আবার সোজা হয়ে জিনার কন্ট্রোলে
চলে এলো।

হাঁফ ছাড়ল জিনা, গেছিলো আরেকটু হলে !

ঝড়ো বাতাস বাইরের বিস্তৃ ত মাঠ জুড়ে বয়ে যাচ্ছে, গাড়ির সামনের উইন্ডশিল্ড জুড়ে ঠিক যেন
একটা সাদা পর্দা ঝু লে আছে। ওয়াইপারগুলি প্রাণপণে সামনের উইন্ডশিল্ডটা পরিষ্কার রাখার চেষ্টা
করে যাচ্ছে। হেডলাইটের আলোতে সামনের রাস্তা জুড়ে নেচে যাচ্ছে সাদা তু ষার। জিনা তির্যক
দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করল সে আসলে কোথায় আছে, অনেকক্ষণ হল সে
কোন গাড়ি দেখেনি। সামনের পথটা একটা বিশুদ্ধ সাদা ফিতার মতো দিগন্তবিস্তৃ ত মাঠের মাঝখানে
বিছিয়ে আছে। এক্সিলারেটর থেকে পা সরিয়ে নিলো জিনা, এখন বোঝার কোন উপায় নেই সে
নিজের লেনে আছে কি-না । আরেকটা কোণ ঘুরলো টয়োটাটা , আর এবার দৃষ্টিসীমা দশ মিটারে
নেমে এলো, প্রায় অন্ধ করে দিলো জিনাকে।

তখন হঠাৎ করেই সে একটা হেডলাইট দেখতে পেলো, আরে, তু মি সরাসরি ওর দিকেই এগিয়ে
যাচ্ছ, নিজেকে শোনাল জিনা। ও নিশ্চয়ই নিজের লেন ছেড়ে পাশের উল্টো লেনে চলে এসেছে,
সামনের ওটা একটা বিশাল ট্রাক। শিট !

‘বুউউ’ করে ট্রাকটা তার কানফাটানো হর্ন বাজাল, আর জিনার মন মৃত্যুভয়ে আচ্ছন্ন হয়ে
পড়লো। এখন, জিনা নিজেকে শোনাল, তু মি যদি জোরে স্টিয়ারিং ঘোরাও, তাহলে তু মি রাস্তার
বাইরে ছিটকে পড়বে, আর লেন আঁকড়ে থাকলে পড়বে ওই যন্ত্রদানবের সামনে। সাবধানে , খুউইব
সাবধানে , সে আস্তে আস্তে স্টিয়ারিং ঘোরালো , নিজের লেনে ফেরত যাবার সময় ভারী ট্রাকটার
এমন পাশ ঘেঁষে গেলো জিনার গাড়িটা, যে দুই গাড়ির মাঝখানে একটা কমলালেবু রাখলে সেটা
চ্যাপ্টা হয়ে যেতো। একটু খানি ঘষা লাগলেই আর দেখতে হতোনা, সোজা পাশের গভীর খানাতে
গিয়ে জমত ওর টয়োটা।

পরের বিশ মিনিট কিছুই ঘটলো না ।


11

অবশেষে, ক্রো ফলসের উপত্যকা সামনে বিছানো দেখতে পেলো জিনা, শহরের বাতিগুলি
অন্ধকারে ঝিকমিক করতে লাগলো। ঠিক মনে হচ্ছিলো মরুভূ মির মাঝখানে একটা মরীচিকার
মতো, কারণ মুহূর্তে র মধ্যে দৃশ্যটা আবার তু ষার ঝড়ের আড়ালে ঢাকা পড়ে গেলো।

আমি এসে গেছি ! জিনা ভাবল আমি বাড়ি পৌঁছে গেছি !

শহরতলির ঠিক পাঁচ মিনিট আগে, রাস্তার ওপর দশ সেন্টিমিটার পুরু বরফ জমে থাকতে দেখল
জিনা। ঠিক সেই মুহূর্তে ............ ওর হেডলাইটের আলোর সামনে আচমকা একটা শরীর এসে
দাঁড়ালো, জিনা একটা চিৎকার দিয়ে উঠে ব্রেক চেপে ধরল। টয়োটা সামনে পেছনে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে
দুলতে দুলতে স্কিড করে সামনেই এগোতে লাগলো আর একটা বিচ্ছিরি ভোঁতা আর ভয়ংকর
আওয়াজ করে সামনের লোকটাকে বাম্পার দিয়ে ধাক্কা মারল, লোকটা ছিটকে পাশের তু ষারঝড়ের
ভেতর নিক্ষিপ্ত হল।

পরমুহূর্তে জিনা দেখতে পেলো উইন্ডশিল্ড সমান উঁচু বরফের মধ্যে ওর গাড়িটা আটকে গেছে ! ও
রিভার্স গিয়ার দিলো, চাকা ঘুরেই গেলো কিন্তু গাড়ি নড়ল না। অগত্যা নিজেকে শান্ত করে অনেক
ধ্বস্তাধস্তি করে দরজা খুলে সাবধানে বাইরে বেরিয়ে এলো। ঠাণ্ডা বাতাস ওর শরীর আর মুখে
চাবুকের মতো আছড়ে পড়লো আর ওর পুরো শরীর মুহূর্তে ই অবশ হয়ে গেলো।

ওর পুরো শরীর ভীষণভাবে কাঁপছিল, শুধু শীতে নয়, ও যাকে ধাক্কা মেরেছে তার কথাও ভাবছে
সে। ওকে ‘৯১১’ এ কল দিতে হবে আর বডিটা খুঁজে বের করতে হবে। চিন্তাটা ওকে সম্পূর্ণ
অবশ করে দিলো, কারণ এইমাত্র ও দেখতে পেয়েছে ও কাকে – আসলে কাকে নয় – ‘কি’ কে
ধাক্কা মেরেছে ।

ও একটা ক্লাউনকে ধাক্কা মেরেছে !

অধ্যায় ৫
12

“এখন শান্ত হোন সবাই ! ”

শেরিফ টিগের আওয়াজ সাউন্ড সিস্টেমে গমগম করে উঠলো, এমনকি বাইকাররাও যারা কিনা
পাশের রুমে বিলিয়ার্ড খেলছিল, তারাও থেমে গেলো আর কিউ (খেলার লাঠি) এর ওপর ভর
দিয়ে দাঁড়ালো। পুরো ‘ব্রোকেন বটল’ বার নিস্তব্ধ হয়ে গেলো, কেউ সামান্যতম শব্দও করছে না।
অতিথিরা তাদের বিয়ারের বোতলে চু মুক দিতে ভু লে গেলো, টেবিলের ওপর রাখা পিজ্জার
টু করোগুলি নীরবে ঠাণ্ডা হচ্ছে।

“ওয়েল” শেরিফ টিগ শুরু করলো “আমি এটা বলছি না যে , ব্রোকেন বটল বন্ধ করে দিতে চাচ্ছি,
আমার সেটা করার এখতিয়ারও নেই -- ”

“সহজভাবে নাও যে ওটা করার এখতিয়ার তোমার নেই --” অতিথিদের একজন উচ্চস্বরে বলে
উঠলো , চারপাশে হাততালি আর হাসির রোল পড়ে গেল একথা শুনে।

টিগ ওর মাথা ঝাঁকাল “ধন্যবাদ , কারপি ! পরেরবার তোমার সাথে দেখা হলে, তোমার সাপ ট্যাটু
লাগানো বাইকের চাবি নিয়ে তোমাকে সোজা একটা সেলে ঢু কিয়ে দেবো !”

জর্জ কারপির উৎসাহে ঠাণ্ডা পানি পড়ে গেলো, ও এমনভাবে সামনে রাখা বিয়ারের গ্লাসের
ভেতর তাকিয়ে রইলো যে দেখে মনে হতে লাগলো সেখানের ভেতর ওর হারানো সাহস খুঁজে বের
করার চেষ্টা করছে !

টিগ বলে চলল “কেউ ‘ব্রোকেন বটল’ বন্ধ করতে যাচ্ছে না , আমি কেবল বর্ত মান পরিস্থিতির
ভয়াবহতা সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। বাইরে, শতাব্দীর ভয়াবহতম তু ষারঝড় পাকিয়ে
উঠছে। মধ্যরাতের ভেতর আট ইঞ্চি আর সকালের ভেতর এক মিটারের মতো পুরু বরফ জমার
পূর্বাভাস রয়েছে। স্টেট পুলিশ ইতিমধ্যে হাইওয়ে বন্ধ করে দিয়েছে আর লোকাল পুলিশ চাচ্ছে
পেছন দিককার রাস্তা গুলো বন্ধ করে দিতে। তোমাদের মধ্যে যারা একটু দূরে থাকো, যেমন তু মি –
13

কারপি – তোমার উচিত এখনই বাড়ির পথ ধরা ! অথবা শহরের ভেতর কারো সাথে রাত
কাটানো যায় কিনা চেষ্টা করে দেখা । ”

পুরো রুম জুড়ে অসন্তোষের বিড়বিড়ানি আর গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লো।

“ভালোই দেখালে, শেরিফ !” ব্রেনডা পেচেক অভিযোগ জানাল “তু মি আমার শুক্রবারের পুরো
বিকেলের ব্যাবসা ধ্বংস করে দিলে ! আমি কষ্টেসৃষ্টে ভাড়ার টাকা জোগাড় করার চেষ্টা করছি আর
তু মি এসে আমার বারোটা বাজিয়ে দিলে !”

“হ্যাঁ ! ঠিক কথা !” পাশ থেকে উচ্চস্বরে সায় জানাল ওর স্বামী স্তিউ।

টিগ ভালো করেই জানতো স্তিউ পেচেক ওর বউয়ের সব কথাতেই সায় দেবে , সেটা বাজারে
শসার দাম নিয়েই হোক বা তোমার বাঁকা মন্তব্য, যাই হোক না কেন।

“আমি কেবল সত্যি ঘটনাটা তু লে ধরছি ” চেঁ চাল টিগ “তোমরা তোমাদের যা মনে আসে করতে
পারো, কেবল রাস্তা থেকে তোমাদের গাড়ি আর ট্রাকগুলি সরিয়ে নাও, স্নো-প্লাউগুলি যাতে
বাধাহীনভাবে চলাচল করতে পারে। আধঘণ্টার মধ্যে আমি যা বললাম সেটা যদি না হয়, তাহলে
আমি গাড়িগুলো টেনে সরিয়ে নেবার ব্যাবস্থা করব। সেটা কারো জন্যই সুখকর হবে না !”

অতিথিদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের জ্যাকেট তু লে নিয়ে বাইরে ছুটে গেলো, দরজা খোলার সাথে
সাথে বাইরের বরফ ঠাণ্ডা হাওয়া ভেতরে ঢু কে বেশ কিছু হালকা কাগজের প্লেট উড়িয়ে দিলো ।
নিয়মিত পানকারীরা বসেই রইলো, দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে ভাবতে লাগলো , কে ওই উইল
টিগকে খুন করে বিশ্ব সম্রাটের আসন কেড়ে নেবে ! অন্যদিকে ব্রেনডা অভিযোগ করেই চলল “খুব
ভালোই খেল দেখালে, শেরিফ ! এবার কি করবে, পুরো শহর শাট ডাউন করে দেবে ?”

“আধ ঘণ্টা !” আরেকবার বাজখাই গলাতে বলেই স্টেজ ছেড়ে নেমে পড়লো টিগ।

ব্রেনডা গজগজ করেই চলল “তু মি ওই বালের লিবারেটদের কাছ থেকে এসব পেয়েছ , ওই -- ”
14

“তোমার মুখ বন্ধ করো , ব্রেনডা !” টিগ ত্যাক্ত হয়ে বলল।

“তু মি কি ওকে এভাবে আমার সাথে কথা বলতে দেবে ?” স্বামীর দিকে তাকাল ব্রেনডা।

“কি বলছ ভেবে বলো !” গরগর করে বলল টিগ।

স্তিউ একবার ওর বউয়ের রাগে গনগনে লাল মুখের দিকে তাকাল , আরেকবার শেরিফের দিকে ।
একশো আশি পাউন্ড এর কিলবিলে পেশী আর বেশ অনেকটা চওড়া কাঁধ, ওই পুলিশ লেদার
জ্যাকেটের ভেতর গুঁজে দেয়া। নাহ ! এই ঝুঁকি ও নিতে পারবে না !

ও শুকনোভাবে ঢোঁক গিলে বলল “হ্যাঁ !”

অধ্যায় ৬

তু ষারঝড় গুঙিয়েই চলেছে, জিনা ওর জ্যাকেটের পকেটে গ্লাভসগুলি গুঁজে রাখল আর


সেলফোনটা বের করলো। ও এখন ৯১১ এ কল দেবে আর খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে ও
আসলে কাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে।

কিন্তু ঠাণ্ডা আর ওর ভয়, দুটোর যুগপৎ আক্রমণে ওর হাত এতই কাঁপছিল যে ওর ফোনটা ছুঁ ড়ে
দেয়া পাথরের মতো ওর হাত থেকে ছুটে গিয়ে একটা বরফের স্তূ পের নিচে হারিয়ে গেলো। ও
সাথেসাথেই হাঁটু গেড়ে বসে ওটা খুঁজতে লেগে গেলো। ওটা খুঁজে বের করা সহজই হবার কথা,
কিন্তু অনেক খোঁড়াখুঁড়ি আর বরফ-মাটি সরানোর পরও ওটা খুঁজে পেলনা সে। ওখানে বেশ
অন্ধকার থাকাতে ওর মনে পড়ল গ্লোভ কম্পার্ট মেন্টে রাখা ফ্ল্যাশলাইটটার কথা । ও ওটা নিয়ে
ফেরত আসার পথে শক্ত কিছুর ওপর ওর পা পড়লো, ‘কট’ করে একটা শব্দের সাথে কিছু
একটা ফেটে যাবার শব্দ শুনল সে “গ্রেট !” ভাবল সে, এই বালের রাত আরও মধুময় হয়ে উঠছে
!
15

ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল, নিজেরই শরীরের চাপে ডিসপ্লেটা গুড়ো গুঁড়ো হয়ে গেছে, অনেক
টেপাটিপিতেও কোন লাভ হল না। জিনার শুধু কাঁদার বাকি ছিল। বাতাস তু ষার গুঁড়ো ছেটাতে
ছেটাতে বয়ে যাচ্ছিল, আর জিনা ভাবছিল এর চাইতে খারাপ অবস্থায় আর কখনও পড়েছে
কিনা। ও টের পেল, এখন যদি রওনা দেয়, তাহলে দশ মিনিটের মাঝে শহরে পৌঁছে যাবে।

কিন্তু ও দুর্ঘটনার ঘটনাস্থল থেকে তো এভাবে চলে যেতে পারেনা, অন্তত একবার হলেও ওর দেখা
উচিত ও যাকে ধাক্কা মেরেছে ও বেঁচে আছে কিনা !

তু মি দেখেছ ওটা কি ছিল ! একটা ক্লাউন ? !! এই ঝড়ের মধ্যে কোন সিরিয়াল কিলার, সাইকো বা
পাগল ছাড়া আর কে ক্লাউনের পোশাক পরে ঘুরে বেড়াবে !!

তু মি হয় একপলক দেখবে মৃতদেহটা, নয়ত সোজা চলে যাবে ! কিন্তু কেলার ফ্যামিলির সাহায্যকারী
স্বত্বাই জয়ী হল। কদ্দুর আর যাবে, এই পনের কি বিশ মিটার হবে !

ফ্ল্যাশলাইটটা হাতে নিয়ে, যন্ত্রণাদায়ক তু ষার ঝড়ের ভেতর লাশটা খুঁজতে বেরোল জিনা, টয়োটার
ফেলে যাওয়া চিন্হ মুছে যাচ্ছে, কিন্তু যেখান থেকে পিছলে যাওয়া শুরু হয়েছিল , সেটা বেশ দেখতে
পাচ্ছিল জিনা।

কাছেই দেখতে পেলো রক্তের দাগ !

ইতিমধ্যে কিছুটা তু ষারে ঢেকে গেছিলো, কিন্তু ফ্ল্যাশলাইটের মরা সাদা আলোতে ও যেটু কু দেখতে
পেলো, তাতে পরিষ্কার বোঝা গেলো, এখানে কেউ গুরুতর আহত হয়েছে।

এতোটা রক্ত ! এত রক্ত যাবার পর কেউ কি বেঁচে থাকতে পারে !

কিন্তু কাছাকাছি কোন মৃতদেহ তো দেখা যাচ্ছেনা ! কিন্তু এই বালের আবহাওয়াতে ভালো করে তো
কিছু দেখারও জো নেই !
16

ও জুতার ডগা দিয়ে ফু ট তিনেক বা তারও উঁচু তু ষারের ছোট্ট টিলাগুলি নেড়েচেড়ে দেখতে
লাগলো, এগুলির যে কোনটার নিচে লাশটা লুকিয়ে থাকতে পারে। এরকম আরও ডজনখানেক
ক্লাউনের লাশ এখানে লুকিয়ে থাকলেই বা কে খুঁজতে যাচ্ছে !

আজেবাজে চিন্তা বাদ দাও ! নিজেকে নিজেই ধমক লাগাল জিনা।

তাহলে শহরে ফিরে গিয়ে শেরিফ আর তার লোকজনকে নিয়ে আসা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
এই ভেবে সে পা বাড়াতে যাবে, সেই সময় আবার থেমে গেলো, কারণ সে একটা শব্দ শুনতে
পেয়েছে !

ওই শব্দ তো এখানকার হতে পারেনা !

বাতাস ওর পাশে ফিসফিস করে বয়ে যাচ্ছিল, পুরো দুনিয়াটাকে মনে হচ্ছিলো একটা সাদা রঙের
কবরস্থান !

ওই ...... ওই শব্দটা আবারো হচ্ছে, একটা বিচিত্র ঝনঝন আওয়াজ, ঠিক বাচ্চাদের ঝু মঝু মির
আওয়াজের মতো।

জাহান্নামে যাক !! ভেবে জিনা যেই আগাতে যাবে, হঠাৎ ওর সারা শরীর কেঁ পে উঠলো, কিছু
একটা ওর গোড়ালি আঁকড়ে ধরেছে !

ও আতঙ্কে একটা চিৎকার দিলো যখন দেখল কি তাকে আঁকড়ে ধরেছে , ওটা ......... ওটা ছিল
একটা মোটা, বিকৃ ত , কদাকার সাদা হাত ! ফ্ল্যাশ লাইটের সাদা আলোতে ওটাকে গ্লাভসের মতো
লাগলেও ওটা কোন গ্লাভস ছিলোনা। কারণ গ্লাভসের কখনও দপদপ করা শিরা উপশিরা
থাকেনা, আর অবশ্যই লম্বা , হলুদ নখও থাকেনা !

জিনা চিৎকার করতে করতে বরফের ওপর পড়ে গেলো। হাতটা বজ্রমুষ্টিতে জিনাকে ধরে টানতে
লাগলো। পর মুহূর্তে ও উড়ে গিয়ে পড়লো একটা বরফের টিলার ওপর, প্রথমে মাথা দিয়ে। ওর
সর্বাঙ্গ ঝনঝন করে উঠলো। খানিকক্ষণের জন্য জিনা জ্ঞান হারিয়ে ফেলল।
17

চেতনার গভীর থেকে নিজেকে উদ্ধার করে উঠে বসলো জিনা, হামাগুড়ি দিয়ে রাস্তাতে উঠে
আসার চেষ্টা করতে লাগলো। ডানে বামে আতঙ্কের সাথে তাকাতে লাগলো। তু ষার ওর
জ্যাকেটের ওপর ক্রমাগত আঘাত করে যেতে লাগলো, ও আশেপাশে কাউকে দেখতে পেলো না,
কিন্তু ও জানে ও একা নয়। ও উঠে দাঁড়ানোর পর আবিষ্কার করলো ওর গোড়ালিতে প্রচণ্ড ব্যাথা,
কিন্তু কিছু করার নেই, এখন ও যদি ভাগ্যবান হয় তাহলে একটা স্নো প্লাউকে সময়মত থামাতেও
পারে!

তাড়াতাড়ি করো ! পালাও এখান থেকে !

নিজেকে বাঁচানোর চিন্তাতে বিভোর ছিল সে, এর মাঝেই ওই ঝু মঝু মির মতো আওয়াজটা সে
আবারো শুনল।

ওহ না !! আবার না !!

সামনে ঘোলাটে প্রেক্ষাপটে সে একটা নড়াচড়া দেখল, সে পিছিয়ে আসতে গিয়ে হোঁচট খেল,
তখনই ওকে পেছন থেকে কে জানি ধাক্কা দিলো ! ও মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে গেলো। সাথে সাথে
উঠে বসে গেলো সে, আর সামনেই দেখতে পেলো সেই ক্লাউনটাকে !

ওটা ছিল বিশাল আর বেশ বিকৃ ত। ওটার নীল সাদা স্যুটটাতে রক্ত জমে শুকিয়ে গেছে। ওটার
চেহারা ছিল মরার মতো ফ্যাকাসে, নাকটা ছিল লাল আর ফোলা, চিবুক আর কপালে জালের
মতো গোলাপি শিরা উপশিরা ছড়িয়ে আছে ! মাথার ওপর কয়েকগাছি সবুজ রঙের চু ল পালকের
মতো নড়ছিল !

জিনা পিছলে সরে যেতে চাইলো , কিন্তু ওই হলুদ নখওলা হাতটা এগিয়ে এসে ওকে এমন এক
ঝটকা মারল , যে ও প্রায় উড়ে গিয়ে দুই মিটার দূরের একটা বরফের টিলাতে গিয়ে পড়লো। পড়েই
চিৎকার করতে করতে মুখ থেকে তু ষার কণা সরাতে লাগলো জিনা। কিন্তু ও চোখে কিছুই
দেখছিল না ! ক্লাউনটার ক্ষু রের মতো ধারালো নখ ওর কপাল থেকে শুরু করে চিবুক পর্যন্ত
18

পাশাপাশি চার লাইনের একটা গভীর ক্ষত তৈরি করে দিয়েছে ! গভীর ক্ষতগুলি থেকে রক্ত চু ইয়ে
চু ইয়ে পড়ছে। ওর নিচের ঠোঁট প্রায় ছিঁ ড়ে গেছে, নাক নেই হয়ে গেছে , চোখের জায়গাতে দুটো
গভীর গর্ত ! ব্যাথার অনুভূ তি মস্তিষ্কে পৌঁছানর আগেই সারা শরীর অবশ হয়ে পড়লো, জিনা ঝরা
পাতার মতো ঝরে পড়লো আবার। ক্লাউনটা যখন ওর গলাতে দাঁত বসাচ্ছে, ততক্ষণে ও আবার
জ্ঞান হারিয়েছে।

অধ্যায় ৭

বিশ মিনিট পর, শেরিফ টিগের কাছে মনে হল , পরিস্থিতি ওর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। অবশ্যই, কিছু
ঘাটের মরা টাইপের লোক সব জায়গাতেই থাকে , এই বারও তার ব্যাতিক্রম নয়। ওরা ক্রমাগত
টিগকে সংবিধান সংক্রান্ত উপদেশ দিয়েই যাচ্ছে। আর মনে করিয়ে দিচ্ছে পরেরবার ওকে শেরিফ
নির্বাচিত করার ব্যাপারটা ওরা পুনর্বিবেচনা করবে , শেরিফের তাতে বয়েই গেলো ! এই বালের
জায়গাটা লোফার, মাস্তান আর মানসিক বিকারগ্রস্ত লোকে ভর্তি ।

ওদের দরকার একজন সাইকিয়াট্রিস্ট, কোন শেরিফ নয়। ক্রো ফলসে তিন হাজারেরও কম
অধিবাসী আছে, কিন্তু মানসিক অসুস্থ লোকের সংখ্যা রাজ্যের অন্যান্য অংশের তু লনায়
অস্বাভাবিকরকম বেশি ! পরিসংখ্যান অনুযায়ী সংখ্যাটা অবিশ্বাস্য। সম্ভবত খাবার পানিতে কোন
সমস্যা থেকে থাকবে ! পাবে থাকা অর্ধেকেরও বেশি লোক ওদের গাড়িগুলো সরাতে গিয়ে আর
ফেরত আসেনি। পাবে একজন পুলিশ বসে আছে, সেটা একটা কারণ হতে পারে। ব্রেনডা পেচেক
টেবিলে টেবিলে গিয়ে গ্লাস আর বোতলগুলি সংগ্রহ করছে আর থেকে থেকে ঘেন্নার দৃষ্টিতে
শেরিফের দিকে তাকাচ্ছে ! শেরিফের তাতে কিছুই যায় আসে না ওই গজরাতে থাকা বুড়ি মহিলা
কি বলছে সেটা নিয়ে। শেরিফ জানালার কাছে গিয়ে বাইরের তু ষার ঝড়ের অবস্থা দেখল খানিক,
অবস্থা খুবই খারাপ, বেশ খারাপ ধরণের বিপর্যয় ঘনিয়ে আসছে, কিন্তু অন্তুত রাস্তাটা এখন খালি।
শেরিফ আস্তে আস্তে দরজার দিকে এগোতে লাগলো, কিন্তু ওটার কাছে পৌছার আগেই ওটা হাট
করে খুলে গেলো বাইরে থেকে !
19

বাতাস আর তু ষার হুড়মুড় করে ভেতরে ঢু কে পড়লো আর টিগ তাতে একটু কেঁ পে উঠলো।
দরজাটা বন্ধ হবার পর দেখল বেবে চ্যান্ডলিস ঢু কে এসেছে, ওকে ধরে হাফাতে লাগলো মেয়েটা,
চোখ বড় বড়, নাক দিয়ে পানি পড়ছে, চেহারা সাদা হয়ে গেছে।

“ঈশ্বরের দোহাই ! ” বলল টিগ, “কি হয়েছে তোমার !” বলতে বলতে বেবেকে একটা বেঞ্চের দিকে
নিয়ে এলো সে।

আশা করি এটা রিচির কাজ নয় ! -- টিগ ভাবল রাগের সাথে -- ও যদি আবার মেয়েটাকে পিটিয়ে
থাকে, তাহলে এবার ব্যাটা গবেটটাকে ছয় মাসের জন্য জেলে পুরবো আমি !

কিন্তু কিভাবে জানি সে বুঝতে পারলো এটা রিচি সংক্রান্ত কোন ব্যাপার নয়। বেবে ওর পাশেই বসে
আছে, কিন্তু ওর শরীরে দৃশ্যমান কোন রক্ত বা কালশিটে দেখা যাচ্ছে না । মানসিক অবস্থা ছাড়া
আর যেটা চোখে পড়লো সেটা হল ওর স্নো স্যুটের পেছনে একটা ফাটল। দুহাতে মুখ ঢেকে
মেয়েটা ফুঁ পিয়েই চলেছে। ও যখন কথা বলার মতো অবস্থাতে এলো, তো-তো করে কি বলল
কেউই বুঝতে পারলো না । ইতিমধ্যে একটা ছোট জটলা ওদের ঘিরে দাঁড়িয়ে গেলো।

“গভীরভাবে শ্বাস নাও ” টিগ বলল। ব্রেনডার দিকে তাকিয়ে বলল “ওকে একটা ড্রিংক দাও ,
কড়া করে !”

ব্রেনডার চেহারা অন্ধকার হয়ে গেলো “নিষ্ফল চেষ্টা করে কোন লাভ নেই !”

“কাম অন !” ভ্রূভঙ্গি করল টিগ ।

তিন আঙ্গুল পরিমাণ নির্জ লা হুইস্কি পেটে পড়ার পর , বেবে একটু ধাতস্থ হল , কথার মাঝখান
থেকেই খেই ধরল “............ আমরা লাশটা দেখলাম............ ওটা ইতিমধ্যে তু ষারে অর্ধেক ঢাকা
ছিল ............ কিন্তু...... কিন্তু ওটা পুরোপুরি ছিন্নভিন্ন ছিল। ”

ঢক করে বাকি হুইস্কিটা গলায় ঢেলে দিলো মেয়েটা “ওহ মাই গড ! লাশটার নাড়িভুঁ ড়ি বের হয়ে
ছিল, শেরিফ ! ঠিক যেভাবে একটা হরিণের বের করা হয় । ” বারবার ঠোঁট ভেজাতে ভেজাতে
20

বলে চলল বেবে “মেয়েটা ...... মেয়েটা ...... আমরা দুজনেই দেখেছি, মেয়েটার ভেতরটা পুরোই
খালি ছিল ! ”

একটা বাজে অনুভূ তি ছড়িয়ে পড়ছিল টিগের ভেতর “কে ? বেবে , তু মি ঠিক কার কথা বলছ ?”

“আমার মনে হয় একটা লাশ নিয়ে কথা হচ্ছে ” স্তিউ পেচেক ওর বউকে বলল।

“ওহ , তাই নাকি ?” শুকনোভাবে মাথা নাড়ল বউ !

“আমরা খুবই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম ” বলে চলল বেবে “আমাদের কাছে কোন ফোন না
থাকায় আমরা আমাদের মেশিনের কাছে ফিরে এলাম আর ওখান থেকে একরকম পালিয়েই
এলাম......”

অনেক সময় লাগলো, কিন্তু ধৈর্যের সাথে ধীরে ধীরে পুরো ব্যপারটা মেয়েটার ভেতর থেকে বের করে
আনা গেলো –

বেবে আর রিচি ক্রো লেকের দিক থেকে স্নো-মোবিলে করে শহরের দিকে ফিরছিল, শহরের ঠিক
বাইরে ওরা একটি মেয়ের দেহাবশেষ খুঁজে পায়।

“চারদিকে শুধুই তু ষার দেখা যাচ্ছিল” বেবে বলল “দৃষ্টিসীমা দশ মিটারের বেশি ছিল না , রিচি ওর
মেশিন নিয়ে আমার ঠিক পেছনেই ছিল, আর......... আর হঠাৎ করেই ও নেই হয়ে গেলো ! ”

তখন বেবে পেছনে ড্রাইভ করে গেলো, রিচির স্নো-মোবিলটা একটা খাদে পড়ে থাকতে দেখল।
কিন্তু রিচিকে কোথাও দেখা গেলো না ! একমাত্র যে জিনিসটা ও খুঁজে পেলো সেটা হলো প্রচু র
পরিমাণে রক্ত ! বেবে বলল যে মনে হচ্ছিলো বস্তা ভর্তি কোন লাল রঙের কালি যেন বিস্ফোরিত
হয়ে সেখানে ছড়িয়ে পড়েছিল !

“ ......... আর তখনই আমি ওকে দেখলাম !”

“রিচি ?” কারপি জিজ্ঞেস করলো, কিন্তু বেবে না-সুচক মাথা নাড়ল “নাহ, ওটা ও ছিল না !”
21

সে এরপর এমনভাবে রুমের চারদিকে তাকাল যেন সে তখনও ওই তু ষারঝড়ের জায়গাতেই


দাঁড়িয়ে আছে “ওটা ...... ওটা একটা বরফের টিলার ওপর দাঁড়িয়ে ছিল , আর আমার দিকে স্থির
দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল ! ওটার অনেক লম্বা লম্বা নখ ছিল, ওটা......... ওটা ছিল একটা ক্লাউন !”

টিগ আচমকাই দাঁড়িয়ে পড়লো ।

সবাই ওর দিকে তাকাল , অপেক্ষা করছিলো টিগ কখন মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করবে যে ওরা গাঁজা-
টাজা টেনেছে কিনা ! কিন্তু টিগ চু প করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল , আজকে রাতটা মনে হচ্ছে
সেসব স্পেশাল রাতের একটা হতে চলেছে !

“একটা ক্লাউন ?” ব্রেনডা বলল বিভ্রান্তভাবে, এমনভাবে যেন এই শব্দটা আগে কখনও শোনেনি
“একটা বালের ক্লাউন ?”

ওর জামাই সম্পূর্ণ বিভ্রান্ত সুরে যোগ করলো “ওই যেগুলি সার্কাসে থাকে ?”

“না , গর্দ ভ ! যেগুলি জেট প্লেন ওড়ায় সেগুলি !” রুষ্ট স্বরে বলল ব্রেনডা “ বালের কয়রকমের
ক্লাউন আছে বলে জানো তু মি ?”

“আমি এমনিই বললাম ” স্তিউ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল।

কারপি গা জ্বালানো খিক খিক হাসি হেসে বলল “যেগুলি জেট প্লেন ওড়ায় , হি হি হি , মজা
পাইসি !”

টিগ আর ব্রেনডা একসাথে একসাথে চিল্লিয়ে উঠলো ! কিন্তু বেবে মনে হচ্ছে এ জগতেই নেই , ও
ওর মতো বলেই চলেছে “ওটা একটা ক্লাউন ছিল, ওটার বড় বড় নখ ছিল, ও রিচিকে ধরেছে!”

টিগ জানতো ঠিক কোথায় ওই লাশ আর স্নো-মোবিলটা দেখা গেছে, আর ওখানেই এখন ও যেতে
চায় !

“মেয়েটার যত্ন নাও ” বলেই বাইরের দিকে রওনা হয়ে পড়ল সে।
22

অধ্যায় ৮

টিগের সাথে ঐদিন তিনজন ডেপুটি ডিউটিতে ছিল। কিন্তু ওদের মধ্যে দুজন – স্টিলস আর
ওয়েগলি – কাউন্টির অন্যপাশে ডিউটিতে ছিল। শুধু পিনাট – যার আসল নাম হল ওলি পিস ,
একটা এসইউভি গাড়ি নিয়ে ক্রো ফলসের রাস্তাগুলি টহল দিয়ে বেড়াচ্ছে। সে বিরাট এলাকা
জুড়েই টহল দিচ্ছে আর গ্র্যান্ড ফরক্সের একটা রক রেডিও চ্যানেল শুনছে, বাতাসে হাত দুলিয়ে
কাল্পনিক গিটার বাজাচ্ছে , সাউন্ডগার্ডে ন এর প্রিটি নোস গানটার তালে তালে ! শেরিফ এইমাত্র
রেডিও করে জানিয়েছে শহরতলির ঠিক বাইরে একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে, ওর আপাতত কোন
সাপোর্ট লাগবে না, পিনাট যেন এটা নিশ্চিত করে যে রাস্তার পাশে কোন গাড়িঘোড়া পার্ক করা
নেই।

কোন সমস্যা নেই।

এলাকাতে গাড়ি নিয়ে টহল দিয়ে বেড়ানো আর ভালো ভালো মিউজিক শোনা , এভাবেই আসলে
পিনাট তার রাতগুলি কাটাতে চায়, কারণ সে পুলিশের পেশাটা ঘেন্না করে ! একমাত্র যে কারণে সে
এই পেশায় এসেছে তার কারণ হল , তার নিজের বাবা চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাউন্টি
শেরিফ ছিল, আর নিজের ছেলেকে এই পেশাতে আসার জন্য অনুরোধ করে গেছিলো। পিস
পরিবারের সব পুরুষমানুষই পুলিশ ছিল, সেই উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম থেকেই ! আর এ ধরণের
ঐতিহ্য ভাঙ্গা খুব সহজ ব্যাপার না । বিষয়টা হল , পিনাট আসলে পুলিশই না ! ব্যাপারটা ওর
সাথে আসলে যায়ইনা ! ও ভালোবাসে মিউজিক, ওটাই হল ওর ফেভারিট । হাই স্কু ল থেকেই ও
এসব করে আসছে, কান্ট্রি রক, ত্র্যাশ, ফ্যানক, হেভি ব্লুজ কি করেনি ! তবে ও বেশি পছন্দ করে
মেটাল। ওর মতে ওটাই হল সত্যিকারের মিউজিক, কেউ যদি আপত্তি জানায় , তাহলে ওর
23

ভালোবাসার ‘ইবানেজ ডেস্ট্রয়ার’ সাব উফার (সাউন্ড স্পিকার) দিয়ে ওদের অণ্ডকোষ উড়িয়ে
দিতে ওর বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই !

ওর বাবা ছয় মাস আগে মারা গেছেন, আর এখন ও ভাবছে এই বালের টিনের তারাটা ফেলে ও
সিয়াটলের দিকে পাড়ি জমাবে কিনা, যেখানে ও একজন সেশন মিউজিসিয়ান হিসাবে কাজ
করতে পারবে, যেটা ওর বর্ত মান অবস্থা থেকে হাজারগুনে ভালো হবে বলে ও মনে করে।

ওটা কি ?

একটা অদ্ভু ত দেখতে লোক স্কু লের খেলার মাঠে ঘোরাঘুরি করছে ! কি বাজে লোক ! পিনাট
ভাবতে লাগলো ও কি ভান করবে যে লোকটাকে ও দেখেইনি (যেটা ও প্রায়ই করে ), কিন্তু ওর
কাছে মনে হল এটা স্বাভাবিক হবে না ।

“ওকে পাকড়াও করো , ড্যানো ” ও ওর বাবার প্রিয় টি ভি সিরিজ হাওয়াই-ফাইভ-ও থেকে


বিড়বিড় করলো ।

পিনাট এসইউভি টা থামাল, কন্ট্রোল সেন্টারকে সংক্ষিপ্তভাবে নিজের অবস্থান জানালো, আর


এটাও জানালো যে সে গাড়ি থেকে বের হতে যাচ্ছে। খেলার মাঠে থাকা লোকটা মনে হল
ভ্রুক্ষেপই করলো না ! ও মাঠের গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো , যেখানে তু ষার ওর হাঁটু সমান
উচ্চতায় চলে এলো ঝট করে।

“এক্সকিউজ মি, স্যার !” সে বলল তার হাতের ফ্ল্যাশলাইটটা লোকটার দিকে উঁচু করে ধরে
“আমি কি জিজ্ঞেস করতে পারি আপনি এখানে কি করছেন ?”

কিন্তু লোকটা ওকে স্রেফ উপেক্ষা করলো , একটা ছোট্ট ল্যাম্প পাশে নিয়ে বরফ খুঁড়ে খুঁড়ে কি
জানি খুঁজছে। কিছু সময় পরে লোকটা মুখ তু লে চাইলো – আর কি চেহারা তার ! লম্বাচওড়া,
দাড়িঅলা, ঝড়ঝাপটা সহ্য করা মুখাবয়ব, চোখ সরু। পরে আছে একটা গোড়ালি পর্যন্ত লম্বা ফার
কোট, আর চ্যাপ্টা কানার একটা মরমন স্টাইলের হ্যাট, কোটটা খোলা, পিনাট দেখতে পেলো
24

সেখানে আড়াআড়িভাবে ঝু লছে একটা অ্যামুনিশন বেল্ট , একটা হোলস্টারসহ – যেটার ভেতর
একটা ভয়ংকরদর্শন আগ্নেয়াস্ত্র দেখা যাচ্ছে।

“কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো , অফিসার ! ” দৈত্যটা গড়গড় করে গম্ভীর স্বরে বলল “কারণ
আমাকে এখানে কাজ করতে হবে।”

“আপনাকে কি করতে হবে ?”

“আমি শিকার করছি, আর আমি এখন ট্র্যাক খুঁজছি !” জবাব এলো !

পিনাট একটা ঢোঁক গিলে অজান্তেই হাত আগ্নেয়াস্ত্রের কাছে নিয়ে গেলো “একটা খেলার মাঠে ?”

“ঠিক তাই ! কারণ আমি যেটা খুঁজছি , সেটা ছোট ছোট বাচ্চা ছেলেমেয়েকে খুঁজে বের করে
ওদেরকে খেতে পছন্দ করে !”

পিনাটের মনে হল ওর মুখ ভর্তি বালি ! হয়ে গেলো ! সে ভাবল, শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহতম
তু ষার ঝড়ের মধ্যে , অন্য সবাইকে বাদ দিয়ে সেই কিনা পড়লো এক অস্ত্রধারী পাগলের পাল্লায় !
বাতাস অনেক জোরে জোরে বইছে, আর ও কেন জানি হোলস্টারের ঢাকনা খুলতে পারছে না !
হুম, পারলো সে, অনেক কষ্টের পর।

“আমি কি আপনার নাম জিজ্ঞাসা করতে পারি , স্যার ?” গলা দিয়ে ব্যাঙের কাছাকাছি স্বর বের
হোল তার !

“ক্লেগ, কেবল ক্লেগ ”

“ঠিক আছে, মিস্টার ক্লেগ, আপনাকে মানতেই হবে ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ অদ্ভু ত ঠেকছে ,
আপনি বলছেন আপনি কিছু একটা তাড়া করছেন -- একটা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে, তু ষার ঝড়ের ভেতর,
এই শহুরে এলাকার ঠিক মাঝখানে !”

“তাহলে আপনি আমাকে ঠিক করে বলুন কি সেই জিনিস যা আপনি শিকার করছেন ! ”
25

ক্লেগ সম্পূর্ণ অভিব্যাক্তিহীনভাবে বলল “তাহলে আমি এটা বলতে পারি , একটি নির্দি ষ্ট মাংসাশী
প্রাণী শিকার করছি আমি !”

পিনাট এবার ওর বন্দুক বের করলো “আমি দুঃখিত, কিন্তু এই জবাব আমার জন্য যথেষ্ট নয় !”

ক্লেগ একটা শ্বাস ফেলে বলল “আমি তোমার জন্য হুমকি নই, ছেলে !”

“আপনার সাথে থাকা অস্ত্র সেকথা বলছে না ! আপনার কি ওটা ব্যাবহার করার লাইসেন্স
আছে?”

ক্লেগ হাসল “ছেলে, আমি এটা মানুষ মারার জন্য সাথে নিয়ে ঘুরছি না, এটা আমাকে কিছু বাজে
জিনিসের হাত থেকে রক্ষা করে। আর আমার শিল্পে এটার জন্য কোন সময় নেই ! “

“সেটা ঠিক কি ধরণের শিল্প, একটু বলবেন ?” বলল পিনাট।

“আমি সেসব জিনিস শিকার করি যেগুলি মানুষ মারে ! ওটাই আমার কাজ, আর আমি ওটার
জন্যই তৈরি !” বলেই কেমন জানি সন্দেহের দৃষ্টিতে পিনাটের দিকে তাকিয়ে রইল “কিন্তু তু মি
অনেক প্রশ্ন করো !”

“ওটাই আমার কাজ, স্যার”

ক্লেগ কাঁধ ঝাঁকাল “কিন্তু সমস্যা হল, আমি যে জিনিসগুলি শিকার করি, ওগুলো অনেক চালাক,
সবসময় সতর্ক থাকে, অনেক রকমের ছদ্মবেশ নিতে পারে ওদের শিকারের কাছাকাছি যাবার
জন্য, যে কোন ছেলে বা মেয়ের, এমনকি একজন ডেপুটি শেরিফেরও ! ”

পিনাটের মনে হোল ওর ভেতরটা শুকিয়ে যাচ্ছে, একগাদা পিন খেয়ে ফেলেছে বলে মনে হচ্ছে ওর
! ক্লেগ নিশ্চিত একটা উন্মাদ , বেশ প্রতিভাবান উন্মাদ !

“মিস্টার ক্লেগ, আপনি কি নিয়ে কথা বলছেন আমি জানিনা, কিন্তু আমি আপনাকে নিশ্চিত করছি
যে আমি একজন আসল ডেপুটি শেরিফ ! এখন আমাকে আপনার আইডি দেখান প্লিজ ।”
26

“ওটা আমার ভ্যানে আছে ” জবাব এলো।

পিনাট আসার পথে দেখেছে ওটা, ম্যাট ব্ল্যাক কালারের, কু ৎসিত দেখতে, আর বিশাল টায়ার
“তাহলে চলুন আমরা ওটার কাছে যাই, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন আর ইনস্যুরেন্সের কাগজগুলি আমি
একটু দেখতে চাই । কোন আজেবাজে কিছু করার চেষ্টাও করবেন না, আমি আপনাকে গুলি
করতে চাই না !”

“আমিও না !” গম্ভীর কণ্ঠে জবাব এলো।

“ওটার ব্যাপারে, এখন আমি আপনাকে আপনার অস্ত্রের বেল্টটা খুলতে বলব, একদম ধীরে ! ”

“আমি ওটা করতে পারবো না !”

পিনাট ভ্রু কু চকাল “কেন নয় ?”

“আমি অস্ত্রহীন থাকতে পারবো না , আমার অনেক অনেক শত্রু !”

“এটা অনুরোধ ছিল না, এটা ছিল একটা অর্ডার ! ” পিনাট এটা বলেই অস্ত্রটা ক্লেগের দিকে তাক
করলো “আপনার বেল্টটা জলদি খুলুন !”

“আমার কর্মক্ষেত্রে ব্যাপারটা খুব ভালো কিছু নয় ” দৈত্যটার জবাব এলো !

“আপনার কর্মক্ষেত্রটা কি নিয়ে আরেকবার শুনি ?”

“আমি ক্লাউনদের হত্যা করি !”

অধ্যায় ৯

যখন টিগ এক্সিডেন্টের জায়গায় পৌঁছল, প্রথম যে জিনিসটা ওর চোখে পড়লো সেটা হোল একটা
গাড়ি, একটা বরফের টিলাতে নাক ঢু কিয়ে আছে, পেছনের অংশটা বেরিয়ে আছে রাস্তার দিকে
27

আর কমসেকম দশ সেন্টিমিটার পুরু পাউডারের মতো তু ষারে ঢাকা পড়ে আছে । টিগ মাথা
নাড়ল, ওটা নিশ্চয়ই রকেটের গতিতে গিয়ে অতটা গভীরে ঢু কে পড়েছে।

এ ধরণের একটা ব্যাপার আজকেই ঘটতে হলো ?

ও ওখানেই খানিক দাঁড়িয়ে রইলো, সেই তু ষারঝড়, বাতাসের গোঙ্গানি, চাবুকের মতো শীতের
আঘাত আর নিজের জিএমসি ট্রাকের অলস গড়গড় আওয়াজের মাঝখানে। হ্যাজার্ড লাইটের
লাল আলোতে ঘুরন্ত তু ষারকণাগুলিকে রক্তের তৈরি মনে হচ্ছিলো !

ও ওর চোখ কচলে নিয়ে আরও ভালো করে তাকাবার পর স্নো-মোবিলের রেখে যাওয়া চেইনের
দাগ দেখতে পেলো, বেবের ভাষ্য মতে, শরীরটা রোড থেকে খানিকটা ভেতরের দিকে। তাই টিগ
রওনা দিলো, দশ মিটার যাবার পর চেইনের দাগ হারিয়ে গেলো, কাছাকাছি একটা খানাও দেখা
গেলো। টিগ খুব সাবধানে সেখানকার বরফ চেক করতে লাগলো বুটের ডগা দিয়ে খুঁড়ে খুঁড়ে,
থামল এসে এক জায়গায় যেখানে বরফে খানিকটা অসামঞ্জস্য ধরা পড়লো। সে সঙ্গে আনা
বেলচাটা দিয়ে খুঁড়ে চলল , খানিক পর সে দেখতে পেলো জমাট বাঁধা রক্ত, বেশ অনেকটা !

“শিট !” হিসহিস করে উঠলো সে ।

সে এদিক ওদিক খোঁড়াখুঁড়ি চালিয়েই গেলো, কিন্তু লাশের দেখা পেলো না ! এটার কোন মানেই
হয়না ! বেবে বলেছিল রিচি গর্তে পড়ে গিয়ে থাকবে, কিন্তু এতোটা রক্ত হারিয়ে কেউ তো আর
হামাগুড়ি দিয়ে চলে যেতে পারেনা ! এই এলাকায় এত বড় কোন প্রাণী নেই যে মানুষের লাশ টেনে
নিয়ে যেতে পারে, অবশ্যই, পাহাড়ি সিংহ বা ববক্যাট হয়তো দুয়েকটা কামড় দিতে পারে, কিন্তু
প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের লাশ নিয়ে কেউ টানাটানি করতে যাবেনা !

অভিশাপ দিতে দিতে টিগ আরেকটা বরফের টিলার ওপর উঠলো, সম্ভবত এখান থেকেই বেবে
আর রিচি লাশটা দেখে থাকবে। কারণ অন্যপাশে স্নো–মোবিলের রেখে যাওয়া চেনের দাগ দেখতে
পেলো সে। ও সেই দাগ ধরে অনেকদূর অনুসরণ করে গেলো, কিন্তু সেই দাগটা হঠাৎ করেই নেই
28

হয়ে গেলো, বোঝার ওপর শাকের আঁটির মতো তু ষার ঝড় তো আছেই । সে হাল ছেড়ে দিয়ে
ফেরত আসতে লাগলো, ওর আরও অনেক লোকবল দরকার, এখানকার প্রতিটা বরফের স্তূ প
উল্টেপাল্টে দেখা দরকার !

সে অর্ধেক বরফে ঢোকানো গাড়িটার ভেতরে গ্লাভ কম্পার্ট মেনট খুঁজে দেখল ড্রাইভারের
পরিচিতির জন্য।

ওহ ! না , না না না !

কাগজপত্র অনুযায়ী, গাড়িটা কোন এক জিনা কেলারের , ২১৭ লং একার রোডের বাসিন্দা। টিগ
ওকে বিলক্ষণ চেনে, চেনে ওর ভাই ট্যাবের জন্যই, যে একটা অকর্মার ধাড়ী। এই গাড়িটা এখানে
কি করছে বোঝার জন্য কোন জিনিয়াসের প্রয়োজন নেই, ওই হতচ্ছাড়া বেজন্মা ট্যাবটাকে
ছাড়ানোর জন্যই বেচারি জিনাকে পথে নামতে হয়েছিল।

কিন্তু এখানে ওর লাশ দেখা যাচ্ছে না, না দেখা যাচ্ছে রিচির লাশ ! টিগ ওর জিএমসি’র ক্যাবে
ফিরে এসে পুরো ব্যাপারটা চিন্তা করতে লাগলো ঠাণ্ডা মাথাতে।

এই ঝড় অবশ্যই আরও খারাপ দিকে মোড় নেবে, টিগের স্টেট পুলিশ হোমিসাইড আর ফরেন্সিক
তদন্ত দল দরকার এখানে। কিন্তু যতক্ষণ কোন লাশ দেখাতে না পারবে, ওরা কোনরকম আগ্রহই
দেখাবে না । এখন ওকেই একটা সার্চ পার্টি তৈরি করতে হবে। কিন্তু ওটা করেও লাভ হবে না, এই
তু ষার ঝড়ের অন্ধকারের ভেতর কোন কিছু খুঁজে বের করাই যাবে না !

ও রেডিওটা আঁকড়ে ধরে বলল “হেডকোয়ার্টারস, নাম্বার থ্রী বলছি, রিপকে বলো আমার একটা
টো ট্রাক দরকার । ”

“শুনেছি, শেরিফ !”
29

টিগ আবার বাইরের ঝড়ে ফেরত গেলো, অন্তত রক্তের নমুনাটা পরীক্ষা করাতেই হবে, কিন্তু এমনকি
ওটা করাতেও সময় লাগবে। ও ভাবল, পুলিশ স্টেশনে এই মুহূর্তে কি চলছে, ওর কেন জানি মনে
হলো , যাই ঘটু ক না কেন, সেটা ওর কাছে সুখকর কিছু হবে না !

অধ্যায় ১০

যখন টিগ পুলিশ স্টেশনে ফেরত এলো, সে দেখল পিনাট সেখানে তার জন্য অপেক্ষা করছে।
ওকে একই সাথে উত্তেজিত, উদ্বিগ্ন আর বিভ্রান্ত দেখাচ্ছে ! এটা একজন পুলিশের জন্য – শুধু
পুলিশের জন্য কেন , যে কারো জন্যই কোন ভালো নিশানা না । টিগ পিনাটকে পছন্দ করে, আর,
ক্রো ফলসের সবাইই ওকে পছন্দ করে – কিন্তু সে আসলে পুরোপুরি পুলিশ না ! ওর বাবার চাইতে
সম্পূর্ণ ভিন্ন, যে কিনা একটু বেশিই পুলিশ পুলিশ ছিল।

“উইল” পিনাট বলল উত্তেজিতভাবে “আমি এরকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি কখনোই হইনি, ম্যান
! তু মি এটা বিশ্বাসই করতে চাইবে না, এমনকি আমিও বিশ্বাস করতে পারিনি প্রথমে !”

টিগ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওর ডেস্কের দিকে এগিয়ে গেলো, ওখানে সে কিছু পেটের গোলমালের
ওষুধ, ক্যাফেইন ট্যাবলেট রেখে থাকে। ক্যাফেইন ট্যাবলেটগুলি ওর দরকার, কারণ ওর নার্ভ গুলি
আগামী কয়েক ঘণ্টার জন্য ব্রোঞ্জোর তারের মতো টানটান রাখা দরকার।

“ওকে” একটু পর বলল সে, অফিসের চেয়ারে ধপাস করে বসতে বসতে “আমি শুনছি !”

“আমি একটা লোককে জেলে পুরেছি” ঘোষণা করলো পিনাট।

“ভালো, ও-ও কি কিছু খেয়েছে ?”

পিনাটের কাঁধ ঝু লে পড়ল, এমনকি ও- ও জানে যে শক্ত কোন কারণ ছাড়া কাউকে এরেস্ট করা
যায়না। ওর চেহারা দেখেই সবটা বোঝা গেলো ।
30

“ওর নাম ক্লেগ, আর ওকে দেখতে বেশ বিপজ্জনক, আমি ওকে স্কু লের খেলার মাঠে খুঁজে
পেয়েছি আর ওর সাথে এইটা ছিল” বলেই একটা বিশাল ক্রোম প্লেটেড ৪৪ ক্যালিবারের ম্যাগনাম
রিভলবার রাখলো টেবিলের ওপর, তারপর রাখলো এক বক্স কার্তু জ। টিগ মালসামানাগুলি
দেখলো আর ওর চোখ কপালে উঠে গেলো। ঈশ্বরের দোহাই, এগুলি বেশ উচ্চ গতির বিস্ফোরক।

“ওর সাথে কি গান লাইসেন্স ছিলো ?”

“না !”

“ও কি সেটার কোন ব্যাখ্যা দিয়েছে ?”

পিনাট ওর দিকে অদ্ভু তভাবে খানিক তাকিয়ে বলল “ও বলেছে যে ও এক ধরণের শিকারিকে
শিকার করছে !”

“কি ধরণের ?”

“ক্লাউনস !”

টিগের মনে হল ওর নাড়িভুঁ ড়ি চু লকানো শুরু করেছে।

“ক্লাউনস ?”

পিনাট অসহায়ভাবে কাঁধ ঝাঁকাল, বিব্রত বোধ করছে, ওকে দেখে মনে হচ্ছে বিব্রতর চাইতেও বেশি
কিছু হয়েছে “হ্যাঁ, ও তো তাই বলল , আরও বলল যে , সার্কাসে বা বাচ্চাদের বার্থডে পার্টি তে
যেসব ক্লাউন দেখা যায়, সেসব না, এসব ক্লাউন নাকি মানুষদের পিছু ধাওয়া করে ! ও বলল ও
খেলার মাঠে ছিল কারণ ওই...... ওই ক্লাউনগুলি বাচ্চাদের পিছু নিতে পছন্দ করে ! ওরা শুঁকে
শুঁকে বাচ্চাদের খুঁজে বের করে তারপর ওদের খেয়ে ফেলে ! ওহ গড ...... এটা শুনতে একদম
ছেলেমানুষি শোনাচ্ছে ............ ”

“বলতে থাকো !”
31

“ও আমাকে বলল এই ক্লাউনগুলি নাকি মানুষের ছদ্মবেশ নিতে পারে, তোমার আমার মতোই
মানুষ, বা অন্য কারো মতো ! যাতে ওরা আমাদের লোভ দেখাতে পারে তারপর নিরিবিলিতে নিয়ে
আমাদেরকে খেয়ে ফেলতে পারে ! ”

টিগ একটা শ্বাস ফেলল , আবার ক্লাউন ! এই বালের শহরের সমস্যাটা কি ! একা তু ষার ঝড়ে রক্ষা
হচ্ছে না, আর এখন এই সব বালছাল ! প্রথমে বেবে, তারপর এই ক্লেগ, বাল ! বেবে জানি কি
বলেছিল ?

ওটা একটা ক্লাউন ছিলো, ওটার নখ ছিলো, ওটা রিচিকে ধরেছে !

অবশ্যই , নখঅলা ক্লাউন ! কেন নয় ? ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে , ক্লেগের বর্ণনার সাথে বেবের ভাষ্য
একটু বেশি ভালোভাবে মিলে গেছে। আর, রিচি আর জিনা কেলার এখনও নিখোঁজ । বেবে
বলেছে যে ও আর রিচি মিলে যে লাশ খুঁজে পেয়েছিল সেটা একটা মহিলার ছিল। ঠিক একটা
গরুর মতোই নাকি নাড়িভুঁ ড়ি বের করে ফেলা হয়েছে ! এগুলি থেকে একটাই উপসংহারে
পৌঁছানো যাচ্ছে , তু ষার ঝড়ের আড়ালে কিছু ক্লাউন আসছে, আর মানুষ হত্যা করছে !

ব্যাপার হলো , পুরো ব্যাপারটা ক্রমশ অরুচিকর আর অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়ছে !

“বালের অস্বাস্থ্যকর !” টিগ একটু জোরেই বলে ফেলল।

“কি বললে , টিগ ?” বলল পিনাট।

“কিছু না ! তু মি কি নামটা সিস্টেমে চেক করেছো ?”

পিনাট ওর মাথা না সুচক নাড়ল “ও বলছে ওর নাম ক্লেগ, শুধুই ক্লেগ ! তোমার কি কোন ধারণা
আছে সিস্টেমে কতশত ক্লেগ আছে ? আমাদের আরও ইনফরমেশন লাগবে । আমি অলরেডি
ব্যাটার মানিব্যাগ ঘেঁটে দেখেছি , কিছুই নাই । কোন ইনস্যুরেন্স কার্ড , ভোটার কার্ড অথবা স্রেফ
একটা লাইব্রেরি কার্ড , কিছুই না ! আমি ওর ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাঠিয়ে দিয়েছি চেক করার জন্য।”
32

“ওর গাড়ির কি অবস্থা ?”

“কোন রেজিস্ট্রেশন বা ইনস্যুরেন্স কিসসু নেই, কিন্তু গাড়ির পেছনে অনেক ভয়ংকর খেলনা দেখতে
পেলাম!”

“পরিষ্কারভাবে বলো !”

“ওয়েল, ও আমাকে ওর পুরো অস্ত্রাগার দেখিয়েছে ! একটা ছোটখাটো যুদ্ধের জন্য যথেষ্ট ! পিস্তল,
স্নাইপার রাইফেল, অ্যাসল্ট রাইফেল, ভালুক ধরার ফাঁদ, মাইন একটা পুরো প্রোগ্রাম । হ্যান্ড
গ্রেনেড, ফ্লেম থ্রোয়ারও বাদ নেই । ওর একটা ভয়ংকর দেখতে কু কু রও আছে, আমার সম্ভবত
অ্যানিম্যাল শেল্টারে জানাতে হবে ওটা রাখার জন্য। ”

টিগ ওর ক্লান্ত চোখদুটো রগড়াল, এটা সম্ভবত ইতিমধ্যে ওর আইনি আওতার বাইরে চলে গেছে,
এটা মনে হচ্ছে এফবিআই এর উপযোগী কেস, অথবা নিদেনপক্ষে এটিএফ (ব্যুরো অব
অ্যালকোহল, টোব্যাকো, ফায়ার আর্মস এন্ড এক্সপ্লোসিভস ) এর । ওরা সম্ভবত ওই ব্যাটাকে
টেররিষ্ট আখ্যা দেবে, তার মানে হলো এটর্নি জেনারেলের অফিসও ইনভল্ভ হবে, বা হোমল্যান্ড
সিকিউরিটি। “ওকে, আমাদের এই ক্লাউন হান্টারের সাথে আমাকে একটু সিরিয়াসভাবে কথা
বলতে হবে !”

অধ্যায় ১১

টিগ পিনাটের পেছন পেছন প্রিজন এরিয়াতে এলো। এখানে স্রেফ পাঁচটা সেল আছে। শুক্রবারের
বিকেলটা যখন উদ্দাম হয়ে ওঠে, ওগুলি সবগুলোই একসাথে ভর্তি হয়ে যায় মাঝে মাঝে। যখন
টিগ সেলটাতে ঢু কল, ওপরের বাঙ্কে পা ঝু লিয়ে বসেছিল ক্লেগ। ওকে উদ্বিগ্ন বা ভীত’র বদলে বরং
বিরক্ত আর উত্যক্ত লাগছিলো । ও আসলেই বিশাল দেখতে, বিরাট কাঁধের অধিকারী আর
যতটু কু দেখা যাচ্ছে, পাকানো তারের মতো পেশীবহুল শরীর। দাড়ি পরিপাটিভাবে ট্রিম করা আর
33

রোদেজলে পোড় খাওয়া চেহারা। ওর চোখ কোন মুল্যবান মণির মতো জ্বলছিল। একে যদি
কোণঠাসা করে ফেলা হয়, অবধারিতভাবে এ অতি মাত্রায় বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

“মিস্টার ক্লেগ ” বলল টিগ।

“কি চান বলুন” জবাব এলো।

“আমার ডেপুটি বলছিল আপনার একটা ইন্টারেস্টিং গল্প বলার আছে, আর আপনার গাড়িতে
যেসব যন্ত্রপাতি আছে, আশা করি বিশ্বাসযোগ্য কিছুই বলবেন ।”

“আপনি যেরকম শুনতে চান সেরকম কিছু বলতে পারবো না মনে হয় !”

“চেষ্টা করেই দেখুন !”

ক্লেগ হাসল , কিন্তু ওর চোখগুলি সেরকমই ঠাণ্ডা আর অন্ধকারই রইলো।

সে একটা সিগারেট বের করে ধরাল, পিনাট মানা করতে যাচ্ছিল, নীরব ইশারাতে ওকে থামিয়ে
দিলো টিগ, সিগারেট যদি ওকে কথা বলতে সাহায্য করে, তবে তাই হোক।

“শেরিফ” চিমনির মতো ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে শুরু করল ক্লেগ “এই এক দুনিয়াতে এমন অনেক
জিনিস আছে যেগুলি সম্পর্কে আপনার কোন ধারণাই নেই ! সেসব জিনিস যেগুলি বিশ্বাস করতে
কষ্টই হবে, জিনিস যেগুলি থাকাই উচিত না , চলেফিরে বেড়ানো দুঃস্বপ্ন একেকটা !”

“যেমন ক্লাউন !” বলল পিনাট , ওকে উপেক্ষা করে বলে চলল ক্লেগ “ওইসব ক্লাউন না যাদেরকে
আমরা ছোটবেলায় চিনতাম। ওরা দেখতে ক্লাউনের মতো, কিন্তু সত্যিটা হল ওরা এক ধরণের
দানব যারা মানুষের রক্ত পান করে । ওরা স্রেফ এক ধরণের শয়তান স্বত্বা যারা মানুষের দুর্দ শা থেকে
শক্তি আহরণ করে। আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না ওরা কোত্থেকে আসে বা ওদের অস্তিত্বই বা
কিভাবে আছে, আমি বলতে পারবো না ! আমি একটা ছোট্ট গ্রুপের সদস্য যারা এই প্লেগ সম
দানবদের কাছ থেকে আমাদের ভূ মি নিরাপদ রাখতে চাই। ”
34

টিগ একটু ক্ষণ চু প থেকে বলল “কিন্তু ক্লাউনই কেন ? কেন ওরা দেখতে ক্লাউনের মতো ?”

“কারণ এটা মানুষকে অস্থির করে তোলে আর ভয় পাইয়ে দেয় ! শুধু বাচ্চা ছেলেরা ক্লাউনকে
পছন্দ করে, আর সেজন্যই ওরা ওদেরকে প্রথমেই ধরে খেয়ে ফেলে !”

টিগ এবার আরও খানিক বেশি চু প থেকে বলল “বুঝলাম, কিন্তু আপনাকে এই ক্লাউনদের হত্যা
করার অধিকার কে দিয়েছে ?”

“আপনি বুঝবেন না !”

“সম্ভবত হ্যাঁ !”

ওকে সিরিয়াসলি নেয়া হচ্ছে না , এটা বুঝতে পেরেও নিরুপায় ক্লেগ বলে চলল “ধরে নিন আমরা
একটা প্রাচীন ব্রাদারহুডের অংশ, যাদের কাজই হলো এই দানবগুলিকে হত্যা করা, কোন কিছুই
আমাদের পথে আসতে পারেনা ! আমরা সারা দেশে, এমনকি সারা পৃথিবীময় টহল দিয়ে বেড়াই –
এই শয়তানগুলিকে শিকার করার জন্য ! ”

“ওয়েল, আমার আপনাকে বলতেই হচ্ছে, ট্রাকভর্তি ওই বেআইনি অস্ত্রগুলো ইতিমধ্যে আপনার
পথে এসে গেছে ! এখান থেকে আপনি একটা সত্যিকারের জেলেতেই কেবল যেতে পারবেন !”

ক্লেগ অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই কেয়ার করল না “ওহ ! ওটা আপনি বিশ্বাস করতে পারেন , শেরিফ,
আমি আপনার মন পরিবর্ত ন করার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করবো না । ভালো কথা, আপনার ডেপুটি
আমাকে এরেস্ট করার সময় আমার অধিকারগুলো আওড়াতে ভু লে গেছিলো !”

টিগ পিনাটের দিকে দোষারোপ করার ভঙ্গিতে তাকাল। এটা যদি ট্রায়ালে যায়, তাহলে ওরা
কোনভাবেই পার পাবে না ! আর ক্লেগ চোখের পলকে খালাস হয়ে যাবে !
35

“আরও আছে, এক সময় না এক সময় আমাকে আমার ল ইয়ারের সাথে যোগাযোগ করতে
দিতেই হবে, আর আমি একটা নির্দি ষ্ট নাম্বার এ কল দেয়ামাত্রই ফেডারেল প্রসিকিউটর এসে
তোমাদের পাছায় কষে লাত্থি ঝাড়বে, ঝাড়তেই থাকবে ! ”

“তু মি কি বলতে চাও ফেডারেল প্রসিকিউটর তোমার কাজকর্ম সাপোর্ট করবে ? ”

“নাহ ! উনি তোমাদের মতোই অন্ধকারেই থেকে যাবে, কিন্তু যেসব মানুষের এই দেশে সত্যিকারের
পাওয়ার আছে, তারা আমাকে জানেন আর আমার কাজের প্রশংসাও করেন, তারাই ওকে
নাচাবেন, আর আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন , ডিইএ, এটিএফ, এফবিআই যারাই আসুক না
কেন, ওদের কাছে প্লেটে করে একটা বিশ্বাসযোগ্য গল্পই দেয়া হবে, আমি এখান থেকে কু ইক মার্চ
করে বেরিয়ে যাব, আর আপনাদেরকে বলা হবে আমাকে একা ছেড়ে দিতে ! ”

টিগ ঢোঁক গিলল, এই লোকটা আসলেই উন্মাদ, কিন্তু ওকে ওর গল্পের ব্যাপারে এত আত্মবিশ্বাসী
কেন মনে হচ্ছে ?

“আমার মনে হয় আমি ঝুঁকিটা নেব !”

ক্লেগ খলখল করে হাসল “আমার জন্য এটা ঠিকই আছে, কিন্তু কালকে সকালেই আমি এখান
থেকে বের হয়ে যাব, কিন্তু আপনি তখনও এখানে থাকবেন আর আপনাকে অনেক প্রশ্নের জবাব
দিতে হবে। কারণ সকাল হবার আগেই অনেকগুলি লাশ পড়ে যাবে, আর সেগুলির সবগুলির
জন্যই একা আপনাকেই দায়ী করা হবে !”

“আপনি কি বলতে চাচ্ছেন ?”

“আমি বলতে চাচ্ছি যেটা বাইরে এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে সেটা নিয়ে !”

“বাইরে কি ঘুরে বেড়াচ্ছে ?”


36

ক্লেগ ওর সিগারেট নিভিয়ে বলল “আপনাদের এটা একটা কলোনি, ক্লাউনদের জন্য প্রথম শ্রেণীর
আবাসস্থল, তু ষার ঝড় শহরটাকে বন্দী করে ফেলেছে, একারণে ক্লাউনদের জন্য আদর্শ শিকারের
জায়গা হয়ে উঠেছে এটা ! সকালের আগে, আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, ডজনেরও বেশি
হত্যাকাণ্ড ঘটবে এখানে। এখানে ছোট্ট ছোট্ট কিউট দেখতে অনেক বসতবাড়ি আছে, ক্লাউনদের
জন্য সেগুলি কাঠির মাথায় থাকা মাংসের কিমার মতোই ! ”

টিগের মাথার ওপর বিরাট সমস্যা ঝু লছে, সে সেটা ভালোই বুঝতে পারছে। স্বাভাবিকভাবেই সে
শয়তান ক্লাউনে মোটেই বিশ্বাস করেনা, কিন্তু গত কয়েক ঘণ্টায় বেশ অদ্ভু ত আর খারাপ কিছু ঘটনা
ঘটেছে। বেবে বলেছিল যে সে নিজের চোখে ক্লাউন দেখেছে, কিন্তু এটা তো অসম্ভব !

হঠাৎই একটা বিকট চিৎকার রাতের নিস্তব্ধতা খান খান করে দিলো। প্রথমে টিগ আর পিনাট
হতবুদ্ধি হয়ে পড়ল। আবার শোনা গেলো চিৎকার , মনে হচ্ছে কাছেই কোথাও থেকে ভেসে
আসছে ওটা ! বুনো চিৎকারটা শুনে মনে হল কোন মানুষ আর জন্তু কোরাসে চিৎকার করছে।

ক্লেগ মাথা কাত করে শুনল একটু , তারপর বলল “এটা কোণের দিকের পার্ক থেকে আসছে,
ওখানে কয়েকটা ফাঁদ পেতেছিলাম, বেজন্মাগুলির একটা ধরা খেয়েছে ওখানে ! ”

টিগ খাবি খেতে লাগলো, পিনাটের মনে পড়লো ক্লেগের গাড়িতে দেখা ভালুক ধরার ফাঁদগুলির
কথা, একটা মানুষের পা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার কথা ওরকম ফাঁদে পড়লে ! টিগ রাগতভাবে
ক্লেগের দিকে তাকাল “তোমার ওই বালের ফাঁদে যদি কেউ আঘাত পায় না, তাহলে তোমার কল
করা পর্যন্ত তু মি আর বেঁচে থাকবে না ! ” দুপদাপ পা ফেলে সেল থেকে বের হয়ে এলো সে। পেছন
পেছন গেলো পিনাট।

“ওটা কোন মানুষ না !” পেছন থেকে ডেকে বলল ক্লেগ “এ ব্যাপারে আমি কথা দিতে পারি, আমি
ঐতিহাসিক অনিয়োডা নিউহাউস ১৮৮০ ভালুকের ফাঁদের হাতে বানানো কপি ব্যাবহার করি, নয়
সেন্টিমিটার কাস্ট আয়রনের দাঁতঅলা, ওই ফাঁদে যাই পড়ে থাকু ক না কেন, বেরোতে পারবে না
সহজে ! ”
37

অধ্যায় ১২

উদ্দিষ্ট পার্ক টা আরেকটা কোণায় রাস্তার ওপারে অবস্থিত, নাম ‘লিটল উইলো পার্ক ’, একটা ছোট্
ঝর্না আছে ওটার ভেতর। স্টেশন থেকে একটা শটগান নিয়ে দৌড়ে সেদিকে এগোল টিগ,
তু ষারঝড় উপেক্ষা করে। টিগ অনেক কষ্টে এগিয়ে যেতে লাগলো, রাস্তাতে ওরা দুজন ছাড়া আর
কেউ নেই, দূরে শোনা যাচ্ছে স্নো-প্লাউএর আওয়াজ, এছাড়া আর কোন শব্দ নেই। ওহ, আরেকটা
শব্দ আছে, ক্লেগের শিকারের তীব্র চিৎকারের শব্দ। শেষ যেটা সে চায় সেটা হল কোন নির্দোষ
নাগরিক ওই ফাঁদে আটকা পড়ু ক। ওহ, ওটা যেন একটা মানুষ হয়, আবার একই সাথে ও চাচ্ছে
ওটা যেন মানুষ না হয় ! যদি সেটাই হয়, তাহলে নিজের মানসিক স্থিরতার ব্যাপারটা আরেকটু
ভেবে দেখতে হবে, নিজেকেই বলল টিগ !

শিট ! পার্কে র রট আয়রনের দরজাটা বন্ধ, টিগ আর পিনাট পাথরের দেয়াল ধরে আরেকটু সামনে
এগিয়ে গেলো, নিচু দেয়াল যেদিকে আছে সেদিকে। হাচড়েপাঁচরে সেটা পার হয়ে ওপাশের হাঁটু
সমান তু ষারে পা দিয়েই পিনাট একটা দামী কথা বলল “আমাদের একটা লাঠি নিয়ে আসা দরকার
ছিল, কারণ জানা তো নেই ক্লেগ এখানে কয়টা ভালুকের ফাঁদ পেতে রেখেছে !”

তাইতো ! টিগ সামনের একটা ওক গাছের ডাল ভেঙ্গে নিলো, আর সেটা সাবধানে সামনে বুলাতে
বুলাতে আর তু ষারের ছোট ছোট টিলা ঠেলে ঠেলে খেলার মাঠের দিকে এগোতে লাগলো। তু ষার
ওদের মুখে কড়াভাবে আছড়ে পড়ছিল, ওদের ফ্ল্যাশলাইটের আলোতে ঘুরে ঘুরে উড়ছিল তু ষার
কণা । ক্লেগ যেটাকে বা যাকেই ফাঁদে ফেলে থাকু ক না কেন, ওটা ঠিক একটা নেকড়ের মতোই
গর্জ ন করছিলো ! টিগ অন্ধের মতোই কোমর সমান ঝোপঝাড় আর তু ষার ঠেলে এগোতে
লাগলো। সে সৈনিকদের স্মৃতির প্রতি উৎসর্গীকৃ ত ফ্ল্যাগ পোলের ঘণ্টির আওয়াজ শুনতে পেলো,
কিন্তু রাগী পশুর মতো আওয়াজটা আরও অনেক জোরালো।

এবার............ কয়েক মিটার সামনে সে দেখতে পেলো একটা ছায়া ............ একটা অদ্ভু ত,
অস্বাভাবিক কিছু , ঠিক যেমন একটা পাগলা কু কু র বন্যভাবে গর্জ ন করে আর পাক খেতে থাকে
38

............ তখনই একটা দমকা বাতাস বেশ খানিকটা তু ষার টিগের চোখেমুখে ছুঁ ড়ে দিলো আর
সে দ্রুত চোখ রগড়ে তাকাল, সে সামনে যেটা দেখছে সেটা বিশ্বাস করতে পারছে না । কিন্তু
সামনের দৃশ্যটা বদলালো না ! সামনের ওই ভয়াবহ দৃশ্য যেন এক দৈত্যের ঘুষির মতোই তাকে
আঘাত করলো। কাঁপা কাঁপা এক হাতে ফ্ল্যাশলাইট আর আরেক হাতে শটগানটা তু লে ধরলো
সে। পিনাট পেছনেই ছিল, এবার সেও দৃশ্যটা ভালোভাবে দেখতে পেলো। সে একটা ভয়ের
চিৎকার দিয়ে বরফের ওপর চ্যাপ্টা হয়ে বসে পড়লো। ওর চোখেমুখে অপরিসীম আতংক দেখা
দিলো, টিগ যখন ওকে ধরে তু লছে, তখন সে একটা বাচ্চা ছেলের মতোই ওকে ধরে প্রায় ঝু লেই
রইল আর অস্ফু ট ভয়ের শব্দ করতে লাগলো ! সামনের ওটা বাচ্চাদের পার্টি র কোন বেপ্পো , পপ্পো
টাইপের নির্দোষ আনন্দ দানকারী নয়, ক্লাউনের চামড়া পরা সাক্ষাৎ নরক থেকে উঠে আসা কোন
জীব।

ওটা কোন ক্লাউন না ! হতেই পারেনা --- টিগের মাথার ভেতর কেউ বলে উঠলো -- ওটা একটা
পিশাচ ! ওটা মৃত্যুর জীব , আর যদি কোনভাবে ওটা ওখান থেকে বের হতে পারে, তাহলে তু মি
ত্রিশ সেকেন্ডের ভেতর মারা যাবে !

জন্তুটা একটা চকচকে রুপালি রঙের ক্লাউনের কস্টিউম পরে আছে, সবুজ আর হলুদ লাইনিংঅলা
, সামনের দিকে নকল চকচকে বেশ কিছু নকল সোনালি অলংকার সেলাই করা । ক্লাউনটা
দেখতে বিশাল, এমনকি টিগ, যে কিনা নিজেও বিশালদেহী ওকেও ওটার সামনে বেঁটে লাগছে !
ওটার বিশাল সাদা টাক মাথা আর মুখটা তড়পাতে থাকা কু ৎসিত দেখতে কিছু শিরা উপশিরা
দিয়ে ঢাকা। চোখগুলি লাল রুবি পাথরের মতো জ্বলজ্বল করছে যেখান থেকে লাল রঙের চোখের
জল অবিরত বয়ে যাচ্ছে । মাথার দুপাশ থেকে আলাদা আলাদা ঝোপের মতো নীল রঙের চু ল
বেরিয়েছে। ঠোঁটগুলি রক্তলাল হয়ে ফেটে ফু লে আছে , দাঁতগুলি হলুদ রঙের আর ঠিক সাপের
মতো ছুঁ চালো ! জঘন্য রকমের সবজেটে ধূসর রঙের ফেনা কষ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে !

“ওহ স্বর্গে বাস করা ঈশ্বর !” চিঁ চিঁ করে বলল পিনাট “মেরে ফেলো ওটাকে, উইল ! ওই
শয়তানটাকে গুলি করো বেশী দেরী হয়ে যাবার আগে ! ” সে নিজেও একটু আগে সেই চেষ্টা
39

করেছিলো, কিন্তু ওর গ্লক ২২ টা হাত থেকে স্লিপ করে নিচে বরফের ওপর পড়ে গেছে। টিগ
পিনাটকে একপাশে সরিয়ে দানবটার মুখোমুখি হল , তাক করলো রেমিংটন ৮৭০ টা। ওটা ঘোঁত
ঘোঁত করেই যেতে লাগলো লালা ঝরাতে ঝরাতে। ওটার মোটা সাদা হাত দিয়ে ভালুকের ফাঁদের
নিষ্ঠু র দাঁতগুলো থেকে ওর পা ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে ক্রমাগত। ওটার বড় নখগুলি
ওটার ভেতর ঢু কিয়ে চাড় দেবার চেষ্টা করছে যেটা শোনাচ্ছে স্টিলের ওপর ধারালো ছুরি শান দেবার
শব্দের মতো। এটা ধীরে ধীরে টিগের দিকে ফিরছে এখন, একশোটা খাঁচায় আটকানো বাঘের মতো
গর্জাচ্ছে ! গরম দুর্গন্ধময় একটা হাওয়ার ঝাপটা ছুঁ য়ে গেলো টিগকে, বিতৃ ষ্ণায় খানিকটা পেছনে
সরে এলো সে। ওটার দাঁতগুলো ব্লেডের মতো ধারালো, কোনভাবে যদি ছাড়া পায়, তাহলে
নিশ্চিতভাবেই ওর পেট ছিঁ ড়ে নাড়িভুঁ ড়ি বের করে আনবে ।

এখন ক্লাউনটা পিনাটের দিকে তাকিয়ে হিসসস করে উঠলো, ওটার জিহ্বাটা কেঁ চোর মতো সরু
আর ছুঁ চালো । পিনাট বরফের ভেতর ওর বন্দুকটা খুঁজে পেয়ে যেই ওটা হাতে তু লল, দানবটা
একদলা আঠালো থুতু ছুঁ ড়ে দিলো ওর দিকে ! একটু র জন্য ওকে মিস করে সেগুলি মাটিতে পড়ে
এসিডের মতো হিসস করে উঠলো !

অনেক হয়েছে ! সিদ্ধান্ত নিলো টিগ, ও শটগানটা সরাসরি ক্লাউনটার দিকে তাক করলো, আর
ট্রিগারে চাপ দিলো। ক্লাউনটার অন্তিম গর্জ নের সাথে শটগানের হুংকার মিশে গেলো। একটা প্লেটের
সমান গর্ত দেখা দিলো ক্লাউনটার বুকে , ওটা মোচড় খেতে লাগলো আর লাফাতে লাগলো, কিন্তু
ফাঁদের কারণে এক জায়গাতেই আটকে রইলো। বরফে ছড়িয়ে পড়লো কালো রঙের এক ধরণের
তরল পদার্থ, যেগুলি সমানে হিসসস হিসসসস আওয়াজ করছিলো। টিগ পাম্প টেনে আবার
ফায়ার করলো, আবার, আবার ! ওটার কাঁধ, গলা রক্তের কু য়াশা তৈরি করে বাতাসে মিশে গেলো।
ক্লাউনটা খারাপভাবে আহত হয়েছে, আবার ফায়ার করলো টিগ, এবার ধড়ের ভেতর থেকে হিস
হিস করতে করতে বেরোল কতগুলি অদ্ভু ত দর্শন কেঁ চো, যেগুলি প্রায় আধ মিটার লম্বা! টিগ
শেষবারের মতো ফায়ার করলো , ধড়ের ওপর থেকে চেহারাটা ছিঁ ড়ে ফালাফালা হয়ে গেলো, আর
ধপাস করে পেছন দিকে পড়ে গেলো ক্লাউনটা। ওটা এখনও কাঁপছে, অদ্ভু ত একটা বুদবুদ ওঠার
40

মতো আওয়াজ করছে ! ওটার শক্তিশালী চোয়ালটা শেষবারের মতো ‘খটাং’ করে আওয়াজ
করে চিরতরে থেমে গেলো !

“জে জে জে শাস ক ক ক্রাইস্ট !” তোতলাতে তোতলাতে বলল পিনাট, হাঁটু গেড়ে বসে আছে
তখনও বরফের ওপর। টিগ, স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে , মূর্তি র মতো ফ্ল্যাশলাইটটা ধরে নিশ্চল
দাঁড়িয়েই আছে। ওটা যাই হোক না কেন, ওটা কিছুতেই ক্লাউনের কস্টিউমে কোন মানুষ হতেই
পারে না ! ওটা ওটা ............ সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু ছিল !

ও নিচু হয়ে পিনাটকে তু লে নিজের পায়ে দাঁড় করিয়ে দিলো, আর তখনই শুনতে পেলো আরও
ক্লাউনের রক্ত হিম করা গর্জ ন !

অধ্যায় ১৩

‘ব্রোকেন বটল’ নামের বারটাতে, অ্যালকোহলের বন্যা চলতেই থাকলো, আর ওই বালের শেরিফ
চলে যাবার পর, আবাহাওয়াটাও বেশ হাসিখুশি হয়ে উঠলো। এমনকি গোমড়ামুখো ব্রেনডা
পেচেকের মুখেও হাসি ফু টেছে, কারণ চলে যাওয়া বেশীরভাগ কাস্টমার আবার ফেরত এসেছে।
বাইরে তু ষারঝড়ের উন্মাদনা তখনও চলছে, কিন্তু সবাই জানে, কোন প্রাকৃ তিক দুর্যোগই ক্রো
ফলসের অধিবাসীদের মদ্যপান থেকে বিরত রাখতে পারবে না ! এটা এখানে নিঃশ্বাস নেবার মতোই
জরুরী সবার জন্য।

ব্রেনডা বারের কাউনটারের পেছনে ওর সিট থেকে ওর সাম্রাজ্য পরিচালনা করে, যেখানে ও
বোতলের পর বোতল বিয়ার খুলতে থাকে, মগের পর মগ বিয়ারে আর গ্লাসের পর গ্লাস মদে ভর্তি
করতে থাকে। রান্নাঘরের ওভেনটা পিজার পর পিজা ওগরাতে থাকে।

‘ডেড স্কাল’ মোটর সাইকেল ক্লাবের সদস্যরা পেছনের রুমে পুল খেলতে মত্ত, পিজার পর পিজা
আর বোতলের পর বোতল বিয়ার ফাঁক হয়ে যাচ্ছে। জেজে টপ আর ট্রাভিস ব্লেয়ার জুক বক্সের
41

সামনে থেকে সরে এসে বারের টু লে বসলো। আরেকদিকে বসে আছে এই বারের একান্ত অনুগত
কাস্টমার – লিও বুথ, সে আবার মানব প্রকৃ তি সম্পর্কে রসজ্ঞ পণ্ডিত।

“বেবে কি ঠিকমতো ঘরে পৌঁছেছে ?” সে জিজ্ঞেস করলো বনি ফস্ট , এখানকার এক ওয়েট্রেসকে,
যে এইমত্র ওর জন্য একটা বুরবন নিয়ে এসেছে।

“ইয়াহ ” বলল বনি “ওর বোন এসে নিয়ে গেছে ওকে ”

“এই ক্লাউন সম্পর্কে সবাই যে বলাবলি করছে, তু মি কি ভাব এ সম্পর্কে ?”

বনি খানিকটা সরে গেলো “আমি এমনকি ওটা নিয়ে চিন্তাও করতে চাইনা ! আমি ক্লাউনদের ভয়
পাই ! আমার মা আমার পঞ্চম বার্থডেতে একটা ক্লাউন ভাড়া করেছিলো, আমি পুরোটা সময়
ওয়ার্ড রোবে লুকিয়ে ছিলাম ! এমনকি ওর বেলুন জন্তুগুলিও পেটের নাড়িভুঁ ড়ির মতো দেখাচ্ছিল
!”

একটা ঠাণ্ডা স্রোত বেয়ে গেলো বনির মেরুদণ্ড জুড়ে। ও ‘ব্রোকেন বটল’ বারে যথেষ্ট জনপ্রিয়
একজন লালচু লো মেয়ে, লম্বা পা আর মোটামুটি সুন্দর মুখাবয়ব। বারে আসা মদ্যপদের শুকনো
সেন্স অব হিউমার সে ভালোই উপভোগ করে। ও দেখতে যতই ভালো হোক না কেন, আর বারে
যতই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ু ক না কেন, একা একাই বাড়ি ফেরে, আর বিছানা শেয়ার করে
বিশাল কু কু র, হারম্যানের সাথে ! ওই বিকটদর্শন কু কু রটাকে আশেপাশের সবাই ভয় পায়, সে
মানুষ বা কু কু র যাই হোক না কেন ! বনি একটু আধটু অ্যাডভেঞ্চার পছন্দই করে, কিন্তু কারো সাথে
চিপকে থাকতে তার একদম ভাল্লাগে না ! সে সবকিছু সরল সিধাভাবে দেখতে অভ্যস্ত, আর সে
ক্রো ফলসে সারাজীবন কাটিয়ে দিতেও মোটেই চায়না !

লিও মেয়েটার গমনপথের দিকে তাকিয়ে রইলো, কিছু নোংরা চিন্তাও ওর মনে যে উঁকি দিলো না
তা নয়, কিন্তু মুচকি হেসে সে আবার তার মিলাউইকির বিয়ারের বোতলের কাছে ফেরত গেলো।
এখন এমনকি মাঝরাতও হয়নি, এটা ভাবতে না ভাবতেই ওর প্রস্রাবের বেগ এলো। ও বাথরুমের
দিকে এগোল। ওহ ! অবশ্যই , ওখানে লম্বা লাইন, গোড়ালির ওপর বাঁই করে ঘুরলো, একটু দ্রুতই
42

ঘুরে থাকবে, কারণ রান্নাঘর থেকে পিজ্জা নিয়ে বের হতে যাওয়া স্তিউ পাচেক এর সাথে আরেকটু
হলেই ধাক্কা খাচ্ছিল “দেখে চলো, লিও !” লিও ওর দিকে নার্ভাসভাবে একবার হাত নেড়ে বাইরের
দরজার দিকে রওনা দিলো। এক চু ম্বনরত তরুণ জুটির পাশ দিয়ে ও বাইরের ঝড়ে পা রাখল।

কি এক বালের ঝড় ! তু ষারঝড় আর ঠাণ্ডা একটা ভীষণ ঘুষির মতোই আছড়ে পড়লো লিওর
ওপর। কাঁপতে কাঁপতে বিল্ডিঙের পাশের দিকে চলে এলো কাজ সারতে, কিন্তু এই শীতে
‘ছোটভাই’ সাড়া দিতেই চাইলো না ! শামুকের মতো শুধু গর্তে র ভেতরেই চলে যেতে চাচ্ছে ! সে
একটা শ্বাস ফেলে আশেপাশে তাকাল, দূরে একটা রেইল ব্রিজ আর ১৯৭০ থেকে বন্ধ হওয়া
স’মিল (কাঠ চেরাই কল) দেখা যাচ্ছে। ওটা এখন বন্ধই থাকে। আকাশের ঘন অন্ধকার ভেদ করে
মাঝে মাঝে চাঁদ উঁকি দিচ্ছে, ঠিক মনে হচ্ছে একটা লাইট সুইচ কেউ জ্বালাচ্ছে আবার নেভাচ্ছে।

একটু ক্ষণের জন্য মনে হল যেন দূরে কোথায় বন্দুকের আওয়াজ শোনা গেল, যেরকম শিকারের
সময়ে শোনা যায় ! সাথে সাথেই বাতাসের গর্জ ন ওটা গিলে নিলো। লিও শিউর না, কিন্তু এরকম
দুর্যোগের মধ্যে কে বন্দুক চালাতে যাবে ? এর মধ্যে ওর ‘ছোটভাই’ জমে গেলো একেবারে ! ওর
সেসময় হঠাৎ করে ক্লাউনের ব্যাপারে বনির ভয়ের কথাটা মনে পড়লো ! অত্যন্ত হাস্যকর একটা
ফ্যান্টাসিতে সে ডু বে গেলো যে সে কোন একটা ভয়াল ক্লাউনের আক্রমণ থেকে বনিকে রক্ষা
করছে আর বনি বিনিময়ে ওকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিচ্ছে ! হাহ ! একটা ৬৬ বছরের বুড়ো
হাবড়া আর ২৪ বছরের সুন্দরী ওয়েট্রেস, ভালোই কল্পনা যা হোক !

সহসা সে পেছনে কড়মড় শব্দের সাথে একটা শীতল ছায়ার উপস্থিতি টের পেল। সম্ভবত ওই
ডেড স্কাল দলের কোন বাইকার হবে ! কিন্তু ওর কেন জানি মনে হল ওটা ওদের কেউ না ! ওর
হৃৎপিণ্ড দ্রুত চলতে শুরু করলো আর পেটের কাছটা কেমন জানি ঠাণ্ডা বরফ হয়ে গেলো ! ও
দেখল ওর পেছনে দাঁড়ানো ছায়াটা বিশাল আর কেমন জানি কিম্ভু ত !

স্রেফ ঘুরে দাঁড়াও আর দেখো ওটা কে !


43

ওটাই তো ও চায় না ! ভয় ওকে সম্পূর্ণ গ্রাস করলো আর পেছনের ওটা যাই হোক না কেন , এত
বদগন্ধ ছাড়ছিল যে কি আর বলবে !

ও অবশেষে ঘুরে দাঁড়ালো, আর শুনতে পেলো একটা নিচু , পশুর মতো গরগরানি, যেটা
অল্পক্ষণেই বুনো পশুর হুঙ্কারে পরিণত হলো । এরপর সে দেখল যে মুখ থেকে এই গর্জ ন ভেসে
আসছে সেটা, আর ভয়ে পেছনে হোঁচট খেল ! গর্জ নটা ক্রমশ প্রলম্বিত আর চড়া সুরের দিকে
যাচ্ছে, আদিম কোন রাগের প্রতিফলন যেন । লিও আবার হোঁচট খেয়ে বরফের ওপর পড়েই
গেলো , ওর হৃৎপিণ্ড যেন ওর গলা দিয়ে বের হয়ে যেতে চাচ্ছে । ও যেটা দেখছে সেটা............ না
না , এরকম কিছুর অস্তিত্ব থাকতেই পারেনা ! পুরো ব্যাপারটাই তো অসম্ভব ।

কিন্তু সবকিছু স্বত্বেও , ওই যে ওটা দাঁড়িয়ে আছে, একটা বিশাল, দানবীয় ক্লাউন , পরে আছে
একজোড়া কদাকার দেখতে বড় জুতা আর সাইজে বড় কালো আর নীল জাম্পসুট। মুখটা মনে
হচ্ছে সাদা মাংসল একটা খুলির মতো, ঠোঁটগুলি কালো আর চোখ ভর্তি হলুদ পুঁজ !

ক্লাউনটা ওর দিকে কয়েক পা এগোল আর লিও ওর বুকে একটা তীক্ষ্ণ ব্যাথা অনুভব করলো।

ও গড ! প্লিজ না ! আমাকে ছেড়ে দাও ! আমি এখানে মারা যেতে চাই না !

নীরব আতঙ্কে হাঁ হয়ে গেলো লিওর মুখ, আর ক্লাউনটা ওর দিকে তাকিয়ে একপাশে ঠোঁট বেঁকিয়ে
ক্ষু রের মতো ধারালো দাঁত বের বিকট এক হাসি দিলো। ও ওর ফোলা সাদা হাত বাড়াল লিওকে
ধরার জন্য, লম্বা হলুদ নখ সেই হাতের প্রত্যেকটা আঙ্গুলের ডগায়।

বাঁচার জন্য শেষ চেষ্টার তাগিদে , লিও লাফ দিয়ে উঠে কয়েক পা মাত্র এগোতে পারলো ক্লাউনটা
ওকে ধরে ফেলার আগে ! ওকে ধরে ঘোরালো ক্লাউনটা, এক থাবা দিয়ে নাড়িভুঁ ড়ি বের করে
আনল, লিও হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো ওর নিজের শরীরের আবর্জ নার ওপর ! ক্লাউনটা আবার
থাবা চালাল, লিওর কপাল থেকে চিবুক পর্যন্ত দুফাঁক হয়ে গেলো ।
44

মৃত্যুর গভীর অন্ধকারে ডু বে যেতে যেতে লিও টের পেলো ক্লাউনটার দাঁত ওর গলার গভীরে বসে
যাচ্ছে ধীরে ধীরে , কাঁটাঅলা জিহ্বা ঢু কে যাচ্ছে ক্যারোটিড আর্টারির ভেতরে , রক্ত পান শুরু
করার জন্য !

অধ্যায় ১৪

“শিট !” পিনাট চিৎকার করলো “শিট, শিট, শিট !”

সে দেখল টিগ সেদিকে দৌড়ে গেলো যেদিক থেকে দ্বিতীয় ক্লাউনটার গর্জ ন ভেসে এসেছিল !
পিনাট জানে, ওকে নেতাকে ফলো করতেই হবে , কারণ এটাই ওর দায়িত্ব আর কর্ত ব্য, কিন্তু ও
আসলে চাচ্ছে উল্টো ঘুরে দৌড় লাগাতে আর পার্ক থেকে বেরিয়ে যেতে ! কাছাকাছি কোন বারে
গিয়ে কোন শক্ত ড্রিংক গলা দিয়ে নামিয়ে দিতে। কিন্তু ও টিগকে চেনে, ওর চাকরীই ওর কাছে সব
কিছু, তাই ও কখনও পালাবে না ! অগত্যা পিনাট ওকে ফলো করলো, নিজেকে এটা বোঝাতে
বোঝাতে যে, হয়তো এটা কোন দুঃস্বপ্ন ! এক্ষু নি ঘুমে ভেঙ্গে যাবে আর এই দুঃস্বপ্ন থেকে ও জেগে
উঠবে ! তু ষার ওকে ক্রমাগত আঘাত করে চলেছে, আর মনে হচ্ছে পিঠে বিশাল কোন সিমেন্টের
বস্তা নিয়ে হাঁটছে। ও আতঙ্কিতভাবে এদিক ওইদিক তাকাতে লাগলো, টিগকে কোথাও দেখা
যাচ্ছে না কেন !

ও ওহ গড ! আমাকে এভাবে একা ফেলে যেয়ো না টিগ , বাইরে এভাবে না !

গ্লকটা এক হাতে আর ফ্ল্যাশলাইটটা আরেক হাতে নিয়ে ও এই ভয় থেকে বের হয়ে আসতে
চাইলো। খেলার মাঠটা অতোটা বড়ও না, আর তু ষারঝড়ের কারণেই ও হয়তো টিগকে দেখতে
পাচ্ছে না, ও হয়তো সামনেই আছে ! ও ফ্ল্যাশলাইটটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চারদিকে দেখতে লাগলো,
কিন্তু তু ষার ছাড়া আর কিছুই দেখলো না।

“উইইইইইল ! কোথায় তু মি উইইইইইইল ! ” হোঁচট খেতে খেতে ডাকতে লাগলো পিনাট , ওর মুখ
এতই অসাড় হয়ে গেছে যে ওর চিবুক টের পাচ্ছেনা সে ! ও এগিয়ে যাচ্ছে সেই ক্লাউনটার দানবীয়
45

চিৎকার অনুসরণ করে করে ! কখনও ওটা অনেক কাছে মনে হয়, কখনও অনেকখানি দূরে ! ও
ঠাণ্ডাতে পুরো জমে গেছে, কিন্তু ওই হতচ্ছাড়া জন্তুটা আরও ঠাণ্ডা ভয়ের কাঁপুনি ধরিয়ে দিচ্ছে ওর
মেরুদণ্ডে।

বেড়া ! বাল ! চেইন লিঙ্কঅলা বেড়া দেখা যাচ্ছে, ওটা খেলার মাঠটাকে বাকি পার্ক থেকে আলাদা
করেছে -- তার মানে হলো ও এতক্ষণ সম্পূর্ণ ভু ল দিকে এসেছে। ও একটা গালি দিয়ে উঠলো
আর হঠাৎ একটা বিরাট কিছুর সাথে ধাক্কা খেলো যেটা ওকে পার হয়ে গেলো ! পিনাট ধপাস করে
বরফের ওপর পড়লো আর পিছলে কিছুদূর চলে গেলো । ওটা টিগ ! ওকে খুব খুশি দেখাচ্ছিল না
! ও পিনাটকে মাটি থেকে তু লতে তু লতে বলল “ বালছাল ! আমার পেছনে থাকো ! ”

পিনাট ওর পড়ে যাওয়া ফ্ল্যাশলাইটটা মাটি থেকে তু লে তু ষারে অদৃশ্য হয়ে যেতে থাকা শেরিফকে
অনুসরণ করলো। টিগকে দেখে মনে হচ্ছিলো কোথায় যেতে হবে ও জানে, যেটা এ ধরণের
পরিস্থিতিতে খুব কাজের একটা গুণ ! একটু পর পরই ও থেমে থেমে কান পেতে কি জানি শোনার
চেষ্টা করছে, প্রত্যেকবার যখন ওই ক্লাউনটা গর্জ ন করে উঠছে , ও আরও সঠিক দিশাতে এগিয়ে
যাচ্ছে। টিগ শুধু একটা শুঁকতে থাকা কু কু রের মতো কাজ করছে, পার্থক্য হল এখানে গন্ধের বদলে
শব্দ ব্যবহার করছে সে – ক্লাউনের গর্জ নের শব্দ , অমানুষিক ওই চিৎকারের ভেতর মিশে আছে
প্রচণ্ড ব্যথা আর অদম্য রাগ !

“এদিকে এসো !” টিগ বলে আরেকদিকে এগিয়ে গেলো, পিনাট ঠিক তার পেছনেই আছে, কিন্তু
বাতাস তাকে প্রতি মুহূর্তে ই এলোমেলো করে দিচ্ছে, ওর পা গুলো কাঁপছে যতটা না ক্লান্তিতে তার
চাইতে বেশি – ভয়ে ! ওরা অনেক কাছে চলে এসেছে, সেটা সে বেশ অনুভব করতে পারলো !

আর, হঠাৎ করেই টিগ ঝট করে বসে পড়লো, একটা রক্ত জমাট করা চিৎকারের সাথে সাথে
একটা অশুভ ছায়া ওর দিকে ছুটে এলো ! পিনাট দেখল একটা অদ্ভু তভাবে বিকৃ ত শরীর ওটার
হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ওকে ধরার জন্য ! পিনাট অনেক কষ্টে নখগুলি এড়ালো, অনেকটা অবচেতন
46

রিফ্লেক্সেরই বশবর্তী হয়ে। ও দ্রুত দুটো বুলেট পাঠিয়ে দিলো অশুভ ছায়াশরীরটা লক্ষ্য করে !
বিকট এক গর্জ ন দিয়ে ওটা অন্ধকারে হারিয়ে গেলো।

টিগ উঠে দাঁড়ালো আর পিনাট দেখল ওর চামড়ার জ্যাকেটের পেছনে একটা বিরাট কাটা।

“সাবধান ! ” পিনাট চেঁ চিয়ে উঠলো ।

ক্লাউনটা আবার ওদের দিকে এলো হুমড়ি খেয়ে, ওর স্যুটটা চকচক করছিলো আর চোখগুলি
জ্বলছিল লাল টকটকে রুবির মতো। ঝট করে পিছিয়ে গিয়ে ওটাকে ভালো করে দেখার অবকাশ
পেলো , দেখা গেলো ওটার পুঁজবহুল মুখ , লম্বা ধারালো হলুদ দাঁত যেটা বেরিয়ে আছে পুড়ে
যাওয়া মাড়ি থেকে। তখন অন্ধকারের ভেতর একটা বিস্ফোরণ হলো, টিগ ওর শটগান ছুঁ ড়েছে ,
পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জ থেকে ! ক্লাউনটা বুক পেতে উত্তপ্ত লোহার পুরো ঝাপটাটা নিলো , ওটার
চকচকে পোশাকটা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেলো, পুরো শরীরটা মোচড় খেতে লাগলো অবর্ণনীয় যন্ত্রণায়,
একটা ভীষণ ব্যাথার চিৎকার দিয়ে ওটা স্রেফ অদৃশ্য হয়ে গেলো !

আরেকবারের মতো পিনাটকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করলো টিগ।

ক্লাউনটা রক্তের একটা বেশ মোটা দাগ রেখে গেছে পেছনে, সেটা ধরে এগোল ওরা, কিন্তু মিটার
দশেক যেতে না যেতেই দাগগুলি স্রেফ মিলিয়ে গেলো ! ওরা অন্ধকারে দাঁড়িয়ে রইল, অসহায় আর
অরক্ষিতভাবে, ওদের মুখগুলি অবর্ণনীয় ভয়ে ফ্যাকাসে হয়ে আছে।

পিনাট ওর ফ্ল্যাশলাইটটা এদিক ওদিক ঘোরালো, ও হঠাৎ করে উপলব্ধি করলো ক্লাউনগুলো বেশ
কয়েকবার ওকে আক্রমণ করেছে কিন্তু ও এখনও টিকে আছে। সহসাই, একটা অচেনা আগুন
যেন জ্বলে উঠলো ওর ভেতর, ওর নিজেকে একজন সত্যিকারের ডেয়ারডেভিল বলে মনে হতে
লাগলো ! যখন তরুণ সৈন্যরা যুদ্ধে যায় আর প্রথম সম্মুখযুদ্ধে টিকে যায়, ওদের মনে হয় এরকমই
লাগে। ও আরও ভালো করে খুঁজতে লাগলো বরফে আর একটা ঢালু জায়াগায় কিছু একটা
খুঁজে পেলো।
47

“উইল !” পিনাট চিৎকার করলো “এদিকে !”

টিগ দৌড়ে এলো, ও এলে পিনাট ওর ফ্ল্যাশলাইটটা একটা নির্দি ষ্ট দিকে ফেলল, ওরা একটা মোটা
রক্তের ধারা দেখতে পেলো, ওটার সূত্র ধরে রক্তের উৎসটা খুব দ্রুতই ওরা খুঁজে বের করে
ফেলবে। পিনাটের মনে হলো ওর মাথার ভেতর কেউ যেন উন্মাদের মতো হেসেই চলেছে ! একটু
এগিয়ে ওরা দেখলো ওদের সামনে পড়ে আছে একটা বিরাট আকৃ তির কমলা রঙের ক্লাউনের
জুতা, আটকে আছে ক্লেগের পেতে যাওয়া ভালুক ধরার ফাঁদের ভেতর ! ওটার সাথে লেগে আছে
প্রায় জমে যাওয়া রক্তমাখানো ভাঙ্গা একটা পায়ের নিচের দিকের অবশিষ্টাংশ !

“ফাঁদটা ওটার পা কেটে ফেলেছে !” হৃষ্ট গলায় বলল পিনাট ।

টিগ কিছু না বলে ফাঁদটার আরও কাছে গিয়ে ভালো করে দেখেশুনে রায় দিলো “নাহ ! ক্লাউনের
বাচ্চাটা নিজেই নিজের পা কামড়ে ভেঙ্গে ফেলেছে ফাঁদ থেকে মুক্ত হবার জন্য !”

অধ্যায় ১৫

“এটা সম্পূর্ণ গাঁজাখুরি কথা ! ” স্টান বারবাচেক বলল। এটা হল ট্যাক্সি সদর দপ্তর, ‘ব্রোকেন
বটল’ বার থেকে দুই ব্লক দূরে। ও ওখানে আছে ফ্লো হেমিঙ্গার – অপারেশন ম্যানেজার এর সাথে,
যে কিনা বসে আছে রেডিওর সামনে , চু পচাপ। যদিও এরকম রাতে কোন কল আসার সম্ভাবনা
শূন্যের কাছাকাছি, উত্তর দিলো একটা নির্বিকার ‘হুম’ দিয়ে !

“সব বাদ দিয়ে, একটা ক্লাউন ?” আরো জোর দিয়ে বলল স্টান। যাতে সামনে বসা মহিলা ওর কথা
শুনতে পায়। “ওটাই বলেছে মেয়েটা ! বেবে বলল রিচি ওর সাথেই ছিলো, হঠাৎ তু ষার ঝড়ের
ভেতর থেকে বের হয়ে আসে ক্লাউনটা , আর রিচির গলা দু ফাঁক করে দেয় ! ”

“মজার ব্যাপার !” ফ্লো বলল নখের ওপর ফুঁ দিতে দিতে , একটু আগের দেয়া নেলপোলিশ
শুকাতে চায় দ্রুত। ও ওর জামাই মরটিমার এর কাছ থেকে এই ট্যাক্সি-এ–গো–গো কোম্পানি
48

উত্তরাধিকার সুত্রে পেয়েছে। তারপর ছয়টা নিষ্ফলা বছর গেলো, ফ্লো এই কোম্পানি চালানো প্রায়
অসম্ভব করে তু লল । আজ যদি শুক্রবার না হয়ে শনিবারের সন্ধ্যা হতো , তাহলে অনেক আগেই
বন্ধ করে চলে যেতো। কোন এক সময় মরটিমার দিনে চারটা আর রাতে তিনটা ট্যাক্সি খাটাতো,
তখন অবশ্য ভিনিয়ার ফ্যাক্টরি খোলা ছিল, যেটা বন্ধ হয়ে যাবার পর প্রায় ৬০০ লোকের চাকরি
চলে গিয়েছিল।

“এটা অদ্ভু ত যতটা না, তার থেকে বেশি মজার ! ” স্টান বলে চলল “বেবে যেটা বলেছে সেটা যদি
সত্যি হয়, তাহলে আমাদের মাঝে একজন উন্মাদ খুনি ঘুরে বেড়াচ্ছে, একজন সত্যিকারের
সাইকোপ্যাথ যে কিনা ক্লাউনের সাজপোশাক পরে মানুষের গলা ফাঁক করে দিচ্ছে !”

ফ্লো শুনে যাচ্ছে আর মাথা নেড়ে যাচ্ছে, তবে এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে সে স্টানের একটা কথাও
বিশ্বাস করছে না ! এটা দ্রুত নেয়া কোন সিদ্ধান্ত না, অনেক বছর ধরে বানোয়াট গল্প শুনতে শুনতে
(যেগুলি সত্যকে একটু রঙ চং বাড়িয়ে বলা ) ফ্লো অভ্যস্ত হয়ে গেছে, এগুলি সত্যের ধারকাছ
দিয়েও কখনও যায়না। মিথ্যা বলাটা হল স্টানের আর্ট । যখন অন্যান্যরা অ্যালকোহল, পর্ণ, ড্রাগস
এসবে আসক্ত, সেখানে স্টানের আসক্তির জায়গা হল শহুরে কিংবদন্তী আর অন্যান্য নানা ধরণের
মিথ্যার বেসাতি। দৈনন্দিন জীবনের নানান সাধারণ ঘটনাকেও সে অতিরঞ্জিত করে বিভিন্ন ‘ষড়যন্ত্র
তত্বে’ ফেলে দিতে পারে , আর মজার ব্যাপার হলো , এগুলি সে মানুষকে বিশ্বাসও করিয়ে ফেলতে
পারে, আর এটাতেই ওর নেশা হয়ে যায় !

ফ্লো মরটিমার মনে মনে আওড়াতে লাগলো , স্টানের সম্পূর্ণ আজেবাজে কথা বলার ব্যাপারে
আলাদা একটা প্রতিভা আছে ! যদিও আজ প্রায় তিরিশ বছর ধরে সে ট্যাক্সি–এ–গো–গো তে
ড্রাইভিং করে আসছে, কিন্তু ওর অন্য কিছু করার ব্যাপারে সেরকম কোন জীবনের লক্ষ্য নেই,
অন্যান্য ড্রাইভারদের মতো ও আসা যাওয়ার মধ্যেও থাকেনা ! পারতপক্ষে, ফ্লো ওর জন্য একটু
দুঃখই বোধ করে, কারণ ওর মিথ্যা বলার প্রবল আকাঙ্ক্ষার মধ্যে মনের দুঃখ ধামাচাপা দেবার
একটা প্রচেষ্টা দেখতে পায় ও সবসময়।
49

স্টান সবসময় প্রস্তুতি নিতে থাকে কোন বড় ঘটনা ঘটার জন্য, যেখানে ওর একটা মুখ্য ভু মিকা
থাকবে, আর সবাই ওকে এক নামে চিনবে ! যেহেতু ফ্লো অনেক বড় মনের অধিকারী, ও সবসময়
স্টানের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার ভান করতে থাকে, যেরকম আগে অসংখ্যবার করেছে ।

“এটা একটা উত্তেজক ব্যাপার, তাই না ? ” স্টান বলেই চলল “এটা অনেকটা আলফ্রেড
হিচককের সেই পুরানো টি ভি সিরিজগুলির মতো, একটা ছোট শহর নিষ্ঠু র তু ষার ঝড়ের কবলে
আটকা পড়েছে, আর অন্য সব বিশৃঙ্খলার মাঝে, ওখানে একটা উন্মাদ খুনিও আছে যে কিনা ওর
শিকার ধরে চলেছে বিন্দুমাত্র সন্দেহ না করা লোকজনের মাঝখানে ! ”

ফ্লো বুঝতে পারলো না এসবের সাথে হিচককের কি সম্পর্ক , ওর কাছে এটা অনেকটা সস্তা
নভেলের বিজ্ঞাপনের মতো শোনালো !

“এটা এমনকি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারেও পরিণত হতে পারে ! এরকম একটা গল্প ক্রো ফলসের
মতো শহরকে বড় আর বিখ্যাত করে দিতে পারে ! আর মনোযোগ আকর্ষণ মানেই কাঁচা টাকা, শুধু
সাংবাদিকরা আসার অপেক্ষা, আমরা হিট হয়ে যাবো ! ”

ফ্লো বিল্ডিঙের চারপাশে বয়ে যাওয়া বাতাসের মতোই দীর্ঘশ্বাস ফেলল “ইজি বয় ! তু মি কি
আসলেই সেটা চাও ? তু মি কি চাও ক্রো ফলস একটা সাইকোপ্যাথের স্বর্গরাজ্য হিসাবে পরিচিতি
পাক ?”

“আম্মম.........আমি জানিনা, আমার টাকাটা কাজে লাগতো, সুখ্যাতি আর টাকার মধ্যে এরকম
একটা চয়েস আমার জীবনে আসেইনি কখনও ! ”

একটা রেডিও কল এসে ওদের কথোপকথনে ইতি টানল, ওটা লাইল স্তাবস আর ওর স্ত্রী লুয়ান।
ওরা হুইসল স্টপে আছে আর একটা ভাড়া গাড়ি চায় বাড়ি পর্যন্ত ।

“ওরা ওদের চায়ে অনেক কিছু মিশিয়ে খেয়েছে মনে হয় ” ব্যাখ্যা করলো ফ্লো “তু মি কি এই
ঝড়ের মধ্যে গাড়ি চালাতে পারবে ?”
50

“আমার পুরানো জিপ যে কোন সময় যে কোন জায়গায় যেতে পারে, ফ্লো !”

একটা চোখ টিপ মেরে দরজার দিকে এগোল সে, বাইরে বেরিয়ে যাবার সময় যে সংক্ষিপ্ত সময়
দরজাটা খোলা ছিল, এর মাঝেই বাইরের শীতল বাতাস এসে ফ্লো কে কাঁপিয়ে দিয়ে গেলো। যদিও
ভেতরে হিটিং সিস্টেম পুরোদমে চলছিল, কিন্তু তবুও ওই ঠাণ্ডা যেন ওর মেরুদণ্ড সহ কাঁপিয়ে
দিয়ে গেলো। রাস্তার ঝড়ের দিকে ভীত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সে, সাধারণত রাতের শিফটগুলো ও
পছন্দই করে, কিন্তু আজকে , অনেকদিন পর , ওর বেশ ভয় লাগছে !

অধ্যায় ১৬

একটা ক্লাউন !! আমরা একটা ক্লাউনকে তাড়া করছি !!!

প্যাটি ওয়েল্যান্ড বেকু বের মতো রেডিওর দিকে তাকিয়ে বসে রইল, ও আছে শেরিফের অফিসে ,
যেটা কিনা ট্রেজারি, হেলথ ডিপার্ট মেন্ট আর সিটি কাউন্সিল অফিসের সাথে একই বিল্ডিঙে।
পিনাটের একটু আগে করা কলটা নিয়ে ভাবছিল সে।

“একটা ক্লাউন !” সে নরমভাবে বলল “আমরা একটা ক্লাউনকে তাড়া করছি !”

এটা শুনতে পুরোই বোকা বোকা শোনাচ্ছে , অনেকটা আরেক ডেপুটি শেরিফ রিচ ওয়েগলির
মতো। কারণ ওই বাঁটকু লটা উল্টোপাল্টা বকতে ওস্তাদ ! ওই ব্যাটা যদি এরকম কিছু বলতো ,
তাহলে স্রেফ মাথা থেকে ব্যাপারটা ঝেড়ে ফেলত প্যাটি। কিন্তু পিনাট, পিনাট এরকম কিছু কখনোই
বলবে না, ঠাট্টা করেও না ! ও বসে বসে ওই অদ্ভু ত মিস্টার ক্লেগ আর ওই বিকট চিৎকারটা নিয়ে
ভাবতে লাগলো ! পিনাটের ভাষ্যমতে , ওরা একটা ক্লাউনের পেছন পেছন তাড়া করে যাচ্ছে !
কাঁপতে থাকা হাতে কফি কাপটা আরও শক্ত করে ধরল প্যাটি, পিনাটের গলাতে ঠাট্টার লেশমাত্র
তো পায়ইনি, বরং ওর গলা শুনে মনে হচ্ছিলো কল্পনার চাইতেও ভয়াবহ কোন কিছুর পেছনে
তাড়া করছে ও আর শেরিফ ! এখন প্যাটি হতভম্ব হয়ে বসে মনে মনে প্রার্থনা করছে পিনাটরা যেন
51

ভালোয় ভালোয় ফিরে আসে , ও এই চাকরিতে আছে ছয় বছর হলো, একজন মানুষের পক্ষে যত
অদ্ভু ত কিছু দেখা বা শোনা সম্ভব সবই দেখেছে – শুনেছে , কিন্তু এবারেরটা মনে হচ্ছে সেগুলির
সবকিছুকে ছাড়িয়ে যাবে ! পুলিশ ফ্রিকোয়েন্সিতে তেমন কিছুই ভেসে আসছে না, এই তু ষার ঝড়
এই জেলার কম বেশি সব কিছুই শাটডাউন করিয়ে ছেড়েছে, কিন্তু এ ধরণের নীরবতা সরাসরি
তোমার কিডনিতে গিয়ে আঘাত করে !

ও কফিতে চু মুক দিতে দিতে একটা ম্যাগাজিন ওলটাতে লাগলো, সাম্প্রতিক চু লের স্টাইল, রান্নার
প্রণালী, ওজন কমানোর টোটকা ইত্যাদি ইতাদি ! আর মনে মনে গালাগালি করছিলো, কি সব
ছাইপাঁশ ! এটা ওর পুলিশ স্টেশনে দীর্ঘ রাতগুলি কাটানোর একটা পন্থা, কারণ সময়ে সময়ে পুরো
পুলিশ স্টেশন তমসাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, যেমন এখন পুরো শহরটা হয়ে আছে ! বাতাসেই কিছু একটা
আছে, তু মি নিজেকে যতই খুশি করার চেষ্টা করো না কেন, তু মি বিষণ্ণই থেকে যাবে !

বাইরে , শিস দেয়া বাতাস আরও উগ্রতর হয়ে উঠছে, বিল্ডিঙের চারদিকে প্রতিধ্বনিত হতে থাকা
চিৎকারের মতো ! বিপরীত দিকের জানালাতে তু ষার যেন কেউ ছুঁ ড়ে ছুঁ ড়ে মারছে, আর ও আরও
সংকু চিত হয়ে পড়ছে, উঠে গিয়ে বাইরে তাকাতেও ইচ্ছে করছে না , ওর মনে হচ্ছে তাহলে কারো
চোখে চোখে পড়ে যায় যদি , ওটা যদি কোন ক্লাউন হয় !

ওর মনে এবার ভেসে উঠলো পুরো সার্কাস ভর্তি কু ৎসিত হাসি হাসতে থাকা ক্লাউনের দল । সে
টের পেলো তার সারা শরীর কাঁপতে লেগেছে আর ও বিড়বিড় করে বলে চলেছে ---

ওহ ডিয়ার, এখন তো আমি ভয়েই মরে যাব ! প্লিজ ডিয়ার গড , আমার যেন মৃত্যু না হয় !

ভালো মানুষ, শেরিফ টিগের কপালে সবসময় বাজে কাজগুলোই জোটে !

রিপ ফ্রেজার ভাবছিল তু ষার ঝড়ের ভেতর দিয়ে ড্রাইভ করে জিনা কেলারের গাড়িটা আনতে
যাবার সময়। কি একটা ফালতু রাত বিছানা থেকে উঠে আসার জন্য, ভাবছিল সে, এদিকে তু ষার
52

যেন ওর টো ট্রাকটাকে সদলবলে আক্রমণ করছে । উইন্ডস্ক্রিনের ওয়াইপার পুরোদমে চলেও


কু লিয়ে উঠতে পারছে না , সে সেন্ট্রাল এভিনিউ ধরে সাবধানে স্থানীয় সীমান্তের দিকে এগিয়ে
নিচ্ছিল ট্রাকটা। একটা স্নো প্লাউ পাঁচ মিনিট আগে এদিক দিয়ে গেছে, কিন্তু এর মধ্যেই রাস্তাটা
আবার সাদা তু ষারে ভর্তি হয়ে গেছে ! এমন একটা রাত, যেটা নিয়ে আগামী অনেক বছর
মানুষজন বলাবলি করবে। ওর মেজাজ ক্রমশ তিরিক্ষি আর মন বিরক্তিতে ভরে যাচ্ছে। ও
কফিতে চু মুক দিয়ে একটা সিগারেট ধরালো। এটা একটা ব্যস্ত রাত হতে যাচ্ছে, অলরেডি দুইটা
ট্রাক কাজে লেগে গেছে আর সকালের মধ্যে মনে হচ্ছে আরও পাঁচটা বা ছয়টা ট্রাক লাগবে !

রিপ কাঁধ ঝাঁকাল, ও কেয়ার করে না ! ও চায় বোকা পাঁঠা গাড়ির মালিকরা ভু ল করুক আর ওর
কাছে এসে ডলার খসাতে থাকু ক ! ওরও তো খেয়ে পড়ে বাঁচতে হবে , নাকি ! তবুও, কি একখান
রাত !

ওর হেডলাইটের আলোতে সাদা তু ষারকণাগুলি দেখতে মোটা সাদা মথের মতো দেখাচ্ছিল,
হাজার হাজার মথ ! অন্তত অন্য কেউ আজ রাস্তাতে নেই , ওকে খানিকটা উদ্বিগ্নও দেখালো,
কারণ শহরটাকে আজ কেমন জানি মৃত দেখাচ্ছিল............... একটা সাদা ঢাকনা দেয়া কফিনের
মতো !

বাতাস ক্রমাগত লাফিয়ে চলা ছায়া ঝিকমিক করা অবয়ব তৈরি করছিলো, আর রিপের বারবার
মনে হচ্ছিলো ওখানে যেন কেউ আছে !

তু মি ক্লান্ত, তাই ওসব ভু লভাল দেখছ, কিন্তু রাতটা অনেক লম্বা !

ও জানে ঝড় বাদল চোখের সাথে অনেক ধরণের মস্করা করে ! ওটা তোমাকে এমন অনেক কিছুই
দেখায় যেটা আসলে আদৌ নেই, অথবা তু মি যেটা দেখতে চাও সেটা। চোখ ক্রমাগত কোন
আকৃ তি খোঁজার চেষ্টা করতে থাকে, যখন কোন আকৃ তি খুঁজে পায়না, তখন নিজের মতো কল্পনা
করে নেয়। ও রেডিওটা ছাড়লো , মন দিয়ে শুনতে লাগলো একটা টক শো।
53

ওহ গড ! ওরা ভূ ত নিয়ে আলোচনা করছে, আর কিছু পেলোনা ব্যাটারা ! একজন কলার দাবী
করছে ও রাস্তার পাশে একটা মেয়ে ভূ তকে সাদা ড্রেস পড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে ! আরও
কয়েকজন আরও অদ্ভু ত কিছু গল্প শোনানোর পর হোস্ট মাঝখানে এসে আলোচনা শুরু করে
দিলো মানুষের ভূ তে বিশ্বাস করা উচিত কি না ! রিসেপশন খুব বাজে ছিল, গলাগুলি একবার
মিলিয়ে যাচ্ছিল, আবার সাথে সাথেই বড় হয়ে উঠছিল ! রিপ ‘হুইসল স্টপ’ নামের বারটার পাশ
দিয়ে এগোল, ওখানে এখনও আলো দেখা যাচ্ছিল আর কিছু গাড়ি এখনও দেখা যাচ্ছিলো। হাহ !
ভাবল রিপ, এমন তু ষারঝড়ও মানুষকে ড্রিংক করা থেকে বিরত করতে পারেনি ! তখনই .........

আমি কি ওটা সত্যি দেখেছি !!

রিপ বাজি ধরে বলতে পারে ওই কোণাতে ও কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে ! হয়তো ওই বারের
কোন মাতাল হবে, ঠিক একটা ফোলা আর বিশাল কস্টিউম পরে দাঁড়িয়েছিলো ! ওফ , এটা নিয়ে
ও আর ভাবতেই চায়না ।

অবশেষে , রিপ ওর কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছল, একটা ছোট , রুপালি রঙের টয়োটা বরফে নাক
ডু বিয়ে দাঁড়িয়েছিলো। এটা সহজই হবে, হ্যাজার্ড লাইটটা জ্বালিয়ে পেছন দিকে চালিয়ে অদ্ভু ত
গাড়িটার কাছে নিয়ে গেলো , তারপর ওঠানোর যান্ত্রিক হাতগুলি নামিয়ে ওটার পেছনের চাকাগুলি
আঁকড়ে ধরলো। টয়োটাটাকে তু লে বরফের টিলা থেকে বের করে আনল রিপ। সবকিছু
জায়গামতো লেগেছে কিনা দেখার জন্য ওভারকোট আর হ্যাটটা নিয়ে বাইরে বের হয়ে আসলো
সে। বাইরে বেরোনো মাত্রই তু ষারঝড় ওর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো যেন ! ও বাতাসের দিকে পিঠ
দিয়ে দাঁড়ালো ঝাপটাটা পার হয়ে যাবার জন্য , কি একটা পাগলা রাত ! গরম ওয়ার্ক ওভারল
পড়ে থাকা সত্ত্বেও হি হি করে কাঁপছিল সে। ফ্ল্যাশলাইটটা নিয়ে জোড়ার কাপ্লিংটা দেখলো সে,
সন্তুষ্ট মনে মাথা ঝাঁকালো সে। ঠিক আছে , এবার চলো এখান থেকে যাই, নিজেকে বলল সে,আর
তখনই বিশাল এক ঝাপটা আর সাথে অনেক খানি তু ষার এসে ওকে প্রায় অন্ধ করে দিলো।
ড্রাইভারের দরজা পর্যন্ত যেতে অনেক সংগ্রাম করতে হলো ওকে, দরজার হাতলে হাত রেখে সে
শব্দটা শুনতে পেলো।
54

একটা শব্দ, যেটা ............ যেটা এখানকার পরিবেশের সাথে একেবারেই বেমানান। ওটা ওকে নিউ
ইয়ারস ইভের কথা মনে করিয়ে দিলো কোন এক অদ্ভু ত কারণে ! এটার কোন মানেই হয় না, নাকি
হয় !

ওই যে, ওই যে ......... আবার শোনা যাচ্ছে ওটা, বাতাসের গর্জ নে বারবার চাপা পড়তে গিয়ে
আবার ফিরে আসছে। ওটা ওকে এই তু ষার ঝড়ের চাইতে বেশি কাঁপুনি দিয়ে গেলো ! এই তু ষার
ঝড়ের মাঝখানে কে ওই পার্টি তে বাজানোর ঝু মঝু মি বাজাচ্ছে ! আর...... আর ওটা তো এদিকেই
এগিয়ে আসছে বলে মনে হচ্ছে !

রিপ হাতের লাইটটা তু লে ধরে দেখার চেষ্টা করলো সামনের দিকে, কিন্তু তু ষার ঝড়ের সাদা পর্দা
ভেদ করে কিছুই দেখলো না !

“কে......... কে ওখানে ?” নার্ভাসভাবে চিৎকার করলো সে।

কিন্তু জবাবে ওই ঝু মঝু মির আওয়াজ আরও কাছিয়ে আসতে লাগলো। কেউ নিশ্চিত ওর সাথে
রসিকতা করছে, রিপের একবার মনে হলো ব্যাটাকে খুঁজে বের করে পাছা দিয়ে ঝু মঝু মিটা ভরে
দেয় ! কিন্তু একটু পর বাদ দিলো চিন্তাটা, অস্ত্রসস্ত্র থাকতে পারে এসব পাগলের কাছে। ও এখান
থেকে চলে যাওয়াই ঠিক মনে করলো।

কিন্তু এরপর আরেকটা শব্দ ভেসে এলো , ‘বুম বুম বুম’ করে গাড়িটার দিক থেকে ভেসে এলো
শব্দটা। অন্য কোন দিক থেকে কোন শব্দ আসতেই পারেনা। এখন রিপ সত্যিই ভয় পেয়ে গেলো,
ওর মেরুদণ্ড দিয়ে শীতল বরফ নেমে গেলো যেন ! ওই , ওই আবার শোনা যাচ্ছে শব্দটা , এবার
আরও জোরে !

ক্যাবের ভেতর ঢোক, ব্যাটা ইডিয়ট ! এখান থেকে পালা ! কিন্তু, কিন্তু গাড়ির ভেতর যদি কেউ
থেকে থাকে ! কারো যদি ওর সাহায্য প্রয়োজন হয় ?
55

এটা অসম্ভব ! যদি ওখানে কেউ থাকতো, শেরিফের চোখে ওটা পড়তোই। রিপ ওর টো ট্রাকের
দিকে ধীরে ধীরে পেছাতে থাকলো, কিন্তু শব্দটা আবার ভেসে এলো ‘বুম থাম্প থাম্প’ ! এবার
অগত্যা রিপ এগিয়ে গেলো টয়োটাটার দিকে। ওটা সাদা তু ষারের আবরণের নিচে প্রায় ঢাকা পড়ে
গেছে !

রিপ একজন বিশালদেহী লোক যে সারাজীবন কঠোর পরিশ্রম করে এসেছে, কিন্তু এখন , এই
মুহূর্তে , ওর ছোটবেলার মতো ভয় ওকে কাবু করে ফেলছে ! ওর মনে হচ্ছে ওই টয়োটার দরজা
খুললে ও এমন কিছুর মুখোমুখি হবে যা ও আসলে দেখতে চায়না ! কিন্তু তবুও ও নিজের
অজান্তে উইন্ডশিল্ডের বরফ সরিয়ে ভেতরে দেখতে চাচ্ছে। ভেতরে নিশ্চয়ই কেউ আছে !

অধ্যায় ১৭

রিপ ঝট করে দরজাটা খুলে ফেলল , আর আতঙ্কে চিৎকার করে উঠলো !

কারণ ড্রাইভারের সিটে ওটা কোন মানুষ না, একটা লাশ বসে আছে ! একটা গোলাপি পারকা
পরে, সারা গায়ে শুকনো রক্ত ! মুখ হাঁ হয়ে আছে নীরব চিৎকারে, যেখানে চোখ থাকার কথা
সেখানে শুধুই শুকনো রক্ত, গলার কাছ থেকে বিরাট একটা মাংসের দলা নেই হয়ে গেছে। বুকের
পাঁজর হাঁ হয়ে আছে, ভেতরটা পুরো ফাঁকা , দৃশ্যটা এতই বীভৎস যে রিপ অন্যদিকে তাকাতে
বাধ্য হল।

ও ছিটকে পেছনে সরে এসে ক্যাবের দিকে যেতে যেতে মনে ভাবল , টিগ এটা কিভাবে দেখতে
পেলোনা ! সম্ভবত ও চলে যাবার পর এটা কেউ রেখে গেছে ! ও ড্রাইভারের ক্যাবের কাছে পৌঁছে
গেছে প্রায় , এ সময় দেখতে পেলো ওয়াইপারের সাথে একটা কালো বেলুন বাঁধা ! এখন ওর তো
ভেতরে যেতেও ভয় হচ্ছে ! ও ঝু মঝু মির আওয়াজটা আবার শুনলো পেছনে আর পাঁই করে
ঘুরলো ।
56

আর ওখানে দাঁড়িয়ে আছে একটা ক্লাউন ! একটা বালের ক্লাউন ! পাতলা কালো ওভারঅল পরা,
সামনের দিকে ঝু লছে পিনে গাথা কতগুলি ছোট ছোট বল !

রিপ আনমনা ভাবেই খুব আস্তে চোখের পাতা ফেলল , চোখের সামনে ক্লাউনটা মনে হলো যেন
ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে, আবার স্পষ্ট হয়ে গেলো ! ক্লাউনটার মুখটা মরা মাছের মতো সাদা, মুখে অজস্র
কাটাকু টির কালো কালো দাগ , ভেংচি কাটা ঠোঁটের রঙ রক্তের মতো টকটকে লাল ! চোখ দুটো
দামী রত্ন পাথরের মতো জ্বলছে, মাথার পাশ দিয়ে কয়েকগাছি কোঁকড়া চু ল বের হয়ে আছে।
ক্লাউনটা রিপের দিকে এগোতে লাগলো, আর ওটার মাথা লাটিমের মতো ধড়ের ওপর গোল হয়ে
ঘুরতে লাগলো, অনেক আস্তে আস্তে , ঘুরতেই লাগলো , ঘুরতেই লাগলো । ঠিক লাটিমের মতো !

অনেকক্ষণ ধরে জমিয়ে রাখা আতঙ্ক এবার জোর চিৎকার হয়ে বেরোল রিপের গলা দিয়ে, ঠিক
একটা পাগল যেভাবে চিৎকার করে সেভাবে। ও ওর মনের স্থিরতা হারিয়ে ফেলল প্রায়, হাঁটু গেড়ে
বসে পড়ল বরফের ওপর। ওর মনের সামান্য সুস্থ অংশ ক্রমাগত চিৎকার করে যেতে লাগলো ,
পালাও ,ইডিয়ট ! পালাও, ক্লাউন ব্যাটা এদিকেই আসছে !

ওকে কে যেন থাবা দিয়ে একপাশে ফেলে দিলো, ক্ষণিকের জন্য জ্ঞান হারালো সে।

জ্ঞান ফেরার পর হতভাগা রিপের মনে পড়লো সে একা নয়, ওই , ওই যে তু ষার ঝড়ের ভেতর
থেকে কে এগিয়ে আসে ! প্রথমে মনে হলো ক্লাউনটাই বুঝি, কিন্তু না ! এই অবয়বটা আরও হালকা
, কাছে আসার পর বোঝা গেলো ওটা সেই মহিলাটা, যেটা টয়োটাটার ভেতর বসে ছিলো , সেইটা
! বাতাস মহিলার খালি পাঁজরের ভেতর দিয়ে বয়ে যাবার সময় গোঙ্গানির মতো শব্দ করছে, এদিক
ওদিক নানারকম হাড় বের হয়ে আছে। রিপ একটা অন্তিম চিৎকার দিয়ে আরেকদিকে পালাতে
চাইলো, কিন্তু পেছন থেকে ওকে চেপে ধরলো ক্লাউনটা, ওর চোখে হাত চাপা দিলো খল খল করে
হাসতে হাসতে, ওর হাতগুলি ছিল ভেজা ভেজা , পিচ্ছিল , ঠিক মরা মানুষের হাতের মতো !
57

স্টান ওর ফোর হুইল ড্রাইভ জিপটা তু ষারাবৃত রাস্তা দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ও একটু
আগে ফ্লোকে বলে আসা কথাগুলি মনে মনে নাড়াচাড়া করছিল। ফ্লো ব্যাপারটা বেশি পাত্তা
দিয়েছে বলে মনে হয়নি, অবশ্য ডলারের নোট ছাড়া ওকে আর কিছুই তেমন টানে না ! ও কেবল
একটা সাধারণ ব্যবসায়ী মহিলা। ও কেয়ার করেনা , ওর ধারণা ও একটা সোনার খনিই পেয়ে
গেছে , ওর কেবল সঠিক সেটআপটা পেলেই হবে। অবশ্যই ও চায়না ওই বালের ক্লাউন আর
কাউকে হত্যা করুক, কিন্তু এটা ঘটেই গেছে, তাহলে এটা থেকে কিছু টাকা আয় করতে অসুবিধা
কোথায় ? ভাবো ! কষে ভাবো !

যদি আসলেই একটা হত্যাকারী ঘোরাফেরাই করে, ওটাকে যে ঘায়েল করতে পারবে, সেই হিরোর
মর্যাদা পাবে ! আর স্টান তো সেটাই চায় ! ও বরাবর দুটো জিনিস কামনা করে এসেছে , সম্মান
আর টাকা ! ও আরও চায় একটা বই লিখতে, একটা থ্রিলার বই, যেটাতে থাকবে একজন ট্যাক্সি
ড্রাইভারের গল্প , যে কিনা ক্লাউন মার্ডার গুলির প্রত্যক্ষদর্শী। হুইসেল স্টপ ক্রো ফলসের আরেক
প্রান্তে, স্বাভাবিক আবহাওয়াতে সেখানে যেতে স্রেফ পাঁচ মিনিট লাগে, কিন্তু এই তু ষার ঝড়ে,
অসম্ভব ! স্লো ভাবে যেতে যেতে স্টান ভাবল ওখানে পৌঁছতে কমপক্ষে আধা ঘণ্টা সময় লাগবে ।

বাতাস বইছিল পাগলের মতো আর সবকিছু তু ষারে ঢেকে দিচ্ছিল, বাড়িঘর আর গাছগুলিকে মনে
হচ্ছিলো তু ষারের ভাস্কর্যের মতো ! ছায়াগুলি নাচছিল পথের দুপাশে, উইন্ডশিল্ডের ওয়াইপার
সর্বোচ্চ গতিতে চালিয়েও পুরোপুরি তু ষার সরাতে পারছিল না । কি একটা বাজে রাত !

ক্লাউন !

স্টান কখনোই ক্লাউনদের ভয় পেতোনা, ওর জন্য , ক্লাউনরা হলো শুধুই ক্লাউন , কিছু কিছু মানুষ
প্রায় হিস্টিরিয়াতে আক্রান্ত হয়ে যায় ক্লাউনদের প্রসঙ্গ এলেই। যেইমাত্র স্টিফেন কিং ওই
পেনিওয়াইস ক্লাউন নিয়ে বই লিখলো , ব্যাস , তারপর থেকে স্টান ওই ধরণের যত বই বা ফিল্ম
বেরিয়েছে, সব গোগ্রাসে গিলেছে। সব ধরণের মানুষ ক্লাউন ফোবিয়ায় (ভয়) আক্রান্ত হল যারা
জীবনে কখনও ক্লাউনদের নিয়ে এমনকি চিন্তাও করেনি। ওটা হলো মার্কে টিং আর প্রতারণা , আর
58

কিছুই না ! বেশীরভাগ মানুষ জানেনা ওরা কি পছন্দ করবে, ভালোবাসবে বা ঘৃণা করবে ! তাই,
তোমাকে ওদের ওটা দেখিয়ে দিতে হবে। তু মি যদি যথেষ্ট আগ্রহ ওদের মাঝে জাগিয়ে তু লতে
পারো, তাহলে ওরা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজে নেয়া ছাড়া আর সব কিছু করতে রাজি। পৃথিবী জুড়ে
ম্যাকডোনাল্ড এর চাইতে ভালো হ্যামবার্গার, অ্যামেরিকান মিউজিকের চাইতে আরও ভালো
ভালো মিউজিক, হলিউডের চাইতে আরও ভালো ভালো মুভি প্রস্তুত হয়, কিন্তু ওই সব কিছুর
পেছনে এতো এতো টাকা ঢালা হয় যে, অর্ধেক মস্তিষ্ক অলা মানুষগুলি ওগুলির ওপরই হুমড়ি
খেয়ে পড়ে। আর সোশ্যাল মিডিয়াতে আর টিভিতে কিছু সুন্দর মুখের সুড়সুড়ি, ব্যাস, কেল্লা
ফতে !

“ভালো প্রোডাক্ট বলতে কিছুই নেই, যা আছে তা হলো স্রেফ ভালো মার্কে টিং !” হিসহিস করে
বলে উঠলো স্টান।

উন্মাদ ক্লাউনদের কাছে আসা যাক।

অবশ্যই , সে শুনেছে কিভাবে রিচি’র গলা ফাঁক করে দেয়া হয়েছে, কিন্তু ওই ধরণের অতিরঞ্জন
ভালো মার্কে টিং এরই অংশ ! সে ওই খবরটা শোনার পর থেকে বেশ খানিকটা রঙ ছড়িয়ে
ঘটনাটা সবাইকে বলে বেড়িয়েছে, ফ্লোকে বলেছে রিচির গলা দু ফাঁক হয়ে গেছে, ব্যাপ্টিস্ট চার্চে র
কিছু বৃদ্ধাকে বলেছে রিচির দেহ আধখাওয়া অবস্থাতে পাওয়া গেছে, আর আরও অনেক লোককে
বলেছে যে রিচির মাথাটা বেমালুম গায়েব হয়ে গেছে !

সে ওই চিন্তাটা মাথায় আসার পর উচ্চস্বরে হেসে উঠলো !

কিন্তু এখন এই গড়িয়ে দেয়া বলটাকে আরও কিভাবে গড়িয়ে নেয়া যায় ! একটা উপায় বের করতে
হবে , পুরো ব্যাপারটা হলো সঠিক সময় আর সঠিক ...............

হোলি মাদার অব গড !
59

স্টান ব্রেকের ওপর প্রায় দাঁড়িয়েই পড়লো, জিপটা ছেঁ চড়ে বরফের ওপর বেশ খানিকটা এগিয়ে
গেলো। এক পাগল কু ত্তার বাচ্চা লাফ দিয়ে রাস্তার ওপর পড়েছে, আর স্টান ব্যাটাকে প্রায় চাপাই
দিয়ে দিচ্ছিলো ! তু ষার ওর চারপাশে ঘন হয়ে উড়ছিল আর ও কিছুই দেখতে পাচ্ছিলো না ! ওই
ব্যাটা এখানেই কোথাও আছে, স্টান শিওর ! ওটা একটা ক্লাউন ছিলো ! স্টানের লোম খাড়া হয়ে
গেছিলো আর সারা শরীর শিরশির করে উঠছিল !

ক্লাউনটা হেডলাইটের আওতার মধ্যেই দাঁড়িয়ে ছিলো , ওটা পরে আছে একটা ঢোলা স্যুট যেটা
একটা ধূসর বস্তার মতো দেখাচ্ছিল যেটার সামনে অলঙ্কারঅলা বল ঝু লে আছে, আর ওটার সারা
শরীরে লাল লাল ফু টকির মতো দেখা যাচ্ছিলো, ঠিক মনে হচ্ছিলো ওটার গায়ে কেউ রক্ত বমি
করে দিয়েছে ! ওটার চিবুকও গাঢ় লাল , মুখমণ্ডল লম্বা আর চিকন, ঠিক একটা অর্ধচন্দ্রের মতো ,
অসুস্থ এক ধরণের হলদে ছাপ যুক্ত । ওটার ঠোঁট রক্তের মতো লাল, ঈগলের মতো বাঁকানো নাক,
মুখ বাঁকা হয়ে আছে অসুস্থ বাঁকা হাসিতে, ঠোঁটের নিচ দিয়ে বেরিয়ে আছে অসুস্থ দেখতে একদল
কৃ মির মতো অবয়ব !

ওটা মানুষ না ! – স্টানের মাথার ভেতর একটা আতঙ্কিত স্বর চিৎকার করে উঠলো – ওটা
সাজপোশাক পরা কোন মানুষ না, ওটা একটা দানব ! স্টানের মনে হলো ওর এখনই কিছু করা
উচিত।

স্টান জানে ও নিষ্ঠু র মৃত্যু থেকে ও কেবল কয়েক সেকেন্ড দূরে দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু ওর শরীর
কিছুতেই সাড়া দিচ্ছিলো না , ওর মাংস-পেশী নড়াচড়া করছিলো না আর ওর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সম্পূর্ণ
অসাড় হয়ে রইল, যেন বরফে জমে গেছে !

ক্লাউনটা জিপের দিকে দুটো শক্ত পদক্ষেপ দিলো, ও ওর দানবসুলভ রক্ত-রাঙ্গা নখ আর হাত
বাড়িয়ে দিলো সামনের দিকে। গলার ভেতর থেকে ঘড়ঘড় শব্দ করতে করতে পৈশাচিক হাসি
ঠোঁটে নিয়ে এগিয়ে আসতে লাগলো ক্লাউনটা !
60

স্টান সর্বশক্তিতে এক্সিলারেটরে চাপ দিলো, কয়েক সেকেন্ড টায়ার গুলি নিজের জায়গাতে থেকেই
ঘুরলো, তারপর শক্তভাবে রাস্তাতে কামড় বসিয়ে সামনের দিকে লাফ দিলো , ক্লাউনটাকে খুব
জোরে একটা ধাক্কা লাগালো, ওটা মর্মান্তিক একটা নাকি সুরের চিৎকার দিলো ধাক্কা খেয়ে, তারপর
একপাশে হেলে পড়ে গেলো ! ক্লাউনটাকে পেছনে ফেলে একবারও পেছনে না তাকিয়ে সামনে
এগিয়ে এলো। একই গতিতে হুইসল স্টপের সামনে এসে একটা বরফের পাহাড়ে জিপটা নিয়ে
জোর ধাক্কা মারলো ! দৌড়ে বারটার ভেতরে ঢু কলো , আর ওখানকার নিয়মিত মদ্যপরা কিছু
জিজ্ঞাসা করারও আগে, সে কাউন্টার থেকে নিয়ে একটার পর একটা হুইস্কি গলায় ঢালতে
লাগলো !

অধ্যায় ১৮

এর মধ্যেই ওদের ওই কু ত্তার বাচ্চাটাকে ধরে ফেলতে পারার কথা ছিলো । কারণ এমনকি নরক
থেকে উঠে আসা কোন ক্লাউনও একপায়ে বেশি দূর যেতে পারার কথা না ! অন্তত তেমনটাই
শেরিফ টিগ নিজেকে বোঝাচ্ছিল। তু ষারঝড়টা বারবার ওই ক্লাউনটার চিন্হ মুছে দিচ্ছিল। কিন্তু
একটা ভালো দিক হলো, ওটা যাই হোক কেন, বেশ ভালমতোই রক্তপাত হচ্ছে ওটার শরীর থেকে
! এটা সাদা তু ষারের ওপর বেশ ভালোভাবেই ফু টে উঠছে , আর অনুসরণ করতে সুবিধাই হচ্ছে।
কি ঘটে চলেছে সে সম্পর্কে টিগের কোন ধারণাই নেই, কিন্তু ও এটা জানে ওই ক্লাউন গুলি দানবীয়
আর খুনি ! আর অভিজ্ঞতা থেকে টিগ জানে ওগুলোর কোনটাকে খুব বেশি কাছে আসতে
দেয়াটা বেশ বিপজ্জনক ।

আমাদের ওই ক্লাউনটাকে খুঁজে বের করে মেরে ফেলতে হবে, আর তারপর আমাদেরকে জেলের
ভেতর গিয়ে ওই বালের ক্লেগের কাছ থেকে কিছু সত্যি কথা টেনে বের করতে হবে !

হুম, এটা একটা প্ল্যানের মতো শোনাচ্ছে বটে, টিগ বারবার পেছনে তাকিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিচ্ছিল
পিনাট পেছনে আছে কি-না । ডেপুটিও এখন ওর মতোই তু ষারে প্রায় ঢেকে গেছে, কিন্তু ও
61

এখানেই আছে আর সেটাই হলো সবচেয়ে বড় ব্যাপার ! ওরা এখন খেলার মাঠ ছেড়ে পার্কে র
মেইন অংশে চলে এসেছে। তু ষার ওদের চারপাশে নানারকম আকৃ তি তৈরি করে নেচে চলেছে,
আর যেন ষড়যন্ত্র করছে ওদের চিরতরে বরফ সমাধি দিয়ে দেয়ার। বাতাস ক্রমাগত গর্জ ন করে
চলেছে, কখনও এটা ফিসফিস কথার মতো লাগছে, আর কখনও লাগছে রাগী চিৎকারের মতো !
টিগের মুখটা পুরানো রাবারের মতো লাগছিলো আর হাত পায়ের জয়েন্টগুলি সব জমে গেছে, ও
জানে এটাও বেশিক্ষণ স্থায়ী হবেনা, কারণ হাইপোথারমিয়ার একটা বাজে অভ্যাস আছে চু পচাপ
সেঁধিয়ে যাবার, টেরই পাওয়া যায়না যতক্ষণ কোন স্থায়ী ক্ষতি না হয়ে যায় ! ও তাড়াতাড়ি
হাইপোথারমিয়ার জীবন হরণকারী লক্ষণগুলি মনে করার চেষ্টা করতে লাগলো – জবরজং অবস্থা,
দিকবিদিক ভু লে যাওয়া, ক্লান্তি আর সিদ্ধান্ত নিতে অপারগতা।

সর্বনাশ, ও অলরেডি হাইপোথারমিয়াতে আক্রান্ত হয়ে যায়নি তো !

হঠাৎ ও থেমে গেলো, কারণ মাটি থেকে রক্তের চিন্হ সম্পূর্ণ মুছে গেছে, আরে ! এই এখনই তো
ছিলো , সব জায়াগায় ছড়ানো ছিটানো। এখনই আবার কিছুই নেই ! ওর মনে হলো ওর মাথার
ভেতর কে যেন একটা পর্দা টেনে দিলো ! রাতটা আরও কালো হয়ে গেলো, তারপর সাদা, তারপর
আবার ধূসর ! ঠিক কবরের ফলকের মতোই ধূসর, যতটা না ঠাণ্ডায়, তারচেয়ে বেশি ভয়ে কাঁপতে
কাঁপতে ভাবলো টিগ !

“উইল ?” পেছন থেকে ডাকল পিনাট।

টিগ ওর ধ্যান থেকে উঠলো, ওর মনে হল এই ঝড় ওকে সম্মোহিত করে ফেলছে, ওকে এটা
থেকে বের হতেই হবে, ভাবল সে ।

পিনাট আরেকদিকে ফ্ল্যাশলাইট ফেলে টিগকে দেখালো রক্তের নতু ন দাগ, বরফের ওপর যিগয্যাগ
করতে করতে সামনে মিলিয়ে গেছে। টিগের মনে হল ওগুলি অনুসরণ করতে করতে ওরা একটা
ফাঁদের ভেতরে না পা দিয়ে ফেলে ! কিন্তু আবার ওর মনে হলো এ কাজ করার জন্য ক্লাউনটা যথেষ্ট
ক্লান্ত। টিগদের উচিত ওটাকে ট্র্যাক ডাউন করে ওকে লড়াইতে জড়িয়ে নেয়া, তাহলে ওটার ক্ষত
62

গুলি সারার সুযোগ পাবে না , আর ওটাকে মেরে ফেলা সহজ হবে। রক্তের দাগগুলি পার্ক ছেড়ে
বেরিয়ে সাইডওয়াক ধরে সামনে এগিয়ে গেছে, সাথে আশেপাশের অনেকগুলি বরফের টিলা
ভেঙ্গে ছড়িয়ে পড়ার চিন্হ। আরেকটু কাছ থেকে দেখার পর দেখা গেলো, পদচিন্হগুলি আর
অসামঞ্জস্যপূর্ণ আর ব্যাথায় কাতর কোন জীবের নয়, বরং বেশ সোজাসাপ্টাই দেখা গেলো – আর
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় --- পায়ের ছাপগুলি আর একটার নেই, ওগুলি দুইটা পায়ের !

“এটা স্রেফ হতেই পারে না !” পিনাট চিৎকার করে উঠলো !

কিন্তু এটা তাই, টিগ ভাবল তিক্তভাবে, জীবতাত্ত্বিকভাবে যতই অসম্ভব আর অভূ তপূর্ব হোক না
কেন , ক্লাউনটার আরেকটা পা গজিয়েছে ! ওরা আরেকটু পিছিয়ে গিয়ে দেখলো ওগুলি একই
জিনিসের তৈরি ছাপ কিনা ! হ্যাঁ, ওগুলি একই জিনিসের।

“ও কিভাবে এটা করলো ?” হতভম্বভাবে জিজ্ঞেস করলো পিনাট ।

টিগের কাছে এটার কোন উত্তর নেই, কিভাবে থাকবে ? ওর হঠাৎ অনেক আগে দেখা একটা
ওয়্যারউলফ মুভির কথা মনে পড়লো যেটাতে মানুষের পায়ের ছাপ বদলে হঠাৎ কু কু রের ছাপ হয়ে
গেছিলো ! ওরা ছাপগুলি অনুসরণ করতে করতে থামলো গিয়ে – ‘ব্রোকেন বটল ’ বারের পাশের
দরজার সামনে !

“চলো ওই কু ত্তার বাচ্চাটাকে পাকড়াও করি !” গজরালো টিগ।

ক্রো ফলস , ক্রো ফলস, ক্রো ফলস !

এটা পোস্টকার্ডে ছাপানো সেইসব ছোট ছবির মতো শহরগুলির একটা, গ্রীষ্মে সতেজ সবুজ আর
শীতে রুপালি সাদা , ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা খেলে বেড়ায় চারপাশে আর পেনশন ভোগী বুড়ো
বুড়িরা চারদিকে আরাম করে ঘুরে বেড়ায়। নদীগুলি শান্ত , পরিষ্কার আর চারদিকে ছড়ানো, বাতাস
শান্তভাবে বয়ে যায় চারপাশে। ক্রো ফলস, শান্ত সমাহিত শহরের মূর্ত প্রতীক।
63

একই সাথে, এটা বাজে জায়গাও বটে ! একটা কানাগলি যেটাতে তোমার আশা আর স্বপ্ন মুখ
থুবড়ে পড়ে ! এটা একই সাথে নরম , উষ্ণ কম্বলের মতো আবার বিশুদ্ধ প্লেগের মতো , যেটার
সংস্পর্শে তোমার কাছে যা কিছু গুরুত্বপূর্ণ সব কিছুই নির্জীব হয়ে মৃত্যুবরণ করে।

অন্তত ট্যাক্সি–এ-গো–গো কোম্পানির মালকিন ফ্লো হ্যামিঙ্গার সকালের জন্য অপেক্ষা করতে
করতে এগুলি ভাবতেই পছন্দ করে। আরও ভাবতে পছন্দ করে কোন রূপকথার রাজপুত্রের মতো
কেউ এসে এই হতচ্ছাড়া শহরটা আমূল পাল্টে দেবে, আর ও নিজে সকালবেলা ঘুমাতে যেতে
পারবে মিঃ মরটিমার এর কথা না ভেবে । কত ভালোই না হতো ওরা দুজনে যদি অবসর গ্রহণের
পর মেক্সিকোর কোন শহরে বাকী জীবন কাটিয়ে দিতে পারতো !

এখন এগুলি নিয়ে ভাবতে ভাবতে ফ্লো’র দুই চোখ জলে ভিজে এলো, ওর বন্ধু বান্ধব আর
অন্যান্য পরিবার পরিজন অবশ্যই আছে , কিন্তু অন্তরের গভীরে ও এখন অনেক একা, একটা
মরুভূ মির মাঝখানে পরিত্যাক্ত একটা ঘরের মতো। দিন যায়, চু ল ধূসর থেকে ধুসরতর হয়,
বলিরেখা গভীরতর হতে থাকে।

মরটিমার, সে বিষণ্ণ মনে ভাবতে থাকে ,ওহ মরটিমার !

সকালটা মনে হচ্ছে হচ্ছে অনন্তকাল দূরে। অন্ধকার এখনও রাজত্ব করছে আর ক্রো ফলসকে মনে
হচ্ছে একটা নিরানন্দ পতিত ভূ মি । বাইরে বুনো মোষের মতো গর্জাচ্ছে তু ষারঝড়, আর বিল্ডিংটা
সেই ভীষণ ঝড়ে কেঁ পে কেঁ পে উঠছে।

ফ্লো স্টানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলো, কিন্তু ঝির ঝির শব্দ ছাড়া আর কিছু শুনল না !
ওর সঙ্গও অবস্থার কিছুটা উন্নতি করতে পারতো। ও ওর রুপকথার গল্প আর খুনি ক্লাউনদের গল্প
দিয়ে অন্তত ভেতরের দুঃখটা চাপা দিয়ে রাখতে পারতো ! ওর হঠাৎ করেই মনে হলো , ট্যাক্সি
স্টেশনটা একটা অন্ধকার ছায়ার সমষ্টিতে অন্ধকার খাঁচা , যেখানে আলোর একমাত্র উৎস হলো
ওর ডেস্কের আলোটা! ও যে রুমে বসে আছে, সেটা অনেকটা অন্ধকার সমুদ্রে একটা লাইট
হাউসের মতো জেগে আছে অন্ধকার রাতে।অর স্বামী এটাকে বলতো ‘দি ট্যাক্সি স্টেশন ’। এটা
64

একটা ছোট্ট বিল্ডিং যেটা কিনা একসময় স্ন্যাক বার ছিল , এখনও , কয়েক দশক পরেও, বৃষ্টির
সময় ফ্লো এখানে প্রায় মিলিয়ে যাওয়া ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের গন্ধ পায় ! যেখানে এখন ডেস্ক আর অফিস
কেবিনেট শোভা পাচ্ছে, সেখানেই আগে বার আর চেয়ার শোভা পেতো। আগেকার কিচেন রুমটা
এখন স্টোর রুম হিসাবে ব্যাবহার হয়, সেখানে বিভিন্ন জায়গাতে এখনও গ্রিজের দাগ লেগে থাকা
দেখা যায়। ওপরের ফ্লোরের এপার্ট মেন্টে ফ্লো থাকে। ওখানে আছে একটা সেলার, যেটা ও প্লেগের
মতোই এড়িয়ে চলে, আর ভয় পায় মাকড়শার জালকে। সে অবাক হলো এটা ভেবে , যে কোণায়
কোণায় ছড়িয়ে থাকা ওইসব ভয় লাগানো ছায়াগুলি ও এতদিন দেখতেই পায়নি কেন !

এখন থামো তো ! এটা সম্পূর্ণ হাস্যকর, তু মি স্টানের বুলশিট গুলো বড় বেশি সিরিয়াসলি নিয়ে
ফেলেছ !

তবুও, ও উঠে সামনের দরজাটা লক করে দিলো, ওর এরপর মনে পড়লো পেছনের দরজাটা কি
তালা মারা আছে ? ও তাড়াতাড়ি, প্রায় দৌড়ে ছোট হলওয়ে পার হয়ে পেছনের দরজাটার সামনে
এলো, ওহ ! থ্যাংকস গড ! ওটা তালা মারা আছে ! “ওহ ! ফ্লো , তোমার কি হয়েছে ?! ”
নিজেকেই বলল সে।

অধ্যায় ১৯

ফ্লো ওর নার্ভাস সিস্টেমের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছে, ও বাথরুমে পৌঁছে বসলো সেখানে । ওহ !
ওই যে, কে জানি সামনের দরজার বেল বাজাচ্ছে ! এসে গেছে, অন্ধকারের প্রতিভূ এসে গেছে !
ওর হঠাৎ মনে হলো উত্তেজনার বশে ও ভু ল শুনলো না তো !

নাহ ! ওই যে , আবার বেল বাজাচ্ছে, স্টান নয়তো ? না, ও হলে ঢোকার আগে একটু নাটক করার
চেষ্টা করে “বাড়িতে কেউ আছো ?” বা এই ধরণের কিছু না কিছু বলে ।

ওটা স্টান নয়, ওটা অন্ধকারের প্রতিভূ , অনেক কষ্টে ফ্লো ‘এটা কি তু মি, স্টান ?’ বলে চেঁ চিয়ে ওঠা
থেকে নিজেকে বিরত রাখলো । এবার ডোরনবগুলি কেউ টানছে না, রীতিমতো নিষ্ঠু রভাবে
65

ঝাঁকাচ্ছে ! কেউ দরজাটা সর্বশক্তি দিয়ে টান দিলো, তারপর একটা অদ্ভু ত বেঁকে যাওয়ার শব্দের
সাথে ঝনঝন একটা শব্দ , তারপর ধাতব কিছুর মেঝেতে পড়ার শব্দ। ওহ ! তালাটা , তালাটা
কেউ ছিঁ ড়ে ফেলেছে।

এটা কিভাবে হয় ! কার এতো শক্তি গায়ে ? ফ্লো বাথরুমে বেকায়দাভাবে বসে থাকতে থাকতে
শুনতে পেলো সামনের দরজাটা ভেঙ্গে পড়ার শব্দ। ওর হার্ট প্রায় ফেল করে যায় আর কি !
কিছুক্ষণ নিজের হার্টে র শব্দ ছাড়া সে আর কিছুই শুনতে পেলো না ! বাস্তব আর পরাবাস্তবতার
মাঝখানে যেন ঝু লে রইলো সে, এর মাঝেই শুনতে পেলো ভেজা জুতোর ‘ট্যাপ ট্যাপ ট্যাপ’ শব্দ
! একটা খোলা কবরের মতো দুর্গন্ধ বাড়তে বাড়তে অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেলো, একইসাথে
একটা গুণগুণ শব্দ শুনতে পেলো ! সুরটা ফ্লো এর অনেক পরিচিত লাগলো, ও এটা শুনতো
যখন ও ছোটবেলাতে সার্কাসে যেতো, তখন। জুতার শব্দটা ওর পাশের বাথরুম বুথে এসে
থামলো।

হঠাৎ ও শুনতে পেলো একটা অনেক লম্বা দীর্ঘশ্বাসের শব্দ , সাথে একটা ছড়ছর শব্দ হতে শুরু
করলো । ব্যাটা প্রস্রাব করতে শুরু করেছে ! এটা অনেকটা ক্যান্সারে খাওয়া ব্লাডারের পচা মুত্রের
মতো গন্ধ যুক্ত, অথবা পচতে থাকা কোন লাশের মতো !

ফ্লো ওর হাতের উলটো পিঠ কামড়ে ধরে থাকলো চিৎকার করা থেকে নিজেকে ঠেকিয়ে রাখলো।
আর ওদিকে ওই হতচ্ছারা প্রস্রাব করেই চলেছে, করেই চলেছে ! গন্ধটা সমস্ত বাতাস দূষিত করে
তু লল, কোন মানুষের ব্লাডারে তো এতো প্রস্রাব থাকার কথা নয় ! এবার ব্যাটা দেয়ালেও প্রস্রাব
করা শুরু করেছে , ঠিক যেন কোন কার ওয়াশে কার ওয়াশ করতে লেগেছে !

ফ্লো’র মাথা নীরব চিৎকারে ভরে গেলো, ভীষণ বাজে গন্ধটা ওর নাক বন্ধ করে দিয়েছিল ইতিমধ্যে,
ও আর সহ্য করতে পারলো না, ওর পুরো দুনিয়া অন্ধকার হয়ে এলো।
66

একটু পর, জ্ঞান ফিরে এলে ফ্লো খুবই সন্তর্পণে দরজার খিল খুলে বাইরে বের হয়ে এলো। সব
সাহস একত্র করে তাকালো মেঝের দিকে , ও দেখতে পেলো মেঝেতে কিম্ভূ ত আকৃ তির বড়
জুতোর পায়ের ছাপ, বাথরুম থেকে হলরুমের দিকে চলে গেছে !

এই পায়ের ছাপ, এই ঝড় ! দরজার তালাগুলি মেঝের ওপর পড়ে আছে, স্ক্রু গুলি সহ।

কেউ এরকম শক্তিশালী হতে পারেনা !

ওর মনে পড়লো স্টান ওকে ক্লাউনগুলির ব্যাপারে কি বলেছিল, কারণ কিম্ভূ ত আকৃ তির বড়
জুতোর পায়ের ছাপগুলি একমাত্র অতিরিক্ত বড় ক্লাউনেরই হতে পারে !

হুম, হতেই পারে, এখন ফ্লো কি করবে , ও কি পায়ের ছাপগুলো অনুসরণ করে অনুপ্রবেশকারীর
মুখোমুখি হবে, নাকি পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যাবে ? সোয়েটার আর সোয়েট প্যান্ট পড়ে ৬৩
বছরের শরীর নিয়ে এই তু ষার ঝড়ে বেরোবে ? যুক্তি তো সেটা বলে না !

জাহান্নামে যাক যুক্তি ! ও ওর ইন্সটিঙ্কট অনুসরণ করলো আর পেছনের দরজার দিকে এগিয়ে
গেলো । ও ওটা খুলে ঠেলে বাইরে বেরোতে চাইলো, কিন্তু একি ! ওটা মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার
খুললো, কারণ ওটার পেছনে জমে যাওয়া তু ষারের মোটা দেয়াল । ফ্লো সর্বশক্তি দিয়ে দরজাটা
খুলতে চেষ্টা করলো, কিন্তু আর কয়েক সেন্টিমিটার গিয়ে ওটা একদম অনড় হয়ে পড়লো ।

হঠাৎ হলওয়েটা ভরে গেলো বাসী মাংসের গন্ধে !

ওহ ডিয়ার গড ! প্লিজ না !

ও ঘুরে তাকালো আর, আর একটা ক্লাউনকে ঠিক ওর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো। ওর
চেহারা থেকে সমস্ত রক্ত সরে সাদা হয়ে গেলো। ওটা...... ওটা অবশ্যই একটা পুরুষ, কমপক্ষে ছয়
ফিট লম্বা, একটা আপ্রনের মতো জমকালো পোশাক গায়ে যেটার সামনে বিরাট বিরাট লাল
ফু টকি। কালো আর লাল স্ত্রাইপ দেয়া মোজা পড়ে আছে। পুরো আউটফিটটা মজারই দেখাতো
যদি না ওটার মোটা মোটা হাতের আঙ্গুলে বিরাট নখগুলি না থাকতো, আর সেগুলিতে রক্ত লেগে
67

না থাকতো ! মাথাটা পুরোপুরি ন্যাড়া, নাকটা চেরি টম্যাটোর মতো লাল টকটকে, ঠোঁটগুলি কালো
কু চকু চে আর চোখগুলি দেখে মনে হচ্ছে মাকড়শার ডিম ! ওগুলিতে কোন পাতা নেই কিন্তু ফ্লো
পরিষ্কার বুঝতে পারছিলো ওটা ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। ফ্লোর ইচ্ছা হচ্ছিলো চিৎকার দেয়, কিন্তু
ও জানে এতে কোন লাভ নেই ! ক্লাউনটা ধীরে ধীরে ওর দিকে এগিয়ে আসছে, ওটার ঠোঁট ফাঁক
হয়ে বেরিয়ে আসছে বাঁকা হলুদ আর বড় বড় দাঁত, ঠিক কমিক্স বুকে থাকা কোন দানব বা নেকড়ের
মতো। ওগুলি চকচক করছে লালার কারণে, চিবুক বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে ঠিক যেন জলাতঙ্ক
আক্রান্ত কোন কু কু র ! ক্লাউনটা ওটার থাবা চালালো , কপাল থেকে চিবুক পর্যন্ত নিখুঁত চারটা
আড়াআড়ি কাটা দাগ তৈরি হলো ফ্লো এর মুখে। ক্লাউনটা ওটার শক্তিশালী হাত দিয়ে ওকে
জড়িয়ে ধরে মাটিতে পেড়ে ফেললো। ফ্লো এর কাছে মনে হলো , ক্লাউনটার পোশাক যেরকম
ভেলভেটের মতো দেখাচ্ছিল, ওটা আদৌ সেরকম না তো ! ওটা ঠিক মাংসের মতো, জীবন্ত,
তেলতেলে মাংসের মতো। ওটা ওকে বেশ আশ্চর্য করে তু লল, আর ওটাই ওর জীবনের শেষ
অনুভূ তি ছিলো , কারণ এর পর ক্লাউনটা ওর ক্যারটিড আর্টারিতে দাঁত বসিয়ে দিলো। ওটা চু ষেই
যেতে লাগলো , চু ষেই যেতে লাগলো যতক্ষণ না ওর তৃ প্তি আসে। ওটার সাদাটে চোখগুলি প্রথমে
গোলাপি বর্ণ ধারণ করলো, তারপর রুবির মতো লাল ! শেষমেশ বেগুনি যখন হয়ে গেলো, ফ্লো কে
গ্রীষ্মের দিনে খালি করা একটা বিয়ারের বোতলের মতো ছুঁ ড়ে ফেললো ক্লাউনটা। ফ্লোর অবশিষ্টের
দিকে তাকালো ক্লাউনটা, তারপর হাসলো , নিষ্ঠু র হাসি।

তারপর ফ্লো’র শরীরটা ছেঁ চড়ে নিয়ে চললো মেঝের ওপর দিয়ে। ক্লাউনটা এতো রক্ত খেয়েছে যে
ওগুলি ওটার নাক আর চিবুকের কোণা দিয়ে বেয়ে পড়ছিলো। শরীরটা নিয়ে বেসমেন্টে নেমে এলো
সে, ফ্লো র শরীরটা বিছালো মেঝের ওপর একটা কম্বলের মতো। একটা তৃ প্তির ঢেঁ কু র তু ললো
দানবটা, তারপর শুয়ে পড়লো ফ্লো’ র দেহাবশেষের ওপর, একটু পরই ওটার নাক ডাকার শব্দ
শোনা গেল, ঠিক যেন কোন গৃহস্বামী ক্রিস্টমাসের ভরপেট ডিনার খেয়ে ঘুমিয়ে গেছে !

অধ্যায় ২০
68

এই নীরবতা স্রেফ বধির করে দেয় ! ভাবল মারগট সিভারস , ঘুম ভেঙ্গে চোখ মেলে, আরও
অবাক হল ভেবে যে কিসে তার ঘুম ভেঙ্গেছে। বাইরে এবার সে শুনতে পেলো তু ষার ঝড়ের শব্দ,
শেষ হতে না চাওয়া হিস হিস আর গর্জ নের শব্দ ! এমনকি গরম কম্বলের নিচেও ও ঠাণ্ডা টের
পাচ্ছিলো।

কিন্তু আমি কোন কিছু বা কারো জন্যই উঠতে পারবো না ! ভাবল সে। এটা মনে আসতেই সে
আবার গভীর ঘুমে তলিয়ে যেতে লাগলো।

বিশ মিনিট পর আবার জেগে গেলো সে, নাহ ! এখানে কোন একটা গণ্ডগোল আছে ! যদিও ও
পরিষ্কার জানেনা সেটা কি, কিন্তু সে মোটামুটি শিউর এখন। সম্ভবত ওর জমজ বাচ্চাদের কোন
সমস্যা । ওর মুখের ভেতরটা শুকনো হয়ে যাওয়াতে বিছানার পাশের বোতলের দিকে হাত
বাড়ালো পানি খাওয়ার জন্য। কিছুক্ষণ নীরব থেকে পুরো ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করলো , কিন্তু
ওর ইনটু ইশন বেশ বিরক্ত করছে ওকে , অগত্যা একটা নিঃশ্বাস ফেলে বিছানা থেকে নামলো সে।
প্রথমে , পা টিপে টিপে সে দেখে আসবে জমজ বাচ্চা দুইজন ঘুমাচ্ছে কিনা, তারপর দেখবে ফায়ার
প্লেসে কাঠ ঠিকমতো দেয়া আছে কিনা যাতে ওটা পুরো ঘর ঠিকমতো গরম করতে পারে। অন্য
সব কিছু তেমন গুরুত্ব বহন করেনা ওর কাছে !

বাচ্চাদের ঘরের কাছে যেতে যেতে ওর মনে হল, ও আর বাচ্চারা ছাড়াও এখানে আরও কেউ
আছে, সে হলওয়ের লাইটটা জ্বালাতে জ্বালাতে আপাদমস্তক শিউরে উঠলো একটু , হুম, এখানে
নিশ্চয়ই কেউ আছে যার এখানে থাকার কথা না !

“জোনাথন ?” সে প্রায় ফিস ফিস করে বলে উঠলো, কারণ সে চায়না কোন অনাহূত আগন্তুকের
মনোযোগ তার ওপর পড়ু ক। হঠাৎই ওর দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এলো, ওর শরীরে মনে হচ্ছিলো বেশ
জ্বর উঠে গেছে, ওর শ্বাস নিতেই কষ্ট হচ্ছিলো। একটু পর, আবার সব স্বাভাবিক হয়ে এলো।

শুধু, মিটার তিনেক দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ওই ক্লাউনটা বাদে !!


69

একটা ক্লাউন ? ওদের বাড়িতে ? মধ্যরাতে ??!!!

তাহলে কি ওর স্বামী ওর সাথে কোন প্র্যাঙ্ক করার চেষ্টা করছে ? ওর কি তবে হাসা উচিত ?

বদলে, ও গলা ঠেলে উঠে আসা একটা চিৎকার আটকানোর প্রাণপণ চেষ্টা করতে লাগলো !
কারণ এই ক্লাউন টা মজার বা কিউট কিছুই না , এটা দেখতে বেশ ভয়ংকর ! ওটা একটা সাধারণ
দেখতে পোশাক পরে আছে, আর সেটা ভর্তি হয়ে আছে রক্তে ! অল্পসল্প নয়, বেশ অনেকখানি
রক্ত ! ওটার চিকন চু লগুলি কমলা রঙের, ঠোঁটগুলি টকটকে লাল , চোখগুলি হলুদ রঙের বর্ডার
দেয়া !

ওটা মারগটের দিকে তাকিয়ে দাঁত দেখিয়ে বিশাল একটা হাসি দিলো ! মারগটের ঘুম ঘুম ভাব এক
নিমিষে উধাও হয়ে গেলো, সেই জায়গা দখল করে নিলো নিখাদ ভয় ! ও চিৎকার করে পালিয়ে
যাওয়াই পছন্দ করত,কিন্তু ক্লাউনটার খুব কাছেই ঘুমাচ্ছে মিয়া আর মিচেল, ওদের দুই জমজ ।

মারগট অনেকক্ষণ ধরে চেপে রাখা চিৎকার বেরিয়ে আসতে দিলো, যখন সে দেখলো ক্লাউনটা
একটা ক্রূ র হাসি হেসে মিয়াকে হাতে তু লে নিলো, ওটার পিচ কালো ভ্রু উপরে উঠে গেলো,
তখনই মারগট বুঝতে পারলো ওটা এখনই খারাপ কিছু করতে যাচ্ছে। সে চিৎকার করে
ক্লাউনটাকে গালাগাল করতে লাগলো । ওসবে দানবটা কান দিলে তো ! ওটার মাথাটা একটা
ক্র্যাক শব্দ করে দু ফাঁক হয়ে গেলো, আর ভেতর থেকে বের হয়ে এলো কিলবিলে জোঁকের মতো
গোলাপি মাংসল ঘিনঘিনে কিছু বস্তু !

মিয়াকে ঠিক একটা গামছা নিংড়ানোর মতো করে প্যাঁচাতে লাগলো ক্লাউনটা, দূর থেকেও মারগট
শুনতে পাচ্ছিলো ওর জয়েন্টগুলি ডিসলোকেট হতে আর লিগামেন্ট গুলি ছিঁ ড়ে যেতে ! পচা
রাবারের মতো শব্দ করে শরীরটা দুমড়ে মুচড়ে ফেলছিল দানবটা, পাগুলি ঘুরিয়ে মাথার দিকে,
হাতগুলি কর্ক স্ক্রু র মতো ঘুরিয়ে পেছনে নিয়ে যেতে লাগলো ! এদিকে মারগটের হৃদয়েও একই
রকম কষ্ট হচ্ছিলো এই দৃশ্য দেখতে দেখতে। মিয়াকে অবহেলাভরে ছুঁ ড়ে ফেলে মিচেলকেও একই
70

অবস্থা করলো দানবটা, আর চিৎকার করার শক্তি ফু রিয়ে যাওয়া মারগট দেখতে পেলো এবার
ক্লাউনটা এগিয়ে আসছে ওর দিকে, অমোঘ নিয়তির মতো !

“এখন এটা শেষ করো তাড়াতাড়ি ” লাইল স্তাবস ওর স্ত্রীকে বলল “তারপর চলো ”

“হ্যাঁয় হ্যাঁ......” অস্পষ্টভাবে বলল লুয়ান।

এই ভয়টাই পাচ্ছিলো স্টান, কারণ এই দুজন যখনই বাইরে যেতে চাইবে, তখনই ওকেও ওদের
সাথে যেতে হবে, আর ও ভালো করেই জানে বাইরে ওদের জন্য কি অপেক্ষা করে আছে ! ও বড়
বড় নিঃশ্বাস নিয়ে ভয় তাড়ানোর জন্য চেষ্টা করতে লাগলো, কোন এক সময় এসব নিয়ে তাকে
বেস্টসেলার একটা বই লিখতে হবে, তাই নিজের ভয়টাকে নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরী ।

লুয়ান বাকি হুইস্কিটা গলা দিয়ে নামিয়ে ঠকাস করে বারের ওপর নামিয়ে রেখে বলল “আমি
ভাবছি ওই বেচারা রিচির কথা, যার মাথা কিনা কেটে ফেলা হয়েছে ! ” প্রতি রাতের মতোই
অ্যালকোহলের পরিমাণ বাড়ার সাথে সাথে সেও বেশ ভাবপ্রবণ হয়ে যায়, যেমনটা হচ্ছে আজকে
“এটা খুউউউব খারাপ, একটা খুনি বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর আমাকে রক্ষা করার মতো কেউ
নেইইই !”

“ভয় পেওনা , লুয়ান, লাইল আছে তোমাকে রক্ষা করার জন্য ” বার টেন্ডার ব্রিক কথা বলে
উঠলো।

লুয়ান হাসল “হাহ ! ওর ঘুষি যদি ওর বিছানার পারফরমান্সের মতো হয়, তবেই হয়েছে !”

লাইল, অনেকগুলি ম্যানহাটান বিয়ার খেয়ে গভীর তন্দ্রাচ্ছন্ন, এবার জেগে উঠলো “ওহ , শাট
আপ ! বুড়ি ডাইনী ! এগুলো বলার আগে নিজের পায়ে চিমটি কাট, নাহলে আকাশে উড়ে যাবি !”

“দেখো আমার সাথে কিরকম আচরণ করছে ” বলেই চোখের মাস্কারা গলানো কান্না শুরু করলো
লুয়ান।
71

ব্রিক স্টানের দিকে তাকিয়ে একটা অর্থপূর্ণ চাহনি দিলো, যেন বলতে চায় এই দুইটারে এখন এখান
থেকে নিয়ে গেলেই ভালো হয় ! একটা শ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালো স্টান , পরনের প্যান্টটা আরও
একটু টাইট করলো কোমরের ওপর “ ঠিক আছে, বাচ্চারা !” বলল সে স্তাবসদের , যারা কিনা সেই
১৯৬৩ সালে বিয়ের পর থেকে একে অপরের ওপর সমানে আক্রমণ চালিয়ে আসছে “চলো
বেরিয়ে পড়ি ঝড়ের অবস্থা আরও খারাপ হবার আগে !”

ও ওদের দুজনকে দরজার কাছে নিয়ে গিয়ে কোট আর বুট পরতে সাহায্য করলো, যাতে বেশ
খানিকটা সময় চলে গেলো। দরজা খুলে বাইরে বেরোবার সময় স্টান লুয়ানের হাত পেঁচিয়ে ধরল,
অস্ফু টভাবে ধন্যবাদ দিলো লুয়ান “ধন্যবাদ, আমি পড়ে যাবো বলে ভয় পাচ্ছিলাম !”

সাবধানে ওকে জিপের কাছে নিয়ে পেছনের সিটে বসিয়ে দিলো স্টান, চারপাশে তু ষার ঝড় সমানে
ঘুরে ঘুরে গুঙিয়ে যাচ্ছিলো, তু ষারকণা গুলি ঘুরে ঘুরে নাচছিল দরবেশদের মতো, আর স্টান
চারপাশে ছায়াচ্ছন্ন লম্বা নখ আর লাল চোখের দানবদের দেখতে পাচ্ছিলো ক্রমাগত ! অল্পক্ষণ
পড়েই সে নিজে জিপের ভেতর যখন উঠলো , তখন ওর ঘাড়ের পেছনের চু লগুলি খাড়া হয়ে
উঠেছিল , আর ও ভয়ানক কাঁপছিল আর গভীর নিঃশ্বাস নিচ্ছিলো ।

“তু মি ঠিক আছো ?” পেছন থেকে বলল লাইল, ব্যাটা জাতে মাতাল তালে একদম ঠিক !

“হুম, সব ঠিকই আছে !”

অধ্যায় ২১

ওহ যীশু ! সামনে একবার চেয়ে দেখো !

মাইক জুতেমা, ব্রিকের ভাই, প্লাম স্ট্রিট আর সেন্ট্রাল এভিনিউর মাঝখানে ওর স্নো-প্লাউটা দাঁড়
করিয়ে ভাবলো । এখন কেবল রাত দুইটা বেজেছে , এর মধ্যেই রাস্তা আবার সম্পূর্ণ তু ষারে ঢেকে
গেছে, মনে হচ্ছে এখানে কখনও কোন রাস্তাই ছিলো না ! যদ্দুর বোঝা যাচ্ছে, তু ষার ঝড় আরও
72

খারাপ রূপ নেবে, ওর গাড়ির হেডলাইট একটা রূপার ডলারের বেশি জায়গা কভার করতে
পারছে না এরই মধ্যে !

“এটার কোন মানেই নেই ” ঊর্ধ্বশ্বাসে বলে উঠলো সে।

ও ঠিক করলো , আজকে শেষবারের মতো সেন্ট্রাল এভিনিউ দিয়ে চালিয়ে যাবে সে, এর বেশি
কিছু করাটা হবে স্রেফ পেট্রোলের অপচয় ! বাইরে , বাতাসের শব্দ ক্রমশ বেড়েই চলেছে, মাইক গত
বেশ কয়েক বছরের ঝড়ের কথা মনে করার চেষ্টা করলো। এটা ওর অভিজ্ঞতার মধ্যে সবচেয়ে
খারাপ গুলির একটা । পাবের ভেতরে বুড়ো লোকদের বলা ঝড়ের গল্পগুলি মনে করার চেষ্টা
করলো, অবশ্য ওরা ওপরেই থাকতে চাইবে সবসময়। ওদের সময়কার সবকিছুই অনেক ভালো বা
অনেক খারাপ, নির্ভ র করে আপনি কি নিয়ে কথা বলছেন সেটার ওপর ! হঠাৎ , গাড়ির পাশে
কিছু একটা ধাক্কা লাগার শব্দ শোনা গেলো। ওরকম আওয়াজ হতেই পারে, ভাবল মাইক, কারণ
তু মি সবসময় বরফের টু করো এদিক ওদিক ছুঁ ড়ে মারছ। গ্যাস পেডাল থেকে পা সরিয়ে একটু
থমকালো মাইক, শুনলো চু পচাপ। কই ! কিছুই না ! এগিয়ে চলো তবে !

ওকে আর মিনিট বিশেক কাজ করতে হবে, তারপরই মিউনিসিপাল গাড়ির ডিপোতে গিয়ে এক
কাপ গরমাগরম কফি খেতে পারবে , চিন্তাটা মাথায় আসতেই মুচকি একটা হাসিতে ভরে গেলো
মাইকের মুখ, চিন্তাটাই ওকে উৎফু ল্ল করে তু লল বেশ ! তখনই ঠিক যেন দরজার ওপর কে যেন
ধাম ধাম করে বাড়ি দিতে লাগলো ! কেউ এই তু ষার ঝড়ের ভেতর স্নো-প্লাউয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে
ছুটছে, এই চিন্তাটাই তো অযৌক্তিক। যাই হোক চিন্তাটা ওর মুখ থেকে হাসিটা মুছে দিলো, সে
জানেনা ও আসলে কি নিয়ে ভয় পাচ্ছে, কিন্তু এই অবর্ণনীয় ভয়ই ওকে বাঁচিয়ে রেখেছে এতদিন।
ও গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিলো, জানে এটা বেশ বিপজ্জনক , কিন্তু ও সেই অজানা ভয়ের উৎস
থেকে যত দ্রুত সম্ভব পালাতে চায় ! আবার যখন ওই শব্দটা হলো , ও নিঃসন্দেহ হলো যে বিপদটা
আছে ! কিন্তু সাইডের জানালা দিয়ে কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না ।

ঈশ্বরের দোহাই ! অত জোরে চালিও না !


73

ওটা ওর ভেতরের যুক্তিবাদী অংশের কথা। ওর মেরুদণ্ড দিয়ে বরফ ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে যাচ্ছে,
দরজার বাড়িটা আবার হলো , এবার মাইককে সিদ্ধান্ত নিতেই হবে, ও কি লেজ গুটিয়ে ওয়ার্ক শপের
দিকে পালাবে, নাকি এখানেই থেমে দেখবে আসলে ব্যাপারটা কি !

ও শেষমেশ গাড়িটা থামালো, সব সাহস একত্র করে দরজাটা খুলল , কিন্তু বাইরে প্রচণ্ড বরফ ঝড়
আর তু ষার কণার নাচানাচি, সাথে অদ্ভু ত কিছু রহস্যময় ছায়ার নড়াচড়া ছাড়া আপাতত কিছুই
দেখা গেলো না।

মাইক চাকা টাইট দেবার বড় রেঞ্জটা হাতে নিয়ে লাফিয়ে ক্যাব থেকে নামলো নিচে। ও ঈশ্বর!
ড্রাইভারের দরজার পাশের রাবার সিলটা লুজ হয়ে গেছে, সেটাই বাতাসে ঘুরে ঘুরে বাড়ি খাচ্ছে
দরজার সাথে। ওহ ! এই গল্পটা সতীর্থ ড্রাইভারদের সাথে করতে পারবেই না সে ! ওরা যতক্ষণ
ধারে পাশে থাকবে, ততক্ষণ এটা নিয়ে ঠাট্টা করতেই থাকবে।

কিন্তু হঠাৎ পেছনে আরেকটা নড়াচড়া টের পেলো সে ! চরকি কেটে ঘুরলো সে, কিন্তু কিছুই
দেখলো না। ডানে বামে ওপরে নিচে সব জায়গাতে দেখলো, কিন্তু কোথাও কেউ নেই !

“তু মি কি আমাকে খুঁজছ ? ” অদৃশ্য থেকে একটা কণ্ঠ বলে উঠলো, মাইক ভয়ে প্রায় চিৎকার
দিয়ে উঠেছিল ! যদি ওর গলা মরুভূ মির মতো শুকিয়ে না যেতো, তাহলে হয়তো চিৎকার দিয়েও
ফেলত । আগন্তুকের কণ্ঠ বেশ গভীর আর হিসহিসে ধরণের, এটা ওকে কেন জানি সাপের কথা
মনে করিয়ে দিলো।

এখন একটা শরীর ঝড়ের চাদরের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো, আর মাইক বুঝতে পারলো ওটা
একটা ক্লাউন ! একটা ক্লাউন ???!!! শতাব্দীর ভয়াবহতম বরফ ঝড়ের মধ্যে ওর সামনে কিনা
একটা ক্লাউন দাঁড়িয়ে আছে !! এই খারাপ আবহাওয়ার মধ্যেও ব্যাটা কিনা একটা সাদা
ভেলভেটের স্যুট পরে আছে , অর্ধেক কালো কালো ফু টকি অলা আর বাকি অর্ধেক কালো স্ত্রাইপ
অলা । মাইক বুঝতে পারছিলো না ও চিৎকার করবে নাকি হাসবে !
74

কেউ এখানে ওকে নিয়ে বাজে কোন রসিকতায় মেতেছে, আর এই বালের ক্লাউনটা সেটারই
অংশ!

“তু মি কে বটে ?” বলল মাইক রেঞ্জটা হাতের ভেতর ঘোরাতে ঘোরাতে, ওর হাত নিশপিশ করছে
ওটা ব্যাবহার করার জন্য।

ক্লাউনটা ওর দিকে এক পা এগোল, ওটা লম্বা ,লিকলিকে শরীরের অধিকারী। ওটার চেহারা মরা
মানুষের মতো সাদা, চোখগুলি গোলাপি আর চোখের চারপাশে কালো তারা আঁকা , মুখটা বেঁকে
আছে পৈশাচিক হাসিতে ! ওটার নাক বলতে কিছুই নেই, শুধু মরা মানুষের খুলির মতো একটা
কালো গর্ত !

“আমি মিস্টার স্কিন কোয়াব ” বলল ক্লাউনটা ওটার খড়খড়ে , ভয়ানক গলায় “আর আমি
তোমাকে খাবো !”

মাইক হাতের রেঞ্জটা সর্বশক্তিতে ক্লাউনটার মাথার ওপর নামিয়ে আনলো , ওটার মাথা ফেটে
কালো রঙের রক্ত বেরিয়ে এলো আর ওটার সাদা মুখে ছড়িয়ে গেলো ! ওটাই মাইকের দেখা
জীবনের শেষ দৃশ্য ছিল , ক্লাউনটার নখ ওর চোখের ভেতর পেরেকের মতো ঢু কে যাওয়ার আগ
মুহূর্ত পর্যন্ত !

অধ্যায় ২২

শেরিফের অফিসে, প্যাটি ওয়েল্যান্ড শুধু ভীতই না, বরং ভয়ানক একা আর হতাশও বোধ করছে
বটে ! ও এমনকি এটাও বুঝতে পারছে না এসব অনুভূ তি কোথা থেকে আসছে, কিন্তু ওরা ঠিকই
মনের ভেতর বাসা বেঁধে ওকে বিরক্ত করছে। অবশ্য মনের গভীরে ও ভালো করেই জানে এসব
কোথা থেকে আসছে, তু মি যতই ওটাকে স্থানচ্যুত করার চেষ্টা করো না কেন, দিন শেষে ওটা ঠিকই
ফেরত আসবে – অন্তত ওর মা তেমনই বলতেন। একটা হাসি মুখে ফু টে উঠতে না উঠতেই
75

আবার মিলিয়ে গেলো। ভেতরের সবকিছুই যেন সবশেষে একটা তলাবিহীন ব্ল্যাক হোলে পড়ে যায়
!

ওর মনে হলো যে ও যেন প্যানিক অ্যাটাকের শিকার হচ্ছে, বড় বড় নিঃশ্বাস নিয়ে ও এই অবস্থা
থেকে বের হতে চাইলো। ওর হৃৎপিণ্ড যেন পাগলা ঘোড়ার মতো রেস লাগিয়েছে, ও হাতের তালু
ঘামতে শুরু করেছে ! কিন্তু এটা শুধুই নার্ভে র খেলা নয়, এটার শেকড় আরও গভীরে প্রোথিত। ও
ওর বাস্তবতার বোধ নিয়েই সন্দিহান হয়ে পড়ছে, এমন কিছু অনুভব করতে শুরু করেছে যেগুলি
আগে কখনও অনুভব করেনি !

থামো ! ওর ভেতরের কণ্ঠটা ওকে কম্যান্ড করলো, এরকম করতে থাকলে কিছু ঘটার আগেই
তু মি উন্মাদ হয়ে যাবে !

দাঁড়াও, দাঁড়াও , একটা শব্দ শোনা যাচ্ছে না !

দুম, দুম , দুম !

ওর হৃৎপিণ্ড একটা বিট মিস করলো এই মনে করে যে ওটা বাইরের দরজার দিক থেকে আসছে ,
কিন্তু না ! ওটা আসছে ওর পেছনের সেলগুলি থেকে ! ও কয়েকটা গভীর শ্বাস ভেতরে নিলো
আর ফেললো, ওটা ওই উন্মাদ লোকটা যাকে পিনাট গারদে পুরেছে ! কি হয়েছে প্যাটির আজ ??

ওর রেডিও ছেড়ে যাওয়া উচিত না, কিন্তু আজ রাতে আর কিছু ঘটবে বলে মনে হচ্ছে না ! শহরটা
একটা কবরস্তানে পরিণত হয়েছে। সাথে সাথে ওর মনে হলো, ইশ ! এটা ও কি ভাবলো!

ওর মনে ক্ষণিকের জন্য একটা দৃশ্য ভেসে উঠলো – পাশাপাশি অনেকগুলি কবরের ওপর দিয়ে
যেন ভীষণ এক তু ষার ঝড় বয়ে চলেছে ! দুর্ভাগ্যবশত, ওটা সত্যিই সে রাতের ক্রো ফলসের
প্রকৃ ত চিত্রই ছিলো !

ও ইতস্তত করতে করতে পেছনের সেলগুলির বারান্দাতে চলে এলো, ওগুলির মধ্যে কেবল
একটাই আজ ভর্তি আছে। ওখানে বসে কয়েদি ওর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে, ওর চোখের
76

চারপাশে কালো গোল দাগ, রাতে ভালো ঘুম না হওয়ার লক্ষণ । ওকে লাগছে ওই ওয়েস্টার্ন
মুভির ভিলেনদের মতো !

“এতো হল্লা কিসের ?” সে জিজ্ঞাসা করলো রাগত স্বরে ।

“আমার শেরিফের সাথে কথা বলা খুবই দরকার ” ওর কণ্ঠে জরুরী সুর, কোথাকার আঞ্চলিক
টানে কথা বলছে প্যাটি সেটা ধরতে পারলো না, খুব সম্ভবত মিড ওয়েস্ট বা নিউ ইংল্যান্ডের
দিকের কোথাও হবে ।

“শেরিফ এসে পড়বেন শীঘ্রই , উনি আসলে ওনাকে জানানো হবে সেটা” বলল প্যাটি।

“তখন অনেক দেরী হয়ে যাবে !”

“তু মি কি বলতে চাও ?”

ক্লেগ নার্ভাসভাবে ঠোঁট ভেজালো “আমি বলছি সেই দুর্যোগের কথা যেটা এই শহরে নেমে এসেছে,
আর সেটা থামবে না যতক্ষণ এই শহরে কেবল হাড়ের স্তূ প আর লাশের ভিড় পড়ে যায় !”

ওহ ঈশ্বর ! এই লোক তো পুরোই উন্মাদ, নিশ্চয়ই ব্যাটার মানসিক কোন বড় রকমের সমস্যা আছে
!

কিন্তু তবুও, মনের অনেক গহীনে ওর মনে হচ্ছিলো এই লোকটা সত্যি কথাই বলছে, কারণ মুখে
যতই কাটা দাগ থাকু ক না কেন, ওকে সৎ বলেই মনে হচ্ছে !

“আমাকে রেডিওর কাছে যেতে হবে” প্যাটি বলল নার্ভাসভাবে।

“ওটা কাজের কাজ কিছুই করবে না !” বলল লোকটা। “কারণ ওটা কাজই করছে না !”

“ওটা অবশ্যই কাজ করছে !”

“তু মি কি শিওর ?”
77

“অবশ্যই !”

সে নিজে অবশ্য অতটা শিওর না যতটা জোর দিয়ে মুখে বলছে, গত কয়েক ঘণ্টা ধরে, অনেক
কম কল আসছে, এটা কমেই গেছে ঘণ্টাখানেক হয়, প্রায় আসেনি বললেই চলে !

“তু মি কি বুঝছ না ? ওরা এই শহর পুরো কব্জা করে নিয়েছে, কোন রেডিও, টেলিফোন, মোবাইল
ফোন আর ইন্টারনেট , কিছুই নেই ! আমরা ওদের দয়ার পাত্রে পরিণত হয়েছি ! ”

“আমি এখনও বুঝছি না আপনি কি নিয়ে কথা বলছেন !”

“আমি সিগন্যালের কথা বলছি ” ক্লেগ ব্যাখ্যা করা শুরু করলো “ওই সিগন্যাল যা ওরা দেয়া
নেয়া করছে ! এই শহরের সমস্ত ইনকামিং আর আউটগোয়িং সিগন্যাল ওরা জ্যাম করে দিয়েছে,
প্রথম কারণ -- আমরা যাতে কোথাও থেকে সাহায্য না পাই, আর দ্বিতীয় কারণ হলো – যাতে
আমাদের সিগন্যাল ওদের সিগন্যালে কোন বিঘ্ন ঘটাতে না পারে ! এখানে যা সিগন্যাল আছে,
সবই ওদের সিগন্যাল ! ”

প্যাটি ওর মাথা নাড়লো , সব ষড়যন্ত্র তত্বই বিভ্রান্তিকর, কিন্তু ওর কাছে মনে হচ্ছে এই লোক সত্যি
কথাই বলছে । ওর কপালে হালকা ঘাম দেখা দিয়েছে , আর পেটের ভেতর সুড়সুড়ি দিচ্ছে
অজানা একটা ভয় !

“আপনার নাম কি ?” ক্লেগ জিজ্ঞেস করার সাথে সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জবাব দিয়ে দিলো প্যাটি।

“শুনুন ,প্যাটি , আমি এটা চোখের সামনে অনেকবার ঘটতে দেখেছি, ওরা প্রথমে নিশ্চিত করে
একটা ছোট শহর কোন ঝড়ের দ্বারা আলাদা হয়ে গেছে, তারপর ওরা ওদের হত্যাকাণ্ড শুরু করে।
যতক্ষণে কেউ ধরতে পারে আসলে কি ঘটে চলেছে, ততক্ষণে ওরা হাওয়া হয়ে যায় ! এভাবেই
চলে সবসময় ! আমার দিকে ওভাবে তাকাবেন না যেন আমি একটা পাগল, আমিই এখানে
একমাত্র ব্যাক্তি যে পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন। ”

“আমার কোন ধারণা নেই আপনি কি বলছেন !”


78

“অবশ্যই আপনার ধারণা নেই ! মনে করে দেখুন, আপনি আতঙ্কিত, কিন্তু কেন আতঙ্কিত আপনি
নিজেও জানেন না ! ওটাই ওদের কাজের পদ্ধতি, ওরা সিগন্যাল পাঠিয়ে আপনার মেজাজ
বিষিয়ে দেবে, ভয় লাগিয়ে দুর্বল করে দেবে , তারপর শিকার করবে ! আমি বাজি ধরে বলতে পারি
কয়েকদিন ধরেই আপনি যুক্তিগ্রাহ্য কোন কারণ ছাড়াই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন, বুঝতেও পারছেন
না কেন এমনটা হচ্ছে !! ”

প্যাটি তর্ক করতে পারতো, কিন্তু এই লোক যা বলছে সব অক্ষরে অক্ষরে সত্যি, ও সত্যি সত্যি
কয়েকদিন ধরে এরকমই অনুভব করছে, অন্ধকার একটা অনুভূ তি ওকে যেন গ্রাস করে ফেলছে,
যেটার কোন নাম দিতে পারেনি ও, প্রত্যেক রাতেই সবচেয়ে বাজে দুঃস্বপ্ন দেখে বারবার জেগে
উঠেছে, আর ঘুমাতে যায়নি দুঃস্বপ্ন গুলি আবার দেখার ভয়ে !

“আমার......... আমার রেডিওর কাছে ফেরত যেতে হবে ” আমতা আমতা করে বলল সে ।

“চেষ্টা করতে পারো, এমনকি ৯১১ এও কল করে দেখতে পারো, তোমার কল কোথাও যাবে না !
তখন তোমার ভয় এক নতু ন উচ্চতায় চলে যাবে সে সময়, তু মি এসে আমাকে সেল থেকে বের
করে নেবে তখন। কারণ সে সময় তু মি বুঝে যাবে, আমিই তোমাদের একমাত্র সুযোগ !”

প্যাটি দৌড়ে অফিস রুমে চলে এলো, রেডিওর সামনে বসলো সেসব কলের জন্য যেগুলি
কখনও আসবে না ! ও ওর জীবনে এতো ভয় কখনও পায়নি, বসে বসে ক্লেগের কথাগুলি
ভাবতে লাগলো সে, তাহলে ক্লেগের কথাগুলোই ঠিক, সেটাই গোটা ব্যাপারটার মধ্যে সবচেয়ে
ভয়ানক বিষয়, ক্লেগই ঠিক !

অধ্যায় ২৩

বেশি দূরে না , ‘ব্রোকেন বটল’ বারে , ভীষণভাবে মাতাল জর্জ কার্প টয়লেটের দিকে এগোচ্ছিল,
কারণ এক ঘণ্টারও কোন সময় আগে খাওয়া পেপেরনি পিজ্জাটা ওর পেটে হঠাৎ গুঁতোগুঁতি
লাগিয়েছে ! ওর কপালে চিকন ঘাম দেখা দিলো আর ও টয়লেটের উদ্দেশ্যে দৌড় দিলো ! ওর
79

কাছে মনে হচ্ছিলো ও একটা বিশাআআআল মরুভু মি পার হচ্ছে আর টয়লেটটা যেন একটা
মরুদ্যান !

ওহ ! ওই যে টয়লেট ! ও হুড়মুড় করে একটা কেবিনে ঢোকার পথে আরেকটা লোককে ধাক্কা
দিলেো জোরে, যে ওকে “হতচ্ছাড়া মাতাল !” বলে একটা গালিও দিলো ।

কার্প চু পচাপ বসে ওর ‘কাজ’ সেরে নিলো, তারপর সব মুছে টু ছে যেই বেরোতে যাবে, অমনি
বারের ব্যাকডোরটা খুলে গেলো , সাথে ভেসে এলো মৃত্যু আর পচনের গন্ধ -- ঠিক যেন একটা
মরা কু কু র কেউ ফেলে রেখেছে পথের পাশে কোন গ্রীষ্মের দিনে !

কার্প আবার টয়লেটে বসে পড়লো, ওর মনে হলো শরীর থেকে সব শক্তি যেন কেউ কেড়ে
নিয়েছে। ক্লাপ ক্লাপ শব্দ করে একটা পায়ের শব্দ কেবিন গুলির সামনে এসে থামলো, থেমেই রইলো
, যেন বুঝতে পারছে না কোনটাতে ঢু কবে !

কার্প ঈশ্বরকে ডাকতে লাগলো –প্লিজ গড , এটা না ! এটা না !

অসহনীয় বেশ কয়েকটা মুহূর্ত কেটে যেতে লাগলো, এবার কার্পের মনে হলো সে যেন কবরস্তানের
মতো গন্ধ পাচ্ছে, ওই জীবটা, সেটা যাই হোক না কেন, পাশের কেবিনে ঢু কে দরজা আটকে দিলো
। একটা সুর গুণগুণ করতে লাগলো যেটা কার্পের কাছে খুব পরিচিত মনে হলো, যেন
ছোটবেলাতে কোথাও শুনেছিল।

এটাই সুযোগ !

কার্প একটু দেখার লোভ সামলাতে পারলো না, যতই কিনা সে আতঙ্কিত থাকু ক না কেন। ও
দেখল একজোড়া অতিরিক্ত বড় আকারের জুতো, যেরকম ক্লাউনরা পরে, ওর কপাল বেয়ে এবার
ঠাণ্ডা ঘাম নামলো !

রিচিকে একটা ক্লাউন মেরে ফেলেছিলো । ওই ক্লাউনটাই এখানে এই বাথরুমে ওর সাথে আছে,
ওইটাই হবে নাহলে ঘুমন্ত ক্রো ফলসে এই তু ষার ঝড়ে কয়টা ক্লাউন আর ঘোরাফেরা করবে ? বিকট
80

গন্ধটা আবার কার্পের নাকে এলো, ওর চারপাশের দুনিয়াটা যেন ঘুরতে শুরু করলো । ওটা
.........ওটা ওকে কিছু একটা করছে, ওটা ওকে হিপনোটাইজ করার চেষ্টা করছে ! ওর মনে হলো
ও যেন চেতন অবচেতনের মাঝখানে সাঁতার কাটা শুরু করেছে, উপরন্তু ,ও দেখতে পেলো, ওই
ভয়ানক কেবিনটা থেকে তলা দিয়ে রক্তের একটা মোটা ধারা বের হয়ে এসেছে ! আর সেগুলির
মধ্যে থেকে কিম্ভূ ত আকৃ তির কিছু মোটা জোঁকের মতো জিনিস এসে ওর পা বেয়ে ওঠার মতলব
করছে !

এবার কার্প ভয়ানক এক চিৎকার ছাড়লো , তারপর পা দিয়ে ওই জোঁকের মতো ঘিনঘিনে
জন্তুগুলোকে চেপ্টে দিয়ে পেছন ফিরে আআআআআআআ চিৎকার করতে করতে ব্যাক রুমের
ভেতর চলে এলো। সেখানে ডেড স্কালের লোকেরা পুল খেলছিল। ওরা উচ্চস্বরে হাসা শুরু
করলো কারণ কার্পের প্যান্ট তখনও ওর গোড়ালির ওপর আটকে ছিলো ! সামনের রুমে গিয়েই
কার্প সোজা মেঝেতে মুখ থুবড়ে পড়ে গেলো, ও যা দেখে এসেছে , কোন মানুষের পক্ষে সহ্য করা
খুব কঠিন !

শেরিফ টিগ যখন ‘ব্রোকেন বটল’ বারের ভেতর হাতে শটগান নিয়ে ঢু কলো, সে, অবশ্যই সবার
নজর কাড়তে সক্ষম হলো । ওর চেহারা ঠাণ্ডায় সাদা হয়ে গেছে, চোখগুলো আরও ঠাণ্ডা আর
ধকধক করে জ্বলছে খুনের নেশায় ! ও নিশ্চয়ই কারো পেছনে লেগেছে, আর ব্যাপারটা মারাত্মক
সিরিয়াস, এটা উপস্থিত সবার কাছে সাথে সাথে পরিষ্কার হয়ে গেলো।

টিগের পেছন পেছন ডাইভ দিয়ে ঢু কলো পিনাট, ওকে এতদিন সবাই নিরীহ হিসাবেই চিনতো, যার
মুখে সবসময় একটা বোকা বোকা হাসি লটকে থাকতো। কিন্তু এখন , ওকে দেখে সবার অন্তরাত্মা
ঠাণ্ডা মেরে গেলো, কারণ পিনাটকে দেখে মনে হচ্ছে, কিভাবে হাসতে হয় ও জানেই না!

বারের ভেতরের সবাই জায়গায় জমে গেলো, শুধু জুক বক্সের মিউজিকটা বেসুরোভাবে বাজতে
লাগলো ঝ্যা ঝ্যা করে !
81

সবার আগে সামলে নিলো ব্রেনডা পেচেক, ঊর্ধ্বশ্বাসে বলল “গড ড্যাম ! উইল, এখানে কি করছ
তু মি ?”

“আমরা একজনকে খুঁজছি !” রুমের ভেতর খুনির দৃষ্টি বোলাতে বোলাতে বলল টিগ “আর
আমরা ওকে খুঁজে বের করবই !”

“কি বললে ?” ব্রেনডা বলল “কেউ এই বালের মিউজিকটা বন্ধ করো !”

বনি ফস্ট বন্ধ করলো সেটা। টিগ বলল “আমরা পাশের দরজা দিয়ে একজনকে তাড়া করছিলাম,
ব্যাটা ভেতরেই কোথাও আছে ।”

“ওটা কে ?” বলল ব্রেনডা, ওর স্বামীও প্রতিধ্বনি করলো “কে ? !!”

“একটা ক্লাউন ” পিনাট বলল শুকনোভাবে। মৃত্যুর মতো নীরবতার মাঝখানে যেন বাজ পড়লো।
উপস্থিত প্রত্যেকেই তাদের ওপর ঝু লে থাকা বিপদের স্বরূপ বুঝতে পারলো।

কিন্তু ব্রেনডা বলল “একটা ক্লাউন ? ওহ না, ওই বালছাল আবার না !”

কেউ কোন কথা বলল না কারণ প্রত্যেকের পরিষ্কার মনে আছে বেবের বলা কথা গুলো। রিচিকে
কিভাবে একটা ক্লাউন ধরেছিল, ওটার নখ ছিল, ওটা ওকে গলা ফাঁক করে দিয়েছিল !

সবাই একে অপরের আরেকটু কাছে সরে বসলো, যেন ওই দানব ক্লাউন ওদের ধরতে পারবে না
কাছাকাছি বসলে !

“এটা বালছাল না ! ” চিৎকার করে বলল টিগ “আমরা ওটাকে নিজের চোখে দেখেছি, আর তাড়া
করেছি , ওটা দৌড়ে এখানেই ঢু কেছে, আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস ওটা এখনও এখানেই আছে ! ”

ব্রেনডা বাদে বাকি সবাই এদিক ওদিক চাইতে শুরু করলো উদ্বিগ্নভাবে, ব্রেনডা বলল “উইল,
এখানে কোন ক্লাউন নেই। তু মি কি মনে করো, একটা ক্লাউন ঢু কলে আমরা কেউ তাকে দেখতাম
না ? আমি এই বারের পেছনে আছি, অন্যদের কথা বাদ দাও, আমি তো অন্তত দেখতাম ! ”
82

টিগ জবাব না দিয়ে চু প করে থাকলো, কেউ যদি ক্লাউনটাকে না দেখে থাকে তাহলে পরিস্থিতি
অনেকটা জটিল হয়ে পড়বে।

ঠিক এই সময়েই কার্পের চিৎকার শোনা গেলো আর ও এসে সোজা মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়লো,
সাথে ব্যাক রুম থেকে শোনা গেলো ডেড স্কালদের উচ্চকিত হাসি ! সবাই দেখল কার্পের অবস্থা,
না হাসতে চাইলো সবাইই, কিন্তু বেশীরভাগ ব্যার্থ হলো, খুক খুক কাশির বাণ ডেকে গেলো ঘরময়।

টিগ জিজ্ঞেস করলো “কার্পি , তু মি কি করছ ?”

কার্প মেঝেতে শুয়ে থাকা অবস্থাতেই শেরিফের দিকে তাকাল এমন এক দৃষ্টিতে , ঠিক যেভাবে
রাতের বেলা কোন হরিণ রাস্তা পার হবার সময় এগিয়ে আসতে থাকা গাড়ির হেডলাইটের দিকে
তাকিয়ে থাকে ! “ওগুলি ...... ওগুলি , আমার চারপাশে ছড়িয়ে ছিল, আমার রক্ত খাবার মতলবে
ছিল ব্যাটারা, আর......... আর ওই ক্লাউন, ওটা ঠিক আমার পাশের কেবিনে ছিলো, ওটা রিচিকে
মেরেছে আর এখানে এসেছে আরও খুন করতে .........। ” এরপর সে বিজবিজ করে কি যে
বলতে লাগলো সেটা আর কেউ বুঝতে পারলো না।

এর মাঝে ডেড স্কাল বাইকারদের দলটা ওদের প্রেসিডেন্ট , ক্লাইড ট্যাগার্ট সহ এই রুমে এসে
ঢু কলো। ক্লাইড একজন দানব আকৃ তির লোক আর শেরিফের খুব একটা পছন্দের লোক না ! ও
ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার ড্রাগ ডিলিং আর রক্তক্ষয়ী মারামারির জন্য জেল খেটেছে। ও আট
ফিট লম্বা, দেড়শ পাউন্ড , কপালে বিরাট একটা স্বস্তিকা চিন্হ । ওর পাশে আছে নাথান ফ্রি, ওকে
একটা চলন্ত দেয়াল বললে ভু ল বলা হবে না , ওদের পেছনে আছে স্কাঙ্ক, যে বছরখানেক আগে
একটা ডাকাতির জন্য জেল খেটেছে !

“এখানে কি হচ্ছে , উইল ?” খেঁকিয়ে উঠলো ক্লাইড ।


83

টিগ কেবল অনিশ্চিতভাবে মাথা নাড়লো, ওর ইচ্ছা ছিলো বলার, কিন্তু কি বলবে ?? চারপাশে
এমন আধিভৌতিক ঘটনা ঘটে চলেছে যে সে খেই হারিয়ে ফেলেছে, সে বুঝতে পারছে না এসব
থেকে আসলে কি মানে করা যায় !!

ইতিমধ্যে, ব্রেনডার দেয়া একগ্লাস বুরবন মেশানো বিয়ার খেয়ে একটু ধাতস্ত হয়েছে কার্প “ও এখানে
এলো বলে ! ভেতরে......... বাথরুমের ভেতরে একটা ক্লাউন ! আমি দেখেছি ওকে , ও ওখানে
আছে আর আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে !”

টিগ ওর ফাটা ঠোঁট চাটল “ তু মি, আমার সাথে এসো !”

“মোটেও না !”

“অবশ্যই !”

টিগ সামনে এগোল , ক্লাইড আর নাথান ওর পেছনে এগোল , পুল কিউ গুলিকে বেসবল ব্যাটের
মতো ধরে রেখেছে !

“পিনাট” বলল টিগ “তোমার রেডিও নাও আর প্যাটির সাথে যোগাযোগ করো আর বলো আমরা
কোথায়, আর কেউ এই রুম ছেড়ে যাবে না , কেউ না !”

“ইয়েস , স্যার !” বলল পিনাট।

অধ্যায় ২৪

টিগরা ভেতরে অদৃশ্য হবার পর, বারের ভেতরে একজন বলে উঠলো “আমি যদি চলে যেতে চাই,
তু মি কি আমাকে আটকাতে পারবে বলে মনে হয়, পিনাট ?”

দ্য ডেপুটি , খুব ঠাণ্ডা মাথায় হাতে ধরা শটগানের ভয়াল নলটা ত্যাড়া লোকটার দিকে ফেরাল
“হ্যাঁ, আমি সে ব্যাপারে পুরোপুরি শিওর !”
84

পরে, কেউ আর মুখ খোলার সাহস করলো না, এই পিনাটকে ওরা চেনেনা,এটা ওই পিনাট আর
নেই যে কিনা অলস, যে স্কু ল ব্যান্ডে গিটার বাজাতো আর লুকিয়ে লুকিয়ে গাঁজা খেতো।

এই পিনাট ডেড সিরিয়াস । কোমর থেকে রেডিও বের করে প্যাটির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা
করলো, কিন্তু ঝিরঝির শব্দ ছাড়া আর কিছু শোনা গেলো না ।

“নিশ্চয়ই ঝড়ের কারণেই হবে ” নিজে নিজেই বলল পিনাট, কিন্তু ওর গলা শুনেই বোঝা গেলো ,
ও নিজেকে নিজেই বিশ্বাস করছে না !

এরপর আর কেউ নীরবতা ভাঙল না , শুধু ব্রেনডা পেচেক অপমানজনকভাবে বলে উঠলো
“ক্লাউন! শহরে যদি কোন ক্লাউন থেকে থাকে সেটা হলো ওই শেরিফ, ব্যাটা আমার সাংবিধানিক
অধিকার ক্ষু ণ্ণ করছে, ওর পেছনে একটা ল ইয়ার লেলিয়ে দিতে হবে দেখছি !”

“ব্রেনডা” বলে উঠলো স্তিউ পেচেক “ডানা ঝাপটানো বন্ধ করো !”

এবার বাকি সবাই বুঝতে পারলো ওই ক্লাউন এই শহরের মানুষজনের ওপর কতোটা প্রভাব
ফেলেছে, কারণ স্তিউ কখনোই ব্রেনডার ওপরে কথা বলে না, মুখে মুখে তো না-ই। ব্রেনডা স্তিউর
দিকে একটা ভয়াবহ দৃষ্টি দিলো যার অর্থ হচ্ছে, দাঁড়াও , তোমার হবে !

কিন্তু বাকিরা চু পচাপ অপেক্ষা করতে লাগলো , আর ভাবতে লাগলো ,নরক থেকে উঠে আসা
ওই ক্লাউন না জানি কোথায় লুকিয়ে আছে !

টিগকে কার্পকে ধরে প্রায় টেনে নিয়ে যেতে লাগলো, ঠিক ওই কিন্ডারগার্টে ন স্কু লের বাচ্চাদের
মতো, যারা স্কু লে যেতে চায় না ! ক্লাইড আর নাথান ওদের ঠিক পেছনে। টিগ কোন ভু ল করতে
রাজি নয়, কারণ ও জানে পার্কে ও ঠিক কি দেখেছে। যদিও ওর এতদিনকার শিক্ষা দীক্ষা আর
অভিজ্ঞতার সাথে ওটার কিছুই মেলানো যাচ্ছে না, কিন্তু ও এটা নিশ্চিত জানে যে এই ক্লাউনগুলি
মানুষ না! ওরা কিম্ভূ ত পোশাক পরা একদল মানুষ না যারা কিনা লোকজনকে ভয় দেখাচ্ছে, ওরা
সম্পূর্ণ অন্য কিছু ! ওরা দানব ......... অসুস্থ, ভয়াবহ একদল দানব যারা কিনা সোজা নরক থেকে
85

উঠে এসেছে ! ও জানেনা এটা কিভাবে হলো, আর কাউকে ব্যাখ্যা দেবার চাইতে এই মুহূর্তে ওই
ব্যাখ্যাতীত দানবটাকে খুঁজে বের করা বেশী জরুরী ।

ও মেনস রুমের ঠিক বাইরে এসে দাঁড়ালো।

ও কার্পের দিকে তাকালো, যে কিনা অ্যাসপেন গাছের পাতার মতো কাঁপছে আর প্রচণ্ড ঘামছে,
এবার ও তাকালো ডেড স্কালদের দিকে। ওদের দেখে বেশ উত্তেজিত মনে হলো , যেন ও ধরণের
কিছুর জন্যই ওরা সারাজীবন অপেক্ষা করে এসেছে ! হাতের শটগানটা শক্ত করে ধরে কার্পের
দিকে ফিরে বললো “কাম অন , কার্পি , দরজাটা ঠেলে খোলো ।”

কার্প, যে কাপড়ে প্রায় হিসি করে দেবার মতো অবস্থায় এসেছে, দৌড়ে গিয়ে লাথি দিয়ে দরজাটা
খুলে দিলো, ঠিক যেভাবে সিনেমায় পুলিশরা করে ।

টিগ ঝড়ের গতিতে রুমে ঢু কল, ওর শটগানের ব্যারেল সব কোণার দিকে ঘোরাতে ঘোরাতে। কিন্তু
ওখানে কিছুই নেই, প্রথম দেখায় অন্তত তাই মনে হলো। যেভাবে কার্প বলেছিল, মেঝে থেকে
সিলিং পর্যন্ত সব লাল থাকার কথা ! এখানে কোন রক্ত ফক্ত নেই, কিন্তু তার মানে এই না যে
এখানে ক্লাউনও নেই। ও রুমের আরও ভেতরে ঢু কে এলো, শুকনো গলায় ঢোঁক গিলতে
গিলতে। এর মাঝে ক্লাইড আর ফ্রি ও ভেতরে চলে এসেছে। প্রথম কেবিনে কিছু নেই, দ্বিতীয়
কেবিনটার সামনে একটু ইতস্তত করলো টিগ, মনের চোখে দেখতে পাচ্ছে দানব আকৃ তির
ক্লাউনটার ছবি, ওকে বড় বড় হলুদ দাঁত দিয়ে ফেড়ে ফেলছে ও এমনকি ট্রিগার টানারও আগে।
সাধারণ অবস্থায় এ ধরণের চিন্তা ভাবনাকে ও ফ্যান্টাসি বলেই উড়িয়ে দিতো, কিন্তু পার্কে নিজের
চোখে যা দেখেছে, তারপরে এসব চিন্তা তেমন অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।

জাস্ট ডু ইট ! নিজেকে ধমকালো টিগ, ক্লাইড রয়েছে পেছনে, ওর সামনে কোনরকম দুর্বলতা
দেখানো চলবে না, নাহলে ওকে কালকে সকালের নাস্তা বানিয়ে ফেলবে লোকটা !

বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে দ্বিতীয় দরজাটাও ঠেলা দিলো শেরিফ, কিন্তু না ! ওখানেও কিছু নেই !
86

“তোমার বালের ক্লাউন কোথায় গেলো ?” জিজ্ঞেস করলো ক্লাইড অধৈর্য সুরে “তু মি যদি এগুলি
নিজে নিজে বানিয়ে বানিয়ে বলে থাকো, তাহলে কিন্তু তোমার সাথে আমার সিরিয়াস কিছু কথা
বলতে হবে !”

“আস্তে !” হস্তক্ষেপ করলো শেরিফ।

সবগুলি কেবিন দেখা হলো , কা কস্য পরিবেদনা ! কিসসু নেই। গুঙিয়ে উঠে টিগ বলল “অন্তত
দরজাটা বন্ধ করে যেতে পারতে !”

ডেড স্কালের সদস্যরা আবার হাসতে শুরু করেছে !

“আমি...... আমি বেশ তাড়ায় ছিলাম তখন !” বিব্রত ভঙ্গিতে বলল কার্প।

ক্লাইড এখন নাথান ফ্রির পাশে দাঁড়িয়ে আছে “ক্লাউন......... মেঝেময় রক্ত, তোমার পাছা !”

“জোঁকের কথা ভু লে যেও না !” আরও অপমানজনকভাবে বলল নাথান।

“আমি ওটাকে দেখেছি, মেঝেতে রক্তও দেখেছি, জোঁকও । ফর গডস সেক, বিশ্বাস করো তোমরা
আমাকে, আমি মিথ্যা বলছি না !”

“ওকে, সবাই রিলাক্স !” বলল টিগ।

ব্যাপারটা হলো, কার্পের কথা অক্ষরে অক্ষরে বিশ্বাস করেছে ও, ওর যত দোষই থাকু ক না কেন, ও
অন্তত মিথ্যাবাদী নয়। আর কল্পনাশক্তির ব্যাপারে ব্যাটা একটা নিরেট গর্দ ভ। কিছু একটা অবিশ্বাস্য
ঘটনা ঘটেছে ঠিকই, নাহলে কার্পের মতো লোক এতোটা ভয় পেতো না। ব্যাপারটা দেখতে হবে
আরও ভালোভাবে !!
87

অধ্যায় ২৫

বাইরের রুমে সবাই তটস্থ হয়ে বসেছিল ওদের জন্য।

“ওখানে কিস্যু নেই !” হিসহিস করে বললো ক্লাইড, ও বাদে বাকি সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।

“ক্লাউনস !” কেউ একজন ভিড়ের মধ্য থেকে আওয়াজ দিলো “কার্পি, ব্যাটা স্টু পিড শুয়োর !”

কিছু লোক নার্ভাস ভাবে হাসল, এটা ভালো একটা জোকস ছিল ! এবার এটা নিয়ে ওরা কার্পকে
অনেকদিন জ্বালাতন করতে পারবে, এটা একটা ট্রেন্ডে পরিণত হবে। ওরা অনেকদিন ধরে গল্প
করবে কিভাবে বাথরুমে একটা কাল্পনিক ক্লাউন দেখে প্যান্ট অর্ধেক নামানো অবস্থায় কার্পি
কাঁপতে কাঁপতে একঘর লোকের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে গিয়েছিলো। এটা প্রজন্মান্তরে চলতে
থাকবে, আর বর্ণনাতে রঙ চড়তেই থাকবে ।

ব্রেনডা পেচেক এসবের ধার ধারে না , ও ওর শেষ গ্লাসটা পালিশ করে ঠকাস করে কাউন্টারের
ওপর রাখল, সবাই বুঝলো এবার একটা প্রচণ্ড তিরস্কারে ভর্তি বক্তৃ তা আসতে যাচ্ছে , এলোও
তাই “ তো , আমি পুরো ব্যাপারটা সংক্ষেপে বলি আবার, ওই শেরিফ, তার লেজ ধরা ডেপুটি
শেরিফকে নিয়ে বন্দুক নিয়ে আমার বারে ঢু কল , সবার দিকে বন্দুক ধরে বলল , ওরা একটা ক্লাউন
শিকার করতে এসেছে ! ক্লাউনস, ফর গডস সেক ! এই সবকিছু হল, কারণ বেবে আধো আধো
গলায় বলে গেছিলো যে , রিচিকে স্নো মোবিল থেকে একটা ক্লাউন পেড়ে ফেলেছে। আর আরও
বিশ্বাস করতে হলো ওই বালের কার্পির কথা, যার কথা সুস্থ অবস্থাতেই বিশ্বাস করা মুশকিল !
আমি এই বারের পেছনে দুপুর তিনটা থেকে বসে আছি, এখানে যদি কোন ‘পেনিওয়াইস’ বা
‘পাফি দ্যা বু’ বা ‘পেডোফাইল’ ঢু কেই থাকে, তাহলে আমি অবশ্যই দেখতাম, তো এই ধরণের
পুলিশ ওয়ার্ক দেখার জন্যই কি আমরা কষ্টার্জি ত রোজগার থেকে ট্যাক্স দেই ? ” এবার ও বরফ
88

ঠাণ্ডা দৃষ্টি ফিরাল টিগ আর পিনাটের দিকে “এখন তোমরা আমাকে বলো , তোমাদের মধ্যে কে
ডন কু ইক্সোট আর কে তার গাধা ?”

কিছু বিব্রত হাসির শব্দ শোনা গেলো, কিন্তু কেউ জোরে হাসার সাহস পেলো না, কারণ টিগ আর
ব্রেনডার মধ্যে যে পরিমাণ টেনশন পাকিয়ে উঠেছে, কেউ ওদের মাঝখানে পড়তে চায় না ! টিগ
প্রাণপণ চেষ্টায় মাথা ঠাণ্ডা রাখল “ব্রেনডা, বেশ কয়েক বছরে তোমার অনেক গঞ্জনা সহ্য করেছি,
প্যাঁচার মতো মুখের ঝামটাও খেয়েছি। কিন্তু আজ রাতে এই শহরে এমন একটা কিছু ঘটে চলেছে,
যেটা সম্পর্কে তোমার কোন ধারণাই নেই। রিচি আর জিনা নিখোঁজ, আমার বিশ্বাস করার কারণ
ঘটেছে যে বেবে আর ওর স্বামী জিনার দেহটা খুঁজে পেয়েছে, আর এটা কেবল আইসবার্গের মাথার
দিক ! তো, তু মি যদি তোমার লিকার লাইসেন্স হারিয়ে আবার রান্নাঘরে ঘোরাঘুরি করতে না চাও,
তাহলে আমি সাজেস্ট করবো তু মি ফাইনালি চু প করে যাও, কথা দিয়ে নিজের কবর খোঁড়ার
আগেই !”

ব্রেনডা ঘৃণার দৃষ্টিতে শেরিফের দিকে তাকাল , চোয়াল খুলল কিছু বলবে বলে, আবার খট করে বন্ধ
করে ফেললো। “চলো , আমরা আমাদের গিয়ার একটু শিফট করি” অবশেষে বললো স্তিউ
পেচেক।

পিনাট নাক দিয়ে ঘোঁত করে উঠে বলল “তোমরা যদি দেখতে আমরা পার্কে কি দেখেছি, তাহলে
এভাবে কেউ কথা বলতে না, এখানে অনেকগুলি ক্লাউন আছে আর সবগুলোই একেকটা দানব !”

“পিনাট! ” সতর্ক করলো টিগ,কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে, সবাই শুনে গেছে ও কি
বলেছে , ‘দানব’ !

টিগ সতর্ক ভাবে চারদিকে চাইলো , প্রত্যেকটা মুখে ভয়ের ছায়া পড়েছে, শুধু ডেড স্কালরা বাদে,
ওদেরকে বরং কিছুটা কৌতূ হলী দেখা যাচ্ছে ! বাইরে তু ষার ঝড় বিপুল তাণ্ডবে গুঙিয়ে চলেছে,
আর ভেতরে থাকা প্রত্যেকটা মানুষের মনেও চলেছে আরেক রকমের ঝড়। ওরা ওদের
89

ছোটবেলার সমস্ত ভয়কে আবার মূর্ত হতে দেখতে পাচ্ছে, ছোটবেলার ‘বুগিম্যান’ ফিরে এসেছে,
এবার ওর মুখে ক্লাউনের মুখোশ !

বনি ফস্ট সবার প্রথমে নীরবতা ভাঙল “ওহ গড ! শেরিফ, বলো এটা সত্যি না, প্লিজ বলো এটা
সত্যি না ! ”

পিনাটের দিকে তির্যক দৃষ্টিতে তাকিয়ে টিগ বলল “আমরা বাইরে বেশ কিছু জিনিস দেখেছি আজ
............... কিছু , বাজে জিনিস !”

“দানব ?” স্তিউ উদবিগ্নভাবে জানতে চাইলো।

পুরো কামরা জুড়ে গুণগুণ ধ্বনি ছড়িয়ে পড়লো, কেউ জানেনা এই তথ্য নিয়ে ওরা কি করবে !
এমন না যে ব্যাপারটা ওরা পুরোপুরি বিশ্বাস করেছে, কিন্তু শিওর হবার তো কোন উপায় নেই,
বিশেষ করে চারদিকে যেহেতু এ ধরণের অদ্ভু ত ঘটনা ঘটে চলেছে। উপরন্তু মরার ওপর খাঁড়ার
ঘায়ের মতো বাইরে একদল ক্ষু ধার্ত নেকড়ের মতো গর্জে চলেছে শতাব্দীর ভয়াবহতম তু ষার ঝড়!

“কি রকম বাজে জিনিস ! ” জিজ্ঞেস করলো ক্লাইড !

কিন্তু টিগ কোন জবাব দেবারও আগে , চাতু র্যপূর্ণ কিছু একটা ভেবে বের করার আগে ( নাহলে
গোটা কামরা জুড়ে আতংক আর বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়বে, আর সেটা শহরে ছড়াতে বেশি সময়
লাগবে না ) একটা বিকট ঠুং ঠুং শব্দ ভেসে এলো। সবাই ঘুরে তাকিয়ে দেখল , লিও বুথ দাঁড়িয়ে
আছে সেখানে। কেউ তেমন একটা গুরুত্ব দিলো না ওকে, এটা বোঝাই যায়, কারণ লিও এতো
বেশি সময় ‘ব্রোকেন বটল’ বারে কাটায় যে, ওকে এখানকার একটা আসবাব বলেই মনে করে
সবাই !

ব্রেনডা ওর দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাল , এই ব্যাটা কখন ঢু কল ও তো দেখেনি, কিন্তু তবুও,
ব্যাটা দেখি এখানেই দাঁড়িয়ে আছে !
90

“সম্ভবত ” লিও বলল ওর হুইস্কি খাওয়া কর্ক শ কিন্তু মেয়েলি গলায় “তোমরা হয়ত একটা
সাইকোপ্যাথকে নিয়ে ডিল করছো যে কিনা একটা ক্লাউনের ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে ! দানবদের
সাথে ইনভল্ভ হওয়া বা কোন ফেয়ারি টেল বিশ্বাস করার পক্ষে আমি যথেষ্ট বুড়ো হয়ে গেছি !
আমার মনে হয় তোমরা বাকিরাও একই কথা মনে কর। তাই ওটা একটা সাইকোপ্যাথই হবে, কিন্তু
কোন কারণে সে এ পথে এলো, এটা কি ওই ঝড় ? বা ওই রাত ? অথবা ওর মাথায় লুকিয়ে রাখা
কোন রাগ ? ও হয়ত অনেক বছর ধরে আমাদের মাঝে আছে, আমরা হয়ত বুঝতেই পারিনি ওর
মধ্যে কোন সমস্যা আছে কিনা , তোমরা আশ্চর্য হয়ে যাবে জেনে যে মাঝে মাঝে ঠিক আমাদের
নাকের ডগায় কি কি জিনিস লুকিয়ে থাকে ! ”

“কিন্তু ওটা কোন সাইকো ছিল না !” বলতে গেলো পিনাট, ও পার্কে কি কি দেখেছে সেটা বিশদ
করতে যাচ্ছিলো, কিন্তু টিগের দিক থেকে একটা কড়া দৃষ্টি পেয়ে কথাটা গিলে ফেললো।

লিও ওর গ্লাসের বাকি তরল এক ঢোঁকে গলায় চালান করে দিয়ে বলল “মাই বয়, ওটা একটা
সাইকোপ্যাথই হবে, আর কিই বা হতে পারে ওটা ?”

লিওর বক্তব্য গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনতে শুনতে টিগ অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো ,লিওর কণ্ঠে
কি জানি একটা সমস্যা আছে, ওর কেবলি লিওর কথা শুনতে ইচ্ছা করছে, ওর কেমন জানি
ক্লান্তি লাগছে ! ঠিক যেন স্বপ্নের মেলা এসে ওকে ঘুম পাড়িয়ে ঘুমের দেশে নিয়ে যেতে চাচ্ছে, ওর
চোখের পাতা ............ কেমন জানি ভারী হয়ে আসছে! ক্লেগ যেরকম বলেছিল ওর মনে পড়লো ,
এই শহরটা জাস্ট একটা বাসার মতো , দানবদের একটা পুরো কলোনি। কিন্তু এখন......... লিওর
গলা শুনে ওই ব্যাপারটাতে কেমন জানি সন্দেহ জন্মে যাচ্ছে !

ঠিক সে সময় , এক ডেড স্কাল সদস্য হাত থেকে বিয়ারের বোতল ফেলে দিলো, ওটার বিকট ঠুং
শব্দ এক ঝটকায় টিগকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনলো । ও বেশ কয়েকবার চোখ পিটপিট করে
বাকিদের দিকে তাকালো। ও আরেকটু হলে প্রায় ঘুমিয়েই যাচ্ছিলো !
91

লিও সেই বোতল ফেলে দেয়া স্কাল সদস্যের দিকে কু টিল একটা দৃষ্টি দিলো “এটা দিয়ে আমি যেটা
বোঝাতে চাচ্ছি তা হলো , তোমাদের মাঝখানে একটা লোক লুকিয়ে আছে ক্লাউনের মুখোশ পরে,
ইডিয়টের দল , কোন দানব টানব না !”

“তু মি কি বলছ তা নিজেও জানো না” পিনাট জোর দিয়ে বলল।

লিও জোরে হেসে উঠে বলল “মাই বয়, আমি এমন অনেক কিছু জানি যা তু মি স্বপ্নেও কল্পনা
করতে ভয় খাবে !”

ব্রেনডা মাথা নাড়ল “লিও, আমি আমার সারাজীবন ধরে তোমাকে চিনি, তোমাকে আমি যদ্দুর
চিনি, তোমার আগেও কোন কিছু নিয়ে কোন প্ল্যান ছিলোনা, এখনও নেই ! আর সে ব্যাপারটা
অন্তত পরিবর্ত ন হয় নি !”

“দাঁড়াও , দাঁড়াও” বলে উঠলো নাথান ফ্রি “লিও ভিয়েতনামে ছিল, ও একজন যোদ্ধা !”

“কিন্তু তার মানে এই না যে ও ওর ব্রেইনও ঠিক মতো চালাতে পারবে !” ব্রেনডা কথা ফিরিয়ে
দিলো “আমার স্বামীকেই দেখো, ও নেভিতে ছিল চার বছর, আর এখন ওর অবস্থা দেখো ! ”

“হাহ ?? !!” বলল স্তিউ পেচেক, হতবুদ্ধি হয়ে গেছে।

লিও এরপর আবার ওর হাসি দিলো যেটা শুনে মরচে ধরা দরজার কব্জার কথা মনে পরে গেলো
টিগের “তু মি কি বিশ্বাস করতে চাও, সোনা ? ওখানে ঝড়ের ভেতর ক্লাউনরুপী দানবরা ঘুরে
বেড়াচ্ছে ? কি ধরণের দানব ওরা, ভ্যাম্প্যায়ার ? ওয়েরউলফ ? ভিন গ্রহ থেকে আসা সবুজ রঙা
এলিয়েন ? হুম্মম ? ওগুলি সব বাচ্চাদের গল্পকথা ! ”

ওই ব্যাটা লিওর কিছু একটা সমস্যা তো আছেই ,ভাবল টিগ, কিন্তু ও সেটা ধরতে পারছে না !
আজকে অনেক লম্বা একটা দিন গেছে, এটা নিয়ে আর মাথাও ঘামাতে ইচ্ছে করছে না !
92

“ওকে, অনেক গল্প হয়েছে” চেঁ চাল সে “আমি যেরকম বললাম, কেউ কামরা ছেড়ে যাবে না,
পিনাট,তু মি বাইরে গিয়ে তু ষারে ফু টপ্রিন্টস দেখো, আমরা আসার পর কেউ আর বাইরে যায়নি।
তাই ভাল করে দেখো তু ষার ওগুলিকে পুরোপুরি মুছে ফেলার আগে, যদি কোন পায়ের ছাপ
এখান থেকে বেরিয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে ক্লাউনটা পালিয়েছে । ”

“আমি কি যাব ?” জিজ্ঞেস করলো ক্লাইড।

“অবশ্যই , নাথান , তু মিও যাও ” বলল টিগ।

টিগ এ ধরণের মানুষদের সাথে ওর ডেপুটিকে পাঠানোটা মোটেই পছন্দ করছে না, কিন্তু এ ধরণের
বিশেষ অবস্থাতে আর কোন উপায়ওতো নেই ! কারণ টিগ জানে ও যদি বাইরে যায়, তাহলে পিনাট
বারের ভেতরকার লোকজনকে শান্ত রাখতে পারবে না !

তিনজন লোক বাইরে যাবার সময় বাইরের ভীষণ ঠাণ্ডা বাতাস ভেতরে একটা ঝাপটা মেরে
গেলো।

টিগ চু পচাপ বসে সবার দিকে নজর বোলাতে লাগলো , টিক টিক করে এগিয়ে চলেছে ঘড়ি ।

অধ্যায় ২৬

গুড গড ইন হেভেন ! এখানে তো উত্তর মেরুর মতো ঠাণ্ডা ! পিনাট বাতাসের দিকে পিঠ ফিরিয়ে
দাঁড়ালো, চারদিকে বরফঝড় আর বাতাসের তাণ্ডবে দাঁড়িয়ে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে। সব নরক
আজকেই যেন ভেঙ্গে পড়তে লেগেছে !

ও তাকিয়ে আছে সেন্ট্রাল এভিনিউর দিকে, ওটা ভয়াবহ রকমের পরিত্যাক্ত আর ভয়ংকর
দেখাচ্ছে এই মুহূর্তে ।

“আমি কিছুই দেখছি না ” মুখের সামনে থেকে লম্বা চু ল সরাতে সরাতে বলল নাথান।
93

“আমিও না ” প্রায় চিৎকার করে বলল ক্লাইড।

পিনাট ওর ফ্ল্যাশলাইটটা ‘ভাঙ্গা বোতলের ’ সামনের পথে বুলিয়ে আনল, নাহ, ভেতরে যাবার বা
বাইরে আসার কোন পায়ের চিন্হ নেই ! “কেউ ভেতরেও যায়নি, বাইরেও আসেনি” সে বলল ।

“অথবা এগুলি নতু ন তু ষারের আস্তর !” বলল নাথান।

ক্লাইড মাথা নাড়ল “নাহ ! ওগুলি এতো তাড়াতাড়ি চলে যাবে না, আমরা মাত্র আধঘণ্টা আগের
কথা বলছি। কিছু একটা অবশ্যই দেখা যেতো, নিদেনপক্ষে কোন গর্ত ।”

পিনাট শুকনোভাবে ঢোঁক গিলল , ভেতরে ভেতরে সে চাচ্ছে যে ক্লাউনটা পালিয়ে যাক ! কারণ
পার্কে যা দেখেছে তারপর ওই দানবগুলির সাথে আর কোন সাক্ষাৎ সে সহ্য করতে পারবে বলে
মনে হয়না ! অন্যরা কি ভাবল তাতে ও থোড়াই কেয়ার করে, ও জানে ও কি দেখেছে। ওগুলি
মোটেই কোন ক্লাউনের মাস্ক পরা মানুষ ছিল না। ওখানে , দুটো, ...... হ্যাঁ হ্যাঁ দুটো সত্যিকারের
দানব ছিল !

“চলো সামনে আগাই” বলল ক্লাইড।

এই ধরণের লোকেরা পিনাটকে সবসময় নার্ভাস করে তোলে, কিন্তু এখন -- এখন পিনাট কৃ তজ্ঞ
ব্যাটা সাথে আছে বলে। ও দাগী আসামী হতে পারে, কিন্তু যথেষ্ট সাহস রাখে মনে, আর এ ধরণের
কঠিনতম পরিস্থিতির উপযোগী বেশ কিছু দক্ষতাও ওর আছে ! ক্লাইড ওদেরকে বিল্ডিঙের
একপাশে নিয়ে গেলো, পিনাটদের দেখে যাওয়া ছাপ গুলো এখনও আছে, কিছুটা তু ষারে ঢেকে
গেছে, কিন্তু আর কোন চিন্হ দেখা যাচ্ছে না !

“ও এদিক দিয়ে বেরোয়নি ” ঘোষণা করলো ক্লাইড।

“ডেলিভারি এন্ট্রান্সের দিকে আরেকটা পেছনের দরজা আছে ” বলল নাথান ফ্রি।
94

পিনাট মাথা ঝোকাল, ডেলিভারি এন্ট্রান্স পার্কিং লটের দিকে খোলে, যেটা ব্রোকেন বটল বার আর
আরেকটা এপার্ট মেন্ট বিল্ডিং – দুইই ব্যবহার করে। এখন , ওরা বরফের দেয়ালে ঠোক্কর খেতে
খেতে সেদিকে এগোল।

অনেক সংগ্রামের পর, ওরা সেদিকেও পৌঁছল, পিনাট ওর ফ্ল্যাশলাইট ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখল, নাহ !
এখানেও কোন চিন্হ নেই ! এখানে বাতাসের পরিমাণ অনেকটা বেশি, তাই কিছু থাকলে দেখা
যাবার কথা আরও ভালোভাবে।

“এদিক দিয়ে কেউ এসেছে মনে হচ্ছে ” বলল নাথান।

ও দাঁড়িয়ে আছে এপার্ট মেন্ট বিল্ডিঙের কাছে, যেখানে একটা সিঁড়ি ধাপে ধাপে ওপরে উঠে গেছে।
পিনাট আর ক্লাইড সেদিকে এগিয়ে গেলো, হ্যাঁ ,ওখানে আসলেই কেউ হেঁটে গেছিলো। সম্ভবত
এই বিল্ডিঙেরই কোন বাসিন্দা হবে ।

“হুম , আমাদের যা দেখা দরকার দেখে নিয়েছি, ক্লাউনটা যদি পাব ছেড়ে বেরোত , তাহলে এতক্ষণে
ওর পায়ের ছাপ আমরা পেয়ে যেতাম” বলল পিনাট।

“এক মিনিট দাঁড়াও ” বলল ক্লাইড “সিঁড়ির নিচে আলো দেখাও তো !”

পিনাট বিনা বাক্যে আদেশ পালন করলো, সিঁড়ির নিচে অন্ধকারের ভেতর, কিছু একটা লুকানো
আছে ! কিছু একটা , যেটার ওখানে থাকার কথা না , হতে পারে ময়লা ফেলার পলিথিন, বা অন্য
কোন মামুলি জিনিস ! কিন্তু পিনাটের তা মনে হয় না। ওর হার্ট একটা বিট মিস করলো।

নাথান হাঁটু র ওপর বসে বরফ খুঁড়তে আরম্ভ করলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই গর্তে র ভেতর থেকে
একটা হাত বেরিয়ে আসলো, একটা মানুষের হাত, জমে শক্ত হয়ে গেছে আর বরফের আস্তরণ
পড়েছে !

“ওহ শিট !” পিনাট ভয়ে হিসহিস করে উঠলো।


95

এখন ক্লাইড নাথানকে খুঁড়তে সাহায্য করছে, এটা পারকা পরা একটা মানুষের লাশ। দেখে মনে
হচ্ছে ওটা মাঝখান থেকে দুভাগ করা, শরীরের মাঝখানটা খোলা, গলা ছেঁ ড়া, মাথাটা সামান্য
কয়েকটা শিরার সাথে কোনমতে আটকে আছে ! নীল হয়ে যাওয়া মুখটা এক নীরব চিৎকারে হাঁ
হয়ে আছে, আর ওরা সাথে সাথে চিনতে পারলো ওটা কে !

“লিও ! ” নাথান বলল ঊর্ধ্বশ্বাসে, ওর গলা শুকনো আর ভঙ্গুর।

“এটা অসম্ভব ” পিনাট ফিসফিস করে বলল, যদিও সে পারকা আর ওটার ভেতরের মানুষটাকে
ভালোই চিনতে পেরেছে।

ক্লাইড লাশটার পেছন থেকে ওয়ালেটটা বের করে আনল, এই লোকটার ভয় ডর বলতে কিছুই
নেই ! “লিও বুথ” পড়লো সে আইডি কার্ড থেকে।

কিছুক্ষণের জন্য তিনজন মানুষ একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো, ওরা এই আবিস্কারের
গুরুত্ব ঠিকই বুঝতে পেরেছে। পিনাট ঘনঘন মাথা নাড়তে লাগলো , চোখে জল “ড্যাম ইট ! এটা
লিও না ! লিও তো বারে, ওকে আমরা সবাইই দেখেছি !”

নাথান চু প করে রইলো।

ক্লাইড লাশটার দিক থেকে পিনাটের দিকে তাকাল , আর প্রথমবারের মতো ওর গলায় ভয় টের
পাওয়া গেলো “আমি জানিনা বারে ওটা কি, কিন্তু ওটা লিও বুথ নয় !”

অধ্যায় ২৭

ইতিমধ্যে , বারের ভেতরেও পরিবেশ তেমন সুবিধার না । কার্প অন্যদের সাথে দাঁড়িয়ে আছে, মুখ
খুলছে না মোটেই, হয়ত ভয় পাচ্ছে মুখ খুললে না জানি আর কি বের হয়ে আসবে। অবারের
সামনে টু লের ওপর বসে উইল টিগের দিকে ঠায় তাকিয়ে আছে, কারণ সবাইই ওর দিকেই তাকিয়ে
96

আছে ............বারের বাকিরা, ডেড স্কালের বাকি তিন সদস্য, বনি ফস্ট, স্তিউ পেচেক -- আর
অবশ্যই, ভ্রুকু টি কু টিল দৃষ্টিতে ব্রেনডা পেচেক।

“যখন এই ডাইনি শিকার শেষ হবে, আমি তোমার কাছ থেকে একটা ক্ষমাপ্রার্থনা আশা করবো ”
বলল সে “এ শহরে আরও অনেক বার আছে, কিন্তু তু মি ব্যাক্তিগতভাবে আমাকে পছন্দ করো না
বলেই আমার পেছনে লেগেছ !”

“আমি তোমার পেছনে লাগিনি” আশ্বস্ত করলো শেরিফ।

“আমি বলি কি, চলো আমরা বেহালা বাজাই যতক্ষণে রোম পুড়ে যাচ্ছে !” বলল লিও , গ্লাসে
আরেকটা হুইস্কি পেগ ঢালতে ঢালতে।

“হেই !” ব্রেনডা রাগত স্বরে চিৎকার করে উঠলো “ওই বোতলটা কোত্থেকে পেলে ?”

“ম্যাজিক, বিশুদ্ধ ম্যাজিক !” বাঁকা হাসি হেসে বলল লিও।

“ঠিক আছে, আশা করি পেমেন্ট করার জন্যও ম্যাজিক আছে তোমার কাছে !”

“অবশ্যই” লিও জবাব দিলো।

কার্প খেয়াল করলো, লিও বেশ রিলাক্সড মুডে আছে, যেখানে ও নিজেসহ অন্যরা টেন্সড হয়ে
আছে কি হয় কি হয় এই ভেবে, সেই জায়গায় লিওকে দেখে মনে হচ্ছে ও কোন বীচে ছুটি কাটাতে
এসেছে ! এদিকে কার্প, পেগের পর পেগ সাবড়ে যাচ্ছে, কিন্তু ওর হাতের কাঁপুনি থামাতে পারছে না
কিছুতেই।

“এখানে একটা মজাদার অবস্থা তৈরি হয়েছে” বলল লিও “আমরা এখানে দম আটকে বসে আছি
আমাদের সবার জীবনের দায়িত্ব শেরিফের হাতে তু লে দিয়ে। ও একা কি করবে? কি হবে যদি ওর
ডেপুটি আর অন্যরা যদি ফেরতই না আসে আর ?”

“শাট আপ,লিও !” টিগ গর্জ ন করলো ।


97

লিও হাসল, আর সেই মুহূর্তে কার্পের কানে অসঙ্গতিটা ধরা পড়লো, এটা ওর কল্পনাও হতে পারে,
কিন্তু হাসিটা কেমন জানি মেকি মনে হল না ? এটা ওকে সেইসব ডল পুতু লের হাসির কথা মনে
করিয়ে দিলো, যেগুলির পেছনে একটা সূতা থাকতো যেটা টান দিলে ওগুলি কথা বলতো !

“তু মি ঠিক আছো , লিও ?” বলল বনি, সেও মনে হয় অসঙ্গতিটা ধরতে পেরেছে।

“ফ্যান্টাস্টিক , মাই ডিয়ার !” লিও বলল দেঁতো হাসি হেসে, ওর দাঁতগুলি কেমন জানি লম্বা আর
হলুদ মনে হলো !

কার্পের মেরুদণ্ড দিয়ে ঠাণ্ডা স্রোত নেমে গেলো, এখানে আসলেই কিছু একটা ঠিক নেই ! ও লিওর
সাথে অনেক বছর যাবত ড্রিংক করে আসছে, কিন্তু লিওর দাঁতগুলি কখনোই এরকম লাগেনি !
আর ওর হাসিটাকেও দেখতে স্টাফড কু মিরের হাসির মতো লাগেনি ! আর...... আর রুমের
মেজাজটাও কেমন পাল্টে গেছে, বাতাসে যেন কি একটা ভেসে বেড়াচ্ছে, এমন একটা কিছু , যেটা
কার্প ধরতে পারছে না ! ওর ঘাড়ের পেছনের চু লগুলি সরসর করে দাঁড়িয়ে গেলো, ও ঢোঁক
গিলতে চাইলো, কিন্তু পারলো না !

“আর কতক্ষণ লাগবে ?” প্রশ্ন করলো মেডেলিন , ও ওর দুইজন বন্ধু র সাথে এখানে এসেছে। ওরা
সবাই ভয়ে সিটিয়ে আছে।

“আর বেশিক্ষণ না ” বলল টিগ , কিন্তু ওর গলা শুনে মনে হচ্ছিলো ও নিজেই জানে না সেটা !

“আমার সেল ফোনটাতে কোন সিগন্যাল পাচ্ছি না ” মেয়েটা আবার বলল “এটা কি ঝড়ের
কারণে হচ্ছে ? ঝড়ে কি সেল ফোনের নেটওয়ার্ক ও বন্ধ হয়ে যায় ?”

“একটা ঝড় অনেককিছু করতে পারে ” বলে উঠলো লিও “ওটা সেল ফোনের নেটওয়ার্ক বন্ধ
করে দিতে পারে, বৈদ্যুতিক নানান সমস্যা তৈরি করতে পারে, এমনকি অনেক মানুষকে অদৃশ্য করে
দিতে পারে যাদেরকে পরে আর কখনও দেখা যায় না !”

“আমি তোমাকে সাবধান করছি, লিও !” খেঁকিয়ে উঠলো টিগ।


98

লিও ওর ঠোঁট চেটে উঠে দাঁড়ালো, ওর মুখ থেকে লালা বের হয়ে চিবুক দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে ! ওর
চোখগুলি হঠাৎ করে গ্লাসের মতো চকচকে হয়ে গেলো কি করে !

“বসে পড় , লিও ! ” টিগের গলা শোনা গেলো, ওর গলা শুনেই বোঝা গেলো, এখানে যে কিছু
একটা ঘটতে চলেছে, সেটা অন্য সবার মতো ও-ও বুঝতে পেরেছে।

অদ্ভু ত কিছু ঘটনা ঘটতে শুরু করলো, লিও এমন লোমহর্ষক ভাবে হাসতে শুরু করলো যে
কার্পের মনে পরে গেলো ওর ছোটবেলায় দেখা একটা মুভির কথা। সেটাতে একটা লম্বা লোক
ফ্রক কোট পরে একটা গাড়ি নিয়ে আসতো, ছেলেপেলেদের চকলেট, চিপস বা খেলনা কু কু রের
লোভ দেখিয়ে গাড়িতে তু লে নিতো। যখনই ছোট ছেলেমেয়ে গুলি ওর কব্জাতে আসামাত্রই ও
ঠিক এরকমই বিশ্রীভাবে হাসতে শুরু করতো, ঠিক যেভাবে এখন লিও হাসছে !

বাইরে তু ষার ঝড়ের গর্জ ন ছাপিয়ে লিওর গলা শোনা গেলো “আমার মনে হয়না ওরা আর
ফিরবে, শেরিফ ! ” নাকি সুরে বলল ব্যাটা। “প্রশ্ন হলো , এখন তু মি কি করবে ? বাইরে যে
জিনিসটা ঘুরে বেড়াচ্ছে ওটা যদি আমাদের গলা ফাঁক করতে শুরু করে, তখন তু মি কি করবে ?
তোমার কি সেটা করার মতো সাহস আছে ?”

টিগ কোন জবাব দেবার আগে, ডেড স্কাল দলের এক ‘টাফ ডগ’ সদস্য, চার্লস পেনলি, যে কিনা
‘মঙ্গোল’ নামে একটা ক্লাবে থাকে, সে এগিয়ে এলো লিওর সামনে । “ও বলেছে তোকে বসে
পড়তে, ব্যাটা জারজের বাচ্চা, শুনতে পাস্ নি ?”

লিও ঘাড় কাত করে মনোযোগী স্রোতার মতো শুনছিল এতক্ষণ , চার্লসের কথাগুলোই আবার
আওড়াল “ও বলেছে তোকে বসে পড়তে, ব্যাটা জারজের বাচ্চা, শুনতে পাস্ নি ?”

ডেড স্কাল সদস্য এবার সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো “তু ই কি আমাকে নিয়ে মজা করছিস, ব্যাটা
গবেট?”
99

লিও ওর দিকে ভাবলেশ শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবার আওড়ালো “তু ই কি আমাকে নিয়ে মজা
করছিস, ব্যাটা গবেট ? তু ই কি আমাকে নিয়ে মজা করছিস, ব্যাটা গবেট ? তু ই কি আমাকে নিয়ে
মজা করছিস, ব্যাটা গবেট ?” ও বলেই চলল যতক্ষণ না আওয়াজটা একটা হাই পিচ চিৎকারে
পরিণত না হচ্ছে “তু ই কি আমাকে নিয়ে মজা.........তু ই কি আমাকে নিয়ে মজা............ মজা
মজা মজা মজা !”

“ব্যাটা কু ৎসিত জোকার ” বলে দ্রুত সামনে এগিয়ে গেলো, এখন লিওর ভয় পাওয়াই উচিত,
কারণ চার্লস আসলেই একটা উন্মাদ কু ত্তার বাচ্চা, আর শহরের সবাইই সেটা জানে ! বেশ কিছুদিন
আগে এরকমই একটা বার ফাইটে ও ওর প্রতিপক্ষকে সাতবার ছুরি মেরেছিল, আরেকটা ফাইটে
কামড়ে নিয়েছিল নাক ! ও বেশ অনেকবার হসপিটালে আর জেলখানাতে ঘুরে এসেছে। কিন্তু
লিও দাড়ি কমা ছাড়া কথা বলেই চলল, বলেই চলল , এতই দ্রুত যে ও কি বলছে কেউ আর
সেটা বুঝতে পারছে না !

“আর আমি এতই খারাপ হয়ে গেলাম যে আমি তোমার রক্তপান করতে চাইলাম !” বলে চলেছে
লিও।

কিছু মানুষ চিৎকার করা শুরু করলো, আর কিছু মানুষ শুরু করলো ফোঁপানো, আর টিগ চিৎকার
শুরু করলো “এইসব আবোলতাবোল কথা বন্ধ করো , লিও ! বন্ধ করো ! বন্ধ করো ! ”

কিন্তু লিও চু প করলো না , তখনই একটা অভাবনীয় ব্যাপার ঘটতে শুরু করলো , সব সেলফোন
গুলি একসাথে বাজতে শুরু করলো ! কার্পের কোন ফোন নেই কারণ সে মনে করে গভর্নমেন্ট
ওগুলি দিয়ে মানুষের ওপর নজর রাখে। ও সবার রিংটোন শুনল, সাথে সাথে চিনতেও পারলো ,
এটা সেই মেলোডি যেটা ক্লাউনটা গুণগুণ করছিলো মেনস রুমে ওর পাশের কেবিনে বসে –
লিটল বানি ফো ফো ! লিটল বানি ফো ফো !

“এখানে কি হচ্ছে ?” চিৎকার করে বলল ব্রেনডা।


100

এটা একটা ভালো প্রশ্ন, কারণ হঠাৎ করেই চারপাশের সব কিছু পাল্টে গেলো ! বাস্তবতা যেন
পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেলো ! মুখ হাঁ করে কার্পি সব দেখছিল , লিওর কণ্ঠ আর ক্রমাগত লিটল
বানি ফো ফো শব্দ ওর ওপর মন্ত্রমুগ্ধকর একটা প্রভাব তৈরি করলো। ও এটা ভেবে আশ্চর্য হল যে
ও এটা কেন কখনও খেয়াল করেনি যে লিও প্রায় টাক মাথা, শুধু মাথার দুপাশে কয়েকগাছি
সবুজ চু ল ছাড়া , অথবা ওর চেহারা এইমাত্র নদী থেকে তোলা কোন মৃতদেহের মুখের মতো সাদা,
অথবা ওর চোখ প্রস্রাবের মতো হলুদ আর চোখের মণিগুলি লাল রুবির মতো জ্বলজ্বলে !

এটা কি পাগল হয়ে যাবার জন্য যথেষ্ট নয় ?

অবশ্যই সে একটা আরামদায়ক অনুভু তিহীনতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলো, ওর আশেপাশে কি ঘটছে
সে সম্পর্কে একেবারেই উদাসীন। লোকজন চিৎকার করছে আর – লিওর কাছ থেকে সরে যাবার
চেষ্টা করছে, কারণ লিও – পরিষ্কারভাবেই – লিও নেই ! যেই লিটল বানি ফো ফো রিংটোন বাজা
বন্ধ হলো , লিও সাপের মতো মোচড়াতে লাগলো , আর কোন গোলমাল ছাড়াই, স্রেফ ফেটে খুলে
গেলো সে, আর ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো একটা ক্লাউন !

“ওটার কাছ থেকে সরে যাও সবাই ! সরে যাও ! ” গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠলো টিগ। ও
চাচ্ছে জিনিসটার ওপর একটা ক্লিয়ার লাইন-অব-ফায়ার পেতে। কিন্তু লোকজন একজন
আরেকজনের ওপর হোঁচট খেয়ে পড়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারছে না ! আর ওদের মাঝখানে
মুখে মেকি হাসি লটকে ঘুরে বেড়াচ্ছে ক্লাউনটা। এবার ওটা মাথা ঘুরিয়ে সরাসরি টিগের দিকে
তাকাল, যেন ওকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে , পারলে এই নির্দোষ মানুষদের মাঝখানে গুলি করে দেখা !

ওটা পরে আছে বিশাল কমলা রঙের জুতা , আর উজ্জ্বল নীল রঙের ক্লাউনের পোশাক , হলুদ
বড় বড় ফু টকি অলা। টিগ জানে এটাই ওই ক্লাউনটা যেটা পার্কে র ফাঁদ থেকে পালিয়েছিল। ওটা
ওর দিকেই ছুটে আসতে লাগলো এবার, মুখ ভর্তি পুঁজঅলা লালা ঝরাতে ঝরাতে। ওটার নাকটা
টকটকে লাল একটা আধখাওয়া চেরি ফলের মতো দেখাচ্ছিল, কু টিল মুখাবয়ব আর ভয়ানক
101

দেখতে ধারালো হলুদ দাঁত। ওটার জিহ্বাটা এবার বের করলো সে, কু চকু চে কালো আর মাঝখানে
চেরা।

মঙ্গোল ক্লাবের চার্লস ওর ছুরিটা টেনে বের করে ক্লাউনটার গায়ে বসিয়ে দিলো , পরপর চারবার।
শেষবার বের করার আগে ছুরিটা বুক থেকে টেনে পেট পর্যন্ত ফেড়ে দিলো সে, ক্লাউনটা রাগে বুনো
জন্তুর মতো চিৎকার করে উঠলো ! কালো রক্ত, হলুদ রঙের আঠালো মাংস আর লাল শিরা
বেরিয়ে এলো হড়হড় করে ।

চার্লস চিৎকার করে উঠলো, কারণ বেরিয়ে আসা একটা লাল শিরা ওকে সম্পূর্ণ পেঁচিয়ে
ফেললো, তারপর চাপ দিয়ে ধরে রাখল , ঠিক অজগর সাপের মতো, শরীরের হাড়গুলো মটমট
করে ভাঙ্গার শব্দ সবাই শুনলো । চার্লসের ক্যারটিড আর্টারি এক টানে ছিঁ ড়ে ফেলল, তারপর ওই
পুতু পুতু ভ্যাম্পায়ার রোমান্সের মতো চু মুক মারলো না কিন্তু। ও পান করলো, গিলে ফেলল, চেটে
খেল আর ছড়ছর করে রক্ত আর মাংসের টু করো সারা ঘরে ছড়িয়ে দিলো ! তারপর অবশিষ্ট
মৃতদেহটা মাথার ওপর ধরে রক্তগুলি নিজের ওপর ছড়িয়ে পড়তে দিলো ! এরপর ব্রেনডার
অনেক যত্নে সাজিয়ে রাখা একটা বোতলের র‍্যাকের দিকে ছুঁ ড়ে দিলো দেহটা ।

বেশীরভাগ কাস্টমার সরে পড়েছে। ব্রেনডা লুকানো জায়গা থেকে একটা বেসবল ব্যাট বের করে
‘হোয়াম’ করে ক্লাউনটার মাথায় মেরে দিলো, একবার , দুইবার,তিনবার ! ক্লাউনটা অম্লানবদনে
সেসব হজম করে ওর কাঁধে একটা কামড় বসিয়ে দিলো, এটা বোঝাবার জন্য যে ব্যাথা কাকে বলে
! তারপর ওকে ছুঁ ড়ে ফেলে তড়িঘড়ি করে এগিয়ে গেলো টিগের দিকে !

অধ্যায় ২৮
102

বারটা গোলমালের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে , লোকজন মোটামুটি সব দিকেই দৌড়াচ্ছে পালিয়ে যাবার
জন্য, আর সমানে একে অপরের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। এর মাঝে ক্লাউন তার শিকার খুঁজে
নিচ্ছে, রক্তের নেশায় উন্মাদ দানবটার আর কোনদিকে খেয়াল নেই।

যথেষ্ট হয়েছে, ভাবল এবার টিগ।

ও দৌড়ে সামনে এগোল , সামনে থেকে এক মহিলাকে ঠেলে সরিয়ে ও ক্লাউনটাকে গুলি করলো,
ওর শটগান ক্লাউনটার বুকে মুঠি সমান একটা গর্ত করে দিলো, সেখান থেকে গা গুলানো
আকৃ তির কিছু শামুকের মতো জিনিস বেরিয়ে এলো। ওটার শরীর থেকে লাল শিরার মতো যে
জিনিসগুলি বেরিয়ে এসেছিলো, ওগুলি বাতাসে চাবুকের মতো শিস কাটতে লাগলো আর রাগী
ভাইপারের মতো হিসসসস হিসসসস করতে লাগলো। শেষ মাথার কাঁটাগুলি দিয়ে আশেপাশের
অনেক লোকজনকে ওটা আঘাত করছে, ওরা আকাশ বাতাস ফাটিয়ে চিৎকার করে যাচ্ছে। ওটার
হাত থেকে বেরিয়ে এসেছে শিকারি পাখির মতো ধূসর বড় বড় নখ।

টিগ চাইলো আরেকটা গুলি করতে, কিন্তু বনি ফস্ট কোত্থেকে হিস্টিরিয়াগ্রস্থের মতো ছুটে এলো ওর
দিকে, পায়ে পা আটকে ফেললো কিভাবে জানি, ফলে ওরা দুজনেই পপাত ধরণীতল !

আরেকজন ডেড স্কাল রণক্ষেত্রে অবতীর্ণ হলো এবার, ও একজন লম্বা , ভয়ংকর দেখতে লোক ,
অদ্ভু তভাবে একটা কিউট ডাকনামের অধিকারী সে – পিবলস ! কিন্তু চোখের পলকে
অক্টোপাসের কর্ষিকার মতো দেখতে লাল শিরাগুলির একটা ওকে ধরে ফেললো, একটা ঢু কে
গেলো ওর বাম চোখ দিয়ে ,আরেকটা ঢু কল নাভির ভেতর দিয়ে। ওর বিশাল থাবা দিয়ে ওগুলি
টেনে বের করতে চাইলো পিবলস, কিন্তু ওগুলির গায়ে লেগে থাকা গোলাপি লালার মতো
জিনিসগুলি ওর হাত পুড়িয়ে দিচ্ছিল, ব্যাটারির ভেতরে থাকা এসিডের মতো।

যতক্ষণে টিগ বনির নাগপাশ থেকে নিজেকে মুক্ত করে এদিকে মনোযোগ দিলো, ততোক্ষণে
বড়শির মাথায় মাছের মতো পিবলসকে টেনে নিয়েছে ক্লাউনটা। সাপের চোয়ালের মতো বিশাল
এক হাঁ করে হলদেটে এক ধরণের পিত্ত রস ও ঢেলে দিলো পিবলসের ওপর। বগ বগ বগ বগ করে
103

চোখের সামনে মোমের মতো গলে যেতে লাগলো পিবলসের মাংস ! চোখ নাক মুখ সবকিছু
আকৃ তি হারিয়ে বিকৃ ত , কদাকার হয়ে গেলো সে ! তারপর হোস পাইপের মতো একটা নল বেরিয়ে
এলো ক্লাউনটার চেহারা থেকে , আর সেটা দিয়ে সেই গলে যাওয়া মাংস টেনে নিতে লাগলো
দানবটা।

সেই মুহূর্তে , পিনাট রুমের ভেতরে ঢু কে এসেছিলো, আর সে এই দৃশ্য দেখে প্রায় মূর্ছা যায় আর
কি ! অন্যদিকে ক্লাইড দেখল , ওর রক্তের ভাইয়ের মতো পিবলসকে একটা ক্লাউন সবচেয়ে
জঘন্যতম উপায়ে হত্যা করেছে ! একজন ডেড স্কালের এহেন মৃত্যুর প্রতিশোধ যে তাকে নিতেই
হবে !

বাইকারদের কোড অব অনার যে তাই বলে !

একটা গর্জ ন করে ছুটে গেলো ক্লাউনটার দিকে, ওর কোন আইডিয়া নেই ও কিসের দিকে ছুটে
যাচ্ছে, শুধু ১০০% এড্রিনালিনের প্রবাহই ওকে চালিত করছে। যখন ক্লাউনটার শিরাগুলি ওকে
ধরতে এলো, ও বাউলি কেটে একপাশে সরে গিয়ে সোজা ডাইভ দিয়ে পড়লো বারের পেছনে।
সেখান থেকে তু লে নিলো দুটো স্ট্রং রামের বোতল। এরপর ও যা করলো সেটা আত্মহত্যার
সামিল, আবার একই সাথে প্রচণ্ড বুদ্ধিরও পরিচায়ক ! ও লাফ দিয়ে শূন্যে উঠে গেলো, তারপর
ক্লাউনটার সাদা, কংকালসার আর রক্তমাখা খুলিতে দুটো বোতলই ভাঙল ঝনঝন করে। এখন ,
ক্লাউনটা ৭০% এলকোহলে ভিজে গেছে। ক্লাইড পেছনে তাকিয়ে চিৎকার করলো “ব্যাটাকে
জ্বালিয়ে দাও!”

নাথান ফ্রি, অনেক বছর ধরে প্রেসিডেন্টের পাশে থেকে লড়াই করে আসছে, ওর জিপ্পোটা জ্বালিয়ে
ছুঁ ড়ে দিলো ক্লাউনটার দিকে ।

৭০% এলকোহল সমৃদ্ধ রাম সাথে সাথে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো, ক্লাউনটার সারা শরীরে
আগুন ধরে গেলো। মোচড়াতে মোচড়াতে গগনবিদারী অশরীরী আর্ত নাদ ছাড়তে লাগলো সে,
এটা ওর চিন্তাতেও ছিল না ! জ্বলন্ত মাংসের টু করো মেঝেতে খসে পড়তে লাগলো, জুকবক্সের
104

ওপর আছড়ে পড়লো সে, তারপর টলতে টলতে পাশের দরজা দিয়ে বাইরের রাতে হারিয়ে গেলো,
জীবন্ত মশালের মতো । এমনকি ঝড়ের শব্দ ছাপিয়েও ওটার গর্জ ন আর আর্ত নাদ শোনা
যাচ্ছিলো।

যখন স্টান বারবাচেক অবশেষে, সবশেষে লাইল আর লুয়ানের বাড়িতে পৌঁছালো, ওকে ওদের
দুজনকেই এই ঝড়ের মধ্যে সিঁড়ি বেয়ে ওঠার জন্য সাহায্য করতে হলো। ওদের অপমানের ঝু লি
খালি হয়ে গেছিলো, শেষ দশ মিনিট ওরা একে অপরের কাছে মাফ চাইতে, একে অপরকে জড়িয়ে
ধরতে আর ওদের অমর ভালোবাসা প্রকাশ করতেই ব্যয় করেছে !

এটা স্টানের জন্য মর্মস্পর্শী হতো, যদি না এর আগেও কয়েকশো বার এই দৃশ্য ওকে দেখতে না
হতো, যখন ওদেরকে ওদের এপার্ট মেন্টে ঠেলে ঢু কিয়ে দিয়ে ফিরে আসছে স্টান, তখন সে
ভাবছিল, ভাগ্যিস ওদের দুজনের ওদের দুজনই ছিল, ওদের আসলে আর কাউকে প্রয়োজন নেই।

এখন ঝড়ের মধ্যে দিয়ে নিজের গাড়িতে ফিরে যাবার সময় একটাই চিন্তা ওর মাথায় ঘুরপাক
খাচ্ছিল, ক্লাউন ! এটাই ওর সুযোগ। কিন্তু ওর একটা ভালো স্টার্টিং পয়েন্ট লাগবে......... আর
একটা ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়া ! ও অলরেডি একটা ক্লাউন দেখেছে, কিন্তু ব্যাটাকে সে চাপা দিয়ে
দিয়েছে। এখন ওটাকে আবার খুঁজে বের করতে হবে, ওটা যদি মরে যায়, তো গেল। আর যদি না
যায়, তাহলে একটা ভিডিও তোলার চেষ্টা করতে হবে, হ্যাঁ, এটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ !

এখন তু ষারের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাবার সময় ও পুরো স্মৃতিটা আবার ঝালিয়ে নিচ্ছিল, সব
পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা মনে মনে সাজিয়ে নিচ্ছিল। পুরো ব্যাপারটা এখনও স্মৃতিতে তাজা, কিন্তু একটা
ব্যাপারে স্টান শিওর, ক্লাউনটা আর যাই হোক, মানুষ না ! দানব, কিন্তু কি ধরণের দানব – কি ওটা
জম্বি, ভ্যাম্পায়ার, ওয়েরউলফ , নরক থেকে উঠে আসা কোন শয়তান -- তা ও বলতে পারবে না

105

আসলে ও এখন সোজা ট্যাক্সি–এ–গো–গো কোম্পানিতে ফেরত যেতে চায়। কিন্তু তার বদলে ও
নাইন্থ স্ট্রিটে নিজের বাসার উদ্যেশে গাড়ি ছোটাল, নিজের ক্যামকর্ডারটা নিতে চায়। যখন ও
পৌঁছল, ইঞ্জিন চালু রেখেই ঝটিতি নিজের ব্যাচেলর এপার্ট মেন্ট এ ঢুঁ মারল। বেশি বড় কিছু না
ওটা, বেডরুম, বাথরুম, ইট–ইন-কিচেন, কিন্তু কাজ চলে যায়। কাজ সেরে বেরোবার মুখে স্টানের
হঠৎ মনে হল – ইস ! আজকের রাতটাও যদি অন্য রাতগুলোর মতো হতো ! অন্যান্য দিনের
মতোই রাত তিনটার শিফট শেষ করে ডীপ ফ্রিজের জমে যাওয়া পিজা আর বিয়ার খেতে খেতে
টি ভি দেখা !

কিন্তু আজকে সেরকম কোন রাত নয়!

আজ ওর সামনে এক অভূ তপূর্ব অ্যাডভেঞ্চার অপেক্ষা করে আছে। ও ক্যামকর্ডারের ব্যাগটা


কাঁধে ঝু লিয়ে নিলো, সাথে নিলো একটা এসডি কার্ড (মেমোরি কার্ড ), একটা অতিরিক্ত
রিচার্জে বল ব্যাটারি।

ব্যাস ! এখন ওকে যা করতে হবে সেটা হল ওই দানবটাকে ক্যামেরার সামনে এনে ফেলতে হবে।

জিপে ফেরত এসে অফিসে কল করতে চাইলো, কিন্তু সেলফোনে কোন নেটওয়ার্ক নেই, তাই সে
রেডিওতে চেষ্টা করলো “দিস ইজ ট্যাক্সি নাম্বার টু , প্লিজ কাম ! কার টু , ফ্লো,তু মি কি আছো
ওখানে ? ”

কা কস্য পরিবেদনা !

ফ্লো হয়ত বাথরুমে গিয়ে থাকবেন, ভাবল সে। যাই হোক, সামনাসামনি দেখা করে কথা বলা যাবে।

অধ্যায় ২৯

এদিকে ‘ব্রোকেন বটল’ বার নরকের দ্বারে পরিণত হয়েছে, টিগ ভাবছিল এখানে যে মৃত্যু হয়েছে
সেটাই যথেষ্ট খারাপ হয়েছে, তবে ওদের চাইতে যারা আহত হয়েছে টিগ ওদেরকে নিয়ে বেশি
106

চিন্তিত। চার্লস আর পিবলস মারা গেছে, ব্রেনডা ভীষণ এক কামড় খেয়েছে। ক্লাউনটার লাল শিরা
দিয়ে অনেকে আহত হয়েছে, ওর নখের বাজে ধরণের আঁচড়ও খেয়েছে অনেকে। পুরো ব্যাপারটা
একটা দুঃস্বপ্নের মতো লাগছিলো টিগের কাছে। এখানে এ্যাম্বুলেন্স, শব পরিবহণের গাড়ি, ফরেন্সিক
টিম, ফেডারেল পুলিশ আর যত বেশি সম্ভব ব্যাক আপ লাগবে। আপাতত একটা এ্যাম্বুলেন্স
জরুরী দরকার, কারণ মানুষের রক্তপাত হচ্ছে, আর বেশীরভাগ মানুষ শকে চলে গেছে।

ওদের জরুরী ভিত্তিতে সাহায্য দরকার, কিন্তু টিগ জানে অন্তত আজ রাতে, এই ভয়ঙ্কর তু ষার
ঝড়ের ভেতর, ওরা এটা পাচ্ছে না।

কিন্তু তারপর কি ? টিগ জানে ওরা সবাই ওর দিকেই তাকিয়ে আছে, আর ও ওদেরকে হতাশ
করতে চায় না !

হাইওয়ে অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে, কিন্তু যদি কোন ইমার্জে ন্সি থাকে – এখানে সেরকম
সত্যিকারের ইমার্জে ন্সিই দেখা দিয়েছে – কাউন্টি অবশ্যই ওটা খুলে দিয়ে কিছু স্নো প্লাউ পাঠাবে,
যাতে ইমার্জে ন্সি যানবাহনগুলো আসা যাওয়া করতে পারে।

পিনাট আর নাথান ফ্রি ফিরে এলো, পিনাট টিগকে টেনে একপাশে নিয়ে গেলো “ আমি সবগুলো
চ্যানেলে চেষ্টা করেও কাউকে পাইনি, এমনকি ইমার্জে ন্সি চ্যানেলেও ঝির ঝির শব্দ হচ্ছে !”

“আমি তিনবার ৯১১ কল করতে চেষ্টা করেছি ” বলল নাথান, ওর চেহারায় অদ্ভু ত একটা ভয়ের
ছাপ পড়েছে “আমি বুঝতাম যদি কেবল মোবাইল নেটওয়ার্ক ফেল মারতো, কিন্তু ইন্টারনেট,
কেবল, শর্ট ওয়েভ এমনকি ল্যান্ডলাইন গুলিও ডেড হয়ে গেছে একসাথে ! একটা ঝড় কিভাবে
এতগুলি জিনিস ডেড করে দিতে পারে ? ”

“আমরা বাইরের পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি !” পিনাট যোগ করলো।

টিগ বললো “শিট !”


107

এর মানে হলো ওদের নিজেদের জন্য ওরা নিজেরা ছাড়া আর কেউ নেই। ওরা ক্রো ফলসে
আটকা পড়েছে ।

একমাত্র উপায় হলো , আহতদের অল-টেরাইন-ভেহিকেলে (এটিভি) করে সামনে একটা স্নো প্লাউ
দিয়ে ভারমিলিওনে পাঠিয়ে দেয়া। ওখানে ফেডারেল পুলিশের একটা অফিস আছে , আর আছে
সদর হাসপাতাল। কিন্তু তার মানে হবে এই জায়গাটা বালের ক্লাউনদের কাছে ছেড়ে যাওয়া।

ওর মনে হলো ওর অন্য দুই ডেপুটি যদি এখানে থাকতো , তাহলে খুব ভালো হতো। কিন্তু বেচারারা
নিশ্চয়ই অন্য কোন জায়গায় তু ষার ঝড়ে আটকা পড়ে আছে। পুরো ব্যপারটা একটা বিপর্যয়ে
পরিণত হয়েছে।

টিগের মনে পড়লো ক্লেগ, দ্যা ক্লাউন হান্টার , যাকে ও জেলে বন্দী করে রেখেছে , ওর বলা
কথাগুলি -- আপনাদের এটা একটা কলোনি, ক্লাউনদের জন্য প্রথম শ্রেণীর আবাসস্থল, তু ষার ঝড়
শহরটাকে বন্দী করে ফেলেছে, একারণে ক্লাউনদের জন্য আদর্শ শিকারের জায়গা হয়ে উঠেছে এটা
! সকালের আগে, আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, ডজনেরও বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটবে এখানে।
এখানে ছোট্ট ছোট্ট কিউট দেখতে অনেক বসতবাড়ি আছে, ক্লাউনদের জন্য সেগুলি কাঠির মাথায়
থাকা মাংসের কিমার মতোই !

“এখানে আসলে হচ্ছেটা কি ?” পিনাট প্রশ্ন রাখল ।

টিগ অসহায়ভাবে মাথা নাড়ল , ও আসলে বুঝতে পারছে না কি বলবে বা করবে।

ক্লাইড ট্যাগার্ট দাঁড়িয়ে পরে বলল “আমাদের এখন যেটা করতে হবে সেটা হলো , সশস্ত্র হয়ে ওই
বালের ক্লাউনগুলিকে তাড়া করা আর একটা একটা করে মেরে ফেলা !”

ওর ক্লাবের দুইজন সদস্য মারা গেছে, আর সেজন্যই ও রাগে ফুঁ সছে। ওর বদমেজাজের কথা
শহরের সবাই জানে, আর সেজন্যই , ও আজকে ভয়ানক কিছু ঘটানোর তালে আছে।
108

“আমাদের আগে আহতদের যত্ন নিতে হবে” জবাব দিলো টিগ , পিনাটের দিকে ফিরে বলল “শোন,
তু মি ওই লং একার রোডের বাড়িগুলোর ভেতর নাথানের সাথে যাও, অফিসের ভেতর কিছু
মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি থাকার কথা, তারপর তু মি যাবে টনি রুশোর কাছে, ও ফার্স্ট গালফ ওয়ারে
ফিল্ড মেডিক হিসাবে কাজ করেছে, বলবে ওকে আমাদের এখানে জরুরী দরকার। দরকার হলে
এরেস্ট করে নিয়ে আসবে !”

আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা পিনাটকে আমি নাথানের সাথে পাঠাচ্ছি, ভাবল টিগ , কিন্তু
পরিস্থিতি যা দেখা যাচ্ছে তাতে খুব অল্প সময়ের ভেতরে ডেড স্কালদেরকে ওর ডেপুটি শেরিফ
বানাতে হবে। “সাবধানে যেও” ওরা বাইরে বেরোতে গেলে ওদের উদ্দেশ্যে বলল সে “আর মাঝে
মাঝেই কারো সাথে রেডিও যোগাযোগ করতে পারো কিনে দেখো ।”

টিগ এবার ফিরলো বাইকারদের প্রেসিডেন্ট , ক্লাইডের দিকে “তোমার ক্লাবে কতজন লোক আছে?”

“আঠারো ”

“এখানে কতজন আছে ?”

ক্লাইড দুঃখের সাথে মাথা নাড়ল “শুধু আমরা পাঁচজন, বেশীরভাগই শহরের বাইরে থাকে, ওরা এই
তু ষার ঝড়ে আটকে গেছে কোথাও, কিছু গেছে ভারমিলিওনে একটা বিয়ের দাওয়াতে ।”

টিগ দীর্ঘশ্বাস ফেললো , তাহলে রইল ক্লাইড, নাথান আর স্কাঙ্ক, সে নিজে আর পিনাট, মোটমাট
পাঁচজন লোক। আর আরও কাউকে যদি ও দলে ভেড়াতে পারে, তবে ! এই লোকবল দিয়ে
একইসাথে আহত লোকজনকে ভারমিলিওনে পাঠানো আর শহর রক্ষা করা সম্ভব না !

“এখন তু মি কি করবে ?” ক্লাইড জিজ্ঞেস করলো।

টিগ একটু ইতস্তত করলো , কিন্তু বুঝতে পারছে ওর সামনে আর বিকল্প কোন পথ খোলা নেই
“যখন পিনাট আর নাথান ফিরে আসবে, আমি তোমাদের ক্লেগ নামে এক লোকের সাথে পরিচয়
করিয়ে দেবো ! ”
109

“তু মি বলতে চাচ্ছ রেড ক্লেগ ? ওই গ্যাস স্টেশনের মালিক ?”

“নাহ , অন্য আরেকজন ক্লেগ, একজন পেশাদার ক্লাউন হান্টার !”

অধ্যায় ৩০

যদি তু মি ওটা করতেই চাও, তাহলে ঠিক ভাবে করার চেষ্টা করো।

নাইন্থ স্ট্রিট থেকে সেন্ট্রাল এভিনিউর দিকে সাবধানে গাড়ি চালাতে চালাতে ভাবছিল স্টান
বারবাচেক, এখানে ওখানে সাদা বরফের স্তূ প পড়ে আছে, কিন্তু স্টানের ড্রাইভিং দক্ষতা আর
জিপের ফোর হুইল ড্রাইভ মিলে খুব একটা খারাপ চলচিল না গাড়িটা। মিডওয়েস্টে অনেকগুলি
জঘন্য শীত কাটানোর অভিজ্ঞতাও ভালো কাজে দিচ্ছে। এখন অন্তত ও হাল ছেড়ে দিতে চায়না,
যখন ওর মন বলছে ক্লাউনের একটা ভিডিও ওর জীবন পাল্টে দিতে চলেছে।

সে এই কাজ শেষ করার আগেই মরে যেতে চায়না !

সে ওটা নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন না, কারণ পুরানো নিয়মটা সে জানেই – নো রিস্ক, নো গেইন !

হঠাৎ ওর ছোটবেলার কথা মনে পড়লো, মনে পড়লো মায়ের কথা। ওর পঞ্চম জন্মদিনের আগেই
ওর বাবা মারা গেছিলেন। কিন্তু ওর মা ছিলেন একজন স্মার্ট মহিলা, দুই দুইটা চাকরি করতেন
তিনি, আর স্টানসহ ওর অন্য ভাইবোনদের খুব সুন্দরভাবে মানুষ করেছেন তিনি, ওদের খুব বেশি
ছিল না, কিন্তু ভালো খাবার আর গরম কাপড়ের অভাব কখনও হয়নি।

এতদিন পরেও মায়ের একটা কথা তার মনে পড়লো – সবসময় নিজের ওপর বিশ্বাস রাখবে !
এমনকি সব নরক একসাথে ভেঙ্গে পড়লেও, একটা জিনিসের ওপর তু মি সবসময় ভরসা রাখতে
পারবে, সেটা হলো তু মি নিজে !

ওটা ছিল ওর জীবনের সবচেয়ে পছন্দের জ্ঞান । তু মি যদি কোন জিনিস কায়মনোবাক্যে চাইতে
থাকো, আর ওটা পাবার জন্য সব রকম চেষ্টা করো, তবে তু মি সেটা পাবেই ! কিন্তু স্টানের সমস্যা
110

হলো , ও বেশ অলস আর সেটাই ওর বড় সমস্যা । সারা জীবন বকবক করেই কাটিয়ে দিলো,
ভালো কিছু করে উঠতে পারলো না আর ! ভাগ্য ভালো যে ওর মা বেঁচে নেই, নাহলে ওর ওই
ছন্নছাড়া অবস্থা দেখে ভালোই কষ্ট পেতেন।

এজন্যই আজকে রাতে সবকিছু বদলে যাবে, আজকে রাতে ক্রো ফলসে যাই ঘটু ক না কেন, সব
তু লে নেবে ক্য্যামে সে, শহরবাসী এ ধরণের কিছু কখনও দেখেনি, আর ও সব কর্মযজ্ঞের কেন্দ্রবিন্দু
থাকবে ! যখন স্টান সেন্ট্রাল এভিনিউর দিকে মোড় নিলো, সে একই সাথে সাহস আর বেশ
খানিকটা ভয়ের অদ্ভু ত মিশেলে আক্রান্ত হলো। হুইসল স্টপের এক ব্লক আগে, সে দেখতে পেলো
কমলা রঙের আলোর ঝলকানি ! এটা রোড ব্লকের লাইট হতে পারেনা , কারণ ওগুলি আরও
সামনে হাইওয়ের ওপর থাকার কথা , এটা কোন গাড়ির হ্যাজার্ড লাইটের আলো হতে পারে, কিন্তু
দূর থেকে বুনো তু ষারপাত ভেদ করে তেমন কিছুই দেখা যাচ্ছে না ।

দাঁড়াও , দাঁড়াও, ওটা মোটেই কার না, ওটা একটা শহুরে স্নো-প্লাউ , ওটার কাছাকাছি এসে
দেখলো ,ওটার দরজা খোলা। অদ্ভু ত ! স্নো প্লাউ এর ড্রাইভার এভাবে গাড়ি ফেলে কোথায় চলে
গেলো ?

স্টান গাড়িটা রোডের একপাশে দাঁড় করালো , আর অপেক্ষা করতে লাগলো। ওর মন বলছে,
এখানে কিছু একটা সমস্যা আছে। ও আবার ফ্লোকে ধরার চেষ্টা করল,কিন্তু না ! কোন লাভ হলো
না। অদ্ভু তভাবে, কোন রেডিও ট্র্যাফিক শোনা যাচ্ছিলো না, বদলে অন্য সবসময়ের চাইতে ভিন্ন
একটা শব্দ শোনা যাচ্ছিলো, একটা ঠাণ্ডা হিসহিস শব্দ। ঠিক মনে হচ্ছিলো কোন মাটির তলের
সাপের গর্ত থেকে আওয়াজ ভেসে আসছে ! ও ওর সেল ফোনের দিকে তাকালো, কোন
নেটওয়ার্কে র দেখা নেই, একটা বারও দেখা যাচ্ছে না !

এখন ও ভাবতে বসলো , কি একটা অদ্ভু ত ব্যাপার, দানবীয় জম্বি ক্লাউন ( এই বর্ণনাকে অতিরঞ্জন
বলে মানতে রাজি নয় ও মোটেও ),রেডিও ট্র্যাফিক বন্ধ, মোবাইল নেটওয়ার্কে রও একই অবস্থা,
আর ওর মনে পড়লো ও যখন ওর এপার্ট মেন্টে আবহাওয়ার চ্যানেল খুলতে চাইছিল, কেবল
111

কানেকশনও কাজ করছিলো না ! মনে হচ্ছে ক্রো ফলস পৃথিবীর বাইরে নিক্ষিপ্ত হয়েছে, আর অন্য
কোন গ্যালাক্সি এটাকে শুষে নিয়েছে ! ওর মনে পড়লো টোয়াইলাইট জোন অথবা আউটার
লিমিট নামের একটা টি ভি সিরিজে এরকম একটা ব্যাপার দেখেছিলো বটে। ওটাকে সিরিয়াসলি
নিতে একটু বাধছে ওর, কিন্তু এখন মনে হয় সময় এসেছে সবকিছু একটু নতু ন আলোতে দেখার।
ব্যাচেলর জীবনের অগণিত রাতে রেডি-মিল খেতে খেতে অনেক ধরণের মুভি দেখেছে ও,
ওয়েস্টার্ন থেকে শুরু করে সাই ফাই, স্ক্রু বল কমেডি থেকে শুরু করে পাল্প ফিকশন --- কিন্তু
কখনও তু ষার ঝড়ের ভেতরে কোন খুনি ক্লাউন ওর পথে পড়েনি !

ও এবার স্নো প্লাউটার দিকে সতর্ক ভাবে তাকাল, ড্রাইভার এখনও ফেরত আসেনি ! এরকম ঝড়ো
রাতে, নাইট শিফটে কাজ করতে পারে এরকম শুধু দুজন ড্রাইভারের নামই ওর মনে পড়লো –
চিপ কেন্ডারমে আর মাইক জুতেমা । ডাবল ওভারটাইমের সুযোগটা ওদের কেউই হাতছাড়া
করতে চাইবে না !

“এখন কি করা ?” স্টান বিড়বিড় করলো।

ও প্রায় দশ মিনিট ধরে অপেক্ষা করছে, কিন্তু চিপ বা মাইকের টিকিটিও দেখা যাচ্ছে না । স্নো –
প্লাউয়ের ইঞ্জিন চালু , দরজা খোলা – এখানে এমন কি আছে যে কাউকে এই আবহাওয়াতে
এতক্ষণ ব্যাস্ত রাখতে পারে ? কাছাকাছি কয়েকটা হাতে গোনা স্টোর, কার্পেট ডিলার আর ভিডিও
স্টোর আছে, কিন্তু এগারোটার পর সব বন্ধ হয়ে গেছে।

তাহলে এটার মানে কি দাঁড়ালো ?

স্টান জানেনা, তবে ওর মনে হচ্ছে ‘কিলার ক্লাউন’ ডকু মেন্টারির চিত্রধারণের সময় চলে এসেছে।
ও ওর ক্যামকর্ডার টার ঢাকনা খুলে সামনে নিয়ে এলো ।

লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশান !

অধ্যায় ৩১
112

পুলিশের ইউনিফর্ম গায়ে চড়ানোর পর , পিনাটের প্রথমবারের মতো নিজেকে সত্যিকারের পুলিশ
মনে হচ্ছে। গত ছয়টা বছর ধরে পার্কিং আইন ভঙ্গকারী, নিষ্ফল আক্রমণ আর ছোটখাটো গৃহ
বিবাদ মিটিয়ে আসছে। কিন্তু বড় কোন কাজ কপালে জোটেনি। কিন্তু এখন......... এখন সব কিছু
ভিন্ন, এখন এমন কিছু চলছে যাতে সত্যিকারের পুলিসিং প্রয়োজন হয়ে পড়েছে , আর পুরো শহর
বিপদে রয়েছে ! অবশেষে, পিনাট সত্যিকারের গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজ করছে, ওর মনে হচ্ছে
ইউনিফর্মটার যোগ্য কাজ অবশেষে সে করতে পারছে !

এসইউভি টা নিয়ে লং একার রোড ধরে টনি রুশোর এপার্ট মেন্টের দিকে চালিয়ে যেতে যেতে
নিজে নিজেই বকবক করতে লাগলো সে “অবশেষে, এতগুলি বছর পর, এতগুলি বছর !”

“কি বকছ আবোলতাবোল ?” নাথান ফ্রি জিজ্ঞেস করলো।

“দানব !”

“দানব ?? !!”

“হ্যাঁ ,দানব ! এতগুলি বছর আমি বিশ্বাস করে এসেছি দানব বা রাক্ষস বলতে কিছুই নেই,
ছোটবেলাতে তোমার বাবা মা তোমাকে ওয়েরউলফ, ডাইনী বা এলিয়েনদের ব্যাপারে বলে এসেছে,
কিন্তু ওগুলি নিছক ভৌতিক গল্প ছাড়া আর কিছু না ! ভূ ত আর বুগিম্যান, সাগর দানব আর
ইয়েটি , ওরা কেবল ফ্যান্টাসি । কিন্তু এখন আমি ভালো জানি, এটা অনেকটা মনে হচ্ছে যেন পুরো
দুনিয়াটা সম্পূর্ণ উল্টে গেছে ! ”

নাথান কাঁধ ঝাঁকালো “আমি অলরেডি জানতাম দানবের অস্তিত্ব আছে !”

“বোগাস !”

“শোন তবে, আমি যখন বারো বছরের, তখন আমার বাবা, আমি আর বড় ভাই মিলে উলফ
রিভারের কাছে মাছ ধরতে যেতাম। ওখানে আমরা ভালোই মাছ পেতাম, একদিন , শেষ বিকেলের
দিকে, আমাদের নাকে খুব একটা বাজে গন্ধ এলো, যেন একশোটা স্কাঙ্ক একসাথে জড় হয়েছে
113

কোথাও। আমরা গন্ধ অনুসরণ করে কাছাকাছি একটা পাহাড়ের অন্য পাশে দেখতে পেলাম
ওটাকে। ওটা সাধারণ মানুষের চাইতে অনেক লম্বা ছিলো , সারা গায়ে চু লে ভর্তি ছিল। আমাদের
দেখে ওটা একটা অদ্ভু ত গর্জ ন ছেড়ে জঙ্গলের ভেতর অদৃশ্য হয়ে গেলো ! আমরা ওটাকে আর
কখনও দেখিনি ! ”

“ফাজলামো করছ আমার সাথে !”

“না, সিরিয়াসলি। এই পৃথিবীতে সব ধরণের জিনিস আছে , ভালো আর খারাপ দুই রকমেরই,
বন্ধু । যেহেতু অনেক মানুষই ওদের কখনও চোখে দেখেনা, তার মানে এই না যে ওদের অস্তিত্ব নেই
!”

পিনাটকে এসইউভি টা রাস্তার ওপর ধরে রাখতে অনেক সংগ্রাম করতে হচ্ছে, বারবার সামনের
উইন্ডশিল্ডটা তু ষারে ঢেকে যাচ্ছে, আর ওয়াইপার গোঁ গোঁ শব্দ করতে করতে সেগুলিকে সরানোর
চেষ্টা করে যাচ্ছে।

নাথান ফ্রি হচ্ছে স্ট্যান্ডিং রক রিজারভেশন থেকে আসা এক থরব্রেড সিউ (রেড ইন্ডিয়ান)।
সম্ভবত ও যা বলছে সেটা সত্যি। এক সপ্তাহ আগেও পিনাট ওর এইসব কথা বিন্দুমাত্র বিশ্বাস
করতো না, কিন্তু এখন......... এখন কম বেশি অনেক কিছুই সে বিশ্বাস করতে রাজি আছে।

“সম্ভবত এটা তোমাদের লোকেদের কাছে কিছুটা অন্যরকম ” বলল পিনাট।

“কি ধরণের লোকজন ?”

“নেটিভ আমেরিকানদের কথা বলছি, সম্ভবত তোমাদের প্রকৃ তির প্রতি বেশি সহানুভূ তি আছে
আমাদের সাদা চামড়াদের চাইতে, সম্ভবত তোমরা এমন অনেক কিছুই জানো যেগুলি আমরা
জানিনা ! কিন্তু আমাদের সবসময় বলে আসা হয়েছে যে দানব বলতে কিছুই নেই !”

নাথান খিক খিক করে নিষ্ঠু রভাবে হাসল “তু মি কি এটাও জানো ওটা তোমাদের কেন বলা
হতো?”
114

“না, কেন ?”

“কারণ, বড়রা যারা ওইসব তোমাদের বলতো, ওরা নিজেরাই অনেক ভয় পেতো !” এমনভাবে
ব্যাখ্যা করতে লাগলো নাথান যেন এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে অবধারিত ব্যাপার “ওরা যদি তোমাদের
কাছে স্বীকারই করে ফেলে যে দানব আর ভূ তেরা আছে , তাহলে ওরা নিজেরাই রাতে ঘুম যেতে
পারবে না ! অস্বীকার করাই তাই সবচেয়ে সহজ -- কিন্তু ওদের ভার্সানে অনেক ঘাপলা আছে ,
আর আছে বিশাল সব গর্ত , আর সেই গর্ত দিয়ে তু মি দেখতে পাবে নরকের শয়তানদের, শেপ
শিফটারদের, হেঁটে চলা জ্যান্ত লাশদের ! এসব বললে ওরা ওদের মনের শান্তি চিরতরে হারিয়ে
ফেলবে। তাই ওরা এ ধরণের সব গল্পই হেসে উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করে, তোমাদের চোখ বন্ধ করে
দিতে চায়, কারণ যখন তোমরা বলো দানবের কথা, ওগুলি বিপজ্জনকভাবে সত্যের খুব কাছাকাছি
চলে যায় ! এগুলি ওদের গুপ্ত ভয় বাইরে নিয়ে আসে আর মনের সন্দেহের ওপর আলো ফেলে ।
অনেকটা যুদ্ধক্ষেত্রের সৈনিকদের মতো। ওরা হাসিঠাট্টা করে আর গল্পগুজব করে, কিন্তু আসলে
ওরা ক্ষু রের ওপর দিয়ে হেঁটে যায় ! সত্যিটা হলো ওরা ভয়ে উন্মাদপ্রায় হয়ে থাকে, কিন্তু এটা ওরা
কাউকে জানতে দিতে চায়না , ওরা ওদের মিথ্যের আড়ালে লুকিয়ে সহজ জীবন যাপন করতে
চায় ! ”

পিনাটকে কখনও কেউ এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বুঝিয়ে বলেনি, কিন্তু ওর জন্য বর্ত মান অবস্থার
পরিপ্রেক্ষিতে কথাগুলি যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গতই লাগলো ।

“তু মি জানো, নাথান ? তোমার ভেতরে অনেকখানি জ্ঞান লুকিয়ে আছে ! তু মি বেশ বিজ্ঞ ! ”

“অন্তত চেষ্টা করি !”

অবশেষে ওরা একটা ইটের তৈরি বাড়ির সামনের তু ষার ঢাকা ড্রাইভওয়েতে চলে এলো।

“তু মি আমাকে কথা বলতে দিও ” বলল পিনাট “কারণ এসব কাজ অফিসিয়ালি করলেই ভালো

115

নাথান হ্যাঁ সুচক মাথা নাড়ল ।

অধ্যায় ৩২

পিনাট পুলিশ কার থেকে লাফিয়ে নেমে গভীর তু ষারের ভেতর দিয়ে অনেক কষ্টে পথ ঠেলে চত্বরের
দিকে এগোতে লাগলো। অগণিত তু ষার কণা ওর চারপাশে নাচতে লাগলো হেডলাইটের
আলোতে। ঠিক টেলিভিশনে যেন সাদা নয়েজ চলছে। বাতাস ওকে ঠেলে ফেলে দেবার জন্য
প্রাণপণ চেষ্টা করছে, কিন্তু শেষমেশ ও সোজা হয়ে দাঁড়িয়েই থাকলো। দরজার কাছে পৌঁছে ও
ক্রমাগত নক করে যেতে লাগলো, কারণ একজন পুলিশ কোন গুরুত্বপূর্ণ মিশনে গেলে এভাবেই
নক করে।

অবশেষে বাইরের লাইটটা জ্বলে উঠলো আর দরজাটা খুলে গেলো। টনি রুশোকে স্বাভাবিক
সময়ের চাইতে বেশী রাগান্বিত দেখা গেলো “পিনাট ? এখানে কি করছ তু মি ?”

“একটা...... এক্সিডেন্ট হয়েছে, আর আমাদের জরুরী ভিত্তিতে একজন প্যারামেডিক দরকার !”

টনি তার স্বভাবসুলভ কর্ক শ কণ্ঠে বলল “তাহলে একটা এ্যাম্বুলেন্স ডাকো, ইডিয়ট !”

“ওটা কাজ করছে না ঝড়ের কারণে !”

“হুম, কি দুর্ভাগ্য !”

“টনি , বাল, উইল তোমাকে এক্ষু নি যেতে বলেছে !”

“ওকে আমার পাছায় চু মা খেতে বল ! আমি দরজা বন্ধ করছি , এখন যাও এখান থেকে !”

পিনাট ওর বুটের ডগা দরজার ফ্রেমের মাঝখানে ঢু কিয়ে দিলো, কারণ মুভিগুলিতে কু ল পুলিশরা
এরকমই করে থাকে। “আমার দরজা থেকে পা সরাও ” গর্জাল টনি।
116

“তু মি আমার সাথে এখন যাবে ” দাবী করলো পিনাট।

“জাহান্নামে যাও !” বলেই কনুই দিয়ে পিনাটের পেটে এক গুঁতো দিলো টনি আর ধ্রাম করে দরজাটা
বন্ধ করে দিলো।

পিনাট পিছিয়ে হোঁচট খেয়ে বরফের ওপর পাছা দিয়ে পড়লো।

“তু মি ঠিক আছো ?” একটা কণ্ঠ জিজ্ঞেস করলো । নাথান ফ্রি বাঁকা একটা হাসি ঠোঁটে ঝু লিয়ে
পিনাটকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করলো ।

“ওই কুঁ ড়ের বাদশা, ব্যাটা এসব করে পার পাবেনা ” কাপড় থেকে তু ষার ঝাড়তে ঝাড়তে বললো
পিনাট।

“না , ও পার পাবে না ” আশ্বস্ত করলো নাথান “তু মি অফিসিয়ালি চেষ্টা করেছ, এখন সময়
এসেছে ‘ডেড স্কাল’ এর আনঅফিসিয়াল ভার্সান প্রয়োগ করার, অন্যভাবে বললে বলা যায়,
আমি এবার আমার মতো চেষ্টা করবো। ”

পিনাট একপাশে দাঁড়িয়ে দেখলো নাথান সিঁড়ি বেয়ে উঠে দরজার সামনে দাঁড়ালো। পিনাটের
মতো, সে নক টকের ধার দিয়ে গেলো না , সে দরজাতে লাথি মারতে লাগলো যতক্ষণ না
এলুমিনিয়ামের ফ্রেমটা বেঁকে না যায় আর সেফটি গ্লাসটা পড়ে না যায়। সে যথেষ্ট সিরিয়াস এ
ব্যাপারে। বাইরের লাইটটা আবার জ্বলে উঠলো, ওহ গড ! ভাবল পিনাট, এখন ব্যাপারটা আরও
সিরিয়াস হতে যাচ্ছে !

স্টান পরিত্যাক্ত গাড়িটার কাছে এমনভাবে এলো যেন ওটা একটা ঘুমন্ত গ্রিজলি বিয়ার। ও
আপাদমস্তক কাঁপছে আর ঘামছে। অবশ্যই ওটা একটা স্নো প্লাউ, কিন্তু ওর কাছে মনে হচ্ছে ওটা
একটা ওঁত পেতে থাকা দানব, তু ষার ঝড়ের ভেতর ওর জন্য অপেক্ষা করছে, যে কোন মুহূর্তে
117

ওর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিন্ন ভিন্ন করে দেবে ! ওটার ধারালো দাঁত ওর হাড় চূ র্ণ বিচূ র্ণ করে দেবে
আর ওটার জিহ্বা দেখতে হবে ঠিক স্নো প্লাউটার টায়ারের মতো দেখতে !

ওহ ! তোমাকে কল্পনা থেকে বেরিয়ে বাস্তবের মুখোমুখি হতে হবে আর দেখতে হবে এখানে আসলে
কি ঘটেছে। কে বলতে পারে, পুরো ব্যাপারটাতে হয়ত ক্লাউনের কোন হাত নেই, ও হয়তো দেখবে
চিপ অথবা মাইক স্টিয়ারিং এর ওপর বাঁকা হয়ে পড়ে আছে, কাজের সময়ের স্বাভাবিক হার্ট
অ্যাটাক, যেটা এই আবহাওয়ায় খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। মানুষজন কঠিনভাবে চেষ্টা করে আর শেষে
এর মুল্য চোকায়। ও এমন অনেক শুনেছে বেলচা দিয়ে বরফ পরিষ্কার করতে গিয়েও অনেকে হার্ট
অ্যাটাক করেছে।

কিন্তু চিপ বা মাইক বেলচা চালাচ্ছিল না, ওরা একটা স্নো প্লাউ চালাচ্ছিল, হুফ ! যথেষ্ট হয়েছে,
এবার কাজে নামা যাক।

ও ক্যামেরাটা ঘুরিয়ে লাইট অন করে স্নো প্লাউটার ওপরে ফেললো “একটা শহুরে স্নো প্লাউ এই
তু ষার ঝড়ের মাঝখানে কি করছে ? রাস্তার পাশে পরিত্যাক্ত অবস্থায় ?” ও একটু উঁচু স্বরে বললো,
একটু পরেই বর্ণনাকারীর ভু মিকায় অবতীর্ণ হলো সে নিজেই “এই প্রশ্নটাই আমি নিজেকে করছি,
ওটা পরিত্যক্ত আর দরজাটাও খোলা, এটা আমাকে যথেষ্ট বিচলিত করেছে। আসলে আজকের
রাতটাই আমাকে অনেকটা বিচলিত করে তু লেছে । আমার নাম স্টান বারবাচেক, আমি নর্থ
ডাকোটার ছোট্ট শহর ক্রো ফলসের একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার। এমনকি আমাদের মেয়রও এই
জায়গাটাকে ম্যাপের ওপর একটা ছোট্ট ফু টকি ডেকেছিলেন ! আজকের এই ভয়ানক অবস্থার
জন্য দায়ী একটি তু ষার ঝড়। কিন্তু......... এখানে তু ষার আর বাতাস ছাড়াও আরও কিছু একটা
আছে, আরও কিছু......... যেটা আরও অনেক বিপজ্জনক। ”

ভেরি গুড ! কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করতে যেয়ো না !


118

ও ট্রাকটার দিকে ধীরে ধীরে ক্যামেরা জুম করে এগিয়ে গেলো, ওর হার্ট ঢিব ঢিব করে ওর গলার
কাছে এসে যাচ্ছে প্রায়, লোডিং এরিয়া পার হয়ে ড্রাইভারের দরজা ধরল ও কামেরাতে, বাতাসে
ওটা সামনে পেছনে দোল খাচ্ছিল ভু তু ড়ে ভাবে ক্যাঁচকোঁচ করতে করতে !

“ভেতরে দেখা যাক” ও নিজেই বললো ।

কিন্তু ভেতরে তাকিয়েই ও চমকে পেছনে চলে এলো, ওর ক্যামেরা ধরা হাতটা এতো কাঁপছিল যে
অন্য হাত দিয়ে ওটাকে স্থির করতে হলো । ওর সমস্ত রক্ত ওর কানে উঠে আসার শব্দও যেন
শুনতে পেলো ও।

ওটা খালি ! ও একবার কামেরার ভিউফাইন্ডার একবার খালি সিটটার দিকে তাকাতে লাগলো।
ওর এতো টেনশন হতে লাগলো যে ওর মনে হতে লাগলো পুরো পরিশ্রমটাই না মাঠে মারা যায় !
কিন্তু ওটা ঠিকই আছে , বেশ একটা ভয় ভয় আবহাওয়া তৈরি হয়েছে ফিল্মের মাঝখানেই !

“এখানে কোন ড্রাইভার নেই !” সে বলে চললো “এসবের মানে কি ? ড্রাইভার কোথায় গেলো,
আরো বড় ব্যাপার হলো, এই ঝড়ের মধ্যে এমন কি ঘটলো যে তাকে বাইরে যেতে হলো ? ”

ও ড্রাইভারের কেবিন থেকে ঘুরে বাইরের তু ষার ঝড়ের দিকে ক্যামেরা তাক করলো “সমগ্র বিশ্ব
আজ রাতে সাদা আর মৃত ! মেজাজটাও যেন অশুভ আর ভয় জাগানিয়া !”

বাহ ! চালিয়ে যাও !!

যদিও ভেতরে ভেতরে ও ভয়েই মারা যাচ্ছে , কিন্তু ও ভিডিও করা চালিয়ে গেলো। এবার ও
মাটির দিকে ক্যামেরা তাক করলো “এখানে কোন পায়ের ছাপ দেখা যাচ্ছে না , কিন্তু কে বলতে
পারে ওগুলি এই আবহাওয়াতে কতক্ষণ দেখা যায় !”

ওর নার্ভ পুরোই ধ্বসে গেছে আর ওর মনে হচ্ছে ও এখানে একা নয় ! ওর মনে হচ্ছে ওটা কাছেই
কোথাও আছে , ওর কাছ থেকে হাতে ছোঁয়া দূরত্বের ভেতরই।
119

ভারী শ্বাস ফেলতে ফেলতে ও ক্যামেরা বন্ধ করে ওর জিপের কাছে ফেরত গেলো, ভেতরে ঢু কে
দরজা লক করে দিলো দ্রুত।

এখানে কিছুই নেই, সব তোমার কল্পনা !

ওর যুক্তি ওকে তাই বলছে বটে, কিন্তু ও তাতে খুব একটা প্রভাবিত হচ্ছে না । ও স্নো প্লাউটার
পাশ দিয়ে যাবার সময় আরেকবার রেডিও ট্রাই করলো , কিন্তু নাহ ! কোন সাড়া পেলো না !
ফ্লো’কে এখনও রেডিওতে ধরতে পারলো না, ও বেশ খানিকটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লো এবার।

হুইসল স্টপ এর পাশ দিয়ে যাবার সময় খুব ইচ্ছা হলো নেমে একটু দেখে যায় আর একটু আড্ডা
মেরে যায়, কিন্তু তার বদলে ও সেই পয়েন্টে চলে এলো যেখানে ও ক্লাউনটাকে ধাক্কা মেরেছিল।

“এখানেই ওটা ঘটেছিল, আমি সম্প্রতি একটা ক্লাউনকে আমার গাড়ি দিয়ে এখানে ধাক্কা
মেরেছিলাম ” বলল স্টান ওর ক্যামেরা দিয়ে তু ষার ঢাকা রাস্তা ভিডিও করতে করতে “আমার
মনে হয়েছিল যে আমি বোধহয় ওটার ওপর দিয়ে গাড়িই চালিয়ে দিয়েছি ! ওটা যদি মানুষ হতো
তাহলে ওটা এখনও এখানেই থাকতো ! ”

থামো এবার ! – ও ভাবলো – বাকিটা দর্শকদেরই কল্পনা করে নিতে দাও !

ওর চারপাশে বরফ ঝড় একটা পর্দা তৈরি করে রেখেছে, এই ডকু মেন্টারি যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক না
কেন, ও যাতে হাইপোথারমিয়াতে আক্রান্ত না হয়, সেটাও দেখতে হবে, ওটা কোন উন্মাদ ক্লাউনের
মতোই দ্রুতগতিতে হত্যা করতে পারে !

একটা শব্দ শোনা গেলো !

স্টান জায়গাতে জমে গিয়ে শুনতে লাগলো কান পেতে, ওর শরীর এতক্ষণ ঠাণ্ডাই ছিলো, কিন্তু
এখন মনে হচ্ছে সেটা মাইনাস রেঞ্জে গিয়ে ঠেকেছে ! ও নিয়ন্ত্রনহীনভাবে কাঁপতে শুরু করলো আর
কেমন জানি দিশা হারিয়ে ফেললো ! ও সম্ভবত হাইপোথারমিয়াতে আক্রান্ত হয়ে গেছে, কিংবা
আরও ভয়ংকর কোন কিছুতে !
120

ওই যে, ওই যে , আবার !

ওকে যেন চারদিক থেকে বাতাস একসাথে আক্রমণ করছে, কি হচ্ছে টা কি এখানে ? ও ওর জিপ
থেকে মাত্র মিটার পাঁচেক দূরে আছে, কিন্তু বাতাসের শিসের কারণে ইঞ্জিনের শব্দই ও শুনতে পাচ্ছে
না ! তু ষার ওর চারপাশে ঘূর্ণি তৈরি করে ঘুরছে, আর ঠাণ্ডা যেন ওরা সারা শরীরে সুঁইয়ের মতো
বিঁধছে। ও শেষমেশ হাইপোথারমিয়াতেই আক্রান্ত হয়েছে ! ও একটু খানি নড়ে উঠলো , থ্যাংক গড
! ও নড়তে পারছে ! ও নিজেকে বার্ড স আই ভিউতে (ওপর থেকে পাখির চোখে) দেখতে পেলো,
এক জায়গাতে চক্কর কাটছে অন্ধের মতো।

থামো ! থামো ! ওর মাথার ভেতরের একটা কণ্ঠ বলে উঠলো – তু মি কোন আর্ক টিক
ওয়েস্টল্যান্ডে দাঁড়িয়ে নেই ! তু মি এখানে হারিয়ে যেতে পারো না, যে কোন দিকে মিটারখানেক যাও,
তু মি তোমার জিপ , বা কোন দোকানের সারি বা নিদেনপক্ষে কোন ল্যাম্পপোস্ট অন্তত পাবে!
ল্যাম্পের কথা যখন উঠলই, ও ওগুলিকে জ্বলতে দেখছে না কেন ? অবশ্যই, তু ষার যথেষ্ট ঘন হয়ে
পড়ছে, ওগুলি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না সেজন্য, কিন্তু তাই অন্তত উপলব্ধি তো করতে পারবে ওগুলি
কোন দিকে আছে, তাই না ? মনে হচ্ছে ওর চারপাশের জগৎটাই উধাও হয়ে গেছে! মনে হচ্ছে ও
একটা অপ্রাকৃ ত গ্লেসিয়ারের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, ঠাণ্ডা কামড় দিয়ে যাচ্ছে ওকে, চারপাশে সাদা
তু ষার পাতের ভেতর নাচছে ভূ তু ড়ে সব ছায়া । ও ওর ক্যামেরা চারদিকে ঘোরাতে ঘোরাতে
উত্তেজিত কণ্ঠে বলতে লাগলো “এখানে কি ঘটছে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না ! আমি জানিনা
আমি কোথায় আর এখানে কি ঘটে চলেছে .........”

এবার ও ওর চারপাশে নড়াচড়া টের পেলো, ডানে, বামে , পিছনে , সামনে ,সবদিকে। চারদিকে
পায়ের আওয়াজ পেতে লাগলো ও, হালকা , সূক্ষ্ম পায়ের আওয়াজ যেটা লাফিয়ে লাফিয়ে সরে
সরে যাচ্ছে। যেটাই এই ঝড়ের মধ্যে আসুক না কেন, এটা এখন ওর সাথে আছে আর ওর
কল্পনাকে ভয়াবহ সব ছায়া দিয়ে ভরে দিচ্ছে। ও ওর চারপাশে নানারকম ক্লাউনের ছায়া আর মুখ
দেখতে পাচ্ছে, অদ্ভু তভাবে বিকৃ ত হয়ে যাচ্ছে ওগুলি, কালো ত্রিভু জের ভেতর রক্ত লাল চোখ,
121

সাদা তেলতেলে চিকন লম্বাটে মুখ, সাদা মাথার খুলির ভেতর মুচকি হাসি, সাদা মাংসল হাত
এগিয়ে আসছে যেন ওকে ধরার জন্য।

আতংক ওকে এমনভাবে চেপে ধরল যে , দিগ্বিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে ও ছুট লাগালো , পশুর মতো
জান্তব আতংক চেপে ধরেছে। ওর মনে হতে লাগলো পেছনে শত শত ক্লাউন ছুটে আসছে হলুদ
চোখ নিয়ে , ঠোঁট চাটতে চাটতে !

ধাম !

পুরো শক্তি নিয়ে ও বাড়ি খেলো ওর জিপের সাথে, ওর ফু সফু স থেকে সব বাতাস বেরিয়ে গেলো
সাথে সাথে। হাচরেপাঁচরে ও ড্রাইভিং সিটে উঠে বসলো, ভেতরের হিটারের আরামদায়ক উষ্ণতা
ওকে স্বাগত জানালো। ও বাইরের দিকে তাকাল, কই, ঝড় তো আগের মতোই দেখাচ্ছে ! আর
স্ট্রিট ল্যাম্প গুলোও দেখা যাচ্ছে ঠিকঠাক ! উহ ! ও আর ভাবতে চায় না, তাড়াতাড়ি ট্যাক্সি–এ–
গো-গো র দিকে জিপ ছোটালো। ওখানেই ও নিরাপদ থাকবে ।

অধ্যায় ৩৩

পিনাটের কোন ধারণা নেই এরপরে কি ঘটতে চলেছে, ও শুধু জানে ও এখানে ঠাণ্ডার মধ্যে দাঁড়িয়ে
দাঁড়িয়ে দেখছে কিভাবে নাথান ফ্রি লাত্থি মারছে রুশো পরিবারের দরজাতে। কিন্তু ও টনির ওপর
রেগে আছে , বলা যায় দৃশ্যটা উপভোগই করছে সে ! নাথান কানেকটিং দরজাটা একরকম খুলেই
নিল, আর তখনই দরজায় দেখা দিলো টনি রুশোর বিখ্যাত খাণ্ডারনি বউ , মিজ রুশো “আমার
বাড়ির বারান্দা থেকে ভাগো !” বলেই একটা বড় বুনো বিড়ালের মতোই খামচি দেয়ার চেষ্টা করলো
নাথানের চোখ বরাবর। কিন্তু নাথান নিপুণভাবে সেটা ঠেকিয়ে কনুই দিয়ে মিজকে ধাক্কা দিয়ে ঘরের
122

ভেতর ঢু কে পড়লো -- “টনি” একইসাথে চিল্লালো সে “তোমার অলস পাছা নিয়ে এদিকে আসো
এক্ষু নি, যদি আমাকে আসতে হয়, তাহলে ধরে ভালোমতো একটা ডলা দেবো বলে দিলাম !”

পিনাট ঘরের ভেতর ঢু কে এলো, ব্যাপারটা আয়ত্বের বাইরে যাবার আগেই নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। কিন্তু
ঘরের ভেতর ততোক্ষণে সুম্ভ-নিসুম্ভের লড়াই শুরু হয়ে গেছে ! মিজ চিৎকার করে চলেছে “ব্যাটা
ইন্ডিয়ান শুয়োর কোথাকার, স্টু পিড পাহাড়ি চাষা, আমার বাড়ি থেকে বেরো এক্ষু নি, বিচি গেলে
দেবো নয়তো বলে দিলাম !” বলেই ও নাথানকে খামচি দেয়ার চেষ্টা করলো আবার , আর তখনই
পিনাট বড় একটা ভু ল করে বসলো , ও ওদের দুজনের মাঝখানে চলে এলো, আর মিজের পূর্ণ
শক্তির খামচি নিজের মুখে নিলো ! ও মিজকে ঠেলা দিয়ে সরিয়ে দিতে চাইলো, কিন্তু মহিলা ঠিক
একটা মাতাল ড্রাগ নেশাসক্তের মতোই লড়াই করছিলো । মহিলা ওকে বেশ কয়েকটা চড়
মারলো , তারপর এক হাঁটু দিয়ে মারলো অণ্ডকোষ বরাবর এক প্রলয়ঙ্করী গুঁতো !

ফলশ্রুতিতে মাটি নিলো ডেপুটি শেরিফ, এরপর গুলতি থেকে ছোঁড়া ঢিলের মতো নাথানের দিকে
লাফ দিলো মিজ, কিন্তু নাথান তৈরিই ছিলো, প্রচণ্ড এক ঘুষি জমিয়ে দিলো মহিলার চোয়াল
বরাবর। চোখ ঘোরাতে ঘোরাতে প্রথমে দেয়ালে বাড়ি খেলো, তারপর মাটি নিলো মহিলা।

পিনাট ওর অণ্ডকোষ আঁকড়ে ধরে পড়ে আছে মাটিতে, এই মিজ মহিলাটি খুব ভয়ংকর, ওর
আগেই বোঝা উচিত ছিল । এখন ওর মিটারখানেক দূরে শুয়ে কাতরাচ্ছে ! খুব উচিত শিক্ষা
হয়েছে !

একটু পর অপরাধী মুখ করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলো টনি, নেমেই একবার মিজ আরেকবার
পিনাটের দিকে যেন কিছুই হয়নি এমন ভাব করে বলল “কোথায় যেতে হবে ?”

“তোমাকে ‘ব্রোকেন বটল’ এ আসতে হবে” নাথান বললো “ওখানে একটা আক্রমণ হয়েছে আর
অনেকে আহত হয়েছে , আর ঝড়ের কারণে আমরা এ্যাম্বুলেন্স ডাকতে পারিনি , ইন ফ্যাক্ট, আমরা
কাউকেই জানাতে পারিনি, হাইওয়ে বন্ধ আর ফোন আর ইন্টারনেট সম্পূর্ণ ফেল মেরেছে !”
123

একটাও কথা না বলে ল্যান্ড ফোনের রিসিভার তু লে কানে ঠেকাল টনি, তারপর একে একে
সেলফোন ,ল্যাপটপ চেক করে হতভম্ব ভাবে নাথানদের দিকে তাকাল “কি হচ্ছে এখানে ?”

“ক্লাউনস ” মেঝে থেকে গোঙাতে গোঙাতে উত্তর দিলো পিনাট।

“কি হয়েছে ওদের ?”

“ক্লাউনরা এখানে মানুষ মেরে ফেলছে ” নাথান ব্যাখ্যা করলো “এরকম কিছু তু মি কখনও দেখনি,
আমাদের ওখানে কিছু মারাত্মক আহত লোকজন আছে, শেরিফ তোমাকে এখনই পাবে যেতে
বলেছে আমাদের সাথে।”

বিড়বিড় করে অভিশাপ দিতে দিতে তু ষার ঝড়ের উপযোগী কাপড় গায়ে চড়াতে লাগলো টনি ,
ক্লাউনদের কথাটা বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করেনি চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে, কিন্তু নাথানকে আর ঘাঁটাতে
চায় না ! নাথান ইতিমধ্যে পিনাটকে মেঝে থেকে তু লেছে “ওহ হোলি মেরি ! ঈশ্বরের মা ! আমার
অণ্ডকোষ মনে হয় ফাটিয়ে দিয়েছে !” কোঁকাতে কোঁকাতে বলল পিনাট।

ওরা বাইরে বেরোবার সময় খাণ্ডারনি মিজের চিৎকার শোনা গেলো “বাঞ্চোদের বাচ্চারা, আমি
তোদেরকে দেখে নেবো !” ওদের সবাই সেটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করলো !

বাইরে বেরিয়ে আসলো একটা অদ্ভু ত দল, বাঁকা হয়ে হাঁটতে থাকা এক পুলিশ, এক বাইকার
গ্যাঙের লোক , আর ঝাঁটা গুঁফো বেঁটে বুলডগের মতো দেখতে এক লোক !

“কোন রেডিও ট্রাফিকও নেই ?” সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে জিজ্ঞেস করলো টনি।

“কিস্যু নেই !”

“এটার কোন মানেই হয় না ” বলেই আরেক দিকে হাঁটা দিলো টনি।

“কোথায় যাচ্ছ ?” পিনাট জিজ্ঞেস করলো।


124

“পাশের ঘরের লোকটার একটা অ্যামেচার রেডিও আছে, ও সেটা দিয়ে বেলজিয়ামের লোকজনের
সাথে কথা বলে সবসময়, মাঝে এন্টার্ক টিকা আবার গড ড্যাম ভিয়েতনামেও ! আমাদের যদি
কেউ সাহায্য করতে পারে তবে এই লোকই পারবে !”

‘ব্রোকেন বটল’ এ , বনি ফস্ট আর অন্যরা পিনাটদের আসার পথ চেয়ে আছে, মৃত বাইকারদের
দেহ দুটো গারবেজ ব্যাগ দিয়ে ঢাকা দেয়া, যাতে কেউ ওদের বাজেভাবে গলে যাওয়া মৃতদেহ
দেখতে না পায়। আহতদের বেঞ্চিতে কম্বল চাপা দিয়ে শুইয়ে রাখা হয়েছে, যাকে যেভাবে পারা
গেছে শুশ্রূষা করা হয়েছে।

বনি বাইরে বরফ ঝড়ের গর্জ ন শুনতে পাচ্ছে, ওর বুদ্ধি বয়সে এতোটা ভয়াবহ তু ষার ঝড় ও আর
দেখেনি। ওর দেখা অন্য তু ষার ঝড়গুলি এক সময় গিয়ে দুর্বল হয়ে থেমে গেছে, কিন্তু এটার
সেরকম কোন লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। ওর কাছে মনে হচ্ছে এই তু ষার ঝড়টা স্বাভাবিক কোন
তু ষার ঝড় নয়, কোন শয়তানী শক্তি ক্রো ফলসের ওপর যেন এই ঝড়টা লেলিয়ে দিয়েছে, ওদের
সবাইকে ইঁদুরের মতো ফাঁদে ফেলার স্যাডিসটিক ইচ্ছা থেকে !

কার্পি ওর পাশে বসে আছে, ওকে যথেষ্ট ভীত দেখাচ্ছে আর নীরবে কি জানি চিন্তা করছে। অন্য
পাশে আছে মেডেলিন কেনার আর ওর বান্ধবীরা, ওরা ফার্মারস ইন্সুরেন্সে কাজ করে, আর
আজকে ওরা মেডেলিনের জন্মদিন সেলিব্রেট করতে এখানে এসেছিলো।

আমি ব্রেনডাকে ওপরে নিয়ে যাচ্ছি , স্তিউ ঘোষণা করলো, এটা ঠিকই আছে। কারণ কামড় খাবার
পর থেকে মহিলা কেমন জানি চু প মেরে গেছে, স্বাভাবিক সময়ে ও চাপা বন্ধই রাখতে চায়না ! ওর
চোখগুলি কেমন জানি ঘষা কাছের মতো দেখাচ্ছিল ওকে স্তিউ যখন ওপরতলায় নিয়ে যাচ্ছিলো।
“ওকে দেখতে পুরো পাগলের মতো লাগছিলো” মেডেলিন বলল , আর বনি ওর সাথে মনে মনে
একমত হল, ওরা সবাই একটা মানসিক শকের মধ্যে দিয়ে গেছে, কিন্তু ব্রেনডার চোখগুলি দেখে
মনে হচ্ছিলো...... মনে হচ্ছিলো ওগুলি যেন কোন শিকারির চোখ !
125

“আমরা এখানে কতক্ষণ অপেক্ষা করব ?” ক্লাইড অবশেষে জিজ্ঞেস করলো।

“যতক্ষণ নাথান আর পিনাট ফিরে না আসছে ।”

“আমি চু পচাপ এখানে বসে থাকতে পারবো না, যখন ওই দানবগুলো বাইরে মানুষ খুন করে
বেড়াচ্ছে ।”

“তোমরা আমাদের এখানে আটকে রাখতে পারো না, এটা অবৈধ !” বলে উঠলো স্কাঙ্ক ।

টিগ স্মিত হাসলো “এ ধরণের পরিস্থিতিতে আমি এমনকি ডিসট্রিক্ট শেরিফের সমান পদমর্যাদা
ভোগ করে মার্শাল ল পর্যন্ত জারি করতে পারি, তা জানো ?”

ক্লাইড বারের দিকে এগোলো , স্কাঙ্ক ওকে অনুসরণ করলো কোন আওয়াজ ছাড়া। ক্রো ফলসের
অন্যদের মতোই বনি ক্লাইডকে ভালোই চেনে, এমনিতে সে খুব ভালো, সুবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যাক্তি। কিন্তু
ওর বোমাতে খুব শর্ট ফিউজ লাগানো , আর যখন ওটা ফাটে, তখন দ্রুত আড়াল খুঁজে লুকিয়ে
পড়াই ভালো ! কারণ ওই বিস্ফোরণ মৃত্যুর কারণ হয় প্রায়ই। ও সেই ধরণের মানুষ ।

কিন্তু স্কাঙ্ক সম্পূর্ণ অন্য ধরণের মানুষ, ও দুর্গন্ধযুক্ত , লম্বা চু লের আর খারাপ দাঁতের এক লোক, যে
কিনা অনেক বেশী পাওয়ারের চশমা পরে থাকে। কিন্তু বনির মতে, ও ক্লাইডের চাইতে বেশি
বিপজ্জনক। আর ও যেভাবে ড্যাব ড্যাব করে বনির দিকে তাকিয়ে ওর শরীর গিলছে, ওর সারা
শরীর ঘেন্নায় রি রি করে উঠছে !

বনি একটা শ্বাস ফেলে ভাবলো কখন বাকিরা ফিরে আসবে, বিশেষ করে নাথান ফ্রি, কারণ ও
ক্লাইডের মতো বুনো কিংবা স্কাঙ্কের মতো নিপীড়ক নয়। অন্য ডেড স্কালরা , ক্লাইড বাদে, ওকে
ভয় খায়।

তাড়াতাড়ি আসো , নাথান, তাড়াতাড়ি।

অধ্যায় ৩৪
126

টনি ওর প্রতিবেশী টিলের বাসায় এমনভাবে নক করলো, যেন সবে দুপুর দুইটা বেজেছে, এটা
মোটেই মাঝরাত নয় ! “ও ঘরেই আছে ” বলল টনি “ও কখনও কোথাও যায় না !”

আরও কয়েকবার নক করে টনি দরজার নবটা ঘোরালো , আর ওটা খুলে গেলো “আশ্চর্য !” বলল
টনি “ও তো দরজা খোলা রেখে কোথাও যাবার মানুষ না, এমনকি একদিন ওর বিড়ালটা বাইরে
ইয়ে করতে গিয়েছিলো , ও পাচ মিনিট অপেক্ষা করে ওটাকেও দরজার বাইরে রেখে দিয়েছিল !”

বলতে বলতেই ও বাড়িটার ভেতরে অদৃশ্য হয়ে গেলো, পিনাট একটু তির্যক আর সন্দেহের দৃষ্টিতে
নাথানের দিকে দেখে টনিকে অনুসরণ করলো। অন্তত ঘরের ভেতরটা বাইরের থেকে গরম।

যাই হোক, টনিকে সাচ্ছন্দে ঘরের ভেতর ঘুরে বেড়াতে দেখা গেলো, বোঝা যাচ্ছে এখানে ওর নিত্য
আসা যাওয়া আছে। ও এক পাশের একটা লাইট জ্বালিয়ে ডাকল “জিম্বো , জিম্বোওওওও !
কোথায় তু মি, জেগে ওঠো । ” ও এদিক ওদিক রিলাক্সভাবে ঘুরে বেড়াতে লাগলো, এমনকি
একবার রেফ্রিজারেটর খুলেও দেখল !

“আমি নিশ্চিত ও এখানে নেই ” বলল নাথান ফ্রি।

টনি হাসল “আরে ! চিন্তা করোনা, আমি প্রায়ই এখানে আসি, বিশ্বাস করো , তোমার যখন মিজের
মতো একটা বউ থাকে, তখন এরকম কয়েকটা লুকানোর জায়গা তোমাকে খুঁজে বের করতেই হয়
!”

পিনাট, ওর অণ্ডকোষ তখনও টনটন করছিলো, টনির সাথে একমত না হয়ে পারলো না ! আরও
একমত হলো মনে মনে এটা ভেবে যে, ব্রোকেন বটলে অনেক লোক আহত হয়ে পড়ে আছে, আর
ও যদি সময়মত সাহায্য নিয়ে না পৌঁছতে পারে, তাহলে ওর চামড়া ছিলে নেবে টিগ।

টনি ফ্রিজ থেকে একটা বিয়ারের বোতল নিয়ে বাকিদের দিকে তাকাল লোভীর দৃষ্টিতে “তোমরাও
একটা করে নাও না !”
127

নাথান কোন কথা না বলে টনির কলার ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরল “তোমার কি মনে হয়
আমরা মস্করা করছি ? দুইজন মৃত মানুষ আর পাঁচজন গুরুতর আহত মানুষ পড়ে আছে ব্রোকেন
বটল এ, তোমার কি খবরটা খুব মজার মনে হচ্ছে ?”

টনি যুদ্ধফেরত হলেও, বুলডগ তার প্রভু কে চিনতে ভু ল করলো না “না, না নাথান, আমি বুঝতে
পেরেছি, কু ল ডাঊন, ম্যান !”

পিনাট একটা হাসি গিলে ফেললো , ওফ, নাথান একজন অসাধারণ পুলিশ অফিসার হতে
পারতো, ওর স্বপ্নে ও এরকম কেউ হবার স্বপ্নই দেখে !

“এখন আমাদেরকে রেডিওটা কোথায় দেখাও , মটরশুঁটি কোথাকার !” ধমকাল নাথান।

এবার ওরা এগিয়ে চলল শেষের ঘরটার দিকে , তারপর হিঁক করে একটা শব্দ করে পিছিয়ে এলো
“ওহ শিট !”

পিনাটের প্রায় বমি পেয়ে গেলো , একটা লাশ ঝু লছে দরজার ওপর থেকে, বছর সত্তর বয়স, কেউ
একটা কসাইয়ের ছুরি ওর গলা দিয়ে ঢু কিয়ে পেছনের দরজার সাথে আটকে দিয়েছে ! ওর চেহারা
লাল আঙ্গুরের মতো ফোলা আর রক্তে পরিপূর্ণ, আর ঝু লে আছে মেঝে থেকে চার ইঞ্চি ওপরে।

ফরেন্সিক খুব খুশি হবে, ভাবল পিনাট।

“ওটা জিম্বো ?” জিজ্ঞেস করলো নাথান।

“হ্যাঁ ” টনি চাঁছাছোলা গলায় বলল “ওটাই সে !”

পাশের ঘরের দরজাটা সাবধানে খুলল নাথান, সে ঘরের মেঝেতে সবখানে কাঁচ ছড়িয়ে আছে,
রুমের একমাত্র জানালাটা ভাঙ্গা, বোঝা যাচ্ছে ওদিক দিয়েই ক্লাউনটা ঘরে ঢু কেছিল, আর ওদিক
দিয়েই বেরিয়ে গেছে। সারা ঘরে রক্ত ছড়িয়ে আছে যেটার শেষ মাথা জুড়ে আছে জিম্বোর মৃতদেহের
নিচে। নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানারকম বৈদ্যুতিক তার, একটা ডিভাইসের ভাঙ্গা অংশ,
128

অনেকটা জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে আছে তার, টেবিলের ওপর একটা রেডিও মাইক্রোফোন আর
একটা নোটপ্যাড যেটাতে বিশাল একটা রক্তমাখা হাতের ছাপ দেখা যাচ্ছে।

“এই জায়গাটা ইচ্ছা করে ধ্বংস করা হয়েছে” চিন্তান্বিত গলায় বলল পিনাট।

“এটা কাকতালীয় ঘটনা না, আমাদেরকে বন্দী করে ফেলার জন্য পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। ” পিনাট
বলল।

“তু মি কি বলছ ?” বলল টনি।

নাথান বলল “ও বলছে এ শহরে আসলে কি ঘটছে সেটা, এ শহরের সাথে যেটা করা হচ্ছে সেটা,
এখানকার সবাইকে , প্রত্যেককে মেরে ফেলার যে প্ল্যান করা হচ্ছে সেটা !”

টনি হতবুদ্ধির মতো ওদের দিকে তাকিয়ে রইল, ও এতক্ষণ ভাবছিল পুরো ব্যপারটা মনে হয় একটা
ঠাট্টা, কিন্তু এখন সেই ভাব উধাও হয়ে গেছে। ওকে পিনাট যেমন ভেবেছিল, তার চাইতেও অনেক
বেশি ভীত দেখাচ্ছে !

অধ্যায় ৩৫

স্টান বারবাচেক এখনও বিভ্রান্তিতে আছে ওর সাথে ঘটে যাওয়া অদ্ভু ত ঘটনাটা নিয়ে, ঝড়ের
ভেতর যে ঘটনাটা ওর সাথে ঘটে গেলো, তার কতটু কু সত্যি আর কতটু কু হ্যালুসিনেশন, সে
ব্যাপারে ও যথেষ্ট বিব্রত হয়ে আছে। ও ট্যাক্সি স্টেশনের সামনে মাথায় হাত রেখে বসে আছে ,
ভাবছে এখন ও কি করবে ? ওর কোন ধারণাই নেই চারপাশে আসলে কি ঘটে চলেছে।
129

ও দরজার সামনে গিয়ে দেখল ওটা বন্ধ, কাম অন ফ্লো , এখন না !

ও কয়েকবার নক করে পকেট থেকে চাবি বের করে দরজা খুলল, অনেক কষ্টে দরজা খুলে ভেতরে
ঢু কে বড় বড় কয়েকটা নিঃশ্বাস নিয়ে বলল “ফ্লো , তু মি আছো ? মাই গড , এই ঝড়টা ! -----”
আরও কিছু বলতে চাইলো সে, কিন্তু হঠাৎ অবর্ণনীয় এক ভয়ে আক্রান্ত হলো সে ! পুরো অফিসটা
কেমন জানি একটা পচা ডিমের মতো গন্ধে ভরে আছে। ও রেডিওর দিকে এগোল ভয়ে ভয়ে,
টেবিলের ওপর ডাইম নভেল পড়ে আছে , যেরকমটা ফ্লো সবসময় পড়ে। রেডিওর
লাউডস্পিকার থেকে কেমন একটা খড়খড় আওয়াজ ভেসে আসছে ।

“ফ্লো ?” ও আবার চেষ্টা করলো, এবার আরও অনেক আস্তে।

ও এখানে নেই – ওর ভেতর থেকে একটা কণ্ঠ বললো ওকে - - - ও এখানে নেই !

ও অফিসের বাইরে আছে, এমনকি ওপরেও নেই – ও মুছে গেছে, ধ্বংস হয়ে গেছে!

রুম থেকে বাইরে বেরিয়ে একটু সামনে এগিয়ে ও আবিষ্কার করলো বড় , কালো পায়ের ছাপ, ও
সেখানে একটু ক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো। ও জানে ওই ছাপগুলো কোথা থেকে এসেছে আর ওগুলি
কার! তবু ও ভান করতে লাগলো, ও হয়তো ভু ল করছে ! কিন্তু মনের গভীরে ও ঠিকই জানে, ওই
ছাপগুলি তৈরি করতে পারে একমাত্র টলমল করতে থাকা এক জোড়া বিশাল ক্লাউন শু !

যুক্তিসঙ্গতভাবে কিছু চিন্তা করারও আগে, ক্যামেরা বের করে ভিডিও করতে শুরু করলো,
ব্যাখ্যাকারী কণ্ঠ দিলো না ও, ছাপগুলো একটা দরজা পার হয়ে পেছনের হলওয়েতে চলে গেছে।
টয়লেট হয়ে ছাপগুলো সারা ঘরে হেঁটে বেড়িয়েছে। ওর কমন সেন্স ওকে বলছে এক্ষু নি শেরিফকে
কল করতে, আবার সেই একই কমন সেন্স ওকে বলছে আরও সামনে এগিয়ে দেখতে ফ্লো কোথায়
? কিন্তু নিছক ঘুরে দেখার চিন্তাটা ওকে অনেকটা নড়িয়ে দিলো, বিশেষ করে আজ রাতের
অনেকগুলি অদ্ভু ত ঘটনার মুখোমুখি হবার পর।
130

ও গিয়ে শেরিফকে কল করতে পারে, বলতে পারে ও কোথাও আটকা পড়েছে আর ফ্লোকে কল
করে পাচ্ছে না । কিন্তু একটা শ্বাস ফেলে ভাবল স্টান, ফ্লো ওর অনেক পুরানো বন্ধু , এখানে কি
ঘটছে সেটা না দেখে ও চলে যেতে পারে না !

ও টয়লেটের দরজার কাছে গেল, কারণ ছাপগুলো বলছে ওগুলি ওদিকেই গেছে, ইয়াক ! কালো
ঘন দুর্গন্ধযুক্ত তরলটা তাহলে এখান থেকেই আসছে ! ও অনেক কষ্টে বমি আটকে সবগুলি
দরজার নিচ দিয়ে উঁকি মেরে মেরে দেখল , নাহ ! কোনটাতে পা দেখা যাচ্ছে না ! একপাশে একটা
কেবিনের দরজার কাছে এসে ও থেমে দাঁড়ালো, এই কেবিনটার দরজার লকটা ভাঙ্গা !

রুমের চারদিকে আরেকবার বুলিয়ে নিয়ে বাইরে এসে দেখতে পেলো, আরেকজোড়া পায়ের ছাপ
দেখা যাচ্ছে ! ওগুলি কি ফ্লো এর পায়ের ছাপ ? সম্ভবত। ভয় ঠিক যেন ছোট ছোট মাকড়শার
মতো ওর চামড়ার ওপর হেঁটে বেড়াচ্ছে ! ও শ্বাস নিতে পারছে না, ছোটবেলা থেকে শোনা সব
ভয়ের কাহিনী মনে পড়ে যাচ্ছে একসাথে। এক পা এক পা করে ও ছাপগুলো ধরে এগিয়ে যেতে
লাগলো, ও ওর জীবনে এতোটা দুশ্চিন্তা কখনও আর বোধ করেনি। একটা জিনিস ওর কাছে
পরিষ্কার হয়ে গেলো, আজ যদি ও পালিয়ে যায়, তাহলে আজীবন ওকে পালিয়েই যেতে হবে !

তাই, নিজের অবাস্তব কল্পনাগুলিকে একপাশে সরিয়ে রেখে ও এগিয়ে গেলো বেসমেন্টের দিকে,
যেটা বাইরের একটা গলি পথে বেরিয়ে গেছে। ওখানে চারপাশে, দেয়ালে এমনকি সিলিঙে পর্যন্ত
রক্ত দেখা গেলো। এগুলি নিশ্চয়ই ফ্লো’র রক্ত, একটা বাসী, ধাতব গন্ধ ভেসে আছে চারপাশে।
এখন ও নিশ্চিত বুঝে গেছে ফ্লো মরে গেছে। দেয়ালে লেপটে আছে বেশ বড় একটা রক্তমাখা
হাতের ছাপ, ওটা ক্লাউন ছাড়া আর কারো হতেই পারেনা ! এখন কি ! ও কি ক্রাইমসিনে যাবে,
নাকি সাহায্যের জন্য যাবে ? যুক্তি তাই বলে, কিন্তু মানুষ তো আর সবসময় যুক্তি দিয়ে চলে না ! ও
ওর বুটের ডগা দিয়ে বেসমেন্টের দরজা খুলতে লাগলো --- বড় একটা ভু ল করতে যাচ্ছ ! ওর
ভেতরের কণ্ঠটা ওকে বলল ।
131

ব্রোকেন বটল এর ওপরের এপার্ট মেন্টে, ব্রেনডা পেচেক ওর বিছানাতে শুয়ে তীব্র জ্বরে কাঁপছে, বড়
বড় ফোঁটায় ঘাম জমছে ওর সারা মুখে আর শরীরে। মোচড়ামুচড়ি করতে করতে ও নিজেকে
নিজেই জড়িয়ে ধরে ভাবছে, ওর খারাপ ধরণের কোন ফ্লু হয়েছে। অল্প পাওরারের গোলাপি নাইট
লাইটে ওর নিজের চারপাশটাও হঠাৎ করে অচেনা লেগে উঠলো।

এটা কোথায় ??!! অবাক হয়ে ভাবল সে , আমি এখানে কিভাবে এলাম ??

পর মুহূর্তে ওর মনে পড়লো, ও নিজের বিছানাতেই শুয়ে আছে, স্তিউ ওকে তু লে দিয়ে আবার
নিচে চলে গেছে। স্বাভাবিক, সারাক্ষণ ওর গঞ্জনা সহ্য করতে করতে নিশ্চয়ই অতিষ্ঠ হয়ে যায়।

“স্তিউ , তু মি আছো ?”

কেউ নেই ! হঠাৎ ও খুব ঘুম ঘুম অনুভব করতে লাগলো, আর ঘুমিয়েই পড়লো এর পর।

সাথে সাথে ও স্বপ্ন দেখতে লাগলো বাতাস আর তু ষারের, একটা বিল্ডিং দেখতে পেলো সে।
ওখানে অনেকগুলি ক্লাউন দেখতে পেলো যেগুলি লাল আর কালো কস্টিউম পরে আছে। ও
ওদের মাঝখানে যেন ঘুরে ঘুরে নাচছে, ঝড়ের গভীরে মিশে যাচ্ছে। এরকমই চলতে থাকলো
যতক্ষণ না ওরা একটা নদীর মতো জায়গাতে ঝাঁপ দিয়ে পড়তে লাগলো। একটা ঘূর্ণায়মান
জলরাশি যেটা ওকে টেনে নিতে লাগলো একটা গর্তে র দিকে যেখানে মুখ ব্যাদান করে আছে সাদা
, বাঁকা হাসি হাসা মুখগুলি আর প্রতিদ্ধনিত হতে থাকা বিকট হাসি !

প্রচণ্ড খিচু নির কারণে ঘুম ভেঙ্গে গেলো ব্রেনডার। ও ওর মাথার ভেতর একটা অনেক প্রাচীন,
জ্ঞানী একটা কণ্ঠ যেন কথা বলে উঠলো—

সবাই নিচে আনন্দ করছে ! ওকে পথ থেকে সরিয়ে সবাই মজা লুটছে ! তোমার জামাই, তোমার
সাধের স্তিউ লোলুপ দৃষ্টি বুলাচ্ছে বনির ওপর !

কি করছে ভালো করে বোঝার আগেই বিছানা থেকে লাফ দিয়ে নামলো ব্রেনডা । ওর চিন্তা গুলি
জ্বরে আচ্ছন্ন আর বিকৃ ত। একভাবে , ও জানে, আরেকভাবে , ও জানেও না !
132

তু মি কি ওদের নোংরা , বাজে রসালো মন্তব্যগুলি শুনতে পাচ্ছ ?

ব্রেনডা আস্তে আস্তে নিচে নেমে আসতে লাগলো, স্তিউ প্রথম দেখল ওকে নেমে আসতে
“ব্রেনডা” বলল সে আস্তে আস্তে। “হানি, তোমার বিছানাতে থাকা উচিত, তু মি ----”

পশুর মতো চিৎকার করে ওর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো ব্রেনডা, খামচে দিলো ওর চেহারা ! স্তিউ
নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে দমাস করে মেঝেতে পরে গেলো। সবাই ছুটে এলো ওকে ধরতে, কিন্তু ও
সবার দিকে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে আরেকটা গর্জ ন করে উঠলো।

ও দাঁড়িয়ে পড়লো, ওর মাথার ভেতর কেউ যেন ক্রমাগত ডেকে চলেছে, ওখানে ,বাইরে কেউ
একজন আছে, বহুল প্রতীক্ষিত একজন। ও এক দৌড়ে চলে গেলো জ্বলন্ত ক্লাউনটা যেদিকে
বেরিয়ে গিয়েছিলো , সেদিকে। সেদিক দিয়ে দিগ্বিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো ।

ও দৌড়ালো, হোঁচট খেলো – যেতেই থাকলো, একটা বিশেষ কণ্ঠের দিকে, ও এখন হারিয়ে গেছে
তু ষার , বরফ আর রুপালি বাতাসের রূপকথার রাজ্যে। এক পর্যায়ে ও হাঁটু র ওপর বসে পড়লো ,
ওর হাতে কোন সাড় নেই, ওর মুখ আর পা অলরেডি নীল হয়ে গেছে।

“আমি খুব খুশি হয়েছি তু মি এসেছ” একটা কণ্ঠ বলল।

ব্রেনডা ওপরে তাকাল, একটা ক্লাউন !!

ব্রেনডা ক্লাউনটার দিকে তাকিয়ে থাকলো, ভয়ে নয়, বরং উৎসাহ মেশানো কৌতূ হলের সাথে ! ও
কেবল চিনতো – বোজো আর কু কি, বাটন আর কোকো, এমনকি ম্যাকডোনাল্ড ক্লাউন গুলিকে।

“তু তু তু তু মি কে ?” তোতলাতে তোতলাতে জিজ্ঞেস করলো ব্রেনডা।

ক্লাউনটা ওর দিকে তাকিয়ে অট্ট হাসিতে ভেঙ্গে পড়লো। হাসিটা মোটেই আনন্দিত বা সুখী মনে
হল না, বরং মনে হল কোন আহত পশুর গজরানির মতো ! ও পরে আছে একটা ঢলঢলে ,
চিত্রবিচিত্র কস্টিউম। কমলা রঙের কয়েকগাছি চু ল মাথার দুইপাশ দিয়ে বেরিয়ে আছে ! ওর চেহারা
133

মরার মতো সাদা, নাকটা বিশাল আর লাল , ঠিক একটা পাকা টমেটোর মতো। হলুদ চোখগুলি
কালো বর্ডার লাইন দিয়ে আঁকা। একটা ক্ষতিকারক হাসি ঠোঁটে ঝু লে আছে, ভ্রুগুলি কপালের
মাঝখানে কালো কালি দিয়ে আঁকা !

“হ্যালো, মাই লাভ, আমার ছোট্ট সোনামণি, আমার পোষা জীব ! আমি তোমার বন্ধু , তোমার
সাথে আজ রাতে খেলতে চাই আমি, আমি চাই তু মিও আমার সাথে খেলো !”

ক্লাউনটার কথা একই সাথে মজার লাগলো, আবার একই সাথে ওর মন ভয়ে পরিপূর্ণ হয়ে গেলো।

“কিন্তু সবকিছুর আগে” বলল নতু ন বন্ধু “এবার আমার পালা , চলো , আমরা নাচব, গাইবো আর
আনন্দ করবো, চলো হারিয়ে যাই, অনন্ত অন্ধকারে ......... !” বলেই ব্রেনডার হাত ধরে সামনের
অনির্দি ষ্ট অন্ধকারের দিকে হারিয়ে গেলো।

অধ্যায় ৩৬

বেসমেন্টের পথটা স্টানের কাছে ওর জীবনে দেখা সবচেয়ে অন্ধকার পথ বলে মনে হচ্ছে। পৃথিবীর
সব ছায়া যেন এখানেই এসে জমা হয়েছে। হলওয়ের আলো কেবল তিন ধাপ পর্যন্ত গিয়েছে।
তারপর শুরু হয়েছে দুনিয়ার অন্ধকার, ওর ঘাড়ের পেছনের চু লগুলো সড়সড় করে দাঁড়িয়ে গেলো।

ও সেখানে যায়নি আজ প্রায় তিন চার বছর হয়ে গেলো। ও কিংবা ফ্লো কেউই ওখানে কিছুই
রাখেনা, বেসমেন্ট সম্বন্ধে ওদের নিজ নিজ ভয় কাজ করে বলেই বোধহয়। ওর যাবতীয় ভয় যেন
লুকিয়ে আছে ওখানে। যদিও এসব ওর অতি কল্পনার ফসল মনে হচ্ছে, কিন্তু ওখান থেকে যে
গন্ধটা ভেসে আসছে, সেটা তো আর মিথ্যা না ! গন্ধ শুঁকে বোঝা যাচ্ছে , সে যা কিছুরই হোক না
134

কেন, সেগুলি অনেকদিন কবরের নিচে চাপা ছিল, আর হয়ত কবরের নিচেই ওগুলির থাকা উচিত
ছিলো।

ক্যামেরার ভিউ ফাইন্ডার দিয়ে ও তাকিয়ে রইল অন্ধকারের দিকে “আমি জানিনা আমি ওই
অন্ধকারে কি খুঁজে পাবো, কিন্তু যেতে আমাকে হবেই ! এটাই হয়ত আমার শেষ যাত্রা ” শান্তভাবে
বলল সে। সিঁড়ির পাশের লাইটটা জ্বালিয়ে আস্তে আস্তে নিচে নামতে লাগলো, হাতের ক্যামেরাটা
এতো কাঁপছে যে , আউট অব ফোকাস হয়ে যাচ্ছে সামনের সবকিছু।

কিন্তু নিচে যা কিছু আছে সবকিছুই ওর পূর্ব পরিচিত, দেয়ালের গা বাওয়া পানির দাগ, মাকড়শার
জালে ঢাকা ক্রসবিম, ওয়াটার বয়লার। স্টান সামনে এগোল, সামনের মোড়টা ঘুরে একটা কয়লা
রাখার জায়গা আছে। সেখানে গিয়ে যা দেখল তাতে ওর রক্ত ঠাণ্ডা হয়ে গেলো!

একটা ক্লাউন !!

ওটা নড়ছে না, একটা ভালুকের মতোই শীত নিদ্রায় আছে ওটা, শুয়ে আছে একটা ময়লার স্তূ পের
ওপর যেটা কিনা খড়, মানুষের হাড়, ছেঁ ড়া কাপড়ের টু করো ইত্যাদি দিয়ে তৈরি। ওটা একটা বাসা!
হ্যাঁ ওটা একটা বাসা না হয়েই যায় না। ওটা নিশ্চয়ই এক রাতে তৈরি করেনি ক্লাউনটা, অনেক দিন
লেগেছে ওটা তৈরি করতে। কিন্তু প্রশ্ন হলো ,কতদিন ধরে ? এ প্রশ্নের জবাব এখন পাওয়া যাবে
বলে মনে হয় না !

কিন্তু যতই ভয় পাক না কেন, স্টান থেকে গেলো, কারণ সামনের দানবটা যদ্দুর দেখা যাচ্ছে নিষ্ক্রিয়
অবস্থাতে আছে, সুতরাং এখনই কোন বিপদের সম্ভাবনা নেই ! ওর ঠোঁট রক্তলাল আর ফোলা
ফোলা , ঠিক মনে হচ্ছে একটা মাকড়শা ডজন খানেক মাছির রক্ত খেয়েছে ! গন্ধ যা বেরোচ্ছে
সেটা সহ্যই করা যাচ্ছে না, পরে আছে লাল ডট অলা ওভারল, যেটার গায়ে রক্ত শুকিয়ে আছে !
ওর চেহারা মৃতের মতো সাদা, মুখের চারপাশে ফু লে আছে ঘিনঘিনে বেগুনি শিরা, বিশাল ফোলা
হাতের একটা পেটের ওপর রাখা।
135

ওটার দিকে আলো রেখে একপাশে সরে আসতে আসতে ও দেখতে পেলো একপাশে স্তূ পীকৃ ত
চামড়া আর হাড়, সাথে সাথে ও বুঝে গেলো ওটা ফ্লো । এই উপলব্ধি হওয়া মাত্রই ওর বুকে
তীক্ষ্ণ একটা হুল ফোটার মতো ব্যাথা অনুভূ ত হলো। ক্লাউনটা ওকে খেয়ে ছিবড়ে করে এখানে
ফেলে রেখেছে। একটা তীব্র রাগ ওর পা থেকে মাথা পর্যন্ত ছুঁ য়ে গেলো। ওই রাগটাই ওর স্থবির
অবস্থা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করলো, ও পেছন ফিরে মারল এক দৌড়, ওপরে উঠে একবার পড়ে
গেলো হুমড়ি খেয়ে। উঠে পড়ে ও দেখতে পেলো, যেটা এতক্ষণ ওর চোখেই পড়েনি , দেয়ালে রক্ত
দিয়ে মোটা মোটা অক্ষরে লেখা – লাফানো ব্যাঙ এখানে ছিলো, লাফানো ব্যাঙ বলছে, খুব
তাড়াতাড়ি লিটল বানি ফো ফো !

এটার কোন মানেই হয়না, যাই হোক না কেন ,ও এখান থেকে পালাতে চায়। ও দৌড়ে বাইরে চলে
এলো, বাইরের তু ষারে বেদম আছাড় খেলো একটা, জিপের ভেতরে কোনমতে ঢু কে দরজা বন্ধ
করে, হিস্টিরিয়াগ্রস্থের মতো বিকট এক চিৎকার দিলো আর চিৎকার করতেই থাকলো !

ব্রোকেন বটল এ, স্তিউই ব্রেনডাকে প্রথমে ফলো করে বাইরে বেরিয়ে এসেছিলো। সে এমনিতে বেশি
অ্যাকশন ধর্মী মানুষ না, কিন্তু যখন ব্রেনডা দরজা পার হয়ে গেলো, ও প্রায় স্বয়ংক্রিয় ভাবে লাফিয়ে
উঠলো।

উইল টিগ বিশ্বাসই করতে পারলো না কত দ্রুত স্তিউ নড়ে উঠেছে, তারপর বাইরে বেরিয়ে গেছে
জ্যাকেট, টু পি আর গ্লাভস পড়া ছাড়াই। টিগ জানে ওর পিছে পিছে ওকেও যেতে হবে, ওর মনে
হল এতক্ষণে পিনাট আর নাথান যদি চলে আসতো।

ক্লাইড ইতিমধ্যে ওর ভারী কোট আর টু পি চড়িয়ে নিয়েছে “চলো , নাহলে ওই বেকু বটা বাইরে মারা
পড়বে !”
136

টিগ ওর পিছু নিতে নিতে কাঁধের ওপর দিয়ে ঘুরে বললো “কার্পি, বনি তোমরা এখানেই থাকো,
পরিস্থিতির ওপর নজর রাখো ” যদিও কার্পের ওপর ওর থোড়াই ভরসা আছে, কিন্তু এখন আর
কোন উপায় নেই ।

গত ২৪ বছর ধরে ডেড স্কালের সদস্যরা একদল নিষ্কর্মা ঝামেলা সৃষ্টিকারী লোক হিসাবেই
পরিগণিত হয়ে আসছে, কিন্তু আজ রাতে, আজ রাতে ওরা অত্যন্ত কাজের লোক হিসাবে
নিজেদের প্রমাণ করে চলেছে ! ওকে জোরে চলতে হচ্ছে কারণ ক্লাইড অত্যন্ত দ্রুতগতিতে
আগাচ্ছে। ওর নাগাল ধরতে সটানের খুউউউব কষ্ট হচ্ছে ! স্বাভাবিক, ও এতদিন আইনের হাত
থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। “ক্লাইড, আস্তে যাও, আমাদের আগে একটা প্ল্যান করতে হবে,
নাহলে এই তু ষার ঝড়ে আমরা হারিয়ে যাব স্রেফ !” ক্লাইড থমকে দাঁড়ালো, টিগ মাটিতে স্তিউ আর
ব্রেনডার পায়ের ছাপ দেখতে পেলো “তাড়াতাড়ি পিছু নিতে হবে, নাহলে এগুলি সব বরফে
মিলিয়ে যাবে !”

ঝড়ের প্রকোপ বিন্দুমাত্র কমেনি, বাতাস এখনও বাড়ি ঘরের ছাদ ছুঁ য়ে বয়ে যাচ্ছে আর টু করো বরফ
ঝপাঝপ পড়ছে । পুরো জায়গাটা এখন ঢেকে গেছে মিটার খানেক উঁচু বরফে। স্তিউর ছাপগুলো
অনেকটাই নতু ন ওর বউয়ের তু লনায়। ক্লাইডকে অনুসরণ করতে করতে টিগ ভাবল, এই মুহূর্তে
যা যা সাহায্য নিতে হয়, ওকে নিতেই হবে।

ক্লাইড একটি জন্মগত ট্র্যাকার। ও স্তিউর পায়ের ছাপ অনুসরণ করতে করতে বিড়বিড় করছিলো
“এখানে ও হোঁচট খেয়েছে......... এখানে একটা বরফের স্তূ পে পড়ে গেছে !! ......এখানে .........”

টিগ হঠাৎ ক্লাইডের কাঁধ খামছে ধরলো “দাঁড়াও ! একটা শব্দ শুনতে পেলে ?”

ওরা প্রথমে শুনতে পেলো বাতাসের শব্দ, ওদেরকে ঘিরে উড়তে থাকা তু ষারকণা আর বাতাসের
হা হা শব্দ ছাড়া প্রথমে কিছুই শুনতে পেলনা । যেটা মনে হলো অনেকটা একটা বিশাল মানুষের
শ্বাস নেয়ার আর ফেলার শব্দের মতো।
137

তারপর...... একটা শব্দ শোনা গেলো।

বাতাসে শব্দটা একটু কেটে গেলো, কিন্তু ওরা শিওর যে ওটা স্তিউ, ব্রেনডার নাম ধরে ডাকছে !
তারমানে ওরা ওর অনেক কাছে চলে এসেছে, তাড়াতাড়ি ট্র্যাক ধরে এগোল ওরা। ব্রেনডার সাথে
কি ঘটেছে সেটা টিগ এমনকি চিন্তাতেও আনতে চায়না, এখন আপাতত স্তিউকে উদ্ধার করে বারে
নিয়ে যেতে চায় ওরা।

“স্তিউ উ উ উ !” গলা ফাটিয়ে চেঁ চাল ক্লাইড “তু মি কোথায় আমাদের বলো, আমরা তোমাকে
সাহায্য করবো ও ও ও !” স্তিউর গলা শুনে ও ক্লাইডের চিৎকার শুনতে পেয়েছে বলে মনে হলনা ,
বরং স্তিউর গলা শুনে মনে হলো ও অনেক উত্তেজিত হয়ে আছে আর ওর মাথা প্রায় খারাপই
হয়ে গেছে ! ওরা আরও তাড়াতাড়ি যেতে চাইলো, কিন্তু ঝড় যেন ইতিমধ্যে আরও বেড়ে গেছে।
তু ষার কণাগুলি যেন একটা দেয়ালের মতো সামনে দাঁড়িয়ে আছে, এরকম কোন কিছু টিগ কখনও
দেখেনি। ও পড়ে গেলো কয়েকবার, প্রত্যেকবার ওকে ধরে তু ললো ক্লাইড, একজন পুলিশ আর
একজন অপরাধী, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়তে লাগলো প্রকৃ তির বৈরিতার বিরুদ্ধে। টিগের মনে হল,
ওরা যে দানবগুলিকে শিকার করতে চাইছে, ওরাই যেন এই ঝড়টাকে নিয়ন্ত্রণ করে ওদের সুবিধার
জন্য নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে, ওদের গতি ধীর করে দিয়ে ওদেরকেই উল্টে শিকার করতে চাইছে !

টিগের ফ্ল্যাশলাইট বরফের দেয়ালে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসছে, ঠিক যেন আর্ক টিক অঞ্চলের
শীত কালের মতো। ওরা যদি রাস্তা হারিয়ে ফেলে,তাহলে এই অন্তহীন সাদার রাজ্যে চিরতরে হারিয়ে
যাবে ! ওরা আরেকবার স্তিউর গলা শুনতে পেলো, ছোট একটা আশার আলো জ্বলে উঠলো
টিগের ভেতরে, ওকে তাহলে খুঁজে পাওয়া যেতেও পারে ?

কিন্তু ঘটনা ঘটলো সম্পূর্ণ অন্যভাবে, ওরা স্তিউকে খুঁজে পেলনা, বরং স্তিউই ওদেরকে খুঁজে
পেলো! টিগ সহসা একটা নড়াচড়া টের পেলো, তারপর বরফের দেয়াল ভেদ করে হোঁচট খেতে
খেতে আবির্ভূ ত হলো স্তিউ, আপাদমস্তক বরফে ঢাকা ! শেরিফকে নিয়ে নিচে পড়ে গেলো সে ,
ফোঁপাচ্ছে “ব্রেনডা ! ওহ গড ......... ! ”
138

ক্লাইড ওদের দুজন কে ধরে তু লতে তু লতে বললো “আমাদের এক্ষু নি ব্রোকেন বটল এ ফিরে যেতে
হবে, নাহলে আমরা কেউই বাঁচবো না !”

কিন্তু তার মানে হলো ব্রেনডাকে পেছনে ফেলে যাওয়া। একজন শেরিফ হয়ে সে সেটা কোনভাবেই
চাইতে পারেনা ! ক্লাস ফোর থেকে সে একজন পুলিশ হতে চাইতো, যতটা না আইন রক্ষার্থে, তার
চেয়ে বেশি মানুষকে সাহায্য করার বাসনায় !

এখন ও স্তিউর কাছে ফিরে এলো, বেচারাকে দ্রুত শারীরিক ও মানসিক ভাবে যত দ্রুত চাঙ্গা করে
তোলা যায় ততই মঙ্গল, নাহলে ও মারাই যাবে, অলরেডি ও হাইপোথারমিয়া আর ফ্রস্ট বাইটে
আক্রান্ত। প্রত্যেকটা সেকেন্ড গুরুত্বপূর্ণ !!

অধ্যায় ৩৭

ক্লাইড আর শেরিফ দুজনেরই একসাথে বের হয়ে যাওয়াটা একদম পছন্দ করতে পারলো না বনি,
বিশেষত মৃত আর আহতদের মাঝে স্কাঙ্কের সাথে ও প্রায় একলা । ব্যাটা এখনও সেভাবেই চোখ
দিয়ে ওকে গিলে খাচ্ছে !

“এটা পুরোই পাগলামি !” বলে উঠলো মেডেলিন কেনারের বন্ধু লিন “আমার কথা হলো, শেরিফ
আমাদেরকে দেখেছে, ওর কাছে আমাদের ঠিকানা , ফোন নাম্বার সবই আছে। আমরা এখানে আর
থেকে কি করবো ? ”

“শেরিফ কাউকে এখান থেকে যেতে মানা করেছেন, তার মানে হলো , কেউ এখান থেকে নড়বে না
! ” বলল কার্পি !
139

মেডেলিনের আরেকজন বন্ধু , ইলেইন গররাজি গলায় বলল “আমি এটা নিয়ে দ্বিতীয়জন হলেও,
এটা কিন্তু আসলেই পাগলামি। আমরা যদি শীঘ্রই বের না হই, তাহলে পুরো ঝড়টাই আমাদের
এখানেই কাটাতে হতে পারে ”

“আমি এটা করতে পারবো না ” বলল বনি।

“সরি, এটা এখনও ফ্রি কান্ট্রি আর তু মি বসে না থেকে আমাদের সাথে আসতে পারো”

ও ঠিকই বলেছে, ওদের সঙ্গ এই মুহূর্তে অবশ্য জরুরী দরকার বনির।

“আমি হলে এমনটা করতাম না !” জরুরী সুরে বলল কার্পি ।

স্কাঙ্ক, অবশ্যই, অবস্থার সুযোগ নিতে এক মুহূর্ত দেরী করলো না “এমনকি টিগও এখানে এসে
তোমাদের না পেলে কিছুই করতে পারবে না, তোমাদের চলে যেতে মন চাইলে চলে যেতে পারো”
ও এটা বলতে বলতেই বনির দিকে লোলুপ দৃষ্টি হানলো একবার ! যতজন বার ছেড়ে চলে যাবে,
ওর আর বনির মাঝখানে ঠিক ততজন কম মানুষ হবে ।

“কিন্তু এটা মোটেই ঠিক কাজ হবে না ! শেরিফ এটা মোটেই পছন্দ করবে না” দুর্বলভাবে চেষ্টা
করলো আরেকবার কার্পি ।

মেডেলিন চোখ পাকিয়ে তাকালো “শেরিফ তো আর ঈশ্বর নন !”

“কিন্তু এখানে আহতরা রয়েছে” বনি মরিয়া, কারণ ওরা চলে গেলে সে, কার্পি আর আহতরাই বাকি
থেকে যাবে – আর থাকবে ওই ঘাটের মড়া স্কাঙ্ক !

“কিন্তু ওখানে আমাদের পরিবার রয়েছে ” ইলেইন বললো “আমরা ওদের কোন খবরই পাচ্ছি না,
ওরা বেঁচে আছে কি-না, তাও জানিনা-- সরি , আমাদের যেতেই হবে !”

বনি অসহায়ভাবে ওদের চলে যাওয়া দেখতে দেখতে ভাবতে লাগলো , ওই ব্যাটা স্কাঙ্ক এবার ওকে
স্রেফ গিলে খাবে ! সবচেয়ে খারাপ হলে, ওকে হয়তো ছুরি ব্যাবহার করতে হতে পারে, কিন্তু সমস্যা
140

হলো, স্কাঙ্ক ব্যাটার ছুরি যুদ্ধে অভিজ্ঞতা প্রচু র। বনিকে খুব দ্রুত আর কার্যকরভাবে আঘাত হানতে
হবে, নাহলে ব্যাটা ওটা ওর হাত থেকে কেড়ে নেবে, সেক্ষেত্রে ও আরও উত্তেজিত আর ভয়ংকর
হয়ে উঠবে, হয়তো দেখা যাবে ওর নিজেরই ছুরি ওর গলায় চেপে ধরে স্কাঙ্ক ওকে ............

শেরিফ, ক্লাইড, নাথান , পিনাট – বনি ভাবতে লাগলো – প্লিজ তাড়াতাড়ি আসো – প্লিজ প্লিজ
প্লিজ !!

মেডেলিন আর ওর বন্ধু রা দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাবার পর, স্কাঙ্ক ওর দিকে তাকিয়ে বিশ্রীভাবে
হাসল, আর ধীরে , খুব ধীরে , এগিয়ে আসতে লাগলো বনির দিকে .........

কোমরে গুঁজে রাখা নিত্যসঙ্গী ভাঁজ করা ছোরার ঠাণ্ডা বাঁটে হাত রাখলো বনি, না লড়ে মরবে না !

দেখা গেলো, টিগ আর ক্লাইডই আগে ফিরলো, ওরা ঝড়ের মতো মেন দরজা দিয়ে ঢু কে আসলো ,
মাঝখানে স্তিউকে নিয়ে , যাকে ঠিক একটা জীবন্ত বরফের স্তাপত্যের মতো দেখাচ্ছিল। যদিও কেউ
লক্ষ্য করলো না , বনির মুখে স্বস্তির রেখাটা হলো দেখার মতো, সত্যিকারের দেবদূতসুলভ আভা
দেখা গেলো ওর চোখেমুখে।

স্তিউকে একটা বেঞ্চে রাখার পর কার্পি লাফিয়ে উঠলো, যদিও ও এতক্ষণ মজাসে হুইস্কি
গিলছিল, কিন্তু তাতে একটা কম্বল এনে দিতে আটকাল না, আর সেটা জড়িয়ে দেবার ক্ষেত্রেও না
! বনি ধোঁয়া ওঠা এক কাপ কফি নিয়ে এলো। এ অবস্থায় অবশ্য এর থেকে বেশি আর কিছু করাও
যেতো না । বনি টিগের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো “ব্রেনডা ?” টিগ হতাশভাবে
মাথা নাড়ল , এর মানে কি ব্রেনডাকে ওরা খুঁজে পায়নি নাকি ও মৃত, সেটা অবশ্য বোঝা গেলো
না !
141

স্তিউ অনিয়ন্ত্রিতভাবে কেঁ পে চলেছে আর বিড়বিড় করে চলেছে হাতের কফিতে চু মুক দেবার ফাঁকে,
কিছুই বোঝা যাচ্ছে না সে কি বলছে। দাঁতে দাঁতে খট খট করে বাড়ি খাচ্ছে ওর, হ্যালোউইনে
ব্যবহার করা প্লাস্টিকের খুলির খটখটানির মতো।

টিগ আর ক্লাইডও কফি খেয়ে নিয়েছে এর মধ্যে , টিগ জিজ্ঞেস করলো “পিনাট ফিরেছে ?” কার্পি
না সুচক মাথা নাড়ল।

টিগের ব্যাপারটা মোটেও ভালো লাগছে না, পিনাট বা নাথান ফ্রির না ফেরাটা ওর একদম পছন্দ
হচ্ছে না, অবশ্য আজ রাতের কোন কিছুই ওর ভালো লাগছে না!

“আমি এরকম তু ষার ঝড় আমার জীবনে দেখিনি ” ক্লাইড বলল তু ষার গলতে থাকা দাড়িতে হাত
বুলাতে বুলাতে “এই ধরণের ঝড়ে তু মি হারিয়ে যাবে আর বরফে জমে মরবে, এটা এই শতাব্দীর
ভয়াবহতম ঝড়। আমি বাজি ধরে বলতে পারি, তু মি যদি সেখানে যাও, তোমার মনে হবে ঝড়টা
যেন তোমাকে ফাঁদে ফেলে মেরে ফেলতে চাইছে। ”

কার্পির মনে হলো কিছু বলে, ঝড় আবার উদ্দেশ্যমূলকভাবে কিছু করতে পারে নাকি ! কিন্তু ও
ক্লাইডকে ভয় পায়, তাই কথাটা গিলে ফেললো।

টিগ ব্যাপারটা লক্ষ্য করে মৃদু হাসলো , ওহ ! তাহলে এই ব্যাপার ! ব্যাটাকে চু প করানোর ওষুধ
পাওয়া গেছে তাহলে। ওর হাসি মিলিয়ে গেলো পরমুহূর্তে যখন দেখল মেডেলিনরা নেই
“মেডেলিন আর ওর বন্ধু রা কোথায় গেলো ?”

বনি আর কার্পি একটা চোরা চাহনি বিনিময় করলো “ওরা চলে গেছে !” বনির মুখে কথা ফু টল
অবশেষে।

“এই আবহাওয়ায় ? ” টিগ ওকে ঝাড়ি মেরে উঠলো “ওরা এই আবহাওয়ায় বাইরে বেশিক্ষণ
টিকবে না ! ”
142

কার্পিকে ভীত দেখালো “আমরা ওদেরকে আটকানোর জন্য সবরকম চেষ্টা করেছিলাম। বনিও
অনেকবার বলেছে, কিন্তু ওরা আমাদের কথায় কান দিলে তো !”

টিগ আরামসে ওদেরকে একটা লেকচার ঝেড়ে দিতে পারতো, ও আগেই ভয় পেয়েছিলো যে
এরকম কিছু একটা ঘটবে, কিন্তু সেটা ওর মনকে ভালো করতে পারলো না ।

ক্লাইড তড়পে উঠলো স্কাঙ্কের দিকে “আমি তোমাকে বলেছিলাম সতর্ক থাকতে” স্কাঙ্ক ভাঙ্গা
গলায় বললো “আমি কিছুই করতে পারিনি ” এমনকি ওর মতো টাফ ডেড স্কালও ক্লাইডকে ভয়
পায়, ও নিজে ১০০ পাউন্ডের কাছাকাছি, কিন্তু ক্লাইড ওর চাইতে আরও বিশ পাউন্ড বেশি ,
আরও দুই সেন্টিমিটার বেশি লম্বা। জেলে থাকতে ও অনেক হিংস্র ক্রিমিনালকে খালি হাতেই প্রায়
যমের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে, অনেকজনের গলাও ফাঁক করে দিয়েছে হাতে বানানো ছুরি দিয়ে !
একজন হতভাগাকে তো লেড পাইপ দিয়েই পিটিয়ে মেরে ফেলেছিল একবার, এই সব কিছুরই
চাক্ষু ষ সাক্ষী থাকা স্বত্বেও ওর দিকে কেউ আঙ্গুল তোলার সাহস পায়নি।

“অনেক হয়েছে !” মাঝখান থেকে বলে উঠলো টিগ। ও লক্ষ্য করলো স্কাঙ্ককে অপদস্থ হতে দেখে
বনির মুখে চোরা একটা হাসি ফু টে উঠেই মিলিয়ে গেলো। এখানে ওরা আসার আগে নিশ্চয়ই কিছু
একটা ঘটেছিল। কিন্তু ও সেদিকে মনোযোগ দেবার আগেই স্তিউ কথা বলে উঠলো “ওখানে...... ও
শুনেছিল......... আমি জানি , ওটা সে ...... আমি স্রেফ জানি .........”

বনি ওকে বলল “রিলাক্স করার চেষ্টা করো। ” কিন্তু এটা অনেকটা সদ্য নিজের হাত হারানো একটা
লোককে সান্ত্বনা দেয়ার মতো, যাকে কিনা বলা হচ্ছে কাল সকালে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে!

স্তিউ বাজেভাবে কাঁপতে কাঁপতে বলতে লাগলো “ও-ই আমার সবকিছু ছিল !” ফোঁপানোর
ফাঁকে ফাঁকে বলতে লাগলো “আমি জানি ও অনেক অভিযোগ করতো আর ওর অনেক ব্যাপার
তোমাদের পছন্দ হতোনা ,কিন্তু আমার কাছে ও-ই সমগ্র জগত ছিল !”
143

টিগ বুঝতে পারলো না কি বলবে, ওর বেশ খারাপ লাগছিলো , সম্ভব হলে ব্রেনডাকে ও খুঁজে
এনে দিতো, কিন্তু ওই বালের ঝড়টা অনেক বিপজ্জনক। ওখানে কেউই বেশিক্ষণ টিকে থাকতে
পারবে না, কেউ শুধু আশা করতে পারে ও একটা আশ্রয় খুঁজে পেয়েছে ।

“ও ব্রেনডাকে ডেকে নিয়ে গেছে ঝড়ের মধ্যে !” বললো স্তিউ “আর ব্রেনডা ওর ডাকে সাড়া
দিয়েছে !”

“কে ডেকেছে ?” জিজ্ঞেস করলো কার্প, বিভ্রান্ত।

কিন্তু টিগ বুঝতে পারলো, একটা ক্লাউন কামড় দিয়েছিল ব্রেনডাকে, ওর মধ্যেও ক্লাউনের আত্মা
ভর করেছিলো, তাই ওকে ক্লাউনদের গ্র্যান্ডমাস্টার ডেকে নিয়ে যেতে পেরেছে এতো সহজে।
আক্ষেপ ভরে ও তাকাল স্তিউর দিকে, ব্রেনডাকে ছাড়া এই লোক বেশীদিন বাচবে না ! ব্রেনডার
ছায়া হিসাবেই ওর অস্তিত্ব ছিল এতদিন, ও ছিলো ব্রেনডার একটা অতিরিক্ত প্রত্যঙ্গের মতো ,
স্বাধীন কোন স্বত্বা ওর কখনোই ছিল না । কিন্তু এখন – একটা শ্বাস ফেলে ভাবল – ও স্রেফ একটা
ভূ ত ছাড়া আর কিছু না ! বেচারার জন্য খারাপই লাগলো ।

কিন্তু ও নিজেও খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই, পিনাট আর নাথান কোথায় গেলো ? ওদের যতই
দেরী হচ্ছে, টিগের ততই খারাপ লাগছে। ওর মাথার ভেতর একটা কণ্ঠ সমানে ওকে দোষারোপ
করে যাচ্ছে, ও এই শহরের শেরিফ – সবাই ওর ওপর ভরসা করে আছে , কিন্তু ওর মাথায়
এখনও পর্যন্ত কোন ভালো প্ল্যান নেই কি করা উচিত সে ব্যাপারে ! এ ব্যাপারে ও ক্রমশ উৎসাহও
হারিয়ে ফেলছে, কারণ যেদিকেই তাকাচ্ছে সমাধানের জন্য , সব দিকেই একটা দেয়ালে ধাক্কা খাচ্ছে
সে !

আমরা এখান বন্দী – ঠিক যেমনটা ক্লেগ বলেছিল – আমরা কেউ বেরোতে পারছি না , কেউ
ভেতরেও আসতে পারছে না , স্টিলস আর ওয়েগ্লি বাইরে কোথাও আটকা পড়েছে, আর ওরা
আমাদের নাগালও পাচ্ছে না , সে যে মাধ্যমেই হোক না কেন। আর এদিকে পিনাটও কোন চু লোয়
144

গেছে কে জানে। পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপের দিকেই যাচ্ছে, আর বেশি কিছু করাও যাচ্ছেনা শুধু
প্রার্থনা করা ছাড়া !

বনি ওকে জিজ্ঞেস করলো “এখন আমরা কি করবো ?”

একই প্রশ্ন টিগের মাথাতেও ঘুরছিল – ও ভাবছিল –

এই তু ষার ঝড় ওদেরকে বাইরের জগত থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে ফেলেছে, সেই কারণে
ক্লাউনদের জন্য এটা একটা পারফেক্ট হান্টিং গ্রাউন্ডে পরিণত হয়েছে। সকাল হবার আগেই
ডজনখানেক লাশ পড়ে যাবে। এখানে কিউট অনেক ঘরবাড়ি আছে – আর সেখানকার
বাসিন্দারা ক্লাউনদের কাছে কাঠির আগাতে সাজানো মাংসের টু করো ছাড়া আর কিছুই নয় !

সহসা শেরিফের মাথায় একটা আইডিয়া খেলে গেলো, ডু বন্ত মানুষের খড়কু টো আঁকড়ে ধরার
মতোই ব্যাপারটা, কিন্তু দেখাই যাক না কপাল ঠু কে ---

“ঈশ্বরের দোহাই !” সশব্দে বলে উঠলো টিগ, সবাই সচকিত হয়ে ওর দিকে তাকালো “আমরা
নাথান আর পিনাটের জন্য আর স্রেফ দশ মিনিট অপেক্ষা করবো , তারপর আমরা পুলিশ
স্টেশনের দিকে চলে যাব। ক্লাইড, ওখানে একজন আছে যে আমাদের সাহায্য করতে পারবে ।
কারণ, ক্রো ফলস যদি আসলেই মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়ে থাকে তাহলে একটাই উপায় খোলা
আছে আমাদের সামনে – দশ মিনিট , তারপরই আমরা বেরিয়ে পড়বো ।”

অধ্যায় ৩৮

যতই সময় যাচ্ছে , টনি রুশো ক্রমেই ব্যাপারটা আরও অপছন্দ করছে, এই দুই আধা-বান্দর ,
পিনাট আর নাথান ফ্রি – একটা পুলিশ আর একটা বাইকার, ওর দরজা লাথি দিয়ে ভেঙ্গে ভেতরে
ঢু কেছে, ওর বউকে পিটিয়েছে, একটা কাঁপুনি দিয়ে ওর মনে পড়লো বুড়ো পিলের মৃতদেহটার
কথা -- আর তারপর ওই বালের ক্লাউন নিয়ে বকবকানি।
145

ক্লাউনস ! জাহান্নামে যাক ব্যাটারা !!

নাথান আর পিনাট ওকে নিয়ে বাইরে ঝড়ে বেরিয়ে এলো, যদি খুনি ক্লাউনরা বাইরে ঘোরাফেরাই
করবে , তাহলে এমন গটগট করে বাইরে হাঁটার দরকারই বা কি ? ওর কি ঘরে থেকে ওর বউ,
মিজকে রক্ষা করার চেষ্টা করা উচিত না ?

এই চিন্তাটা মাথায় আসতেই অবশ্য ওর হাসি পেয়ে গেলো – রক্ষা করবে ? মিজকে ?? !! হাহ, ও
আর যাই হোক লজ্জাবতী লতা অন্তত না ! কিন্তু তবুও .........

এটা বাইরে ঘোরাঘুরির জন্য ভালো কোন রাত না, এমনকি অপেক্ষা করতে থাকা কোন যানবাহনের
কাছাকাছি হলেও না ! সামনে মিটার খানেকের মধ্যেই পিনাট আর নাথান হেঁটে যাচ্ছে, ওদেরকে
দেখাচ্ছে সাদা তু ষার পাতের মধ্যে কোন ভূ তু ড়ে ছায়ার মতো। তু ষার ঝড়ে তো ভূ তরাই ঘোরাফেরা
করে ! ও মাথা থেকে চিন্তাটা ঝেড়ে ফেলে দিতে চাইলো, কারণ ভূ তের কথা উঠলেই ওর
অবধারিতভাবে যুদ্ধের কথা মনে পড়ে যায় – প্রথম গালফ যুদ্ধের কথা, ওর নিজের ক্ষেত্রে আর কি
!

ও তখন ২৪তম ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের একজন মেডিক , কিল্যান্ড নামে একজন ইনফ্যান্ট্রি
ম্যানকে বসরার কাছে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া গেলো। সবাইই ওকে পছন্দ করতো , কিন্তু টবি
উডসের মতো অতোটা কেউ না, ও ছিল কিল্যান্ডের বেস্ট ফ্রেন্ড ! কিল্যান্ডের মৃত্যুর
ঘন্টাখানেকের মধ্যে এই টবি হঠাৎ অদ্ভু ত আচরণ করা শুরু করলো, ও কিল্যান্ডের মতো দক্ষিনী
টানে কথা বলা শুরু করলো। কিল্যান্ডের মতোই অসভ্য জোকস বলা আর ধূমপান করতে আরম্ভ
করলো। কিন্তু টবি জীবনে কখনও সিগারেট ছুঁ য়েও দেখেনি ! ওটা যথেষ্ট বেশ অদ্ভু ত আর গা
ছমছমে ছিল ! ওকে শেষমেস মানসিক পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল, এরপর ওর মধ্যে টবি
উডসের কোন লক্ষণই দেখা যায়নি ! ইউনিটের সবার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মালো যে , কিল্যান্ডের আত্মা
টবির ভেতর বাসা বেঁধেছে !

সেই স্মৃতি মনে পড়লে এখনও মেরুদণ্ড দিয়ে ভয়ের ঠাণ্ডা স্রোত নেমে যায় টনির।
146

ওরা এসইউভি টার ভেতরে ঢু কে একটু ক্ষণ ভেতরের উষ্ণতাটা উপভোগ করলো, তারপর চলতে
শুরু করার পর টনি বলে উঠলো “আমি জানিনা টিগ কেন মনে করছে আমি কোনরকম সাহায্য
করতে পারবো !”

নাথান ওর দিকে ফিরে তাকিয়ে বলল “তু মি একজন মেডিক, তাই না ? ”

“আমি ছিলাম—নাথান, কিন্তু ওটা অনেককাল আগের কথা ! আর ওখানে যদি কোন মেডিক্যাল
যন্ত্রপাতি না থাকে, আমার সন্দেহ আসলে আমি কতদুর কি করতে পারবো।”

“ওয়েল, অন্তত চেষ্টা তো করতে পারবে !”

“শিট ” গোঙাল টনি।

পিনাট এসব থেকে দূরে থাকলো, ওর এমনিতেও গাড়িটাকে তু ষার ঝড়ের বিরুদ্ধে রাস্তায় রাখতে
হিমশিম খেতে হচ্ছে, ফোর হুইল ড্রাইভ হওয়া সত্ত্বেও ! বরফের অনেকগুলি স্তূ পের ওপর দিয়ে ,
পাশ দিয়ে কেটে কু টে কোনমতে বেরিয়ে যাচ্ছিলো পিনাট। ওদিকে টনি ভাবছিল , এটা
আধিভৌতিক বলে মনে হচ্ছে টনির কাছে, একটা ঝড় এতো প্রচণ্ড কিভাবে হতে পারে !

ও যখন এসব ভাবছিলো, একটা কণ্ঠ হামাগুড়ি দিয়ে ওর মাথার ভেতর প্রবেশ করলো, যেটা ও
এর আগে কখনও শুনেছে বলে মনে করতে পারলো না। ওটা একটা সুরেলা কিন্তু একঘেয়ে ঘুমের
গানের মতো, যেরকম অনেক আগে, একদম ছোটবেলায় ওর কিন্ডারগার্টে ন স্কু লের টিচার মিসেস
বিসবি শোনাতেন। ওনার কণ্ঠ বরাবরই ছিল নরম আর শীতল । ছোট বেলায় ওনার কণ্ঠ সবসময়
আত্মবিশ্বাস খুঁজে পেতো টনি। এই কণ্ঠটাও একইরকম লাগছিলো ওর কাছে, এটা যতই শুনছে ,
ততই মনে হচ্ছে ছোটবেলার মিসেস বিসবি কোন এক অদ্ভু ত উপায়ে এতো বছর পরে এসে ওর
সাথে কথা বলছেন !
147

“তু মি কি নিজের সাথে কথা বলছ ?” নাথান জিজ্ঞেস করলো। টনি জবাব দিলো না ,কারণ
সামনের সিটটাও এখন ওর কাছে মনে হচ্ছে লক্ষ মাইল দূরের কোন জিনিস ! সামনের ওদেরকে
মনে হচ্ছে অন্য মাত্রার কোন ভূ তু ড়ে অবয়ব !

একটা সময় পরে টনি নাথান ফ্রির গলা শুনলো আবার, ও জবাবও দিতে চাইলো, কিন্তু
আশ্চর্যজনকভাবে ওর গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বেরোল না । ওর মনে হচ্ছে কেউ ওর ব্রেনের
দখল নিয়ে নিয়েছে ! তু ষার ঝড় যেন ওকে রেশমের মতো ভেতরে গুটিয়ে নিচ্ছে, ওকে বলছে –
রিলাক্স, আমরা তোমার সাথে আছি, আমরা তোমাকে রক্ষা করবো, তু মি স্রেফ চোখ বুজে থেকে
তোমাকে আমাদের হাতে সঁপে দাও ! টনি এর মাঝেই আবার মাথা ঝাঁকা দিলো – এটা হয়তো ওর
বেঁচে থাকার আদিম প্রবৃত্তির বশেই করলো , ওকে বলছে এটা ঠিক না আর বেশ বিপজ্জনক!

“ঈশ্বরের দোহাই !” ও বলে উঠলো যখন বুঝতে পারলো ও ওই কণ্ঠটা ছাড়া আর কিছুই শুনছে
না, এমনকি ঝড়ের শব্দও না ! যদিও মিসেস বিসবি ওকে আশ্বস্ত করছেন যে ওর ভয়ের কিছুই
নেই , উনি বলছেন – শুধু আমাকে শোন, টনি ! আমি আমার আশ্রিতদের জন্য সবচেয়ে
ভালোটাই চাই সবসময় !

হ্যাঁ , এটা অবশ্য ঠিক আছে , মিসেস বিসবি সবসময় টনিকে পছন্দ করতেন , উনি ওই বুনো
নাথান আর পিনাটদের মতো না !

কোন এক সময়, একটা খুব খারাপ ঝড় উঠেছিল, ওটার ছিল অনেক দমকা বাতাস আর অনেক
তু ষার ! একটা ছোট্ট ভালো ছেলে টনি ওর মধ্যে পথ হারিয়ে ফেলেছিল। টনি এখন কি করবে ? ও
শীতে কাঁপতে কাঁপতে চারদিকে তাকালো, কিন্তু ওর চারদিকে ঝড়টা আরও যেন ঘন হয়ে এলো।
ও ওর মায়ের কাছে যেতে চায় যিনি আরামদায়ক কিচেনে ওর জন্য এক বাটি ভর্তি গরম স্যুপ
নিয়ে বসে আছেন। ও এখন কিভাবে সেখানে পৌঁছবে ? কিচ্ছু না , শুধু পায়ের পর পা ফেলে যাও,
প্রত্যেকটা জার্নিই শুরু হয় একটা প্রথম পা ফেলার মাধ্যমে।
148

টনি বুঝছে না এখন কি করবে, ও বুঝতে পারছে মাথার ভেতরের কণ্ঠটাকে বিশ্বাস করা ঠিক হবে
না ! কিন্তু ওর সামনের সিটে বসা মানুষগুলোকেও তো ও বিশ্বাস করতে পারছে না ! নাথান ওর
দিকে ফিরে চিৎকার করে কি জানি বলে যাচ্ছে ,কিন্তু ওর এক বর্ণও টনি বুঝতে পারছে না !

ও হঠাৎ গলা ফাটিয়ে চেঁ চিয়ে উঠলো “থামাও, গাড়ি থামাও ! ” অবচেতনের মতো টনি মাথা
নাড়ছে ,ওর এখনই এই গাড়ি থেকে নেমে যেতে হবে “থামাও, নয়তো আমি বমি করে সব
ভাসিয়ে দিলাম বলে !”

পিনাট ওর সাধের গাড়ি থেকে বমি ছেঁ চে তু লতে পারবে না ! গাড়ি হার্ড ব্রেক করে থেমে যাবার পর
ঝট করে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলো টনি , বাইরে একটা বরফের স্তূ পের ওপর পড়ে যেতে
যেতে ও দেখলো ওই দুজন মানুষও বেরিয়ে আসছে , ওরা খারাপ মানুষ ! ওদের নামও এখন
আর ওর মনে পড়ছে না !

“এখান থেকে চলে যাও !” ও চিল্লালো “আমাকে একা ছেড়ে দাও !”

ওরা কাছিয়ে আসার পর, ওর সারা শরীর খিঁচু নি দিতে শুরু করলো !

অধ্যায় ৩৯

অবশেষে যখন স্টান বারবাচেক পুলিশ স্টেশনের সামনে আসলো , ততোক্ষণে ওর নার্ভাস
ব্রেকডাউন হয়ে গেছে। ঠাণ্ডার কারণে, এই রাতের ভয়াবহতার কারণে আর ও এতক্ষণ ধরে যা যা
দেখেছে সেসবের কারণে। ওর মাথার ভেতর হাজারটা কণ্ঠ যেন ফিসফাস লাগিয়েছে, আর ভাঙ্গা
রেকর্ডে র মতো ঘুরেফিরে ফিরে আসছে সেই ক্লাউনের রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা, পরিত্যাক্ত টো
ট্রাক , ট্যাক্সি স্টেশনে দেখা দৃশ্যগুলো ! এখন ও প্যাটি ওয়েল্যান্ডের সামনে দাঁড়িয়ে পুরো
149

ঘটনাগুলি বলে যাচ্ছে গড়গড় করে। কিন্তু ওর আরও বেশি ভয় এজন্য লাগছে যে, প্যাটিকে দেখে
মনে হচ্ছে না যে ও খুব বেশি আশ্চর্য হচ্ছে না ওর কথাগুলি শুনে !

“এখন শোন , স্টান” ও সবশেষে বলল “বড় করে শ্বাস নাও একটা, তু মি যা বলছ এসবের কোন
মানেই হয়না !”

বড় শ্বাস না, রীতিমতো হাঁপাতে হাঁপাতে স্টান রাগত স্বরে বলল “আরে ! যা ঘটেছে আর যা আমি
চোখের সামনে দেখেছি তাই তোমাকে বলছি, সবচেয়ে বেশি যেটা আমার এখন দরকার সেটা হলো
সাহায্য , গড ড্যাম ইট ! আমার এসবের সময় নেই, শেরিফ কোথায় ? আমার ওনার সাথে এক্ষু নি
কথা বলা দরকার ।”

“শেরিফ পথেই আছে, আসছে এদিকেই। খুব তাড়াতাড়িই চলে আসবে সে ”

“তাহলে ওনাকে কল দাও !”

প্যাটি ভাবতে লাগলো এবার সে কি করবে, ও রেডিওটা অন করলো, কিন্তু ঝিরঝির শব্দ ছাড়া
ওখান থেকে আর কিছুই বেরোল না !

“এটা ওই বালের ঝড়টার জন্য !” বলল সে।

স্টান প্রবলভাবে মাথা নাড়তে নাড়তে বলল “আমরা সবাই বিপদে আছি -- খুব বড় বিপদ !”

প্যাটি বলল “তাহলে আমাকে পুরো ব্যাপারটা আবার প্রথম থেকে খুলে বলো”

এদিক ওদিক ভয়ে ভয়ে তাকাতে তাকাতে বলল স্টান “ফ্লো হেমিঙ্গার মারা গেছে, এটাই এখন
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আমি ওর লাশ দেখেছি আর যেটা ওকে মেরে ফেলেছে সেটাও দেখেছি”
ও ওর পারকার ভেতর থেকে ক্যামেরা বের করলো “আমি জানি আমার কথা তোমরা বিশ্বাস
করতে চাইবে না, তাই আমি ব্যপারটা ফিল্মবন্দীও করে রেখেছি ! এটা তো অন্তত মিথ্যা বলবে না!

150

“ওকে একটা ক্লাউন খুন করেছে ?”

“আমি এইমাত্র কি বললাম ?”

“হুম, এটা বেশ ......... অদ্ভু ত !”

স্টান কাঁপা কাঁপা নার্ভাস হাসি হেসে বলল “হ্যাঁ , আমি জানি এটা ভালোই অদ্ভু ত, কিন্তু এটাকে
যদি মজার মনে করো ,তাহলে শুধু ভিডিওটা একবার দ্যাখো !”

“নাহ, প্রয়োজন নেই !”

এখন স্টানের অনেকটা ভালো লাগতে শুরু করলো, প্যাটির মুখ দেখে মনে হচ্ছে ও বরং নিজের
কবরের দিকে তাকাবে কিন্তু এই ভিডিও দেখতে রাজী নেই ! ও টিগের সাথে কন্টাক্ট করার আবার
চেষ্টা করলো, কিন্তু নিষ্ফল হলো সেই প্রচেষ্টা !

স্টান জিজ্ঞেস করলো “তু মি কি জানো উনি কোথায় আছেন ?”

প্যাটি এবার বিরক্ত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো “আমি ওই বালের ঝড়ের কারণে কাউকে পাচ্ছি
না, তাই আমি আসলে জানিনা কে কোথায় আছে, বাই গড, আমি এমনকি এটাও জানিনা যে
আমরাই বা কোথায় আছি !”

নার্ভাসভাবে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে স্টানের মনে হলো , দৌড়ে কোথাও গিয়ে লুকিয়ে
পড়ে , বদলে সে ক্যামেরাটা রোল করা শুরু করলো । প্যাটি বাঁধা দিতে চাইলেও সে পাত্তা দিলো
না , ধারাভাষ্যকারের ভঙ্গিতে বলা শুরু করলো “এই হলো আমাদের বর্ত মান অবস্থা, ওই তু ষার
ঝড় আমাদেরকে আটকে ফেলেছে আর কাউকে বের হতে দিচ্ছে না !” স্টান জানালার কাছে গিয়ে
বাইরেটা ভিডিওতে ধরল, আশা করলো মাইক্রোফোনে বাইরের বাতাসের গোঙ্গানি ভালোভাবে ধরা
পড়ছে “ক্লাউনরা ওখানে আছে, আমি মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বলতে পারি ওরা বিচিত্র কস্টিউম পরা
একদল উন্মাদ, কিন্তু ব্যপারটা মোটেও সেরকম না , ওখানে কিছু একটা ঘুরে বেড়াচ্ছে এই ঝড়কে
151

আড়াল হিসাবে ব্যাবহার করে, আমি এই মুহূর্তে রেকর্ড করার সময়েও, ওরা ওদের শিকার খুঁজে
নিচ্ছে !”

“অনেক হয়েছে , স্টান ! ” তড়পে উঠলো প্যাটি, চেয়ার থেকে ওঠার উপক্রম করলো সে।

ওর কাছ থেকে খানিকটা সরে গিয়ে মেন দরজার গ্লাস ফ্রেমের ওপাশে ফোকাস করলো স্টান,
যেখানে রাস্তার ল্যাম্প পোস্টগুলির মিলিয়ে আসা আলো দেখা যাচ্ছে, এতে ব্যাপারটা আরও
নাটু কে দেখাবে “মৃত্যু আছে ওখানে.........এমন এক মৃত্যু যেটা আপনার কল্পনারও বাইরে। আজ
রাতে আমার ভয় হচ্ছে সে আমাদের সবার পেছনে লেগেছে......... আমাদের প্রত্যেকের পেছনে ! ”

“ড্যাম ইট ,স্টান। বন্ধ করো এসব বালছাল কথাবার্তা !” খেঁকিয়ে উঠলো প্যাটি , সার্ভি স পিস্তলের
দিকে হাত বাড়াল।

এবারেরটা সরাসরি আদেশ, সেটা বুঝতে পেরে মিনমিন করে বলল স্টান “এসবই আমার ফিল্মের
জন্য । ”

“তু মি ......ওইসব ক্লাউনদের নিয়ে ফিল্ম বানাচ্ছ ? এটা তো অসুস্থ একটা কাজ !”

স্টান থোড়াই কেয়ার করে কে কি ভাবলো তা নিয়ে, ওর হাতে ক্যামেরা আছে আর ওটা সে
ব্যাবহার করবেই। কারণ এটাই এক সময় এই রাতে কি ঘটেছিল সেসবের অকাট্য প্রমাণ হিসাবে
থেকে যাবে ! ওর মতে , এটা হয়তো ভিয়েতনাম যুদ্ধের রেকর্ডিং এর মতোই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে
পারে, যখন অ্যামেরিকান সৈন্যরা গরীব কৃ ষকদের গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছিল, অথবা আবু
ঘারিব কারাগারের আক্রমনের ভিডিও , অথবা আব্রাহাম জাপ্রুদারের রেকর্ডিং, যে কিনা একজন
সখের ক্যামেরাম্যান ছিলো, ১৯৬৩ সালে যার কামেরাতে কেনেডির হত্যা প্রচেষ্টা ধরা পড়েছিল।

হঠাৎ রেডিওটা খড়খড় করে উঠলো , প্যাটি সক্রিয় হয়ে উঠলো “নাম্বার থ্রী, হেড কোয়ার্টার
বলছি! শুনতে পাচ্ছ ? কাম ইন !”

শুধু খড়খড় ছাড়া আর কিছুই নেই ! স্টান সেদিকে ক্যামেরা ধরে রাখলো।
152

এরপর একটা ‘বিপ’ শব্দ শোনা গেলো , “ইমারজেন্সি চ্যানেল ” ব্যাখ্যা করলো প্যাটি “নাম্বার থ্রী
হেড কোয়ার্টার বলছি! শুনতে পাচ্ছ ? কাম ইন, কাম ইন প্লিজ !”

হঠাৎ একটা গর্জ ন শোনা গেলো, সেটা বাড়তে বাড়তে এতই তীক্ষ্ণ আর তীব্র হয়ে উঠলো যে
ওদের কানে হাতচাপা দিয়ে দিতে হলো ! প্যাটি অদ্ভু তভাবে স্টানের দিকে তাকাল, ওর চেহারা হঠাৎ
ভাবলেশহীন হয়ে পড়লো ,তারপর ওর সারা শরীর নিয়ন্ত্রনহীনভাবে কাঁপতে শুরু করলো। ওর
চোখের তারা উল্টে গিয়ে সেখানে শুধু সাদা অংশ দেখা যেতে লাগলো , নাক বেয়ে গড়াতে শুরু
করলো তাজা রক্ত ! স্টানের মাথা ভর্তি হয়ে গেলো হাজার রকমের বিভ্রান্ত ফিসফাসে আর ওর
পেটের ভেতর যেন একশো প্রজাপতি উড়তে শুরু করলো ফড়ফড় করে ! ক্যামেরাটা একপাশে
রেখে ঝাঁপ দিয়ে রেডিওটা বন্ধ করে দিলো স্টান, ওটাই যে গণ্ডগোলের মূল সেটা বুঝতে পেরেছে।

“প্যাটি ,তু মি ঠিক আছো ?”

প্যাটি বেশ কয়েকবার চোখ পিটপিট করতে লাগলো “আমার মনে হয়...... হ্যাঁ .........কি
ঘটেছিল?”

“রেডিওর শব্দটা তোমাকে কিছু একটা করেছিলো !”

প্যাটির সারা মুখে একটা ব্যাখ্যাতীত ভয়ের ছাপ পড়লো “ওটা ......ওটা নিশ্চয়ই ওই সিগন্যালটা
ছিলো !”

অধ্যায় ৪০
153

মিজ রুশো বাথরুমের আয়নাতে দাঁড়িয়ে ওর চোখের চারপাশে কালো দাগটা দেখছিল, ওর চেহারা
সাদা হয়ে ছিলো আর চোখের চারপাশের রং পুরো বেগুনি হয়ে ছিলো । আর চোখে ছিল রাজ্যের
ঘৃণা –

ওই বাজে গন্ধঅলা ভবঘুরে নাথান ফ্রি কিনা আমাকে মারলো, আমাকে !

“শুধু অপেক্ষা করো আর দেখে যাও, গ্রেট ইন্ডিয়ান চিফ ! তোমার সময়ও আসবে, আর যখন
আসবে, ঈশ্বর তোমায় দয়া করুন ! ”

ও শোবার ঘরে এসে বাইরের ঝড়ের শব্দ শুনতে লাগলো , এভাবে তু ষার পড়তে থাকলে পুরো
শহরের জ্যান্ত কবর হয়ে যাবে, আর এই সময় কিনা ওর স্বামী গেছে ওই পুলিশ আর ইন্ডিয়ানটার
সাথে কি- না জনসেবা করতে ! ওর স্বামীকেও এক হাত দেখে নেবে সে, ওকে ওইভাবে মেঝেতে
পড়ে থাকতে দেখে কোন প্রতিক্রিয়া তো দেখালোই না, উল্টে মুখে একটা যেন শয়তানী হাসিও
ঝু লতে দেখেছে বলে মনে পড়ছে মিজের “ব্যাটা গবেট !” নিজের মনেই গজরাল মিজ !

নিচের ঘরে একটা আওয়াজ পেলো মিজ, কিন্তু ওটা থেমে গেলো মিজ ওটা কিসের আওয়াজ
সেটা বোঝার আগেই । এটার মানে একটাই হতে পারে, টনি আবার ঘরে ফিরে এসেছে, আর ওপরে
এসে ওকে নানারকম অজুহাতের বন্যায় ভাসিয়ে দেবে যেগুলি মিজ একেবারেই শুনতে চায়না !

মিজ দাঁড়িয়ে পড়লো , ওর হার্ট দ্রুত চলতে শুরু করলো, মুঠি পাকানো হাত নিয়ে সে ভাবতে
লাগলো, এবার বাছাধন তোমাকে পেয়েছি, আর রেহাই নেই।

সিঁড়ির কাছে গিয়ে কান পাতলো, ও সম্ভবত রান্নাঘরে গেছে বিয়ারের জন্য, যেখান থেকেই আসুক
না কেন, বিয়ার ওর চাইই চাই ! ও মাথা একটু কাত করে শোনার চেষ্টা করলো, এটা তো টনি না
মনে হচ্ছে, কারণ কোন সাড়াশব্দ তো পাওয়া যাচ্ছে না ! যদি টনি ওই আওয়াজ না করে থাকে,
তাহলে আওয়াজটা করলো কে ? একটা শ্বাস ফেলে নিচের দিকে রওনা হল মিজ, সিঁড়িটাও
আজকে যেন মাইলখানেক লম্বা মনে হচ্ছে। হঠাৎ জমে গেলো সে ......
154

টিং টিং টিং !!!

একটা বেলের শব্দ ছড়িয়ে পড়লো নিচের তলা জুড়ে, ওর মনে পড়লো ওদের একটা বিড়াল ছিল
যেটার গলায় এরকম একটা বেল ছিল। কিন্তু সেটা তো অনেক আগেই মারা গেছে, এখন ওদের
বাড়িতে এরকম কিছুই নেই যেটা ওরকম শব্দ করতে পারে।

মিজের ভয় কিসের, ও একজন টাফ মহিলা (অন্তত বাইরে তাই দেখা যায় !), কিন্তু এই মুহূর্তে ওর
গলা শুকিয়ে যাচ্ছে কেন !

অবশেষে নিচের তলাতে নেমে এলো মিজ, কিন্তু ভারী , ভয়াবহ নিস্তব্ধতা ওকে ঘিরে ধরল।
“টনি?” কাঁপা গলাটাকে ঠিক করার প্রাণপণ চেষ্টা করতে করতে বলল “এটা কি তু মি ?”

ও ভালো করেই জানে ওটা টনি না, কারণ ও ঘরে থাকলে বিকট স্বরে টি ভি বাজতে থাকে,
হুমহাম শব্দ হতে থাকে, ক্যাবিনেটের দরজা ধ্রামধ্রাম বন্ধ আর খোলা হতে থাকে ! জবাবে সে
শুনতে পেলো – টিং টিং টিং টিং !

ও প্রায় চিৎকার করে উঠেছিল শব্দটা শুনে, ও ভূ তে তেমন একটা বিশ্বাস করেনা,কিন্তু এখন
বুঝতে পারছে ওর সাথে যেটা হচ্ছে সেটা সম্পূর্ণ অপ্রাকৃ ত কোনকিছু , অতিপ্রাকৃ ত হওয়াও বিচিত্র
না ! ও নিজেকে মনে করিয়ে দিলো , ও হচ্ছে মিজ রুশো, খাণ্ডারনি হিসাবে যার সুনাম
সর্বজনবিদিত ! ও ওর ডবল সাইজের অনেক মানুষের সাথে পাল্লা টেনেছে বহুবার, এমনকি
একবার দু দুটো পুলিশ অফিসারকে ঘোল খাইয়ে ছেড়েছিল।

কিন্তু ওই বালের টিং টিং বেল আবার এসে অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দিয়ে গেলো যে !

লিভিং রুমে ঢু কে সে দেখল মেঝেতে কিছু একটা পড়ে আছে, ওটাকে দেখাই যেতো না যদি না
ওটা টনির চেয়ারের পাশেই না থাকতো, ও সেটা দেখে কেঁ পে উঠে পিছু হটতে শুরু করলো। ভয়ে
বিনবিন করে ঘামতে শুরু করে দিয়েছে ইতিমধ্যেই।
155

যখন ওই খারাপ লোকগুলো প্রায় গায়ের ওপর এসে পড়লো, টনি এক লাফ দিয়ে ঝড়ের মধ্যেই
ছুটতে আরম্ভ করলো, ও জানে ওরা কি চায়, ওকে ওরা কিছুতেই ধরতে পারবে না !

“টনি !” ও শুনতে পেলো নাথান ফ্রি চিল্লাচ্ছে “কি করছ তু মি টনি ? ”

কিন্তু টনি দৌড়েই যেতে লাগলো, হোঁচট খেতে খেতে ও ঝড়ের আরও গভীরে চলে যেতে
লাগলো। “টনি ইইইই ” এবার গলাটা পিনাটের !

শুনোনা ! ওরা তোমাকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছে !

টনি একবারের জন্যও থামছে না, ও বরফের টিলা ভেদ করে, বরফের আস্তরণের ওপর আছাড়
খেয়ে, হোঁচট খেয়ে পড়ে যাচ্ছে ; পর মুহূর্তে ই আবার লাফ দিয়ে উঠে ছুটতে শুরু করেছে। যদি ওর
বুট শক্ত জমি খুঁজে না পায়, তাহলে ও হামাগুড়ি দিয়ে হলেও আগাচ্ছে ! যাই হোক না কেন, ওকে
পালাতে হবে, ওই খারাপ লোকগুলিকে ওকে কিছুতেই ধরতে দিতে পারেনা ও !

“গড ড্যাম ইট , টনি !” নাথান ফ্রির চিৎকার শোনা গেলো, অনেক কষ্টে শোনা যাচ্ছে, মনে হচ্ছে
অনেক দূর থেকে ভেসে আসছে, চারপাশের ঝড়ের মাঝখানে টনি কিন্তু শুনছে সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু
কথা “ফিরে আসো, ছেলে এ এ এ ! তোমার জন্য অনেক গিফট আছে, অনেক অনেক চকলেট
আছে ! যত চাও !”

টনি বরফ ঝড়ের মাঝ দিয়ে লড়াই করে পালিয়ে যেতে লাগলো একটা ভীত খরগোশের মতো,
কারণ ও জানে ওই বাজে লোকগুলো কি চায় !

মিষ্টি – অনেক মিষ্টি – ওটাই ওরা প্রমিস করে সবসময়।

টনি ওর স্কু লে একটা শিক্ষামূলক ভিডিওতে দেখেছিল, ওরা তোমাকে লোভ দেখিয়ে ওদের
কালো গাড়িতে তু লে নেবে, তারপর ওরা তোমার সাথে এমন খারাপ কিছু করবে যেটার দাগ
তোমার মনের ওপর সারাজীবন থেকে যাবে !
156

ওদেরকে তোমায় ধরতে দিও না , টনি ! – টনির মাথার ভেতর কণ্ঠটা কথা বলে উঠলো আবার –
তোমাকে ঘরে ফিরে যেতে হবে যেটা নিরাপদ, ওখানে ওরা তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না!

ও লড়াই চালিয়ে গেলো কারণ ওর সামনে আর কোন পথ খোলা নেই, ওর প্রাপ্তবয়স্ক মন


পুরোপুরি হারিয়ে গেছে, ওর ভেতর ওর সাত বছরের টনি আবার ফিরে এসেছে ! ব্যাপারটা হল ,
এখানে শুধুই বর্ত মান রয়ে গেছে , যেখানে ও সাত বছরের টনি , বাজে লোকদের আওয়াজ আবার
বেজে উঠলো দূরে, ওরা সহজে হাল ছাড়বে না, নেকড়ে যেমন নতু ন মাংসের গন্ধ পেলে সহজে
ছাড়ে না ।

ও একটা খোঁড়লের মধ্যে ঢু কে গেলো, আর সাথে সাথে অদ্ভু তভাবে, সব আওয়াজ থেমে গেলো
একসাথে ! হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর , টনির মনে হল এভাবে নড়াচড়া না করে বসে
থাকলে ও জমে যাবে বরফে, তাই ও আবার বরফ খুঁড়ে বের হয়ে এলো। মনে হচ্ছে একটা সাদা
নরকে যেন সে এসে পড়েছে, এখানে অনেকগুলি কণ্ঠ ফিসফিস করে যাচ্ছে, কিছু সে বুঝতে
পারছে, কিছু পারছে না । কিন্তু ওকে যে ঘরে যেতে হবে, ওখানে মা অপেক্ষা করছেন।

ওই কণ্ঠটা আবার ফিরে এলো – তু মি খুব ভালো ছেলে – বললেন মিসেস বিসবি – তোমার মা
তোমার জন্য অভূ তপূর্ব কিছু চমক নিয়ে অপেক্ষা করছেন । এসো তাড়াতাড়ি, দৌড়াও !

টনি আর চিন্তা করলো না, ও দৌড়ে যেতে লাগলো যেদিকে মিসেস বিসবির কণ্ঠ ওকে নিয়ে যেতে
চাচ্ছে ।

অধ্যায় ৪১
157

মিজ ভয়ে চোখ পিটপিট করে অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে রইল, ওর গলা এতো শুকিয়ে গেছে যে ,
ও চিৎকারও দিতে পারছে না ! ওর সামনে থাকা জিনিসটার দিকে প্যাটপ্যাট করে তাকিয়ে
রইলো। একটা ক্লাউন ডল, যেটার হাত আর পা অস্বাভাবিক লম্বা ! ওটাকে দেখে মনে হচ্ছে
অনেক ওপর থেকে ওটাকে ফেলা হয়েছে ! ওটার গায়ে একটা লাল কস্টিউম পড়া, গোলাপি
কালারের ক্ষয়ে যাওয়া স্ত্রাইপ সহ। কুঁ চকানো কাফ আর গলার চারপাশে বেষ্টন করে আছে ছোট
ছোট বেল।

মিজ ওর মাথা নাড়ল , কারণ এটা সত্যি হতেই পারেনা। ডলটার চেহারা চাঁদের মতো সাদা, নাক
একটা গাজরের মতোই কমলা রঙের আর পয়েন্টেড, চিবুকটা চিকন আর লম্বাটে, ঠিক ডাইনীদের
মতো। চোখগুলি জ্বলজ্বল করছে, হলুদ ডিমের মতো যেখানে কোন চোখের তারা নেই, মাথার
দুপাশে সবুজ রঙের গোছাখানেক চু ল বেরিয়ে আছে। মুখটা হাসির ভঙ্গিতে বাঁকা হয়ে আছে,
বেরিয়ে পড়েছে বড় বড় হলুদ দাঁত !

মিজের পেটে একটা অস্বাভাবিক ভয় পাকিয়ে উঠছে, এই ডলটা......... এটা এখানে থাকতে
পারেনা ! আর ওটার মাথার পেছনে সূতা দেখতে পেলো, তারমানে ওটা নিজে থেকে নিশ্চয়ই
নড়তে পারেনা, কিন্তু মিজ বেলের আওয়াজ স্পষ্ট শুনতে পেয়েছে। ওর হঠাৎ মনে হল চোখের
কোণায় একটা নড়াচড়া ধরা পড়েছে, ঝট করে সেদিকে ঘুরলো সে। কিন্তু কই , কিছু নেই তো !

ওর হার্ট প্রচণ্ড শব্দে চলতে শুরু করেছে, ওর মাথাটা যেন ফেটে পড়বে বলে মনে হচ্ছে।

ও ফিরে দেখলো ক্লাউনটা আগের জায়গাতে নেই, কোথাও নেই ! রুমের অন্য প্রান্তে রকিং চেয়ারটা
নিজে নিজেই দোল খাচ্ছে, যেন ওটার কাছ দিয়ে কেউ এইমাত্র দৌড়ে গেছে। মিজ দৌড়ে চিমনির
কাছে গিয়ে পোকারটা হাতে নিলো কোন আওয়াজ ছাড়া। এবার ওর পেছনে টিং টিং করে বেল
বাজতে শুনল সে !

“কে ওখানে ?” গলাটা স্বাভাবিক রাখতে চাইলেও কেঁ পে গেলো বেস খানিকটা “কে ঢু কেছ
আমার বাড়িতে ?”
158

টিং টিং টিং , ডাইনিং রুম থেকে ভেসে এলো আওয়াজ, ভীত কিন্তু রাগান্বিত, বিশেষ করে
নিজের ভয়ের ব্যাপারে – মিজ দৌড়ে সেখানে গেলো আর লাইট অন করলো। কিন্তু ওখানে
কাউকে দেখা গেলো না। হঠাৎ একটা ক্যাঁচকোঁচ আওয়াজ শুনতে পেলো সে , ওপরের লাইট বাল্ব
গুলো নিজে থেকে ঘুরতে শুরু করেছে প্যাঁচের উল্টোদিকে ,মানে খোলার দিকে ! এক এক করে
বাতিগুলি নিভে যাচ্ছে আর ডাইনিং রুম অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে । একটা চিৎকার দিয়ে মিজ চলে
এলো লিভিং রুমে, ওখানেও সে টিং টিং বেলের আওয়াজ শুনতে পেলো, সাথে শুনতে পেলো
ছোট ছোট পায়ের আওয়াজ ! টেবিলের ওপর থেকে কর্ড লেস ফোনটা তু লে নিয়ে ও ৯১১ ডায়াল
করলো, কিন্তু ফোনে কেবল একটা হিস হিস আওয়াজ ছাড়া কিছুই শুনতে পেলো না। “হ্যালো ?
গড ড্যাম ইট ! কেউ কি শুনতে পাচ্ছে না আমার কথা ?”

হঠাৎ টেলিফোনের ভেতর থেকে রিনরিনে কিন্তু কর্ক শ কণ্ঠের কথা ভেসে এলো “কোন এক সময়
রূপকথার গল্পে , ছিলো একটা মোটা কু ত্তি ! ও একটা ক্ষু দ্র কীটের সাথে ঝামেলায় জড়িয়ে গেলো,
ও এখানে চিৎকার করে দৌড়ে এলো, কিন্তু ওর ওজন ওকে স্লো করে দিলো ......... ”

মিজ ফোনের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠলো “ফোন রাখ হারামজাদা ! ফোন রাখ !”

কিন্তু হাসতে থাকা কণ্ঠটা বলেই চলল “ও ওখানে ভেসে আছে, এখানে আসো আর নিচু হও, ও
তোমাকে উচিত শিক্ষা দিয়ে দেবে ! ”

মিজ ফোনটা দেয়ালে ছুঁ ড়ে মারলো, পেছাতে গিয়ে আর্ম চেয়ারের পায়ায় লেগে ধরাম করে আছাড়
খেলো সে, কিছুক্ষণ ওভাবেই পড়ে থেকে ফোঁপাতে ফোঁপাতে উঠে বসলো সে, সেই সময় টিং টিং
বেলটা আবার শুনতে পেলো সে !

ক্লাউন ডলটা এখন রকিং চেয়ারে বসে সামনে পেছনে নিজে নিজেই দোল খাচ্ছে ! ওটা কু ৎসিত
ভাবে হাসছে ততোধিক কু ৎসিত আর বড় বড় দাঁত বের করে। কাঁধের বেল গুলি নিজে নিজেই
বাজছে, যদিও ওগুলি কেউ স্পর্শ করছে না !
159

মিজ চিৎকার করে উঠলো “থামো ! থামো বলছি ” বলতে বলতেই ও খামচি দেয়ার ভঙ্গিতে ঝাঁপ
দিলো ক্লাউনটাকে লক্ষ্য করে। ও ওটাকে আঁকড়ে ধরে ছিঁ ড়ে ফেলতে চায় ! কিন্তু কিন্তু ......... ওটা
এতো নরম কেন, আরে ওটা তো কয়েক দলা সূতাতে পরিণত হয়ে সিলিং এর দিকে উঠে গেলো
ওর হাত গলে ! মিজ নিস্ফল ভাবে ডাইনিং রুমের অন্ধকারে নেচে বেড়াতে লাগলো !

“টি হি হি হি হি !” একটা খনখনে হাসি সারা ঘরে ধ্বনিত হতে লাগলো, আর মিজ গলা ফাটিয়ে
চেঁ চিয়ে উঠলো , রাগ আর ভয়ের যুগপৎ আক্রমণে ও দিশেহারা হয়ে পড়েছে। হাতের পোকারটা
এলোপাথারি চালাতে লাগলো যেখানেই ক্লাউনটার মতো কোন কিছু দেখা গেলো সেদিকেই। শো
কেসের আয়না ভাঙল, কয়েকটা ছবি দেয়াল থেকে নিচে পড়ে গেলো, ঠাকু মার দামী চাইনিজ
মাটির ঘড়া টু করো টু করো হয়ে গেলো, মিজ স্রেফ কেয়ার করেনা !

ও সব ফার্নিচার টু করো টু করো করে ফেলতে লাগলো, ওই ব্যাটা ক্লাউনের বাচ্চাকে ওর চাই,
ওটাকে ধরে মাঝখান থেকে ফেড়ে না ফেলা পর্যন্ত ওর শান্তি নেই। হঠাৎ ওর পিঠের ওপর কিছু
একটা পড়লো ধপ করে, যেরকম আশা করেছিলো ওটা তার চাইতে অনেক বেশি ভারী ! ও
অনুভব করলো ওর পিঠে ধারালো ছোট ছোট আঙ্গুল আঁচড়ে দিচ্ছে ! ওর হাত দুটো মুচড়ে
পেছনে নিয়ে গেলো ওই জিনিসটা , ও একদম নড়াচড়া করতে পারছিলো না । ওটা সেই
ক্লাউনটা, ব্যাটাকে যতই ঝেড়ে ফেলে দিতে চাচ্ছিলো মিজ, আরও বেশি করে চেপে বসছে আর
“টি হি হি হি হি ...... !!” করে খোনা সুরে হেসেই চলেছে ! ওর ঘাড়ে জিহবা বোলাচ্ছে এখন, ঠিক
মনে হচ্ছে একটা কু কু রের জিহ্বা ! শেষমেশ মিজ একটা হাত ছোটাতে পারলো, এক হাতে ধরে
সর্বশক্তিতে ক্লাউন ডলটাকে সামনের দেয়ালে ছুঁ ড়ে মারলো ! কিচিরমিচির শব্দ করে উঠলো ওটা,
যেটা শীঘ্রই বদলে গেলো বিকৃ ত চিৎকারে !

হাতে পোকারটা নিয়ে রুম থেকে বাইরে আসলো , ওর পায়ের পাতা জ্বলছে খুব, রক্তের একটা
মোটা ধারা রেখে আসছে সে পেছনে। ক্লাউনটা কি ওখানে কামড়ে দিয়েছে ? মিজ রক্তের ভেতর
একটা অদ্ভু ত শীতলতা অনুভব করলো , ওটার কামড় কি বিষাক্ত ??
160

ও সবে একটু সামলে উঠছে, ডলটা আবার আক্রমণ করলো ! ওটা মাটি থেকে আধ মিটার মতো
ওপরে যেন ঝু লে আছে, ওর মাথার পেছনে, হাতের পেছনে সূতা – যেগুলি দিয়ে পাপেট নিয়ন্ত্রণ
করা হয়, সেগুলি দেখা যাচ্ছে পরিষ্কার ! কিন্তু ওগুলি কতদুর উঠে যেন বাতাসে মিলিয়ে গেছে !
ওটাকে ঠিক যেন ম্যাজিকের মাধ্যমে কেউ নিয়ন্ত্রণ করছে, যাকে মিজ দেখতে পাচ্ছে না , অথবা
হয়তো ওর ব্রেইনই কাজ করছে না ঠিকমতো !

ডলটার মুখে লম্বা লম্বা বাইরে বেরিয়ে থাকা দাঁত দেখে ইঁদুরের কথা মনে পড়ে যায়। ওগুলি বেয়ে
লালা ঝরছে, কালো জিহবা বের করে ওটা এগিয়ে আসছে, ওটার উদ্দেশ্য পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে।

মিজ কিছুতেই ওই ডলটাকে ওকে ছুঁ তে দিতে পারবে না , ওকে লড়তে হবে ! চিন্তাটা মাথায়
আসতে না আসতেই ডলটা ওর ফু ট তিনেকের মধ্যে চলে এলো হাতের বড় বড় নখ বাড়িয়ে ধরে।
একটা বিকট চিৎকার দিয়ে হাতের পোকারটা বেসবল ব্যাটের মতো ‘হোয়াম’ করে ঘোরালো দুর্দান্ত
মিজ , ক্লাউনটা ওটা এড়ানোর কোন চেষ্টাই করলো না । বদলে, একটা প্রাণ হিম করা খনখনে
ঝাঁঝালো চিৎকার দিয়ে পাশের দেয়ালে আছড়ে পড়লো। ওখানেই প্রাণহীন ভাবে পড়ে রইলো
ওটা, মাথাটা অদ্ভু তভাবে উল্টোদিকে ঘোরানো , হাত পা গুলো ছড়ানো ছিটানো।

মিজ ওটার কাছে এগিয়ে গেলো ধীরে ধীরে, ওটাকে একটা স্টু পিড , স্টাফ করা খেলনা ছাড়া আর
কিছুই লাগছে না !

কিন্তু মিজ সজাগ রইলো, এই ছোট দানবকে বিশ্বাস নেই ! পোকারে ভর দিয়ে হাঁফাতে লাগলো সে,
পায়ের পাতার প্রচণ্ড ব্যাথা উপেক্ষা করে।

ক্লাউন ডলটা আর নড়ছে না !

মনে হচ্ছে, যে পৈশাচিক শক্তি ওটার ভেতর ভর করেছিলো সেটা চলে গেছে। এখন পুলিশকে
ডাক দিলে ওরা এটাকে ওর হ্যালুসিনেশন বলেই উড়িয়ে দেবে, ও নিজেও দিতো যদি ওর
গোড়ালি আর পায়ের পাতার ক্ষতটা না থাকতো।
161

ও কোন ঝুঁকি নিলোনা , পোকারের আগায় গেঁথে নিলো ডলটা, তারপর ফায়ার প্লেসের কাছাকাছি
আসতেই ............

ডলটা দ্রুত নড়ে উঠলো।

ওটা বাতাসে ঝাঁপ দিলো অত্যন্ত দ্রুততার সাথে, হঠাৎই ওটা একটা প্রাণহীন পুতু ল থেকে সাক্ষাৎ
শয়তানে পরিণত হলো। মিজ তীক্ষ্ণ চিৎকার দিয়ে আবার পোকারটা ঘোরালো ,কিন্তু এবার মিস
করলো।

ক্লাউনটা ওর বড় বড় নখ দিয়ে মিজের চেহারা আঁচড়ে দিলো, তারপর ওর গলা খুঁড়তে শুরু
করলো, হাত থেকে পোকার ফেলে দিয়ে ডলটাকে ধরলো মিজ, গার্গল করার মতো শব্দ করতে
করতে ভীষণভাবে কাঁপতে লাগলো সে। ক্লাউনটা এবার ওর সারা শরীরে কামড়াতে লাগলো, র‍্
যাটলস্নেকের মতো ছোবলের পর ছোবল দিয়েই যেতে লাগলো। মিজের নাকমুখ দিয়ে গলগল করে
রক্ত বেরোতে লাগলো, ধরাম করে মাটিতে পড়ে গেলো সে, অনেক ফাইট দিয়েছে সে, কিন্তু
অতিপ্রাকৃ ত এই দানবের কাছে শেষমেশ হার মানতেই হলো। কাশির সাথে রক্ত থুঃ থুঃ করে
ফেললো মিজ, রক্তের একটা পর্দার আড়ালে জ্ঞান হারাতে হারাতে শুনতে পেলো ওর কানে লালা
ঝরানো ঠোঁট নিয়ে এসে ক্লাউনটা বলছে “হতচ্ছাড়া ক্লাউনটা এখন রক্ত আর মাংস টেস্ট করছে,
ও আরও কিছু টেস্ট করবে, কিন্তু তু মি সেটা টের পাবার মতো অবস্থায় থাকবে না !”

অধ্যায় ৪২

ঝড়ের তৈরি সাদা ভু বনে অনেক কিছুই হারিয়ে যাচ্ছে চিরতরে, কিন্তু ওসব নিয়ে এখন কথা বলা
বাতু লতা।
162

পিনাট যদিও বুঝতে পারছে এখন টনিকে খোঁজা বৃথা, কিন্তু নাথান ফ্রি সামনে চলে যাওয়াতে
এখন নিরুপায় সে। নিষ্ঠু র শো শো শব্দ করা নিদারুণ তু ষার ঝড়ের ভেতরে ও ডেকে চলেছে টনির
নাম ধরে, বাতাসও ওর কণ্ঠ নিয়ে যেন খেলা করছে, একবার ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বহুদূর, আবার
কাছেই কোথাও শোনা যাচ্ছে ওর মিলিয়ে যেতে থাকা স্বর।

নাথান ফ্রি হলো ডেড স্কাল দলের সেকেন্ড ম্যান। ঝড় ওকে যতই বাঁধা দিক না কেন, ও লড়েই
যেতে লাগলো, বোঝা যাচ্ছে না কে বেশী শক্তি ধরে, ওই বরফ ঝড়, নাকি নাথান , বলা মুশকিল !
পিনাটের জন্য অবশ্য ও অনেক ফাস্ট, চিৎকার করে কয়েকবার ওকে আস্তে যেতে বলল পিনাট,
কিন্তু নাথান না শুনে এগিয়েই যেতে লাগলো, এক পর্যায়ে সামনের বরফ ঝড়ের সাদা পর্দার ওপারে
হারিয়েই গেলো নাথান।

পিনাট হাল না ছেড়ে এগিয়ে যেতে লাগলো যতক্ষণ না হাঁটু সমান তু ষারে ওর পা দেবে না যায়।
ওর প্রায় কান্না পেয়ে যাচ্ছিলো, ওর শরীরে বা মনে আর কোন শক্তি অবশিষ্ট ছিল না। এই বালের
তু ষার ঝড় ওর রক্তের সব উষ্ণতা চু রি করে নিয়েছে।

ওর মনে হলো , একটা নরম ফিসফিসে কণ্ঠ ওকে বলছে -- ওর সারা জীবন একটা ব্যার্থতায়
পর্যবসিত হয়েছে, ও স্রেফ একটা মেরুদণ্ডহীন , শক্তিহীন কাপুরুষ ছাড়া আর কিছু নয়। ও কখনও
না পারবে নাথান বা ক্লাইডের মতো হতে, আর না পারবে টিগের মতো হতে।

ও জানে ও যদি এখন নড়াচড়া না করে তাহলে সব শেষ ! ও এখানেই মরে পড়ে থাকবে। ও
প্রাণপণ চেষ্টা করল ওখান থেকে নড়ার, কিন্তু সদ্য জন্ম হওয়া বাছুরের মতোই শক্তিহীন লাগলো
নিজেকে ওর।

শুয়ে পড় ! সেই নরম কণ্ঠটা বলল ওকে – নিজেকে ওই তু ষার দিয়ে ঢেকে শুয়ে পড়।

না ! ও কিছুতেই শুয়ে পড়বে না ! ও জানেনা ওর ভেতরের কোন শক্তির বলে ও এতো বলীয়ান
হলো, কিন্তু ও আবার নড়ে উঠলো , ডাকল নাথানের নাম ধরে দুর্বল গলায়। ভেতরের সেই দুর্বল
163

কণ্ঠটা একটা তীক্ষ্ণ চিৎকার দিয়ে মিলিয়ে গেলো। টিগের একটা কথা, যেটা প্রায় প্রশংসার সুরে
বলেছিল সে , সেটা এই মুহূর্তে মনে পড়লো “অনেক দুর্বল লোকেরও অনেক সময় কঠিন আর
কষ্টসহিষ্ণু একটা হার্ট থাকে !”

ওর তোমার ওপর বিশ্বাস আছে, বেকু ব। ওকে হতাশ করো না !

এবার পিনাট আরও একটু দৃঢ়তার সাথে সামনে বেশ খানিকটা এগিয়ে গেলো, ও আরেকবার
নাথানের নাম ধরে যত জোর সম্ভব চিৎকার দিলো।

একটু পর , ও পরিষ্কার শুনল , ওর নাম ধরে কেউ পরিষ্কার কণ্ঠে ডাকল “পিনাট !”

ও ঘুরে তাকালো, ঠিক পাঁচ মিটার দূরে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে, পার্কিং মিটারগুলির
মাঝখানে, যেখানে তু ষার বুনো শক্তিতে ঘুরছে এদিক থেকে ওদিক। প্রথমে বোঝা গেলো না ওটা
কে, তারপর আস্তে আস্তে পরিষ্কার হয়ে এলো তু ষার –

একটা ক্লাউন !!

ও ওখানে একটা বেঢপ সাইজের লাল আর সবুজ চেকের জাম্পসুট পড়ে দাঁড়িয়ে আছে, সাদা
মুখ , কালো ঠোঁট, রক্তলাল নাক আর হলুদ চোখ নিয়ে সে হাসল তার বড় বড় হলুদ দাঁত বের
করে। ঠোঁটের কষ বেয়ে গড়িয়ে নামছে রক্ত !!

“আজ রাতে – পিনাট” সে বলল তার ফাঁপা, প্রতিধ্বনিপূর্ণ কণ্ঠে “আজ রাতে আমরা তোমাদের
সবাইকে হত্যা করবো ! তোমাদেরকে রাস্তায়, বিছানায়, বাড়িতে যেখানেই থাক না কেন, খুঁজে খুঁজে
হত্যা করবো । আমরা যখন তৈরি হব, তখন এই নোংরা জায়াগাতে আর কেই জীবিত থাকবে না!
তু মি কি আমার কথা বিশ্বাস করছ , নাথান ?”

অবর্ণনীয় ভয়ে আচ্ছন্ন অবস্থাতে, পিনাট ক্লাউনটার কথা অক্ষরে অক্ষরে বিশ্বাস করলো। আর,
আশ্চর্যজনকভাবে , কোনরকম বাস্তব চিন্তাভাবনা ছাড়াই, ও হোলস্টার থেকে ওর সার্ভি স
রিভলবারটা বের করে ফায়ার করলো, পরপর তিনবার।
164

দুটো বুলেট গিয়ে লাগলো ক্লাউনটার বুকে, তৃ তীয় বুলেটটা খাওয়ার পর, ক্লাউনটা লাফিয়ে উঠলো
আর একটা ধাতব আর জান্তব চিৎকার ছাড়ল। তারপর ঝপ করে পড়ে গেলো তু ষারের ওপর,
গলার ভেতর থেকে একটা ঘড়ঘড় শব্দের সাথে ওখান কার বরফ ভিজে যাচ্ছিল লালচে কালো
রক্তে।

যদিও দৃশ্যটা যথেষ্ট গা গুলানো, কিন্তু তবু পিনাট নিজের ভেতর এক অদ্ভু ত তৃ প্তি টের পেলো !
কারণ ও ওই দানবটাকে খারাপভাবে আঘাত করতে পেরেছে।

কিন্তু ও যখন ওটার কাছে গেলো, ওটা পরিবর্তি ত হয়ে গেলো অন্য একটা কিছুতে, এমন কিছু,
যেটা দেখে পিনাট প্রায় জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।

“ওহ না !” ও তোতলাতে তোতলাতে বলল “গুড গড ইন হেভেন !”

কারণ তু ষারের ওপর পড়ে আছে ওটা কোন দানবীয় ক্লাউন না , ওটা ব্রোকেন বটল এর বনি ফস্ট !
শহরের বেশীরভাগ পুরুষের মতোই, ও বনিকে বেশ পছন্দই করতো, ও ছিল একইসাথে মোহময়ী
আর বেশ ব্যাক্তিত্তসম্পন্না , একইসাথে আকর্ষক আর উত্তেজক কিন্তু নির্লিপ্ত। এখন মেয়েটা ওর
সামনে পড়ে আছে, রক্তে ভেসে যাচ্ছে, ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে মৃত্যুর দিকে ।

খাবি খেতে থাকা মেয়েটার পাশে হাঁটু গেড়ে বসে ও কেঁ দে ফেলল এবার “ওহ বনি...... না না
না...... আমি দুঃখিত, আমি ভেবেছিলাম, ভেবেছিলাম .........”

ও মেয়েটার একটা হাত নিজের হাতে তু লে নিলো, ওর মাথাতে সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে,
ওর শুধু মনে হচ্ছে, একটা নির্দোষ মেয়েকে ও গুলি করেছে , সেই মেয়েটা আর কেউ নয় , ওরই
পছন্দের বনি ! ও ঝুঁকল মেয়েটাকে তু লে নেয়ার জন্য, তখনই .........

“পিনাট” একটা ছায়া শরীর চিৎকার করে উঠলো “ওই বালের জিনিসটা থেকে সরে যাও ও ও! ”

কণ্ঠটা আর কারো নয়, নাথান ফ্রি’র ! ও একটা শটগান নিয়ে তাক করে আছে -- বনির দিকে !
আরে ! বনির শরীরটাও পাল্টে যাচ্ছে ওটার আদিম রূপে – ক্লাউন এ । ওটা একেবেকে উঠে
বসেই ওটার ভৌতিক ধাতব স্বরে চিৎকার শুরু করেছে, ওটার মুখটা অনেক লম্বা, ভাঙ্গা চিবুক
আর অক্ষিকোটরের জায়াগায় একটা গর্ত । ওর মুখটা একটা সুপের বাটির মতো খুলে গেলো,
165

সেটার অর্ধেক থেকে চিৎকার আর বাকি অর্ধেক থেকে ভেসে আসছে খনখনে হাসির বিশ্রী
আওয়াজ !

নাথান ফ্রির হাতের শটগান গর্জে উঠে ক্লাউনটার বুকে বিশাল এক গর্ত তৈরি করে দিলো, বনি আর
ক্লাউনের হরর হাইব্রিডটা এবার ক্রমাগত রূপ পাল্টাতে লাগলো। একটা দুর্গন্ধ বাড়ি মারল বেশ
খানিকটা দূরে সরে আসা পিনাটের নাকেও, ওটা ক্রমাগত রূপ এমনভাবে পাল্টাতে লাগলো যে
এক পর্যায়ে ওটাকে আর কোন আকৃ তিতেই ফেলা গেলো না !

এবার কোন হরর মুভির মতোই , ডজন খানেক পা গজালো ক্লাউনটার, তারপর ওটা ধেয়ে
আসতে লাগলো পিনাট আর নাথানের দিকে। কিন্তু নাথান এমনকি চোখের পাতাও ফেললো না, ও
সোজা শটগান চালিয়ে দিলো রূপকথার দানবটার মাথা বরাবর। ওখান থেকে ঝু লে ছিল ঘিনঘিনে
গোলাপি জোঁকের মতো দেখতে গা গুলানো কিছু জীব, যেগুলি এক লহমায় পরিণত হলো
গোলাপি কু য়াশাতে। দানবটা মাটিতে পড়ে তড়পাতে লাগলো, আকৃ তি পরিবর্ত ন করে করে ও
কোন অবস্থায় গিয়ে শিথিল হলো , সেটা আর দেখতে পেলো না পিনাট, কারণ ততোক্ষণে নাথান
ওকে জাপটে ধরে রাতের অন্ধকারে হারিয়ে গেলো।

অধ্যায় ৪৩
ব্রোকেন বটল এ , টেনশন ভারী হয়ে আসছে। ক্লাইড অবশেষে যেতে রাজী হয়েছে কারণ ও বসে
থাকতে একদম পছন্দ করে না। ও ক্রমাগত শেরিফকে গুঁতিয়ে চলেছে এই বলে যে, ওরা এখানে
বসে মাছি মারছে বাইরে যখন ক্লাউনের দল পুরো শহরকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।

এদিকে বনির গলা শুকিয়ে যাচ্ছে এই ভেবে যে শেরিফরা যদি আবার বের হয়ে যায় , তাহলে সে,
কার্পি , আহতরা আর ...... আর ওই স্কাঙ্কের সাথে সে আবার একা হয়ে পড়বে ।

“তোমরা চলে গেলে আমরা আহতদের নিয়ে কি করবো ?” সে মোক্ষম প্রশ্নটা ছাড়ল এবার।

“তোমাদের যতদূর সাধ্য করো ” বলল ক্লাইড, যেটা কিনা স্টু পিড একটা কথা।
166

বনি বারের পেছনে যত নির্লিপ্ত ভাবে থাকা যায় সেভাবে দাঁড়িয়ে রইল, কার্প যতটা বেশি সম্ভব
হুইস্কি গলাধঃকরণ করে নেবার তালে আছে। ওদিকে স্তিউ প্রলাপ বকে যাচ্ছে এখনও, এটার কোন
মানে নেই। ওকেই কিছু একটা করতে হবে.........

“তাহলে তোমাদের সাথে স্কাঙ্ককে নিয়ে যাও” বেশি চিন্তা না করেই বলে উঠলো বনি।

ক্লাইড ঠাণ্ডা চোখে তাকাল ওর দিকে “কেন ?”

“কারণ ও যেভাবে আমার দিকে তাকাচ্ছে সারা সময়, সেটা আমার মোটেই পছন্দ হচ্ছে না।
আমার মনে হয় ও মনে মনে কোন মতলব ভাঁজছে !”

ক্লাইড স্কাঙ্কের দিকে ফিরল এবার , একদম ইনোসেন্ট চেহারা করে রাখলো স্কাঙ্ক – কে, আমি ? –
ধরণের।

“তু মি কি ওকে কোন মানসিক স্ট্রেস দিচ্ছো?” ক্লাইড গম্ভীর স্বরে বলল ।

“নো ওয়ে , ম্যান !” বলল স্কাঙ্ক।

ব্যাটা নোংরা , মিথ্যাবাদী কোথাকার – ভাবল বনি।

“ওর কাছ থেকে দূরে থাকবে, বুঝতে পেরেছ ? যদি উল্টোপাল্টা কিছু দেখি, তাহলে এবার তোমার
পালা আসবে !”

“সবকিছু ঠিক আছে, ম্যান, সবকিছু ঠিক আছে !” ভয়ে ভয়ে বলল স্কাঙ্ক ।

কিন্তু ক্লাইডকে সন্তুষ্ট মনে হলো না ! ও খুনে দৃষ্টিতে স্কাঙ্কের দিকে বারবার তাকাচ্ছিল। বোঝা যাচ্ছে
ও প্রায়ই স্কাঙ্ককে বিভিন্ন কারণে মারধর করে।

টিগ বলল “সেইম হেয়ার ! তোমার ক্রিমিনাল রেকর্ড আমার হাতের চাইতেও লম্বা, এরপর
এমনকি যদি মেয়েটার দিকে বাঁকাভাবেও তাকাও, তাহলে আমি তোমাকে সোজা ২০ বছরের জন্য
ঢু কিয়ে দেব ! ” একটু থেমে বলল “আমরা আর দেরী করতে পারছি না, কিন্তু আমরা যত
তাড়াতাড়ি সম্ভব ফেরত আসব । ”
167

ওরা ওদের পারকা পরে বেরিয়ে যাবার পর বারের ভেতর টেনশন আবার বৃদ্ধি পেলো, বনি কার্পকে
কফি বানিয়ে দিতে লাগলো, যদি এতো কিছুর পরও স্কাঙ্ক আক্রমণ করেই বসে, তাহলে কার্পকে
স্বাভাবিক থাকতে সাহায্য করা দরকার, অন্তত এতোটু ক সে আশা করতেই পারে।

স্কাঙ্ক অবশেষে কথা বলে উঠলো “দেখা যাক কি ঘটে, কিভাবে ঘটে ” বনির দিকে নির্লজ্জ ভাবে
তাকিয়ে সে বলল ।

এদিকে নাথান ধীরে ধীরে বুঝতে পারছে পিনাট হোল চেইনের দুর্বল লিঙ্ক, আর এটা ও মোটেই
পছন্দ করতে পারছে না , কারণ এ ধরণের চেইন সহজেই ভেঙ্গে যায়। এমনিতে ব্যাপারটা খুব
একটা সমস্যা না, কিন্তু এখন এখানে ও আর পিনাট একা, এখানে ওদের পরস্পরের ওপর নির্ভ র
করতে হবে ।

ও পিনাটকে যখন টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো , তখনও ও তোতলাতে তোতলাতে বলে যাচ্ছিলো “কি-
কি- কিন্তু ওটা তো বনি ছিলো ! আমি বলতে চাচ্ছি ওটা ক্লাউনই ছিল, একই সাথে ওটা বনিও
ছিল ! ”

নাথান আর সহ্য করতে পারলো না, ওকে একপাশে ঠেলে দিয়ে বলল “শোন, ইডিয়ট !” হিসহিস
করে বলল সে “ওটা বনি ছিল না, ওটা কেউই ছিলোনা ! তু মি কোন মানুষ না, বরং একটা
ক্লাউনকে গুলি করেছো। ওটা ভান করেছে ওটা বনি ঠিক যেরকম ব্রোকেন বটল বারে আরেকটা
ক্লাউন ভান ধরেছিল লিওর । ”

“কিন্তু ...... কিন্তু ওরা কি তাহলে ?”

নাথান মাথা নাড়ল “আমি জানি না, এমনকি আমিও জানি না ।” ওর নিজের মনেও যে প্রশ্নটা
আসেনি তা নয়, ওরা কি ? শেপ কনভার্টার ? এলিয়েন ? ডেমন ? মিউট্যান্ট ? কে জানে !

ওরা দুজনে মিলে এসইউভি টা খুঁজতে লাগলো । নাথানই আবারো লিড নিলো । পেছনে
বিড়বিড় করতে করতে আসছে পিনাট “ওরা আসছে, এই এলো বলে ...... !! ”

আসলে , নাথান হলো ডেড স্কালের হল মাস্টার, এর মানে হলো ও দলের সদস্যদেরকে ট্র্যাকে
রাখে। সবাইকে ডেড স্কালের রুল মেনে চলতে শেখায়, বাইরের কাউকেও ডেড স্কাল সম্পর্কে
168

ওই ওয়াকিফহাল করে। ও হলো দলের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক , ও নবীন বাইকারদের ডেড স্কালের আইনবিহীন
জীবনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়, পুলিশের সাথে ডিল করে আর রাইভাল দলগুলির সাথে
নেগোশিয়েট করে বা যুদ্ধ ঘোষণা করে।

এখন পিনাট যদি গোঙ্গানি বন্ধ না করে তাহলে ওকে নাথান পিট্টি লাগাবে বলে মনে মনে ঠিক করে
রেখেছে। কারণ ও নিজেও অনেকটা ভয় পেয়েছে। সত্যি করে বলতে গেলে, ও ওর জীবনে
অনেক ভয়াবহ দিন পার করেছে – রক্তাত্ত জাতি বিবাদ , অন্য ক্লাবদের সাথে ফাইট, আগুনে
পোড়ান, বাজে ধরণের ঝগড়া বিবাদ, পুলিশের কাছ থেকে পালানো ----

কিন্তু ওসব কিছুই সবসময় একটা নির্দি ষ্ট নিয়ম মেনে হয়েছে, আর ও জানতো ওকে কি করতে
হবে। কিন্তু এই জিনিসটা সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু, আর সেজন্যই ও ভয় পাচ্ছে। ও পিনাটের মতো ভয়ে
কাঁপছে না বটে, কিন্তু ও ভয় পাচ্ছে এটা নিশ্চিত।

এখন যে জিনিসটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো গাড়িটা খুঁজে বের করে ব্রোকেন বটল এ ফিরে যাওয়া,
ওরা টনিকে হারিয়ে ফেলেছে, ক্লাইড খুব একটা খুশি হবে না, টিগও না ।

“আমরা কি এর মধ্যে গাড়িটা খুঁজে পাওয়ার কথা না ?” বলল পিনাট।

ও ঠিকই বলেছে, যে রাস্তাতে টনি লাফ দিয়ে নেমে গেছিলো , সেখান থেকে আরও অনেকখানি
সামনে চলে এসেছে ওরা, কিন্তু গাড়ির টিকিটিরও দেখা পাওয়া যাচ্ছে না ।

নাথানের এসব কিছুই পছন্দ হচ্ছে না “সম্ভবত কেউ ওটা চু রি করেছে ।”

“ওহ শিট !” গোঙাল পিনাট “আরেকটা পুলিশ কার আমার থেকে চু রি হয়ে গেলো !”

“আরেকটা মানে ? আগেও একটা গেছে ?” নাথান ফিরল ওর দিকে।

“লম্বা কাহিনী , পরে এক সময় শুনো , দাঁড়াও দাঁড়াও , শুনতে পাচ্ছ ?”

নাথান কান পাতলো , ঝড়ের শব্দ ছাড়া আর কিছু ওর কানে এলো না। ওর মনে পড়লো না কবে
এই শব্দ ছাড়া আর কিছু শুনেছে সে।

“একটা গাড়ি আসছে !” পিনাট ব্যখ্যা করলো।


169

তাইতো ! কিন্তু এই ঝড়ের মধ্যে কোন পাগলে গাড়ি নিয়ে বেরোবে ?

“সম্ভবত একটা স্নো প্লাউ ” বলল পিনাট।

এখন ওরা সিক্সথ স্ট্রিট ধরে একজোড়া হেডলাইট এগিয়ে আসতে দেখল , ওটাকে সস্তা মুভিতে
দেখা কোন প্রাগৈতিহাসিক দানবের চোখের মতো লাগছিলো।

“ওটাকে থামানোর চেষ্টা করি চলো ” বলল পিনাট।

গাড়িটা কাছে আসার পর ওদের চোয়াল ঝু লে পড়লো, এটা তো ওদেরই এসইউভি টা !

“রাস্তা থেকে সরে যাও ” চেঁ চিয়ে বলল নাথান, পিনাটকে একপাশে টেনে আনতে আনতে। ওরা
দুজনই পথের পাশে স্নো প্লাউএর বানানো বরফের স্তূ পের ওপাশে ঝাঁপিয়ে পড়লো। এসইউভি টা
বুনো গতিতে এসে ওদেরকে পেরিয়ে সামনের তু ষার ঝড়ের ভেতর অদৃশ্য হয়ে গেলো।

পিনাট বরফ ঝাড়তে ঝাড়তে হতভম্বভাবে নাথানের দিকে তাকাল “তু মি কি ড্রাইভারকে
দেখলে?”

“হ্যাঁ” ঠাণ্ডা গলায় জবাব দিলো নাথান “একটা ক্লাউন !”

অধ্যায় ৪৪
“এখন আবার কি হলো ?” প্যাটি ওয়েল্যান্ড জিজ্ঞেস করলো , ও দাঁড়িয়ে আছে ক্লেগের সেলের
সামনে। ও ভান করছে যে ও বিরক্ত , কিন্তু কিছুক্ষণের জন্য হলেও সঙ্গ বদল হওয়াতে মনে মনে
খুশিই আছে।

ক্লেগ কিছু না বলে স্রেফ তাকিয়ে রইলো, ওর চেহারা হলো সেইসব দুর্লভ চেহারাগুলির একটা
যাদের মুখে হাসির জন্য কোন পেশী থাকেনা ! ওর চেহারার মধ্যে ভয় জাগানো আভা খেলা
করলেও, সেগুলির আড়ালে যেন খানিকটা সহানুভূ তিও উঁকি দিচ্ছে।

“রেডিওতে কোন সাফল্য পেলে ?” ক্লেগ জিজ্ঞেস করলো অবশেষে।


170

প্যাটির একবার মনে হলো মিথ্যা বলে, কিন্তু ওর মনে হলো এই পরিস্থিতিতে ওটা ঠিক হবে না
“নাহ, একদমই না , পুরো রেডিও ট্র্যাফিক ডেড । ”

ক্লেগ মাথা নাড়ল , ওর অনুমান সত্যি হওয়াতে ও খুশি হয়েছে বলে মনে হলো না “আমিও
সেটাই ভেবেছিলাম !”

আরেকবারের মতো , একা , ভীত প্যাটি কথা বলে উঠলো “এই ব্যাপারটা কি একটু বলবেন ? এই
যে ক্লাউন আর ইত্যকার এসব জিনিসপত্র ।”

ক্লেগ একটু ক্ষণ চু প করে থেকে বলল “এটা হলো শয়তান সম্বন্ধিত। একটা প্রাচীন শয়তান যেটা
মানবতার শত্রু, একটা অন্ধকার শক্তি যেটা শুধুমাত্র আমাদের মাংস আর রক্ত খায় না, বরং
আমাদের মন নিয়েও সে খেলা করে। আমাদেরকে মেরে ফেলার আগে আমাদেরকে প্রচণ্ড ভয়
পাইয়ে দিতে ওটা পছন্দ করে, ভয় ওটার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ, এটা ওর কাছে অনেকটা
......মসলার মতো। ওরাও ওদের খাবারে আমাদের মতোই মসলা পছন্দ করে – ভয়, আতংক,
অতলস্পর্শী ভয় এগুলো ওদের খাবারে নানান মাত্রা আর মসলা যোগ করে ! ”

প্যাটির মনের যুক্তিবাদী অংশ এই কথাগুলো নাকচ করে দিতে চাইলো, কিন্তু চারপাশে যা ঘটে
চলেছে – একেবারে ফেলেও দিতে পারছে না ।

“আর আপনি এগুলি শিকার করেন ?”

“হ্যাঁ !”

প্যাটি ওর নিচের ঠোঁট কামড়াতে কামড়াতে পাশের বেঞ্চে বসে পড়লো, ওর আট বছর বয়সের
পর , এতো ভয় আর কখনও পায়নি ।

“প্যাটি, আমার দিকে তাকাও ! ” ক্লেগ বলল শান্তভাবে ।

ও তাকাতে চাইলো না, কারণ ওর ভয় পাওয়া নিয়ে ও যথেষ্ট বিব্রত। কিন্তু ক্লেগের গলায়
পিতৃ সুলভ কিছু একটা আছে, তাই ও মুখ তু লে চাইলো ।
171

“আমি চাই তু মি খুব সাবধানে আমার কথা শোন, আমি ক্রো ফলসে এসেছিলাম এখানে যা শুরু
হয়েছে তা থামানোর জন্য। সম্ভবত আমিই একমাত্র লোক যে এটা করতে পারবে, তাই আমি চাই
তু মি আমাকে এখান থেকে বেরোতে দেবে !”

“না !”

“হ্যাঁ !” ক্লেগ ওর চোখে চোখে তাকিয়ে রইল “ইতিমধ্যে অনেক মানুষ মারা পড়েছে, ওদের অনেকে
হয়ত তোমার বন্ধু , প্রতিবেশী বা আত্মীয়স্বজন। আমাকে এখান থেকে বেরিয়ে আমার কাজ শেষ
করতে হবে আরও মানুষ মারা পড়ার আগে। তু মি কি আমার কথা বুঝতে পারছ ?”

প্যাটি না সুচক মাথা নাড়তে চাইলো কিন্তু মুখ দিয়ে বেরোল “হ্যাঁ !”

“গুড , তাহলে আর সময় নষ্ট করা ঠিক হবেনা, আমাকে এখান থেকে বের করো যাতে আমি ওই
শয়তানকে থামাতে পারি । ”

প্যাটি মাথা নাড়তেই থাকলো , এটা তো পাগলামি, তু মি তোমার চাকরি হারাবে, তোমাকে
আসামীকে পালাতে সাহায্য করার দায়ে দণ্ডিত করা হবে ! কিন্তু মনের গভীরে ও জানে এসবের
কিছুতেই আর কিছু এসে যায় না ! তাই ও সেলের দরজা খোলার সুইচটা চেপে দিলো।

“তু মি ঠিক কাজটাই করছ, প্যাটি ” ক্লেগ ধীর কণ্ঠে বলে চলল “আমার সামনে এখন অনেক
কাজ, তু মি যা করবে সেটা হল , সোজা বাসায় চলে যাবে, আর দরজা বন্ধ করে বসে থাকবে ।
কাউকে ভেতরে ঢু কতে দেবে না, সে যেই হোক বা যাই বলুক না কেন ! কারণ ওরা তোমার
পরিচিত জনদের রূপ ধরতে পারে, ওরা দেখতে তোমার পরিচিত জনদের মতো হলেও , ওরা কিন্তু
শয়তান। নিজেকে বন্দী করা রাখো গে, তাহলে হয়তো আজ রাতটা টিকেও যেতে পারো। ”

এই কথাগুলি বলতে বলতেই, ক্লেগ ওর যন্ত্রপাতি আর অস্ত্রগুলো তু লে নিলো যেগুলি পিনাট ওর


থেকে কেড়ে নিয়েছিলো, তারপর ও সন্তর্পণে বাইরে ঝড়ের মধ্যে বেরিয়ে আসলো, ওর কাজ,
ক্লাউন হান্টিং , শুরু করতে।

যখন টনি অবশেষে ঘরে ফিরল, ওর কানে ঠাণ্ডায় পুরো তালা লেগে গেছে। ওর চিন্তাভাবনা গুলো
এখনও জট পাকিয়ে আছে। এখন ও যে বাড়িতে বাস করে বলে জানে, সেটার সামনে দাঁড়িয়ে
172

আছে ,কিন্তু কি একটা ঠিক নেই বলে মনে হচ্ছে ওর কাছে। ওর সাত বছরের স্মৃতি বলছে এই
বাড়ি ও চেনেনা, কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক স্মৃতি বলছে এটাই ওর বাড়ি !

ওহ না ! – মিসেস বিসবি কথা বলে উঠলেন আবার – এটাই তোমার বাড়ি, বিশ্বাস করো ! টিচাররা
সব কিছু জানে, টনি। ভেতরে যাও তাড়াতাড়ি নয়তো ঠাণ্ডায় জমে যাবে। তোমার খালি এটা মনে
করতে হবে যে সাত বছরের তোমার কেমন লাগতো যখন তু মি ঠাণ্ডা আবহাওয়া থেকে বাড়ি ফিরে
আসতে।

টনি এবার নড়ে উঠে দরজা দিয়ে ভেতরে ঢু কে এলো, হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো সে, জমে যাওয়া
আঙ্গুল দিয়ে পারকা খুলল। তারপর গ্লাভস আর হ্যাট খুলে হাত গরম করার চেষ্টা করতে
লাগলো।

একটা অদ্ভু ত গন্ধ ভেসে এলো ভেতরে কোথাও থেকে, তারপরই মিলিয়ে গেলো। ও রান্নাঘরের
দিকে এগিয়ে গেলো “বসে পড় , টনি ” মা বললেন স্টোভের কাছ থেকে, উনি ধোঁয়া ওঠা গরম
সূপের বোল নাড়ছেন।

ও ওর রেগুলার সিটে বসলো। সূপের গন্ধে জিভে পানি চলে আসছে, আরে সেরলট , মানে ওর
বোন, ও তো ঘুমিয়ে একেবারে কাদা হয়ে আছে, টেবিলে মাথা রেখে আরামসে ঘুমাচ্ছে ! ওর মনের
ভেতর একটা অবিশ্বাস পাকিয়ে উঠতে চাইলো। কিন্তু ওর মা ধমকে উঠলেন “না না না , কোন
দুষ্টামি না, বাজে ছেলেদের সাথে বাজে ঘটনা ঘটে। সাবধান !”

কিন্তু কিন্তু মাকে কেমন অন্যরকম দেখাচ্ছে না ! মুখের যেটু কু দেখা যাচ্ছে, সেখানে যেন ফাটল
ধরেছে, ঠিক শুকিয়ে আসা কাঁদার তৈরি পুতু লের মতো ! উনি এদিকে তাকালেন, আরে, মুখের
জায়াগায় একটা ছেঁ ড়া ফাটল , নাকের জায়াগায় একটা তিনকোণা গর্ত আর চোখের জায়াগায়
কালো দুটো গর্ত দেখা যাচ্ছে ! একটা বিকট চিৎকার দিয়ে চেয়ার থেকে পড়ে গেলো টনি। দেখল,
ওর বোন পরিণত হয়েছে একটা ছেঁ ড়া খোঁড়া ক্লাউন পুতু লে, যেটা খিক খিক করে হাসতে লেগেছে
আর নাকি সুরে বলছে “সুঁপ খাঁবে নাঁ ? মাঁয়ের হাঁতে তৈঁ রি সুঁপ ? ”

টনি গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠলো “এসব কিছুই সত্যি না ! কিছুই সত্যি না !”
173

ওর অবিশ্বাস জায়গাটার জাদু ভেঙ্গে দিলো, সব কিছু যেন থেমে গেলো নিমেষে, ওর মা আর
নড়ছে না, ওর বোনও না ।

মিসেস বিসবি আবার ফিরে এলেন ওর মাথায় – ওহ খারাপ , খুব খারাপ ছেলে। দেখো তু মি কি
করেছ, এগুলি সবই অনেক আরামদায়ক, মজার আর ব্যাথাহীন হতে পারতো, কিন্তু এখন এগুলি
খুবই কর্ক শ, অন্ধকার আর যন্ত্রণাদায়ক হবে ! এখন তু মি চিৎকার করবে , চিৎকার করবে .........

উনি ঠিকই বলেছেন , কারণ টনি ইতিমধ্যে চিৎকার শুরু করেছে। ও চেয়ার থেকে নিচে পড়ে
গেলো, মেঝে ভর্তি হয়ে আছে ধুলোয়, পোড়া কিছু খাবারের টু করো, আর ধ্বসে যাওয়া কিছু
সুতোর দলায়, যেটা হয়তো ওর মায়ের জামা ছিল, যেটা উনি পরতেন অনেক দশক আগে !

টনি ঠিক একটা টারান্টু লা মাকড়শার মতোই হামাগুড়ি দিয়ে বের হয়ে এলো, পুরো বাড়িটা মনে
হচ্ছে ওর চারপাশে ঘুরছে, ও আটকা পড়েছে ফ্যান্টাসি আর বাস্তব দুনিয়ার মাঝামাঝি জায়গায় –
অতীত আর বর্ত মানের মাঝখানে – যেটা আছে আর যেটা কখনও হবে না – এ দুইয়ের
মাঝখানে। ওর সারা গা বেয়ে ঘাম গড়াচ্ছে, গোঙাতে গোঙাতে ও সিঁড়ির দিকে ছুটল মিজের
খোঁজে। ও জানবে এখন কি করতে হবে, ওই জানে সবসময় যে কি করতে হবে !

হাঁফাতে হাঁফাতে ওপরে পৌঁছাল টনি, হলওয়ে ধরে হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে নিজেদের শোবার ঘরের
দরজাতে আসার পর ওর একটু সেন্স ফিরল। কবরের নিস্থব্ধতা চারদিকে, এর মাঝে শোনা যাচ্ছে
বীভৎস কিন্তু পরিচিত একটা শব্দ ! শব্দটা কোথায় শুনেছে মনে করতে করতে দরজাটা আস্তে করে
খুলল টনি, আর ভেতরের দৃশ্যটা দেখার সাথে সাথে ওর মনে পড়ে গেলো শব্দটা কোথায় শুনেছে
সে !

শব্দটা শুনেছে সে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলে, সিংহ তার শিকারের রক্ত পান করার সময় এই
শব্দটা হয় ! এখন ওর প্রাণপ্রিয় মিজের গলায় মুখ দাবিয়ে রক্ত খাচ্ছে ওর বোনের চেহারা নেয়া সেই
ক্লাউন ডলটা ! ওর পায়ের আওয়াজ পেয়ে রক্তলাল চোখে এদিকে তাকালো ক্লাউনটা “টি হি হি
হি হি ! নাগরও এসে পড়েছে দেখছি ......... আয় , আয় তোরটাও টেস্ট করি ! ” বলেই উড়ে
এলো টনির দিকে ওর বিশাল বিশাল নখ আর বিশ্রী রকমের হলুদ দাঁত বের করে !
174

অধ্যায় ৪৫
যখন ক্লেগ পুলিশ স্টেশনের পেছনে সিজ করা গাড়ির এলাকায় পৌঁছালো, সেখানে ও দেখতে
পেলো ওর কালো ডেলিভারি ট্রাকটা ওটার কালো শক্তিশালী বডি আর বিশাল অফ-রোড টায়ার
নিয়ে চু পচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ওটা তু ষারে প্রায় ঢেকে গেছে, কিন্তু ভেতর থেকে একটা বিকট
“ঘেউ” জানিয়ে দিলো বিশ্বস্ত সঙ্গী ভেতরেই আছে !

“গুড গার্ল” বলল ক্লেগ “তু ই তাহলে আমার জন্য অপেক্ষা করছিলি !”

হাতে চাবি নিয়ে পেছনের দরজা থেকে তু ষার পরিষ্কার করলো ক্লেগ, তারপর ওটা খুললো । ওখানে
বিপজ্জনক দেখতে বিভিন্ন যন্ত্রপাতির মধ্যে বসে আছে একটা রট ওয়েলার কু কু র ! ওটার দেড়শ
পাউন্ড ওজনের পেশী, অদম্য সাহস আর খোলা দাঁত নিয়ে বসে আছে, শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে
মালিকের সম্পদ রক্ষা করবে। যখন ওটা ক্লেগকে দেখল , একটা বন্ধু ত্বপূর্ণ ‘ঘেউ’ দিয়ে স্বাগত
জানালো বন্ধু কে।

“কে ভালো মেয়ে ? কে ভালো মেয়ে ? তু ই ভালো মেয়ে ,ট্রিক্সি !” বলতে বলতে আদর করে
জড়িয়ে ধরলো কু কু রটাকে ক্লেগ। জবাবে আনন্দের গর্জ ন ছাড়ল ভয়াল চেহারার রটওয়েলার।

সামনে ড্রাইভিং সিটে বসে ইগ্নিশনে চাবি ঢোকাল ক্লেগ, গর্জ ন করে উঠে সাড়া দিলো ইঞ্জিন ।
“ওই বালের অ্যামেচারের দল !” সমান তেজে গজরাল ক্লেগ “ব্যাটারা আমাকে জেলে পচাতে
আর তোকে এখানে ঠাণ্ডায় জমিয়ে মারতে চেয়েছিল। কিন্তু ওদের অবিশ্বাস্য স্টু পিডিটির বিনিময়ে
ওদেরকে আমরা সাহায্য করতে যাচ্ছি ! ”

ট্রিক্সি সম্মতির গর্জ ন দিয়ে সামনে এসে বসলো ক্লেগের পাশে, একটা সিগারেট ধরিয়ে ওর মাথায়
হাত বুলিয়ে বলল ক্লেগ “আমার এখনও কোন প্ল্যান নেই, সুইটি ! আমার হয়ে তোকেই ক্লাউনদের
175

খুঁজে বের করতে হবে, পারবি না ? ওদেরকে খুঁজে বের করে একটা একটা করে মারতে হবে
আমাদের , কারণ সেটাই আমাদের কাজ !”

ট্রিক্সি সম্মতির গর্জ ন করলো আবার !

এর মধ্যে কেবিনের ভেতরটা উষ্ণ হয়ে উঠলো, গ্লোভ বক্স থেকে ট্রিক্সিকে শুকনো মাংসের তৈরি
কু কু রের খাবার দিলো “ঠিক আছে , মারা যাক দুয়েকটা ক্লাউন এবার !”

ওদিকে হুইসল স্টপে, ব্রিক জুতেমার হাত একেবারেই খালি নেই। যেখানে পুরো ক্রো ফলস জুড়ে
এক অদেখা শয়তান তার তাণ্ডবলীলা চালিয়ে যাচ্ছে, ও এদিকে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছে কখন
রাত আড়াইটা বাজবে , ও ওর দোকান বন্ধ করবে আর মাতাল আধ মাতাল কাস্টমারদের গত
রাতের আবর্জ নার মতো বাইরে ছুঁ ড়ে ফেলবে ! যেটা ওকে ভাবাচ্ছে সেটা হলো উইন ম্যাকয় আর
জেয়লিন থনের মধ্যেকার ঠোকাঠু কিটা । একটু আগেই সামান্য বিষয় নিয়ে ওদের মধ্যে অযথাই
একটা উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।

উইন গতবারের ঠাট্টার পর থেকে জেয়লিনের ওপর খেপে আছে, আর যখনই জেয়লিন ওর প্রান্ত
থেকে হেসে উঠছে, উইন ঘৃণাভরে সেদিকে তাকাচ্ছে বারবার। কোন মহিলা ওকে অপমান করবে
আর ও সেটা মেনে নেবে , তা হয়না ! ওর মতে, মহিলাদের জায়গা হলো কিচেনে আর বেডরুমে।

“এখন শোন ” উইন ঢকঢক করে আরেকটা বিয়ার একচু মুকে শেষ করে বললো “ও যদি মনে করে
ও আমার সাথে ঠাট্টা করে পার পেয়ে যাবে, তাহলে ভু ল ভাবছে !”

“কাম অন ” বলল ব্রিক শান্ত কণ্ঠে “এটা শুধু একটা ছোট্ট মজা ছিল !”

উইন গড়গড় করলো “স্টু পিড বিচ !”

“অনেক হয়েছে !” তড়পে উঠলো ব্রিক।

ব্রিক ভালো করেই জানে মাতাল অবস্থাতে উইন স্রেফ একটা পেট্রোলের চৌবাচ্চার মতো, শুধু
একটা স্ফু লিঙ্গের অপেক্ষা। কেউ যদি সেটা নাও জ্বালায়, তাহলে ও নিজে নিজেই সেটা জ্বালিয়ে
দিতে পারে ! উইন এমনিতেই খুব উগ্র মেজাজী, খেপা আর ওর হাত পা ব্যবহারের জন্য মুখিয়ে
176

থাকে । এই স্বভাব ও পেয়েছে উত্তরাধিকার সুত্রে বাবার কাছ থেকে, যে কিনা চায়ের সাথেই মদ
গিলত, আর বেশীরভাগ সময় কাটাত শান্ত করার সেলে। যদি শহরের মধ্যে লড়াই করার মতো
কাউকে না পেতো, তাহলে বাড়িতে ফিরে বউ বাচ্চার ওপর হাত মকশো করতো ! ওটা খুব খারাপ
একটা সময় গেছে আর শহরের সবাই এটা জানতো।

আজকে না এই বিয়ার আর না ওই জুক বক্সে বাজা গানগুলি ওকে শান্ত করতে পারছে। এর
মাঝেই জেয়লিন ওর গ্লাস উঁচু করে বলল “উইনের হারিয়ে যাওয়া অণ্ডকোষের উদ্দেশ্যে !!” বারের
সবাই হেসে উঠলো ,উইন বাদে। ব্রিক দেখতে পেলো ও রাগে কাঁপতে শুরু করেছে, বুঝতে পারলো
এবার খুব খারাপ কিছু একটা ঘটতে চলেছে। ওর একটা ভালো কারণ লাগবে ওদের যে কাউকে
এখান থেকে বের করার জন্য, যেটা এখন ওর কাছে নেই।

“ইউ লেসবিয়ান ! ” চিৎকার করলো উইন “অনেক হয়েছে” বলেই দৌড়ে গেলো জেয়লিনের
দিকে, ওদের মধ্যে লড়াই শুরু হবার আগেই হস্তক্ষেপ করলো ব্রিক , বজ্রকণ্ঠে বলল “আউট ,
এখনই এখান থেকে বেরিয়ে যাও, লড়াই করতে চাইলে বাইরে , বাইরে !!”

ওরা তাই করলো , হ্যাট আর কোট নেয়ার জন্য দরজায় একটু থামল, সবাই নিশ্চিত হলো এবার
একটা বিরাট ঝগড়া আর মারামারি লাগতে যাচ্ছে। ঝড়ের মতো বেরিয়ে গেলো ওরা, সাথে
বেরোল আরও কিছু ঘাটের মড়া শুধু তামাশা দেখার জন্য।

“তোমার উচিত ওদের থামানো” বলল ভেতরে থেকে যাওয়া ম্যাগি লা ক্রস।

ব্রিক কাঁপা হাতে টেলিফোন তু লে নিলো, ইন্টারনেট কাজ করছে না, টেলিফোনও তো দেখা যাচ্ছে
ডেড ! কোন পুলিশ নেই, সাহায্য নেই , ও নিজেই নিজের সাহায্যকারী এখন।

“ শিট ! শিট ! শিট ” হাতে গ্লোভস আর উলেন কোট গায়ে চড়াতে চড়াতে হিস হিস করে বলল
ব্রিক।

ঠিক যেন হাইস্কু লের জীবনে ফেরত গেছে আবার !

ও বাইরে আসলো যেখানে বাতাস দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আর তু ষার উড়ে বেড়াচ্ছে। বেশি খুঁজতে হল
না , একটু দূরেই দেখা গেলো ডজন খানেক লোক জেয়লিন আর উইনকে চিৎকার করে উৎসাহ
দিচ্ছে !
177

উইন ওর সেরা সময় পার করে এসেছে, ও এখন একজন পেশাদার মদখোর ! যে কিনা সলিড
খাবার খুব কমই খেয়ে থাকে । ৬৫ কিলো ওজন হওয়া স্বত্বেও , ওর শরীর তারের মতো আর ও
যথেষ্ট নীচ স্বভাবের ! ওদিকে জেয়লিন ১০০ কিলো মিনিমাম, গায়ে গতরে উইনের চাইতে বড়সড়,
আর দেখে মনে হচ্ছে ফাইটের অভিজ্ঞতাও আছে !

“থামাও এসব পাগলামি ! এখনই !” চিৎকার করে বলল ব্রিক শেষ চেষ্টা হিসাবে ।

কিন্তু ওর কথা কারো কানে গেছে বলে মনেই হল না। জেয়লিন উইনের মুখে একটা শক্ত ঘুষি
জমিয়ে দিলো, উইন একটু হোঁচট খেলো কিন্তু পেছাল না । জেয়লিন আবার হাত ঘোরাল, কিন্তু
এবার মিস করলো। কারণ উইন বয়স হয়ে যাওয়া স্বত্বেও এখনও যথেষ্ট ক্ষিপ্র। ও ঝট করে নিচু
হয়ে একটা জোরালো ঘুষি কষিয়ে দিলো জেয়লিনের পেটের মাঝখান বরাবর। জেয়লিন খাবি
খেলো একটা , ব্যাথায় সামনে ঝুঁকে পড়লো। এবার ওর মাথাটা হেডলকে আটকে ফ্রি হ্যান্ডে ঘুষি
বসাতে লাগলো উইন। জেয়লিন ওকে ছুঁ ড়ে মারতে হলে আগে নিজেকে মুক্ত করতে হবে। ও
অগত্যা সজোরে উইনের অণ্ডকোষ খামছে ধরলো , মুচড়ে দিলো যত জোরে পারে।

উইন গগনবিদারী একটা চিৎকার দিয়ে বরফের ওপর পড়ে গেলো। জেয়লিন পিছু হটে শ্বাস টানতে
টানতে বসে পড়লো বরফের ওপর।

“যথেষ্ট হয়েছে !” আগের চেয়ে বেশ কয়েক পর্দা গলা চরিয়ে বলল ব্রিক “তোমরা দুজন, এখনই
এখান থেকে চলে যাও !”

ভিড়ের মধ্য থেকে হতাশার একটা হুঙ্কার শোনা গেল ! কারণ ফাইটটা সবে মাত্র জমে উঠছিল।
একে একে সবাই বারের ভেতর চলে গেলো ব্রিককে বরফ ঠাণ্ডা বাতাসের ভেতর রেখে। ব্রিক
যুযুধান দুই পক্ষের দিকেই কটমট করে চেয়ে রইল যতক্ষণ না জেয়লিন টলতে টলতে উঠে
দাঁড়ালো, ওর বান্ধবী কারেনের কাছে গেলো, তারপর স্থান ত্যাগ করলো। ব্রিক উইনকে ওঠে
দাঁড়াতে সাহায্য করলো “তু মি ঘরে যাও, আর মদের নেশা কাটাও !”

উইন মাথা নেড়ে টলতে টলতে বাড়ির দিকে রওনা দিলো, তু ষার এমন উন্মাদ ভাবে উড়ছে যে
রাস্তার ওপাশে কি আছে সেটাও ঠিক মতো দেখা যাচ্ছে না । উইনকে অন্ধকারে মিলিয়ে যেতে
দেখতে দেখতে ব্রিক খেয়াল করলো কেউ একজন ওকে অনুসরণ করছে। কিজন্য বলতে পারবে
না, ও এক দৌড়ে হুইসল স্টপে ঢু কে পড়লো।
178

অধ্যায় ৪৬
যখন প্যাটি ওয়েল্যান্ড আওয়াজটা শুনল, ও অবচেতনভাবে বুঝতে পারলো এখন অনেক দেরী
হয়ে গেছে। ওর ক্লেগের কথা শুনে বাড়ি ফিরে যাওয়াই উচিত ছিল, এখন সেই কথা না শোনার
মাশুল ওকে গুনতে হবে।

ও রেডিওটা অফ করে দিলো, ওটা দিয়ে কোন কাজ যেহেতু হচ্ছে না, ছেড়ে রেখে লাভ নেই।

প্রথমে ও কোন ব্যাথা অনুভব করলো না, জাস্ট একটা ধাক্কা খেলো ঠিক যেমন লোকে গুলি খেলে
হয়। ওর সারা শরীরে একটা অনুরণন ছড়িয়ে পড়লো প্রথমে, তারপর ওর ধড় শক্ত হয়ে গেলো।
তারপর পুরো শরীরে অবশ করা ব্যাথার ঢেউ ছড়িয়ে পড়লো, মনে হচ্ছে হাজারটা জ্বলন্ত পিন
কেউ ওর হাতে আর পায়ে ফু টিয়ে দিচ্ছে , আর শরীর বেয়ে যেন লক্ষ লক্ষ ভোল্টের বিদ্যুৎ পার
হয়ে যাচ্ছে। ওর শরীর অদ্ভু তভাবে মোচড় খেতে আর ঝাঁকু নি দিতে লাগলো, চোখের মণি ওপর
দিকে উঠে সাদা অংশ বের হয়ে পড়লো আর দাঁতগুলি পরস্পরের সাথে বিপজ্জনকভাবে খট খট
খট খট শব্দে বাড়ি খেতে লাগলো। ও ঘোঁত ঘোঁত শব্দ করে গোঙাতে লাগলো, ঠোঁটের কষ বেয়ে
গোলাপি লালা আর নাকের ফু টো দিয়ে বের হয়ে এলো তাজা রক্ত !

এরপর যা ঘটলো সেটা সম্পূর্ণ মানসিক, কারণ যেখানেই ওর মন থেকে থাকু ক না কেন, ও নিজের
শরীরটাকে এখন দেখতে পাচ্ছে একদলা পচে যাওয়া মাংসের দলা হিসাবে। ঠিক যেন
হাজারখানেক মাছি ওখানে ডিম পেড়ে রেখেছে, প্রত্যেকটা মোটা , পাকা আর বিস্ফারিত হয়ে
শূককীট উগড়ে দেবার অপেক্ষায়। ওই শূককীট গুলো ওখানেই বাসা বেঁধে , পুষ্ট হয়ে , চোখ ,
হাতপা আর পাখা গজিয়ে পরিণত হবে একদল পচা মাংসের মাছিতে !

এই পর্যায়ে প্যাটি মাথা এদিক ওদিক ভীষণভাবে নাড়তে লাগলো, ওর ব্রেনের ভেতরের
নিউরনগুলি ওভারহিটেড হয়ে গলে গেলো , ওর নিজেদের জন্য নতু ন পথ তৈরি করে নিলো,
আর ওর মস্তিষ্ক রি-প্রোগ্রামড হয়ে গেলো।
179

পুরো ব্যাপারটা অত্যন্ত দ্রুত ঘটে গেলো। যখন পুরো প্রক্রিয়াটা শেষ হলো, ও আর প্যাটি
ওয়েল্যান্ড রইলো না। বরং ‘অন্য কেউ’ তে পরিণত হলো, যার লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন !

টিগ আর ক্লাইড যখন পুলিশ স্টেশনে পৌঁছল, ওরা দেখল স্টান বারবাচেক ওখানে অপেক্ষা
করছে। একটা শ্বাস ফেলে টিগ ভাবল , এর আবার কি হলো ?

স্টান হাতে একটা ক্যামেরা নিয়ে দাঁড়িয়েছিলো, ওকে পুরোই হতভম্ব দেখাচ্ছিল, কারণ টিগ আর
ক্লাইডের মতো সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর দুই মানুষ কিভাবে একসাথে ঘোরাফেরা করছে ?

“কি হয়েছে ?” টিগ জিজ্ঞেস করলো ।

“ক্লাউনস” স্টান সোজাসাপটা বললো “ওরা সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে !”

“এমন কিছু বলো যা আমি জানি না !” বলে টিগ অফিসের ভেতর ঢু কে এলো, কিন্তু প্যাটিকে
কোথাও দেখা গেলো না ! টিগ ওর পেটের ভেতর একটা ভয়ের অনুভূ তি ছড়িয়ে পড়া টের
পেলো। ওরা তিনজন মিলে পুরো পুলিশ স্টেশন তন্ন তন্ন করে খুঁজল, এমনকি লেডিস রুমেও
টোকা মেরে দেখল, কিন্তু প্যাটিকে কোথাও খুঁজে পেলো না !

“ও এখানেই ছিল ” বলল স্টান “আধঘণ্টা আগেও আমি ওর সাথে কথা বলেছি আর ও এই
রেডিওর সামনেই বসা ছিল !”

“ওয়েল, সে এখন আর এখানে নেই” বলল ক্লাইড।

টিগ সেল এরিয়াও চেক করে দেখল, ও খুব একটা বেশি অবাক হলো না দেখে যে ক্লেগের
সেলটাও খালি। এরকম কিছু ঘটবে ও আগেই আন্দাজ করেছিলো, প্যাটি খুব ভয়ে ভয়ে ছিল,
আর ওকে কোনভাবে প্রভাবিত করে ক্লেগ বেরিয়ে গেছে। তবে প্যাটি ওর সাথেই গেছে এটা
বিশ্বাস করতে ওর মনে চাইলো না ।

“এখন কি ?” বলল ক্লাইড।

“আমি যদি জানতাম !” হতাশ ভাবে বলল টিগ।


180

“তোমরা হয়তো বিশ্বাস করবে না , কিন্তু .........” এরপর ও সবিস্তারে ওর আজকে রাতের
অ্যাডভেঞ্চারের কথা টিগ দেরকে শোনাল। ও যা বলল সেটা যে কোন হরর ফিল্মে আকছার দেখা
যায়, অন্য যে কোন রাত হলে টিগ ওকে সোজা সোবারিং সেলে (মদ্যপ বা আপাতদৃষ্টিতে পাগল
লোকদেরকে শান্ত করার জন্য ব্যাবহার করা জেল সেল) ছুঁ ড়ে মারতো, কিন্তু আজকে অন্য যে কোন
রাত না !

“আবার ক্লাউনস !” একটা অফিস চেয়ারে ধপাস করে বসে পড়ে বলল টিগ “স্টান, আমি তোমার
রেকর্ডিংটা দেখতে চাই !”

“দেখে ফেরত দিলে অবশ্যই দেব ! ”

“অবশ্যই ফেরত পাবে !”

ক্যামেরার ভেতর থেকে এসডি কার্ড টা বের করে নিজের অফিস রুমের ল্যাপটপে ঢোকাল টিগ,
ভিডিওর বর্ণনা শুনে প্রথমে ক্লাইড চোখ পাকালেও, ওর অভিমত পাল্টে গেলো যখন ট্যাক্সি গো
গো এর অফিসের রেকর্ডিংটা দেখলো “এটা পুরাই পাগলামি , ম্যান ! পুরাই পাগলামি ! তোমার
অনেক সাহস আছে , মানতেই হবে !” স্বীকার গেলো সে। স্টানের চেহারা জ্বলজ্বল করে উঠলো ,
কারণ ক্রো ফলসের সবচেয়ে দুর্দান্ত সাহসী লোকটাই ওকে সাহসী বলেছে !

“এখন কি করা যায় ?” স্টান নিজের এসডি কার্ড ফেরত পেয়ে টিগকে জিজ্ঞেস করলো “আর
ক্লেগ এখানে কিভাবে এলো ?”

টিগ এবার ব্যখ্যা করলো ক্লেগ কি আর ও নিজেকে কি দাবী করে , ওটা শুনতে অদ্ভু ত শোনালেও
আজকের রাতের ঘটনার সার্বিক বিচারে তেমন অদ্ভু ত মনে হলনা।

টিগ ওদেরকে নিয়ে আরেকটা রুমে এলো, সেখানকার রেডিওটাও ফেল মারলো কোন ধরণের
যোগাযোগ স্থাপন করতে । ওর মতে , বাইরের পৃথিবী থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার মতো অভিশাপ
আর কিছুই নেই। আধুনিক আইন-শৃঙ্খলার সিস্টেম পুরোটাই নেটওয়ার্ক বেসড। ইলেকট্রনিক
সিস্টেম বাদে তোমাকে সেই বুনো পশ্চিমের যুগেই আবার ফেরত যেতে হবে।

ক্লাইডকে পুরোই বিরক্ত দেখাচ্ছিল “কাম অন , শেরিফ, কিছু একটা করো !” স্টানও টিগের দিকে
ভ্রুকু টি করে তাকিয়ে আছে।
181

ওর দিকে ওরা তাকিয়ে আছে একটা ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়ার জন্য। কিন্তু ওর মাথায় কিছুই আসছে
না, সাধারণত ওকে নানাধরণের সিভিল ঝগড়া বিবাদ, বা বেশী বেশী কোন টেররিষ্ট অ্যাটাকের
ঝামেলা সামাল দিতে হয়, কিন্তু এটা তো সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস।

“ওকে” সে বলল অবশেষে “আমাদের নিজেদেরই কিছু করতে হবে, যত বেশি সম্ভব অস্ত্র জোগাড়
করতে হবে, আর যত লোক জোগাড় করা যায় , করি চলো !”

অধ্যায় ৪৭
শেরিফ আর ক্লাইড চলে যাবার পর প্রথম ত্রিশ মিনিট পুরো নিস্তব্ধ রইল ব্রোকেন বটল, কিন্তু বনি
জানতো এরকম বেশিক্ষণ থাকবে না, কারণ স্কাঙ্ক ওর দিকে একটা লোভনীয় জুসের বোতলের
মতো তাকিয়ে রয়েছে, টিগ আর ক্লাইডের শাসানি কাজ দিয়েছে বটে, কিন্তু সেটার প্রভাব কতক্ষণ
থাকবে, সে ব্যাপারে বনি শিওর না ।

ও ওয়াশরুম থেকে ঘুরে এলো, এখানের নীরবতাটাই যেন কানে তালা ধরিয়ে দিচ্ছে। এমনকি জুক
বক্সটাও অফ হয়ে আছে। শব্দের মধ্যে শোনা যাচ্ছে বাইরে বরফ ঝড়ের শোঁ শোঁ শব্দ, ওটা শরীরে
কাঁপন ধরানোর জন্য যথেষ্ট।

“স্তিউ কোথায় ?” বনি জিজ্ঞেস করলো, সতর্ক হয়ে গেছে।

“স্তিউ ?”

“হ্যাঁ, স্কাঙ্ক, স্তিউ কোথায় ?”

“টয়লেটে গেছে মনে হয় !”

“ওয়েল, স্তিউ এখন স্বাভাবিক অবস্থায় নেই, বাথরুমে গিয়ে দেখে এসো গে যাও”

স্কাঙ্ক বাথরুমে গিয়ে দেখে এলো, আগের মতোই শান্ত কণ্ঠে বলল “ও ওখানে নেই !”

“কোথায় গেলো ও ?” বনির এটা একদম ভালো লাগছে না ! ও তাড়াতাড়ি কিচেনে আর


আশেপাশে চেক করে এলো। স্তিউ কোথাও নেই।
182

“এখানে সেলার আছে ?” জিজ্ঞেস করলো স্কাঙ্ক।

“হ্যাঁ ” বলল বনি।

অর্থপূর্ণ ভাবে হাসল স্কাঙ্ক “অথবা ও বোধহয় ওপরে গেছে , চলো আমরা দুজন গিয়ে দেখে
আসি!”

“ভু লে যাও !”

স্তিউ চলে গেছে, সম্ভবত ব্রেনডাকে খুঁজতেই। বনির সবরকম প্রচেষ্টা স্বত্বেও , কার্পি বারের
কাউন্টারের ওপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছে ।

“কিছু লোক কিছুতেই কিছু জিনিস মেনে নিতে পারে না” বলল স্কাঙ্ক ।

বনি আবার নিত্যসঙ্গী ছোরাটার অস্তিত্ব অনুভব করলো হাত দিয়ে, স্কাঙ্ক একটা তু খোড় ফাইটার, ও
সহজেই ছুরিটা কেড়ে নিতে পারে, আর......... তারপর কি হবে ভাবতেই শিউরে উঠলো বনি।

ওর আনমনা হবার সুযোগ নিয়ে আরেকটু কাছে সরে এসেছে স্কাঙ্ক, কার্পি ওর কোন কাজেই
আসবে না , অবশ্য ও স্বাভাবিক থাকলেও স্কাঙ্কের বিরুদ্ধে দাঁড়াত কিনা সন্দেহ আছে, কারণ স্কাঙ্ক
ঠিক একটা বুনো জন্তুর মতোই । ওর কোন রীতিনীতির বালাই নেই।

আহতরা কোন সাড়াশব্দ দিচ্ছে না, ওরা হয়তো অজ্ঞানই হয়ে গেছে। তো, এখন যা ঘটবে সেটা
শুধুমাত্র স্কাঙ্ক আর ওর শিকারের মধ্যেই ঘটবে।

“আমি তোমার চোখগুলি পছন্দ করি, ওগুলি অনেকটা ......... এমারেল্ডের মতোই, একবার আমি
আর আমার আগের ক্লাবের সদস্যরা একটা জুয়েলারি দোকানে ডাকাতি করতে গেছিলাম। ওখানে
অনেক সুন্দর সুন্দর রত্ন পাথর ছিলো , ডায়মন্ড, রুবি, এমারেল্ড ইত্যাদি। উজ্জ্বল সবুজ এমারেল্ড,
তোমার চোখের মতোই, তু মি চাইলে তোমাকে দিতে পারি !”

বনির মুখটা শুকনো ঠেকল, কিন্তু ওকে দুর্বলতা প্রকাশ করলে চলবে না , রুখে দাঁড়াতে হবে , ভান
করতে হবে যেন কিছুই হয়নি । ও ওর কোকাকোলার গ্লাসে চু মুক দিতে দিতে কণ্ঠে বেশ খানিকটা
ব্যঙ্গ মিশিয়ে বলল “তাই নাকি ? বদলে আমাকে কি দিতে হবে ?”
183

স্কাঙ্ক হেসে একটা সিগারেট ধরিয়ে বলল “সেটাই, যেটা আমি এমনিতেও নেব ! কিন্তু তু মি যদি
নিজে থেকেই ঘটনাটা ঘটতে দাও, তাহলে আমি তোমার ওপর অন্তত ঝাঁপিয়ে পড়বো না ! আর
আমার হয়ে গেলে তোমাকে ওই এমারেল্ড গুলি দিয়ে দেব ।”

ও যেভাবে কথাগুলি বলল, বনির বেশ শীত লেগে উঠলো। স্কাঙ্ক মেয়েদেরকে মানুষ বলেই মনে
করে না। তাদেরকে স্রেফ ব্যবহার করে ছুঁ ড়ে ফেলতেই পছন্দ করে ওর মতো লোকেরা। ওর কাছে
এটা অনেকটা সেই বিনিময়ের মতো, হেই, বয়, আমাকে বার থেকে একটা বিয়ার এনে দে তো।
একটা ডলার পাবি ! ”

বনি যতই কঠিন চেহারা করে রাখার চেষ্টা করুক না কেন, স্কাঙ্কের মতো কাউকে ওটা দিয়ে বেশিক্ষণ
ঠেকিয়ে রাখা যাবে না ।

“কি বলছ ভেবে বলো , ক্লাইড তোমাকে মেরেই ফেলবে, আর শেরিফও ছেড়ে কথা বলবে না” বনি
তড়পে উঠলো শেষ চেষ্টা হিসাবে।

স্কাঙ্ক ধীরে ওর সিগারেট টানতে টানতে বলে উঠলো “ওরা আর ফিরে আসবে না ! ক্লাউনরা
ওদেরকে ডিনার বানিয়ে ফেলেছে এতক্ষণ, অবশ্য ক্লাইডকে মারার জন্য বেশ টাফ ধরণের ক্লাউনের
প্রয়োজন হবে। কিন্তু চার্লসকে যে ক্লাউনটা মেরেছে সেটাকে আমি দেখেছি, ওই ধরণের কিছুর
বিরুদ্ধে তু মি লড়ে জিততে পারবে না ! সেজন্যই ওরা আর ফিরছে না, একই কথা খাটে পিনাট
আর নাথানের বেলায়ও । আর , এটা শুধু সময়ের ব্যাপার যে ওই ক্লাউনরা আমাদেরকেও মেরে
ফেলবে। তাই, মরার আগে একটু মজা লুটে নেই না কেন ?”

“জাহান্নামে যাও !” আগুন চোখে তাকিয়ে বললো বনি ।

“অবশ্যই, তার আগে তোমাকে একটু চেখে নিতে দাও ......” বলে বিপজ্জনকভাবে বনির দিকে
এগিয়ে এলো স্কাঙ্ক।

বনি ওর ছুরিটা বের করে আনল এবার “আর এক পা এগিয়েছ কি আমি ছুরি চালিয়ে দেবো !”

স্কাঙ্ক একটু থমকাল “কাউকে ছুরি মারতে হলে সাহসের প্রয়োজন হয়, তোমার কি সেই সাহস
আছে , সোনা ?”
184

বনিকে নিষ্কম্প হাতে ওর দিকে ছুরিটা ধরে থাকতে দেখে স্কাঙ্ক ওর লেদার জ্যাকেটের পকেট থেকে
একটা সুইচব্লেড বের করে আনল , ওটার দুই পাশই ঝকঝক করছে আর পাক্কা আট ইঞ্চি লম্বা
ওটা। ওটা দোলাতে দোলাতে বলল সে “তাহলে আমাদেরকে শো- ডাউনে যেতেই হচ্ছে শেষমেশ
, সব অথবা কিছুই না ! ” নিজের বাজে ধরণের দাঁত গুলো বের করে হাসল সে “তু মি যদি জেতো,
তাহলে তু মি মুক্ত, আর , আমি যদি জিতি......... ওয়েল ,তু মি জানো তখন কি হবে !”

যদিও বনি ওটাকে আসতে দেখেছে, কিন্তু এতো অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতার সাথে স্কাঙ্ক আক্রমণ করলো
যে বনি চমকে ওঠারও সুযোগ পেলো না, কিন্তু একই সাথে বুনো বিড়ালের মতো সেও অন্ধভাবে
চালিয়ে দিলো নিজের হাতে ধরা ছুরিটা !

স্কাঙ্কের চিবুকে একটা আর বনির বাহুতে একটা ক্ষত তৈরি হল একইসাথে ! চু ইয়ে রক্ত গড়াতে
শুরু করলো সাথে সাথে ।

সতর্ক পদক্ষেপে বনির চারপাশে ঘুরতে লাগলো স্কাঙ্ক, বনি এলোপাথাড়ি ছুরি চালাতে লাগলো,
কিন্তু কোনবারই কাছাকাছিও যেতে পারলো না স্কাঙ্কের। ও আগে থেকেই আন্দাজ করে ফেলছে
কোপটা বনি কোনদিকে মারবে, ও আসলে খেলছে বনিকে নিয়ে। ওকে ছোঁয়ার বনির সব প্রচেষ্টা
ব্যার্থ হয়ে যাচ্ছে।

এবার স্কাঙ্ক একটা ছোবল মারলো, সেটা বনির কব্জিতে গভীর একটা ক্ষত তৈরি করলো আর বনি
হাত থেকে ছুরিটা ফেলে দিলো। সব শেষ !

স্কাঙ্ক মুখে লালা টেনে এগিয়ে এলো এবার “দেখা যাক, কি কি গুপ্তধন লুকিয়ে রেখেছ তোমার
ভেতর !”

অধ্যায় ৪৮
যদিও উইন ম্যাকয় হুইসেল স্টপ থেকে মাত্র তিন ব্লক দূরে থাকে , তবুও সেখানে পৌঁছতে ওর
ত্রিশ মিনিট লেগে গেলো। অবশ্য এই ঝড়ের মধ্যে প্রত্যেকটা ব্লকই অনেক কষ্টে পার হতে হচ্ছে,
আর ও নিজেও খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই ! ও মদ খেয়েছে, শরীরে আঘাত পেয়েছে আর
অণ্ডকোষ প্রচণ্ড ব্যাথা করছে, কারণ ওই জেয়লিন হারামজাদী ওখানটাতে শক্ত করেই ধরেছিল।
185

“আমি ওই শালীকে দেখে নেবো !” হিসহিস করে নিজের মনেই বললো সে।

ঠাণ্ডাতে ওর পুরো মুখটা রাবারের মতো অসাড় হয়ে গেছে। ঝড় ওকে এমনভাবে ধাক্কা দিচ্ছে যে,
ওর সোজা চলার চেষ্টা পুরোপুরি নস্যাৎ হয়ে গিয়ে জিগজ্যাগ ভাবে চলতে হচ্ছে ওকে। পুরো
পৃথিবীটাই মনে হচ্ছে সাদায় ঢেকে গেছে।

যখন ও অবশেষে ওর নিজের ড্রাইভওয়েতে পৌঁছালো, ততোক্ষণে ওর পুরো শরীর অসাড় হয়ে
গেছে। ওর দাড়িতে আটকে গেছে ছোট ছোট তু ষার কণা, আর দৃষ্টি হয়ে গেছে ঝাপসা। ওর
বারান্দাতে কোমর সমান বরফ আর ড্রাইভওয়েতে বরফের ছোট ছোট টিলা জমে গেছে। ও এই
ধরণের দৃশ্য কয়েক দশক ধরে দেখেনি।

ও সিঁড়ি বেয়ে ওঠা শুরু করলো, ওর কাছে মনে হচ্ছিলো যেন হিমালয় পর্বতমালার চূ ড়ায় উঠতে
চাচ্ছে সে। ও ওপরে তাকাল আর ...... আরে ! ওখানে লাইট কি করে এলো ! শুধু লাইট হলে
কথা ছিল, এগুলি তো রঙ্গিন লাইট ! রাস্তার দিকের প্রত্যেকটা জানালাতে ট্র্যাফিক লাইটের মতো
রং, লাল, সবুজ আর হলুদ !

এখানে কি ঘটছে ?

ওর মনে হলো ও অ্যাডভান্সড হাইপোথারমিয়াতে আক্রান্ত হয়েছে আর পুরো ব্যাপারটা একটা


হ্যালুসিনেশন। কিন্তু ও যতবারই চোখ পিটপিট করুক না কেন, সামনের দৃশ্য মোটেই পরিবর্ত ন
হলো না ! ও একাই থাকে, একটা কু কু রও নেই যে ওকে সঙ্গ দেবে । ও একসময় বিবাহিত ছিল,
কিন্তু বেভারলি ১৭ বছর আগেই ওকে ছেড়ে গেছে। আর ক্রিস্টমাস দুইমাস আগেই চলে গেছে --
এ সময় ওর আসার কথাও না, যদি নিদেন সারপ্রাইজ দিতেও এসে থাকে।

এর একটাই মানে হয়, কেউ ঝামেলা করতে চাচ্ছে।

ওটাই একমাত্র পরিস্থিতি যেটা সে বুঝতে পারে আর ওটা নিয়েই ওর বসবাস। ওর ভেতরে রাগ
ফু টতে লাগলো বগবগ করে, সত্যি বলতে কি , ওর ভেতরে আসলে সবসময়ই রাগ ফু টতে থাকে,
অন্তত ভেতরে ভেতরে তো বটেই ! এই রাগ নিয়েই ও প্রতিদিনের সমস্যা মোকাবেলা করে থাকে
আর একদিন একদিন করে বেঁচে থাকে । এটা তাকে একরকম সন্তুষ্টি এনে দেয়, ওর দমিত
হতাশাকে অনেকটা প্রশমিত করে।
186

ও ওর দরজা দিয়ে ঢু কে পড়লো, মেঝেতে কোট আর হ্যাট ছুঁ ড়ে ফেলে হলওয়েতে এসে থমকে
দাঁড়ালো। এখানে তো কোন রঙ্গিন লাইট নেই ! এমনকি কোন ধরণের যন্ত্রও দেখা যাচ্ছে না যা দিয়ে
ওই ধরণের লাইট জ্বালানো যেতে পারে । ও তারপরও প্রত্যেকটা রুমে ঢু কে ঢু কে চেক করে
এলো।

এটা তো পাগলাটে ব্যাপার হলো !

ওর ভেতর থেকে ফু স করে সব বাতাস যেন বের হয়ে গেলো, ও ভীষণ আশা করেছিল ওর বাসায়
একটা চোর ঢু কেছে আর ও হাতের আশ মিটিয়ে ব্যাটাকে পিট্টি লাগাতে পারবে।

যাই হোক ওকে এবার বাথরুমে যেতে হবে, বাথরুমে যখন কাজ শেষ করে এনেছে, তখন ও হঠাৎ
একটা ক্যাঁচ কোঁচ, ক্যাঁচ কোঁচ ক্যাঁচ কোঁচ ধরণের উচ্চ আওয়াজ শুনতে পেলো।

হুম এখনও তাহলে চান্স আছে, ও দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেলো, কিন্তু এবারও হতাশ হল
দেখে যে , ওই শব্দটা আসছে বারান্দাতে লাগানো ঝু লন্ত রকিং বেঞ্চটা থেকে, বাতাসে নড়াচড়া
করেই ওটাই শব্দ করছে !

একটা শ্বাস ফেলে , ভেতরে রান্নাঘরে ফেরত এলো উইন। তারপর জানলা দিয়ে বাইরে তাকাতেই
জমে গেলো, কারণ এবার ও স্পষ্ট দেখতে পেল, রকিং বেঞ্চটাতে কেউ বসে আছে, আর ক্যাঁচ
কোঁচ শব্দ করে দোল খাচ্ছে।

একটা গড ড্যাম ক্লাউন !

ওটা পরে আছে একটা ভেলভেটের স্যুট , ম্যাকডোনাল্ডের মতো মাথার দুপাশে ঝোপের মতো
চু ল বেরিয়ে আছে, কালো বড় বড় চোখ, কালো ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে ততোধিক কালো
রঙের কি জানি তরল !

একটা ক্লাউন, বাইরে, এই বরফ ঝড়ের মধ্যে !

প্রচণ্ড রাগের সাথে উইন ভাবতে লাগলো – ও , তাহলে এই ব্যাপার, বাইরে বসে বসে মানুষজনকে
ভয় দেখিয়ে মজা নেয়া হচ্ছে ! ঘুষি মেরে যদি সবকটা দাঁত খুলে না এনেছে তো ওর নামও উইন
ম্যাকয় না !
187

ও দৌড়ে গেলো দরজার দিকে , বাইরে বেরোনো মাত্র তু ষার ঝড়ের দামাল বাতাস ওকে স্বাগত
জানালো। ওর নাকে ভক করে ধাক্কা মারলো বুনো পশুর গায়ের মতো গন্ধ, চিড়িয়াখানায় বিশেষ
করে ভালুকের খাঁচার কাছে গেলে এই ধরণের গন্ধ পাওয়া যায়।

কিন্তু কোন ক্লাউন দেখতে পেলো না সে !

ও তু ষারের পাহাড় ঠেলে এগিয়ে গেলো রকিং বেঞ্চটার দিকে, কিন্তু ভয়ের ব্যাপার হলো, ওটার
সামনে কোন পায়ের ছাপ দেখা যাচ্ছে না, এমনকি বেঞ্চের ওপরের তু ষারেও কোন ছাপ পড়েনি !

উইন ওখানে দাঁড়িয়েই কাঁপতে লাগলো, কিন্তু এবার আর রাগে নয়, বরং ভয়ে আর অনিশ্চয়তায় !
একটু পর , ঘুরে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে হাঁটা দিলো, কিন্তু ওর চেহারা দেখে মনে হচ্ছে, ওর চোখের
লাইটটা কেউ নিভিয়ে দিয়েছে !

ক্লাউনটা এবার ওপরের গেস্ট বেডরুমের জানালাতে দাঁড়িয়ে আছে ! কি ঘৃণিত একটা লোক !

কোনরকম চিন্তাভাবনা না করেই , উইন দৌড়ে ভেতরে গেল। ভেতরে , তু ষারের ছাপ দেখা গেলো
বেশ কিছু, কিচেন থেকে বেরিয়ে লিভিং রুম হয়ে ওপরে চলে গেছে।

অনেক হয়েছে পাগলামি, এবার ব্যাটাকে উচিত শিক্ষা দিতে হবে। উইন ওর দরজার পাশের ক্লজিট
থেকে স্মল ক্যালিবার শটগানটা টেনে নিলো। ডাকাতদের শায়েস্তা করার জন্য ওটা ওখানেই থাকা
সারা বছর , লোডেড অবস্থায়। এবার হবে মজা ! ও সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে ওপরে গেলো, খুন করার
জন্য রেডি । যদিও এর আগে ও কখনও কাউকে গুলি করেনি, কিন্তু এই চিন্তাটাই ওকে বেশ
উত্তেজিত করে তু ললো । তাছাড়া, ওই ব্যাটা আবার ক্লাউনের ছদ্মবেশ ধরেছে, তাই ওটাকে মেরে
ফেলার ওর অধিকার রয়েছে ।

ও সিঁড়ির মাথায় গিয়ে একটু থামলো ।

কিচ্ছু শোনা যাচ্ছে না, শুধু ওই জন্তুর মতো বোঁটকা গন্ধটা আবার পাওয়া যাচ্ছে। কাঁচা মাংস,
প্রস্রাব আর রক্তের বীভৎস গন্ধ !

“তু ই যদি কাল সূর্য দেখতে চাস, হারামজাদা , তাহলে নিজে থেকে বেরিয়ে আয়, নয়তো আমার
শটগানটাই হবে তোর জীবনে দেখা শেষ জিনিস। ”
188

উইন মনে মনে ভাবল , বাহ ! ভালোই তো ডায়ালগ ঝাড়ল সে, ঠিক ওয়েস্টার্ন মুভির ক্লিন্ট
ইস্টউডের মতো ! ও ভয়ে ঘেমে গেছে পুরোটা, ও ওর ব্যাক বেডরুমে চলে এলো সন্তর্পণে, ওখানে
গন্ধটা অনেক বিকট আকার ধারণ করেছে। লাথি দিয়ে দরজাটা খুলে ঝট করে লাইট জ্বালাল সে।
কেউ নেই ! কিভাবে হয় এটা, এবার ও খাটের তলাটা দেখল ভালো করে , তারপর শটগানটা
বাগিয়ে ধরে খুলল ক্লজিটটা। প্রথমে কিছুই দেখল না, তারপর , হঠাৎ, একটা ক্লাউন আত্মপ্রকাশ
করলো সেখান থেকে !

ওটার মুখটা কালো আর বিশাল ব্যদান করে আছে ।

উইন ট্রিগার টানল , ক্লিক ক্লিক ক্লিক ! হামারটা কোথাও আঘাত করছে না !

সেই সময় ক্লাউনটা ওর পায়ের কাছে শটগান শেলগুলি ছুঁ ড়ে মারল ।

না না না এটা হতে পারেনা !!!

ক্লাউনটার বিশাল , রক্তমাখা মুখটা থেকে একটা সাপের মতো লকলকে জিভ বেরোল , ওটার
দাঁতগুলি করাতের মতো ধারালো। এখন উইন বুঝতে পারলো ওটা রাবারের মুখোশ পরা কোন
ডাকাত না, ওটা একটা অদ্ভু ত বীভৎস প্রাণী ! ও এমনকি নড়তে পারারও আগে ক্লাউনটা ওকে
আক্রমণ করলো। সাঁ করে ওটা ওটার নখ দিয়ে উইনের চেহারা ফেড়ে ফেললো। ও নিজের রক্ত
পিচ রঙের দেয়ালে ছড়িয়ে যেতে দেখলো আর কোন কাজে না আসা শটগানটা মাটিতে আছড়ে
পড়লো।

ও হোঁচট খেয়ে পেছনে সরে গেলো, প্রচু র রক্তপাত হচ্ছে ওর । ও দুই হাত দিয়ে নিজের মুখ চেপে
ধরলো , ওর আঙ্গুলের ফাঁক গলে অঝোর ধারায় রক্ত গড়াতে লাগলো। বিকট একটা চিৎকার দিয়ে
সিঁড়ির দিকে দৌড়ালো যদি ওখান দিয়ে পালানো যায়। কিন্তু না ! ক্লাউনটা সেখানেও ওর জন্য
অপেক্ষা করছিলো ! ও ওর চোয়াল আগের থেকেও বড় করে হাঁ করে বীভৎস একটা গড়গড়া
করার মতো শব্দ করে উইনকে বজ্রমুষ্টিতে আঁকড়ে ধরলো। উইন গগনবিদারী একটা চিৎকার দিয়ে
নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলো, কিন্তু ক্লাউনটা বিপুল শক্তিতে ওর কাঁধের জয়েন্ট ভেঙ্গে দিলো ।
তারপর ওর হাত সম্পূর্ণ আলাদা করে ফেললো শরীর থেকে, ঝর্নার মতো রক্ত বেরিয়ে এলো
সেখান থেকে। অবর্ণনীয় ব্যাথায় উইনের প্রায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলার উপক্রম হলো, কিন্তু ওর
189

ভেতরে কিছু একটা মারা যেতে ওকে বাঁধা দিলো। অনেক কষ্টে ও সিঁড়ির গোড়ায় এলো, যেখানে
ক্লাউনটা ওকে এক ধাক্কা দিলো ।

গড়াতে গড়াতে সিঁড়ির নিচে এসে থামলো উইন, ভাঙ্গা পিঠ, ধ্বংসপ্রাপ্ত শরীর আর অনেক কষ্টে
শ্বাস ফেলতে লাগলো সে। ক্লাউনটা অত্যন্ত ধীরে ধীরে ওর কাছে এসে বসলো , পিচ্ছিল কালো
ঠোঁট আর নিষ্করুণ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো, তারপর ডিম খেকো সাপের মতো ওর চোয়াল
খুলতেই থাকলো, খুলতেই থাকলো, যেরকমটা একবার একটা নেচার ডকু মেন্টারিতে দেখেছিলো
উইন। ওর দাঁত দিয়ে উইনের কপাল আর চিবুক কামড়ে ধরলো এরপর, তারপর ঠিক বাচ্চাদের
ললিপপ চোষার মতো চু ষতে শুরু করলো, ওর মোটা ঠোঁট দিয়ে উইনের পুরো মাথা ঢেকে
ফেললো।

একটু পর উইনের দেহে মাথা বলতে আর কিছুর অস্তিত্ব রইলো না ।

অধ্যায় ৪৯
ক্লেগ ক্রো ফলসের মেন স্ট্রিট ধরে আস্তে আস্তে ওর ভ্যানটা চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো, আর বাইরের
রাতের দিকে নিবিষ্ট মনে তাকিয়ে ছিলো। অনেক বছর ধরেই ও ক্লাউন শিকার করে আসছে, তাই
ও জানে কি খুঁজতে হবে। এই বালের ঝড়টা না থাকলে ওর কাজটা আরও সহজ হতো !

ওরা যখন ট্যাক্সি-এ-গো-গো র পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো, ট্রিক্সি হঠাৎ বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়লো। ও
উত্তেজিতভাবে নড়াচড়া করতে লাগলো আর গলার ভেতর গড়গড় করে অদ্ভু ত শব্দ করতে
লাগলো। ক্লেগের মনে কোন সন্দেহ রইলো না যে ও একটা ট্র্যাক খুঁজে পেয়েছে। যখনই ও কোন
ক্লাউনের গন্ধ পায়, বুড়ো খুকি ততক্ষণ শান্ত হয়না যতক্ষণ ওটাকে খুঁজে বের না করতে পারা যায়,
আর যখন এটা ঘটে, ক্লেগের কাজে নামার সময় আসে !

“তু ই কি একটার গন্ধ পেয়েছিস ?”

ট্রিক্সি ঘেউ করে উঠে উত্তেজিতভাবে লেজ নাড়াতে লাগলো। নাক উঁচিয়ে ধরে সিটের কোণায়
বসে গর্জ ন ছাড়ল একটা।
190

ইয়েস, ক্লেগ ভাবল, ও একটাকে খুঁজে পেয়েছে !

ও গাড়ি ঘুরিয়ে থেমে ট্রিক্সিকে নামার সুযোগ করে দিলো। পাগলের মতো নেমে গিয়ে লাফাতে
লাগলো রট ওয়েলার, বুড়ো খুকির কাছে প্রভু কে সেবা দেয়ার চাইতে আর কিছু বেশি আনন্দদায়ক
মনে হয় না !

ক্লেগ পেছনের দরজা খুলে ওর প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বের করে আদেশ দিলো “ওকে, হানি ! খোঁজা
শুরু কর !”

পুরো পৃথিবীটা সম্পূর্ণ সাদা আর বাতাসে ভর্তি । এটা ভ্যানিলা আর ক্রিম রঙের আবরণ দেয়া
বিশাল একটা আইসক্রিম ! ভাবছিল স্তিউ পেচেক, বরফের মধ্যে হোঁচট খেতে খেতে ওর স্ত্রীকে
খোঁজার সময়। ও যখন বারে বসেছিল, ওর পরিষ্কার মনে হলো যেন ও ওর স্ত্রীর কণ্ঠ শুনতে
পেয়েছে।

“তু মি কি শুনতে পেয়েছ ?” ও স্কাঙ্ককে জিজ্ঞেস করেছিলো তখন, স্কাঙ্ক অবজ্ঞা ভরে কাঁধ
ঝাঁকিয়েছিল “ন্যাহ !”

“ওটা ওর কণ্ঠ, আমার ওকে খুঁজে বের করা উচিত !” স্তিউ বলেছিল।

“শিওর” সাথে সাথে স্কাঙ্ক একমত হয়েছিল “তোমার অবশ্যই তাই করা উচিত ”

আর এখন স্তিউ তাই করছে, যদিও ও একটা পাতলা জ্যাকেট আর গ্লোভস পড়ে আছে, কিন্তু ওর
মোটেই শীত করছে না ! ও কেবল জানে এটা শীতকাল আর এখন ভালোরকম বাতাস বয়ে
যাচ্ছে! কিন্তু এসবের কিছুই ওর কাছে গুরুত্ব বহন করেনা, কেবল ওর স্ত্রীর কণ্ঠ ছাড়া !

“ব্রেনডা !” ও ভাঙ্গা গলায় যতদূর জোরে পারে চিৎকার করে যাচ্ছে , সামনে এক মুহূর্তে র জন্য
যেন মনে হল একটা ছায়া শরীর দেখা গেলো, পর মুহূর্তে ই ওটা মিলিয়ে গেলো। এভাবে আলেয়ার
মতো প্রলোভন দেখাতে দেখাতে ওকে অনেকদূর নিয়ে গেলো সেই রহস্যময় ছায়া।

তারপর, এক সময়, ও দেখতে পেলো, হ্যাঁ, ও দেখতে পেলো ব্রেনডাকে !


191

ব্রেনডা ওর দিকে তাকিয়ে খুশির হাসি হাসলো, হাত বাড়িয়ে দিলো ওর দিকে । একটা চু ম্বকের
মতোই ওর দিকে ধেয়ে গেলো স্তিউ, একদম শেষ মুহূর্তে সে খেয়াল করলো যে ব্রেনডার সারা শরীর
রক্তের দাগে ভর্তি হয়ে আছে , আর ও হাতে ধরে আছে একটা কু ড়াল !

কিন্তু কু ড়ালের গায়ে লেগে থাকা রক্ত আর বেশ খানিকটা চু লের ভগ্নাংশও ওকে আটকাতে
পারলো না, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে ওকে স্তিউ খুঁজে পেয়েছে !

শুধু যখন ও সরাসরি সামনে চলে এলো, কেবল তখনই ওর ভেতর থেকে অনির্বচনীয় প্রেমের
অনুভূ তি পালিয়ে গেল একদিকে ! ভয়ে যেন ওর রক্ত জমে গেলো, হার্ট পরিণত হলো এক টু করো
বড়সড় বরফে !

কারণ ওটা মোটেই ব্রেনডা না, ওটা একটা গড ড্যাম ক্লাউন ! ও একটা কু ড়াল নিয়ে দাঁড়িয়ে
আছে আর ও অনেক অনেক বড় দেখতে ! ও একটা রুপালি স্যুট পরে আছে যেটা বাতাসে
পতপত করে উড়ছে, আর চারপাশের ঠাণ্ডা সত্ত্বেও ওটার দিক থেকে একটা গরম বাতাস ভেসে
আসছে, যেটাতে পচনের গন্ধ মিশে আছে ! কারণ, স্তিউ সামনে যেটা দেখছে সেটা মোটেই কোন
ক্লাউন না, সেটা একটা পিশাচ ! একটা মড়াখেকো দানব, কবরস্তান আর যুদ্ধ ক্ষেত্রে ঘুরে বেড়ায়
সদ্য মৃত লাশের সন্ধানে, আর পেলে কড়মড় করে চিবিয়ে খায়।

ক্ষয়ে যাওয়া হাড়ের মতো সাদা ওর মুখ, লম্বা কালো গলা, নাকের জায়গায় একটা ত্রিকোণ গর্ত ,
চোখগুলো কোন নরকের রসাতল থেকে উঠে আসা গর্তে র মতো কালো !

স্তিউ ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো প্রাগৈতিহাসিক কালের কোন দেবতার সামনে চড়ানো
কোন মনুষ্য বলির মতো !

ওর বলি গ্রহণ করলো দানবটা, এক কোপে ওর মাথা দুই ফাঁক করে দিলো, স্তিউর প্রাণহীন দেহটা
মাটিতে আছড়ে পড়ে তড়পাতে লাগলো কোন এক অদৃশ্য আক্ষেপে। ওর নড়াচড়া স্থির হওয়া
পর্যন্ত অপেক্ষা করলো পিশাচটা, তারপর ওর গোড়ালি ধরে টেনে অদৃশ্য হয়ে গেলো সাদা তু ষারের
চাদর ভেদ করে।
192

অধ্যায় ৫০
যখন ওরা শেষমেশ ব্রোকেন বটল এ পৌঁছল, পিনাটের মনে হলো ও একটা বরফের টু করোতে
পরিণত হয়েছে। ভেতরের উষ্ণতা ওর ভেতরে একটা আরামদায়ক অনুভূ তি ছড়িয়ে দিলো, কিন্তু
সেই আরাম উবে গেলো যখন দেখল স্কাঙ্ক একটা ছুরি নিয়ে বনির ওপর ঝুঁকে আছে।

“এখানে কি ঘটছে ?” সে জিজ্ঞেস করলো।

বলেই সে তার নাইন এম এম পিস্তলটা টেনে বের করলো, সেই সময় সে শিওর ছিলো সে ওই
নোংরা শুয়োরটাকে মেরেই ফেলবে, এক মুহূর্ত দ্বিধা না করেই।

“এভ্রিথিং কু ল ” ছুরিটা সাবধানে সরিয়ে নিতে নিতে বলল স্কাঙ্ক।

কিন্তু এই কথা নাথান ফ্রিকে টলাতে পারলো না, সে দৌড়ে এসে সোজা দু দুটো ঘুষি জমিয়ে দিলো
স্কাঙ্কের ওপর “জারজের বাচ্চা ! তোর কি কখনও শিক্ষা হবে না ? কতবার তোকে বোঝাতে হবে ?

স্কাঙ্ক ওঠার কোন চেষ্টাই করলো না, ওর ঠোঁট ফেটে রক্ত বেরিয়ে পড়েছে, ও জানে ও ধরা পড়ে
গেছে, আর ধরা পড়েছে ডেড স্কালের হল মাস্টার নাথান ফ্রির কাছে, তার মানে ও গভীর গাড্ডায়
পড়ে গেছে।

“এটা মোটেই সেরকম না, যেরকম দেখাচ্ছে ” সে বলল ।

“ওহ অবশ্যই !” বনি ব্যাখ্যা করলো “ও আমাকে রেপ করতে চেয়েছিল, তোমরা না এলে ও সেটা
করেই ফেলত ।”

ওর চোখ জলে ভর্তি হয়ে আছে, পিনাট ওর দিক থেকে স্কাঙ্কের দিকে , আরেকবার নাথানের দিকে
তাকাল “উইল এটা মোটেও পছন্দ করবে না, তোমার মতো লোকের চোদ্দ শিকের ভেতরেই থাকা
দরকার, তোমার আসল জায়গা ওটাই ! ”

নাথান স্কাঙ্কের দিকে ঝুঁকে ভয়াল স্বরে ফিসফিস করলো “আমি এখানে থাকতে চাইনা যখন ক্লাইড
এ ব্যাপারে জানতে পারবে, কারণ ও হয়তো আমাকেই পাঠাবে বনের ভেতর একটা কবর খোঁড়ার
জন্য। ”
193

এবার স্কাঙ্ক সত্যিকার ভয় পেলো কারণ নাথান ফাঁকা আওয়াজ দেয় না ! পিনাট আর বনি জানেনা
ও অতীতে কি করেছে, কিন্তু স্কাঙ্ক খুব ভালো করেই জানে ক্লাইড আর নাথান কি করতে পারে –
কত অবলীলায় ওরা মানুষ খুন করতে পারে যদি কেউ ওদের পথে পড়ে যায় বা কেউ ক্লাব রুল
ভঙ্গ করে।

এখন স্কাঙ্কের কাছে পুলিশ খুব ছোট সমস্যা, আরও বড় সমস্যা ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে
মূর্তি মান!

“তু মি ঠিক আছো ?” পিনাট বনিকে জিজ্ঞেস করলো।

“সব ঠিকই আছে, কিন্তু তোমরা যদি না আসতে......... ” বনি নাথানের দিকে তাকিয়ে উদ্বিগ্ন স্বরে
বললো “প্লিজ আমাকে ওই ...ওই স্কাঙ্কের সাথে একা রেখে যাবেন না , যদি কোথাও যেতেই হয়
ওকে সাথে নিয়ে যাবেন প্লিজ , প্লিজ !”

“আমরা কোথাও যাচ্ছি না ” নাথান আশ্বস্ত করলো।

“ওরা পুলিশ স্টেশনে কেন গিয়েছে ?” পিনাট জিজ্ঞেস করলো বনিকে, ও ওর কব্জিতে ব্যান্ডেজ
বেঁধে নিয়েছে , বনি বললও “ওরা ক্লেগ নামে একজন লোককে আনতে গেছে ”

“ওহ ম্যান ” বলল পিনাট “তাহলে এটা খুব শীঘ্রই উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠতে যাচ্ছে ” তারপর
কেউ জিজ্ঞেস করার আগেই ও কিভাবে ক্লেগকে খেলার মাঠের মাঝখান থেকে ধরে এনেছে আর
এর পরের ঘটনা বিতং করে বলা শুরু করলো। অন্য কোন রাত হলে সবাই হাসাহাসি করতো, কিন্তু
আজ রাতে কেউ হাসলো না ।

যখন জেয়লিন থন কারেনের বাসা থেকে বের হয়ে আসলো, (কারণ কিছুতেই ওর ওখানে রাত
কাটাতে রাজী ছিল না ), ওর মনে হলো কেউ ওকে ফলো করছে। পেছনে বরফ গুঁড়ো হবার শব্দ
ও পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছিলো, প্রতিবার যখন ও থেমে যাচ্ছিলো, সেই পদশব্দটাও থেমে যাচ্ছিলো।
বড় সমস্যা করছে ওই ঝড়টা , ওটা এমনভাবে বয়ে যাচ্ছে যে ওর পেছনে কে আছে ও ভালো
করে দেখতেও পাচ্ছে না ।
194

কয়েকবার থেমে ও চিল্লিয়ে জিজ্ঞেসও করেছে “কেউ আছো ওখানে ? থাকলে জবাব দাও প্লিজ
!”

কিন্তু কোন জবাব এলো না কোনবারই, তৃ তীয়বার থামার পর, ও ভাবছিল , আসলেই কি পেছনে
কোন শব্দ হচ্ছে, নাকি ও নিজেই কল্পনা করছে এসব ! সময়টা মধ্য গ্রীষ্ম হলে , ও পেছনে গিয়ে
দেখে আসতে পারতো, কিন্তু এখন বরফ ঠাণ্ডা বাতাস ওর গায়ে হুল ফোটাচ্ছে আর ওর নিঃশ্বাস
ফেলার সাথে সাথে মেঘের মতো কু য়াশা বের হচ্ছে। তাই ও কষ্ট করে সামনেই এগোতে লাগলো,
এই তো থার্ড এভিনিউ পার হয়ে , ক্যানাল ক্রিকের ব্রিজ পার হলেই চলবে, ওখান থেকে ওর বাসা
ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে ।

কিন্তু এই বালের ঝড়টা মনে হচ্ছে চারদিক থেকে আক্রমণ করতে লেগেছে, বরফ ঝড় মোকাবেলা
করার সব রকম পোশাক আশাক থাকা স্বত্বেও ওর মনে হচ্ছে একটা চোরা ঠাণ্ডা যেন ওর গরম
পোশাকের ভেতর দিয়ে ঢু কে ওর মেরুদণ্ড সহ কাঁপিয়ে দিচ্ছে।

জায়গাটা সম্পূর্ণ পরিত্যাক্ত , এখানে ওখানে নানান সাইজের বরফের স্তূ প , এমনকি রাস্তার
ওপরও, জানিয়ে দিচ্ছে অনেকক্ষণ হলো এ পথে কেউ আসা যাওয়া করছে না। একটা বরফের
উঁচু স্তূ প পার হতে গিয়ে পা হড়কে মাটিতে পড়ে গেলো জেয়লিন।

মদে আচ্ছন্ন আর ক্লান্ত জেয়লিন পড়ে রইলো , যদিও ও ভালো করেই জানে এক্ষু নি যদি উঠে না
বসে তাহলে ও ওখানেই জমে মারা যাবে। আর ঠিক তখনই ও শুনতে পেলো কারো এগিয়ে
আসার শব্দ !

যথেষ্ট হয়েছে, লাফ দিয়ে উঠে বসে ভাবল ও, ওর মনে হলো ওটা হয়তো উইন ম্যাকয় যে কিনা
অসমাপ্ত ফাইট শেষ করতে এসেছে ! ও ভীষণ আশা করলো এটা যেন ও-ই হয়, কারণ গতবার
ব্যাটা ভালোই দিয়েছিল ওকে, এবার ব্রিক মাঝখানে বাগড়া দেয়ার জন্য থাকবে না, ব্যাটাকে উচিত
শিক্ষা দিয়ে ছেড়ে দেবে এবার !

কিন্তু পর মুহূর্তে ই ওর নিজের কাছে ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য লাগলো, কারণ উইন যে ধরণের লোক, ও
এতক্ষণে নিজের বাসায় ফিরে গিয়ে ক্ষত চাটছে আর পরেরবারের জন্য রেডি হচ্ছে।
195

ঠিক আছে , কেউ যদি ওর পিছু নিয়েই থাকে তাহলে জেয়লিন ওর জন্য অপেক্ষা করবে
শেষতক।

ও ঈশ্বর ! ওটা উইনই বটে ! ওটা ওই শূওরের নাক অলা , মদে আচ্ছন্ন গবেট উইনই !

“চলে যাও এখান থেকে , ভাগো !” জেয়লিন হুঙ্কার দিলো, তারপর ঘুরে হাঁটা দিলো, কিন্তু ক্যানাল
ক্রিকের ব্রিজের ওপর ওঠার পর আবার পেছনে পায়ের শব্দ পেল।

এবার জেয়লিন আর সহ্য করতে পারলো না, সোজা দৌড়ে গেলো গাড়লটার দিকে। কিন্তু ব্যাটার
কোন হেলদোল দেখা গেলো না, ঠিক একটা নিষ্প্রাণ স্নো ম্যানের মতোই দাঁড়িয়ে রইলো।
জেয়লিনের রাগ এতে আরও বেড়ে গেলো , একটা জোরালো ঘুষিই বসিয়ে দিলো ব্যাটাকে ! কিন্তু
আশ্চর্য হয়ে দেখল, ব্যাটা ঘুষিটা পুরোই হজম করে নিলো আর দাঁড়িয়ে রইলো ঠিক যেন একটা
জেলির তৈরি মানুষ !!

প্রথমবারের মতো জেয়লিন ভয় পেলো কারণ এটা কেবল শুধু অদ্ভু তই নয়, এটা অপ্রাকৃ তও বটে
! এটা উইন ম্যাকয় হতেই পারেনা ! হ্যাঁ , এটার ওর মতোই নিয়েনডারথাল টাইপের চেহারা, কিন্তু
এটার আছে বড় , লাল, ব্যাঙ্গের হাসি হাসা মুখ, লাল বলের মতো নাক আর মাথার দুপাশ দিয়ে
বের হওয়া লালসবুজ রঙের গোছাখানেক চু ল।

জেয়লিন কয়েক পা পিছিয়ে আসলো, একটা শ্বাসরুদ্ধকর মিষ্টি গন্ধ ভেসে এলো ক্লাউনটার দিক
থেকে, আর একটা অদ্ভু ত গরম বাতাস চারপাশে ছড়িয়ে গেলো। গন্ধটা ওর নাকে যাওয়া মাত্র ওর
পেট খালি হয়ে গেলো আর ওর ঘুম ঘুম পেতে শুরু করলো ! ও পিছিয়ে গিয়ে ব্রিজের রেলিঙে
ধাক্কা খেলো। ও অবাক হয়ে দেখতে পেলো হিস হিস শব্দ করতে করতে সামনের শরীরটা ফু লতে
শুরু করেছে , ফু লতে ফু লতে এক সময় ‘ব্যাঙ্গ’ করে ফেটে চারপাশে গোলাপি রঙের তরল ছড়িয়ে
পড়লো।

সেগুলি পড়েই ক্ষান্ত হলো না, বগ বগ করে ফু টতে লাগলো আর সেখান থেকে বেরোতে লাগলো
ছোট ছোট বেলুন আকৃ তির ক্লাউন! সেগুলি দাঁত বের করে সদলে ঝাঁপিয়ে পড়লো জেয়লিন এর
ওপর ! ঠিক ডাঙার পিরানহা মাছের মতো (আমাজন জঙ্গলের এক রকম মাংস খেকো মাছ)
ওকে জ্যান্ত খুবলে খেতে শুরু করলো ওগুলি ! তারপর ওর চামড়া ভেদ করে ভেতরে চলে গেলো
অদ্ভু ত জীবগুলি। সবগুলি ভেতরে যাবার পর , জেয়লিনের যতটু কু অবশিষ্ট আছে , সেটু কু ঝাঁপ
196

দিলো রেলিং পার হয়ে নিচের বরফে ঢাকা নদীর ওপর। ‘ক্রাশ’ করে ওপরের বরফের আস্তরণ ভেদ
করে আরও গভীরে , আরও অন্ধকার গভীরে চলে যেতে লাগলো ওই অদ্ভু ত জন্তুটা, যেন নরকের
অন্ধকারে আশ্রয় খুঁজে নিতে চাচ্ছে !

অধ্যায় ৫১
টিগ স্টানকে একটা নাইন এমএম আর ক্লাইডকে একটা শটগান দিয়ে এসইউভিতে উঠে বসলো।
তু ষারের মাঝ দিয়ে বেশ ধীরে ধীরে চলতে লাগলো গাড়ি, বরফের ছোট ছোট টিলাগুলি পার হয়ে
ফোর হুইল গাড়িটা চালাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিলো। গাড়ি একটু পরপরই দিক পাল্টে ফেলছে।
এক পর্যায়ে স্টান ক্যামেরা বের করে ভিডিও করতে শুরু করলো, সাথে ওর পরিচিত ভঙ্গীর
ধারাভাষ্য “আমরা আবার ঝড়ের মাঝে বেরিয়ে পড়েছি, আমরা কি কিছু খুঁজে পাবো ? আমরা কি
সেই শয়তানের সাথে টক্কর লাগাতে পারবো যেটা বাইরে ধ্বংসলীলা চালিয়ে যাচ্ছে ? আমরা কি
আমাদের মৃত্যুর দিকেই ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছি ?”

“ওকে ” ত্যাক্ত স্বরে বললো ক্লাইড “ওকে চু প করাও, নয়তো আমিই করাচ্ছি !”

টিগ শ্বাস ফেলে বললো “স্টান, যথেষ্ট হয়েছে, তু মি পরে ডাব করে নিতে পারবে , ঠিক আছে ? ”

স্টান কাঁধ ঝাঁকালো , ও নিশ্চিত যে, ওদের দুজনের কারোরই ধারণা নেই যে এই ডকু মেনটারিটা
পরে কত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেবে !

ইতিমধ্যে হুইসল স্টপে , কাজ শেষ করার সময় এসে গেছে, আর অন্যান্য সন্ধ্যার মতোই ধীরে
ধীরে পুরো বার নীরব হয়ে পড়ছে। আজকে সেটা আরও তাড়াতাড়ি ঘটলো, কারণ উইন ম্যাকয়
আর জেয়লিন থনের মধ্যেকার ফাইটটাই আজকের প্রধান আলোচ্য আর সেটাই বার দ্রুত খালি
হবার কারণ হিসাবে দেখা দিলো। শুধু জনা পাঁচেক নিয়মিত মদ্যপ ওদের বিয়ারের ভেতর শূন্য
দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো , কারণ ওরা ঠিক জানে ওদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার তাড়া নেই, তাই বলে
ওদের এখানেও বসে থাকতেই যে হবে তারও কোন মানে নেই ! জুকবক্সেও বেছে বেছে এমন
গানগুলি বাজছে যে , কিছু একটা বাতাসে ভেসে আছে যেটা হারিয়ে গেছে , এবং আর কখনও
ফিরে আসবে না । বারটেন্ডার হিসাবে অনেক কিছুর ভেতর দিয়ে যেতে হলেও, এই রাতে --- কিছু
197

একটা বাতাসে আছে , যেটা কন্ট্রোল করা যায় না আর যেটা গোলমেলে। যদিও মনে হচ্ছে
আজকের দিনের মতো সব উত্তেজনা শেষ হয়ে গেছে, অন্তত ব্রিক তাই আশা করছে - - কিন্তু
একটা অস্বাভাবিক মুড যেন পাকিয়ে উঠছে বলে ওর মনে হলো , যেটা তার কাছে একেবারেই
পছন্দ হচ্ছে না।

সবচেয়ে যেটা ভালো হবে সেটা হলো , যারা এখনও আছে , ওদেরকে ভদ্রভাবে বিদায় করে দিয়ে
বার বন্ধ করে দেয়া, তাহলে ওর মনে হলো ওর অনেকটা ভালো বোধ হবে ।

ওর মন এখন যেটা চাইছে সেটা হলো, ওপরে ওর ছোট্ট এপার্ট মেন্টে গিয়ে প্লেয়ারে একটা ডিভিডি
ঢু কিয়ে রিলাক্স হয়ে সোফাতে বসা। জীবনের কাছ থেকে ওর বেশি কিছু চাওয়ার নেই। কাঁপা কাঁপা
হাতে একটা বিয়ারের গ্লাসের ওপর আরেকটা রাখতে রাখতে এসব ভাবছিল সে।

“কেয়ারফু ল, কাউবয় !” সতর্ক করলো মেগি লা ক্রস, যে ওর সেরাতের শেষ ভদকা মার্টি নি
খাচ্ছিলো।

“এটা একটা লম্বা সন্ধ্যা ছিল” ব্রিক বললো ।

“তু মি ওটা শব্দ করে বলতে পারো।”

বৃদ্ধা ম্যাগি হুইসল স্টপে ব্রিকের জন্মের আগে থেকে নিয়মিত। ওর শেষতম স্বামী – তৃ তীয়জন ,
বারো বছর আগে মারা গেছে। ও গল্প করতে ভালোবাসে কিভাবে ও ওর প্রত্যেক স্বামীকে এখানে
নিয়ে এসেছে ড্রিংক করার জন্য, আর তারপর ওরা একসময় মাটির নীচে চলে গেছে। এখনও ও
সেই একই গল্প শুরু করেছে, কিন্তু ওর গল্পে ব্রিকের কান নেই। অন্যমনস্কভাবে , ও বারের পেছনের
বড় আয়নাতে ভেতরে থাকা লোকজনকে লক্ষ্য করে যাচ্ছিলো। বিল উইচেক আর ওর স্ত্রী রয়েছে
এখানে, আরও তিনজন রয়েছে আরেকটা টেবিলে, যাদের ও কেবল মুখ চেনে, কিন্তু নাম জানেনা।
কিন্তু ওরা এমন ভয় পেয়ে আছে যে, বাড়িতেই যেতে চাইছে না ! ক্যাশ রেজিস্টার চেক করতে
করতে ওর নিজেরও একই রকম লাগতে লাগলো, একটা অব্যক্ত ভয় যেন ওর হৃৎপিণ্ড মুঠো
করে ধরতে চাইছে !
198

হঠাৎ লক্ষ্য করলো এই দুই গ্রুপ লোকের মাঝখানে একজন নতু ন লোক জুটেছে যাকে ও শিওর
দুই সেকেন্ড আগেও দেখেনি। ও ঝট করে পেছনে ফিরে দেখলো , মিজ রুশো বসে আছে আরক্ত
চোখ আর কু টিল হাসি মুখে নিয়ে !

ব্রিকের গলা শুকিয়ে গেলো , চমকিত স্বরে ও জিজ্ঞেস করলো “তু মি কোত্থেকে এলে ?”

“আমি ঝড়ের ভেতর থেকে এলাম !” মিজ জবাব দিলো ।

এটা সম্পূর্ণ অবিশ্বাস্য, ব্রিক ভালো করেই জানে দরজাটা বন্ধই ছিলো, আর ওটা খোলাই হয়নি,
তবুও কোনভাবে মিজ এখানে বসে আছে। মিজদেরকে দেখেছে ও বেশ কয়েক মাস হলো ,
শেষবার দেখেছে তখনি, যখন ওর স্বামী সহ ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছিলো বার থেকে,
ঝামেলা পাকানোর অভিযোগে।

এখন ও আবার এসেছে, একা, ওকে অনেক ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে, ওর চোখগুলি দুই টু করো কাঁচের
মতো আর প্রায় বের হয়ে আসছে মনে হচ্ছে। যদিও ব্রিক ঝামেলা পাকানো লোকজনদের একদমই
পছন্দ করে না, কিন্তু ব্রিকের এখন সাহসে কু লাচ্ছে না ওকে বের করে দিতে, কারণ ওর মধ্যে এমন
একটা কিছুর অস্তিত্ব টের পাওয়া যাচ্ছে, যেটা ব্রিককে ভয় পাইয়ে দিচ্ছে।

“লাস্ট ল্যাপ” ব্রিক বলে উঠলো।

“বাইরের আবহাওয়া আজকে প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে” মিজ বলে উঠলো বিশেষ কারো প্রতি
উদ্দেশ্য না করেই “আজকে লোকজন ঝড়ের মধ্যে মারা যাচ্ছে, সকালের মধ্যে অনেক লোক মারা
যাবে , আর অনেক লোকই এমনকি মানুষও থাকবে না ! ”

ম্যাগি মাথা নাড়লো “অনেক কিছুই বলছো দেখতে পাচ্ছি ! ”

“যারা বার ছেড়ে যাবে, কেউই নিরাপদে ঘরে ফিরে যেতে পারবে না, ওদেরকে জন্তু জানোয়ারের
মতো ধাওয়া করা হবে, তারপর খুন করে ঝু লিয়ে রাখা হবে যতক্ষণ ওদের শরীরের শেষ
রক্তবিন্দুটাও বের না হয়ে যায় !”

“ওর কি হয়েছে ?” বিল উইচেক জিজ্ঞেস করলো , বেশ শক খেয়েছে বোঝা যাচ্ছে।
199

“এইসব পাগলের প্রলাপ বন্ধ করো” ব্রিক বললেও এটা জানে যে ওকে চু প করানো হয়তো সহজ
হবে না “কি ড্রিংক করতে চাও ?”

নিজের নাকে অস্বাভাবিক লম্বা , সরু আঙ্গুল বোলাতে বোলাতে মিজ বললো “উম, ওকে, আমি
অনেক তৃ ষ্ণার্ত , অনেক অনেক অনেক তৃ ষ্ণা আমার ! একটা ম্যানহাটান হলে কেমন হয় ! আমি
ওটা পছন্দ করতাম !”

ব্রিক ওর কাজে ফিরে গেলো, খুশি যে ওকে ওই আরক্ত চোখগুলির দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে
থাকতে হচ্ছে না। ও পুরো ব্যাপারটা চালিয়ে গেলো - - রাই হুইস্কি, স্যুইট ভারমুথ, আঙ্গোস্তুরা
বিটারস -- পুরো জিনিসটা মিক্স করলো সে, বরফ ঢাকা গ্লাসে ঢাললো আর ওপরে একটা চেরি
দিয়ে সাজিয়ে মিজের হাতে ধরিয়ে দিলো।

মিজ ওটা হাতে নিয়ে এক ঢোঁকেই পুরোটা গিলে ফেললো।

“হুম, কেউ একজন আসলেই তৃ ষ্ণার্ত !” ম্যাগি বললো , ওর মতো আরেকজন হেভি ড্রিংকারের
প্রতি শ্রদ্ধাপরবশ হয়েই।

“আরেকটা !” বলল মিজ।

ব্রিক ওকে বলতে যাচ্ছিলো যে ওকে ক্যাশ দিয়ে পান করতে হবে, ও বারের ওপর একটা পঞ্চাশ
ডলারের নোট দেখতে পেলো, ভাংতি ফেরত দিয়ে গ্লাস ভরে দিলো চু পচাপ। ওটাও এক চু মুকে
খালি করে আবার ঠকাস করে গ্লাস নামিয়ে রেখে বললো “আরেকটা !”

“আমি বন্ধ করে দিচ্ছি ” আপত্তি জানালো ব্রিক।

“আরেকটা দাও !”

ব্রিকের মনে হলো ওর হাত ওর মস্তিষ্কের কথা শুনছে না, ও আরও কয়েকটা ম্যানহাটান বানিয়ে
দিলো আর মিজ খেয়েই চললো ।

“তোমার মনে হয় আরেকটু ধীরে যাওয়া উচিত ” এমনকি ম্যাগিকেও এবার বলতে হলো “তোমার
মনে হচ্ছে এখনও কিক কেন মারছে না , আসবে , বাছা, আসবে ! আর যখন আসবে তোমার মনে
হবে গান পাউডারের পিপার ওপর বসে আছো ! ”
200

“কিন্তু আমি তো এখনও তৃ ষ্ণার্ত ” মিজ চিৎকার করে উঠলো “তৃ ষ্ণা, তৃ ষ্ণা, তৃ ষ্ণা
আআআআআআ! ”

ব্রিকের মনে হলো , এইবার একটা নির্দি ষ্ট সীমা কেউ লঙ্ঘন করলো, ও ওর অদ্ভু ত ঘোরের ভেতর
থেকে বের হয়ে এলো ধীরে ধীরে। ওকে এই চিৎকার চেঁ চামেচি থামিয়ে মিজকে এখান থেকে বের
করে দিতে হবে, যদি সেটাই ওর শেষ কাজ হয়, তবুও ! মিজ ওকে ভীত করে তু লছে, একইসাথে
বারের ভেতরে থাকা অন্যদেরকেও ।

কিন্তু বাকিরা কেউ নড়ছে না কেন, সবাই শূন্য চোখে মিজের দিকে তাকিয়ে আছে, নিজের নিজের
ড্রিংক পান করতে ভু লে গেছে সবাই । ওরা কেউই সাড়া দিলো না, এমনকি মিজ যখন উচ্চস্বরে
চিৎকার করে উঠলো, তখনও না ! এমনকি যখন মিজের গলা প্লাস্টিকের মতো লম্বা হয়ে মাথাটা
শূন্যে ভেসে উঠলো, তখনও না ! কেউ চিৎকার করলো না – ওরা অপেক্ষা করতে লাগলো ঠিক
যেমন ইঁদুর সম্মোহিত হয়ে চেয়ে থেকে ওকে খেতে আসা সাপের দিকে !

ব্রিকও চেয়ে আছে ।

মিজের চেহারা এখন হলুদ আর আঠালো, ওর চোখগুলো জেলির মতো, আর ওর মুখ একটা
বিশাল কালো গহ্বরের মতো যেটাতে ছুঁ চালো পিনের মতো অনেকগুলি ছোট বড় দাঁত। ওর রাবার
টিউবের মতো মাথাটা সামনে পেছনে নড়ছে। ও প্রথমে ম্যাগি, তারপর পার্ল, তারপর একে একে
অন্যদের মাথায় ওর ভয়াল মুখটা লাগিয়ে গড়গড়া করার মতো শব্দ করে সব শুষে নিতে
লাগলো।

যখন ওরা একে একে মাটি নিচ্ছিল, ওদের দেখতে ঠিক এক একটা প্লাস্টিকের ব্যাগের মতো
দেখাচ্ছিল – নোংরা, ব্যাবহৃত আর নিজেদের ভেতরে কুঁ চকে যাওয়া !

ব্রিক এখনও নড়ছে না, সত্যি কথা বলতে কি ও নড়তে পারছে না ! ও ঠিক পাপেটের মতো
দাঁড়িয়ে রইলো, যার সূতা কিনা অন্য কারো হাতে। ও যখন বিল উইচেকের দিকে এগোল , তখন
ও আর দেখতে মিজের মতো নেই, কাঁকড়ার মতো পা, টিউবের মতো গলা বিশিষ্ট একটা কিম্ভূ ত
জন্তুতে পরিণত হয়েছে ওটা, কোল্ড ড্রিংকসের বোতল থেকে স্ট্র দিয়ে পান করার মতোই বিল
উইচেকের জীবন শুষে নিলো মাথার দিক থেকেই ............
201

জুকবক্সে তখন বাজছিল ‘দি ওয়ার্ম রেড’ --- আরনেস্ত ট্যাব এর, আর ব্রিক ফোঁপাতে শুরু
করলো তখন।

অধ্যায় ৫২
ট্রিক্সি যথেষ্টই উত্তেজিত। ওর পেশীগুলি টানটান হয়ে আছে আর ও লাফ দেয়ার জন্য তৈরি । ও
ক্লাউনের গন্ধ পেয়েছে আর ও তাদের মৃত দেখতে চায় ! “আস্তে , বাছা ” বলল ক্লেগ, এটা
কু কু রটাকে একটু শান্ত করলেও, ট্যাক্সি-এ–গো-গো ‘র ভেতরে যাওয়ামাত্র ও প্রচণ্ড গড়গড়
করতে লাগলো। বাতাসে পচা খড়ের ওপর পশুর প্রস্রাবের মতো বোঁটকা গন্ধ ভেসে আছে, এটা
ও যা শিকার করতে চলেছে , তার উপস্থিতির পরিষ্কার লক্ষণ। ও স্টান যা যা দেখেছিলো তার
সবই দেখতে পেলো, হলওয়ের রক্ত, কালো পায়ের ছাপ আর ওভার সাইজ জুতার ছাপ।

ট্রিক্সি এই বিকট গন্ধের মধ্যে প্রায় পাগলের মতো হয়ে গেলো, ক্লেগ ওকে শান্তিতে গন্ধ শুঁকতে
দিলো, কারণ এগুলি থেকেই ও পরে ক্লাউনটার হদিস বের করবে। ঠিক তাই, একটু পরেই
রটওয়েলার তার প্রভু কে নিয়ে গেলো সেলারের দরজার সামনে।

ক্লেগ আস্তে করে ভেতরে ঢু কে লাইট বাল্বটা জ্বাললো , খুব অল্প অন্ধকারই এতে দূর হলো, ক্লেগ
তাকাল ট্রিক্সির দিকে, কু কু রটা প্রভু র দিকে তাকিয়ে আছে আদেশের অপেক্ষায় “ঠিক আছে, বুড়ি!
আস্তে যা, আর ধর ওটাকে !”

গন্ধ শুঁকে শুঁকে ওরা সেই ইটের দেয়ালের কাছে চলে এলো, তারপর মোড় ঘুরেই স্টান যেরকম
দেখেছিল, একইভাবে ক্লাউনটাকে ওর ‘বাসা’ র ওপর শুয়ে থাকতে দেখলো। পুরোটাই ভিজে
আছে রক্তে।

“পেছনে আয় !” বলল ক্লেগ, বাধ্য মেয়ের মতো ওর পেছনে আশ্রয় নিলো ট্রিক্সি , তারপর ক্লেগ
ওর নিজের বানানো অস্ত্রটা তাক করলো ক্লাউনের ‘বাসা’ র দিকে। হলদে কমলা রঙের আগুন
202

ঢেকে দিলো ক্লাউনের ‘বাসা’ , গন্ধ যা বেরোল তা ভয়াবহ। ট্রিক্সি উত্তেজিত ভাবে ঘেউ ঘেউ
করেই যাচ্ছে।

একটা ক্লাউন দাঁড়িয়ে আছে ওদের সামনে, ক্লেগ ওর চিরকালের শত্রুর দিকে তাকিয়ে রইলো
অপলকে। এটা কালো, ভেলভেটের স্যুট পরে আছে, সবুজ চু ল, মরার মতো সাদা মুখ, চোখগুলি
বরাবরের মতোই বীভৎস ! রক্তলাল চোখে ক্লেগের দিকে তাকালো ওটা, ওখান থেকে গড়িয়ে
পড়ছে তাজা রক্ত। ঠোঁটগুলি পেছনে সরে গিয়ে বেরিয়ে পড়লো হলুদ বীভৎস দাঁত, মুখ বিকট হাঁ
করে খেদোন্মত্ত স্বরে বিকট কানে তালা দেয়া শব্দে চিৎকার করে উঠলো বীভৎস শয়তানটা।

ক্লেগ ট্রিগার থেকে আঙ্গুল সরালো না, ফ্লেম থ্রোয়ার থেকে কমলা হলুদ শিখা বের করে ক্লাউনটাকে
আগুনের চাদরে ঢেকে দিলো সম্পূর্ণ। ওটা আগুনের বিরুদ্ধে লড়ার প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে, ধোঁয়া
বেরোচ্ছে ওটার গা থেকে।

এবার ! এবার ওটার স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করতেই হবে, মনের ভেতর থেকে একটা স্বর বলে উঠলো
ক্লেগের।

স্বরটা ভু ল বলেনি, ক্লাউনের আবরণটা স্রেফ দুই ভাগ হয়ে গেলো, ধোঁয়াতে ঢেকে গেলো চারপাশ।
যেটা রয়ে গেলো , সেটা অপ্রাকৃ ত আর মনে হল যেন অন্য গ্রহ থেকে আসা কোনকিছু । কাঁকড়ার
মতো পায়ের ওপর ধূসর রঙের মোচড় খাওয়া নুড়ি পাথরের মতো কিছু একটা, এটার দৃশ্যমান
শিরদাঁড়া আছে একটা, যেটার শেষ মাথাতে একটা আছড়াতে থাকা লেজ দেখা গেলো। পুরো
অবয়বটা ধোঁয়ায় ঢাকা আর বাজেভাবে আহত হয়েছে, হিস হিস করছে ক্রমাগত, একটা হাড়ের
জালের বুনুনির মতো বেরিয়ে এলো পেছন থেকে , যেটা হয়তো এক সময় ডানা ছিল।

“তোমার আর কোথাও যাওয়া হবে না ” ঠাণ্ডা গলায় বললো ক্লেগ।

জন্তুটা ওর দিকে আট দশটা চোখ নিয়ে তাকিয়ে রইলো, ছোট একটা শুঁড় আছে সামনে ওটার,
সেগুলো থেকে আবার তারের মতো বেরিয়েছে কর্ষিকা।

ক্লেগ আবারো ফ্লেম থ্রোয়ার এর ট্রিগার চাপলো, আবার, আবার , আবার।

দানবটা হিস হিস করতে করতে একসময় মেঝেতে পরে গেলো, তারপর ধীরে ধীরে পরিণত হলো
সবুজ রঙের ছাইয়ে।
203

সেলারে ইতিমধ্যে অনেকখানি ধোঁয়া জমা হয়েছিলো, ক্লেগ জীবটার পোড়া ছাইয়ের দিকে একদৃষ্টে
কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো, যখন সে পুরোপুরি শিওর হলো দানবটা শেষ হয়ে গেছে, কেবল তখনই
ট্রিক্সিকে নিয়ে ওপরে উঠে আসতে আসতে সে বলল “একটা গেলো, রইলো বাকি কয়, একমাত্র
ঈশ্বর জানেন !”

কোন এক অদ্ভু ত কারণে, মিজ ব্রিকের সাথে কিছুই করলো না, অনেকগুলি কাঁকড়ার মতো পা
নিয়ে সরসর করে ওটা পুল টেবিল গুলির দিকে চলে গেলো। ব্রিক সভয়ে ওটার ফেরার অপেক্ষা
করতে লাগলো, কিন্তু ওটা আর ফিরে এলো না।

আরও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর, ব্রিক নড়ে উঠলো, কিন্তু ওর মনে হচ্ছে ওকে অন্য কেউ
চালাচ্ছে ! জোর করে দাড় করিয়ে রাখা একটা পুতু লের মতো স্খলিত পায়ে ও হেঁটে যেতে লাগলো
ব্যাক রুমের দিকে।

না না না , প্লিজ ডিয়ার গড ! না ! ওর মাথার ভেতর ওর নিজের কণ্ঠ গুমড়ে উঠলো, আমাকে


যেতে দাও , প্লিজ আমাকে যেতে দাও।

সেই অদৃশ্য শক্তি ওকে বয়ে নিয়ে যেতে লাগলো পাবের পেছনের ঘরের দিকে, সেখান থেকে
সেলারে।

একটা জঘন্য পচা গন্ধ ‘ভক’ করে ধাক্কা মারলো নাকে, ওর হার্ট পাগলা ঘোড়ার মতো লাফাতে
লাগলো ভয়ে, আর ভয়ের ঘাম বের হয়ে এলো ওর সারা শরীর থেকে।

নীচে নেমে লাইট জ্বালাল সে, ওটা জ্বলে উঠেই ‘ফট’ করে নিভে গেলো, কিন্তু এর মধ্যেই যা
দেখার দেখে নিয়েছে ব্রিক। ওখানে সারি সারি ঝু লে আছে লণ্ড্রী ব্যাগের মতো দেখতে কালো
পিচ্ছিল ঝোলার মত জিনিস।

আর তার পাশেই কাপড় শুকাতে দেয়ার দড়ির মতো একটা দড়ির মাথায় সারি সারি ঝু লে আছে
.........

ক্লাউন কস্টিউম !!
204

ওগুলি সম্পূর্ণ এক একটা ক্লাউন,আপাদমস্তক, ক্লাউনের মুখোশ থেকে নিয়ে ওভার সাইজড
জুতো পর্যন্ত । চোখের গর্ত গুলি অন্ধকার আর খালি, ওদের মুখের মতোই। ওগুলি নরম, অনড়
আর অপেক্ষা করছে কেউ ওগুলিকে আহ্বান করার জন্য – ওরা অপেক্ষা করছে জীবনের !

একটা অতলস্পর্শী ভয় আচ্ছন্ন করে ফেলছে ব্রিককে, ওর মনে হচ্ছে একটা দুঃস্বপ্ন দেখছে সে,
এরকম প্রচণ্ড ভয় আর ও পায়নি ওর জীবনে !

ও দেখতে পেলো ওর উপস্থিতি ক্লাউন কস্টিউমগুলির মধ্যে কেমন যেন একটা উত্তেজনা এনে
দিয়েছে, হিস হিস শব্দ করছে, ঠিক যেন কেউ নিঃশ্বাস ফেলছে।

এখন প্লপ, হিস আর নানারকম ঝনঝনানির শব্দে ভরে গেলো চারপাশ, ও একটু পরই বুঝতে
পারলো শব্দগুলো কোথা থেকে আসছে, ক্লাউন কস্টিউমগুলি একটিভেট হয়ে গেছে ! একটা
ভয়ঙ্কর মুখ ওর দিকে তাকাল ওপর থেকে ওটার কালো, ক্যান্সারে খাওয়া চেহারা নিয়ে !
আশেপাশের আরও অনেকগুলি ক্লাউন এবার ওদের কালো পিচ্ছিল মুখ, পিচু টি ভরা বিভিন্ন
রঙের চোখ, ধ্বসে যাওয়া চেহারা আর মুখভর্তি কালো কালো দাঁত নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে
বিশ্রীভাবে হাসলো !

ওরা সবাই একসাথে জীবিত হয়ে গেছে !

ও এটার ভয়ই পাচ্ছিলো এতক্ষণ, ঠিক যেন ডজনকে ডজন সাপের ডিম ফু টে বাচ্চা বেরোতে
দেখছে সে !

ভেতরে ভেতরে আতংকে চিৎকার করছিলো ব্রিক, কিন্তু নিরুপায় হয়ে দেখতে লাগলো আস্তে
আস্তে ক্লাউন গুলি হুক থেকে নেমে ওকে ঘিরে দাঁড়ালো। ওর ফোঁপানি গোঙানিতে পরিণত হলো
যখন ক্লাউনগুলির দাঁত ওর শরীরে বসে যেতে লাগলো।

এটা হুইসল স্টপের ‘লাস্ট ল্যাপ’, এরপর এটার লাইট চিরতরেই নিভে যাবে !

অধ্যায় ৫৩
205

দশ মিনিটের মধ্যে, টিগের যা যা জানা প্রয়োজন, তা সে জেনে ফেললো, পিনাট যখন ওকে বনি
আর স্কাঙ্কের মধ্যেকার ব্যাপারটা বললো, ও নিজের মধ্যে একটা অন্ধ রাগ পাকিয়ে ওঠা টের
পেলো, ওর মনে হলো এখনই পিস্তলের বাঁট দিয়ে বাড়ি মেরে স্কাঙ্কের মাথা ফাটিয়ে দেয়।

“এটা আমারই ভু ল” ওর গায়ের তু ষার গলে যেতে যেতে বললো সে “আমি অফিসিয়ালি এর
জন্য ক্ষমা চাচ্ছি, বনি। তোমার নিরাপত্তার বিষয়টা আমি গুরুত্ব দেইনি বলে সরি, এই ব্যাপারটা
মিটে গেলে ওর বিরুদ্ধে আমি এটেম্পটেড রেপের চার্জ আনবো । ”

স্টানের সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং লাগলো ক্লাইডের আচরণ, ও সরু চোখে তাকিয়ে ছিলো স্কাঙ্কের দিকে,
আর সেই দৃষ্টির সামনে স্কাঙ্ক যেন কুঁ কড়ে যাচ্ছিলো । ক্লাইড নাথানের কানে কানে কি একটা বললো
, এরপর দুজনেই ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকাল স্কাঙ্কের দিকে !

পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়াত সেটা বলা মুশকিল , কিন্তু সেই সময় দরজা খুলে ভেতরে এলো ক্লেগ,
সাথে একটা ভয়ংকর দেখতে রটওয়েলার। ঠিক একটা মুভির মতোই সবাই জায়াগায় জমে
গেলো, সবাই যেন ভু লে গেলো এরপর কি করতে হবে, তারপর ক্লেগের দিকে তাকিয়ে রইলো বিভ্রান্ত
দৃষ্টিতে। ক্লেগকে ওর লং কোট আর ফ্ল্যাট বিমের হ্যাটে ওয়েস্টার্ন বাউন্টি হান্টারের মতো
লাগছিলো, যেটা অবশ্য খুবই সত্যের কাছাকাছি।

“গুড ইভনিং” সে বলল সবাইকে।

সবার আগে ভাষা ফিরে পেল টিগ “আমার সহকর্মীনি কোথায় ? প্যাটি কোথায় ? ”

ক্লেগ শান্তভাবে একটা সিগারেট বের করে ধরালো , ওর কু কু র নিচু স্বরে গড়গড় করে উঠলো, হয়
ও প্রভু কে রক্ষা করার জন্য ডাকটা দিয়েছে, অথবা এই রুমে থাকা কাউকে ওর পছন্দ হচ্ছে না !

“ও যখন আমাকে বের করে দিয়েছিলো, ও ঠিকই ছিল ” বলল ক্লেগ “আমি ওকে বলেছিলাম
ঘরে গিয়ে নিজেকে বন্দী করে রাখতে ।”

টিগ ওর শটগানটা শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বলল “ওর যদি কিছু হয়.........”

ওকে বাঁধা দিলো ক্লেগ “ওর কিছু হলে সেখানে আমার কোন হাত নেই, শেরিফ, আর এখানে আমি
মানুষ খুন করে বেড়াচ্ছি না, আমার মনে হয় অন্য কারো চাইতে সেটা তু মি সবচেয়ে ভালো জানো
206

! আর প্যাটিই আমাকে দয়া করে বাইরে আসতে দিয়েছে যাতে আমি ওই ক্লাউনদের বারোটা
বাজাতে পারি ! তো, আমি ওর ক্ষতি কেন করতে যাবো ? ”

স্টান অনেক আগেই ক্যামেরা বের করে ভিডিও করতে শুরু করতে দিয়েছে, এটা মিস করা যাচ্ছে
না আর !

পিনাট সংক্ষেপে বাকিদেরকে ক্লেগের ব্যাপারে জানালো।

ক্লাইড ব্যাঙ্গ করে বলে উঠলো “তো তু মি এখানে আমাদেরকে রক্ষা করতে এসেছ ? কি সৌভাগ্য
আমাদের !”

ক্লেগ এই কথার জবাব না দিয়ে ক্লাইডদের কোটির দিকে তাকাল, ওগুলির গায়ে আঁকা অর্ধেক খুলি
আর নীচে আড়াআড়ি করে আঁকা দুটো ছুরি, তার নীচে লেখা ডেড স্কালস এম সি । ওটাই ওদের
হয়ে সব জবাব দিয়ে দিলো।

“ওর পেছনে একটা ফ্লেমথ্রোয়ার বাঁধা ” পিনাট বলল।

এর সাথে ক্লেগের সাথে বেল্ট হোলস্টারে আছে একটা ক্রোম প্লেটেড পয়েন্ট ৪৪ ম্যাগনাম আর বাম
হাতে একটা রেমিংটন শটগান , ভাল্লুক মারা আমিউনিশন লোড করা । স্টান এখনও সব রেকর্ড
করে যাচ্ছে, ও কৌতূ হলী এরপর কি ঘটবে সেটা ভেবে।

অবশেষে টিগ বললো “আমার মনে হয়, তোমাকে অস্ত্রপাতি ফেলে দিতে বলে কোন লাভ হবে না,
হবে কি ?”

“ঠিক, আর ওটা করারও কোন প্রয়োজন নেই, কারণ আমি তু মি বা অন্য যে কোন মানবসন্তানের
জন্য কোন ভয়ের কারণ নই !”

ক্লাইড, যে শুধুই ক্লাইড , ওর শটগান উঁচিয়ে ধরে বললো “আমার মনে হয় তু মি এমনকি নড়ে
ওঠারও আগে তোমাকে উড়িয়ে দিতে পারবো । ”

“বন্দুক নীচে, ক্লাইড ” গরগর করে উঠলো টিগ।

“সেটা ঠিকই আছে, বন্ধু ! কিন্তু তু মি একটা জিনিস ভু লে যাচ্ছো ।”


207

“কি সেটা ?”

খুব ধীরে ধীরে, ক্লেগ ওর ফার লাইনিং দেয়া কোটটা খুললো , আগে ওর হিপে ঝোলানো
রিভলবারটা কেবল দেখা যাচ্ছিলো । এবার ওর কোটের ভেতরে একটা লুকানো ভেস্টের ভেতরে
এক রকমের হলুদ পদার্থ ছয় সারি করে বাঁধা দেখা গেলো, ওগুলি তার দিয়ে পরস্পরের সাথে
আটকানো আর জোড়া লাগানো।

“ও টেররিষ্টদের মতো এক্সপ্লোসিভ ভেস্ট পড়ে এসেছে ! ” পিনাট ভীত স্বরে বললো ,

“আর ওটা আমার কব্জির সাথে কানেক্টেড, আমি বোতামে চাপ দিলেই এখানে যা আছে সব উড়ে
যাবে। ” ব্যাখ্যা করলো ক্লেগ।

“ওগুলো কি ?”

“সেমটেক্স” খুব শান্ত গলায় বললো ক্লাইড , যেন ও খুব ভালো করেই জানে ওগুলো কি “এক
ধরণের প্লাস্টিক এক্সপ্লোসিভ। ” বলেই অস্ত্র নামিয়ে এক পা পিছিয়ে গেলো।

“তাহলে আমাদের কাছে তু মি কি চাও ?” বললো টিগ “ক্লাউনরা তো বাইরে !”

ক্লেগ এবার নিষ্ঠু র একটা হাসি দিলো “দুর্ভাগ্যবশত, ওটা সত্যি না। আমার কু কু র আমাকে এখানে
নিয়ে এসেছে কারণ ক্লাউন তোমাদের মাঝেও আছে ! তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ আর আগের
মতো নেই, এখন আমরা খুঁজে বের করবো , কে আসলে কে !!”

ও ওর ফ্লেমথ্রোয়ারের মাজল উঁচিয়ে ধরলো , আর বাকিরা একে অপরের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে
তাকাতে তাকাতে পরস্পরের থেকে আরেকটু দূরে সরে দাঁড়ালো।

“কেউ রুম ছেড়ে যাবে না !” বললো ক্লেগ , ওর চেহারা দেখে বোঝা গেলো ও ডেড সিরিয়াস
“অন্তত আমি ক্লাউনটাকে খুঁজে বের করার আগে না !”

বারের ভেতর কিছু একটা বদলে গেছে, পরিবেশটা অনেক ভারী, ভয়াবহ আর সন্দেহাকু ল হয়ে
উঠছে। স্কাঙ্ক বা ক্লেগ এখানে আর শত্রু নেই, পুরো ব্যাপারটাতে সবার প্রায় মাথা খারাপের দশা
হলো। রটওয়েলারটা ওদের দিকে নিষ্করুণ , খুনে দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
208

ক্লেগ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো “আমি চাই আপনারা আমার কু কু র ট্রিক্সির সাথে
পরিচিত হোন, ও ১০০% একটি ক্লাউন হান্টার । কোন ক্লাউন যদি কাছাকাছি এসেই পড়ে, ও এক
লহমায় ধরে ফেলবে !”

“এরকম ভীষণ একটা কু কু রের জন্য ট্রিক্সি একটা পাগলামো নাম !” বলে উঠলো স্টান।

কু কু রটা ইস্পাতের মতো দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো একবার, এই চোঙা হাতে লোকটাকে ওর
পছন্দ হচ্ছে না !

“তু মি তোমার ক্যামেরাটা ডাস্টবিনে ফেলে দিচ্ছো না কেন ?” ক্লাইড বিরক্ত সুরে বললো।

“কারণ যা ঘটছে সবই আমি ক্যামেরায় ধরে রাখতে চাই, এটা না করলে পরে আমাদের কথা আর
কেউ বিশ্বাস করবে না , ঠিক না, শেরিফ ?”

টিগ কাঁধ ঝাঁকালো “আমার কিছু এসে যায় না ! শুধু আমি দৌড়ানোর সময় আমার পথে পোড়ো
না ! ”

ক্লেগ ওর মুখ থেকে সিগারেট সরিয়ে বললো “এখন আমরা যেটা করবো এটা বেশ নোংরা হয়ে
উঠতে পারে, আমি নিশ্চিত করতে পারি এটা তাই হবে, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আর কোন উপায়
নেই। ক্লাউন হত্যা করা প্রায় সময় একটা কঠিন কাজ !”

“তো, তু মি তাহলে নির্দোষ মানুষজন হত্যা করতে শুরু করবে, যেহেতু একটা কু কু র বলবে যে ওরা
ক্লাউন ? ” জিজ্ঞেস করলো বনি।

“না, নির্দোষ মানুষ হত্যা করার আমার কোন ইচ্ছা নেই, ট্রিক্সি কখনোই ভু ল করে না, ও এমনকি
এমন কিছুর গন্ধ পায় যেগুলি আছে বলে এমনকি আমরা কল্পনাও করতে পারিনা ! আমরা সাদা
চোখে ক্লাউনদের থেকে সাধারণ মানুষকে আলাদা করতে পারি না। এই তোমার কথাই ধরা যাক,
আমি কিভাবে জানি তু মি একটা ক্লাউন না ? ”

“কারণ এটা আমি না !”


209

“ওয়েল, এটা তোমার কথা, কিন্তু সত্যিটা হলো, ওদের পরস্পরের মধ্যে আদান প্রদান করা
সিগন্যালের শিকার হতে পারো, অথবা তু মি একা থাকার সময় ওদের কেউ তোমাকে আক্রমণ
করেও থাকতে পারে ! ”

“এটা বুলশিট !” বলে উঠলো পিনট।

কিন্তু অন্য কেউ সেটা মনে করলো না, ওরা নীরবে ক্লেগের কাজ দেখে যাচ্ছিলো।

“আমি কখনও একা ছিলাম না” বললো বনি।

“অবশ্যই ছিলে” শয়তানী হাসি দিয়ে বললো স্কাঙ্ক “তু মি বেশ কয়েকবার কিচেনে, বাথরুমে আর
পাশের ঘরে গিয়েছিলে, আমি লক্ষ্য রেখেছিলাম আর সতর্ক ও ছিলাম !”

“তু মি বাথরুমে একা গিয়েছিলে ? ওয়েল ,সেক্ষেত্রে ওই ক্লাউনদের একটা সহজেই তোমার ভেতরে
ঢু কে গিয়ে থাকতে পারে, আর সেভাবেই সে হয়তো আমাদের সাথে কথা চালিয়ে যাচ্ছে!”

বনি এবার ভয় পেয়ে গিয়ে বাকি সবার দিকে তাকাতে লাগলো, কিন্তু কেউ নড়লো না !

“আমার মনে হয় ব্যাপারটা একটু ধীরে করা উচিত !” সাবধানে বললো নাথান, একটা হাত তু লে
বললো “সবাই একসাথে পাগল হয়ে গিয়ে লাভ নেই !”

অধ্যায় ৫৪
প্রথম দুয়েক সেকেন্ড কেউ নড়লো না, সবাই নীরবে বাইরে তু ষার ঝড়ের গর্জ ন শুনতে লাগলো।
একটা লুজ বোর্ড কোথাও ক্রমাগত ক্যাঁচ কোঁচ করে শব্দ করেই যাচ্ছে, পরিষ্কার শোনা যাচ্ছে।

স্কাঙ্কের চেহারা দেখে বোঝা গেলো , ও বেশ মজা পেয়ে গেছে এসবে “না, মিস্টার ক্লেগ, আমার
মনে হয় আপনি ঠিকই আছেন ! বনি ওদের একজন হতেই পারে , বাই দ্য ওয়ে, আমিও কয়েকবার
হিসি করতে গিয়েছিলাম, আমাকেও বাদ দেবেন না যেন ! ”
210

“তাহলে আমার মনে হয় তোমাকে এখানেই খতম করে দেয়া দরকার” গম্ভীরভাবে বললো নাথান,
ওর বন্দুক স্কাঙ্কের দিকে তাক করতে করতে “এটা আমার পরের কাজগুলো থেকে আমাকে
বাঁচিয়ে দেবে !”

স্কাঙ্ক মুখ বাঁকা করে হাসলো “আর আমি যদি সত্যিই ক্লাউন হই, এটাই তোমার জীবনের শেষ ভু ল
হবে ! তু মি আমার সাথে না ,বরং পিনাটের সাথে ছিলে, ঈশ্বর জানেন ওখানে কি হয়েছে !”

“তোমার বালের মুখ বন্ধ করো ” বললো নাথান।

“তোমরা কি সবসময় একসাথে ছিলে, নাকি কিছুক্ষণের জন্য হলেও আলাদা হয়েছিলে ?”

পিনাট যন্ত্রণার ভঙ্গি করে বললো “টনি এক পর্যায়ে বমি করার জন্য লাফিয়ে গাড়ি থেকে নেমে
ছুটতে শুরু করেছিলো, আর আমরা ওর পিছু নেই। বেশ কিছু সময়ের জন্য আমরা আলাদা হয়ে
যাই, তারপর আমি একটা ক্লাউন দেখতে পাই, যেটাকে নাথান খুন করে। ও যদি ক্লাউন হবে তাহলে
ও আরেকটা ক্লাউনকে খুন করবে কেন ? ”

“এটা পুরো বোঝা গেলো না !” বলে উঠলো বনি ।

নাথান ওর দিকে রুষ্টভাবে তাকালো , আরে ! এই মেয়েটাকে তো স্কাঙ্কের হাতেই ছেড়ে দিলে ভালো
হতো ।

“এটা পুরাই ভু য়া !” বলে নাথানের কাছে এসে দাঁড়ালো পিনাট, যেন ওরা বহুদিনের পুরানো বন্ধু !
“যখন আমি ওই ক্লাউনটাকে গুলি করেছিলাম, ওটা দেখতে তোমার মতোই দেখাচ্ছিলো , বনি !
আমি ভেবেছিলাম আমি তোমাকে মেরে ফেলেছি , কিন্তু ওটা তোমার রূপ নিতে গেলো কেন ?”

“আমি কিভাবে জানি ?” ঝাঁজিয়ে উঠলো বনি, স্পষ্টতই উত্তেজিত।

“শান্ত হও ” টিগ গলা তু লে বললো , ক্লাইড মাথা নাড়তে লাগলো “এটা আমার মাথার এয়সি কি
তেয়সি করে দিচ্ছে, কিছুই বুঝছি না ! ”

অনিশ্চয়তা আর ভয় রুমের মাঝে আরও আরও বেশি করে ছড়িয়ে পড়ছে, এমনকি ভাইয়ের
মতো যে ক্লাব মেম্বার ক্লাইড আর নাথান, ওরাও অজ্ঞাতভাবে পরস্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে আস্তে
আস্তে !
211

স্টান পুরো ব্যাপারটা এখনও কামেরাতে বন্দী করে চলেছে , ওরও মনের ভেতর ভয় বেড়ে চলেছে,
ওর হার্ট পাগলা ঘোড়ার মতো চলতে লেগেছে, অন্যদের মতোই ও – ও এখান থেকে পালিয়ে
যেতে পারলে বাঁচে ! এই রুমের সবাই মনে হয় ক্লাউন, আমি ছাড়া , সে ভাবছিলো।

ক্লাইড পুরো ব্যাপারটাতে প্রচণ্ড বিরক্ত, সে জিজ্ঞেস করলো “এই সিগন্যাল, এটা কিভাবে কাজ
করে ?”

“এভাবেই ওরা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গাতে যায়” ব্যাখ্যা করলো ক্লেগ।

“ওরা ফ্লেয়ার জাতীয় কিছু ব্যাবহার করে, তু মি বলতে চাচ্ছ ?”

“হুম্মম, তু মি এটা বলতে পারো !”

“এটা পুরাই ফালতু ! ওরা এখানে কিভাবে এসেছে বলে মনে করো, বাসে করে ?”

ক্লাইডের নিজেকে সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন লাগছে , কিন্তু ও নিজের রাগ নিজের মধ্যেই রাখলো
কারণ ও বুঝতে পেরেছে ক্লেগও ওর নিজের মতোই কঠিন বান্দা। উপরন্তু ও আবার এক্সপ্লোসিভ
ভেস্ট পরে বসে আছে !

“তাহলে ওরা রেডিও ওয়েভ ব্যবহার করে ট্রান্সমিট করছে ?” জিজ্ঞেস করলো টিগ।

ক্লেগ ওর কাঁধ ঝাঁকালো “পুরোপুরি না , আমি ১০০ % শিওর না আসলে কিভাবে ওরা এটা করে,
বা কোন ধরণের শক্তি এখানে কাজ করে। কিন্তু আমি জানি ওরা এমন একটা জায়গা ব্যবহার করে
যেখানে সুইটেবল অবকাঠামো আছে আগে থেকেই......... যেমন ট্রান্সমিশন মাস্ট, স্যাটেলাইট
ডিশ, সেলুলার নেটওয়ার্ক আর ইত্যকার জিনিস পত্র । অবশ্যই একটা গ্রহণকারী থাকতে হবে
আর ওরা একটা সবসময় খুঁজে বের করে ! এই শহরের গেটের তিন মাইল আগে একটা রেডিও
টাওয়ার আছে , আমি বাজি ধরে বলতে পারি ওরা ওটা ব্যাবহার করছে ! ”

“ওটা একটা পুরানো ডাব্লিউকেকে ওয়াই ট্রান্সমিশন টাওয়ার ” টিগ জানালো “ওটা বিশ বছর
ধরে অকেজো ।”

“ব্যাপার না, ওরা এরপরও সেন্ড আর রিসিভ করতে পারে !”


212

স্টান যোগ দিলো আলোচনায় “এটা একটা পাগলা আইডিয়া, কিন্তু ওটাকে ডিনামাইট বা ওই
জাতীয় কিছু দিয়ে উড়িয়ে দেয়া যায় না ? ”

ক্লেগ মাথা নাড়লো “লাভ নেই, এখন সিগন্যাল ছড়িয়ে গেছে অনেকদূর, আর অনেকেই আক্রান্ত
হয়ে গেছে, টাওয়ার ধ্বংস করে আর এখন লাভ নেই, আমাদেরকে একটা একটা করে ক্লাউন খুঁজে
বের করতে হবে আর খুন করতে হবে !”

তো, ওরা আবার আগের অবস্থাতেই ফেরত এলো।

ক্লেগ ওদেরকে ব্যাখ্যা করে বোঝাল পুরো ব্যাপারটা –

ওই সিগন্যালটা অন্যান্য শব্দের মতোই বাতাসে ছড়িয়ে যায়, কান সেটা ভেতরে ইয়ার ড্রামে
ঢু কিয়ে নেয়, ভেতরের হাড়ে কম্পন সৃষ্টি হয়, ভেতরের কানের তরলে এটা আলোড়ন সৃষ্টি করে,
ওটা কেমিক্যাল সিগন্যালে রুপান্তরিত হয়ে যায়, নার্ভ গুলি ওটাকে বৈদ্যুতিক শকে পরিণত করে ,
ওখানে গিয়ে ওটা অনূদিত হয়।

সমস্যাটা শুরু হয় তখনই, বৈদ্যুতিক শকগুলি এমনভাবে কোডেড করা থাকে যে ওরা তোমার
নিজের ইচ্ছা আর ব্যাক্তিত্ব বলে আর কিছু অবশিষ্ট রাখবে না , তোমাকে বদলে দিয়ে নিজেদের
একজনে পরিণত করবে !

“কিন্তু ওরা কি আসলে ?” জিজ্ঞেস করলো স্টান ।

ক্লেগ বললো “এক ধরণের জীব ওরা, আমরা এখনও জানিনা ওরা কোত্থেকে এসেছে, কিন্তু ওরা
নিজেদের রেপ্লিকা তৈরি করে যে কোনখানে পাঠাতে পারে !”

স্টানের কাছে পুরো ব্যাপারটা পাগল পাগল লাগছে , যদিও ক্লাইড প্রত্যেকবার ওর দিকে খর
চোখে তাকাচ্ছে যতবারই ও ক্যামেরা তু লে ধরছে ততবার , কিন্তু স্টান জানে, এই ভিডিওটাই
ওদের উইল হতে পারে কোন সময়। আর , কিছু শব্দ বারবার ওর মাথাতে ছুটোছুটি করে যাচ্ছে
ক্রমাগত –

শব্দ, সিগন্যাল-শব্দ এগুলি পরস্পর সম্পর্কি ত।


213

যদি তু মি এটাকে বন্ধ করতে না পারো, ডিস্টার্ব তো করতে পারো ! ও জানেনা সেটা কিভাবে করা
যেতে পারে, কিন্তু ওর মনে হচ্ছে একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস ওর চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে বারবার।

“ওয়েল” বলে উঠলো ক্লেগ “অনেক সময় নষ্ট হয়েছে, এখন সবাই সার দিয়ে দাঁড়িয়ে নিজের
নিজের অস্ত্র নিজের সামনে মাটিতে রাখো, যাতে পরিষ্কার দেখা যায়। ”

“প্রশ্নই আসে না ” বলল ক্লাইড।

“তোমরা সবাই মানুষ, এটা নিশ্চিত হবার পর সবাই সব ফেরত পেয়ে যাবে ।”

“জাস্ট ডু ইট !” টিগ বললো , আসলে, এক্সপ্লোসিভ ভেস্ট পড়া একটা লোকের সাথে তো আর
বাজে তর্ক করা যায় না ।

তো, ওরা নিজের নিজের শটগান ,পিস্তল সামনের মেঝেতে রেখে সার বেঁধে বিষণ্ণ মুখে দাঁড়ালো,
ক্লেগ বললো “ঠিক আছে , দেখা যাক কে আসলে কে !”

অধ্যায় ৫৫
বাহ ! বেশ মজা ! খুবই ফ্যান্টাস্টিক – ভাবছিলো নাথান, ওরা সবাই নার্ভাসভাবে পাশাপাশি
দাঁড়িয়ে আছে, একজন থেকে আরেকজন যথেষ্ট দূরত্ব রেখে, কারণ ওরা সবাই একে অপরকে ভয়
পাচ্ছে ! ও নিজের ভেতরেও কেমন একটা অব্যক্ত ভয় টের পাচ্ছে।

“যখন এগুলি সবকিছু শেষ হয়ে যাবে, ভাই আমার !” বলল ক্লাইড “আমাদেরকে কিছু জিনিস
নিজেদের মধ্যে পরিষ্কার করতে হবে !”

ক্লাবের দ্বিতীয় প্রধান ব্যাক্তি হিসাবে , নাথানকে এ ধরণের কথা প্রায়ই শুনতে হয়, কিন্তু নাথান জানে
, ক্লাবের প্রেসিডেন্টও অন্যান্যদের মতোই প্যারানয়েড হয়ে আছে। অনেকগুলি লড়াই ওরা করেছে
একসাথে, কিন্তু এখন ওই বালের ক্লাউনগুলি এসে পড়েছে মাঝখানে !
214

ক্লেগ আর ট্রিক্সি পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে, কু কু রটার মুখ দিয়ে লালা গড়িয়ে পড়ছে, সাদা শ্বদন্ত বের
করে নিচু স্বরে গরগর করে যাচ্ছে , গাঁট্টাগোঁট্টা শরীরে পেশীগুলি কিলবিল করছে। শান্তভাবে সামনে
দাঁড়ানো সবার দিকে নজর বুলিয়ে , টিগের দিকে একটু এগিয়ে নিচু স্বরে গর্জ ন ছাড়ল একটা !

“একটু দাঁড়াও ” টিগ বললো , তারপরই সব নরক ভেঙ্গে পড়লো !

“বুল শিট !” বললো পিনাট “এটা কোনভাবেই হতে পারেনা যে টিগ একটা ক্লাউন !”

ও লাইন ছেড়ে বেরিয়ে এলে ক্লেগ ওর ফ্লেমথ্রোয়ার ওর দিকে তাক করলো।

“পিনাট, পেছনে এসো !” আদেশ করলো টিগ।

“ওর কথা শুনলেই ভালো করবে , বয় !” কর্ক শভাবে বললো ক্লেগ “নয়তো জ্যান্ত পুড়িয়ে মারবো!”

কিন্তু পিনাট এসব কথা শুনতে পেয়েছে বলে মনে হচ্ছে না ,ওর মনে হচ্ছে ক্লেগের পেটে একটা
বুলেট ঢু কিয়ে দিতে পারলে ভালোই লাগতো। ওর কেমন জানি বমি পাচ্ছে, মনে হচ্ছে ওর ভেতরে
পরজিবী কৃ মির মতো কিছু একটা হামাগুড়ি দিয়ে ঢু কে যাচ্ছে ! ব্রোকেন বটলের পরিবেশে একটা
কালো অপশক্তি ঘুরে বেড়াচ্ছিল, সেটা এখন ওর ভেতরে চলে এসেছে। হা ঈশ্বর ! ওটা এখন ওর
রক্তে , ওর মজ্জাতে এমনকি ওর কোষে কোষে ছড়িয়ে যাচ্ছে, আর ওগুলি অন্তহীন অন্ধকারে
ছেয়ে ফেলছে।

ক্লেগ আর ওর কু কু র দুয়েক পা পিছিয়ে গেলো ।

“এক মিনিট দাঁড়াও !” ডাকল টিগ।

“পিনাট ? ” নাথান ডাকলো প্রায় ফিসফিস করে।

কিন্তু পিনাট ওর কথা শুনতে পেলো না, আর যদি শুনতেও পেতো, তাহলে ও বুঝতে পারতো
কিনা সন্দেহ। ওর চারপাশে হতে থাকা নানারকম বিকট আওয়াজের মধ্যে তো না-ই ! চিঁ ইইইই করে
প্রায় গর্জ ন করছে চারপাশে, ঠিক একটা গিটারের এমপ্লিফায়ারের ফিডব্যাকের মতো ! আর শব্দটা
ক্রমাগত বেড়েই চলেছে, নড়াচড়া করছে আর সে মরিয়াভাবে চেষ্টা করছে অন্য কোনদিকে শোনার
জন্য। নয়েজটা আক্ষরিক অর্থেই ওর মন টু করো টু করো করে দিতে লাগলো। ওর শরীর ঝাঁকি
215

খেতে লাগলো আর কাঁপতে লাগলো, ওর মনে হতে লাগলো পুরো দুনিয়াটা যেন ওর চারপাশে
ঘুরছে।

অনেএএক দূর থেকে ,কিংবা অনেক কাছে থেকে ও একটা গলা শুনতে পেলো , যেটা হয়ত ওর
নিজেরও হতে পারে “থামো ! থামো !! এই বালের শব্দটা থামাও কেউ ! আমি চিন্তা করতে পারছি
না ! কাননিচটকান্নিকান্নিযযযয !!!”

টিগ সামনে এগিয়ে এসে সজোরে চড় কষালো পিনাটকে, কিন্তু কোন ফল হলোনা ! পিনাট চিৎকার
করেই যেতে লাগলো , ওর কথাগুলি দুর্বোধ্য শোনাল –

ইনেইনেমহাউসিম্ব্রানেইনিররেররতওলাছলাছাল্লদিএররেন্রেস !!!

টিগ ওকে চড় মেরেই যেতে লাগলো, যতটা না ভয় বা আতঙ্ক থেকে, তার চাইতে বেশী যেন রাগ
থেকে ! পিনাটের শরীরটা খিঁচু নি দিতে লাগলো, ওর অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি মোচড় খেতে লাগলো , ও
ঘোরা শুরু করলো জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে , মাথাটা সামনে পেছনে দুলছে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে
ও ক্রমাগত ইলেকট্রিক শক খেয়ে চলেছে একটার পর একটা।

তারপর ও মেঝেতে পড়ে গেলো হঠাৎ, ওর কাছ থেকে লাফিয়ে সরে গেলো বাকিরা, হাঁটু গেড়ে
বসে রইলো পিনাট, একটু পরপরই ভয়ানক খিঁচু নি দিয়ে যাচ্ছে ওর শরীর আর বমি করছে ছেলেটা
!

“পিনাট !” জিজ্ঞেস করলো টিগ ভয়ার্ত স্বরে “ঈশ্বরের দোহাই ! কি হয়েছে তোমার !”

টিগ না জানলেও বাকিরা সবাই জেনে গেছে এতক্ষণে ।

“ক্লাউন !” চিল্লালো কার্প “একটা বালের ক্লাউন !!”

পিনাট একটা গভীর , কদর্য, খিস খিস হাসি দিলো ! আস্তে করে ওর মাথা তু লে তাকালো । ও
আর পিনাট নেই, ‘দ্য সিগন্যাল’ তার অনিষ্ট করে সেরেছে আর ওকে পাল্টে দিয়েছে। ও আর
আগের সেই গিটার বাজানো পিনাট নেই যে কিনা একটা মাছিও মারতে পারতো না –

“পিইইইইহহনাআআআআআআহহহহহটটট ! ” দাঁড়কাকের মতো কর্ক শ, শুকনো কণ্ঠে সে


বললো, মনে হলো ওর ফু সফু স থেকে ধুলো বেরিয়ে আসছে।
216

টিগ পেছনে হোঁচট খেলো একটা, ভয় আর আতংকে বিবশ হয়ে গেছে , ওর কণ্ঠটাই যথেষ্ট
ভয়াবহ, কিন্তু ওর চেহারাটা ---- ওটা পুরো পাল্টে গেছে ! ওটা কাগজের মতো সাদা হয়ে গেছে,
নাকটা কোন বুড়ি ডাইনির মতো বাঁকা , আর মুখটা মুঠি সমান কালো ওভাল আকৃ তির , ওর
কালো কু চকু চে চোখের ভেতরে লাল রঙের দুটো চোখের মণি ক্রমাগত ঘুরে চলেছে, একটা ঘড়ির
কাঁটার দিকে , আরেকটা বিপরীত দিকে !

ই ই ই ই করে চিৎকার করতে করতে মাথা থেকে চু ল ছিঁ ড়তে লাগলো সাদা হয়ে যাওয়া নখ দিয়ে,
সামান্য কয়েকটা চু ল রয়ে গেলো মাথাতে। তারপর বড় হয়ে যাওয়া নখগুলো দিয়ে নিজের চেহারা
ক্ষতবিক্ষত করতে লাগলো যতক্ষণ না রক্ত বেরিয়ে ওর চিবুকে এসে না ঠেকল !

টিগ বিলাপ করে উঠলো “ঈশ্বরের দোহাই, পিনাট, তু মিই কেন ! এতো লোক থাকতে তু মিই কেন!”

ক্লাউনরুপী পিনাট বিরাট এক হাঁ করলো , মুখ ভর্তি রুপালি সূচ নিয়ে জন্তুর মতো বিকট এক
গর্জ ন ছাড়ল সে। এতই জোরে যে বিয়ারের গ্লাসগুলি রিনরিন করে শব্দ করে উঠলো।

ট্রিক্সি পাগলের মতো ঘেউ ঘেউ করছে আর ক্লাউনে পাল্টে যাওয়া পিনাটের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়তে
চাইছে। ক্লেগ ওটাকে পিছিয়ে নিয়ে গেলো কিন্তু ক্লাউনটা কু কু রটার দিকে এক পা এগোল ! ওটাকে
এক সময় হয়তো পিনাট বলা যেতো, কিন্তু এখন আর সেটা বলা যায় না। আবার যাকে ক্লাউন বলে,
ওকে সেটাও বলা যাচ্ছে না ! এটা স্রেফ একটা মরার মতো সাদা বিকট আর বিশাল থলথলে
একটা আকৃ তি যেটা পিনাটের ইউনিফর্মের ভেতর থেকে ঠিক একটা টু থপেস্টের টিউব থেকে বের
হওয়া পেস্টের মতো বের হয়ে আছে ! ওর চোখগুলি বিশাল, কাঁচের মতো আর বেগুনি রঙের।
মুখটা স্রেফ একটা পুডিঙের মতো আর সেখানে বিভিন্ন রঙের শিরা উপশিরা বেড়ে উঠেছে,
আঙ্গুলগুলি সূর্যালোকে কিলবিল করতে থাকা একদল কৃ মির মতো নড়ছিল !

ক্লাইড চিৎকার করে উঠলো “পুড়িয়ে কয়লা করে দাও ব্যাটাকে !”

ক্লাউনটা প্রচণ্ড ভাবে হিসসস করে উঠলো যখন ক্লেগ ওর ফ্লেমথ্রোয়ারের আগুনে জিহ্বা দিয়ে
ওকে আঘাত করলো, জ্বলতে থাকা তরল আগুন ওটাকে সম্পূর্ণ ঢেকে ফেললো আর কিছুক্ষণের
মধ্যেই গলতে থাকা রাবার আর প্লাস্টিকের বিকট গন্ধের সাথে গলে গিয়ে কেবল ল্যাদলেদে পোড়া
প্লাস্টিক আর ছাই পড়ে রইলো !
217

স্টান প্রায় ঘুরে পড়ে যাচ্ছিলো , যখন সে দেখতে পেলো এক সময়ের পরিচিত পিনাট চিৎকার
করতে করতে কালো তরল আর ছাইয়ে পরিণত হলো। কামেরাতে পুরো ব্যাপারটা তু লে নিতে
নিতে ও গিয়ে ধাক্কা খেলো টিগের সাথে, টিগ ওকে এক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো কারণ পরিস্থিতির
দ্রুত অবনতি ঘটছে । পুরো বারটা কাঁপতে শুরু করলো, আর বাতিগুলো বন্যভাবে মিটমিট করতে
লাগলো।

প্রথমে চিৎকার শুরু করলো বনি, তারপর ক্লাইড ওর মাথা চেপে ধরে প্রচণ্ড ভাবে ঝাঁকাতে
লাগলো, আর এমনভাবে চিৎকার করতে লাগলো যেন ওর মাথা ফেটে যাচ্ছে। কোন সন্দেহ নেই
সিগন্যালটা ওকেও খুঁজে পেয়েছে আর ওর ভেতরে পিনাটের মতোই ঝড় বয়ে যাচ্ছে ! ও ওর
দাঁতে দাঁত এমনভাবে চেপে ধরলো যে ওর ঠোঁটের কোণা দিয়ে রক্ত গড়িয়ে এলো ! মাথা সামনে
পেছনে প্রচণ্ড ভাবে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে ওর হাড় গুলো ফেটে গেলো, নিয়ন্ত্রণহীনভাবে খিঁচু নি দিতে
লাগলো । মনে হলো ওর শরীরটা কোন শরীর নয়, বরং কোন বহির্জাগতিক কীটের আস্তানায়
পরিণত হয়েছে, যারা একটু পরেই ওর মুখ দিয়ে তাদের গোলাপি শরীর নিয়ে বের হয়ে আসবে। ওর
গায়ের চামড়া বিভিন্ন জায়াগায় ফু লে ফু লে উঠতে লাগলো, ও সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ক্লাউনের
চেহারা নিলো, তারপর একটার পর একটা চেহারা স্লাইড করে করে যেতে লাগলো, চোখ ঠিকরে
বেরিয়ে আসার জোগাড় হলো ওর !

টিগ পিনাটের ফেলে দেয়া নাইন এমএম টা কু ড়িয়ে নিয়ে পুরো মাগাজিনটাই ক্লাইডের পরিবর্তি ত
রূপটার দিকে খালি করে ফেললো। কিছুই হলোনা , কেবল প্রতিটা শটের সাথে সাথে শিউরে
উঠতে থাকলো না-মানুষ-না-ক্লাউন দানবটা ! নাথান, এখনও বোকার মতো ক্লাবের প্রেসিডেন্টের
প্রতি দায়বদ্ধ, টিগের দিকে এগিয়ে বেশ কয়েকটা ঘুষি কষিয়ে দিলো, আরও দিতো যদি না পেছন
থেকে বনি এসে একটা ভদকার বোতল ওর মাথায় না ভাংত ! নাথান জ্ঞান হারালো না বটে, কিন্তু
হাঁটু র ওপর ভর করে পড়ে গেলো।

যখন ব্রোকেন বটল আবার কেঁ পে উঠলো, যেন বিশাল কিছু একটা বিল্ডিংটাতে আঘাত হেনেছে।
স্টান তখনও ভিডিও করে যাচ্ছিলো, এই কম্পনের ফলে হাত থেকে ক্যামেরাটা পড়ে গেলো,
ঝটিতি তু লে নিয়ে আবার ফোকাস করলো স্টান। কিন্তু ও দেখলো , যা দেখলো ...... ও নিজের
চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলো না ---
218

ক্লাইডের ভেতরে যেন জীবন্ত কিছু একটা ঘুরে বেড়াচ্ছে, ও পরিণত হয়েছে আঁকাবাঁকা হয়ে যেতে
থাকা একদলা মাংস পিণ্ড , এদিক ওদিক বেরিয়ে থাকা শুঙ্গ, আর সারা শরীর জুড়ে থাকা চোখের
মতো প্রত্যঙ্গে ! এই জটের মধ্যে হঠাৎ একটা জিনিস উন্মুক্ত হয়ে পড়লো – জিনিসটা অনেক
প্রাচীন, অদ্ভু তভাবে বিকৃ ত, জ্যামিতিকভাবে অসম্ভব একটা আকৃ তি ! ওটাই সম্ভবত ক্লাউনগুলির
আসল আকৃ তি , বৈদ্যুতিক শক্তি বিকিরন করে চলেছে। পর মুহূর্তে ই ওটা ফু লে উঠতে থাকা
মাংসপিণ্ডের আড়ালে ঢাকা পড়ে গেলো।

ক্লেগ সমানে চিৎকার করে যাচ্ছে “সরে যাও, সামনে থেকে সরে যাও ! ” কিন্তু বারের ভেতরে প্রচু র
গোলমাল আর ধোঁয়া আর দেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গে ভর্তি হয়ে আছে। ক্লেগ যেই ট্রিগার টানতে
যাবে, ট্রিক্সি পাগলের মতো ঝাঁপিয়ে পড়লো ক্লাইড থেকে ক্লাউনে পরিণত হওয়া কিম্ভূ তকিমাকার
আধা জন্তুটার দিকে।

একটু পরেই একটা রুদ্ধ আর্ত নাদ বের হলো ট্রিক্সির গলা দিয়ে, কারণ কু কু রটার মনে হলো ও যেন
একটা কারেন্টের লাইন বা একটা আগুনে গনগনে হয়ে থাকা লোহার রডে কামড় দিয়ে বসেছে !
ক্লাউন ফ্লেশ বা ক্লাউনের মাংসে ওটার মুখ পুরো ঝলসে গেছে !

ক্লাউনটা এবার ওটার বেরিয়ে থাকা কর্ষিকা (অক্টোপাসের পায়ের মতো জিনিস) দিয়ে অসহায়
কু কু রটাকে তু লে ধরলো আর ওটাকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যাবহার করে টিগ আর কার্পিকে ঝেড়ে
ফেলে দিলো !

ক্লেগ চিৎকার করে উঠলো যখন সে দেখলো ওর এতোদিনের সঙ্গী ট্রিক্সি ঠিক একটা বেলুনের
মতো ফু লে উঠে আবার ফেটে ছড়িয়ে গেলো চারপাশে, আর ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো একরাশ
কিলবিল করতে থাকা গোলাপি জোঁকের মতো কীট !

ক্লাইড-কাম-ক্লাউন এখন এক অদ্ভু ত রূপ নিয়েছে, এটা মোচড়াতে থাকা একদলা মাংসপিণ্ড থেকে
এখন কঠিন আবরণযুক্ত কাঁকড়ার মতো আকৃ তি ধারণ করেছে, পেছন দিয়ে বেরিয়ে আছে শিং
আকৃ তির মেরুদণ্ড। ওটার কঠিন শেলের মতো অংশে লালা খেলা করছে আর ওটার মাথা – যদি
আদৌ ওটাকে মাথা বলা যায় আর কি – চকচকে , বাদামী আর আঠালো এক ডজন চোখ ওটার
ওপর অর্ধবৃত্তাকারে সাজানো আছে।
219

এখন ওটার চোয়াল খুলে গিয়ে ক্ষু রের মতো ধারালো দাঁত বেরিয়ে এলো আর তিনটা নীলচে সবুজ
জিহবা বের হলো চোষকে পরিপূর্ণ ।

ক্লেগ ঝটিতি ট্রিগার টানলো ওর ফ্লেমথ্রোয়ারের, আর অস্বাভাবিক ক্লাইড-দানব তীক্ষ্ণ চিৎকার


করতে করতে আগুনের হলুদ নরকে নিমজ্জ হয়ে গেলো।

অধ্যায় ৫৬
ওয়াও ! কিভাবে ভাগ্য বদলে যায় – ভাবছিলো স্কাঙ্ক ওর চারপাশে গোলমাল ছড়িয়ে পড়া
দেখতে দেখতে – তু মি একজোড়া ফার্স্ট ক্লাস মিল্ক শেক খেতে খেতে গভীর গুহাতে খনন শুরু
করতে যাচ্ছিলে -- তখন একদল ইডিয়ট বাঁধা দিতে চলে এলো – ড্যাম পিনাট আর নাথান , আর
তারপর টিগ আর ক্লাইড।

এই চিন্তাগুলি স্কাঙ্কের মাথায় খেলে গেলো অল্প সময়ের মধ্যে, একইসাথে বাসী মড়ার মতো একটা
দুর্গন্ধ নাকে ‘ভক’ করে ধাক্কা মারলো , আর ওর পেট থেকে ব্রোকেন বটল এর পুরানো ওভেনে
তৈরি করা তৈলাক্ত পিজ্জা বের হয়ে আসতে চাইলো, সালাদ সহ !

মাই গড ! ওই ক্লাউন গুলির একটা ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে , বোঝা যাচ্ছে ওটা ওখানে ওর
জন্যই এসেছে ! ওটা পড়ে আছে হলুদ একটা কস্টিউম আর একজোড়া কিম্ভূ ত সাইজের লাল
জুতা যেটা স্কাঙ্কের কাছে ঠিক ম্যাকডোনাল্ডের মতো লাগলো ! স্কাঙ্কের মনে হলো ওটা একটা
মহিলা ক্লাউন ! ওটা দাঁড়িয়ে আছে রিল্যাক্স ভাবে, হাত দুটো শরীরের দুপাশে ঝু লছে, মাথা
একপাশে হেলে আছে, মুখটা সরু আর মড়ার মত সাদা, ঠিক একটা রাবারের মুখোশের মতো
লাগছিলো। মুখে একটা দন্তহীন হাসি, চোখের জায়গায় খালি গর্ত দেখা কাচ্ছে কেবল । সেখান
220

দিয়ে অত্যুজ্জ্বল লাল রঙের রক্ত গড়িয়ে চিবুক পর্যন্ত এসে পড়েছে, মাথার চারপাশে লেবুর মতো
হলুদ কালারের চু ল ছড়িয়ে আছে।

সব মিলিয়ে ওটাকে একটা ভূ তু ড়ে বাড়ির ম্যানিকু ইন এর মতো লাগছিলো !

এমনিতে স্কাঙ্ক খুব একটা ভয়-টয় পায় না, ডেড স্কালের ভেতরে ওর দুর্নাম আছে যে , ও এতটাই
গাধা যে ভয় পাওয়ার মতো বুদ্ধিও ওর নেই ! কিন্তু এই মুহূর্তে অবর্ণনীয় একটা ভয় ওর ভিত পর্যন্ত
নাড়িয়ে দিয়ে গেলো আর ওকে সম্পূর্ণ অসহায় করে রেখে গেলো। কিন্তু এটা চলে যাবে – স্কাঙ্কের
অভিজ্ঞতা বলে, সবই চলে যায়, এখন বা পরে।

যখন কার্পকে সিগন্যালটা নাগাল পেলো, ও-ও পিনাট আর ক্লাইডের মতোই দ্রুত পরিবর্তি ত হয়ে
যেতে লাগলো , কোনরকম সময় না দিয়েই। আর এটা বুঝতে পেরেই কার্প দরজা দিয়ে পালানোর
জন্য ছুট লাগাল । সেটা লক্ষ্য করে নাথান ওর দিকে ছুটে গেলো, একইসাথে টিগও, একটু
আগেই ওরা নিজেরাই মারামারি করছিলো, এখন ওরা একই লক্ষ্য নিয়ে কার্পি থেকে যেটা বের
হচ্ছে , সেটাকে মেরে ফেলতে একাট্টা হয়ে গেলো ! ওটা প্যাঁচানো আকৃ তির ডিমের মতো চোখ
আর অক্টোপাসের মতো চোষক নিয়ে বনি আর স্টানের দিকে ফিরলো এবার, কাছাকাছি কেউ
এলেই আক্রমণ করতে প্রস্তুত !

নাথান একটা শটগান ফায়ার করলো, অনেকগুলি চোখ আর চোষক চূ র্ণ হয়ে গেলো তাতে। বেস
খানিকটা বাদামী রক্তও বেরোল, কিন্তু আরও তিনটা বুলেট হজম করার পরও, ওটা আগের
মতোই কর্মতৎপর রয়ে গেলো। ওটা বার কাউনটারের ওপর উঠে পড়লো, তারপর একটা
কর্ষিকার ধারালো অংশ দিয়ে নাথানের মুণ্ডুটা ধড় থেকে আলাদা করে ফেললো !

কিছুক্ষণ স্থির দাঁড়িয়ে রইলো নাথানের ধড়টা, তারপর মাটিতে পড়ে গিয়ে আক্ষেপে মোচড় খেতে
লাগলো।

“শিট !” হিস হিস করে উঠলো টিগ।


221

ক্লেগ ওর ফ্লেমথ্রোয়ার চালিয়েই গেলো যতক্ষন না ওই দানব আর বার কাউনটার একটা জ্বলন্ত
অগ্নিকু ণ্ডে পরিণত না হয়। কার্পের মতো দেখতে কিম্ভূ ত জন্তুটা হিস হিস করতে নিজেরই জ্বলন্ত
অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ভেতর বগ বগ করতে করতে মিশে গেলো চিরতরে !

ওদিকে স্কাঙ্কের ক্লাউনটা একটু ও নড়েনি।

স্কাঙ্কের মনে হলো , ওটা মনে হয় সত্যি না ! চোখের গর্তে অনন্ত অন্ধকার, মুখের ভেতরে কোন
দাঁত নেই, শুধুই সীমাহীন অন্ধকার।

কিন্তু ওটা যদি সত্যিই না হবে, তাহলে ওটা এখানে এলো কি করে ? ওর নজর এড়িয়ে কেউ
কিভাবে এটা রেখে গেলো ?

স্কাঙ্ক হাতে ওর ছুরিটা ধরে ধীরে ধীরে এগোতে লাগলো, ও ওর জীবনে অনেক মানুষকে ছুরি
মেরেছে, কিভাবে ছুরি মারতে হয়, কিভাবে গলা কাটতে হয় ,ওর মতো ভালো কেউ জানেনা !

ও ওর ছুরিটা শক্ত করে ধরে সাবধানে এগোতে লাগলো, কারণ হরর ফিল্মগুলির মতো এটাও শেষ
মুহূর্তে জেগে উঠতে পারে। কিন্তু ওটার নড়াচড়ার কোন লক্ষণ দেখা গেলো না ! জাস্ট একটা
ভূ তু ড়ে বাড়ির ভেতরে ভূ তু ড়ে পুতু লের মতো নিষ্প্রাণ দাঁড়িয়েই রইলো !

বিদ্যুৎ গতিতে আক্রমণ শানাল স্কাঙ্ক, অত্যন্ত নিপুণভাবে ও ফালা ফালা করে দিতে লাগলো
ক্লাউন টাকে ।

আশ্চর্য, ওটা থেকে তো ঠিক ঠিক রক্তও পড়ছে। ওগুলি কালো আর নোংরা তেলের মতো,
ওটার ওভারঅল ভিজিয়ে নীচে জমাট বেঁধে জমা হতে লেগেছে।

স্কাঙ্কের পেছনে , বনির শ্বাস আটকানোর শব্দ পাওয়া গেলো ! স্কাঙ্ক আসলে ক্লাউনটাকে জাগিয়ে
তু ললো মাত্র !

ক্লাউনটা হঠাৎ নড়ে উঠলো, ওটা স্কাঙ্কের দিকে ওটার শূন্য অক্ষিকোটর নিয়ে তাকালো, ওটার
বাঁকা হাসি হাসতে থাকা ঠোঁট বেয়ে ক্ষীণ একটা রক্তের ধারা নেমে এলো। স্কাঙ্ক এবার সরাসরি
ওটার বুকে বসিয়ে দিলো ওর ছুরি। কিন্তু এতে কোন লাভ হলো বলে মনে হলো না। যদিও
222

ক্লাউনটার মুখটা অনড় আর রাবারের মুখোশের মতো দেখতে, কিন্তু স্কাঙ্ক শুনতে পেলো ওটা
নিঃশ্বাস ফেলছে। মনে হলো ওটার বাইরের অংশটা মৃত ,কিন্তু ভেতরের অংশটা জীবিত !

স্কাঙ্ক এখন তার জীবনে প্রথমবারের মতো ভয় পেলো। এটা ওকে পুরো দুর্বল করে দিলো।
ক্লাউনটার বুকে ছুরি বসানোর অল্পক্ষণের মধ্যেই ওটা স্কাঙ্ককে ধরে ফেললো। ওটার নখগুলি ঠিক
প্যান্থারের মতো, আর একটা বিধ্বংসী থাবা মেরে ওটা স্কাঙ্কের পেট ফেড়ে ফেললো। ওর শরীরের
মাঝখানটা ছিঁ ড়ে গিয়ে কাছের একটা টেবিলে ছড়িয়ে পড়লো। বনি চিৎকার করে উঠলো
আতংকে।

স্কাঙ্ক একটা ভেজা , গড়গড়া করার মতো নিঃশ্বাস ফেলে ক্লাউনটার হাতের মধ্যে ঢলে পড়লো।
ওর রক্তাক্ত দেহটাকে ওপরে তু লে ধরে সামনে পেছনে দুলতে লাগলো ক্লাউনটা, ঠিক একটা মড়া
সাপের মতো । তারপর ওকে ধরে বসে থাকলো ওর শরীরের সব তরল বেরিয়ে যাবার জন্য।

এরপর এলো প্রাণদণ্ডের পালা, ক্লাউনটার মুখ খুলে গেলো আর ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো
গোলাপি রঙের চোখ আর ভয়াবহ দেখতে সেগুলির মণি ! ওগুলির পেছন পেছন এলো কিলবিল
করতে থাকা হলুদ অক্টোপাসের মতো শুঁড় আর সেগুলির মাথায় রূপার ডলারের মতো চোষক।
সেই চোষক গুলি স্কাঙ্কের মাথায় লাগিয়ে চু ষতে শুরু করলো। পুরোটা চোষা শেষ হলে স্কাঙ্কের
গলায় কামড় বসালো ক্লাউনটা, তারপর বিকট শব্দে রক্ত খেতে শুরু করলো। বেশ কয়েক মিনিট
পর খাওয়া শেষ করে রক্তমাখা মুখ তু লে চাইলো বনির দিকে !

বনিকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিলো টিগ, আর ক্লেগ ওটাকে ঢেকে দিলো হলদে আগুনের চাদরে,
ক্লাউনটা পরিণত হলো একটা চলন্ত মশালে !

অধ্যায় ৫৭
এখন রইলো বাকি টিগ, ক্লেগ , বনি আর স্টান ! ব্রোকেন বটল বজ্র নির্ঘোষে কাঁপতে আর নড়তে
লাগলো ! ওরা সবাই একে অপরের ওপর গড়িয়ে পড়ে যেতে লাগলো, আর নিজের নিজের
পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে থাকার চেষ্টা করতে লাগলো । কিছু একটা ঘটছে এখানে, অনেক বড় আর
বিশাল কোন কিছু।
223

পুরো বারে আগুন ধরে গেছে, ঘন ধোঁয়াতে ঢেকে গেছে চারদিক, আগুন দেয়াল বেয়ে ওপরে উঠে
যাচ্ছে ! ওদের ওখান থেকে বেরিয়ে যাওয়া উচিত এখনই, বেঁচে থাকার তাগিদ ওদেরকে তাড়া
দিচ্ছে সেটা করার জন্য, কিন্তু এতো ভয়াবহ একটা রাতের অভিজ্ঞতার পর ওদের মনে হচ্ছে,
কিছুতেই যেন আর কিছু এসে যায় না ! ওরা এমনকি নড়াচড়া করারও সাহস হারিয়ে ফেলেছে।

স্টান আর বনি হাত ধরাধরি করে অন্যদের সাথে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছে। ক্লেগ একটু তফাতে
দাঁড়িয়ে চিন্তা করছে, কত সাধারণ একটা রাত কিরকম বীভৎস একটা রাতে পরিবর্তি ত হয়ে
গেলো। ও শুরু থেকেই জানতো এ ধরণের কিছু একটা ঘটবে।

স্টান আর বনি নিজেদের চিন্তায় নিজেরাই বিভোর হয়ে আছে ।

স্টান ওর ক্যামেরাটা বুকের সাথে আঁকড়ে ধরে ভাবছে, কেউ যদি পরে আমার এই ভিডিও
দেখে,তাহলে স্রেফ বিশ্বাস করবে না ! কারণ এ ধরণের কোন কিছু কেউ কখনও দেখেইনি ! আর
দেখবেও না !

অন্যদিকে বনি, স্টানের হাত শক্ত করে ধরে ভাবছিলো ,সব বাদ দিয়ে , ওর বিছানার কথা ! ও
ভাবছিলো, পর্দা টেনে হামাগুড়ি দিয়ে আমি আমার বিছানাতে শুয়ে একটা জম্পেশ ঘুম দেবো ,
নিরাপদ আর আরামের ঘুম। আমি একটু ঘুমাতে চাই শুধু !

টিগ ভাবছিলো পিনাটের কথা, যে কিনা অনেক দিক থেকেই ওর নিজের সন্তানের মতোই ছিল --
মাঝে মাঝে তু মি আমার জানা সবচেয়ে বাজে পুলিশে পরিণত হও, মাঝে মাঝে বেস্ট পুলিশ !
আমি এতো সহজে তোমাকে যেতে দেবো না , আর আমি এখান থেকে জীবিত বেরও হতে পারবো
না – শীঘ্রি আমাদের দেখা হবে !

ব্রোকেন বটল শেষবারের মতো কেঁ পে উঠলো , সামনের পুরোটা ভেঙ্গে রাস্তায় ছড়িয়ে পড়লো, বাকি
বিল্ডিঙটা বিকট একটা ক্যাঁচকোঁচ শব্দ করে আর্ত নাদ করে উঠলো যেন, আর বাতাসের সাথে
বাইরের তু ষার ঝড় ভেতরে ঢু কে পড়লো , সাথে নিয়ে এলো এমন একটা জিনিস যেটা কেউই
আশা করেনি। একটা বিশাল , স্পন্দনশীল মাংসের পিণ্ড যেটা ঠেলাঠেলি করে বারের ভেতরে
জায়গা করে নিলো, ওটা থেকে ধোঁয়া আর প্রচণ্ড দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে ! ওটার সারা শরীরে কিলবিল
করছে ক্লাউনের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, মুমূর্ষু ক্লাউনের চেহারা, আর বুদবুদের মতো হাজারখানেক চোখ!
মোচড়াতে থাকা অসংখ্য উপাঙ্গ এদিক ওদিক হামাগুড়ি দিচ্ছে বা বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে।
224

মুখগুলি গোঙাচ্ছে আর চিঁ চিঁ করছে। এটা হলো একটা দানবীয়, পরিবর্তি ত আর চমকপ্রদ
আভ্যন্তরীণ অঙ্গের জগাখিচু ড়ি । এটা হলো সকল ক্লাউনের মাদার ক্লাউন, যেটার ভেতর অন্যান্য
ক্লাউনেরা এসে সশব্দে মিলিত হয়ে যাচ্ছে, পরিপূর্ণ করছে একটা বীভৎস স্বত্বা, আর ওটা এসেছে
ওটার বিশালত্ব দিয়ে ওদেরকে দম বন্ধ করে মারার জন্য !

কিন্তু ক্লেগ বা অন্যরা চমকে ওঠা দূরে থাক, এমনকি চোখের পাতাও ফেললো না !

এখানে কোন নাটক, কোন চিৎকার, কান্নাকাটি বা দৌড়ে পালানো নেই ! ওদের চিন্তাতে কেবল নীরব
আত্মসমর্পণ, আর অতলস্পর্শী ঘৃণা রয়ে গেলো ওটার প্রতি, যেটা কিনা ক্রো ফলসের ধ্বংসের
জন্য দায়ী !

স্টান আর বনি আরও জোরে পরস্পরের হাত আঁকড়ে ধরলো। টিগ ওর শরীর শক্ত করে ফেললো,
ও বুঝতে পেরেছে এরপর কি ঘটতে চলেছে, ওকে দেখে মনে হচ্ছে শেষমেশ ও জমেই গেলো
বুঝি।

আর ক্লেগ, দুঃখভরে ওর প্রিয় ট্রিক্সির কথা ভাবতে ভাবতে ওর কব্জির নীচে ডেটোনেটর বোতামে
চাপ দিলো !

ব্রোকেন বটল বিকট শব্দে বিস্ফারিত হলো , মাশরুম আকৃ তির আগুনে ধোঁয়া উঠে গেলো
আকাশের দিকে। পুড়তে থাকা আর ধোঁয়া বেরোতে থাকা বিভিন্ন ধ্বংসাবশেষ চারপাশে আর
ওপরে ১০০ মিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়লো। তারপর, যেন মুভির স্লো মোশনের মতোই, ধ্বংসাত্মক
আর গোলমেলে সেই আগুন নেমে আসতে লাগলো ধরার বুকে !

বারের চারপাশের এলাকা টু করো টু করো হয়ে ভেঙ্গে গেছে, ওখানে যা কিছু লুকিয়ে ছিলো,
ওগুলিও বাকি রাত আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।

শুধু কালি মাখা সাপোর্ট বিমগুলি দাঁড়িয়ে রইলো। আর বিশাল এক আগ্নেয়গিরির লাভার মতো
কালো , তেলতেলে ধোঁয়ার মতো কিছু একটা রয়ে গেল, যেটা প্রসারিত হয়ে ধীরে ধীরে তু ষার ঝড়ে
মিলিয়ে যেতে লাগলো ।

সকালের আলো ফোটার আগেই, তু ষার ঝড়ও আস্তে আস্তে থেমে গেলো, পড়ে রইল ক্রো ফলস,
ধ্বংসপ্রাপ্ত আর পরিত্যক্ত !!
225

------------শেষ -------------

You might also like