Professional Documents
Culture Documents
Constantine Bangla - IHA FORMAT
Constantine Bangla - IHA FORMAT
কনস্টেনটিন
মুভি নভেলাইজেশনঃ জন
শার্লি
ওয়ার্নার ব্রোস এর ছায়াছবি অবলম্বনে
ঃ উৎসর্গ ঃ
দান দান তিন দান। এটা আমার তিন নাম্বার বই। আগেও বলেছি, তিন
সংখ্যাটি অত্যন্ত রহস্যময় একটি সংখ্যা। তবে, যাকে এই বইটি উৎসর্গ
করতে চাই, তিনি রহস্যময় কেউ নন, অত্যন্ত সাদাসিধে একজন মানুষ।
হ্যাঁ, এবারের বইটি আমি উৎসর্গ করতে চাই আমার সহধর্মিণী সুমি
চৌধুরীকে। যিনি আমার লেখালেখির সময়ে আমাকে কল্পলোকে বিচরণ
করতে দেন, সকল খামখেয়ালিপনা সহ্য করে, নীরব সমর্থন দিয়ে যান
সবসময়। বাচ্চাদের দুরন্তপনা আর সংসার , দুটোই চমৎকারভাবে
সামলে নেন ।
3
এক
“ঠিক যখন পৃথিবী এটা আশা করছে না, যখনই আমরা আমাদের
সম্বন্ধে পুরোপুরি নিশ্চিত – ঠিক তখনই পুরানো দেবতারা ফিরে
আসবেন আর আমাদের শহরগুলোকে ঝেঁটিয়ে----
সোজা নরকে নিয়ে ফেলবেন !”
--- ব্লু অলিস্তার কাল্ট, ‘দ্যা ওল্ড গডস রিটার্ন’ ফ্রম কার্স অব দ্যা
হিডেন মিরর ।
দরজার বাইরে, স্তূ পাকৃ তিতে ময়লা জমে আছে। কোন এক সময়ে ,
এই চার্চ কেও ময়ালার আস্তাকু ড় হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ! এটা
পবিত্রতার অসম্মান , তাই না ? তাতে কিই বা এসে যায় ! ঈশ্বর যদি
মেক্সিকোর এই অংশে কখনও এসেও থাকেন – ফ্রান্সিস্কো ভাবলো—
তিনি চলে গেছেন !
“হেই- এখানে খানিক জিনিসপত্র স্তূ প করা আছে , যেগুলিতে মনে
হয় কেউ হাত দেয়নি !” হারভ বললো। তারপর বৃষ্টিতে পচে যাওয়া
একগাদা কাপড়ের একটা স্তূ পের ওপর ঝুঁকে পড়লো সে। “ওয়ে !
এখানে হেবি গন্ধ ! আরে, এখানে সুন্দর একটা হাফপ্যান্ট আছে, বেশী
একটা ময়লা লেগে নেই ! ”
ফ্রান্সিস্কো চার্চে র আরও ভেতরের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলো, যেখানে
কড়িবরগার ওপর ছাদটা কোনভাবে টিকে ছিলো। ভেতরের অন্ধকারের
সাথে নিজের চোখ সইয়ে নিচ্ছিল। মেঝেটা ঢেকে ছিলো আবর্জ নাতে
আর উড়ে আসা বালিতে। বেশীরভাগ আবর্জ নাই মূল্যহীন, সেটা
একনজর দেখেই বুঝে গেছিলো সে। একটা পুরানো, ভাঙ্গা ক্রস দেয়ালে
হেলান দেয়ানো ছিলো, বালিতে অর্ধেক বসে গেছে সেটা।
কিন্তু – ওখানে ওটা কি ! আলো লেগে কি একটা চকচক করে
উঠলো না ? সম্ভবত একটা জপমালা বা ঐ জাতীয় কিছু হবে, যেটা
হয়তো বিক্রি করা যাবে ! ওটা রূপারও হতে পারে ।
ফ্রান্সিস্কো আরেক পা এগোলো , আর থেমে গেলো । যেন কোন খুব
ঠাণ্ডা একটা জায়াগায় এসে পড়েছে সে ! ওর মুখের ভেতরটা শুকিয়ে
10
ব্যাটার বয়স বোঝা যাচ্ছে না, তবে চেহারা দেখে মনে হচ্ছে পাশের
ময়লার ডিপো থেকে উঠে এসেছে। কিন্তু , কারটা ওর চারপাশে পেঁচিয়ে
আছে, ঠিক মনে হচ্ছে ও একটা শক্ত স্টিলের থাম !
দৃষ্টিবিভ্রম হবে ! ব্যাটা হয়তো এক্ষু নি এসে ওখানে দাঁড়িয়েছে ।
মেনডেজ ক্রু জার থেকে বেরিয়ে হেঁকে বলল “ওয়ে ! কারের ভেতর
কিছু খুঁজে পেলে ? মৃতের ওপর ডাকাতি করছ নাকি ? ”
ধাঙ্গড়টি ওদের দিকে ফিরে তাকাল, চকচকে , নির্ভীক চোখে।
না না না, এটা তো হতে দেয়া যায় না। একটা স্থানীয় গুণ্ডাকে তো
চোখে চোখে তাকানোর সাহস দেয়া যায় না কিছুতেই।
মেনডেজ ওর বন্দুক বের করলো .........
দুই
19
লস এঞ্জেলস , ক্যালিফোর্নিয়া
ছোট্ট কন্সুয়েলা’র ঠাণ্ডা লেগেছে একটু , এইই তো। ওর মা, দিয়েরদ্রে,
ফ্লু মেডিসিনের পাউডার ভরা মগের ভেতর গরম পানি ঢালতে
ঢালতে সেটাই ভাবছিলেন। মেয়েটা যে ওইসব কু ৎসিত কথাবার্তা
বলছে, সেটাও হয়তো জ্বরের ঘোরে বকা প্রলাপই হবে। একই কারণে,
ল্যাম্পটাও ছুঁ ড়ে মেরেছে বেচারী !
দিয়েরদ্রে ওর মেয়েকে অ্যাসপিরিন, খানিক থেরাফ্লু দিয়ে ওকে
ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে। সকালের এই সময়ে ডাক্তারের দেখা
পাওয়া খুব মুশকিল। কিন্তু শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ভদ্রলোক ১০ টায় ওকে
দেখতে রাজী হয়েছেন। ঠিক হয়ে যাবে কন্সুয়েলা ।
“মা............ মা ম্মা আ আ আ আ আ ...” একটা উচ্চ সুরে কান্না
ভেসে এলো। হুম, মেয়েটা কেবল ৭ বছর বয়সী, প্রলাপ ওকে ভয়
পাইয়ে দিতেই পারে। কিন্তু --- মেয়েটার স্বরে এমন একটা কিছু ছিলো ,
যেটাতে দিয়েরদ্রে’র হৃদয় যেন মুচড়ে উঠলো !
“আমি আসছি , সোনা। তোমার ওষুধ আছে আমার কাছে .........”
ওনার কাজে যাওয়া খুবই প্রয়োজন। কিন্তু এই অসুস্থ বাচ্চাকে নিয়ে
উনি সমস্যায় পড়ে গেছেন। ঐ ব্যাটা ফ্রেডের বাচ্চা যদি কোন কাজে
আসতো ! ওর মনে হল, ওকে মনে হয় আরও একটা সুযোগ দেয়া
দরকার ছিলো। কিন্তু ...... ব্যাটা কু কু রের মতো সব জায়গায় মুখ না
দিলে হয়তো ............
নিজের পশ্চিম হলিউডের ছোট্ট ফ্ল্যাটের দুইটা বেডরুমের একটাতে
থাকে মেয়ে। সেখানে ঢু কেই, একটা শক খেয়ে থেমে গেলো।
20
ওটা কিন্তু বাতাসে ভাসছিল না, ও মনের ভেতর সেই গন্ধটা টের
পাচ্ছিলো ।
মেয়েটার বেডরুম পুরো একটা ধ্বংসস্তূ পে পরিণত হয়েছে।
সবকিছুই টু করো টু করো হয়ে চারপাশে ছড়িয়ে আছে। বিছানার পাশের
দণ্ডগুলো ভেঙ্গে গেছে, একটা খেলনার বক্স টিং টিং করে আওয়াজ
করে যাচ্ছে। খেলার পুতু ল কু টি কু টি করা ছেঁ ড়া, ড্রেসার শতখান করে
ভাঙ্গা, কাপড়চোপড় ছিঁ ড়েখুঁড়ে ফেলা হয়েছে। এখানে ওখানে
অনেকখানি চাপ চাপ রক্ত । কিছু কিছু ঐ মেয়েটির, দেয়ালে লাল লাল
হাতের ছাপ লেপা দেখে সেটা আন্দাজ করলো কনস্টেনটিন।
বিছানার অবশিষ্টাংশের সাথে বাঁধা আছে মেয়েটি। একটা অরুচিকর
খড়খড় শব্দ করে চলেছে মুখ দিয়ে। যেন কোন কমেডিয়ান ঘেন্নার সাথে
নকল করে চলেছে মৃত্যুপথযাত্রী কোন মানুষের শেষ শব্দগুলো !
বারবার , বারবার , অনেকবার .........
ও কনস্টেনটিনের দিকে ফিরে তাকালো, ওর চেহারা নিজের মধ্যেই
পাল্টে পাল্টে গেলো কয়েকবার !
কনস্টেনটিন অন্য দিকে তাকালো । সে এইমাত্র যা দেখলো, সেগুলি
সাধারণত ‘পজেসন’ গুলির ক্ষেত্রে ওর চোখে পড়ে না কখনও। আর
ওর মন বলছে, ওটার দিকে বেশিক্ষণ তাকানো বুদ্ধিমানের কাজ হবে
না। নিজের ‘মন’ কে পুরোপুরি বিশ্বাস করে কনস্টেনটিন, জানে,
এটাকে কখনও, কখনোই কেন উপেক্ষা করতে নেই !
মেয়েটার ক্ষীণ, ক্ষতবিক্ষত তনুর ভেতরে আশ্রয় নেয়া পিশাচটা
একটু চিন্তিত বলে মনে হল। মনে হল, এটা এখনই কনস্টেনটিনের
26
--- পিতা এবং পবিত্র পুত্রের নামে, তোমার মধ্যেকার পবিত্র শয়তানের
আলো নিভে যাক ! ”
“ইম্পসিতিনেম মানুম নস্ত্রারুম এত পের ইনভচতিওনেম গ্লরিওসে
এত সাঙ্কতাএ দেই গেনেত্রসিস ভার্জি নিস মেরি ......... ---- আমাদের
হাতের ওপর আহ্বান করছি পবিত্র মাতা মেরীর শক্তিকে ......”
কাছেই কে যেন ফুঁ পিয়ে উঠলো – মেয়েটি নয়। সে ফিরে দেখলো,
বাসিন্দাদের একজন, মধ্যবয়সী লোক। চেয়ে আছে সরাসরি মেয়েটির
মুখের দিকে।
“নাআআআ !” ঘেউ করে উঠলো কনস্টেনটিন।
কিন্তু ততোক্ষণে দেরী হয়ে গেছে, লোকটি পেছনে সরে গেলো। বড়
বড় চোখে পানি ভর্তি , ফুঁ পিয়ে উঠে বলতে লাগলো “ওহ না ...... না
না না ”
লোকটি হাত ছেড়ে দেয়ায়, আয়নাটা কাত হয়ে গেলো। অন্য
মানুষগুলো নড়ে উঠলো আয়নাটা ধরার জন্য, কিন্তু ক্ষতি যা হবার তা
হয়ে গেছে। মেয়েটি কনস্টেনটিনের হাতের নিচে মোচড়াতে শুরু
করেছে, মুখটা ঘন ঘন ঝাঁকি মারছে সে। স্ত্র্যাপগুলো ছিঁ ড়ে ফেললো সে
একটানে, তারপর ভেসে উঠতে শুরু করলো শূন্যে ! কনস্টেনটিন
কেবল চোখ দুটো ঢেকে রাখতে পারলো ওটার। পিশাচটা ওর ঘাড়
পেঁচিয়ে ধরলো, আঙ্গুলগুলো বাঁকা হয়ে চাপ দিচ্ছে গলাতে। এদিকে
কনস্টেনটিন ভাবছে সেই ভীষণ চোয়ালের কথা, সেগুলো ওর হাতের
কি অবস্থা করতে পারে সেটা। ও অনুভব করলো, মেয়েটার চোয়াল
ফু লে উঠছে ......... কনস্টেনটিনের শ্বাস বন্ধ হয়ে এলো।
34
আছে। মা’টি একটু চমকে গেলেও, বাচ্চার আঁকা গুলো রেখে দিয়েছে
গর্বের জিনিস মনে করে। কনস্টেনটিন সেগুলো ছিঁ ড়ে নিলো , ভরলো
কোটের পকেটে, তারপর বাসিন্দাদের মাঝ দিয়ে পথ করে এগোলো।
করিডোরে চলে এলো সে, কাশছে অনবরত।
নিচে, এপার্ট মেন্টের সামনের দেয়ালে হেলান দিয়ে, সামনের দৃশ্য
দেখছে কনস্টেনটিন। চ্যাজ, একটা নীল ঝারুনি দিয়ে গর্ত হয়ে যাওয়া
হুড পরিষ্কার করছে। আশেপাশে লোক জড় হয়ে তাকিয়ে আছে
এপার্ট মেন্টের জানালার দিকে, এ ওকে দেখাচ্ছে আর কিচিরমিচির
করছে। যদিও দুর্বল, কিন্তু কনস্টেনটিনের অনুভবকারী সত্ত্বা এখনও
কাজ করে চলেছে, আর দেখার ক্ষমতা এখনও তু ঙ্গে । তাই...... সে
ভূ তদের দেখতে পাচ্ছে আশেপাশে ভিড়ের ভেতর ! ভূ ত দেখতে
পছন্দ করে না ও। অন্তত, এখানে যে ভূ তগুলো আটকা পড়েছে ,
সেগুলো তো নয়ই। ওগুলো এখনও নিজেদের প্রায়শ্চিত্তও শেষ করতে
পারেনি। ঐ যে, ফ্যাকাসে দেখতে এক বুড়ো দাঁড়িয়ে আছে ফাঁক হয়ে
যাওয়া গলা নিয়ে ! ওর পাশে, দাঁড়িয়ে আছে ওর স্ত্রী, এখনও সেই
কসাইয়ের ছুরিটা ধরে আছে যেটা দিয়ে স্বামীর গলা ফাঁক করেছিলো !
নিজের কপালেও একটা বুলেটের গর্ত আছে তার, যেটা তার স্বামী
উপহার দিয়েছে মারা যাবার সময় । দুটো ভূ তই শোকার্ত দৃষ্টিতে
তাকিয়ে আছে কনস্টেনটিনের দিকে। একসাথে থাকার জন্য
অভিশাপগ্রস্থ মনে হচ্ছে। ও তাকিয়ে থাকতে থাকতেই একজন পুলিশ
ওঁদের ভেদ করে চলে গেলো, দেখতেই পায়নি ।
38
তিন
ইকো পার্ক , লস এঞ্জেলস
মহিলা আর তার দুই বাচ্চার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে বোকা বোকা হাসি
নিয়ে।
এঞ্জেলা পেছনে জেভিয়ারের ফুঁ পিয়ে ওঠা শুনল ব্যাথায়। ওর মনে
পড়লো , এম্বুলেন্স ডাকা হয়নি। ছোট্ট ওয়াকি টকিটা বের করে বলা
শুরু করলো “অফিসার ডাউন। একজন বন্দুকবাজ। অফিসার
ডাউন, সাহায্য দরকার ......... ”
বোকা বোকা হাসি অলা লোকটার হাত ওর দৃষ্টির আড়ালে চলে
যাচ্ছে ।
এরপর, হঠাৎ ই উপলব্ধি করলো এঞ্জেলা, সে ঘুরে যাচ্ছে, বন্দুক
উঠিয়ে সে ফায়ার করছে, এমনকি চিন্তা করারও আগে। সেকেন্ডের
ভগ্নাংশের মধ্যে এসব ঘটে গেলো, আর ওর ভেতরে কেউ একজন
চিৎকার করে বলতে লাগলো – আমি পারবো না এসব করতে, থামো
!
কিন্তু প্রবৃত্তির চাইতেও শক্তিশালী কিছু একটা নিজের ভেতর টের
পেলো সে । একটা আদিম নিশ্চয়তা আর দৃঢ় আত্মবিশ্বাস , মনের
একদম ভেতর থেকে। সে টের পেলো , সে যদি এটা করতে না পারে,
সে, জেভিয়ার আর বাকিরা যারা আশেপাশে আছে, সবাই মারা যাবে,
এমনকি একটা শব্দও উচ্চারণ করার আগে।
তাই, ও বোকা বোকা হাসি হাসতে থাকা লোকটার কপালে একটা
বুলেট বিঁধিয়ে দিলো।
আমি কি ভু ল লোককে গুলি করলাম ? হোলি মাদার অব গড,
আমার ওপর দয়া করো ......
46
সে। দূরের একটা শাটার খুলে গেলো, আরেকটা রুম উন্মুক্ত হয়ে
পড়লো সেদিকে। ঠিক একটা বোউলিং এলি’র মতোই লম্বা মনে হলো
এবার রুমটাকে। আর , একসময় সেটা তাইই ছিলো। পাশের দরজা
থেকে পিনের গুড়গুড় শব্দ ভেসে এলো। দূরতম প্রান্তে , একটা বিছানা
দেখা গেলো , লোহার খাঁচায় বন্দী ! নানারকম ‘খারাপ জিনিস’ কে দূরে
রাখতেই এই ব্যবস্থা।
মেঝেতে , চার দেয়ালের প্রত্যেকটার সাথে ঘেঁষে রাখা হয়েছে বড়
স্পারক্লেটের বোতল। প্রত্যেকটার গায়ে হাতে আঁকা ক্রস অলংকৃ ত
আছে। হোলি ওয়াটার । এটা কিছু কিছু সত্ত্বাকে দূরে রাখে। অন্যরা,
পাত্তাই দেয় না !
কনস্টেনটিন জানালার সিলগুলো পরীক্ষা করলো। জাগতিক বা
মহাজাগতিক, কোন ধরণের অনুপ্রবেশের চিন্হ চোখে পড়লো না।
জ্যাকেটের পকেট থেকে একটা ছোট্ট বক্স বের করে , ওটার জন্য
তৈরি করা একটা শেলফে রাখলো সেটা। চারপাশে তাকালো, ভাবলো
, এখানে খুব সময়ের জন্য থাকা হয় ওর।
“হোম , স্যুইট হোম !” বিড়বিড় করলো সে। একটা সিগারেট
ধরালো সে, কোট খুললো , তারপর টেবিলে বসলো বী ম্যান এর জন্য
অপেক্ষা করতে। বেশীক্ষণ লাগলো না, সিগারেটের অর্ধেক পোড়ার
আগেই এলো সে।
“’নতু ন খেলা’ জন ? ” বী ম্যান বললো, কনস্টেনটিনের
এপার্ট মেন্টে নক না করেই ঢু কতে ঢু কতে।
52
কিন্তু ফাদার গ্যারেট অনেক বছর ধরেই তার পরিবারের বন্ধু মানুষ।
এঞ্জেলা ওনাকে বিশ্বাস করে।
“আশীর্বাদ করুন, ফাদার, আমি যে পাপ করেছি তার জন্য ” একটু
পর , কনফেসন বুথের ভেতর বসে বিড়বিড় করছিলো সে। এটা শান্ত,
ঠাণ্ডা আর একান্ত গোপনীয় একটা জায়গা। কাঠ পালিশের ক্ষীণ গন্ধ
টের পাওয়া যাবে সাবধানী নাকে। “অনেক দিন হয়ে গেলো...... আমি
যদি বলি আমার শেষ কনফেসন কবে করেছি, আপনি হয়তো আমাকে
ছুঁ ড়ে ফেলে দেবেন। আর.........” গলা শুকিয়ে গেছে এঞ্জেলার। পান
করার মতো কিছু থাকলে ভালো হতো আশেপাশে। ও আসলে বলতে
চাচ্ছে না ......
বুথের স্ক্রিনের অন্যপাশে, ফাদার গ্যারেট স্রেফ অপেক্ষা করে
রইলেন। ওনার নীরবতাতেই, প্রশ্ন ফু টে উঠছিল।
“আমি......আমি আজকে আরেকজন মানুষকে খুন করেছি ।
আরেকজনকে ......”
“আমি খুবই দুঃখিত তোমাকে ওটা করতে হয়েছে, এঞ্জেলা ”
“আমি এমনকি ওর মুখও দেখিনি। আমি স্রেফ ট্রিগার টেনেছি,
আর ও নেই হয়ে গেলো, অন্যদের মতোই !”
ফাদার গ্যারেট একটু ক্ষণ কি ভাবলেন, তারপর গলা খাঁকারি
দিলেন। শেষে বললেন “এটা কি ঐ শুটার, যার খোঁজ তু মি করছিলে ?
”
“হ্যাঁ। ওকে থামানোর দরকার ছিলো। কিন্তু বেশীরভাগ পুলিশই ,
বছর বিশেকের মতো কাটিয়ে দেয় কোন বন্দুক না ছুঁ ড়েই। আর খুব কম
58
গভীর সুইমিং পুলের ভেতর। ওর রক্তে লাল হয়ে যাওয়া পানি পাক
খেতে লাগলো সেখানে। শরীর ঝাঁকু নি দিয়ে রক্ত বেরোতে লাগলো ।
ভাঙ্গা কাঁচের ফাটা দিয়ে রক্ত বেরোতে লাগলো , এমনভাবে ছড়িয়ে
যেতে লাগলো চারদিকে , যে দেখে মনে হল কোন অতিপ্রাকৃ ত প্রাণীর
পাখা যেন ! ওর চোখ তাকিয়ে রইলো , অনন্ত মৃত্যুর কু য়ার দিকে,
অপলক.........
এখন সে কিছুই অনুভব করছে না। সে অনন্ত শূন্যের মাঝ দিয়ে
নেমে যাচ্ছে .........
ওহ , না !
চার
মেক্সিকালি’র বাইরে, মেক্সিকো
ক্যাবের ভেতর থেকে জবাব শুনতে বেশ কষ্টই হলো “প্রথমে আমরা
যাবো......... চাচাতো ভাইয়ের কাছে ............ আরও বেশী টাকা দিতে
হবে............”
“আমি এক পয়সাও দেবো না !” ফ্রান্সিস্কো খেকিয়ে উঠলো। সে
বুঝতে পারলো, এই ব্যাটা ওকে বন্দী করে রাখতে চাচ্ছে ! এটা মানুষের
সাথে প্রায়ই হয়, ওর নতু ন কাপড়চোপড় দেখে ব্যাটা হয়তো মনে
করেছে, কোথাও না কোথাও ও টাকা লুকিয়ে রেখেছে।
সেই ভীষণ চিবানো , গুনগুন আর কানে তালা ধরানো বিজবিজ
শব্দ বহুগুণ বেড়ে গেলো – যখন ফ্রান্সিস্কো ওর কোটের পকেট থেকে
সেই লোহার স্পাইকটা বের করলো। তারপর ট্রাকের পেছনের জানালা
ভেঙ্গে ফেললো। ভারী কাঁচগুলো স্রেফ কাগজের মতো ফেড়ে গেলো
ওর হাতের ছোঁয়া পেয়ে ! ও চিৎকার করতে থাকা দাড়িঅলা
ড্রাইভারের গলা পেছন থেকে টেনে ধরলো জোরে। তারপর একটা
জোরালো তীক্ষ্ণ টান দিয়ে , ড্রাইভারের মাথাটা পেছনের জানালার
ফ্রেমের সাথে থেঁতলে দিলো !
ট্রাকটা হঠাৎ গতিপথ পাল্টে ফেলায়, ফ্রান্সিস্কো জানালা ধরে টাল
সামলালো। সেটা একপাক ঘুরে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। সে নেমে,
ড্রাইভারের দরজা খুললো। ড্রাইভারকে একটানে ক্যাব থেকে মাটিতে
ছুঁ ড়ে ফেললো , তারপর উঠে বসে ট্রাক ছেড়ে দিলো । ক্রসরোড ধরে,
পূবে যাওয়া শুরু করলো। মরুভূ মির মাঝ দিয়ে একটা পথ খুঁজে নিতে
হবে ওকে – উত্তরের দিকে।
67
“আমি জানি এটা মেনে নেয়া খুব কষ্টের ” জেভিয়ার আস্তে করে
বললো “কিন্তু সে অসুস্থ ছিলো ......”
ইসাবেল কখনও নিজেকে খুন করবে না।
“এঞ্জি......”
“সে কখনও এটা করতে পারে না, কথা শেষ !”
“ডিটেকটিভ ” জেভিয়ার বললো এই একটা শব্দের ওপরেই জোর
দিয়ে “সারভেইলেন্স ক্যামেরার ফু টেজ আছে............”
এঞ্জেলা করোনারকে ইশারা করলো লাশটা আবার ঢেকে দিতে।
চাকরিটা, নিজেকে বললো এঞ্জেলা , ওটার সাথেই ঝু লে থাকো
আপাতত। তু মি ইতিমধ্যে গানফাইটের জন্য অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে
আছো। এখন ভেঙ্গে পোড় না।
“সারভেইলান্স ? সিকিউরিটি ক্যামেরা ? তাহলে...... আমি দেখতে
চাই ওটা ”
জেভিয়ার শ্বাস ফেললো একটা “তু মি নিশ্চিত নিজেকে ওটার
ভেতর দিয়ে যেতে দেবে তু মি ?”
“স্রেফ ব্যবস্থা করো। প্লিজ, আমার জন্য !”
“ঠিক আছে। এক্ষু নি করা যাবে। সিকিউরিটি দোতলায়। ”
এঞ্জেলা ঘুরে দাঁড়ালো, তারপর নিজেকে বাধ্য করলো বোনের
মৃতদেহ পেছনে ফেলে যেতে।
কিন্তু ওকে পরিত্যাগ সে করতে পারবে না কখনও, জীবিত অথবা
মৃত।
70
দেখে, হতাশায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে সে। সেটা ওকে আরও অনেক বেশী
দুর্বল করে দিয়েছে।
কিন্তু , এটা সেরকম না-ও হতে পারে। হয়তো অন্ধকারের শক্তিরা
ওকে সরাসরি আক্রমণ করেনি। ওরা সারিয়ে তোলার আত্মাদেরকে
আটকে দিচ্ছে , ও যখন অসুস্থ হয়ে পড়েছে তখন !
আর, ওর বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে যে, নরকের বাসিন্দারা
ওকে মৃত দেখতে চায় ! ওরা ক্ষু ধার্ত মনে ওর জন্য অপেক্ষা করে
আছে ! ওদের কাছে , ওর অনন্তকালের নরকভোগ পাওনা আছে,
ওদের অনেক পরিকল্পনা ব্যার্থ করে দেয়ার জন্য !
ও তাকিয়ে রইলো নিজের ফু সফু সের কালো দাগের দিকে, লাইট না
নেভানো পর্যন্ত। অসুস্থ ফু সফু স অদৃশ্য হয়ে গেলো। ও স্রেফ বসে
রইলো সেখানে, শূন্যের দিকে তাকিয়ে।
“বিশ বছর আগেও, তু মি এখানে থাকতে চাইতে না , কনস্টেনটিন !
” ডাঃ আর্চার বললেন, দুঃখিত চেহারায় “আর এখন তু মি যেতেই
চাইছ না ! তোমার আমার কথা শোনা উচিত ছিলো ।”
কনস্টেনটিন একটা লাকি স্ট্রাইক ধরালো, আর্চার যদি ওকে সুচই
ফোটায় ............
আর্চার নাক দিয়ে একটা শব্দ করে চাইলো সিগারেটের দিকে “এটা
ভালো নয় !”
একটা লম্বা, প্রতিহিংসাপরায়ণ টান, এটা ভালোই বোধ হল ।
তারপর, এটা ওকে দীর্ঘ , ভেজা কাশির পথে টেনে নিয়ে গেলো।
75
পাঁচ
ছয়
বৃষ্টি থেমে গেছে। কিন্তু রাস্তা এখনও ভেজা সাপের মতোই সিক্ত ।
কনস্টেনটিন মবিল স্টেশন থেকে বেরিয়ে এলো আর্দ্র সন্ধ্যাবেলায়। ওর
চোখ জ্বলে গেলো, সেই সাথে টের পেলো, শহরের ধোঁয়াশার সাথে
মিশে যাচ্ছে এসফল্টের বাষ্পীভূ ত পানি। এ কারণেই, নিজের ভেতরে
কাশিটা জেগে ওঠা টের পেলো সে।
খুসখুসে ভাবটা বিদায় নেয়ার পরে, ঠোঁটে একটা সিগারেট ঝোলাল
সে। বিস্মিত হয়ে দেখল , একটা বড় ইঁদুর দৌড়ে গেলো সামনে দিয়ে।
সানসেট বুলেভার্ডে , বেশী ইঁদুর দেখা যায় না।
কনস্টেনটিনের রাস্তার অন্য পাশে একটা বিলবোর্ডে র দিকে চোখ
গেলো। সেদিকে তাকিয়ে রইলো সে কিছুক্ষণ –
তোমার সময় ফু রিয়ে আসছে !
100
হাতের ভেতর লাফিয়ে উঠে, কাঁপতে কাঁপতে ভীষণ তীক্ষ্ণ একটা চিঁ
চিঁ শব্দ করতে শুরু করলো – এতো ছোট্ট একটা জিনিসের পক্ষে বেশ
উচ্চ স্বরের শব্দ! আগন্তুকটি প্রায় সাথে সাথে প্রতিক্রিয়া দেখালো,
হোঁচট খেতে খেতে পিছু হটা শুরু করলো সে । সারা দেহ থরথর করে
কাঁপছে।
“আগহ ! থামাও ওটা, ওরা .........”
কনস্টেনটিন এখন নিশ্চিত হয়ে গেলো। চিৎকার করা গুবরে পোকা,
যেটা ওকে বী ম্যান দিয়েছিলো , সেটাই নিশ্চিত করে দিলো ওকে। কিন্তু
বেশ দেরী করে ফেলেছে সে । আগন্তুক লাফ দিলো ওর দিকে , ঠিক
একজন মহাকাশচারী চাঁদে লাফ দেয় ! সেই লাফে, এসফল্টের রাস্তা
থেকে সাত ফু ট ওপরে উঠে গেলো সে ! দুর্গন্ধযুক্ত একটা হাত
বাড়ালো সে কনস্টেনটিনকে আঘাত করার জন্য !
অন্ধকার লোকটার কোট খুলে গেলো। এতে বোঝা গেলো ,
লোকটার দেহ আর চেহারা পুরোটাই বিভ্রম ছিলো। ছোট ছোট
অনেকগুলি প্রাণীর সমষ্টি নিয়েই দেহটা তৈরি ! জ্যান্ত ইঁদুর আর
পোকামাকড়, বিষধর সাপ আর ব্যাঙ আর কাঁকড়া আর কাঁকড়াবিছা !
প্রত্যেকটি সেই ধাঁধাঁর এক একটা অংশ , কিলবিলে কিন্তু একসাথে
বাঁধা ! সব জগাখিচু ড়ি মিলে , একজন মানুষের প্রতিকৃ তি!
কনস্টেনটিন ছিটকে পেছনে সরে গেলো পিশাচটার থেকে। এটার
হাতের বৃশ্চিকের লেজের আঙ্গুলের নাগাল থেকে সামান্যের জন্য রেহাই
পেলো । সে ম্যাচ বক্সটা আবারও নাড়া দিলো , গুবরে পোকাটা আরও
জোরে চিৎকার করে উঠলো। পিশাচটা নিচু হয়ে গেলো, আর ওটার
103
কনস্টেনটিন, জন
...... গুজব আছে, এই বেতনভু ক তদন্তকারী , অতিপ্রাকৃ ত বিষয়
আশয়ের ওপর তদন্ত চালিয়ে থাকে, ধারণা করা হয়, সে নিজেই একটি
অতিপ্রাকৃ ত জীব ! ...... ওর আধিভৌতিক অনেক ক্ষমতার কাল্পনিক
অনেক প্রমাণ পাওয়া গেছে......... এইসব হিস্টিরিয়া-গ্রস্থ কিংবদন্তী ,
নিজের ব্যাবসার প্রসারের জন্য সে নিজেই ছড়িয়েছে বলে সন্দেহ করা
হয়...... অন্য অনেক ভণ্ডের মতোই , সে ...............
অনেক খানি বড়। বলা অসম্ভব আসলে, নিচের দিকে কতখানি বিস্তৃ ত
সেটা। এটা একটা সুবিশাল চেম্বার, ভেতরে অনেকগুলি লাইট, আর
ঝকমকে অনেকগুলি বল সহ, কিন্তু তারপরও , অনেকখানি অন্ধকার।
দূরের দেয়ালটা দেখাই যাচ্ছে না, আলো-আঁধারির খেলা যেন অনন্ত পথ
জুড়ে বিস্তৃ ত। লাইট গুলি যেন অন্ধকারকে আরও গাঢ় করে তু লছে,
নিজেদের চক্রের বাইরে তেমন আলো ছড়াতে পারছে না। উদ্দাম , ধুপ
ধুপ শব্দে নাচের বাজনা বাজছে, সামনের দেয়ালের কোন একটা অংশ
থেকে।
কনস্টেনটিন পাথরের সিঁড়ি বেয়ে নামা শুরু করলো। লেভেলের পর
লেভেল পার হয়ে যেতে লাগলো , টেবিল আর বারে ভর্তি । একটা
টেবিলে, একদল স্যুট পরা ব্যবসায়ী বসে ছিলো । আপাতদৃষ্টিতে
তাঁদেরকে দেখতে খুবই সাধারণ মনে হচ্ছিলো । কিন্তু তাদের মধ্যে
একজন গ্লাসগুলোতে ‘এভিয়ান’ ঢালল , আরেকজন সেগুলোর
ওপর দিয়ে হাত বুলিয়ে আনার পর দেখা গেলো, সেগুলো রেড ওয়াইন
এ পরিণত হয়েছে ! আর, কনস্টেনটিন জানে, ওগুলো দেখতে যেরকম,
স্বাদও সেরকমই হবে !
আরেকটা টেবিলের সামনে দিয়ে যাবার সময়, দেখলো বিশের
কোঠার দুই মেয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ওদের চোখগুলো জ্বলে
উঠলো সে ওদের সামনে দিয়ে যাবার সময়। সে ওদের তোষামোদপূর্ণ
ফিসফিস কথা, মুখ টিপে হেসে ওঠা শুনতে পেলো। আর, ওর
নিজেকে কেমন জানি নগ্ন মনে হলো। মেয়েদুটো ওদের এক্স-রে চোখ
দিয়ে, ওকে আসলেই নগ্ন করে দেখে নিয়েছে !
113
সাত
বন্ধ হয়ে গেলো একটু পরেই। ওর মনে হচ্ছিলো ওর পায়ের নিচে বুট
গুলো ছিঁ ড়ে ছিঁ ড়ে পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারপরও সে হেঁটে চললো
নিঃসাড়ে, ক্লান্তিহীন ভাবে।
মাইলের পর মাইল............
ওর তৃ ষ্ণা পাওয়ার কথা ছিলো, কথা ছিলো প্রচণ্ড গরম লাগার।
কিন্তু এসবের কিছুই হলো না।
শেষ বিকেলে, সে একটা পাথুরে ঢালের মাথায় উঠলো , আর দূরের
দিকে তাকালো। ওটা ... ওটা কি একটা রাস্তা ? ঢেউ ওঠা তাপ
তরঙ্গের মধ্যে নাচছে ? হ্যাঁ, একটা ছোট ট্রাক ঝলসে উঠলো সূর্যের
আলোতে, এতদুর থেকে ওটাকে দেখতে খেলনার মতোই লাগছে।
কিন্তু, ওটা একটা রাস্তাই বটে।
উত্তরের দিকে গেছে ওটা।
আমেরিকাতে ওর জন্য আসলে কি অপেক্ষা করছে ? সে
জানতো, আমেরিকাকে অনেকেই, মেক্সিকোর দরিদ্রতম অঞ্চলগুলোর
মতোই নরকতু ল্য দেখতে পেয়েছে। উত্তর আমেরিকাতে, অবৈধ
অভিবাসীদেরকে রীতিমতো শোষণ করা হয়, একদম নামমাত্র বেতন
দেয়া হয়। ওর সাথে ময়লা কু ড়ানো এক লোক, ভিক্টোরিয়ানো , যার
দুটো আঙ্গুল নেই, সে একটা গল্প বলেছিলো ওকে। ও সেই
পয়সাখেকো কয়োট দেরকে অনেক টাকা দিয়েছিলো ওকে উত্তরে নিয়ে
আসার জন্য। টেক্সাসে , একটা মাংস প্যাকিং করার কারখানায় চাকরি
নিয়েছিল সে। কারণ চাকরি দাতারা ওকে বলেছিলো , ঘণ্টায় দশ
ডলার করে পাবে সে। কিন্তু , ওরা ওকে দিলো ছয় ডলার, সেখান
127
লস এঞ্জেলস, ক্যালিফোর্নিয়া
কনস্টেনটিন , ওর ঘরের জানালার গোবরাটের ওপর বসে আছে।
এক হাতে মদের গ্লাস, আরেক হাতে সিগারেট। পাশে রাখা আছে ছোট্ট
129
একটা কালো বাক্স, দেয়ালের স্পেশাল সেলফ থেকে এনে রাখা। ওটা
ওখানেই রাখা, খোলা হয়নি।
জ্যাক ডেনিয়েলসের বোতল থেকে আরেক পেগ ঢাললো সে
গ্লাসে। তারপর সেটাকে তু লে ধরলো আলোর দিকে। পীতাভ রঙের
বোতলটার ভেতরকার তরল শেষ হয়ে এসেছে প্রায়। “তু মি প্রায় মৃত,
সৈনিক !” সে বোতলটাকে বললো।
একটা কালো মাকড়শা, একটা আধুলির চেয়ে বড় হবে না, দৌড়ে
এসে বসলো ওর পাশে। কনস্টেনটিন দ্রুত গ্লাসটা ওটার ওপর চাপিয়ে
দিলো উপুর করে। সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে, গ্লাসের একপাশ
উঁচু করে ধোঁয়া ঢু কিয়ে দিলো ভেতরে। মাকড়শা’টা ভেতরের দূষিত
বাতাসে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতে লাগলো । অদৃশ্য গ্লাসের বাধায়
ধাক্কা খাচ্ছে বারবার, বন্দী আর মৃতপ্রায়।
“আমার জীবনে স্বাগতম ” কনস্টেনটিন মাকড়শাটাকে বললো।
“মিঃ কনস্টেনটিন ?”
চোখ পিটপিট করে, মাকড়শাটার দিকে চাইলো সে। তারপর টের
পেলো , অর্ধেক খোলা দরজাটার কাছ থেকেই কেউ কথা বলছে। ওটা
......... সেই মহিলাটা। হসপিটালে, আর থিওলজিকাল সোসাইটিতে
দেখেছিলো ওকে।
এঞ্জেলা কনস্টেনটিনের লম্বা, সরু , হোলি ওয়াটারের লাইন দেয়া
এপার্ট মেন্ট এর ভেতর নজর বোলাল । এটার আবছা, ছায়াঘেরা ,
ব্লাইন্ড দিয়ে আসা তেড়ছা আলোয় আলোকিত এলাকা দেখলো
একবার । বললো “আমি আপনাকে দেখেছিলাম.........”
130
“মনে আছে.........”
“আর.........”
কনস্টেনটিন নড করলো “নিয়মিত ভাগ্য ”
“আমি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই, যদি কিছু মনে না করেন ”
“আমি এই মুহূর্তে কথা বলার মেজাজে নেই ”
“তাহলে , স্রেফ শুনবেন , দয়া করে ?”
“আপনি একজন পুলিশ , তাই না ? ওরা কখনোই ‘না’ শুনতে চায়
না, দেখেছি আমি ! ”
“আমি ডিটেকটিভ এঞ্জেলা ডডসন । ” সোয়েটারের ভেতর থেকে
এলএপিডি ব্যাজটা বের করে দেখালো সে “প্লিজ ?”
“সব সময় কিছু না কিছু আছেই.........”
এঞ্জেলা দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে রইলো । দরজার ফ্রেমের ভেতরের
দিকে খোদাই করা কিছু অদ্ভু ত চিন্হের ওপর কৌতূ হলের সাথে হাত
বোলাতে লাগলো। ওগুলো ছিলো জাদুশক্তি সম্পন্ন কিছু চিন্হ ,
যেগুলো কিনা কিছু নির্দি ষ্ট খারাপ আত্মাকে বাইরে রাখে। “আমার বোন
গতকালকে খুন হয়েছে ।”
“শুনে খারাপ লাগলো ”
ওদের চোখাচোখি হলো । কনস্টেনটিন দেখলো , বিষণ্ণতায় ছাওয়া
একজোড়া চোখ , নজর মিলিয়ে রাখা কষ্টকর। আর, ঐ চোখের
ভেতরে আরও কি জানি আছে ............
ও অন্যদিকে তাকাতে বাধ্য হলো।
131
“ডিটেকটিভ !”
কনস্টেনটিন ওর বিল্ডিঙের নিচের ফু টপাথ ধরে দৌড়াচ্ছে,
স্যাঁতস্যাঁতে লস এঞ্জেলসের রাতে। “একটু দাঁড়ান, আজকে রাতে
আমি দৌড়ানোর মতো ফিট নেই। আপনাকে তাড়া করতে পারবো না।
”
এঞ্জেলা ঘাড়ের ওপর দিয়ে ঘুরে তাকালো , একটু ধীর হলো গতি
“জাহান্নামে যাও !”
“ওটার ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। ” কনস্টেনটিন ওর বাছাই
করা মিষ্টি হাসি দিলো এবার – যদিও দেখতে বেশ কঠোর লাগলো
সেটা “কি হবে, যদি আপনাকে আমি বলি যে, ঈশ্বর আর শয়তান
একটা বাজি খেলছেন ? একটা তূ রন্ত বাজি খেলা, সমগ্র মানব জাতির
সমস্ত আত্মাকে নিয়ে.........”
ওর পেছনে, স্ট্রিট লাইটগুলো একটা একটা করে নিভে যাচ্ছে।
“বিশ্বাস করুন। মানুষের সাথে কোন সরাসরি যোগাযোগ নেই। এটাই
নিয়ম। শুধুই প্রভাব বিস্তার করা যাবে। দেখার জন্য, কে জেতে !”
135
কাজ করার ক্ষমতা নিয়ে জন্মাই। তারপর, অন্য কিছু একটা কোথাও
থেকে এসে আমাদেরকে আলোড়িত করে, আর আমরা সত্যিকারের
অশুভ কাজ করতে থাকি ! ”
“কি – পিশাচ, ভূ ত ?”
“হ্যাঁ !”
“ওয়াও, বলার জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু আমি শয়তানে বিশ্বাস করি না ”
“আপনার করা উচিত” অনুভূ তিপূর্ণ সুরে বললো কনস্টেনটিন
“কারণ সে আপনাকে বিশ্বাস করে!”
ওদের কাছাকাছি থাকা শেষ বাতিটাও নিভে গেলো। আর প্রায়
নিকষ কালো অন্ধকারে ঢেকে গেলো ওরা। কনস্টেনটিন দেখতে পেলো,
শহরের দূরতম প্রান্তে আলোর ক্ষীণ রেখা দেখা যাচ্ছে । দেখতে পেলো
অন্ধকারে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে এঞ্জেলা “লোডশেডিং ?”
“না সম্ভবত” কনস্টেনটিন বললো “সেই ধরণের কিছু না। আমাদের
যাওয়া উচিত.........”
কনস্টেনটিন দেখলো , হাঁটা দূরত্বে কেবল একটা আলো দেখা যাচ্ছে।
কালো নোংরা ভেলভেটের মতো রাতের আঁধারে, ঐ একটা আলোই
জ্বলছে কেবল। একটা খড় খড় আর খ্যানখ্যানে শব্দের বাতাস ধেয়ে
এলো ওদের দিকে। খানিকক্ষণ আগে নিজের বাসা থেকে যে দূষিত
বাতাসের শব্দ শুনেছিলো কনস্টেনটিন, সেটা এই বাতাসেরই পূর্বাভাস
ছিলো। কালো, দুর্গন্ধযুক্ত , ঝটপট শব্দ করতে থাকা ডানার শব্দ আর
দমকা বাতাস।
137
টা হয়ে গেছে দাঁত বের করা একদল ক্লাউনের, যেটা কিনা জেলখানায়
বসে এঁকেছে শিশু হত্যাকারী জন ওয়েন গ্রেসি। অর্কি ডের গাছ গুলো
ক্রমাগত সজিব থেকে নির্জীব হয়ে যাচ্ছে, পোড়া ছাইয়ে পরিণত হয়ে
চলেছে বারংবার। সোফাটা তৈরি মানুষের চামড়া দিয়ে , সাথে জীবিত
মানুষের মুখও দেখা যাচ্ছে সেখানে ! বিড়ালটাকে দেখা যাচ্ছে না ......
না , না আছে , ঐ যে, কেবল চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে ওটার, বাতাসে
ভেসে আছে। পুরো দেহ এখানে দেখা যাবে না ওর, বোঝাই যাচ্ছে।
ও একটা ভীষণ গরম বাতাসের হলকা টের পেলো। সেদিকে
তাকিয়ে দেখলো, সামনের দেয়ালটা বেশীর ভাগই ছিঁ ড়েখুঁড়ে গেছে,
যেন কোন বোমা হামলা হয়েছে এখানে। সেই ফাঁক দিয়ে আসছে এক
ধরণের অসুস্থ কালচে বাদামী রঙের আভা.........
সে দেয়ালের সেই জীর্ণ গর্ত টার কাছে এগিয়ে গেলো, শুনছে।
কাছাকাছি যাবার পর, ওর মনে হলো , লক্ষ লক্ষ ছোট্ট চোয়াল, কিছু
যেন চিবিয়ে চলেছে একসাথে...... সে চেহারা বিকৃ ত করে ফেললো
সাথে সাথে। মনে পড়লো , ও খালি পায়ে আছে , পায়ের নিচের
কার্পেটটাও বদলে গেছে। টের পেলো, সেই খালি পায়ের নিচে
অনেকগুলি জিহ্বা চেটে চলেছে ওর পা, আর ছোট্ট ছোট্ট দাঁতের
কামড়ও টের পেলো সেই সাথে। ও সেই গর্ত দিয়ে তাড়াতাড়ি ওপাশে
চলে গেলো, তারপর থেমে গেলো একগাদা ধোঁয়া ওঠা পাথরকু চির
ঢিবির ওপর দাঁড়িয়ে। দেখতে পেলো, সামনে বিছিয়ে আছে নির্দি ষ্ট এক
ধরণের নরকঃ এটা হলো ‘লস এঞ্জেলসের নরক !’
148
ঠিক যেমন আপনি নরকে আশা করেন, সেই উচ্চকিত আর্ত নাদের
ধ্বনি। কিন্তু সেগুলো এতো বেশী পরিমাণে ছিলো যে, সবগুলো মিলে
এক গম্ভীর কানে তালা ধরানো শব্দের সৃষ্টি করে চলেছে। ওটা
কনস্টেনটিনকে মনে করিয়ে দিলো পেনডেরেকির ‘হিরোশিমার জীবন্ত
বলি’ দের শোকগাথার বা বিলাপগীতির কথা !
ও এগিয়ে চললো। নুড়ি পাথর বিছানো পথ ধরে। একপাশে ছিলো
একটা ইটের দালান। আর, ভু ল করে সেদিকে তাকিয়ে ফেললো সে।
ওর চোখে পড়লো , ইটগুলোর মাঝখানে একটা অস্বাভাবিক নড়াচড়া
, ইটগুলো যেন নিজে থেকেই ঝাঁকি খাচ্ছে ক্রমাগত। প্রত্যেক জোড়া
ইটের মাঝখানে, মানবদেহের বিভিন্ন টু করো দেখা যাচ্ছে ! ঠিক যেন
হামানদিস্তায় ফেলে মানুষ পিষছে কেউ ! ইটগুলোর নিষ্পেষণে , সেসব
মানুষের রক্তাক্ত আত্মাগুলো ক্রমাগত বিলাপ করে যাচ্ছে, ক্ষমা ভিক্ষা
করে যাচ্ছে অনন্তকাল ধরে। সেই ইঞ্চিখানেক জায়গাতেই, মানুষগুলো
কিভাবে জানি বেঁচে আছে । আর ইটগুলো ঠিক মানুষের দাঁতের মতোই
আগুপিছু করে , বলতে গেলে পুরো বিল্ডিঙটাই মানুষের চোয়ালের
মতো নড়াচড়া করছে ---
কনস্টেনটিন দ্রুত অন্যদিকে তাকালো, ওদিক থেকে ভেসে
আসা অন্তহীন আর্ত নাদের শব্দ উপেক্ষা করলো পুরোপুরি। সে একটা
ক্ষয়ে যাওয়া নিচু দেয়ালের কাছে এলো, সেটার ওপর দিয়ে লাফিয়ে
পার হলো। তারপর , একটা পুড়ে যাওয়া বাঁধ দিয়ে নেমে এলো উঁচু
দেখতে একটা পরিত্যাক্ত হাইওয়েতে । সেই দিগন্ত বিস্তৃ ত রাস্তাটা কোন
150
অল্প সময়ের মধ্যে, ওকে ঝাঁপ দিতে হবে। এখানে আসার পর থেকে
ক্রমাগত সেটাই করে চলেছে। ওকে সেটাই করে যেতে হবে, অনন্তকাল
ধরে, একবার, বারবার।
ওর নিচে , হাসপাতাল থেকে ভেসে আসছে চিৎকারের শব্দ। দাঁত
কড়মড় করার শব্দ ভেসে আসছে সেখান থেকে। পৈশাচিক একটা
হাসির শব্দ শোনা গেলো , তারপর এক অভিশপ্ত আত্মার আত্মপক্ষ
সমর্থনের কথা শোনা গেলঃ
“প্লিজ, শয়তানকে বলুন আমি দুঃখিত। ঈশ্বর, যীশু আর
মোহাম্মদকেও বলুন , আমি দুঃখিত ! ওরা...... ওরা আমাকে এখানে
ভর্তি করে দিলো। আমি জানতাম আমার আর কোন আশা নেই। তাই
আমি জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়লাম – ঈশ্বরকে বলুন আমি দুঃখিত ,
ওহ ওটা করবেন না , প্লিজ , প্লিজ............”
কিন্ত ইসাবেল সেই চিৎকারের দিকে সামান্যই মনোযোগ দিচ্ছে। অন্য
আরও আরও চিৎকার ভেসে আসছে ভিন্ন ভিন্ন দিক থেকে। আসলে,
আশাহীন অনুশোচনা, আর নিষ্ফল কপটতা , নরকের প্রধান
উপাদানগুলোর একটা। নিরর্থক ক্ষমা ভিক্ষা এখানকার মৌলিক
বিষয়।
এখন , ইসাবেল অনুভব করলো, ওর পালা এসে গেছে। সময়
হয়েছে। সে হসপিটালের ব্রেসলেটটা হ্যাঁচকা টানে ছিঁ ড়ল সে .........
নয়
কিছু মুহূর্ত পর, এঞ্জেলা সোজা হয়ে বসে, চোখ মুছলো “কিভাবে
......... ?”
কনস্টেনটিন জানতো ও কি বলতে চাচ্ছে। যে মেয়েটা আত্মহত্যার
নাম শুনলেই ভয়ে কাঁপত, সবচেয়ে বেশী ঘৃণা করতো, সে কিভাবে এই
কাজ করলো ?
ওর কাছে এটার কোন উত্তর ছিলো না। কেবল তাকিয়ে রইলো
মেয়েটার চোখের দিকে। সেদিকে তাকিয়ে, একটা ধাক্কার মতো খেলো
সে। অন্যদিকে তাকাতে চাইলো, পারলো না। মেয়েটা কোন চেষ্টা ছাড়াই
ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে নিস্পলকভাবে।
শেষমেশ, একটা প্রচণ্ড শারীরিক দুর্বলতা গ্রাস করলো
কনস্টেনটিনকে, ভেতর থেকে। সে কম্পিত কণ্ঠে বললো “আমার......
খেতে হবে কিছু ”
এঞ্জেলা নড করে বললো “অবশ্যই, চলুন এখান থেকে বের হয়ে
যাই। ” কনস্টেনটিনকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করলো সে।
আসলে, কনস্টেনটিন চাচ্ছিলো এই ঘর থেকে বের হয়ে যেতে –
সেইসাথে মেয়েটার দৃষ্টির সামনে থেকেও। এই দুর্বলতার বোধ ভালো
লাগছিলো না ওর কাছে। ওর সেই সব-কিছু-জাহান্নামে-যাক ধরণের
ব্যাক্তিত্বে ফেরত যেতে চাচ্ছিলো সে। সেই ব্যাক্তিত্ব, যেটা সবসময়
লড়াইয়ের জন্য তৈরি থাকে, সেটাতেই সে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে বেশী।
এটা অনেকটা পুরানো বন্দুকের হাতলের মতো, অনেক ব্যবহারে হাতের
সাথে যেটা অভ্যস্ত হয়ে গেছে।
কিন্তু, প্রশ্নটা তখনও বাতাসে ভেসে আছে।
161
কিভাবে ?
মুখ মানুষের মতো দেখতেঃ হাজার হাজার দাঁত বের করা পোকামাকড়,
নিরলসভাবে কু রে কু রে খেয়ে ফেলছে ওর আত্মা !! .........
কনস্টেনটিন হাসলো, শুকনো , বিষাক্ত হাসি “ওরা আমার ওপর
এক্সরসিজম করলো, ঠিক একটা দাঁত তোলার মতো, যেটা ওখানে
ছিলোই না ! ”
কিশোর জন কনস্টেনটিন মোচড় খেতে লাগলো , ঐ শব্দগুলো
ওকে আঘাত করার পর। সেই শব্দগুলোর ভেতর প্রচণ্ড শক্তি ছিলো,
যেগুলো ওর ভেতরে অনুরণন তু ললো। ওর ভেতরে সার্জ নের ছুরির
মতোই খুঁড়ে চলেছিল – যদিও ‘এক্সরসাইজ’ করার মতো সেখানে
কিছুই ছিল না ! কেবল ছিলো ঐ পিশাচটার লোভী চাহনির যন্ত্রণা , যে
কিনা পবিত্র জলের ছিটে থেকে সাবধানে দূরে সরে দাঁড়িয়ে আছে ......
ছেলেটা যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠছে, সত্যিটা না বলতে পারার যন্ত্রণা।
পরিস্থিতির ভণ্ডামি এতোটাই জটিল ছিল, পবিত্র জল হাইড্রোক্লরিক
এসিডের মতো হয়ে পড়ছিল ।
দশ
কনস্টেনটিন খেয়াল করলো, এঞ্জেলা ওপরে আকাশের দিকে
তাকিয়ে আছে। ওরা একসাথে রাস্তা ধরে হাঁটছে অলস পায়ে। সে
হয়তো উড়ন্ত পিশাচদের থেকে আরেকটা আক্রমণ আশা করছে !
“ওরা আবারও একইভাবে আক্রমণ করবে না, অফিসার এঞ্জেলা !
ঐ ব্যাটা কু ত্তার বাচ্চা ওর আক্রমণের জন্য আপনাকে তৈরি থাকতে
দেখতে পছন্দ করে না ! যখনই বুড়ো খোকা বুঝতে পারবে আপনি
অন্যমনস্ক, তখনই সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত দিক থেকে আক্রমণ শানাবে
সে ! ”
“তো- আমরা যে এখানে খোলা আকাশের নিচে ঘুরে বেড়াচ্ছি,
এখানেও ওরা আমাদের টার্গেট করে আছে ? ” এঞ্জেলা মাথা নাড়লো
190
ওরা চলে এলো সেখান থেকে। লিফটে করে নীরবে নেমে এলো
হাইড্রোথেরাপি সেন্টারে। কনস্টেনটিনের মনে হলো , সান্ত্বনাসূচক কিছু
একটা বলা উচিত ওর – কিন্তু, তার সান্ত্বনাবাণীতে অনেক আগেই
পচন ধরে গেছে যে ! পুলের কাছে এগিয়ে গেলো ওরা । পুলিশ টেপ
এখনও ঘিরে রেখেছে সেটা।
প্রায় শোনা যায়না এরকম কণ্ঠে বলে উঠলো এঞ্জেলা “আমার মনে
হয়, ও সবসময় ব্যাপারটার রহস্যোদ্ধার করতে চাইতো। এটার মানে
বের করতে চাইতো। সিয়ান্সে, ওইজা বোর্ড , চ্যানেলিং ... বাবা
ভাবতেন , ও মনোযোগ পেতে চাইছে। ” একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেললো
সে। দুঃখের সাথে হাসলো একটু “ও অবশ্য সেরকমই আচরণ
করছিলো, সবাইকেই বলে বেড়াচ্ছিল, সে যেসব জিনিস দেখতে
পাচ্ছিলো , সেসব সম্বন্ধে। পাগলাটে জিনিসপত্র, দৈত্য দানো । যেমন
আপনি দেখেছেন। মায়ের আত্মারাম খাঁচা ছাড়া করে ফেলত সে প্রায়।
তারপর, একদিন সে ওইসব কথা বলা বন্ধ করে দেয়, প্রায় এক বছর
এরকম থাকে সে। ”
কনস্টেনটিন ওর দিকে তাকালো । তারপর অন্যদিকে তাকালো ।
এটা ভয়ঙ্করভাবেই , অবধারিত “তো , তোমরা ওকে হাসপাতালে দিয়ে
দিলে !”
এঞ্জেলার শ্বাস কর্ক শ হয়ে উঠলো “প্রথমদিকে, তোমাকে তো কেউ
বলে দেয় না, তাই না ? তু মি জানোও না এটা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে
হয়। তাহলে, কি করবে তু মি ? ”
“আমাকে ওর রুমটা দেখাও ” কনস্টেনটিন বললো।
200
এঞ্জেলার ঠোঁট শক্ত হয়ে গেলো। চেহারা দেখে মনে হচ্ছিলো , এখুনি
আঘাত করবে কনস্টেনটিনকে। “আমি কিভাবে জানবো ?”
কনস্টেনটিন আরও এক পা এগোল “ও কি করেছিলো , এঞ্জেলা
?” আরেক পা, ইচ্ছা করে কাছে ঘেঁষে যাচ্ছে এবার।
এঞ্জেলার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলো “আমি জানি না !”
“তু মি হলে কি করতে ?”
ও কনস্টেনটিনের দিক থেকে অন্যদিকে তাকালো এবার।
নিষ্করুণ সুরে বলে চললো কনস্টেনটিন “তু মি হলে, ওর জন্য কি
রেখে যেতে ? ”
আর একটু ঝুঁকে এলো সে, ওর চোখে তাকাতে বাধ্য করার জন্য।
ওরা কেবল নিঃশ্বাসের দূরত্বে দাঁড়িয়ে ছিল এখন। “এটা কোথায়
থাকতে পারে ?” দাবী করলো সে। ওর গলা চড়ছে ক্রমশ “তু মি হলে
কি রেখে যেতে ওর জন্য ? ” আরও জোরে বললো “এটা কোথায়
থাকতে পারে .........?”
ওকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে , এঞ্জেলা দৌড়ে গেলো জানালার
দিকে। চোখ বন্ধ, জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে।
কনস্টেনটিন স্রেফ তাকিয়ে রইলো , বুঝতে পারছে, বেরিয়ে আসছে
কিছু একটা।
এঞ্জেলার চোখ খুলে গেলো , একটা বোঝা নেমে গেছে, এরকম মনে
হচ্ছিলো ওকে দেখে। জানালার আয়নার আরও কাছে এগিয়ে গেলো
সে, আর সেখানে ফুঁ দিতে লাগলো। জানালায় বাষ্প জমতে লাগলো
205
এতে করে। এরপর, আবারও দিলো ফুঁ , এবার আরেকটু নিচের দিকে।
এবার, জানালায় একটা আকার ফু টে উঠতে লাগলো ।
এরপর, ও চমকে দিলো কনস্টেনটিনকে। ঘুরে, মেঝে থেকে
পাপোষটা তু লে নিলো হাতে। তারপর ওটা দিয়ে বাড়ি মারতে লাগলো
স্টিল বেডের ফ্রেমে। মেঘের মতো ধুলো উড়তে শুরু করলো সেখান
থেকে। “......... আমরা একে অন্যের জন্য মেসেজ রেখে যেতাম ”
ও আরও জোরে বাড়ি মারতে লাগলো পাপোষটাতে, আরও ধুলো
উড়ল। “নিঃশ্বাসের মধ্যে – আলোর মধ্যে ”
আরেকবার বাড়ি মারলো সে । কনস্টেনটিন আপ্রাণ চেষ্টা করলো না
কাশতে, কাজটা খুবই কঠিন, কিন্তু সে বেশ কয়েকটা সুড়সুড়ি দমিয়ে
রাখতে পারলো।
“জানালার মধ্যে ............”
পাপোষটা ফেলে, দরজার কাছে গিয়ে ঘরের লাইটটা নিভিয়ে দিলো
সে।
ভোরের আলো আসছিলো জানালা দিয়ে, আঙ্গুল দিয়ে লেখা একটা
অক্ষরকে আকার দিচ্ছিল সেটা। দেয়ালে, ধুলোর তৈরি একটা অক্ষর
ভেসে উঠলো – কোর ১৭-০১ !
“আমার একটা চার্চ দরকার” বলে উঠলো কনস্টেনটিন।
ও দৌড়ে বেরোল রুমটা থেকে, করিডোর ধরে দৌড়াতে লাগলো ।
এঞ্জেলা পিছু নিলো হন্তদন্ত হয়ে।
“করিন্থিয়ান্স ” কনস্টেনটিন ছুটতে ছুটতে বললো।
206
এগারো
বারো
“ওটা কিসের গন্ধ ? সালফার ? ” এঞ্জেলা জিজ্ঞেস করলো। ওরা
দাঁড়িয়ে আছে , বী ম্যানের স্বরচিত , ছোট্ট , অদ্ভু ত ধরণের এপার্ট মেন্টের
সামনে।
কনস্টেনটিন নাক টানলো – আর ভ্রু কুঁ চকালো । গন্ধটা কিসের ?
কাঁচা নর্দ মা – আর রক্ত ?
রক্ষণাবেক্ষনের দরজাটা বন্ধ, তালা দেয়া। কনস্টেনটিন ম্যানেজারকে
খুঁজে পায়নি, যদিও বাইরের দরজাটা খোলাই ছিলো। মেইন ডেস্কের
পেছনে, একটা সকালের টক শো চলছিলো আওয়াজ ছাড়া। এছাড়া,
প্রাণের কোন চিন্হ চোখে পড়ছে না কোথাও ।
এঞ্জেলা, দরজার নিচ দিয়ে আসতে থাকা মাছিদের থেকে সরে
গেলো। ওদের একটা বড়সড় পাল, তড়িঘড়ি করে পালিয়ে গেলো।
সেই বিজ বিজ শব্দ আবার শোনা গেলো, কাঁপছে এবার।
কনস্টেনটিন ওর গোড়ালির কাছে সুড়সুড়ি অনুভব করলো –
ঝাঁকালো ওটা, আর অনেকগুলি বড় বড় ঘরোয়া মাছি বেরিয়ে এলো
219
কাশি দিও না , এখন না। মনোযোগ দাও। এই মুহূর্ত পার হয়ে যাবে,
আর তখন অনেক দেরী হয়ে যাবে। কাশি দিও না !
“আলোর দোহাই , আদেশ করছি আমি !”
ওর বাহুর চারপাশের বাতাস যেন হঠাৎ পাক খেতে শুরু করলো ,
ডাকে কাজ হচ্ছে ! এঞ্জেলা পিছিয়ে গেলো খানিক, ভয় পেয়েছে।
মাছিগুলো মাথার ওপর ঘুরে ঘুরে উড়ছে......
“আলোর দোহাই, আদেশ করছি আমি, আলোর দোহাই ...... ”
তখনই, কাশির দমক এলো একটা। কনস্টেনটিন মোটেই শ্বাস নিতে
পারছে না। ক্লান্তিতে মাথা ভেঙ্গে পড়তে চাইছে, অক্সিজেনের অভাব
বোধ করছে ও – সেইসাথে হতাশা। রক্ত উঠে এলো ফু সফু স থেকে
মুখে। থুতু ফেলে, হাঁটু ভেঙ্গে বসে পড়লো ও।
এঞ্জেলাও বসলো পাশে, ওর কাঁধের ওপর একটা হাত রাখলো।
মাছিগুলো চলে গেছে। বী ম্যানের ছেঁ ড়াখোঁড়া শরীরটা পড়ে আছে
কেবল। আর মেঝেতে কনস্টেনটিনের রক্তের খানিকটা ফোঁটা।
কাশির দমক থামলো, কিন্তু ততোক্ষণে দেরী হয়ে গেছে।
“এটা আমার দোষ ” কনস্টেনটিন কর্ক শভাবে বললো “একটা
অভিশপ্ত মানুষের প্লেগ !”
“জন, তোমার একজন ডাক্তার দরকার ”
কনস্টেনটিন গলার ভেতর বিতৃ ষ্ণার শব্দ করলো একটা, তারপর
মাথা নাড়লো “আমি ডাক্তার দেখিয়েছি।”
ও উঠে দাঁড়ালো, আর ওর চারপাশে রুমটা যেন ঘুরতে শুরু
করলো। নিঃশ্বাস নিতে এখনও কষ্ট হচ্ছে। ভয় হচ্ছে, মুখ থুবড়ে পড়ে
222
না যায়। দুলতে শুরু করলো সে, হাত ছড়িয়ে দিয়েছে দু পাশে। এঞ্জেলা
দাঁড়িয়ে , ওকে সাহায্য করতে চাইলো।
“সরে যাও ” ওকে বললো কনস্টেনটিন। আশা করছে , মেয়েটা
বুঝতে পারবে। ও চাইছে এঞ্জেলাকে দূরে কোথাও পাঠিয়ে দিতে ,
নিরাপদ কোথাও। প্রথমে হেনেসি, তারপর বী ম্যান। হয়তো মেয়েটা’র
পালা এরপর। “প্লিজ ...”
কনস্টেনটিন তাকালো বী ম্যানের ডেস্কের দিকে, খুব বেশী অবাক
হলো না এটা দেখে – যে স্ক্রলগুলো সব ছাই হয়ে গেছে।
এঞ্জেলা একটা শ্বাস ফেলে ওর পোর্টে বল ওয়াকি-টকি বের করলো
। “টেন-টু য়েলভ টু বেস। অফিসারের সাহায্য দরকার। আমরা একটা
......”
থেমে বী ম্যানের শরীরের দিকে তাকালো সে। এটাকে কোন দলে
ফেলবে ও ? ম্যানুয়ালের কয় নাম্বার এ পড়ে এই অদ্ভু ত হত্যাকাণ্ড ?
“উম......... অফিসারের সাহায্য দরকার ”
কেবল আনন্দের শিস দিতে দিতে , খুবই খুশি মনে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে
হেঁটেই যেতে থাকবে ?
“কিন্তু তু মি সেটা জানতে ” এঞ্জেলা বলে চললো “তাই না ?”
কনস্টেনটিন সন্দেহ করেছিলো। কিন্তু কিছু বলেনি। এঞ্জেলা ঘরে
ঢু কে এলো এক পা। ওই এক পা ফেলার মধ্যে যেন কিছু একটা ছিলো,
যেন – একটা রেখা পার হয়ে , ওর দিকে এগিয়ে এলো মেয়েটা।
“তু মি কিছু একটা দেখেছ আমার মধ্যে” সে বললো “কিছু একটা,
যেটা ইসাবেলেরও ছিলো...”
“বাড়ি যাও, এঞ্জেলা ” কনস্টেনটিন ওর হাতের সিগারেটের দিকে
তাকালো । প্রায় পুড়ে গেছে ওটা। একটা সিগারেটের মতোই, ওর
জীবনও জ্বলতে জ্বলতে এক সময় শেষ হয়ে যাবে।
এঞ্জেলা ভেতরে ঢু কে এলো, ঘুরঘুর করতে লাগলো আশেপাশে।
দেখতে লাগলো , যেসব অদ্ভু ত অদ্ভু ত জিনিস দিয়ে নিজের ঘর
‘সাজিয়েছে’ কনস্টেনটিন !
“আমার বুঝতে হবে, কনস্টেনটিন ”
কনস্টেনটিন কেবল মাথা নাড়লো “ওখানে যে কি কি আছে, ওসব
তু মি জানতে চাইবে না। এ ব্যাপারে আমার ওপর বিশ্বাস রাখতে
পারো। ”
“আমি ইসাবেল নই ”
“না, ও ওর ক্ষমতাকে মেনে নিয়েছিলো। তু মি , তোমারটাকে
অস্বীকার করেছো। অস্বীকার করাই ভালো আসলে। এজন্যই তু মি
এখনও বেঁচে আছো। আমার সাথে লেগে থাকলে, পাল্টে যাবে সেটা।
224
জন্য রাখা গাড়ি ভর্তি একটা পার্কিং লটে গাড়ি দাড় করালো।
আশেপাশে কেউ নেই।
ফ্রান্সিস্কো লোহার স্পাইকটার ওপর হাত বুলালো , আর বুঝতে
পারলো ব্যাপারটা। কিন্তু সে ইংরেজিতে বলতে পারলো না , স্প্যানিশে
জবাব দিলো “আমার টাকা পরিবর্ত ন করে নিতে হবে।”
নিগ্রোটা মাথা নাড়লো “বোকা ! তু মি কি বলছো আমি কিছুই বুঝছি
না। তোমার কাছে ......” এবার সে টাকাপয়সার আন্তর্জাতিক সাইন
ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যাবহার করলো , দুই আঙ্গুল একে অপরের সাথে ঘষে
জিজ্ঞেস করলো “অ্যামেরিকান ডলার আছে ?”
ফ্রান্সিস্কো মাথা নাড়লো।
“মাদারচোদ, তু ই ব্যাটা কেলেঙ্কারি লাগাবি দেখছি ! তোর ওই বালের
টাকা চেঞ্জ করার জন্য আমি দাঁড়িয়ে থাকবো, ভেবেছিস তু ই ? দেখি ,
গাড়ি থেকে নাম, গায়ে কি কি পরে আছিস আর সাথে কি কি আছে
দেখে নিই । তারপর তু ই আমাকে ধন্যবাদ জানাস যে তোর মাথাটা যে
উড়িয়ে দিইনি এইজন্য ”
ফ্রান্সিস্কো কাঁধ ঝাঁকিয়ে , বেরিয়ে এলো। ড্রাইভারটা ওর পাশে এসে
দাঁড়ালো , কাঁধের সাথে বাধা হোলস্টারে একটা রিভলবার দেখা যাচ্ছে
“আমি তোর পাছায় এমনিতেও লাথি কষাতাম, ভেজা পাছা
কোথাকার। তোকে নিয়ে কোথাও আটকে রেখে, তোর আত্মীয়স্বজনের
কাছ থেকে টাকা খোঁজা যেতে পারে। তাহলে কিন্তু টাকার পরিমাণ
অনেক বেড়ে যাবে, ব্যাটা বুরবক --- ”
228
সন্তুষ্টির একটা শব্দ করলো সে, তারপর ওটা রেখে দিলো পকেটে।
ড্রাইভারের পকেট হাতড়ে অল্প কিছু ডলার পেলো, ট্যাক্সির ভেতরে
পেলো ইগনিশনে লাগানো চাবি। স্টার্ট দিয়ে চলতে শুরু করলো সে।
কিন্তু কোথায় ? যে কোনখানে ! সম্ভবত একটা ব্যাংক এ, এই
স্পাইকটা একটা ব্যাংক ভল্ট খুব সহজেই খুলে ফেলতে পারবে.........
ওটার জন্য অনেক সময় আছে । প্রথমে, তোমার প্রবৃত্তিকে
অনুসরণ করো। তোমাকে পথ দেখানো হবে। অন্য আরেকটা জায়গায়
যাওয়া প্রয়োজন তোমার.........
হ্যাঁ, ডাকাতি করার জন্য পরে অনেক সময় পাওয়া যাবে। ও পুবের
দিকে গাড়ি ছোটাবে, সেটাই ঠিক মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে । সেখানে কিছু
একটা আছে, এই বিরাট শহরের পূর্ব পাশে। ওখানে একটা , বিশেষ
জায়গা আছে, যেটা ওকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
কল থেকে বের হওয়া একটা পানির ফোঁটার দিকে দৃষ্টি গেলো ওর,
কাঁপছে ওটা। বের হতে নিয়েও আটকে গেছে যেন, পড়লো ওটা,
এরপর আটকে গেলো বাথটাব আর কলের মাঝখানে। চোখের কোণা
দিয়ে ও দেখতে পেলো , একটা কালো মসে’র আবরণ ছেয়ে ফেলছে
পুরো দেয়াল। ফাটল ধরছে দেয়ালে, ফেটে বেরোচ্ছে রক্ত আর এসিড ,
অনেক অনেক দূর থেকে ভেসে আসছে লক্ষ লক্ষ চোয়ালের কিছু
একটা চাবানোর শব্দ ।
সময় থেমে গেলো, তারপর, লাফ দিলো একটা......
পানির ফোঁটাটা নিচে পড়লো।
এঞ্জেলা পানির নিচে ভীষণ ছটফট করতে লাগলো , চোখ বড় বড়
হয়ে গেলো নীরব চিৎকারে। পানি, ওর চিৎকারের শব্দ আটকে দিলো ,
কিন্তু মুখ থেকে ক্রমাগত বুদ্বুদ বেরোতে লাগলো।
কনস্টেনটিন ওকে টেনে বসিয়ে দিলো। এঞ্জেলা বাজেভাবে কেশে
উঠলো, কাশি থামার পর উচ্চ কণ্ঠে কেঁ দে উঠলো। তারপর আবার
কেশে পানি বের করে দিলো বেশ খানিকটা, তারপর আবার শুরু
করলো বিলাপের সুরে চিৎকার। এরপর, কনস্টেনটিনের কাঁধ আঁকড়ে
ধরে , ঝাঁপিয়ে নামলো বাথটাব থেকে। ওকেসহ নিয়ে পড়লো মেঝেতে,
পানি ছিটকে পড়লো দুজনেরই ওপর।
এঞ্জেলার চিৎকার , বিলাপে পরিণত হলো, তারপর গোঙানিতে।
কনস্টেনটিনের ওপর পড়ে থেকে, কাঁপতে লাগলো সে ভীষণভাবে।
“ওহ, ঈশ্বর, জন। ওইসব লোকজনেরা, ইসাবেল।” ফুঁ পিয়ে ফুঁ পিয়ে
কাঁদছে সে এখন “আমি সব সময়ই জানতাম খারাপ লোকেরা কোথায়
234
কনস্টেনটিন সতৃ ষ্ণ নয়নে তাকিয়ে রইলো জানালা দিয়ে চু ইয়ে আসা
সোনালি আলোর দিকে “মানে হলো , সরাসরি ঐশ্বরিক জ্ঞান অর্জ ন
এবং ব্যবহার করার ক্ষমতা, বন্ধু । তোমাকে সেজন্য ঈশ্বরের প্রতি
বিশ্বাস রাখতে হবে। কিন্তু, আমি , কাউকে বা কিছুতে বিশ্বাস করি না,
অন্তত বেশিদূর পর্যন্ত না ! ”
এঞ্জেলা কোন কথা বললো না, কনস্টেনটিন এই ফাঁকে ‘জীবনের
নদী’ থেকে সংগ্রহ করা ‘পবিত্র ভু ষি’ ঢোকাল ওর ব্যাগে।
তখন এঞ্জেলা আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো “তোমার কি ধারণা ,
তু মি কখনও শিখতে পারবে ?”
“শিখতে পারবো , কি ?” হাত থেমে গেছে, জিজ্ঞেস করলো
কনস্টেনটিন। কিন্তু আসলে সে জানে।
“বিশ্বাস করা, যে কাউকে ”
“আমি.........” কাঁধ ঝাঁকালো কনস্টেনটিন “এটাতে এখন আর
কিছু এসে যায় না ”
বাকি যেটা সে উচ্চস্বরে বললো না, সেটা হচ্ছেঃএখন যেহেতু আমি
মারাই যাচ্ছি ।
একটু ক্ষণের অস্বস্তিকর নীরবতা নেমে এলো এরপর। কনস্টেনটিনের
মনে হলো , ওর আরও খানিক বেশী কিছু বলা উচিত। “আমি বী
ম্যানকে প্রায় বিশ্বাস করেছিলাম, তাই ওকে আমার হারাতে হলো
............” নিজের ভেতরে বেশ রাগ টের পেলো সে। পাবলিক ইমেজ
লিমিটেড এর একটা গান মনে পরে গেলো ওরঃ
“রাগ একরকম শক্তি......... রাগ একরকম শক্তি ”
238
তের
সুন্দর পরিষ্কার বাথরুম, মাঝে মাঝে, মেঝে থেকে মানুষের খুলি বের
হয়ে থাকা ছাড়া ! ঝর্ণা, যেগুলো আঠালো কাদা উদ্গিরণ করে না।
মানুষজন, ঘা, পোকামাকড় আর অন্তহীন দুঃখে মোড়ানো নয় , এমন।
ও এখানে থাকতে থাকতে থাকতে সম্ভবত দূষিত হয়ে যাচ্ছে বলে
তার মনে হলো। ‘দ্যা বস’ এটা পছন্দ করবেন বলে মনে হয় না।
তবুও, এটা ওর কাছে একদমই ঠিক মনে হলো না। যে , এই পুরো
জগতটা স্রেফ নরকের আরেকটা স্তরে পরিণত হবে ! এখানকার যা
কিছু , সবকিছু ছাতা পড়া, ধ্বংসপ্রাপ্ত আর ধর্ষিত কোন শিশুর মতো
কলুষিত হয়ে যাবে !
তবে, এই ধ্বংসকাণ্ডে ওর অংশটা নিয়ে ও বেশ মজা লুটবে। ওহ
হ্যাঁ, বেশ অনেকখানি মজা হবে তখন ......... সেইসব খুন, নষ্টামি আর
মরুভূ মির মতো আদিগন্ত কষ্টের সমুদ্র – সেটা ওর জন্য বেশ
অনেকখানি সান্ত্বনা বয়ে নিয়ে আসবে।
ও ঘুরতে শুরু করলো নিজের প্রতিবিম্বের দিক থেকে -- তারপর
আবার ফিরে তাকালো। ওর প্রতিচ্ছবিটা মুহূর্তে র জন্য খানিকটা বিকৃ ত
হয়ে গেলো , তাই না ?
ওটা কি ওর ভেতরের পিশাচটাকে , একটু ক্ষণের জন্য হলেও
দেখিয়ে ফেলেছিলো ? এটা তো চলতে দেয়া যায় না ।
ওটা কারণ হতে পারে না। ও তাকিয়ে থাকতে থাকতেই , ওর মনুষ্য
চেহারা ভীষণভাবে বিকৃ ত হয়ে গেলো। ওর সত্যিকারের পৈশাচিক সত্ত্বা
যেন ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে , যেন কোন মানুষের আসল চেহারা
বেরিয়ে পড়তে চাইছে রাবার মাস্কের আড়াল থেকে ।
247
মন্ত্রটা নিশ্চয়ই দুর্বল হয়ে পড়েছে ! এখন, এটা কিভাবে ঘটতে পারে
? এটা কি একটা নির্দি ষ্ট ঝামেলাবাজ, ঘাড়তেড়া , অনেকগুলি ট্যাটু
আঁকা কোন মানুষের কাজ, যার নাকি অনেক আগেই মরে যাওয়ার
কথা ছিলো ?
বালথ্যাজার মুখ দিয়ে অদ্ভু ত একটা শব্দ করে, চেহারায় হাত
বুলালো । আয়নার আরও কাছে গিয়ে দেখতে লাগলো সে। সম্ভবত
ওর কোন ভু ল হচ্ছে .........
তখনই, ওর চেহারায় ঢেউ খেলে গেলো কয়েকটা, যেন তরলে
পরিণত হচ্ছে সেটা। আয়নার সার্ফে সটাতেও যেন অনেকগুলো
ফোসকা পরে গেলো, কাঁপতে লাগলো সেটা।
তারপর ওটা বাইরের দিকে বিস্ফারিত হলো !
আয়নার ভেতর থেকে একটা আগুনে গোলা বেরিয়ে এলো, সাথে
আনলো গ্রেনেডের শ্রাপনেলের মতো আয়নার শত টু করো।
বালথ্যাজারকে আঘাত করলো সেগুলো, ধুম করে পেছনের দেয়ালে
নিয়ে ফেললো । মেঝে দিয়ে গড়িয়ে গেলো সে খানিকটা, ওর পার্থিব
দেহ স্থির হয়ে গেলো। ওর চারপাশে আগুন নাচানাচি করতে লাগলো ।
আগুন ?
“আগুন !” রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালো সে “আমি
তো আগুন থেকেই জন্মেছি !”
তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে চারপাশে তাকাতে লাগলো সে, কার এতো সাহস ?
তারপর , সে দেখতে পেলো একটা ছায়াচ্ছন্ন অবয়ব, ঠিক যেখানে
আয়নাটা ছিলো, সেখানে। ওটার পেছনে একটা করিডোর ছিলো ,
248
জানি এটার অস্তিত্ব আছে, বাছা ! সেন্ট ফ্রান্সিস, রামকৃ ষ্ণ , রুমি,
তেরেসা অব এভিলা – ওইসব মহামানবেরা , এই ধরণের গাইডলাইন
নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধহস্ত ছিলেন ! আর, আমার মনে হয়, ওসব পাবার
পক্ষে আমার যথেষ্ট দেরী হয়ে গেছে। কিন্তু...... তোমার জন্য বেশী দেরী
হয়নি এখনও। এটা...... এক ধরণের আধ্যাত্মিক জগতের দরজা খুলে
যাওয়ার মতো , অনেক ওপরের জগতের সাথে যোগাযোগের দরজা।
মহাজাগতিক রশ্মির সাথে সংযোগ স্থাপন, আর এটা পুরোটাই হলো
শক্তির রুপান্তর নিয়ে ব্যাপারস্যাপার , বুঝলে ? কিছু কিছু শক্তি আছে
, বুদ্ধিমান ! ওদেরকে খুঁজে বের করে, তোমার গাইড হিসাবে বেছে
নাও। তু মি জানো...... যা কিছু হয়ে যাক না কেন পরে..... ’
এঞ্জেলা এতক্ষণ ধরে গাড়ির ভেতরে বসে, সেটাই করার চেষ্টা করে
যাচ্ছিলো । টের পাচ্ছিলো , একটা দূরাগত শিহরণ । কোথা থেকে যেন
ভেসে এসে, ওকে ঠাণ্ডা কবলিত কোন দিনে উষ্ণ আদরের মতো বয়ে
যাচ্ছিলো ওর ওপর – দাঁড়াও এক মিনিট ! ওর মনে হলো, ও যেন
একটা কণ্ঠ শুনতে পেলো, না না , কোন কণ্ঠ নয় -- ওর মনে হলো ,
একটা বিশুদ্ধ সমঝোতা যেন আদানপ্রদান হলো !
তোমার ওকে সাহায্য করতে হবে, এক্ষু নি !!
তো, ও বের হয়ে এলো গাড়ি থেকে। বন্দুক চেক করলো, ঠিক
আছে। সম্ভবত, কোন এক ছোট্ট শয়তানের সাহায্যে, ও জ্যাকেটটা
খোলার সময়, গলার এমুলেটটার চেন ছিঁ ড়ে গেলো। জ্যাকেটটা গাড়ির
ভেতরে ছুঁ ড়ে ফেললো সে, সেটার সাথে রয়ে গেলো এমুলেটটাও রয়ে
251
নেপথ্যে থেকে কিছু একটা বলছে ! অন্য একটা কিছু। যেটা ও চোখে
দেখতে পায় না, সেরকম কিছু.........
ওপরে...... কোথায় তু মি কনস্টেনটিন ?
ধুম !
“—আমার !”
ধুমম !!
“--- বন্ধু !”
কনস্টেনটিনের ডান হাত ক্লান্তিতে অবশ হয়ে এলো। তাই ও এবার
নাকল- ডাস্টার’টা বাম হাতে পরে নিলো । তারপর চালিয়ে গেলো
ঘুষি-বৃষ্টি। প্রত্যেকটা ঘুষির সাথে সাথে ওর মনে হচ্ছিলো , ও
পিশাচটার আত্মিক কেন্দ্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যদিও চর্ম চক্ষে দেখা
যাচ্ছে চামড়া আর মাংস ফেটে যাচ্ছে, রক্ত উড়ছে বাতাসে। কিন্তু
কনস্টেনটিনের মনে হচ্ছে , ও একটা হাতু রি দিয়ে, চু ম্বক প্রতিরোধী
জায়গায় আঘাত করে যাচ্ছে বারংবার। টের পাচ্ছে , পিশাচটার
আত্মাটা , ক্ষয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে পৃথিবী থেকে। বাহ্যিক রূপটা
মিলিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে, স্বচ্ছ একটা আকার ধারণ করছে ওর শরীর।
শেষমেশ থামলো কনস্টেনটিন । বাতাসের জন্য হাঁসফাঁস করতে
লাগলো সে, ঘাম ঝরছে টপটপ।
বালথ্যাজারকে দেখে মনে হচ্ছিলো , অন্তিম শ্বাস নিচ্ছে সে নিঃশ্বাস
ত্যাগ করার আগে, চর্ম চক্ষে সেটা দেখতে সেরকমই লাগছিলো।
অস্বাভাবিক বড় একটা সার্জি কাল যন্ত্র বের করলো, স্টিলের তৈরি, কিন্তু
দেখতে হুবহু লোহার স্পাইকটার মতো ! ওর ওটা সরাসরি ঢু কিয়ে দেয়া
হলো ফ্রান্সিস্কোর ডান চোখে, তারপর, ঠিক একটা আলমারির তালা
খোলার মতো ঘুরিয়ে দেয়া হলো। ফ্রান্সিস্কোর মাথার তালু খুলে গেলো,
ঠিক যেমন প্লাস্টিকের ডাস্টবিনগুলো খুলে যায় পা দিয়ে নিচের লিভার
চেপে ধরলে । ভেতরে, ঘিনঘিনে উপচে পড়া পোকার দল, হামাগুড়ি
দিচ্ছে, চিবাচ্ছে কি জানি .........
আর সেই পোকারা , একসাথে , চিবাচ্ছে, বিজবিজ শব্দ করছে ......
সেই একই শব্দ , একই ধরণের একত্রে কিছু একটা চিবানোর হাড় হিম
করা শব্দ – যেটা সে পায় সেই লোহার স্পাইকটা হাত দিয়ে ধরলে।
স্রেফ একটা খারাপ স্বপ্ন, ফ্রান্সিস্কো, ওটার কোন মানে নেই.........
এখন তাড়াতাড়ি করো, তোমার ডানের সিঁড়িটা দিয়ে নিচে নেমে ,
বামের প্রথম বড় দরজাটা ...... তোমাকে জোর খাটাতে হবে, ওখানে
বিরাট একটা তালা ঝু লছে।
ফ্রান্সিস্কো সিকিউরিটি গার্ড টার গোড়ালি ধরে টেনে নিয়ে গেলো
একটা বালতি আর মপ রাখার ঘরে, সেখানে গাদা করে রেখে দিলো
সেগুলির পাশে। ভালো হয়েছে সে লোকটাকে গলা টিপে মেরেছে, তাই
কোন রক্তের দাগ পড়েনি। দরজাটা বন্ধ করে, কোটের পকেটে রাখা
স্পাইকটাতে আবার হাত দিলো সে – থামল একটু , শুনছে।
সে আবারও সেই শব্দটা শুনলো , সেই অনেকগুলি চোয়ালের কিছু
একটা চাবানোর শব্দ, বিজবিজ, বিংগগগগ ! কাঁধ ঝাঁকিয়ে সেই বড়
265
দেয়ালের ভাঙ্গা অংশের মধ্যে দিয়ে, যেটাই ওকে নিয়ে যাক না কেন,
সেটা ওর পেছনের দেয়ালগুলোকে স্রেফ কাগজের মত ফেড়ে ফেলছে
আগে থেকেই, যাতে ওর কোন ক্ষতি না হয় ! ও উড়ে গেলো একসারি
অফিস কিউবিকলের ওপর দিয়ে, একটা কনফারেন্স রুমের ভেতর
দিয়ে, একটা বিশাল টেবিলের ঠিক মাঝ বরাবর......
কনস্টেনটিন সেগুলোর মাঝ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে, এঞ্জেলার নাম ধরে
ডাকতে ডাকতে। ধ্বংসস্তূ পের মাঝ দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে, হাঁ হয়ে
যাওয়া দেয়ালের মাঝ দিয়ে, কিন্তু কখনোই ওর খুব কাছাকাছি যেতে
পারলো না !
যখনই এঞ্জেলা কিছুতে আঘাত করছে, কনস্টেনটিন দেখতে পাচ্ছে
যে জিনিসটা ওকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু আঘাতটা ওটার ওপরেই
পড়ছে। বাতাসের তৈরি কিছু একটা হবে, ম্যামনের দাসানুদাস কেউ ?
মনুষ্যাকৃ তির একটা জন্তু, কিন্তু বিশাল দেখতে। কনস্টেনটিন কেবল
অবয়বটা দেখতে পাচ্ছিলো।
সে শুনতে পেলো এঞ্জেলার ভয়ার্ত চিৎকার “কনস্টে------
ধুম করে একটা শব্দ, বিল্ডিঙের এক পাশ দিয়ে এঞ্জেলাকে বের করে
নিয়ে যাওয়া হলো।
----------নটিইইইন !!”
এঞ্জেলার শরীরটা ঝাঁকি মেরে বেরিয়ে গেলো , মাটি থেকে প্রায় বিশ
তলা ওপরে। ওর চারপাশে কাগজ, ফার্নিচার আর আবর্জ না ঘুরপাক
খাচ্ছে।
271
সেই কৌতূ হলী বাতাস ওর ঘাড়ে সুড়সুড়ি দিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ ......
চ্যাজ সেই নব ছাড়া দরজার গায়েই উবু হয়ে হেলান দিয়ে বসে
পড়লো, হাঁটু দুটো আঁকড়ে ধরে।
খানিক পরে সে ডেকে উঠলো “উম...কনস্টেনটিন ? হেই, ইয়ো ,
উহ – আমাকে কি , এম্মম ... মানে ... কনস্টেনটিন ?”
ওরা সেই চিকন গলি ধরে শেষ মাথায় গেলো, যেখানে মিড নাইট
আরেকটা দরজা খুললো , বললো “ওই বালের আবর্জ নাটা” –
ম্যামনকে বোঝাতে চাইলো সে “ওর বাবার ছায়া থেকে যুগযুগান্ত ধরে
বেরোতে চাইছে। ”
মিড নাইট একটা বাতি জ্বালাল , একটা বিশাল স্টোর রুম
আলোকিত হয়ে উঠলো। ওটাকে অনায়াসে একটা ছোটখাট ‘জাদুঘর’
বলে চালিয়ে দেয়া যেতো , যদি না সেখানকার ভেতরের
জিনিসপত্রগুলো ওরকম বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে না থাকতো।
“কিহ !! ??” কনস্টেনটিন বিস্ময়ে অভিভু ত হয়ে বলে উঠলো ।
সেখানকার বেশ কিছু পুরাতাত্ত্বিক জিনিসপত্র চিনতে পেরেছে সে।
কিছু খ্রিস্টানিক, কিছু কালো জাদু সংক্রান্ত, কিছু ইফা, সান্তেরিয়া,
হার্মেটিক , মিশরীয় --- কিছু কিছু একেবারেই অচেনা।
কনস্টেনটিন একটা মানুষের শরীরের দিকে তাকালো – দেখে ঠিক
মনে হচ্ছে ঘুমিয়ে আছে। যদিও বুক উঠানামা করছে না ওটার – শুয়ে
আছে একটা কাঁচের বক্সে। পরে আছে একটা রুক্ষভাবে বোনা রোব,
মাঝখানে দিয়ে বাঁধা। বক্সটার আশেপাশে ফু লের গন্ধ ভাসছে।
“একজন সাধু ?” কনস্টেনটিন জিজ্ঞেস করলো “কোন জন ?”
“দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, আমি জানি না ” বললো মিডনাইট
“কিন্তু আমি জানি উনি একজন সাধু ছিলেন, কারণ ওনার শরীর
একদম ক্ষয়প্রাপ্ত হয়নি। যদিও , এ জগতে উনি মৃত। আর ফু লের
গন্ধও একটা কারণ, অবশ্যই। উনি ...... সম্ভবত তের’শ শতাব্দীর
কেউ হবেন। ”
283
পনেরো
“পাটের ডে কায়েলিস, ডিউস, মিসেরে নবিস ” মিডনাইট একটানা
সুরে আবৃত্তি করে চলেছে ।
কনস্টেনটিন সেই শব্দগুলো শুনতে পাচ্ছিলো, যেন এক জগত দূর
থেকে, ইলেক্ট্রিসিটি ওর রন্ধ্রে রন্ধ্রে সেঁধিয়ে গেছে। ওর শরীর শক্ত হয়ে
গেছে, দাঁতে দাঁত চেপে বসে আছে সে। ইলেকট্রিক ওর অস্থি মজ্জায়
ঠিক একটা সাপের মতই বিস্তৃ ত হয়ে চলেছে। ওর চু ল পুরে যাচ্ছে
চড়চড় করে, টের পেলো সে।
“ফিলি রেদেম্পর মুন্দি , ডিউস, মিসেরে নবিস। ফিলি রেদেম্পর
মুন্দি , ডিউস মিসেরে......”
289
যীশু খ্রিস্টের কাধে বসে ওনার চোখে ঠোক্কর মারার চেষ্টা করে যাচ্ছে ।
কিন্তু তবুও তিনি কনস্টেনটিনকে কৃ পা করছেন । তিনি পুরো বিশ্বকেই
কৃ পা করছেন ।
এটা কি একটা সুযোগ ? মুক্তির একটা সুযোগ – নরকের নিশ্চিত
গন্তব্য থেকে পরিত্রাণ পাবার একমাত্র উপায় ? কনস্টেনটিনের একবার
মনে হলো যীশু’র কাছে সাহায্য চাইবে – কিন্তু নিজের মিশন আর
এঞ্জেলার কথা মনে পড়ে গেলো। যীশু খ্রিস্ট যে ধরণের মুক্তির কথাই
বলবেন না কেন, সেটার জন্য সময়ের প্রয়োজন। মিড নাইট অনন্তকাল
সময় মন্ত্র বলে যেতে পারবে না । ইতস্তত করতে করতেই , কনস্টেনটিন
দেখতে পেলো একজন রোমান সৈন্য যীশু’র দিকে এগিয়ে এসে, একটা
বল্লম গেঁথে দিলো ওনার একপাশে মৃত্যু তরান্বিত করার জন্য।
বল্লম থেকে রক্ত আর পানি ছিটকে পড়লো, ঠিক যেমন বাইবেলে
বলা আছে। আকাশ চিরে গেলো বজ্রধ্বনিতে, পৃথিবী যেন দুলতে
লাগলো। কনস্টেনটিন ওর মনোযোগ জোর করে বল্লমটার দিকে ধরে
রাখলো। সেটাকে অনুসরণ করতে শুরু করলো সে। সেই রোমান
সৈন্যটার জীবন অনুসরণ করলো সে, যে কিনা বল্লমটা বিক্রি করে দেয়
এক খ্রিস্টান সাধুর কাছে। তাঁর কাছ থেকে চু রি যায় সেটা, আবার চু রি
যায় , তারপর রোমের একটা অন্ধকার গর্ভ গৃহে ওটাকে লুকিয়ে রাখা
হয়। তারপর একজন নাৎসি আরকিওলজিস্ট সেটাকে আবিস্কার
করে। পাঠিয়ে দেয় তাদের গোপন অকাল্ট রিসার্চ সেন্টারে, যেটা কিনা
মেক্সিকোতে অবস্থিত ছিলো।
292
একটা বেড খুজে নিলো একপাশে, তারপর চাদর গায়ে দিয়ে প্রায় সাথে
সাথে ঘুমিয়ে গেলো।
কনস্টেনটিন লোকটার কাছে এগোল অদৃশ্যভাবে। ও কি কোনভাবে
সেই বল্লমের মাথাটা নিয়ে আসতে পারেনা এখানে ? ওটার ভেতরে যে
ঐশ্বরিক শক্তি আছে, সেটার বলে কি ওটাকে একটু ও তু লে ধরতেও
পারবে না ? লুকিয়ে ওটাকে কোথাও রেখে দিয়ে, পরে এসে তু লে নিতে
পারবে না?
ধাঙ্গড়টি হঠাৎ উঠে বসে , ওর গলা চেপে ধরে বসলো ! যেটা কিনা
সম্পূর্ণ অসম্ভব।
তবুও সে এক হাতে কনস্টেনটিনের গলা চেপে ধরলো, আরেক হাতে
ধরে থাকলো সেই বল্লমের মাথাটা। ওই স্পর্শটাই ওকে শক্তি যোগাচ্ছে,
একটা সম্পূর্ণ অদৃশ্য আত্মাকে গলা চেপে ধরতে পারছে।
কনস্টেনটিন সংগ্রাম করছে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য, কিন্তু
কোন পথ খুজে পাচ্ছে না। চেয়ারে বসে থাকা ওর শরীরটাও
একইসাথে ছটফট করছে, হয়তো কোন সাজেশনের মাধ্যমেই হবে !
ওই অবস্থার মধ্যেও, কনস্টেনটিন নিজেকে আচ্ছাসে গালাগালি
করলো মনে মনে। ওর জানা উচিত ছিল, আগেও সেই ধাঙ্গড়টা ওর
উপস্থিতি টের পাচ্ছিলো। হয়তো সেই নারকীয় সত্ত্বাটা ওকে অপেক্ষা
করতে বলেছে যতক্ষণ না কনস্টেনটিন কাছে না আসছে। ম্যামন
হয়তো ওই লোকটার মাধ্যমে কনস্টেনটিনকে মারার পথ খুঁজে নিয়েছে।
কোন এক অন্ধকার আর গভীর কোণ থেকে যেন ভেসে আসছে ভীষণ
এক অট্টহাসি !
295
ষোল
এঞ্জেলা একটা কক্ষপথ ধরে ঘুরছে।
আপাত দৃষ্টিতে সেরকমই মনে হচ্ছে। একটা মহাজাগতিক
গোলাঘরে ওকে আটকে রাখা হয়েছে। ম্যামন যতক্ষণ সিদ্ধান্ত না নিচ্ছে
যে সঠিক সময় এসেছে , ওভাবেই থাকবে সে। ডাইমেনশন গুলোর
মাঝখানে , বেশ কিছু নো- ম্যানস-ল্যান্ড আছে, পৃথিবী আর নক্ষত্র
জগতের মাঝে অনেক চির গোধূলির রাজ্য আছে । এঞ্জেলা সেরকমই
একটা জায়গায় আছে, একটা সেলফের মতো জায়গায় যেখানে হাত
বাড়ালেই ওকে পাওয়া যাবে। জন কনস্টেনটিনের নাগালের বাইরে।
ওর নিচে রেভেন্সকার হসপিটাল দেখতে পাচ্ছে এঞ্জেলা। বুঝতে
পারলো , ম্যামন ওকে আনার জন্য বেশ শক্তিশালী একটা ‘কিছু ’ কে
পাঠিয়েছিলো। আর রেভেন্সকার-ই হয়তো ওর পরবর্তী গন্তব্য হতে
যাচ্ছে, কারণ ওটাকে ঘিরেই বেশ জোরে জোরেই ঘুরছে সে,
অনেকখানি ওপরে। অদৃশ্যভাবে, পৃথিবীর মধ্যে , ঠিক মেলাতে থাকা
নাগরদোলার মতো ।
ও সেখানে, সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্নভাবে থেকে, অনেক কিছুই চিন্তা
করছিলো। ওর শরীরটা একটা সময় আর স্থানের একটা বৃত্তে আটকে
306
ওগুলো সবই মারা যায় আর মিলিয়ে যায়। এটার সাথে লড়াই করে
কেবল নিজের কষ্টই বাড়াচ্ছ...... আত্মসমর্পণ করো, এঞ্জেলা !
কিন্তু ওকে দমানো এত সহজ নয়। ও এত সহজে আত্মসমর্পণ
করবে না।
সময় এলে, ও লড়াই করবে। ওই ‘বোধিসত্ত্ব‘ দের সাহায্যে , লড়াই
করে যাবে সে। ওর সুযোগ ঠিকই আসবে।
কারণ সে জানে, সে কি, পৃথিবীতে ওর কাজই বা কি। একজন
ওরাকল ? হ্যাঁ, কিন্তু সত্ত্বার গভীরে......
...... এঞ্জেলা ডডসন একজন যোদ্ধা ।
আলো নেই, আছে। কিন্তু সেই আলো যেন খুব ক্ষীণভাবে দেখা যাচ্ছে।
যেন কয়লার মেঘের ভেতর কোন লাইট জ্বালিয়েছে কেউ।
“কিছুই তো দেখা যাচ্ছে না ” চ্যাজ বললো এদিক সেদিক তাকাতে
তাকাতে।
“সবসময়ই, একটি নির্দি ষ্ট ধরণ ছাড়াও, কয়েক রকমের অন্ধকারের
অস্তিত্ব ছিল ” কনস্টেনটিন বললো, হাতের হোলি শটগানটা নিয়ে
এগিয়ে গেলো পেছনের দরজা দিয়ে। লোহার ডাবল দরজাটা ভেঙ্গে
ভেতরে ঢোকা হয়েছে। যেন ‘ব্যাটারিং র্যাম’ দিয়ে সাত আটজনের
একটা দল ঢু কেছে অখান দিয়ে। কিন্তু আসলে, কেবল একজন মানুষ
আর একটা লোহার স্পাইকের কাজ ওটা !
অন্ধকার তার চরমতম মাত্রায় পৌছালো। একই রকম লাইট জ্বলছে
আশেপাশে, একইরকম জিনিসপত্র আশেপাশে, কিন্তু খুব বেশী কছু
দেখা বা অনুভব করা যাচ্ছে না।
ওরা দরজা দিয়ে ঢোকার পর, অন্ধকারটা আরও বাড়ল। যেন
রেভেন্সকারকে কেউ সতর্ক তামূলক বেষ্টনীতে আটকে ফেলেছে।
ম্যামনের কাজের জায়গা থেকে মরণশীলদের’কে দূরে সরিয়ে রাখার
একটা পন্থা হয়তো সেটা।
কিন্তু, চ্যাজের ভয় বাড়েনি একটু ও। মুখে একটা ধাতব স্বাদ
পাচ্ছিলো সে, ওর মনের ভেতর যেন কেউ চেপে বসেছে। ঠিক যেন
রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে , কয়েক ফু ট দূর থেকে একটা পাঁচটনি ট্রাককে
ধাক্কা মারতে দেখছে সে ! সামনে থেকে সরে যাওয়ার জন্য অনেক
316
সতেরো
এঞ্জেলার কোন ধারণাই নেই, ওই লোকটা কিভাবে ওকে একদম
শক্তিহীন করে ফেললো। এটা কিছুতেই সম্ভব না। ও দুই ধরণের মার্শাল
আর্ট স জানে, ও একজন ট্রেইন্ড পুলিশ ডিটেকটিভ। ওই লোকটা তো
দেখতেও তেমন শক্তিশালী নয় !
কিন্তু ওর গলায় চেপে ধরা হাতটা যেন এঞ্জেলার শরীর থেকে সমস্ত
শক্তি শুষে নিচ্ছে।
ওই ‘নিয়তির বর্শা’ থেকেই হয়তো লোকটা শক্তি পাচ্ছে, ওর কাছ
থেকে যদি কোনভাবে সরে যাওয়া যায়......
কিন্তু কিভাবে ? ওর নিজেকে এখন একদম শক্তিহীন লাগছে , ঠিক
যেন একটা দুই বছরের বাচ্চা কোন কমান্ডোর কাছ থেকে বন্দুক কেড়ে
নেয়ার চেষ্টা করছে ! পানিতে লাথি মারতে মারতে , লোকটার কুঁ চকিতে
একটা লাথি ঝেড়ে দিলো সে, কিন্তু কোন ফল হলোনা।
একটা ভয়ংকর মুহূর্তে র জন্য , এঞ্জেলার ‘ওরাকল স্বত্বা’ ঢু কে
পড়লো লোকটার মনের জানালা দিয়ে। আর , এঞ্জেলা লোকটার স্মৃতি
নিজের চোখের সামনে দেখতে পেলো। লোকটার নাম ফ্রান্সিস্কো।
একইসাথে করুণা আর ঘৃণার মিশ্রণ খেলা করে গেলো ওর মনে। যখন
দেখলো লোকটার ছেলেবেলা , রাস্তায় ভবঘুরে জীবন, চু রি করা খাবার
319
আঠারো
ওটা ছিলো একটা ওয়েটিং রুম, দোআঁশলাদের দিয়ে ভর্তি । এটা
ঠিকই আছে, সে ভাবলো । ওর তো একটা ওয়েটিং রুমেই আসার
কথা , যখন কিনা সব ধরণের কাজের প্রতিফলের জন্য অপেক্ষা
শেষের পথে। কারণ, এই পৃথিবীটাই তো একটা ওয়েটিং রুম। তু মি
অপেক্ষা করো বেড়ে ওঠার জন্য, বুড়ো হবার জন্য , তারপর ক্ষয়ে ক্ষয়ে
, এক সময় মৃত্যুবরণ করার জন্য। এই মরণশীল জগতে, সব কিছুই
ক্ষণস্থায়ী। শুধু পরজগতটাই – সে যে ধরণের পরজগতেই তু মি যাও
না কেন, সেটাই হলো সত্যিকারের অনন্ত স্থায়ী জগত। তখন, হ্যাঁ,
কেবলমাত্র তখনই সব অপেক্ষার অবসান হবে।
এই পার্থিব ওয়েটিং রুমটা ভর্তি অপার্থিব স্বত্বাদের দ্বারা। প্রথমে,
ওদেরকে দেখতে সাধারণ লোকেদের মতোই লাগছিলো, যে ধরণের
লোকেদের আপনি প্রতিদিন আপনার আশে পাশে দেখেন। এরপর,
নিজের সাইকিক লেন্সটা একটু ঘোরাতেই, ওদের সত্যিকারের চেহারা
বেরিয়ে এলো। কনস্টেনটিন দেখতে পেলো ওদের শিং, লেজ, শ্বদন্ত,
কাঁটাঅলা হাত পা, আর বিভিন্ন রঙের চোখের মণি।
আর সেই অসুস্থ নরকের ভাষার আওয়াজ থেমে গেলো হঠাৎ করে।
ও ভেতরে যাওয়ামাত্র সবাই একদম চু প মেরে গেলো। সবাই একসাথে
330
এলি ভ্রু কুঁ চকালো। কনস্টেনটিন জোর দিয়ে বলেছে যে, সে অন্তত
জানে না যে, স্বর্গ কি জিনিস !
“রাফ হবার দরকার নেই” সে বললো।
নাক দিয়ে শব্দ করলো কনস্টেনটিন “এর আগে তো কই বিরক্ত হও
নি”
খেয়াল রেখেছে সে বরাবর, সেই দোআঁশলাটার দিকে, আস্তে আস্তে
বৃত্ত ছোট করে আনছে।
এলি ওর এই ছোট্ট কৌতু কে হেসে উঠলো “আমাদের মিলনস্থান
গুলো খুবই মিস করবো আমি, নরকের চেয়েও গরম !”
“আমিও , বাছা !”
ওর বাম পাশের পিশাচটা হাঁটু বাঁকা করছে আস্তে আস্তে , ঝাঁপ
দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে.......
কনস্টেনটিন টের পেলো , ওটা নিজের চিন্তাগুলো আড়াল করার
চেষ্টা করছে । কিন্তু কিছু টু করো চিন্তা ঠিকই ধরতে পারলো সে......
একটা ঝাঁপ দেবো, গলা ছিঁ ড়ে দেবো ওর...... কিন্তু ওকে এতো
তাড়াতাড়ি মারা যাবে না ... দ্যা বস ওকে দ্রুতই হাতে পেয়ে যাবে। ওর
দুর্দ শাগুলো খেয়ে নেবো আমি, রক্ত ফু রিয়ে মরে যাওয়ার আগে। যদি
ঠিকঠাক করতে পারি। আমি এর মধ্যেই রক্তের স্বাদ পাচ্ছি......আরেক
ধাপ সামনে, তারপর......
কনস্টেনটিন ওর সিগারেট লাইটারটা বের করলো বাম হাতে
“তোমরা এখানকার ভারসাম্য নষ্ট করছো । ” রুমে উপস্থিত সবাইকে
335
নিচের অংশটা সামনে হেঁটে গেলো কয়েক কদম, ওপরের অংশ খানিক
ঝু লে রইলো ওর সাথে, তারপর ঝপাৎ করে পড়ে গেলো নিচের পানির
মধ্যে।
অন্যগুলোও এগিয়ে আসছে ওর দিকে। কিন্তু ওগুলো হামাগুড়ি
দিচ্ছে চার হাত পায়ে। কিছু কিছুর পা নেই হয়ে গেছে, কনুই এর ওপর
ভর করে এগিয়ে আসছে ওরা......
লড়তে লড়তে অন্য মনস্ক হয়ে পড়ায়, ওর কাঁধে উঠে এলো ওদের
একজন। ঘাড়ে নখ বিঁধিয়ে দিয়ে , ওর কানের কাছে চিৎকার করে
উঠলো “আমি ফেরত যাবো না !”
কনস্টেনটিন চেনে ওই গলা, যতই কর্ক শ হোক না কেন। ওটা এলি
!
কনস্টেনটিন ওর মাথা ধরে, চেয়ারের ওপর উঠে স্প্রিঙ্কলারের
আরও কাছে ধরলো সেটা। এলি ঝাড়া মারল একটা, তারপর নড়াচড়া
থামিয়ে দিলো। পরিণত হলো ছাইয়ে। ওর কাপড়গুলো পড়ে গেলো
নিচে, খালি.........
“দেখা হবে ওখানে, বাছা” কনস্টেনটিন বিষণ্ণ ভাবে বললো।
তখনই, পানি স্প্রে করা থেমে গেলো। ট্যাঙ্কের পানি পড়া থেমে
গেলো......... কিন্তু পিশাচেরা তখনও আসছেই। ওদের মধ্যে বেশ কিছু
মারা গেছে, কিন্তু ভালোভাবে কাপড়ে মোড়ানো থাকাতে, উল্লেখযোগ্য
সংখ্যক বেঁচেও গেছে। নিচে ঝরে পরে যাওয়ায়, পানিও আর পবিত্র
নেই। সেগুলোও কোন সাহায্যে আসছে না আর।
আর পিশাচেরা এগিয়েই আসছে খালি।
340
উনিশ
347
মতো ‘আমাকে ক্ষমা করে দাও প্রভু ’ বললেই, ঈশ্বর তাঁর রাজধানীতে
সাদরে বরণ করে নেবেন... ”
“ওনার পাশে একটা বসার জায়গা, আর কিছুই না। যদি মিষ্টি,
অনেক মিষ্টি ঈশ্বর তোমাকে এতোটাই পছন্দ করেন , তবে আমি
তোমাকে সেই ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য করে তু লতে পারি।” বললো
কনস্টেনটিন।
মিষ্টি করে হাসলো গ্যাব্রিয়েল , বলে চললো “দ্যাখো, তোমরা ঠিক
পশুর মতোই ! আনন্দ আর পুরষ্কারের কোন দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নেই।
কিন্তু ব্যাথা......... তোমরা ভালো বুঝতে পারো একমাত্র ব্যাথার ভাষা।
ব্যাথাই তোমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে। আমি তোমাদেরকে অনেক বছর
ধরে লক্ষ্য করে যাচ্ছি। তোমরা কেবল তখনই একজন আরেকজনকে
বাঁচাতে ছোটো, যখন কিনা তোমাদের শহরগুলো পুড়তে থাকে। যখন
তোমাদের রাস্তায় রক্তগঙ্গা বয়ে যায়, তোমাদের পরিবারের নিরাপত্তা
হুমকিতে পড়ে – কেবল তখনই তোমরা তোমাদের মুখ ঈশ্বরের দিকে
ফেরাও। কেবল প্রচণ্ড ভয়াবহ সময়েই, তোমাদের মহৎ সত্ত্বা প্রকাশ
পায়। তো, আমি তোমাদেরকে ব্যাথা দেবো, ভয়াবহতা নিয়ে আসবো
তোমাদের ওপর। যাতে তোমরা পৃথিবীর এই নরকের রাজত্বে টিকে
থাকবে, তারা ঈশ্বরের ভালোবাসার উপযুক্ত হয়ে উঠবে। ”
“গ্যাব্রিয়েল” কনস্টেনটিন বললো আশ্চর্য হয়ে “তু মি একটা উন্মাদ”
সে বললো, প্রভাবিত করার কোন রকম আশা না রেখেই। কেবল
স্তম্ভিত হয়ে গেছে, তাই বলা। একজন অমর সত্ত্বা , কিভাবে ঈর্ষা আর
বিদ্বেষের কারণে পুরোপুরি উন্মাদ হয়ে যেতে পারে, তাই ভেবে।
358
আরও একটা আশা নিয়ে এটা বলা, যাতে গ্যাব্রিয়েল একটু অন্য
মনস্ক হয়ে পড়ে। আর সেই সুযোগে সে ওই বল্লমের টু করোটা হাতিয়ে
নিতে পারে।
কিন্তু ও কোন সুযোগই পেলো না “পরিত্রাণের পথে যাত্রা” গ্যাব্রিয়েল
বলে চললো “শুরু হবে আজকে রাত থেকে, এখন থেকেই ”
নিজের ডানা দুটো ঝাড়া দিলো সে, আর সেই অতিপ্রাকৃ ত
বাতাসের ঝটকা খেয়ে শূন্যে উঠে গেলো কনস্টেনটিন। পুলের ওপর
দিয়ে , ডবল দরজা খুলে, পেছনের হলের ভেতর গিয়ে পড়লো। যেন
একটা হাল্কা কাঁটাগাছের বীজ ভেসে গেলো বাতাসে।
বাতাসে ঘুরতে ঘুরতে , লবির ওয়েটিং রুমে, হাল্কা কাঁটাগাছ না,
বেশ ভারী হয়েই পড়লো কনস্টেনটিন। ওরই মেরে রেখে যাওয়া
পিশাচদের নোংরা দেহাবশেষের স্তুপের পাশে।
বিশ
ডিটেকটিভ জেভিয়ার ওর চোখ বন্ধ করে, নিজের নাকের ব্রিজে
টোকা দিলো একটা। তারপর হসপিটালের পেছনের দরজার দিকে
তাকালো । কন্ট্রোল কারগুলোর ফ্ল্যাশিং লাইটের ওপর দিয়ে দেখা
যাচ্ছে সেটা।
অবস্থাটা আগের মতোই আছে। ও কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। দুইজন
পেট্রোলম্যান, আধভাঙ্গা দরজা দিয়ে ঢু কে, স্রেফ ফ্রিজ হয়ে গেছে !
অস্পষ্ট বাতাসে কিছু ঠাহর করা যাচ্ছে না , কিন্তু ওই দুজনকে মনে হচ্ছে
কোন কার্টু ন ছবিতে অভিনয় করছে । ওদের হাতগুলো অসম্ভব
ভঙ্গিতে ওঠানামা করছে, কিন্তু কোন নির্দি ষ্ট দিকে তাক হচ্ছে না।
অর্থহীন, কিন্তু ওটাই করে যাচ্ছে ওরা ক্রমাগত !
রাতের আকাশের দিকে তাকালো জেভিয়ার, মেঘে ছেয়ে আছে
পুরো আকাশ।
এটার সাথে ওই কনস্টেনটিন লোকটার সম্পর্ক না থেকেই যায় না।
বিশেষ করে যখন থেকে লোকটা ডিটেকটিভ ডডসনের আশেপাশে
368
রক্ত হারিয়ে ফেলায়, নিজের মুখটাকে সীসার তৈরি বলে মনে হচ্ছে।
সেই অবস্থায় অনেক কষ্ট করে বলতে পারলো “ইসাবেল......”
এমনকি নরকেও, সবকিছুই প্রাসঙ্গিক। স্যাটান জানতো
কনস্টেনটিন কার কথা বলছে।
“ওর ব্যাপারে কি ?”
“ওকে...... বাড়ি যেতে দাও ......”
স্যাটান এতো সহজে অবাক হয় না । কিন্তু এখন কনস্টেনটিন ওকে
আসলেই অবাক করে দিলো “তু মি তোমার জীবন ত্যাগ করছো ,
যাতে মেয়েটা স্বর্গে যেতে পারে ?”
কনস্টেনটিন অনেক কষ্টে নড করলো।
আর স্যাটান বেশ খুশিই হলো। কনস্টেনটিন ওর নিজের জীবন
চাইছে না। এর মানে হলো স্যাটান ওকে নিয়ে খেলার সুযোগ পেয়ে
যাবে, আর সেটা এখনই। সে তু ষ্টিকে দেরী করাতে চায় না। আর
কনস্টেনটিনকে নির্যাতন করে অনেক বেশী মানসিক শান্তি পাবে সে,
ইসাবেলের বদলে। ইসাবেলকে সে থোড়াই চেনে।
“ঠিক আছে ” স্যাটান বলে উঠলো।
একটু বিরতি নেয়া হলো । আর সেই বিরতির মাঝখানে ,
অনেকগুলি কাজ হয়ে গেলো।
প্রমাণ করার জন্য যে, তোমার আত্মা আসলে নরকে যাবারই উপযুক্ত !
ড্যাম ইউ – তু মি বাঁচবে !”
স্যাটান ওর আগুনে দুটো হাত কনস্টেনটিনের শরীরে ঢু কিয়ে দিলো ,
ওর বুকের গভীরে চলে গেলো সেগুলো। ওকে মেঝে থেকে ওপরে
তু লে ফেললো সেগুলো।
কনস্টেনটিন যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠলো যখন স্যাটান ওর ফু সফু স
থেকে ক্যান্সার খুঁড়ে বের করে আনলো। একদলা রোগাক্রান্ত টিস্যু ,
সাথে কালো কালো আরও কিছু পোড়া অংশ এক হ্যাঁচকা টানে বের
করে আনলো। চেষ্টা করলো যত বেশী সম্ভব ব্যাথা দেয়া যায়। এরপর
ছেড়ে ছিল কনস্টেনটিনকে............
......... আর কনস্টেনটিন মেঝের ওপর পড়লো নিতম্ব দিয়ে।
ওর হাত আর পায়ে, সারা শরীরে , বল ফিরে আসছে টের পেলো
সে। একটা গভীর শ্বাস নিলো সে, অনেকদিন পর সুস্থ ফু সফু সে বাতাস
ঢু কছে টের পেলো সে – অনেক বছর পর আসলে।
নিজের কব্জির দিকে তাকালো সে। ওগুলি ভালো হয়ে গেছে – ও
একদম আপাদমস্তক সুস্থ হয়ে গেছে ! স্যাটান ওকে সম্পূর্ণ নতু ন
একটা জীবন দিয়েছে । সে এটা করেছে কারণ , পরে যে কোনদিন যাতে
ওকে উৎখাত করতে পারে এই পৃথিবী থেকে ।
কনস্টেনটিন ওর মনের ভেতর স্যাটানের কণ্ঠ শুনতে পেলো। সেই
অন্ধকারের রাজা দরজা দিয়ে বেরোচ্ছে নরকে ফিরে যাবে বলে, আর
নিজের ছেলেকে শাস্তি দেবে বলে। বেরোতে বেরোতে সে বলছে –
379
থেকে ফেলে দিলো নিচে। তারপর কোটের পকেট থেকে বের করে
আনলো, দুটো স্পেশাল শটগানের শেল। ওদের কেসিং-এ খোদাই করা
আছে রহস্যময় কিছু চিন্হ ।
আমাদের সবাইকে নিয়ে ঈশ্বরের আলাদা পরিকল্পনা আছে। আমাকে
দুই দুইবার মারা যেতে হয়েছে, স্রেফ সেটা বোঝার জন্য !
শটগানে শেল দুটো ভরে, পাম্প করে রেডি রাখলো সে।
ওই বইতে যেমন লেখা আছে, উনি কাজ করেন অনেক রহস্যময়
পদ্ধতিতে।
সে ছাদের কিনারা দিয়ে নিচে তাকালো। যে ফাঁদ সে পেতেছে, সেটা
কাজ করছে – ওটা আসছে এদিকেই......
দাঁড়াও – সে ক্ষণিকের জন্য মনোযোগ হারিয়ে ফেলেছিলো !
“জন ---”
সে এঞ্জেলার দিকে তাকালো, ছাদের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে সে। ও
পয়েন্ট করে দিলো “তোমার বামে !”
একটু পেছনে এসে দাঁড়ালো কনস্টেনটিন। শটগানটা তাক করলো ,
এঞ্জেলাকে দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখলো চোখের কোণা দিয়ে।
কিছু মানুষ এটা পছন্দ করে.........
ডানাঅলা পিশাচটা ওর দিকে ছোঁ মেরে নেমে এলো – সেই
প্রথমবার ও আর এঞ্জেলাকে আক্রমণকারী দলের মধ্যে যেটা পালিয়ে
গিয়েছিলো।
388
সমাপ্ত